সাদিয়া ইসলাম সম্পা
একটি দেশ সমাজ সভ্যতা সংস্কৃতি সকল কিছুর মূলে যে বিষয়টি মুখ্য হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে তা হলো শিক্ষা। বাংলাদেশসহ বিশ্বের যেকোন দেশের কথাই বলি না কেন প্রত্যেকটি দেশ জাতির টিকে থাকা, উন্নতি লাভ করা সকল কিছু নির্ভর করে সে জাতি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর। যে দেশ বা জাতি নিজেদের যত শিক্ষিত করে কাজে লাগাতে পেরেছে সে জাতি দেশ তত বেশি উন্নতির শিখরে পৌঁছে গেছে। একটি জাতি দেশ সভ্যতার উত্তরণের পেছনে রয়েছে শিক্ষা। আর তাই শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল বিষয়কে নিয়ে ভাবতে হবে।
শিক্ষা খাত নিয়ে ভাবতে হবে। শিক্ষা খাতের সংকট ও উত্তরণের উপায় নিয়ে ভাবতে হবে। কিন্ত আমাদের শিক্ষাখাতে রয়েছে অনেক সমস্যা অনেক প্রতিবন্ধকতা যার ফলে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা একটি অসুস্থ ব্যবস্থা হিসেবে পরিণত হচ্ছে। হুমকির মুখে পড়ছে শিক্ষা খাত। যার ফলে আমরা যারা শিক্ষার্থী রয়েছি তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে।
প্রাথমিক স্তরে আমাদের যে কোমলমতি শিক্ষার্থী রয়েছে তারা শিক্ষাজীবনের প্রথম থেকেই দোটানা শিক্ষাব্যবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। প্রথম থেকেই তারা পরীক্ষা হবে কিনা স্কুল খুলবে কিনা কবে খুলবে এ নিয়ে দ্বিধায় রয়েছে বিগত একবছরের বেশি সময় ধরে পরিশেষে এ তো তাদের এক্সাম ছাড়াই উপরের ক্লাসে উঠিয়ে দেয়া হলো! এই যে প্রাথমিক এর কোমলমতি শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা ছাড়াই উপরের ক্লাসে উঠে গেল কিন্ত তাদের ঐ ক্লাসের পড়া কি আদৌ সম্পূর্ণ হয়েছে কিনা কে বলতে পারবে!
আবার তারা যে ক্লাসে উঠেছে সে ক্লাসের পড়ার সঙ্গে কতটুকু সামঞ্জস্য রাখতে পারবে? যেহেতু বিগত ক্লাসে তাদের পড়াটা সম্পন্ন হয়নি। আর তাদের পরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই ও করা হয় নি। যেসকল শিক্ষার্থীরা অকৃতকার্য হওয়ার কথা ছিল তারাও উপরের ক্লাসে উঠে গেছে। এতে করে তাদের মেধার বিকাশের বদলে তাদের ক্ষতি করা হচ্ছে। তারা কি আদৌ কিছু শিখতে পারছে? শিক্ষা জীবনের প্রথম থেকেই একটি দুর্বল শিক্ষা ভিত্তির ওপর থেকে তাদের শিক্ষা জীবন শুরু করছে।
মাধ্যমিক এর শিক্ষার্থীদের ও প্রায় একই অবস্থা তারা প্রমোশন পেয়ে উপরের ক্লাসে উঠেছে। কিন্তু তাদের ও কি প্রাথমিকের মতো সিলেবাস বা বইটি শেষ হয়েছে? তারাও কি আদৌ বাসায় পড়াশোনা করেছে বা কিছু শিখতে পেরেছে? অপরদিকে এ বছরের এসএসসি শিক্ষার্থীদের সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করে পরীক্ষা নেয়ার কথা বলা হয়েছে এর ফলে সিলেবাসের কিছু অংশ শিক্ষার্থীদের পড়া হবে আর কিছু অংশ বাকি থেকে যাবে। এতে মনে হয় না শিক্ষার্থীদের প্রকৃত শিক্ষা অর্জন হচ্ছে।
অনেক বিষয়ই তাদের অজানা থেকে যাচ্ছে। পরবর্তীতে তারা যখন একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হবে তখন এসএসসির অনেক বিষয় তাদের থাকবে এবং তা যদি সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের বাহিরের টপিক হয় তাহলে শিক্ষার্থীদের জন্য তা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। শিক্ষার্থীদের শিখার থেকে না শিখার অংশই তখন বেশি হবে। আর এতে শিক্ষার্থী ও শিক্ষাব্যবস্থার ভবিষ্যৎ কোন দিকে যাচ্ছে সেটা প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।
আবার গত বছর ২০২০ সালে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থীরা এক্সামের জন্য প্রায় কত মাস প্রস্তুতি নিলো, পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করলো কিন্তু করোনার ভয়াবহ প্রকোপ এর জন্য শেষমেশ শিক্ষার্থীদের পরীক্ষাটাই নেয়া হয় নি। তাদের অটোপাশ দিয়ে দেয়া হয়েছে। এত করে আমার মতে সব থেকে তারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কেননা এইচএসসি পরীক্ষার পরই উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এ শিক্ষার্থীরা ভর্তির জন্য প্রস্তুতি নিয়ে থাকে। আর ভর্তির এই প্রক্রিয়া অনেকটানির্ভর করে এইচএসসির রেজাল্টের ওপর। কারণ এইচএসসির জিপিএ অনেকটা নির্ভর করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এ চান্স এর জন্য।
উচ্চশিক্ষার এসব প্রতিষ্ঠান থেকে ভবিষ্যৎ এর ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সহ সমাজের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা তৈরি হবে। যদি এসব উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানে যোগ্য শিক্ষার্থীদের পরিবর্তে অযোগ্য শিক্ষার্থীরা সুযোগ পায় তাহলে দেশের ভবিষ্যৎ কোথায় যেয়ে দাঁড়াবে এটা ভাববার বিষয়।
করোনার ভয়াবহ প্রকোপ এ সব থেকে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন বিশ্ববিদ্যালয় এর শিক্ষার্থীরা। এদের কেউ চতুর্থ বর্ষে যাদের পরীক্ষা নেয়া হলেই বের হয়ে চাকরির জন্য প্রস্তুতি নিবে। কিন্তু তারা আটকে আছে। এতে করে তাদের ক্যারিয়ার হুমকির মুখে পড়ছে। এই একই অবস্থা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া অন্যান্য বর্ষের শিক্ষার্থীদেরও। যেসব শিক্ষার্থীরা মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়ে তাদের অবস্থা আর ও খারাপ। তাদের অনেকের তো পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে পরিবারের টানাপোড়েনের কারণ। এক বছরের বেশি সময় ধরে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকার দরুণ অনেকেই সংসারের দায়িত্ব নিয়েছেন নিজের কাধে। এর ফলে অনেকেই পড়াশোনা থেকে ঝড়ে পড়েছে। এদের অনেকেই তাদের পড়াশোনা শেষ করতে পারবে কিনা সেটা নিয়ে রয়েছে সংশয়।
শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষকরাও রয়েছে সংকটে। যেসব শিক্ষকরা নন-এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান এ চাকরি করে তাদের অনেকের মাসিক বেতন বন্ধ রয়েছে প্রায় অনেক মাস ধরে। এতে তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। শিক্ষক হলেন সমাজ গড়ার কারিগর। আর সেই শিক্ষক এর ই যদি এমন কষ্ট হয় জীবিকা নির্বাহ করতে তাহলে সেটা নিদারুণ যন্ত্রণা ছাড়া আর কিছুই নয়। এছাড়া শিক্ষকরা মহান পেশা শিক্ষকতার সঙ্গে জড়িয়ে, শিক্ষকতা ছেড়ে অন্য কোন পেশায় তারা যদি নিজেদের জড়ায় তাহলে সেটা সমাজের অবনতি ছাড়া আর কিছুই নয়। শিক্ষাখাতের সংকট নিরসনের জন্য শিক্ষার্থী দের সমস্যা দূর করার পাশাপাশি শিক্ষকদের স্বচ্ছলভাবে জীবিকানির্বাহ এর যথাযথ ব্যবস্থা করতে হবে।
অন্যদিকে আমাদের গ্রামীণ শিক্ষাব্যবস্থা অতীতের তুলনায় কিছুটা হলেও পরিবর্তন হয়েছে। তবে যে পরিবর্তন হয়েছে সেটি শিক্ষাব্যবস্থার সংকট নিরসনের জন্য যথেষ্ট নয় এবং সময়ের সঙ্গে অনেকটাই পিছিয়ে। গ্রামে এখনো সরকারি স্কুলগুলোতে যথাযথভাবে ক্লাস হয় না। শিক্ষক ও শিক্ষার্থী অনেকেই ক্লাস পরীক্ষা পড়াশোনার প্রতি উদাসীন। ড্রেস থেকে শুরু করে ক্লাসের ব্যাপারে কোনমতে বেখেয়ালিভাবে চলছে স্কুলের কার্যক্রম। যেটা কোনমতে কাম্য নয়।
সর্বোপরি আমাদের দেশের উন্নয়নের জন্য, দেশকে এগিয়ে নেয়ার জন্য বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার জন্য দেশের শিক্ষাব্যবস্থার, শিক্ষাখাতের উন্নয়ন করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা বর্তমানে এক ভয়াবহ অবস্থা পার করছে। শিক্ষাব্যবস্থা, শিক্ষা খাতের সবকিছু তে সমন্বয় হীনতার অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের মধ্যে বাড়ছে হতাশা, তারা সময়মতো বের হতে পারছে নাহ চাকরি বাজারে চাকরি পাচ্ছে না। চাকরির অভাবে বেকার হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের ভবিষ্যৎ হয়ে পড়ছে অনিশ্চিত।
দেশের শিক্ষাব্যবস্থার এই করুণ পরিনতি ঠেকাতে প্রথমেই আমাদের কে শিক্ষিত বেকার তৈরি বন্ধ করতে হবে। সবার জন্য চাকরি নিশ্চিত করতে হবে নতুবা গ্রাজুয়েট এর পরিমাণ কমাতে হবে। প্রতিবছর এতো শিক্ষিত বেকার তৈরি করে কি লাভ যদি না তাদের চাকরির ব্যবস্থা না করা যায়!
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের আগে শিক্ষিত বেকারদের আগে চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে তাহলে দেশে বেকার সমস্যা কিছুটা হলে ও নিরসন হবে। শিক্ষা খাত একটি দেশের মেরুদণ্ড। মেরুদণ্ড যদি সোজা না হয় তাহলে দেশে উন্নতি হবে কী করে! তাই দেশের উন্নয়নের জন্য শিক্ষা খাতের সংকট নিরসন করতে হবে যথাযথ ব্যবস্থার মাধ্যমে যাতে দেশের ভবিষ্যৎকে রক্ষা করা যায়।
[লেখক : শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়]
সাদিয়া ইসলাম সম্পা
সোমবার, ১৭ মে ২০২১
একটি দেশ সমাজ সভ্যতা সংস্কৃতি সকল কিছুর মূলে যে বিষয়টি মুখ্য হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে তা হলো শিক্ষা। বাংলাদেশসহ বিশ্বের যেকোন দেশের কথাই বলি না কেন প্রত্যেকটি দেশ জাতির টিকে থাকা, উন্নতি লাভ করা সকল কিছু নির্ভর করে সে জাতি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর। যে দেশ বা জাতি নিজেদের যত শিক্ষিত করে কাজে লাগাতে পেরেছে সে জাতি দেশ তত বেশি উন্নতির শিখরে পৌঁছে গেছে। একটি জাতি দেশ সভ্যতার উত্তরণের পেছনে রয়েছে শিক্ষা। আর তাই শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল বিষয়কে নিয়ে ভাবতে হবে।
শিক্ষা খাত নিয়ে ভাবতে হবে। শিক্ষা খাতের সংকট ও উত্তরণের উপায় নিয়ে ভাবতে হবে। কিন্ত আমাদের শিক্ষাখাতে রয়েছে অনেক সমস্যা অনেক প্রতিবন্ধকতা যার ফলে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা একটি অসুস্থ ব্যবস্থা হিসেবে পরিণত হচ্ছে। হুমকির মুখে পড়ছে শিক্ষা খাত। যার ফলে আমরা যারা শিক্ষার্থী রয়েছি তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে।
প্রাথমিক স্তরে আমাদের যে কোমলমতি শিক্ষার্থী রয়েছে তারা শিক্ষাজীবনের প্রথম থেকেই দোটানা শিক্ষাব্যবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। প্রথম থেকেই তারা পরীক্ষা হবে কিনা স্কুল খুলবে কিনা কবে খুলবে এ নিয়ে দ্বিধায় রয়েছে বিগত একবছরের বেশি সময় ধরে পরিশেষে এ তো তাদের এক্সাম ছাড়াই উপরের ক্লাসে উঠিয়ে দেয়া হলো! এই যে প্রাথমিক এর কোমলমতি শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা ছাড়াই উপরের ক্লাসে উঠে গেল কিন্ত তাদের ঐ ক্লাসের পড়া কি আদৌ সম্পূর্ণ হয়েছে কিনা কে বলতে পারবে!
আবার তারা যে ক্লাসে উঠেছে সে ক্লাসের পড়ার সঙ্গে কতটুকু সামঞ্জস্য রাখতে পারবে? যেহেতু বিগত ক্লাসে তাদের পড়াটা সম্পন্ন হয়নি। আর তাদের পরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই ও করা হয় নি। যেসকল শিক্ষার্থীরা অকৃতকার্য হওয়ার কথা ছিল তারাও উপরের ক্লাসে উঠে গেছে। এতে করে তাদের মেধার বিকাশের বদলে তাদের ক্ষতি করা হচ্ছে। তারা কি আদৌ কিছু শিখতে পারছে? শিক্ষা জীবনের প্রথম থেকেই একটি দুর্বল শিক্ষা ভিত্তির ওপর থেকে তাদের শিক্ষা জীবন শুরু করছে।
মাধ্যমিক এর শিক্ষার্থীদের ও প্রায় একই অবস্থা তারা প্রমোশন পেয়ে উপরের ক্লাসে উঠেছে। কিন্তু তাদের ও কি প্রাথমিকের মতো সিলেবাস বা বইটি শেষ হয়েছে? তারাও কি আদৌ বাসায় পড়াশোনা করেছে বা কিছু শিখতে পেরেছে? অপরদিকে এ বছরের এসএসসি শিক্ষার্থীদের সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করে পরীক্ষা নেয়ার কথা বলা হয়েছে এর ফলে সিলেবাসের কিছু অংশ শিক্ষার্থীদের পড়া হবে আর কিছু অংশ বাকি থেকে যাবে। এতে মনে হয় না শিক্ষার্থীদের প্রকৃত শিক্ষা অর্জন হচ্ছে।
অনেক বিষয়ই তাদের অজানা থেকে যাচ্ছে। পরবর্তীতে তারা যখন একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হবে তখন এসএসসির অনেক বিষয় তাদের থাকবে এবং তা যদি সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের বাহিরের টপিক হয় তাহলে শিক্ষার্থীদের জন্য তা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। শিক্ষার্থীদের শিখার থেকে না শিখার অংশই তখন বেশি হবে। আর এতে শিক্ষার্থী ও শিক্ষাব্যবস্থার ভবিষ্যৎ কোন দিকে যাচ্ছে সেটা প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।
আবার গত বছর ২০২০ সালে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থীরা এক্সামের জন্য প্রায় কত মাস প্রস্তুতি নিলো, পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করলো কিন্তু করোনার ভয়াবহ প্রকোপ এর জন্য শেষমেশ শিক্ষার্থীদের পরীক্ষাটাই নেয়া হয় নি। তাদের অটোপাশ দিয়ে দেয়া হয়েছে। এত করে আমার মতে সব থেকে তারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কেননা এইচএসসি পরীক্ষার পরই উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এ শিক্ষার্থীরা ভর্তির জন্য প্রস্তুতি নিয়ে থাকে। আর ভর্তির এই প্রক্রিয়া অনেকটানির্ভর করে এইচএসসির রেজাল্টের ওপর। কারণ এইচএসসির জিপিএ অনেকটা নির্ভর করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এ চান্স এর জন্য।
উচ্চশিক্ষার এসব প্রতিষ্ঠান থেকে ভবিষ্যৎ এর ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সহ সমাজের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা তৈরি হবে। যদি এসব উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানে যোগ্য শিক্ষার্থীদের পরিবর্তে অযোগ্য শিক্ষার্থীরা সুযোগ পায় তাহলে দেশের ভবিষ্যৎ কোথায় যেয়ে দাঁড়াবে এটা ভাববার বিষয়।
করোনার ভয়াবহ প্রকোপ এ সব থেকে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন বিশ্ববিদ্যালয় এর শিক্ষার্থীরা। এদের কেউ চতুর্থ বর্ষে যাদের পরীক্ষা নেয়া হলেই বের হয়ে চাকরির জন্য প্রস্তুতি নিবে। কিন্তু তারা আটকে আছে। এতে করে তাদের ক্যারিয়ার হুমকির মুখে পড়ছে। এই একই অবস্থা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া অন্যান্য বর্ষের শিক্ষার্থীদেরও। যেসব শিক্ষার্থীরা মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়ে তাদের অবস্থা আর ও খারাপ। তাদের অনেকের তো পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে পরিবারের টানাপোড়েনের কারণ। এক বছরের বেশি সময় ধরে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকার দরুণ অনেকেই সংসারের দায়িত্ব নিয়েছেন নিজের কাধে। এর ফলে অনেকেই পড়াশোনা থেকে ঝড়ে পড়েছে। এদের অনেকেই তাদের পড়াশোনা শেষ করতে পারবে কিনা সেটা নিয়ে রয়েছে সংশয়।
শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষকরাও রয়েছে সংকটে। যেসব শিক্ষকরা নন-এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান এ চাকরি করে তাদের অনেকের মাসিক বেতন বন্ধ রয়েছে প্রায় অনেক মাস ধরে। এতে তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। শিক্ষক হলেন সমাজ গড়ার কারিগর। আর সেই শিক্ষক এর ই যদি এমন কষ্ট হয় জীবিকা নির্বাহ করতে তাহলে সেটা নিদারুণ যন্ত্রণা ছাড়া আর কিছুই নয়। এছাড়া শিক্ষকরা মহান পেশা শিক্ষকতার সঙ্গে জড়িয়ে, শিক্ষকতা ছেড়ে অন্য কোন পেশায় তারা যদি নিজেদের জড়ায় তাহলে সেটা সমাজের অবনতি ছাড়া আর কিছুই নয়। শিক্ষাখাতের সংকট নিরসনের জন্য শিক্ষার্থী দের সমস্যা দূর করার পাশাপাশি শিক্ষকদের স্বচ্ছলভাবে জীবিকানির্বাহ এর যথাযথ ব্যবস্থা করতে হবে।
অন্যদিকে আমাদের গ্রামীণ শিক্ষাব্যবস্থা অতীতের তুলনায় কিছুটা হলেও পরিবর্তন হয়েছে। তবে যে পরিবর্তন হয়েছে সেটি শিক্ষাব্যবস্থার সংকট নিরসনের জন্য যথেষ্ট নয় এবং সময়ের সঙ্গে অনেকটাই পিছিয়ে। গ্রামে এখনো সরকারি স্কুলগুলোতে যথাযথভাবে ক্লাস হয় না। শিক্ষক ও শিক্ষার্থী অনেকেই ক্লাস পরীক্ষা পড়াশোনার প্রতি উদাসীন। ড্রেস থেকে শুরু করে ক্লাসের ব্যাপারে কোনমতে বেখেয়ালিভাবে চলছে স্কুলের কার্যক্রম। যেটা কোনমতে কাম্য নয়।
সর্বোপরি আমাদের দেশের উন্নয়নের জন্য, দেশকে এগিয়ে নেয়ার জন্য বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার জন্য দেশের শিক্ষাব্যবস্থার, শিক্ষাখাতের উন্নয়ন করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা বর্তমানে এক ভয়াবহ অবস্থা পার করছে। শিক্ষাব্যবস্থা, শিক্ষা খাতের সবকিছু তে সমন্বয় হীনতার অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের মধ্যে বাড়ছে হতাশা, তারা সময়মতো বের হতে পারছে নাহ চাকরি বাজারে চাকরি পাচ্ছে না। চাকরির অভাবে বেকার হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের ভবিষ্যৎ হয়ে পড়ছে অনিশ্চিত।
দেশের শিক্ষাব্যবস্থার এই করুণ পরিনতি ঠেকাতে প্রথমেই আমাদের কে শিক্ষিত বেকার তৈরি বন্ধ করতে হবে। সবার জন্য চাকরি নিশ্চিত করতে হবে নতুবা গ্রাজুয়েট এর পরিমাণ কমাতে হবে। প্রতিবছর এতো শিক্ষিত বেকার তৈরি করে কি লাভ যদি না তাদের চাকরির ব্যবস্থা না করা যায়!
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের আগে শিক্ষিত বেকারদের আগে চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে তাহলে দেশে বেকার সমস্যা কিছুটা হলে ও নিরসন হবে। শিক্ষা খাত একটি দেশের মেরুদণ্ড। মেরুদণ্ড যদি সোজা না হয় তাহলে দেশে উন্নতি হবে কী করে! তাই দেশের উন্নয়নের জন্য শিক্ষা খাতের সংকট নিরসন করতে হবে যথাযথ ব্যবস্থার মাধ্যমে যাতে দেশের ভবিষ্যৎকে রক্ষা করা যায়।
[লেখক : শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়]