শরীফ মো. রুহুল কুদ্দুস
মাহিনের বয়স ১৮ মাস। দুই দিন ধরে জ্বর, সঙ্গে বমি ও পাতলা পায়খানা। প্রাথমিক সেবা হিসেবে মা ছেলেকে মাথায় পানি দিচ্ছেন, ওরস্যালাইন খাওয়াচ্ছেন, পাশাপাশি মায়ের বুকের দুধও চালিয়ে যাচ্ছেন। করোনাভাইরাসের কারণে সারাদেশে একটি অস্বস্তিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সহজে ডাক্তার পাওয়া মুশকিল। জরুরি সেবা ১৬২৬৩ নম্বরে ফোন করে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খাইয়ে মাহিন এখন বিপদমুক্ত।
বাংলাদেশ মৌসুমি জলবায়ুর দেশ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তীব্র গরম, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। প্রচ- গরম ও আবহাওয়াগত কারণে মানুষের মধ্যে বেশি অসুখবিসুখ দেখা দেয়। এর মধ্যে ডায়রিয়া অন্যতম। ডায়রিয়ায় শিশুরাই বেশি আক্রান্ত হয়।
গরমের তাপদাহে মানুষের মধ্যে বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে অস্বস্তি বাড়ে। বাতাসে সংক্রামক জীবাণু ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় শিশুরা বেশি ঝুঁকিতে থাকে। রোগ-ব্যাধির হাত থেকে রক্ষা পেতে শিশুদের বিশেষ যতœ নেয়া একান্ত প্রয়োজন। এ সময় বাতাসে ভাইরাসের কারণে ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়ে জ্বর, হাম ও ডায়রিয়া। গরমে শিশুদের সুস্থ রাখতে পরিবারের সবার বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। কারণ গরমে কষ্ট পেলেও ছোট শিশুরা তা প্রকাশ করতে পারে না। ফলে তারা সহজেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ বছর করোনা সংক্রমণের কারণে শিশুরা ঘরবন্দী হয়ে পড়েছে। তারা বেশি সময় রোদে ঘোরাফেরা করতে পারছে না, ফলে শিশুর ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কম।
গরম আসার সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে যায় ডায়রিয়ার প্রকোপ। ডায়রিয়ার লক্ষণগুলো সম্পর্কে আমাদের ধারণা থাকা দরকার। দিনে তিন বার বা এর বেশি পাতলা পায়খানা হলে, শরীর দুর্বল হলে, খাবারে রুচি কমে গেলে ধরে নিতে হবে শিশু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। ডায়রিয়া শুরুর প্রথম দিকে বমি হলেও পরে অনেক ক্ষেত্রে কমে যায়। জ্বর এলেও তা হয়তো খুব একটা তীব্র হয় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শরীর হালকা গরম থাকে। ডায়রিয়ার প্রাথমিক চিকিৎসার পরও সুস্থ না হলে শিশুকে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
অনেক কারণে শিশুরা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে থাকে। খাবারে বিষক্রিয়া, খাওয়ার আগে ভালো করে হাত না ধোয়া, খাবার বা পানি খোলা পাত্রে রাখলে অথবা পানি জীবাণুমুক্ত না করে পান করলে শিশুর ডায়রিয়া হতে পারে। এ সময়ে গরমের কারণে খাবার দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়, জীবাণুর বংশবৃদ্ধি দ্রুত হয় এবং পচনশীল ও জীবাণু আক্রান্ত খাদ্য খেয়ে শিশুরা সহজেই পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হয়। তাই খাবার পানি ভালো করে ফুটিয়ে বা জীবাণুমুক্ত করে পান করতে হবে। বাসি বা বাইরের খোলা খাবার খাওয়া যাবে না। খাদ্যদ্রব্য স্বাস্থ্যসম্মতভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। ফ্রিজে রাখা খাবার গরম করে খেতে হবে। খাবার আগে শিশুর হাত ভালো করে ধোয়াতে হবে এবং পায়খানার পর ভালো করে হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে দিতে হবে। এসব স্বাস্থ্যবিধিগুলো মানলে অনেকাংশে ডায়রিয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব।
এছাড়া শিশুরা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আরও কিছু কারণ রয়েছে। যেসব শিশুরা ঠিক মতো মায়ের বুকের দুধ পায়নি অথবা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম সেসব শিশুদের ডায়রিয়াসহ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। তাই জন্মের পর প্রথমেই শিশুকে মায়ের শালদুধ খাওয়াতে হবে। শালদুধ শিশুর শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, যে সব শিশুকে ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শুধু বুকের দুধ খাওয়ানো হয়, সে সব শিশুর তুলনায় কৌটার দুধ খাওয়ানো শিশুর ডায়রিয়ায় আক্রান্তের হার তিন গুণ বেশি। কিছু কর্মজীবী মায়েরা আছেন যারা বোতলের দুধ খাওয়ানোই স্বাচ্ছন্দ্য মনে করেন। বোতলের দুধ খাওয়ানোর ঝুঁকি অনেক বেশি। একবার তৈরি করা দুধ ছয় ঘণ্টা পর্যন্ত বোতলে সংরক্ষণ করে খাওয়ানো যায়। প্রতিবার সংরক্ষণের পূর্বে বোতল ভালো করে পরিষ্কার করে নিতে হবে। তা না হলে বোতলের রোগজীবাণু দুধের সঙ্গে শিশুর পেটে গিয়ে সহজেই শিশু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে।
শিশুর ডায়রিয়া হলে কিছু নিয়মকানুন মেনে স্যালাইন খাওয়ানো প্রয়োজন। এক প্যাকেট স্যালাইন আধা লিটার বিশুদ্ধ খাবার পানিতে মেশাতে হবে। স্যালাইনের প্যাকেট ভেঙে একাধিকবার মেশানো যাবে না, এতে করে লবণের মাত্রা কম বেশি হতে পারে এবং এর ফলে শিশুর মারাত্মক সমস্যা দেখা দিতে পারে। একবার মেশানো স্যালাইন ছয় ঘণ্টা পর্যন্ত শিশুকে খাওয়ানো যাবে। প্রতিবার পায়খানার পর শিশুকে স্যালাইন খাওয়াতে হবে। প্যাকেট স্যালাইন কাছাকাছি পাওয়া না গেলে ঘরে বসেও স্যালাইন বানানো যায়। সেক্ষেত্রে এক মুঠো গুড়, এক চিমটি লবণ এবং আধা লিটার বিশুদ্ধ পানি দিয়ে খাবার স্যালাইন তৈরি করা যায়। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুকে স্যালাইনের পাশাপাশি মায়ের বুকের দুধ বা বয়স ভেদে অন্যান্য তরল খাবার বা স্বাভাবিক খাবার খাওয়ানো যাবে।
ডায়রিয়ার সবচেয়ে বড় জটিলতা হলো পানিশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশন। শিশুর শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিলে শিশু দুর্বল হয়ে পড়ে, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যায় এমনকি শিশু অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারে। তাই শিশু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে সবসময় খেয়াল রাখতে হবে শিশুর শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিয়েছে কিনা। পানিশূন্যতার লক্ষণ দেখা দেয়ার আগেই শিশুকে বার বার স্যালাইন ও তরল খাবার দিতে হবে। যেমন- চিড়া কচলানো পানি, ডাবের পানি, ফলের রস ও লবণ-গুড়ের শরবত ইত্যাদি। অবস্থা বেশি খারাপ হলে জরুরিভিত্তিতে শিশুকে হাসপাতালে নিতে হবে।
ডায়রিয়া পরবর্তী বেশিরভাগ শিশুই অপুষ্টিতে ভোগে। এ সময় শিশুকে পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার দিতে হবে। যেমন- বিভিন্ন সবজি দিয়ে খিচুরি, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, কলা, টাটকা ফলের রস- সবকিছুই শিশুকে খাওয়ানো যাবে। তবে রান্না করা খাবারগুলো অবশ্যই ভালো সিদ্ধ হতে হবে। ডায়রিয়ার পর ১৫ দিন জিঙ্ক সিরাপ বা ট্যাবলেট দিতে হবে। এতে শিশুর ডায়রিয়ার কারণে দুর্বলতা কেটে যাবে এবং শরীর স্বাভাবিক হতে সাহায্য করবে।
করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বব্যাপী ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে এসেছে। শিশু, নারীসহ প্রতিটি মানুষ আজ আতঙ্কগ্রস্ত। অস্বাভাবিক সংকট বিরাজ করছে। এ অবস্থায় করোনা ছাড়াও বিভিন্ন রোগ সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। ব্যক্তিগত সুরক্ষা সবার আগে জরুরি। বার বার সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যাওয়া যাবে না।
আমাদের দেশে ডায়রিয়া একটি সাধারণ ও কমন রোগ। গরমকালে ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা খুবই সাধারণ একটি সমস্যা। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে হবে। এখন কমিউনিটি ক্লিনিক, স্বাস্থ্যকেন্দ্র হাতের নাগালে। তাছাড়া জরুরি স্বাস্থ্য বাতায়ন হটলাইন ১৬২৬৩ নম্বরে ফোন করেও সঙ্গে সঙ্গে প্রতিকার পাওয়া যায়। তবে ডায়রিয়াসহ সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ করার জন্য কিছু পূর্ব সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বাসায় খাবার স্যালাইন রাখতে হবে, বিশুদ্ধ ও নিরাপদ পানি পান করতে হবে, বাসি খাবার গ্রহণ করা যাবে না, সময়মতো শিশুর সবগুলো টিকা দিতে হবে, টাটকা ফলমূল বেশি খেতে হবে, শিশুর ব্যবহার করা সব জিনিষপত্র পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে, খাবার আগে এবং পায়খানার পরে ভালোভাবে সাবান দিয়ে হাত ধুইয়ে দিতে হবে। এসব সতর্কতা অবলম্বন করলে সহজেই শিশুকে ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগ থেকে নিরাপদে রাখা যায়।
(পিআইডি-শিশু ও নারী উন্নয়নে যোগাযোগ কার্যক্রম বিষয়ক ফিচার)
শরীফ মো. রুহুল কুদ্দুস
শনিবার, ২৯ মে ২০২১
মাহিনের বয়স ১৮ মাস। দুই দিন ধরে জ্বর, সঙ্গে বমি ও পাতলা পায়খানা। প্রাথমিক সেবা হিসেবে মা ছেলেকে মাথায় পানি দিচ্ছেন, ওরস্যালাইন খাওয়াচ্ছেন, পাশাপাশি মায়ের বুকের দুধও চালিয়ে যাচ্ছেন। করোনাভাইরাসের কারণে সারাদেশে একটি অস্বস্তিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সহজে ডাক্তার পাওয়া মুশকিল। জরুরি সেবা ১৬২৬৩ নম্বরে ফোন করে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খাইয়ে মাহিন এখন বিপদমুক্ত।
বাংলাদেশ মৌসুমি জলবায়ুর দেশ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তীব্র গরম, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। প্রচ- গরম ও আবহাওয়াগত কারণে মানুষের মধ্যে বেশি অসুখবিসুখ দেখা দেয়। এর মধ্যে ডায়রিয়া অন্যতম। ডায়রিয়ায় শিশুরাই বেশি আক্রান্ত হয়।
গরমের তাপদাহে মানুষের মধ্যে বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে অস্বস্তি বাড়ে। বাতাসে সংক্রামক জীবাণু ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় শিশুরা বেশি ঝুঁকিতে থাকে। রোগ-ব্যাধির হাত থেকে রক্ষা পেতে শিশুদের বিশেষ যতœ নেয়া একান্ত প্রয়োজন। এ সময় বাতাসে ভাইরাসের কারণে ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়ে জ্বর, হাম ও ডায়রিয়া। গরমে শিশুদের সুস্থ রাখতে পরিবারের সবার বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। কারণ গরমে কষ্ট পেলেও ছোট শিশুরা তা প্রকাশ করতে পারে না। ফলে তারা সহজেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ বছর করোনা সংক্রমণের কারণে শিশুরা ঘরবন্দী হয়ে পড়েছে। তারা বেশি সময় রোদে ঘোরাফেরা করতে পারছে না, ফলে শিশুর ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কম।
গরম আসার সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে যায় ডায়রিয়ার প্রকোপ। ডায়রিয়ার লক্ষণগুলো সম্পর্কে আমাদের ধারণা থাকা দরকার। দিনে তিন বার বা এর বেশি পাতলা পায়খানা হলে, শরীর দুর্বল হলে, খাবারে রুচি কমে গেলে ধরে নিতে হবে শিশু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। ডায়রিয়া শুরুর প্রথম দিকে বমি হলেও পরে অনেক ক্ষেত্রে কমে যায়। জ্বর এলেও তা হয়তো খুব একটা তীব্র হয় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শরীর হালকা গরম থাকে। ডায়রিয়ার প্রাথমিক চিকিৎসার পরও সুস্থ না হলে শিশুকে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
অনেক কারণে শিশুরা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে থাকে। খাবারে বিষক্রিয়া, খাওয়ার আগে ভালো করে হাত না ধোয়া, খাবার বা পানি খোলা পাত্রে রাখলে অথবা পানি জীবাণুমুক্ত না করে পান করলে শিশুর ডায়রিয়া হতে পারে। এ সময়ে গরমের কারণে খাবার দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়, জীবাণুর বংশবৃদ্ধি দ্রুত হয় এবং পচনশীল ও জীবাণু আক্রান্ত খাদ্য খেয়ে শিশুরা সহজেই পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হয়। তাই খাবার পানি ভালো করে ফুটিয়ে বা জীবাণুমুক্ত করে পান করতে হবে। বাসি বা বাইরের খোলা খাবার খাওয়া যাবে না। খাদ্যদ্রব্য স্বাস্থ্যসম্মতভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। ফ্রিজে রাখা খাবার গরম করে খেতে হবে। খাবার আগে শিশুর হাত ভালো করে ধোয়াতে হবে এবং পায়খানার পর ভালো করে হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে দিতে হবে। এসব স্বাস্থ্যবিধিগুলো মানলে অনেকাংশে ডায়রিয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব।
এছাড়া শিশুরা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আরও কিছু কারণ রয়েছে। যেসব শিশুরা ঠিক মতো মায়ের বুকের দুধ পায়নি অথবা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম সেসব শিশুদের ডায়রিয়াসহ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। তাই জন্মের পর প্রথমেই শিশুকে মায়ের শালদুধ খাওয়াতে হবে। শালদুধ শিশুর শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, যে সব শিশুকে ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শুধু বুকের দুধ খাওয়ানো হয়, সে সব শিশুর তুলনায় কৌটার দুধ খাওয়ানো শিশুর ডায়রিয়ায় আক্রান্তের হার তিন গুণ বেশি। কিছু কর্মজীবী মায়েরা আছেন যারা বোতলের দুধ খাওয়ানোই স্বাচ্ছন্দ্য মনে করেন। বোতলের দুধ খাওয়ানোর ঝুঁকি অনেক বেশি। একবার তৈরি করা দুধ ছয় ঘণ্টা পর্যন্ত বোতলে সংরক্ষণ করে খাওয়ানো যায়। প্রতিবার সংরক্ষণের পূর্বে বোতল ভালো করে পরিষ্কার করে নিতে হবে। তা না হলে বোতলের রোগজীবাণু দুধের সঙ্গে শিশুর পেটে গিয়ে সহজেই শিশু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে।
শিশুর ডায়রিয়া হলে কিছু নিয়মকানুন মেনে স্যালাইন খাওয়ানো প্রয়োজন। এক প্যাকেট স্যালাইন আধা লিটার বিশুদ্ধ খাবার পানিতে মেশাতে হবে। স্যালাইনের প্যাকেট ভেঙে একাধিকবার মেশানো যাবে না, এতে করে লবণের মাত্রা কম বেশি হতে পারে এবং এর ফলে শিশুর মারাত্মক সমস্যা দেখা দিতে পারে। একবার মেশানো স্যালাইন ছয় ঘণ্টা পর্যন্ত শিশুকে খাওয়ানো যাবে। প্রতিবার পায়খানার পর শিশুকে স্যালাইন খাওয়াতে হবে। প্যাকেট স্যালাইন কাছাকাছি পাওয়া না গেলে ঘরে বসেও স্যালাইন বানানো যায়। সেক্ষেত্রে এক মুঠো গুড়, এক চিমটি লবণ এবং আধা লিটার বিশুদ্ধ পানি দিয়ে খাবার স্যালাইন তৈরি করা যায়। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুকে স্যালাইনের পাশাপাশি মায়ের বুকের দুধ বা বয়স ভেদে অন্যান্য তরল খাবার বা স্বাভাবিক খাবার খাওয়ানো যাবে।
ডায়রিয়ার সবচেয়ে বড় জটিলতা হলো পানিশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশন। শিশুর শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিলে শিশু দুর্বল হয়ে পড়ে, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যায় এমনকি শিশু অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারে। তাই শিশু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে সবসময় খেয়াল রাখতে হবে শিশুর শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিয়েছে কিনা। পানিশূন্যতার লক্ষণ দেখা দেয়ার আগেই শিশুকে বার বার স্যালাইন ও তরল খাবার দিতে হবে। যেমন- চিড়া কচলানো পানি, ডাবের পানি, ফলের রস ও লবণ-গুড়ের শরবত ইত্যাদি। অবস্থা বেশি খারাপ হলে জরুরিভিত্তিতে শিশুকে হাসপাতালে নিতে হবে।
ডায়রিয়া পরবর্তী বেশিরভাগ শিশুই অপুষ্টিতে ভোগে। এ সময় শিশুকে পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার দিতে হবে। যেমন- বিভিন্ন সবজি দিয়ে খিচুরি, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, কলা, টাটকা ফলের রস- সবকিছুই শিশুকে খাওয়ানো যাবে। তবে রান্না করা খাবারগুলো অবশ্যই ভালো সিদ্ধ হতে হবে। ডায়রিয়ার পর ১৫ দিন জিঙ্ক সিরাপ বা ট্যাবলেট দিতে হবে। এতে শিশুর ডায়রিয়ার কারণে দুর্বলতা কেটে যাবে এবং শরীর স্বাভাবিক হতে সাহায্য করবে।
করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বব্যাপী ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে এসেছে। শিশু, নারীসহ প্রতিটি মানুষ আজ আতঙ্কগ্রস্ত। অস্বাভাবিক সংকট বিরাজ করছে। এ অবস্থায় করোনা ছাড়াও বিভিন্ন রোগ সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। ব্যক্তিগত সুরক্ষা সবার আগে জরুরি। বার বার সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যাওয়া যাবে না।
আমাদের দেশে ডায়রিয়া একটি সাধারণ ও কমন রোগ। গরমকালে ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা খুবই সাধারণ একটি সমস্যা। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে হবে। এখন কমিউনিটি ক্লিনিক, স্বাস্থ্যকেন্দ্র হাতের নাগালে। তাছাড়া জরুরি স্বাস্থ্য বাতায়ন হটলাইন ১৬২৬৩ নম্বরে ফোন করেও সঙ্গে সঙ্গে প্রতিকার পাওয়া যায়। তবে ডায়রিয়াসহ সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ করার জন্য কিছু পূর্ব সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বাসায় খাবার স্যালাইন রাখতে হবে, বিশুদ্ধ ও নিরাপদ পানি পান করতে হবে, বাসি খাবার গ্রহণ করা যাবে না, সময়মতো শিশুর সবগুলো টিকা দিতে হবে, টাটকা ফলমূল বেশি খেতে হবে, শিশুর ব্যবহার করা সব জিনিষপত্র পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে, খাবার আগে এবং পায়খানার পরে ভালোভাবে সাবান দিয়ে হাত ধুইয়ে দিতে হবে। এসব সতর্কতা অবলম্বন করলে সহজেই শিশুকে ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগ থেকে নিরাপদে রাখা যায়।
(পিআইডি-শিশু ও নারী উন্নয়নে যোগাযোগ কার্যক্রম বিষয়ক ফিচার)