alt

মুক্ত আলোচনা

প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় সচেতনতা জরুরি

প্রসেনজিৎ কুমার রোহিত

: বৃহস্পতিবার, ০৩ জুন ২০২১

প্রকৃতি আমাদের জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা হয়তো অনেকেই করোনা অতি মহামাররীর পর কিছুটা বুঝতে পেরেছেন। পরিবেশ নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা চলছে বহু বছর ধরে। তাও এখন অনেকেই এড়িয়ে চলেন সেই সচেতন বার্তা।

সৃষ্টির আদি লগ্নে প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য ছিলো। প্রকৃতি ও পরিবেশের মাঝেই বিচিত্র জীবনের বিকাশ ঘটে। মানুষের আচার-ব্যবহার, জীবনাচরণ, জীবনধারণ, পরিবেশ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।আবার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহারে সমাজ দ্বারাও পরিবেশ প্রভাবিত হয়।

পৃথিবীতে জীবনের অস্তিত্বের জন্য শান্তিময় সুস্থ পরিবেশ। বেঁচে থাকার জন্য যে পরিবেশের প্রয়োজন, সে পরিবেশ নানা কারণে জটিল আকার ধারণ করেছে। মানুষ তার অাবিষ্কারের প্রতিভা, পরিশ্রম অার দক্ষতা নিয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির নানা পদ্ধতি সংগ্রহ করেছে।বিজ্ঞান ক্রমবিকাশের ধারায় চরম উন্নতি লাভ করেছে। অার মানুষ সেই গৌরবে অন্ধ হয়ে পৃথিবীর সুন্দর পরিবেশকে বিষাক্ত করে তুলছে। আমাদের এ পৃথিবীর প্রাকৃতিক ভারসাম্যহীনতা আমাদের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক জীবনের উপর প্রভাব বিস্তার করে। আর এ সব পরিবেশগত সমস্যা। যার জন্য এদেশে মাঝে মাঝে সাইক্লোন হানা দেয়, আর অগ্নিবৃষ্টি নিয়ে মাসে খরা,মাঠঘাট ডুবিয়ে দেওয়ার বাসনা নিয়ে মাসে অতিবৃষ্টি,সর্বোপরি পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টি মিলিয়ে অবির্ভূত হয় সর্বগ্রাসী বন্যা।

বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে পরিবেশ দূষণের ভয়াবাহতা সম্পর্কে ধারণা সৃষ্টি হয়নি। মানুষ একদিন প্রকৃতিকে জয় করার নেশায় মেতেছিল। প্রকৃতিকে জয় করতে যেয়ে মানুষ নিজেদের ফেলে দিল এক বড় পরাজয়ের মধ্যে। ভয়াবহ পরিবেশ দূষণের কবলে পড়ে আজ বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ শঙ্কায় ধুঁকছে। অপেক্ষা করছে এক মহাধ্বংস। আজ জলে বিষ, বাতাসে আতঙ্ক, মাটিতে মহাত্রাস। দ্রুত গতিতে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে সবুজ অরণ্য। যেখানে বাংলাদেশে ২৫ ভাগ বনভূমি থাকার কথা আছে মাত্র ১৬ ভাগ। প্রতিবছর ৭০ লক্ষ্য হেক্টর জমি মরুভূমি হয়ে যাচ্ছে। পরিবেশ দূষণের ফলে পৃথিবীর ৮০ শতাংশ নতুন নতুন রোগের সৃষ্টি হচ্ছে।

অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, বন্যাসহ গ্রিনহাউজ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত কয়েকটি শহরের মধ্যে প্রথম দিকে আছে আমাদের ঢাকা। আমাদের ঘর থেকে বের হলেই মুখোমুখি হতে হয় ভয়ানক ক্ষতিকর পরিবেশের সাথে। বাংলাদেশ থেকে চোখ সরিয়ে আমরা যদি বিশ্বের দিকে তাকাই, জাতিসংঘের পরিবেশ প্রোগ্ৰামের হিসাব মতে, পৃথিবীর ৯২ শতাংশ মানুষ দূষিত বাতাসে শ্বাস নেয়। বিশ্ব অর্থনীতির প্রায় ৫ ট্রিলিয়ন ডলার খরচ হয় এই অবস্থার উন্নতিতে।

ঢাকাবাসীর এই ভোগান্তি যে সত্যি অনেক বেশি মারাত্মক তা বোঝা যায় বায়ু দূষণের আন্তর্জাতিক গবেষণাগুলো থেকে। সেগুলো বলছে, গত কয়েক বছর থেকে ঢাকা শহরে বায়ুদূষণের মাত্রা বেড়ে চলেছে এবং ঢাকা পৃথিবীর দূষিততম নগরীগুলোর মধ্যে প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় অবস্থানে থাকছে। তাহলে ঢাকায় বায়ুদূষণের কারণগুলো কী রকম? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “দেশের অভ্যন্তরে ইটভাটা, শিল্প কারখানা ও যানবাহনের ধোঁয়া, মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ির কালো ধোঁয়া, বস্তিতে প্রায় চল্লিশ লাখ চুলায় আবর্জনা, কাঠ-কয়লা ও কেরোসিন দিয়ে রান্নার ধোঁয়া, ঢাকার বাইরে থেকে আসা হাজার হাজার ট্রাক ও দূরপাল্লার যানবাহনের ধূলা ও ধোঁয়া এবং রাস্তা খোড়াখুড়ি ও নির্মাণকাজের ধুলার পাশাপাশি আন্তঃসীমান্ত বায়ুদূষণের জন্য এখানকার বায়ু দূষিত হয়ে থাকে।”

সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারের পরমাণু শক্তি কেন্দ্র, যুক্তরাষ্ট্রের ক্লার্কসন বিশ্ববিদ্যালয় ও রচেষ্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা যৌথভাবে একটি গবেষণা করেছেন। এতে বলা হয়, “বাংলাদেশে যে বায়ুদূষণ ঘটছে, তার অন্যতম কারণ আন্তঃসীমান্ত বায়ুপ্রবাহ। ইরান, মঙ্গোলিয়া, আফগানিস্তানের শুষ্ক মরু অঞ্চল থেকে ধূলিকণা বাতাসে মিশে যায়। পশ্চিমা লঘুচাপের মাধ্যমে ওই ধূলিকণাসহ বাতাস ভারতে প্রবেশ করে। নভেম্বর থেকে ওই দূষিত বায়ু বাংলাদেশে প্রবেশ করে।”

প্রতিবেদনটিতে পরিষ্কারভাবে আরও বলা হয়- “ভারতের কলকাতা, মুম্বাই, পাকিস্তানের করাচি ও বাংলাদেশের ঢাকায় অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে মারাত্মক যানজট ও ধোঁয়া তৈরি হচ্ছে। নির্বিচারে গাছে কেটে অবকাঠামো নির্মাণের ফলে সেখানে প্রচুর পরিমাণে ধূলাবালিও বাতাসে মিশছে। ফলে সামগ্রিকভাবে ওই শহরগুলো এই অঞ্চলের বায়ুকে দূষিত করে ফেলছে।

বছরে পাঁচ থেকে ছয় মাস শুষ্ক মৌসুমে দেশে ইট উৎপাদিত হয়। বাকি মাসগুলোয় ইট উৎপাদনের কার্যক্রম অনেকটা বন্ধ থাকে। শুষ্ক মৌসুমে একদিকে বায়ুমণ্ডলে ধুলাবালির প্রাদুর্ভাব, অন্যদিকে ইটখোলাগুলো থেকে নির্গত দূষিত উপাদানের প্রাদুর্ভাবে বায়ুদূষণের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। গবেষণায় দেখা যায়, বছরে প্রায় ১৫ দশমিক ৬৭ মিলিয়ন টন কার্বন ডাইঅক্সাইড ইটখোলা থেকে বায়ুমণ্ডলে যোগ হচ্ছে।

ইটখোলায় জ্বালানি হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে আমদানিকৃত নিম্নমানের কয়লা। এ কয়লা পোড়ানোয় প্রচুর পরিমাণে ছাই তৈরি হয়। অন্যদিকে ইটভাটা থেকে বায়ুমণ্ডলে দূষিত উপাদানও যোগ হচ্ছে। এসব দূষিত উপাদানের মধ্যে পার্টিকুলেট ম্যাটার, কার্বন মনোঅক্সাইড, সালফার অক্সাইড ও কার্বন ডাইঅক্সাইড প্রতিনিয়ত বায়ুমণ্ডলে নির্গত হচ্ছে। ২০১৩ সালের হিসাব অনুযায়ী, বৃহত্তর ঢাকা অঞ্চলে ইটখোলা থেকে ৫৩ হাজার ৩৩৩ টনের বেশি পার্টিকুলেট ম্যাটার-১০ বায়ুমণ্ডলে যোগ হয়েছে। অন্যদিকে ১৭ হাজার ৫৫৭ টন পার্টিকুলেট ম্যাটার-২.৫ এবং ৫৯ হাজার ২২১ টনেরও বেশি সালফার অক্সাইড বায়ুমণ্ডলে যোগ হয়েছে। যদি এই দূষিত উপাদানের নির্গমন বায়ুমণ্ডলে অব্যাহত থাকে, তাহলে স্বাস্থ্যঝুঁকির মাত্রা লাগামহীনভাবে বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাকে নাকচ করে দেওয়া যায় না।

গবেষণায় দেখা যায়, প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশু উভয়ের জন্য পার্টিকুলেট ম্যাটার স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ইটভাটা থেকে নির্গত এই দূষিত উপাদান মানবদেহে শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে প্রবেশ করলে রেসপিরেটরি সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। ফলে ইটভাটার আশপাশে বসবাসরত মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি বেশি দেখা যায়।বর্তমানে অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে অনেক আবাসিক এলাকায়ও ইটভাটা দেখা যায়। উদ্যোক্তারা আবাসিক জায়গা থেকে ইটখোলাগুলো সরিয়ে নিতে খুব একটা আগ্রহী নন। ফলে দেখা যাচ্ছে, ইটখোলার আশপাশে বসবাসরত মানুষ বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে।

গবেষণায় আরও পাওয়া যায়, বর্তমানে বায়ুতে পার্টিকুলেটস ম্যাটারের উপস্থিতিতে মানুষের মৃত্যুর হার আগের তুলনায় তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বায়ুতে মাত্রাতিরিক্ত সালফার ডাইঅক্সাইডের উপস্থিতির কারণে মানুষ চোখ, নাক, গলাসহ অ্যাজমাটিক সমস্যার সন্মুখীন হচ্ছে। মোটা দাগে বলা যেতে পারে, বায়ুতে দূষিত উপাদানের উপস্থিতিতে ফুসফুসে ক্যান্সার, হার্ট অ্যাটাক ও অন্যান্য রোগের প্রাদুর্ভাবে মৃত্যুর হার বেড়ে যাচ্ছে।

সাম্প্রতিক দশকগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আন্দোলন এবং আলোচনা পৃথিবী জুড়েই চলছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, করোনা ভাইরাস অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত মানুষের। এ পৃথিবীকে বাস-উপযোগী রাখতে সকলেরই যথাযথ ভূমিকা রাখা উচিত।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এখন প্রাকৃতিক দুর্যোগে জর্জরিত। এমন প্রেক্ষাপটে প্রকৃতি ও পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে এবং পৃথিবীকে নিরাপদ এবং বাসযোগ্য রাখতে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আজকের এই দিনটি পালন করা হয়।

১৯৭২ সালে জাতিসংঘ পরিবেশ সম্পর্কিত সচেতনতা বৃদ্ধি করতে স্টকহোম সম্মেলনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বিশ্ব পরিবেশ দিবস। এর দু’বছর পরে, ১৯৭৪ সালে ‘একমাত্র পৃথিবী’ (Only One Earth) এই থিম নিয়ে প্রথম বিশ্ব পরিবেশ দিবসের অনুষ্ঠিত হয়েছিল। যদিও এই পরিবেশ দিবসের উদযাপন ১৯৭৪ সাল থেকে প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয়, কিন্তু ১৯৮৭ সালে বিভিন্ন আয়োজক দেশ নির্বাচনের মাধ্যমে এই ক্রিয়াকলাপগুলির কেন্দ্র ঘোরানোর ধারণাটি শুরু হয়।

এই বছর বিশ্ব পরিবেশ দিবসের থিম ‘বাস্তুতন্ত্রের পুনরুদ্ধার’ (Ecosystem Restoration)। বর্তমান অন্ধকারময় পরিস্থিতিতে অতীতকে ফেরানো সম্ভব নয় ঠিকই। কিন্তু আমরা গাছ লাগাতে পারি, আমাদের আশেপাশের শহরকে আরও সবুজ করতে পারি, বাড়ির বাগান পুনর্নির্মাণ করতে পারি, নিজেদের ডায়েট পরিবর্তন করতে পারি এবং নদী ও উপকূল পরিষ্কার রাখতে পারি। আমরা এমন একটি প্রজন্ম যারা এই সবের মাধ্যমে প্রকৃতির শান্তি বজায় রাখতে পারি। আর সেই জন্যেই এবছর এই থিমটি বেছে নেওয়া হয়েছে।

সাম্প্রতিক দশকগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আন্দোলন এবং আলোচনা পৃথিবী জুড়েই চলছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, করোনা ভাইরাস অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত মানুষের। এ পৃথিবীকে বাস-উপযোগী রাখতে সকলেরই যথাযথ ভূমিকা রাখা উচিত। পরিবেশ রক্ষার্থে আমাদের সকলকেই সচেতন হতে হবে এবং নির্বিচারে বৃক্ষ নিধনযজ্ঞ না করে বেশি বেশি গাছ লাগতে হবে এবং আমাদের শপথ নিতে হবে যে,কোথাও একটি গাছ কাটা হলে সেই স্থানে একটা গাছের পরিবর্তে একশত গাছ রোপণ করতে হবে। বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় গুলোকেও বৃক্ষরোপণের কর্মসূচি বাস্তবায়নে জোরদার ভূমিকা পালন করতে হবে এবং সরকারকে বৃক্ষরোপণে জনগণকে আরও উৎসাহী করতে হবে তাহলেই পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকবে।

[লেখক: শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা কলেজ]

মুজিবনগরে স্বাধীনতার সূর্যোদয়

বঙ্গাব্দ প্রচলনের ইতিকথা

পহেলা বৈশাখ বাঙালির প্রাণের উৎসব

কেউতো অপেক্ষায় নেই

ফরগেট মি নট

ছবি

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ সমার্থক

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বীমা শিল্পের গুরুত্ব

একুশে ফেব্রুয়ারি আত্মপরিচয়ের দিন

দিদি, আপা, “বু” খালা

হিজল-করচ-আড়াংবন

ছবি

শেখ হাসিনা, এক উৎসারিত আলোকধারা

মনমাঝি

সেই ইটনা

ছবি

আংকর ওয়াট : উন্নত সভ্যতার স্মৃতিচিহ্ন যেখানে

নিয়ত ও নিয়তি

হারিয়ে যাওয়া ট্রেন

টম সয়ার না রবিনহুড

ছবি

‘ঝড়-বৃষ্টি আঁধার রাতে, আমরা আছি তোমার সাথে’

বাংলাদেশ-জাপান সহযোগিতা স্মারক: স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অনন্য মাইলফলক

রাষ্ট্রের কূটনৈতিক মিশনের পরিবর্তন আশু প্রয়োজন

কুয়েতের জীবনযাত্রার সাতকাহন: পর্ব-১-বিয়ে

বিবেকের লড়াই

ছবি

ছবি যেন শুধু ছবি নয়

বাত ব্যথার কারণ ও আধুনিক চিকিৎসা

ছবি

স্বাধীন স্বদেশে মুক্ত বঙ্গবন্ধু

ছবি

মহান নেতার স্বভূমিতে ফিরে আসা

ছবি

মেট্রোরেল : প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী চিন্তার ফসল

ছবি

আমার মা

ডিজিটাল বাংলাদেশ: প্রগতিশীল প্রযুক্তি, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নতি

ছবি

৩ নভেম্বর: ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ডের ধারাবাহিকতা

দেশের ইতিহাসে কলঙ্কজনক দ্বিতীয় অধ্যায়

এইচ এস সি ও সমমান পরীক্ষার্থীদের অনুশীলন

ছবি

ত্রিশ বছর পূর্তিতে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়

শিল্প কারখানার পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনায় এনভায়রনমেন্টাল ইন্জিনিয়ারিং

অসুর: এক পরাজিত বিপ্লবী

অসুর জাতির ইতিহাস

tab

মুক্ত আলোচনা

প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় সচেতনতা জরুরি

প্রসেনজিৎ কুমার রোহিত

বৃহস্পতিবার, ০৩ জুন ২০২১

প্রকৃতি আমাদের জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা হয়তো অনেকেই করোনা অতি মহামাররীর পর কিছুটা বুঝতে পেরেছেন। পরিবেশ নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা চলছে বহু বছর ধরে। তাও এখন অনেকেই এড়িয়ে চলেন সেই সচেতন বার্তা।

সৃষ্টির আদি লগ্নে প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য ছিলো। প্রকৃতি ও পরিবেশের মাঝেই বিচিত্র জীবনের বিকাশ ঘটে। মানুষের আচার-ব্যবহার, জীবনাচরণ, জীবনধারণ, পরিবেশ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।আবার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহারে সমাজ দ্বারাও পরিবেশ প্রভাবিত হয়।

পৃথিবীতে জীবনের অস্তিত্বের জন্য শান্তিময় সুস্থ পরিবেশ। বেঁচে থাকার জন্য যে পরিবেশের প্রয়োজন, সে পরিবেশ নানা কারণে জটিল আকার ধারণ করেছে। মানুষ তার অাবিষ্কারের প্রতিভা, পরিশ্রম অার দক্ষতা নিয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির নানা পদ্ধতি সংগ্রহ করেছে।বিজ্ঞান ক্রমবিকাশের ধারায় চরম উন্নতি লাভ করেছে। অার মানুষ সেই গৌরবে অন্ধ হয়ে পৃথিবীর সুন্দর পরিবেশকে বিষাক্ত করে তুলছে। আমাদের এ পৃথিবীর প্রাকৃতিক ভারসাম্যহীনতা আমাদের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক জীবনের উপর প্রভাব বিস্তার করে। আর এ সব পরিবেশগত সমস্যা। যার জন্য এদেশে মাঝে মাঝে সাইক্লোন হানা দেয়, আর অগ্নিবৃষ্টি নিয়ে মাসে খরা,মাঠঘাট ডুবিয়ে দেওয়ার বাসনা নিয়ে মাসে অতিবৃষ্টি,সর্বোপরি পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টি মিলিয়ে অবির্ভূত হয় সর্বগ্রাসী বন্যা।

বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে পরিবেশ দূষণের ভয়াবাহতা সম্পর্কে ধারণা সৃষ্টি হয়নি। মানুষ একদিন প্রকৃতিকে জয় করার নেশায় মেতেছিল। প্রকৃতিকে জয় করতে যেয়ে মানুষ নিজেদের ফেলে দিল এক বড় পরাজয়ের মধ্যে। ভয়াবহ পরিবেশ দূষণের কবলে পড়ে আজ বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ শঙ্কায় ধুঁকছে। অপেক্ষা করছে এক মহাধ্বংস। আজ জলে বিষ, বাতাসে আতঙ্ক, মাটিতে মহাত্রাস। দ্রুত গতিতে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে সবুজ অরণ্য। যেখানে বাংলাদেশে ২৫ ভাগ বনভূমি থাকার কথা আছে মাত্র ১৬ ভাগ। প্রতিবছর ৭০ লক্ষ্য হেক্টর জমি মরুভূমি হয়ে যাচ্ছে। পরিবেশ দূষণের ফলে পৃথিবীর ৮০ শতাংশ নতুন নতুন রোগের সৃষ্টি হচ্ছে।

অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, বন্যাসহ গ্রিনহাউজ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত কয়েকটি শহরের মধ্যে প্রথম দিকে আছে আমাদের ঢাকা। আমাদের ঘর থেকে বের হলেই মুখোমুখি হতে হয় ভয়ানক ক্ষতিকর পরিবেশের সাথে। বাংলাদেশ থেকে চোখ সরিয়ে আমরা যদি বিশ্বের দিকে তাকাই, জাতিসংঘের পরিবেশ প্রোগ্ৰামের হিসাব মতে, পৃথিবীর ৯২ শতাংশ মানুষ দূষিত বাতাসে শ্বাস নেয়। বিশ্ব অর্থনীতির প্রায় ৫ ট্রিলিয়ন ডলার খরচ হয় এই অবস্থার উন্নতিতে।

ঢাকাবাসীর এই ভোগান্তি যে সত্যি অনেক বেশি মারাত্মক তা বোঝা যায় বায়ু দূষণের আন্তর্জাতিক গবেষণাগুলো থেকে। সেগুলো বলছে, গত কয়েক বছর থেকে ঢাকা শহরে বায়ুদূষণের মাত্রা বেড়ে চলেছে এবং ঢাকা পৃথিবীর দূষিততম নগরীগুলোর মধ্যে প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় অবস্থানে থাকছে। তাহলে ঢাকায় বায়ুদূষণের কারণগুলো কী রকম? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “দেশের অভ্যন্তরে ইটভাটা, শিল্প কারখানা ও যানবাহনের ধোঁয়া, মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ির কালো ধোঁয়া, বস্তিতে প্রায় চল্লিশ লাখ চুলায় আবর্জনা, কাঠ-কয়লা ও কেরোসিন দিয়ে রান্নার ধোঁয়া, ঢাকার বাইরে থেকে আসা হাজার হাজার ট্রাক ও দূরপাল্লার যানবাহনের ধূলা ও ধোঁয়া এবং রাস্তা খোড়াখুড়ি ও নির্মাণকাজের ধুলার পাশাপাশি আন্তঃসীমান্ত বায়ুদূষণের জন্য এখানকার বায়ু দূষিত হয়ে থাকে।”

সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারের পরমাণু শক্তি কেন্দ্র, যুক্তরাষ্ট্রের ক্লার্কসন বিশ্ববিদ্যালয় ও রচেষ্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা যৌথভাবে একটি গবেষণা করেছেন। এতে বলা হয়, “বাংলাদেশে যে বায়ুদূষণ ঘটছে, তার অন্যতম কারণ আন্তঃসীমান্ত বায়ুপ্রবাহ। ইরান, মঙ্গোলিয়া, আফগানিস্তানের শুষ্ক মরু অঞ্চল থেকে ধূলিকণা বাতাসে মিশে যায়। পশ্চিমা লঘুচাপের মাধ্যমে ওই ধূলিকণাসহ বাতাস ভারতে প্রবেশ করে। নভেম্বর থেকে ওই দূষিত বায়ু বাংলাদেশে প্রবেশ করে।”

প্রতিবেদনটিতে পরিষ্কারভাবে আরও বলা হয়- “ভারতের কলকাতা, মুম্বাই, পাকিস্তানের করাচি ও বাংলাদেশের ঢাকায় অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে মারাত্মক যানজট ও ধোঁয়া তৈরি হচ্ছে। নির্বিচারে গাছে কেটে অবকাঠামো নির্মাণের ফলে সেখানে প্রচুর পরিমাণে ধূলাবালিও বাতাসে মিশছে। ফলে সামগ্রিকভাবে ওই শহরগুলো এই অঞ্চলের বায়ুকে দূষিত করে ফেলছে।

বছরে পাঁচ থেকে ছয় মাস শুষ্ক মৌসুমে দেশে ইট উৎপাদিত হয়। বাকি মাসগুলোয় ইট উৎপাদনের কার্যক্রম অনেকটা বন্ধ থাকে। শুষ্ক মৌসুমে একদিকে বায়ুমণ্ডলে ধুলাবালির প্রাদুর্ভাব, অন্যদিকে ইটখোলাগুলো থেকে নির্গত দূষিত উপাদানের প্রাদুর্ভাবে বায়ুদূষণের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। গবেষণায় দেখা যায়, বছরে প্রায় ১৫ দশমিক ৬৭ মিলিয়ন টন কার্বন ডাইঅক্সাইড ইটখোলা থেকে বায়ুমণ্ডলে যোগ হচ্ছে।

ইটখোলায় জ্বালানি হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে আমদানিকৃত নিম্নমানের কয়লা। এ কয়লা পোড়ানোয় প্রচুর পরিমাণে ছাই তৈরি হয়। অন্যদিকে ইটভাটা থেকে বায়ুমণ্ডলে দূষিত উপাদানও যোগ হচ্ছে। এসব দূষিত উপাদানের মধ্যে পার্টিকুলেট ম্যাটার, কার্বন মনোঅক্সাইড, সালফার অক্সাইড ও কার্বন ডাইঅক্সাইড প্রতিনিয়ত বায়ুমণ্ডলে নির্গত হচ্ছে। ২০১৩ সালের হিসাব অনুযায়ী, বৃহত্তর ঢাকা অঞ্চলে ইটখোলা থেকে ৫৩ হাজার ৩৩৩ টনের বেশি পার্টিকুলেট ম্যাটার-১০ বায়ুমণ্ডলে যোগ হয়েছে। অন্যদিকে ১৭ হাজার ৫৫৭ টন পার্টিকুলেট ম্যাটার-২.৫ এবং ৫৯ হাজার ২২১ টনেরও বেশি সালফার অক্সাইড বায়ুমণ্ডলে যোগ হয়েছে। যদি এই দূষিত উপাদানের নির্গমন বায়ুমণ্ডলে অব্যাহত থাকে, তাহলে স্বাস্থ্যঝুঁকির মাত্রা লাগামহীনভাবে বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাকে নাকচ করে দেওয়া যায় না।

গবেষণায় দেখা যায়, প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশু উভয়ের জন্য পার্টিকুলেট ম্যাটার স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ইটভাটা থেকে নির্গত এই দূষিত উপাদান মানবদেহে শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে প্রবেশ করলে রেসপিরেটরি সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। ফলে ইটভাটার আশপাশে বসবাসরত মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি বেশি দেখা যায়।বর্তমানে অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে অনেক আবাসিক এলাকায়ও ইটভাটা দেখা যায়। উদ্যোক্তারা আবাসিক জায়গা থেকে ইটখোলাগুলো সরিয়ে নিতে খুব একটা আগ্রহী নন। ফলে দেখা যাচ্ছে, ইটখোলার আশপাশে বসবাসরত মানুষ বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে।

গবেষণায় আরও পাওয়া যায়, বর্তমানে বায়ুতে পার্টিকুলেটস ম্যাটারের উপস্থিতিতে মানুষের মৃত্যুর হার আগের তুলনায় তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বায়ুতে মাত্রাতিরিক্ত সালফার ডাইঅক্সাইডের উপস্থিতির কারণে মানুষ চোখ, নাক, গলাসহ অ্যাজমাটিক সমস্যার সন্মুখীন হচ্ছে। মোটা দাগে বলা যেতে পারে, বায়ুতে দূষিত উপাদানের উপস্থিতিতে ফুসফুসে ক্যান্সার, হার্ট অ্যাটাক ও অন্যান্য রোগের প্রাদুর্ভাবে মৃত্যুর হার বেড়ে যাচ্ছে।

সাম্প্রতিক দশকগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আন্দোলন এবং আলোচনা পৃথিবী জুড়েই চলছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, করোনা ভাইরাস অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত মানুষের। এ পৃথিবীকে বাস-উপযোগী রাখতে সকলেরই যথাযথ ভূমিকা রাখা উচিত।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এখন প্রাকৃতিক দুর্যোগে জর্জরিত। এমন প্রেক্ষাপটে প্রকৃতি ও পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে এবং পৃথিবীকে নিরাপদ এবং বাসযোগ্য রাখতে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আজকের এই দিনটি পালন করা হয়।

১৯৭২ সালে জাতিসংঘ পরিবেশ সম্পর্কিত সচেতনতা বৃদ্ধি করতে স্টকহোম সম্মেলনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বিশ্ব পরিবেশ দিবস। এর দু’বছর পরে, ১৯৭৪ সালে ‘একমাত্র পৃথিবী’ (Only One Earth) এই থিম নিয়ে প্রথম বিশ্ব পরিবেশ দিবসের অনুষ্ঠিত হয়েছিল। যদিও এই পরিবেশ দিবসের উদযাপন ১৯৭৪ সাল থেকে প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয়, কিন্তু ১৯৮৭ সালে বিভিন্ন আয়োজক দেশ নির্বাচনের মাধ্যমে এই ক্রিয়াকলাপগুলির কেন্দ্র ঘোরানোর ধারণাটি শুরু হয়।

এই বছর বিশ্ব পরিবেশ দিবসের থিম ‘বাস্তুতন্ত্রের পুনরুদ্ধার’ (Ecosystem Restoration)। বর্তমান অন্ধকারময় পরিস্থিতিতে অতীতকে ফেরানো সম্ভব নয় ঠিকই। কিন্তু আমরা গাছ লাগাতে পারি, আমাদের আশেপাশের শহরকে আরও সবুজ করতে পারি, বাড়ির বাগান পুনর্নির্মাণ করতে পারি, নিজেদের ডায়েট পরিবর্তন করতে পারি এবং নদী ও উপকূল পরিষ্কার রাখতে পারি। আমরা এমন একটি প্রজন্ম যারা এই সবের মাধ্যমে প্রকৃতির শান্তি বজায় রাখতে পারি। আর সেই জন্যেই এবছর এই থিমটি বেছে নেওয়া হয়েছে।

সাম্প্রতিক দশকগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আন্দোলন এবং আলোচনা পৃথিবী জুড়েই চলছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, করোনা ভাইরাস অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত মানুষের। এ পৃথিবীকে বাস-উপযোগী রাখতে সকলেরই যথাযথ ভূমিকা রাখা উচিত। পরিবেশ রক্ষার্থে আমাদের সকলকেই সচেতন হতে হবে এবং নির্বিচারে বৃক্ষ নিধনযজ্ঞ না করে বেশি বেশি গাছ লাগতে হবে এবং আমাদের শপথ নিতে হবে যে,কোথাও একটি গাছ কাটা হলে সেই স্থানে একটা গাছের পরিবর্তে একশত গাছ রোপণ করতে হবে। বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় গুলোকেও বৃক্ষরোপণের কর্মসূচি বাস্তবায়নে জোরদার ভূমিকা পালন করতে হবে এবং সরকারকে বৃক্ষরোপণে জনগণকে আরও উৎসাহী করতে হবে তাহলেই পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকবে।

[লেখক: শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা কলেজ]

back to top