alt

মুক্ত আলোচনা

হাঁস পালন করে ভাগ্যের চাকা বদলেছে ফরিদাদের

শাহনাজ পলি

: শনিবার, ০৫ জুন ২০২১

খুলনার ডুমুরিয়ার উপজেলার ধামসানিয়া ইউনিয়নের অল্পশিক্ষিত ফরিদা খাতুনের ছিল অভাব অনটনের সংসার। তার স্বামী মানু মিয়া বাড়ির পাশে অল্পকিছু জমি চাষাবাদ করে কোনো রকম সংসার চালাতো। বছরের একবার চাষাবাদ চললেও বাকি সময়টায় জমিতে পানি জমে থাকে। সংসারের অভাব ঘুচাতে তার নিকটাত্মীয়ের পরামর্শ নিয়ে দুই সন্তানের জননি ফরিদা হাঁস পালন করার সিদ্ধান্ত নেয়।

প্রধানমন্ত্রীর ‘আমার বাড়ি-আমার খামার প্রকল্প’ থেকে সহায়তা নিয়ে ফরিদার ভাগ্য বদলের গল্পের শুরু। এই প্রকল্পের সমিতি থেকে সহজ শর্তে ঋত নিয়ে শুরু করেন হাঁসের খামার। ডিম বিক্রি করে প্রতি মাসে ২শ’ টাকা করে সমিতিতে জমা রাখেন। বাড়তে থাকে ফরিদার সঞ্চয় এবং আত্মবিশ্বাস। হাঁসের খামারের গর্বিত মালিক ফরিদা তার ঘরে খড়ের চাল বাদ দিয়ে এখন টিনের চাল বসিয়েছে। শিশুদের স্কুলে দিয়েছে এবং কূন্য থেকে শুরু করে এখন ফরিদা এজন সফল প্রান্তিক উদ্যোক্তা।

স্থায়ী তহবিল গঠন করে সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করে দিলে হতদরিদ্র প্রান্তিক নারীও যে স্বাবলম্বী হয়ে আত্মমর্যাদা নিয়ে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে, ফরিদা খাতুন তার বাস্তব উদাহরণ।

এ প্রকল্পে শুধু ধামসানিয়ার মানুষই উন্নয়ন করেনি, আশেপাশের ইউনিয়নবাসীর সংসারে সুদিন ফিরেছে, ফিরেছে ফরিদার মতো অনেকের ভাগ্য। মূলত বছরের পর বছর ধরে ডুমুরিয়া উপজেলার শোভনা, আটালিয়া, সাহস ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকার মানুষ বেঁচে থাকার সংগ্রাম করতেন। বিশাল একটি জনগোষ্ঠীকে বছরের প্রায় অর্ধেক সময় কর্মবিমূখ হয়ে বেকার জীবনযাপন করতে হতো।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘আমার বাড়ি-আমার খামার প্রকল্প’ এর অওতায় ওই ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডে ৯টি গ্রাম উন্নয়ন সমিতি গড়ে তোলা হয়। এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য, তহবিল সংগ্রহ এবং পারিবারিক খামারের মাধ্যমে দারিদ্র্য নির্মূল ও টেকসই উন্নয়ন। বহুমাত্রিক এই কর্মসূচির মাধ্যমে সরকার একদিকে গ্রামীণ দরিদ্র জণগোষ্ঠীর সুসংগঠিত করেছে; অন্যদিকে সঞ্চয়কে উৎসাহ প্রদান ও সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আত্ম-কর্মসংস্থানের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হতে সহায়তা করেছে।

এ প্রকল্পের আওতায় যে কৃষক ফসল ফলান, সুযোগ পেলে তিনিই আবার মাছ চাষ করার সুযোগ পান। তার উঠোনেই বাড়ে হাঁস-মুরগি, গোয়ালে গরু। সেসব প্রান্তিক মানুষের পাশে দাঁড়াতেই সরকারের এই প্রকল্প আমার বাড়ি আমার খামার।

আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের অধীনে প্রতি গ্রামে গড়ে তোলা এক একটি গ্রাম উন্নয়ন সমিতির দরিদ্র সদস্যরা প্রতিমাসে একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা জমা করেন। প্রত্যেক সমিতিতে রয়েছেন ৬০ জন সদস্য। এরমধ্যে ৪০ জন নারী ও ২০ জন পুরুষ সদস্য। প্রত্যেক মাসে প্রতি সদস্য ২০০ টাকা করে সঞ্চয় জমা করেন। পাশাপাশি প্রত্যেক সদস্যের অনুকূলে সরকার উৎসাহ বোনাস হিসেবে আরো ২০০ টাকা করে প্রদান করেন।

ধামসানিয়া ইউনিয়নের ৯টি সমিতিতে ব্যক্তি সঞ্চয়, উৎসাহ বোনাস ও ঘূর্ণয়মান ঋত তহবিল মিলে যে তহবিল সৃষ্টি হয়েছে তা উঠান বৈঠকের মাধ্যমে সদস্যদের চাহিদা অনুযায়ী ঋত হিসেবে দেয়া হয়। ঐ এলাকায় সমিতির ৪৬৮ জন সদস্যের মধ্যে অধিকাংশ সদস্যই ঋত নিয়ে হাঁস পালন শুরু করে অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন।

সুরুলিয়া গ্রামের সাজিয়া খাতুন জানান, সমিতি থেকে চল্লিশ হাজার টাকা ঋত নিয়ে গত ৬ মাস ধরে তিনি পঞ্চাশটি হাঁস পালন করছেন। প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫ টা ডিম পান। স্থানীয় বাজারে এক হালি ডিম ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি করছেন। প্রতিদিন তার এই আয় থেকে পরিবারের খরচ চালিয়ে কিছু জমাতেও পারেন। পাশাপাশি বাড়িতে ডিম থেকে হাঁসের বাচ্চা ফুটিয়ে ভালো দামে বিক্রিয় করছেন।

সাজিয়া খাতুন আগে স্বামীর সঙ্গে জমিতে কাজ করতেন। হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেও সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হতো। এখন স্বামীও তাকে সাহায্য করছেন। এক কাজে সাজিয়ার মতো পাশের গ্রামের নিলু, সীমা রানি ও রেখা সরকার জানালেন, নারী-পুরুষ সকলে মিলে কৃষিকাজ করেও মধ্যেই আমাদের দিন কাটাতে হতো। এখন সমিতি থেকে ঋত নিয়ে হাঁস পালন করে অনেকটাই ভালো আছেন তারা।

বাংলাদেশের প্রায় ৮০ শতাংশ লোক গ্রাম বাস করে। ভূমি এবং জনগণ হলো পল্লী-অর্থনীতির মূল চাবিকাঠি। পল্লী অঞ্চলের উন্নয়নের উপর দেশের সার্বিক উন্নয়ননির্ভরশীল। পল্লী অঞ্চলের প্রায় প্রত্যেক বাড়ীকে কেন্দ্র করে অব্যবহৃত জমি, উঠান, পুকুর, ডোবা, খাল ইত্যাদি এবং দক্ষ-অদক্ষ জনশক্তি, বেকার যুবক ও নারী রয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে সম্পদ ও জ্ঞানের সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিটি বাড়িকে আর্থিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করা সম্ভব। দেশের প্রতিটি জমি আবাদের আওতায় আনার লক্ষ্য নিয়ে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।

মাদারীপুর সদর উপজেলার মস্তফাপুর ইউনিয়নের জয়াইর গ্রামের বেকার যুবক সামাদ উদ্দিন সিদ্ধান্ত নেন তাকে কোনো একটি কাজ করতেই হবে। এ প্রত্যাশা নিয়ে ২০১০ সালের প্রথমদিকে মাদারীপুর যুব উন্নয়ন অধিদফতর হতে ৩ মাস মেয়াদি হাঁস-মুরগি পালন, গবাদিপশু মোটাতাজাকরণ ও মৎস্য চাষবিষয়ক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে তার কর্মজীবন শুরু করেন। যুব উন্নয়ন অধিদফতরের প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান কাজে লাগিয়ে যুব উন্নয়ন অধিদফতর থেকে প্রথমে ৫০ হাজার টাকা যুব ঋণ নিয়ে ৪টি পুকুর লিজ নেয়। প্রাথমিকভাবে মাছ চাষ ও একটি পোলট্রি ফার্ম দিয়ে প্রকল্প শুরু করেন। তার প্রচেষ্টা এবং পরিশ্রমের ফলে ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে তার কাজের পরিধি। এখন তিনি জায়গা কিনে দুটি পুকুর কেটে মাছ চাষ করছেন। পোলট্রি ফার্মের পরিধি বড় করেছেন। আরো দশজন লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। এলাকার অনেকেই সামাদের কাজে অনুপ্রাণিত হয়ে উদ্যোক্ত হচ্ছেন।

দারিদ্র্যবিমোচনে বাংলাদেশসহ বিশে^র অনেক দেশে ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ কার্যক্রমের প্রচলন আছে। এ অবস্থায় নির্দিষ্ট সময় পর দরিদ্র মানুষকে উচ্চ সুদে ঋণের টাকা শোধ করতে হয়। যা হতদরিদ্র মানুষের গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়ায়। এ অবস্থা থেকে বের হয়ে দরিদ্র মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে তাদের জন্য স্থায়ী তহবিল গঠনের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে সরকারের আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প এবং পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক।

প্রকল্পের আর্থিক লেনদেন অনলাইন পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে হচ্ছে বলে একদিকে প্রান্তিক মানুষকে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি সেবার আওতায় যেমন আনা যাচ্ছে, অন্যদিকে প্রকল্পের আর্থিক লেনদেনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করাও সম্ভব হচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যুব সমাজকে চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। সরকারি ব্যাংকগুলো সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে উদ্যোক্তা হওয়ার পথ সহজ করে দিয়েছে। সরকারের এ প্রচেষ্টার পাশাপাশি আমাদের সবার সমন্বিত উদ্যোগে দেশ একদিন সত্যিকার অর্থেই দারিদ্র্য মুক্ত হবে। ফরিদাদের মতো গ্রামীণ নারীরা আত্মনির্ভরশীল হবে, তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে।

(পিআইডি-শিশু ও নারী উন্নয়নে সচেতনতামূলক যোগাযোগ কার্যক্রম ফিচার)

মুজিবনগরে স্বাধীনতার সূর্যোদয়

বঙ্গাব্দ প্রচলনের ইতিকথা

পহেলা বৈশাখ বাঙালির প্রাণের উৎসব

কেউতো অপেক্ষায় নেই

ফরগেট মি নট

ছবি

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ সমার্থক

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বীমা শিল্পের গুরুত্ব

একুশে ফেব্রুয়ারি আত্মপরিচয়ের দিন

দিদি, আপা, “বু” খালা

হিজল-করচ-আড়াংবন

ছবি

শেখ হাসিনা, এক উৎসারিত আলোকধারা

মনমাঝি

সেই ইটনা

ছবি

আংকর ওয়াট : উন্নত সভ্যতার স্মৃতিচিহ্ন যেখানে

নিয়ত ও নিয়তি

হারিয়ে যাওয়া ট্রেন

টম সয়ার না রবিনহুড

ছবি

‘ঝড়-বৃষ্টি আঁধার রাতে, আমরা আছি তোমার সাথে’

বাংলাদেশ-জাপান সহযোগিতা স্মারক: স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অনন্য মাইলফলক

রাষ্ট্রের কূটনৈতিক মিশনের পরিবর্তন আশু প্রয়োজন

কুয়েতের জীবনযাত্রার সাতকাহন: পর্ব-১-বিয়ে

বিবেকের লড়াই

ছবি

ছবি যেন শুধু ছবি নয়

বাত ব্যথার কারণ ও আধুনিক চিকিৎসা

ছবি

স্বাধীন স্বদেশে মুক্ত বঙ্গবন্ধু

ছবি

মহান নেতার স্বভূমিতে ফিরে আসা

ছবি

মেট্রোরেল : প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী চিন্তার ফসল

ছবি

আমার মা

ডিজিটাল বাংলাদেশ: প্রগতিশীল প্রযুক্তি, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নতি

ছবি

৩ নভেম্বর: ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ডের ধারাবাহিকতা

দেশের ইতিহাসে কলঙ্কজনক দ্বিতীয় অধ্যায়

এইচ এস সি ও সমমান পরীক্ষার্থীদের অনুশীলন

ছবি

ত্রিশ বছর পূর্তিতে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়

শিল্প কারখানার পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনায় এনভায়রনমেন্টাল ইন্জিনিয়ারিং

অসুর: এক পরাজিত বিপ্লবী

অসুর জাতির ইতিহাস

tab

মুক্ত আলোচনা

হাঁস পালন করে ভাগ্যের চাকা বদলেছে ফরিদাদের

শাহনাজ পলি

শনিবার, ০৫ জুন ২০২১

খুলনার ডুমুরিয়ার উপজেলার ধামসানিয়া ইউনিয়নের অল্পশিক্ষিত ফরিদা খাতুনের ছিল অভাব অনটনের সংসার। তার স্বামী মানু মিয়া বাড়ির পাশে অল্পকিছু জমি চাষাবাদ করে কোনো রকম সংসার চালাতো। বছরের একবার চাষাবাদ চললেও বাকি সময়টায় জমিতে পানি জমে থাকে। সংসারের অভাব ঘুচাতে তার নিকটাত্মীয়ের পরামর্শ নিয়ে দুই সন্তানের জননি ফরিদা হাঁস পালন করার সিদ্ধান্ত নেয়।

প্রধানমন্ত্রীর ‘আমার বাড়ি-আমার খামার প্রকল্প’ থেকে সহায়তা নিয়ে ফরিদার ভাগ্য বদলের গল্পের শুরু। এই প্রকল্পের সমিতি থেকে সহজ শর্তে ঋত নিয়ে শুরু করেন হাঁসের খামার। ডিম বিক্রি করে প্রতি মাসে ২শ’ টাকা করে সমিতিতে জমা রাখেন। বাড়তে থাকে ফরিদার সঞ্চয় এবং আত্মবিশ্বাস। হাঁসের খামারের গর্বিত মালিক ফরিদা তার ঘরে খড়ের চাল বাদ দিয়ে এখন টিনের চাল বসিয়েছে। শিশুদের স্কুলে দিয়েছে এবং কূন্য থেকে শুরু করে এখন ফরিদা এজন সফল প্রান্তিক উদ্যোক্তা।

স্থায়ী তহবিল গঠন করে সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করে দিলে হতদরিদ্র প্রান্তিক নারীও যে স্বাবলম্বী হয়ে আত্মমর্যাদা নিয়ে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে, ফরিদা খাতুন তার বাস্তব উদাহরণ।

এ প্রকল্পে শুধু ধামসানিয়ার মানুষই উন্নয়ন করেনি, আশেপাশের ইউনিয়নবাসীর সংসারে সুদিন ফিরেছে, ফিরেছে ফরিদার মতো অনেকের ভাগ্য। মূলত বছরের পর বছর ধরে ডুমুরিয়া উপজেলার শোভনা, আটালিয়া, সাহস ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকার মানুষ বেঁচে থাকার সংগ্রাম করতেন। বিশাল একটি জনগোষ্ঠীকে বছরের প্রায় অর্ধেক সময় কর্মবিমূখ হয়ে বেকার জীবনযাপন করতে হতো।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘আমার বাড়ি-আমার খামার প্রকল্প’ এর অওতায় ওই ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডে ৯টি গ্রাম উন্নয়ন সমিতি গড়ে তোলা হয়। এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য, তহবিল সংগ্রহ এবং পারিবারিক খামারের মাধ্যমে দারিদ্র্য নির্মূল ও টেকসই উন্নয়ন। বহুমাত্রিক এই কর্মসূচির মাধ্যমে সরকার একদিকে গ্রামীণ দরিদ্র জণগোষ্ঠীর সুসংগঠিত করেছে; অন্যদিকে সঞ্চয়কে উৎসাহ প্রদান ও সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আত্ম-কর্মসংস্থানের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হতে সহায়তা করেছে।

এ প্রকল্পের আওতায় যে কৃষক ফসল ফলান, সুযোগ পেলে তিনিই আবার মাছ চাষ করার সুযোগ পান। তার উঠোনেই বাড়ে হাঁস-মুরগি, গোয়ালে গরু। সেসব প্রান্তিক মানুষের পাশে দাঁড়াতেই সরকারের এই প্রকল্প আমার বাড়ি আমার খামার।

আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের অধীনে প্রতি গ্রামে গড়ে তোলা এক একটি গ্রাম উন্নয়ন সমিতির দরিদ্র সদস্যরা প্রতিমাসে একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা জমা করেন। প্রত্যেক সমিতিতে রয়েছেন ৬০ জন সদস্য। এরমধ্যে ৪০ জন নারী ও ২০ জন পুরুষ সদস্য। প্রত্যেক মাসে প্রতি সদস্য ২০০ টাকা করে সঞ্চয় জমা করেন। পাশাপাশি প্রত্যেক সদস্যের অনুকূলে সরকার উৎসাহ বোনাস হিসেবে আরো ২০০ টাকা করে প্রদান করেন।

ধামসানিয়া ইউনিয়নের ৯টি সমিতিতে ব্যক্তি সঞ্চয়, উৎসাহ বোনাস ও ঘূর্ণয়মান ঋত তহবিল মিলে যে তহবিল সৃষ্টি হয়েছে তা উঠান বৈঠকের মাধ্যমে সদস্যদের চাহিদা অনুযায়ী ঋত হিসেবে দেয়া হয়। ঐ এলাকায় সমিতির ৪৬৮ জন সদস্যের মধ্যে অধিকাংশ সদস্যই ঋত নিয়ে হাঁস পালন শুরু করে অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন।

সুরুলিয়া গ্রামের সাজিয়া খাতুন জানান, সমিতি থেকে চল্লিশ হাজার টাকা ঋত নিয়ে গত ৬ মাস ধরে তিনি পঞ্চাশটি হাঁস পালন করছেন। প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫ টা ডিম পান। স্থানীয় বাজারে এক হালি ডিম ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি করছেন। প্রতিদিন তার এই আয় থেকে পরিবারের খরচ চালিয়ে কিছু জমাতেও পারেন। পাশাপাশি বাড়িতে ডিম থেকে হাঁসের বাচ্চা ফুটিয়ে ভালো দামে বিক্রিয় করছেন।

সাজিয়া খাতুন আগে স্বামীর সঙ্গে জমিতে কাজ করতেন। হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেও সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হতো। এখন স্বামীও তাকে সাহায্য করছেন। এক কাজে সাজিয়ার মতো পাশের গ্রামের নিলু, সীমা রানি ও রেখা সরকার জানালেন, নারী-পুরুষ সকলে মিলে কৃষিকাজ করেও মধ্যেই আমাদের দিন কাটাতে হতো। এখন সমিতি থেকে ঋত নিয়ে হাঁস পালন করে অনেকটাই ভালো আছেন তারা।

বাংলাদেশের প্রায় ৮০ শতাংশ লোক গ্রাম বাস করে। ভূমি এবং জনগণ হলো পল্লী-অর্থনীতির মূল চাবিকাঠি। পল্লী অঞ্চলের উন্নয়নের উপর দেশের সার্বিক উন্নয়ননির্ভরশীল। পল্লী অঞ্চলের প্রায় প্রত্যেক বাড়ীকে কেন্দ্র করে অব্যবহৃত জমি, উঠান, পুকুর, ডোবা, খাল ইত্যাদি এবং দক্ষ-অদক্ষ জনশক্তি, বেকার যুবক ও নারী রয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে সম্পদ ও জ্ঞানের সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিটি বাড়িকে আর্থিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করা সম্ভব। দেশের প্রতিটি জমি আবাদের আওতায় আনার লক্ষ্য নিয়ে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।

মাদারীপুর সদর উপজেলার মস্তফাপুর ইউনিয়নের জয়াইর গ্রামের বেকার যুবক সামাদ উদ্দিন সিদ্ধান্ত নেন তাকে কোনো একটি কাজ করতেই হবে। এ প্রত্যাশা নিয়ে ২০১০ সালের প্রথমদিকে মাদারীপুর যুব উন্নয়ন অধিদফতর হতে ৩ মাস মেয়াদি হাঁস-মুরগি পালন, গবাদিপশু মোটাতাজাকরণ ও মৎস্য চাষবিষয়ক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে তার কর্মজীবন শুরু করেন। যুব উন্নয়ন অধিদফতরের প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান কাজে লাগিয়ে যুব উন্নয়ন অধিদফতর থেকে প্রথমে ৫০ হাজার টাকা যুব ঋণ নিয়ে ৪টি পুকুর লিজ নেয়। প্রাথমিকভাবে মাছ চাষ ও একটি পোলট্রি ফার্ম দিয়ে প্রকল্প শুরু করেন। তার প্রচেষ্টা এবং পরিশ্রমের ফলে ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে তার কাজের পরিধি। এখন তিনি জায়গা কিনে দুটি পুকুর কেটে মাছ চাষ করছেন। পোলট্রি ফার্মের পরিধি বড় করেছেন। আরো দশজন লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। এলাকার অনেকেই সামাদের কাজে অনুপ্রাণিত হয়ে উদ্যোক্ত হচ্ছেন।

দারিদ্র্যবিমোচনে বাংলাদেশসহ বিশে^র অনেক দেশে ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ কার্যক্রমের প্রচলন আছে। এ অবস্থায় নির্দিষ্ট সময় পর দরিদ্র মানুষকে উচ্চ সুদে ঋণের টাকা শোধ করতে হয়। যা হতদরিদ্র মানুষের গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়ায়। এ অবস্থা থেকে বের হয়ে দরিদ্র মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে তাদের জন্য স্থায়ী তহবিল গঠনের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে সরকারের আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প এবং পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক।

প্রকল্পের আর্থিক লেনদেন অনলাইন পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে হচ্ছে বলে একদিকে প্রান্তিক মানুষকে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি সেবার আওতায় যেমন আনা যাচ্ছে, অন্যদিকে প্রকল্পের আর্থিক লেনদেনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করাও সম্ভব হচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যুব সমাজকে চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। সরকারি ব্যাংকগুলো সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে উদ্যোক্তা হওয়ার পথ সহজ করে দিয়েছে। সরকারের এ প্রচেষ্টার পাশাপাশি আমাদের সবার সমন্বিত উদ্যোগে দেশ একদিন সত্যিকার অর্থেই দারিদ্র্য মুক্ত হবে। ফরিদাদের মতো গ্রামীণ নারীরা আত্মনির্ভরশীল হবে, তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে।

(পিআইডি-শিশু ও নারী উন্নয়নে সচেতনতামূলক যোগাযোগ কার্যক্রম ফিচার)

back to top