alt

মুক্ত আলোচনা

স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ফল

অখিল পোদ্দার

: শনিবার, ২৯ মে ২০২১

এখন রসালো ফলের মৌসুম। করোনা ভাইরাস সংক্রমণের এই মহামারীতে সুস্থ থাকতে প্রতিদিনের খাদ্য পুষ্টি নিশ্চিত করতে ফল খাওয়ার বিষয় নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। টাটকা ফলমূল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। করোনার থাবায় বিশ্বব্যাপী মানুষ আজ দিশেহারা। এছাড়া গরমের এ সময় জ্বর, ডায়রিয়া, পেটের অসুখ দেখা দেয়। প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম বলে ফলের পুষ্টি রোগ প্রতিরোধের অন্যতম উৎস। রান্না না করে সরাসরি খাওয়া হয় বলে ফলের পুষ্টিগুণ অক্ষুণ্ন থাকে। কাজেই গরমে অসুখ-বিসুখ থেকে দূরে থাকতে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় মৌসুমি ফল রাখতে হবে।

আমরা অনেকেই শিশুকে আঙ্গুর, আপেল, নাশপাতি, কমলা ইত্যাদি দামি ফল খেতে দিতে পছন্দ করি। কিন্তু এসব দামি ফলের তুলনায় আমাদের দেশীয় ফলের পুষ্টিমান কোন অংশেই কম নয়। আম, জাম, কাঁঠাল, বরই, আমড়া, আমলকী, পেয়ারা, ফুটি, জামবুরা, পানিফল, জামরুল, করমচা, বাঙ্গি, আতা, ডেউওয়া, লটকন ইত্যাদি প্রতিটি দেশীয় ফলই কমবেশি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। মৌসুমভেদে সহজলভ্যও বটে। প্রতিদিন মাত্র ২টি আমলকী খেয়ে একজন মানুষের প্রতিদিনের ভিটামিন ‘সি’ চাহিদা পূরণ হয়। পেয়ারার ভিটামিন ‘সি’ আপেলের চেয়ে ৪২ গুণ আর আঙ্গুরের চেয়ে ৫০ গুণ বেশি। আর নারিকেল, কাঁচা তেঁতুল, খেজুর, সফেদা, কালোজাম, আমড়া, আনারস, আমলকী, আম, কাঁঠাল ইত্যাদি আয়রনের ভালো উৎস। খাদ্যশক্তির উৎস হিসেবে সস্তাদামের বাদামের কোন তুলনা নেই। কাজেই পুষ্টির জন্য দামি ফল যে খেতেই হবে, তা ঠিক নয়।

ঋতু বৈচিত্র্যে জ্যৈষ্ঠ ও আষাঢ় মাসকে বলা হয় মধু মাস। ফলের পুষ্টিতে রসনাকে তৃপ্ত করার মাস। ফলের রাজা আম মধু মাসের সেরা ফল। সঙ্গে আছে কাঁঠাল, লিচু, জাম, তরমুজ আনারস, কলা, পেঁপে ইত্যাদি। রসে ভরপুর এসব ফল এ সময় যেমন সহজলভ্য তেমনি পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ। অস্বস্তিকর গরমে এসব ফল শরীরে প্রশান্তি আনে। ফলের রস ক্লান্তি আর অবসন্নতা দূর করে শরীরকে সহজেই কর্মক্ষম করে তোলে। আম-দুধের মিল্কসেক নবীন-প্রবীণ সবারই খুব প্রিয়। এছাড়া ফল দিয়ে নানা রকম মুখরোচক খাবার বানানো যায়। কয়েক দিন আগে ঝড়ে প্রচুর ফলজ গাছের ক্ষতি হয়েছে। এরমধ্যে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে আমের। প্রচুর কাঁচা আম ঝড়ে পড়েছে। এ কাঁচা আম দিয়ে মজাদার চাটনি বানানো যায় এবং সংরক্ষণ করে সারাবছর খাওয়া যায়। এ সময় নিয়মিত ফল খেয়ে সহজেই পুষ্টির চাহিদা মেটানো যায়।

দেশের সর্বত্রই ফলের বাজার জমজমাট হতে শুরু করেছে। ফল কেনা এবং খাওয়ার সময় দেখে শুনে খাওয়াই ভালো। কারণ গরমে পাকা ফল খুবই তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়। পচা ফল খাওয়া কোন মতেই ঠিক নয়। ফল পাকা টাটকা থাকতে খেলেই ফলের পুষ্টি শরীরের কাজে লাগবে। পচা ফল পুষ্টি দেয়ার পরিবর্তে শরীরকে রোগাক্রান্ত করে তোলে। তাই ফল খাওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে ফলটি যেন হয় পাকা আর টাটকা।

ফল ধুয়ে না খাওয়ার অভ্যাস অনেকের মাঝেই দেখা যায়। এটাও স্বাস্থ্যসম্মত নয়। ফল খাওয়ার আগে তা অবশ্যই নিরাপদ পানি দিয়ে ধুয়ে খেতে হবে। কেননা ফল খাওয়া হয় সরাসরি। ফল ধুয়ে না খেলে ফল থেকে নানা রোগজীবাণু শরীরে ঢুকে শরীরকে রোগাক্রান্ত করতে পারে সহজেই। এ থেকেই হতে পারে ডায়রিয়া বা পেটের অসুখ।

গ্রামাঞ্চলে এখনও হাটে-বাজারে কাঁঠাল বা তরমুজ কয়েক জনে মিলে কিনে একত্রে বসে খাওয়ার দৃশ্য দেখা যায়। আবার শহরেও খোলা জায়গায়, রাস্তার মোড়ে মোড়ে ফল কেটে বিক্রি করতে দেখা যায়। এ কাজটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ রাস্তার ধারে বা খোলা জায়গায় কাটা ফল ডায়রিয়া, জন্ডিস, কৃমি, বদহজমসহ নানা রকম সংক্রামক রোগ ছড়ায়। তখন কাটা ফল দেহকে বল দেয়ার পরিবর্তে অসুস্থ করে তোলে। তাই কোনভাবেই খোলা এবং অনেকক্ষণ থেকে কেটে রাখা ফল খাওয়া উচিত নয়।

অনেক অসাধু ব্যবসায়ী অনেক সময় ফলকে আকষর্ণীয় করার জন্য এতে কৃত্রিম রং মেশায়। আবার ব্যবসায় অত্যাধিক লাভের আশায় কৃত্রিম উপায়ে ফল পাকানো হয়। ফল যাতে সহজে পচন না ধরে সেজন্য ফলে ফরমালিন মেশানো হয়। ফল কেনার সময় এ দিকটিতেও বিশেষ নজর দেয়া প্রয়োজন। কৃত্রিম রং, কার্বাইড, ফরমালিন মানুষের শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

ফলে ক্যামিকেল মিশানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ বিষয়ে সরকার অত্যন্ত সজাগ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের কর্মকর্তারা তৎপর রয়েছে। সরকারের বিভিন্ন সংস্থার তৎপরতায় ফলে ক্যামিকেল মেশানো ব্যাপকভাবে কমেছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত ফলের আড়ৎ এবং দোকনগুলোর দিকে সতর্ক দৃষ্টি রেখেছে। অসাধু বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। কাক্সিক্ষত ফলও মিলছে। গত বছর সরকার বাগান থেকে আম ও লিচু ১৫ মার্চের আগে সংগ্রহ করা যাবে না বলে সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছিল। ফলে আম ও লিচু পরিপক্ক অবস্থায় বাগান থেকে সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছিল।

গরমে পাকা ফল বেশিক্ষণ তাজা থাকে না। তাই ফল কেনার পর তা টাটকা থাকতে থাকতেই খেয়ে নিতে হবে। ঠিক সময়ে খেতে না পারলে তাজা থাকতেই স্বাস্থ্যসম্মতভাবে সংরক্ষণ করা উচিত। রসালো যে কোন ফল দিয়ে ঘরেই সহজে জ্যাম, স্কোয়াস, জেলি ইত্যাদি বানিয়ে সংরক্ষণ করা যায়। আম, কাঁঠাল বা লিচুর পাল্প সংগ্রহ করে কন্টেইনারে ভরে ডিপ ফ্রিজে সংরক্ষণ করা যায়। ফলের এ পাল্প দিয়ে পরবর্তীতে জুস বা শরবত বানিয়ে খাওয়া যায়।

অজ্ঞতার কারণেই হোক বা ফল খাওয়ার অভ্যাস কম থাকার জন্যই হোক, আমাদের দেশে ফল খাওয়া হয় সাধারণত কেউ অসুস্থ হলে। আবার কেউ হয়তো হাতের কাছে পেয়ে একদিনই বেশি করে ফল খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এই দুই অবস্থার কোনটিই স্বাস্থ্যসম্মত নয়। নিয়ম করে প্রতিদিন দু’একটি মৌসুমি ফল খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। কারণ ফল পুষ্টিসমৃদ্ধ ও রোগ প্রতিরোধকারী খাদ্য। ফলের রস সহজে হজম হয়, শরীরে কাজ করে তাড়াতাড়ি। ফলে আঁশ জাতীয় উপাদান থাকে বলে তা কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে। প্রতিটি ফলেই কম বেশি পরিমাণ ভিটামিন ও খনিজ লবণ থাকে।

কাজেই শুধু অসুস্থ হলেই নয় বরং প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় একটি করে পাকা ও টাটকা ফল আমাদের নিরোগ স্বাস্থ্য ও দীর্ঘজীবন দিতে পারে। করোনার এই মহামারীতে আমাদের সুস্থ থাকা খুবই জরুরি। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ফলের জুড়ি নেই। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ফল রাখার বিষয়ে আমাদের সচেতন হতে হবে।

(পিআইডি-শিশু ও নারী উন্নয়নে সচেতনতামূলক যোগাযোগ কার্যক্রম নিবন্ধ)

মুজিবনগরে স্বাধীনতার সূর্যোদয়

বঙ্গাব্দ প্রচলনের ইতিকথা

পহেলা বৈশাখ বাঙালির প্রাণের উৎসব

কেউতো অপেক্ষায় নেই

ফরগেট মি নট

ছবি

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ সমার্থক

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বীমা শিল্পের গুরুত্ব

একুশে ফেব্রুয়ারি আত্মপরিচয়ের দিন

দিদি, আপা, “বু” খালা

হিজল-করচ-আড়াংবন

ছবি

শেখ হাসিনা, এক উৎসারিত আলোকধারা

মনমাঝি

সেই ইটনা

ছবি

আংকর ওয়াট : উন্নত সভ্যতার স্মৃতিচিহ্ন যেখানে

নিয়ত ও নিয়তি

হারিয়ে যাওয়া ট্রেন

টম সয়ার না রবিনহুড

ছবি

‘ঝড়-বৃষ্টি আঁধার রাতে, আমরা আছি তোমার সাথে’

বাংলাদেশ-জাপান সহযোগিতা স্মারক: স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অনন্য মাইলফলক

রাষ্ট্রের কূটনৈতিক মিশনের পরিবর্তন আশু প্রয়োজন

কুয়েতের জীবনযাত্রার সাতকাহন: পর্ব-১-বিয়ে

বিবেকের লড়াই

ছবি

ছবি যেন শুধু ছবি নয়

বাত ব্যথার কারণ ও আধুনিক চিকিৎসা

ছবি

স্বাধীন স্বদেশে মুক্ত বঙ্গবন্ধু

ছবি

মহান নেতার স্বভূমিতে ফিরে আসা

ছবি

মেট্রোরেল : প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী চিন্তার ফসল

ছবি

আমার মা

ডিজিটাল বাংলাদেশ: প্রগতিশীল প্রযুক্তি, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নতি

ছবি

৩ নভেম্বর: ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ডের ধারাবাহিকতা

দেশের ইতিহাসে কলঙ্কজনক দ্বিতীয় অধ্যায়

এইচ এস সি ও সমমান পরীক্ষার্থীদের অনুশীলন

ছবি

ত্রিশ বছর পূর্তিতে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়

শিল্প কারখানার পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনায় এনভায়রনমেন্টাল ইন্জিনিয়ারিং

অসুর: এক পরাজিত বিপ্লবী

অসুর জাতির ইতিহাস

tab

মুক্ত আলোচনা

স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ফল

অখিল পোদ্দার

শনিবার, ২৯ মে ২০২১

এখন রসালো ফলের মৌসুম। করোনা ভাইরাস সংক্রমণের এই মহামারীতে সুস্থ থাকতে প্রতিদিনের খাদ্য পুষ্টি নিশ্চিত করতে ফল খাওয়ার বিষয় নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। টাটকা ফলমূল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। করোনার থাবায় বিশ্বব্যাপী মানুষ আজ দিশেহারা। এছাড়া গরমের এ সময় জ্বর, ডায়রিয়া, পেটের অসুখ দেখা দেয়। প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম বলে ফলের পুষ্টি রোগ প্রতিরোধের অন্যতম উৎস। রান্না না করে সরাসরি খাওয়া হয় বলে ফলের পুষ্টিগুণ অক্ষুণ্ন থাকে। কাজেই গরমে অসুখ-বিসুখ থেকে দূরে থাকতে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় মৌসুমি ফল রাখতে হবে।

আমরা অনেকেই শিশুকে আঙ্গুর, আপেল, নাশপাতি, কমলা ইত্যাদি দামি ফল খেতে দিতে পছন্দ করি। কিন্তু এসব দামি ফলের তুলনায় আমাদের দেশীয় ফলের পুষ্টিমান কোন অংশেই কম নয়। আম, জাম, কাঁঠাল, বরই, আমড়া, আমলকী, পেয়ারা, ফুটি, জামবুরা, পানিফল, জামরুল, করমচা, বাঙ্গি, আতা, ডেউওয়া, লটকন ইত্যাদি প্রতিটি দেশীয় ফলই কমবেশি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। মৌসুমভেদে সহজলভ্যও বটে। প্রতিদিন মাত্র ২টি আমলকী খেয়ে একজন মানুষের প্রতিদিনের ভিটামিন ‘সি’ চাহিদা পূরণ হয়। পেয়ারার ভিটামিন ‘সি’ আপেলের চেয়ে ৪২ গুণ আর আঙ্গুরের চেয়ে ৫০ গুণ বেশি। আর নারিকেল, কাঁচা তেঁতুল, খেজুর, সফেদা, কালোজাম, আমড়া, আনারস, আমলকী, আম, কাঁঠাল ইত্যাদি আয়রনের ভালো উৎস। খাদ্যশক্তির উৎস হিসেবে সস্তাদামের বাদামের কোন তুলনা নেই। কাজেই পুষ্টির জন্য দামি ফল যে খেতেই হবে, তা ঠিক নয়।

ঋতু বৈচিত্র্যে জ্যৈষ্ঠ ও আষাঢ় মাসকে বলা হয় মধু মাস। ফলের পুষ্টিতে রসনাকে তৃপ্ত করার মাস। ফলের রাজা আম মধু মাসের সেরা ফল। সঙ্গে আছে কাঁঠাল, লিচু, জাম, তরমুজ আনারস, কলা, পেঁপে ইত্যাদি। রসে ভরপুর এসব ফল এ সময় যেমন সহজলভ্য তেমনি পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ। অস্বস্তিকর গরমে এসব ফল শরীরে প্রশান্তি আনে। ফলের রস ক্লান্তি আর অবসন্নতা দূর করে শরীরকে সহজেই কর্মক্ষম করে তোলে। আম-দুধের মিল্কসেক নবীন-প্রবীণ সবারই খুব প্রিয়। এছাড়া ফল দিয়ে নানা রকম মুখরোচক খাবার বানানো যায়। কয়েক দিন আগে ঝড়ে প্রচুর ফলজ গাছের ক্ষতি হয়েছে। এরমধ্যে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে আমের। প্রচুর কাঁচা আম ঝড়ে পড়েছে। এ কাঁচা আম দিয়ে মজাদার চাটনি বানানো যায় এবং সংরক্ষণ করে সারাবছর খাওয়া যায়। এ সময় নিয়মিত ফল খেয়ে সহজেই পুষ্টির চাহিদা মেটানো যায়।

দেশের সর্বত্রই ফলের বাজার জমজমাট হতে শুরু করেছে। ফল কেনা এবং খাওয়ার সময় দেখে শুনে খাওয়াই ভালো। কারণ গরমে পাকা ফল খুবই তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়। পচা ফল খাওয়া কোন মতেই ঠিক নয়। ফল পাকা টাটকা থাকতে খেলেই ফলের পুষ্টি শরীরের কাজে লাগবে। পচা ফল পুষ্টি দেয়ার পরিবর্তে শরীরকে রোগাক্রান্ত করে তোলে। তাই ফল খাওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে ফলটি যেন হয় পাকা আর টাটকা।

ফল ধুয়ে না খাওয়ার অভ্যাস অনেকের মাঝেই দেখা যায়। এটাও স্বাস্থ্যসম্মত নয়। ফল খাওয়ার আগে তা অবশ্যই নিরাপদ পানি দিয়ে ধুয়ে খেতে হবে। কেননা ফল খাওয়া হয় সরাসরি। ফল ধুয়ে না খেলে ফল থেকে নানা রোগজীবাণু শরীরে ঢুকে শরীরকে রোগাক্রান্ত করতে পারে সহজেই। এ থেকেই হতে পারে ডায়রিয়া বা পেটের অসুখ।

গ্রামাঞ্চলে এখনও হাটে-বাজারে কাঁঠাল বা তরমুজ কয়েক জনে মিলে কিনে একত্রে বসে খাওয়ার দৃশ্য দেখা যায়। আবার শহরেও খোলা জায়গায়, রাস্তার মোড়ে মোড়ে ফল কেটে বিক্রি করতে দেখা যায়। এ কাজটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ রাস্তার ধারে বা খোলা জায়গায় কাটা ফল ডায়রিয়া, জন্ডিস, কৃমি, বদহজমসহ নানা রকম সংক্রামক রোগ ছড়ায়। তখন কাটা ফল দেহকে বল দেয়ার পরিবর্তে অসুস্থ করে তোলে। তাই কোনভাবেই খোলা এবং অনেকক্ষণ থেকে কেটে রাখা ফল খাওয়া উচিত নয়।

অনেক অসাধু ব্যবসায়ী অনেক সময় ফলকে আকষর্ণীয় করার জন্য এতে কৃত্রিম রং মেশায়। আবার ব্যবসায় অত্যাধিক লাভের আশায় কৃত্রিম উপায়ে ফল পাকানো হয়। ফল যাতে সহজে পচন না ধরে সেজন্য ফলে ফরমালিন মেশানো হয়। ফল কেনার সময় এ দিকটিতেও বিশেষ নজর দেয়া প্রয়োজন। কৃত্রিম রং, কার্বাইড, ফরমালিন মানুষের শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

ফলে ক্যামিকেল মিশানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ বিষয়ে সরকার অত্যন্ত সজাগ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের কর্মকর্তারা তৎপর রয়েছে। সরকারের বিভিন্ন সংস্থার তৎপরতায় ফলে ক্যামিকেল মেশানো ব্যাপকভাবে কমেছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত ফলের আড়ৎ এবং দোকনগুলোর দিকে সতর্ক দৃষ্টি রেখেছে। অসাধু বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। কাক্সিক্ষত ফলও মিলছে। গত বছর সরকার বাগান থেকে আম ও লিচু ১৫ মার্চের আগে সংগ্রহ করা যাবে না বলে সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছিল। ফলে আম ও লিচু পরিপক্ক অবস্থায় বাগান থেকে সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছিল।

গরমে পাকা ফল বেশিক্ষণ তাজা থাকে না। তাই ফল কেনার পর তা টাটকা থাকতে থাকতেই খেয়ে নিতে হবে। ঠিক সময়ে খেতে না পারলে তাজা থাকতেই স্বাস্থ্যসম্মতভাবে সংরক্ষণ করা উচিত। রসালো যে কোন ফল দিয়ে ঘরেই সহজে জ্যাম, স্কোয়াস, জেলি ইত্যাদি বানিয়ে সংরক্ষণ করা যায়। আম, কাঁঠাল বা লিচুর পাল্প সংগ্রহ করে কন্টেইনারে ভরে ডিপ ফ্রিজে সংরক্ষণ করা যায়। ফলের এ পাল্প দিয়ে পরবর্তীতে জুস বা শরবত বানিয়ে খাওয়া যায়।

অজ্ঞতার কারণেই হোক বা ফল খাওয়ার অভ্যাস কম থাকার জন্যই হোক, আমাদের দেশে ফল খাওয়া হয় সাধারণত কেউ অসুস্থ হলে। আবার কেউ হয়তো হাতের কাছে পেয়ে একদিনই বেশি করে ফল খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এই দুই অবস্থার কোনটিই স্বাস্থ্যসম্মত নয়। নিয়ম করে প্রতিদিন দু’একটি মৌসুমি ফল খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। কারণ ফল পুষ্টিসমৃদ্ধ ও রোগ প্রতিরোধকারী খাদ্য। ফলের রস সহজে হজম হয়, শরীরে কাজ করে তাড়াতাড়ি। ফলে আঁশ জাতীয় উপাদান থাকে বলে তা কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে। প্রতিটি ফলেই কম বেশি পরিমাণ ভিটামিন ও খনিজ লবণ থাকে।

কাজেই শুধু অসুস্থ হলেই নয় বরং প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় একটি করে পাকা ও টাটকা ফল আমাদের নিরোগ স্বাস্থ্য ও দীর্ঘজীবন দিতে পারে। করোনার এই মহামারীতে আমাদের সুস্থ থাকা খুবই জরুরি। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ফলের জুড়ি নেই। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ফল রাখার বিষয়ে আমাদের সচেতন হতে হবে।

(পিআইডি-শিশু ও নারী উন্নয়নে সচেতনতামূলক যোগাযোগ কার্যক্রম নিবন্ধ)

back to top