ডা. রৌশনী জাহান
সকল জীবের শ্বাসকার্য পরিচালনায় প্রধান ভূমিকা পালন করে ফুসফুস। বাতাস থেকে গৃহীত অক্সিজেনকে রক্তপ্রবাহে নেওয়া এবং রক্তপ্রবাহ হতে কার্বন ডাই-অক্সাইডকে বাতাসে নিষ্কাশন করা হচ্ছে ফুসফুসের প্রধান কাজ। তাই ফুসফুসের সুরক্ষার জন্য সুনির্দিষ্ট ও সুগঠিত পরিকল্পনা গ্রহণ অত্যন্ত প্রয়োজন। আর তাই এরূপ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর ২৫ সেপ্টেম্বর বিশ্ব ফুসফুস দিবস পালিত হয়। বর্তমানে আমরা সার্স-কোভ-২ (SARS-COV-2) দ্বারা সৃষ্ট কোভিড-১৯ মহামারির সম্মুখীন। এর প্রধান শিকার আমাদের ফুসফুস। তাই এখন আমাদের আরও বেশি ফুসফুসের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন।
বিশ্ব ফুসফুস দিবসের কিছু প্রতিপাদ্য এখানে তুলে ধরা হলো:
তামাককে না বলুন, ধূমপান মুক্ত পরিবেশ গডুনঃ ধূমপান ফুসফুসের প্রধান প্রধান রোগ সৃষ্টি করার জন্য দায়ী। ধূমপানজনিত কারণে বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ৮০ লক্ষ (৮ মিলিয়ন) মানুষ মৃত্যুবরণ করে। ফুসফুসের সিওপিডি রোগের ফলে রোগী ক্রমাগতভাবে দুর্বল হতে থাকে। এই রোগে আক্রান্ত হলে শেষাবধি অনেকের শ্বাসযন্ত্র বিকল হয়ে যায় এবং ধীরে ধীরে মানুষের মৃত্যু ঘনিয়ে আসে। পাশাপাশি ধূমপায়ীরা মরণব্যাধি ক্যান্সারের শিকারও হয়ে থাকেন। ধূমপান বর্জন করলে অনেকে এই ঝুঁকি থেকে পরিত্রাণ পেতে পারেন। কারণ ধূমপান বর্জনের ২০ মিনিটের মধ্যে হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক হতে শুরু করে। ১২ ঘণ্টার মধ্যে রক্তে কার্বন মনোঅক্সাইডের পরিমাণ কমে যায়। ২-১২ সপ্তাহের মধ্যে রক্ত সঞ্চালন এবং ফুসফুসের কার্যকারিতা সক্রিয় হতে থাকে। ১-৯ মাসের মধ্যে কাশি/ শ্বাসকষ্টের প্রবণতা কমতে শুরু করে। ৫-১৫ বছরের মধ্যে স্ট্রেকের ঝুঁকি কমে অধূমপায়ীদের অবস্থানে চলে আসে। ১০ বছরের মধ্যে ফুসফুসে ক্যান্সারের মাত্রা কমে অর্ধেকে চলে আসে। ১৫ বছরের মধ্যে হৃদরোগীদের ঝুঁকি কমে অধূমপায়ীদের মতো হয়ে যায়। পাশাপাশি, ই-সিগারেটও বর্জন করা উচিৎ।
নিয়মমাফিক এবং সময়মতো ভ্যাকসিন গ্রহণ: বিভিন্ন ভাইরাস যেমন ইনফ্লুয়েঞ্জা অথবা ব্যাকটেরিয়া নিউমোক্কাল নিউমোনিয়ার জন্য দায়ী। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে ও ফুসফুসের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রতি বছর একবার ফ্লুয়ারিক্স/ ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন এবং পাঁচ বছর অন্তর অন্তর নিউমোক্কাল ভ্যাকসিন নেয়া প্রয়োজন। ভ্যাকসিন আমাদের ফুসফুসকে ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসবাহিত রোগ থেকে সুরক্ষা দেয়, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে এবং মেমোরি সেল তৈরির মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা পালন করে। বর্তমানে আমাদের শ্বাসতন্ত্র করোনা ভাইরাসজনিত কারণে মারাত্নক ঝুঁকির মুখে রয়েছে। এছাড়া নিউমোনিয়া থেকে এআরডিএস-এর মতো মারাত্নক জটিলতার সৃষ্টি করে। এমন রোগীদের মধ্যে আইসিইউ-তে থাকা শতকরা ২ ভাগ রোগী মৃত্যুবরণ করে। কাজেই ফুসফুসকে সক্রিয় ও ঘন ঘন ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস জনিত রোগ থেকে দূরে রাখতে ভ্যাকসিনের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাই এ ব্যাপারে আমাদের সবারই সচেতন থাকা প্রয়োজন।
নির্মল বায়ু সেবন: বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর প্রায় ৭০ লক্ষ মানুষ বায়ুদূষণের শিকার হচ্ছেন। ডাব্লিউএইচও এর গবেষণা থেকে জানা যায়, প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৯ জনই দূষিত বায় গ্রহণ করছেন। ফুসফুসের মাধ্যমে অতি সহজেই এই দূষিত বাতাস মানুষকে রোগাক্রান্ত করে ফেলে। ধূমপান ছাড়াও পল্লী অঞ্চলের লাকড়ির চুলা থেকে নির্গত ধোঁয়া থেকে নারীরা সিওপিডি রোগের শিকার হচ্ছেন। এছাড়া কল-কারখানা, ইটের ভাঁটা, গাড়ি ইত্যাদি থেকে নির্গত ধোঁয়াও এ রোগের অন্যতম কারণ। বায়ু দূষণের মাত্রা যেখানে বেশি রোগের মাত্রাও সেখানে অধিক। কাজেই নিজ বাসস্থানের চারপাশের বায়ু দূষণের মাত্রা জেনে নেওয়া প্রয়োজন।
নিয়মিত শরীরচর্চা এবং ফুসফুসের ব্যায়াম: শরীরকে সচল এবং সুস্থ রাখার অন্যতম শর্ত হলো শরীরের প্রধান অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোকে অর্থাৎ ফুসফুস, হার্ট ও কিডনি সক্রিয় রাখা। নিয়মিত ব্যায়াম, শরীরচর্চা এবং নির্মল বায়ু গ্রহণের মাধ্যমে আমরা শরীরে অক্সিজেনের স্বাভাবিক মাত্রা বজায় রাখতে পারি।
লেখক পরিচিতি:
অধ্যাপক ডা. রৌশনী জাহান, এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা
ডা. রৌশনী জাহান
বুধবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১
সকল জীবের শ্বাসকার্য পরিচালনায় প্রধান ভূমিকা পালন করে ফুসফুস। বাতাস থেকে গৃহীত অক্সিজেনকে রক্তপ্রবাহে নেওয়া এবং রক্তপ্রবাহ হতে কার্বন ডাই-অক্সাইডকে বাতাসে নিষ্কাশন করা হচ্ছে ফুসফুসের প্রধান কাজ। তাই ফুসফুসের সুরক্ষার জন্য সুনির্দিষ্ট ও সুগঠিত পরিকল্পনা গ্রহণ অত্যন্ত প্রয়োজন। আর তাই এরূপ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর ২৫ সেপ্টেম্বর বিশ্ব ফুসফুস দিবস পালিত হয়। বর্তমানে আমরা সার্স-কোভ-২ (SARS-COV-2) দ্বারা সৃষ্ট কোভিড-১৯ মহামারির সম্মুখীন। এর প্রধান শিকার আমাদের ফুসফুস। তাই এখন আমাদের আরও বেশি ফুসফুসের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন।
বিশ্ব ফুসফুস দিবসের কিছু প্রতিপাদ্য এখানে তুলে ধরা হলো:
তামাককে না বলুন, ধূমপান মুক্ত পরিবেশ গডুনঃ ধূমপান ফুসফুসের প্রধান প্রধান রোগ সৃষ্টি করার জন্য দায়ী। ধূমপানজনিত কারণে বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ৮০ লক্ষ (৮ মিলিয়ন) মানুষ মৃত্যুবরণ করে। ফুসফুসের সিওপিডি রোগের ফলে রোগী ক্রমাগতভাবে দুর্বল হতে থাকে। এই রোগে আক্রান্ত হলে শেষাবধি অনেকের শ্বাসযন্ত্র বিকল হয়ে যায় এবং ধীরে ধীরে মানুষের মৃত্যু ঘনিয়ে আসে। পাশাপাশি ধূমপায়ীরা মরণব্যাধি ক্যান্সারের শিকারও হয়ে থাকেন। ধূমপান বর্জন করলে অনেকে এই ঝুঁকি থেকে পরিত্রাণ পেতে পারেন। কারণ ধূমপান বর্জনের ২০ মিনিটের মধ্যে হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক হতে শুরু করে। ১২ ঘণ্টার মধ্যে রক্তে কার্বন মনোঅক্সাইডের পরিমাণ কমে যায়। ২-১২ সপ্তাহের মধ্যে রক্ত সঞ্চালন এবং ফুসফুসের কার্যকারিতা সক্রিয় হতে থাকে। ১-৯ মাসের মধ্যে কাশি/ শ্বাসকষ্টের প্রবণতা কমতে শুরু করে। ৫-১৫ বছরের মধ্যে স্ট্রেকের ঝুঁকি কমে অধূমপায়ীদের অবস্থানে চলে আসে। ১০ বছরের মধ্যে ফুসফুসে ক্যান্সারের মাত্রা কমে অর্ধেকে চলে আসে। ১৫ বছরের মধ্যে হৃদরোগীদের ঝুঁকি কমে অধূমপায়ীদের মতো হয়ে যায়। পাশাপাশি, ই-সিগারেটও বর্জন করা উচিৎ।
নিয়মমাফিক এবং সময়মতো ভ্যাকসিন গ্রহণ: বিভিন্ন ভাইরাস যেমন ইনফ্লুয়েঞ্জা অথবা ব্যাকটেরিয়া নিউমোক্কাল নিউমোনিয়ার জন্য দায়ী। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে ও ফুসফুসের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রতি বছর একবার ফ্লুয়ারিক্স/ ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন এবং পাঁচ বছর অন্তর অন্তর নিউমোক্কাল ভ্যাকসিন নেয়া প্রয়োজন। ভ্যাকসিন আমাদের ফুসফুসকে ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসবাহিত রোগ থেকে সুরক্ষা দেয়, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে এবং মেমোরি সেল তৈরির মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা পালন করে। বর্তমানে আমাদের শ্বাসতন্ত্র করোনা ভাইরাসজনিত কারণে মারাত্নক ঝুঁকির মুখে রয়েছে। এছাড়া নিউমোনিয়া থেকে এআরডিএস-এর মতো মারাত্নক জটিলতার সৃষ্টি করে। এমন রোগীদের মধ্যে আইসিইউ-তে থাকা শতকরা ২ ভাগ রোগী মৃত্যুবরণ করে। কাজেই ফুসফুসকে সক্রিয় ও ঘন ঘন ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস জনিত রোগ থেকে দূরে রাখতে ভ্যাকসিনের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাই এ ব্যাপারে আমাদের সবারই সচেতন থাকা প্রয়োজন।
নির্মল বায়ু সেবন: বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর প্রায় ৭০ লক্ষ মানুষ বায়ুদূষণের শিকার হচ্ছেন। ডাব্লিউএইচও এর গবেষণা থেকে জানা যায়, প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৯ জনই দূষিত বায় গ্রহণ করছেন। ফুসফুসের মাধ্যমে অতি সহজেই এই দূষিত বাতাস মানুষকে রোগাক্রান্ত করে ফেলে। ধূমপান ছাড়াও পল্লী অঞ্চলের লাকড়ির চুলা থেকে নির্গত ধোঁয়া থেকে নারীরা সিওপিডি রোগের শিকার হচ্ছেন। এছাড়া কল-কারখানা, ইটের ভাঁটা, গাড়ি ইত্যাদি থেকে নির্গত ধোঁয়াও এ রোগের অন্যতম কারণ। বায়ু দূষণের মাত্রা যেখানে বেশি রোগের মাত্রাও সেখানে অধিক। কাজেই নিজ বাসস্থানের চারপাশের বায়ু দূষণের মাত্রা জেনে নেওয়া প্রয়োজন।
নিয়মিত শরীরচর্চা এবং ফুসফুসের ব্যায়াম: শরীরকে সচল এবং সুস্থ রাখার অন্যতম শর্ত হলো শরীরের প্রধান অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোকে অর্থাৎ ফুসফুস, হার্ট ও কিডনি সক্রিয় রাখা। নিয়মিত ব্যায়াম, শরীরচর্চা এবং নির্মল বায়ু গ্রহণের মাধ্যমে আমরা শরীরে অক্সিজেনের স্বাভাবিক মাত্রা বজায় রাখতে পারি।
লেখক পরিচিতি:
অধ্যাপক ডা. রৌশনী জাহান, এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা