alt

মুক্ত আলোচনা

বিশ্ব শিক্ষক দিবস ও শিক্ষা পুনরুদ্ধারে শিক্ষকদের চ্যালেঞ্জ

মাহমুদুল হাছান

: সোমবার, ০৪ অক্টোবর ২০২১

কোভিড-১৯ সংকট এখনও কেটে যায়নি। এরই মধ্যে পালিত হচ্ছে আরেকটি বিশ্ব শিক্ষক দিবস। ২০২০ সালের দিবসটি পালনের প্রতিপাদ্য ছিল ‘শিক্ষক ঃ সংকটে নেতৃত্ব ও ভবিষ্যৎ ভাবনা’। আর এ কারণেই শিক্ষকদের সফল নেতৃত্ব শিক্ষার সংকট কাটাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করেছে, যার ধারাবাহিকতায় শিক্ষক দিবস-২০২১ এর প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘শিক্ষা পুনরুদ্ধারের কেন্দ্রবিন্দুতে শিক্ষক’ (টিচার্স অ্যাট দ্য হার্ট অব এডুকেশন রিকভারি)। কোভিডোত্তরকালে আলোচ্য প্রতিপাদ্যের মাধ্যমে শিক্ষা পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় শিক্ষকদের অবদানের বিষয়টি বিশেষভাবে আলোকপাত করা হয়েছে। ইউনেস্কেুা করোনা অতিমারীর এ মহাসংকটে শিক্ষকদের প্রত্যয়াবদ্ধ পরিশ্রম ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শিক্ষক দিবসের জন্য এই প্রতিপাদ্যটি নির্ধারণ করেছে।

বিশ্ব শিক্ষক দিবস উদযাপনের জন্য এবার ইউনেস্কেুা ও এর সহ-সংগঠন, আইএলও, ইউনিসেফ, এডুকেশন ইন্টারন্যাশনাল (ইআই), বিশ্বব্যাংক, হামদান ফাউন্ডেশন, টিটিএফ, গ্লোবাল এডুকেশন কোয়ালিশন এবং ইন-কান্ট্রি লোকাল এডুকেশন গ্রুপ এর সদস্যরা সামাজিক মিডিয়ার মাধ্যমে বৈশ্বিক, আঞ্চলিক ও জাতীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এদিক থেকে এবারের বিশ্ব শিক্ষক দিবসটি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।

শিক্ষকরা কোন কালেই কখনও বেশি কিছু প্রত্যাশা করেন না। শিক্ষাদান পেশাটি তাদের আদর্শের এক মহৎ ব্রত। যার ফলে কোভিড-১৯ অতিমারির কারণে সৃষ্ট শিক্ষার ব্যাঘাত এবং স্কুুল বন্ধ হওয়া সত্ত্বেও শিক্ষার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে শিক্ষকরাই নিবেদিত চিত্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। শিক্ষার্থীদের অভিভাবক, নিজেদের পরিবার এবং স্থানীয় সাধারণ সম্প্রদায়ের স্বাভাবিক গতিশীলতা বজায় রাখার ক্ষেত্রেও তাদের অবদান অনস্বীকার্য। বর্তমান সংকটের সময়, দেখা গেছে যে, শিক্ষকরা শিক্ষাগত প্রতিক্রিয়াগুলোর কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন। তারা অনলাইনে শিক্ষাদান এবং শেখার ব্যবস্থা করেছেন। তারা গ্রামীণ এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসকারী শিক্ষার্থীদের জন্য টেকহোম প্রজেক্ট বা হোম স্কুুল প্রস্তুত করেছেন, অথচ সেখানে অনলাইন শিক্ষা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় সংযোগ এবং প্রযুক্তির অভাব রয়েছে। তারা তাদের চর্চা অভিযোজিত করেছেন এবং শিক্ষার ফরম্যাট, মাধ্যম এবং বিষয়বস্তুতে বৈচিত্র্য এনেছেন, যাতে তাদের সামাজিক-মানসিক সুস্থতাসহ শিক্ষার্থীদের চাহিদা পূরণ করা যায়। এছাড়াও তারা শিক্ষার্থী, সহকর্মী শিক্ষক এবং স্কুুল সম্পর্কিতদের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ রক্ষা আরও জোরদার করেছেন। তারা প্রায়শই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং বার্তা পাঠানোর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পড়িয়েছেন, পরীক্ষা নিয়েছেন এবং শিক্ষার প্রয়োজনীয় উপাদান বিনিময় করে শিক্ষা সংকট দূর করার আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন।

ফলস্বরূপ, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, সাধারণ সম্প্রদায় এবং সব শ্রেণী-পেশার মানুষের মাঝে শিক্ষকদের অবদানের বিষয়টি ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। শিক্ষার পুনরুদ্ধারে এবং সমাজের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কুৃতিক জীবনে সহায়ক ভূমিকা রাখতে তাদের অবদান সর্বমহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, শিক্ষকদের কাজের প্রতি এ উচ্চ সম্মান, শিক্ষা সম্প্রসারণের নীতিমালা এবং শিক্ষা পুনরুদ্ধারের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়নি। (রিপোর্ট : ইউনেস্কেুা, ২০২১)।

করোনাকালীন সংকটে শিক্ষকতা পেশার জন্য শিক্ষকদেরকে অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে, অনলাইন শিক্ষায় পেশাগত উন্নয়নে সুযোগের অভাব, দূরশিক্ষা, ডাবল-শিফট ক্লাস এবং ব্লেন্ডেড লার্নিং-এর সঙ্গে যুক্ত কাজের চাপ বৃদ্ধি। এছাড়া, চুক্তিভিত্তিক শিক্ষকদের নিয়োগ করে স্থায়ীদের বরখাস্ত করা, বেসরকারি স্কুুল এবং কমিউনিটি স্কুলে মাসের পর মাস শিক্ষকদের বিনা বেতনে চাকরি করা বা কখনও কখনও চাকরি থেকে বিদায় করে দেয়া ছিল আরও দুঃখজনক। পেশাগত নিরাপত্তার ক্ষেত্রে যখন শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীদের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনেশন স্কিমগুলোতে ফ্রন্টলাইনকর্মী হিসেবে যতটুকু অগ্রাধিকার দেয়া দরকার, তা যথার্থভাবে দেয়া হয়নি। ফলে আজকাল শিক্ষকদের মর্যাদা এবং পেশাগত সামাজিক অবস্থান ও পর্যাপ্ত সহায়তা সামগ্রিক অর্থায়নে প্রতিফলিত হয় নি। এমনকি, গুরুত্বপূর্ণ কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও নীতি প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের জন্য শিক্ষকদের খুব কমই আমন্ত্রণ জানানো হয়। অথচ শিক্ষার্থীদের শেখার এবং সুস্থতার ওপর শিক্ষকদের সরাসরি প্রভাব রয়েছে। শিক্ষার্থীদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা এবং শিক্ষাজীবনের বাইরেও এককভাবে এ সব শিক্ষকদের গুণমান অনেক গুরুত্বপূর্ণ, যা শিক্ষার্থীদের কৃতিত্বকে প্রভাবিত করে। তথাপি শিক্ষকরা সমাজে হন অবমূল্যায়িত এবং অর্থনৈতিকভাবে হন বেশ অবহেলিত। আর এ কারণেই, আমাদের দেশে শিক্ষকতা পেশা মেধাবীদের কাছে আকর্ষণীয় পেশা হিসেবে বিবেচিত হয় না।

এ পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক। কারণ, শিক্ষকদের অভাব এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বিশ্বকে প্রভাবিত করছে। ইউনেস্কো ইনস্টিটিউট ফর স্ট্যাটিস্টিকস (ইউআইএস)-এর রিপোর্ট অনুসারে, ২০৩০ সালের মধ্যে সার্বজনীন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য (এসডিজি-৪.১) বিশ্বব্যাপী ৬৯ মিলিয়ন আরও শিক্ষক প্রয়োজন। প্রাথমিকের জন্য ২৪ মিলিয়ন এবং মাধ্যমিক শিক্ষার জন্য ৪৪ মিলিয়ন। সাব-সাহারান আফ্রিকাতে শিক্ষক সংকট সবচেয়ে তীব্র, যেখানে শিক্ষক সংকট রয়েছে ৭০% প্রাথমিক স্তরে এবং ৯০% মাধ্যমিক স্তরে (ইউআইএস-২০১৬)। এখনি এ সংকট দূর করতে না পারলে আগামী ৩০ বছরে এ অঞ্চলটি এক মহাশিক্ষা সংকটে পড়বে। জনসংখ্যাতাত্ত্বিক তথ্যের ওপর ভিত্তি করে, ইউআইএসের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, সাব-সাহারান আফ্রিকার ২০৩০ সালের মধ্যে ১৭ মিলিয়ন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষক নিয়োগের প্রয়োজন, দক্ষিণ এশিয়ার ১৫ মিলিয়ন এবং উন্নত দেশগুলিতে ১১ মিলিয়ন নিয়োগ করা প্রয়োজন। বাংলাদেশে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মাধ্যমিক শাখা সূত্র জানায়, সারাদেশে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৩৫১টি। এসব প্রতিষ্ঠানে সহকারী শিক্ষকের মোট সৃষ্ট পদ রয়েছে ১০ হাজার ৯০৪টি। এর প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষকের পদই শূন্য রয়েছে। প্রাথমিকের অবস্থা আরও শোচনীয়।

চাকরিজীবী শিক্ষকদের প্রতিভা স্থাপনের জন্য আরেকটি বাধা হলো মাশরুমিং জবাবদিহিতার ব্যবস্থা যা শিক্ষকদের এজেন্সি, স্বায়ত্তশাসন এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতাকে সীমাবদ্ধ করে এবং শেষ পর্যন্ত পেশাকে কম আকর্ষণীয় এবং বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে অসাড় করে তোলে। ফলে অনেক শিক্ষক পেশা ত্যাগ করতে বাধ্য হন। শিক্ষার উন্নতি এবং শিক্ষার ফলাফলের পর্যবেক্ষণ বৃদ্ধির জন্য গত কয়েক দশক ধরে গৃহীত কিছু পদক্ষেপের ফলে প্রকৃতপক্ষে শিক্ষকরা তাদের পেশাগত স্বায়ত্তশাসন এবং নেতৃত্ব ব্যবহার করতে পারেন, এমন স্থানগুলো হ্রাস করে শিক্ষার শিল্পকে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। শিক্ষক ইনপুট ছাড়াই মান নিশ্চিতকরণ পদ্ধতি ডিজাইন করা হয়েছে। যেমন- বড় আকারের পরীক্ষা, কর্মক্ষমতা-ভিত্তিক শিক্ষক মূল্যায়ন ব্যবস্থা, স্কুল পরিদর্শন, নির্ধারিত পাঠ্যক্রম এবং কঠোর শিক্ষার এমন কিছু পদক্ষেপ, যা অন্যদের তুলনায় শিক্ষকদের কাজের চাপ বাড়িয়েছে এবং শিক্ষাশিল্পকে সীমাবদ্ধ করেছে।

কোভিডোত্তরকালে শিক্ষার পুনরুদ্ধারের জন্য, ভবিষ্যতের ধাক্কাগুলোর বিরুদ্ধে স্থিতিস্থাপক নির্ধারণ করে আরও অভিযোজিত শিক্ষাব্যবস্থা পুনর্নির্মাণের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের ভূমিকাই মোক্ষম। এ জন্যই গ্লোবাল এডুকেশন মিটিং-এর মিনিস্টারিয়াল সেগমেন্টের পরামর্শ মোতাবেক, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সব শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীদের ফ্রন্টলাইনকর্মী হিসেবে সহায়তা প্রদান, সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাদের প্রতিনিধি সংগঠনের সঙ্গে পরামর্শ করা এবং তাদের নিরাপত্তা, সুস্থতা ও কর্মক্ষেত্রের সব সুবিধা নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক। এ কারণেই ইউনেস্কো, ইউনিসেফ এবং বিশ্ব ব্যাংক ‘মিশন : ২০২১ সালে শিক্ষা পুনরুদ্ধার’ নামে একটি যৌথ মিশন চালু করেছে, যার মূল লক্ষ্য হলো, শিক্ষকদের সহায়তার ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করা, সমস্ত শিক্ষার্থীদের স্কুলে ফেরানো এবং তাদেরকে শিক্ষার প্রতি আকৃষ্ট করা।

শিক্ষার পুনরুদ্ধারে শিক্ষকদের পেশাগত উন্নয়ন খুবই জরুরি। এ জন্য নীতি-নির্ধারকদের উচিত হলো, শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা এবং তাদের মানোন্নয়নে সর্বদা সমর্থন করা, প্রশিক্ষিত এবং অভিজ্ঞ শিক্ষকদের শিক্ষাগত সিদ্ধান্তের ওপর বিশ্বাস রাখা এবং শিক্ষাকে সহায়তা করার জন্য শিক্ষাগত প্রযুক্তি ব্যবহার করার দক্ষতা বৃদ্ধি করা, হাইব্রিড শিক্ষার সব সরঞ্জাম নিশ্চিত করা এবং শিক্ষা বৈচিত্র্যের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন চাহিদা, ইচ্ছা এবং আকাক্সক্ষার প্রতি মনযোগ দেয়া। এছাড়া বাধাগ্রস্ত শিক্ষার ক্ষতি কাটাতে শিক্ষকদের যে বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব দিতে হয় তাহলো- সম্পূরক শিক্ষা কার্যক্রম হাতে নেয়া, সঠিক স্তরে শিক্ষা দেয়ার জন্য শিখনফল নিশ্চিত করা, শিক্ষার প্রাসঙ্গিকীকরণ এবং মহামারী চলাকালীন শিক্ষার ক্ষতি এবং লাভগুলো বিবেচনায় নেয়া। আর এর জন্য প্রয়োজন হয় নির্দিষ্ট শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান। যেমন, শ্রেণীকক্ষ পর্যায়ে শিক্ষার মূল্যায়ন এবং পাঠ্যক্রমকে শিক্ষার্থীদের চাহিদার সঙ্গে মানানসই শিক্ষার সমন্বয় করা। এগুলো এমন পদক্ষেপ যা শিক্ষকদেরকে সচেতনতার সঙ্গে অনুশীলন করতে হয়, যেন ভবিষ্যতের সংকটগুলোর জন্য আরও ভালোভাবে প্রস্তুত হওয়া যায় এবং প্রযুক্তিগত বিকাশের সুবিধাগুলো গ্রহণ করে শিক্ষা পুনরুদ্ধার নিশ্চিত করা যায়।

যখন শিক্ষা প্রশাসন এবং অংশগ্রহণের কথা আসে, তখন শিক্ষাব্যবস্থার সামনে সবচেয়ে বড় যে চ্যালেঞ্জটি দেখা যায়, সেটি হলো- শিক্ষাকেন্দ্রিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে শিক্ষক এবং তাদের সংগঠনের অংশগ্রহণের জন্য চ্যানেল তৈরি করা ও শ্রেণীকক্ষে তাদের অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান বিতরণ করা। শিক্ষা প্রশাসন এবং ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন স্তরে, সামাজিক সংলাপের মাধ্যমে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের অংশগ্রহণ, নেটওয়ার্ক এবং অনুশীলনের সম্প্রদায়গুলোতে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করা শিক্ষকদের জন্য আরেকটি চ্যালেঞ্জিং দায়িত্ব।

কাজের অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষকদের স্বাস্থ্যকর, নিরাপদ এবং সক্রিয় পরিবেশে এমনভাবে কাজ করতে হবে যা লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্যহীনতাসহ কুসংস্কারমুক্ত, উপযুক্ত কর্মঘণ্টা অনুযায়ী পারিশ্রমিক এবং ক্যারিয়ার বিকাশের সুযোগ-সুবিধা দ্বারা সুসজ্জিত। এটি কেবল পেশার মর্যাদাকেই উন্নীত করবে না, বরং এটি নিয়োগ, ধারণ, প্রেরণা এবং শেষ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের শিক্ষার ক্ষেত্রেও ব্যাপক উন্নতি করবে।

পরিশেষে বলা যায়, কোভিড-১৯ সংকটের দীর্ঘকাল পর বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে শিক্ষকদের পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় পুরোপুরি অবদান রাখার জন্য যে সহায়তা দেয়া দরকার তার ওপর আলোকপাত করতে হবে। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটের কারণে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের অবস্থা মূল্যায়নের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের চেতনা অনুসরণ করে এ বছর বিশ্ব শিক্ষক দিবসের পর্যবেক্ষণ শিক্ষা পুনরুদ্ধারে শিক্ষকদের ভূমিকাকেই ইতিবাচক হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। সুতরাং ২০৩০ সালের এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের প্রত্যাশিত ভূমিকা পালন করার জন্য তাদেরকে পূর্ণ সমর্থন দিতে হবে এবং শিক্ষা পুনরুদ্ধারের জন্য তাদেরকে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করতে হবে।

[ লেখক : প্রিন্সিপাল, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, ঢাকা ]

মুজিবনগরে স্বাধীনতার সূর্যোদয়

বঙ্গাব্দ প্রচলনের ইতিকথা

পহেলা বৈশাখ বাঙালির প্রাণের উৎসব

কেউতো অপেক্ষায় নেই

ফরগেট মি নট

ছবি

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ সমার্থক

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বীমা শিল্পের গুরুত্ব

একুশে ফেব্রুয়ারি আত্মপরিচয়ের দিন

দিদি, আপা, “বু” খালা

হিজল-করচ-আড়াংবন

ছবি

শেখ হাসিনা, এক উৎসারিত আলোকধারা

মনমাঝি

সেই ইটনা

ছবি

আংকর ওয়াট : উন্নত সভ্যতার স্মৃতিচিহ্ন যেখানে

নিয়ত ও নিয়তি

হারিয়ে যাওয়া ট্রেন

টম সয়ার না রবিনহুড

ছবি

‘ঝড়-বৃষ্টি আঁধার রাতে, আমরা আছি তোমার সাথে’

বাংলাদেশ-জাপান সহযোগিতা স্মারক: স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অনন্য মাইলফলক

রাষ্ট্রের কূটনৈতিক মিশনের পরিবর্তন আশু প্রয়োজন

কুয়েতের জীবনযাত্রার সাতকাহন: পর্ব-১-বিয়ে

বিবেকের লড়াই

ছবি

ছবি যেন শুধু ছবি নয়

বাত ব্যথার কারণ ও আধুনিক চিকিৎসা

ছবি

স্বাধীন স্বদেশে মুক্ত বঙ্গবন্ধু

ছবি

মহান নেতার স্বভূমিতে ফিরে আসা

ছবি

মেট্রোরেল : প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী চিন্তার ফসল

ছবি

আমার মা

ডিজিটাল বাংলাদেশ: প্রগতিশীল প্রযুক্তি, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নতি

ছবি

৩ নভেম্বর: ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ডের ধারাবাহিকতা

দেশের ইতিহাসে কলঙ্কজনক দ্বিতীয় অধ্যায়

এইচ এস সি ও সমমান পরীক্ষার্থীদের অনুশীলন

ছবি

ত্রিশ বছর পূর্তিতে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়

শিল্প কারখানার পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনায় এনভায়রনমেন্টাল ইন্জিনিয়ারিং

অসুর: এক পরাজিত বিপ্লবী

অসুর জাতির ইতিহাস

tab

মুক্ত আলোচনা

বিশ্ব শিক্ষক দিবস ও শিক্ষা পুনরুদ্ধারে শিক্ষকদের চ্যালেঞ্জ

মাহমুদুল হাছান

সোমবার, ০৪ অক্টোবর ২০২১

কোভিড-১৯ সংকট এখনও কেটে যায়নি। এরই মধ্যে পালিত হচ্ছে আরেকটি বিশ্ব শিক্ষক দিবস। ২০২০ সালের দিবসটি পালনের প্রতিপাদ্য ছিল ‘শিক্ষক ঃ সংকটে নেতৃত্ব ও ভবিষ্যৎ ভাবনা’। আর এ কারণেই শিক্ষকদের সফল নেতৃত্ব শিক্ষার সংকট কাটাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করেছে, যার ধারাবাহিকতায় শিক্ষক দিবস-২০২১ এর প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘শিক্ষা পুনরুদ্ধারের কেন্দ্রবিন্দুতে শিক্ষক’ (টিচার্স অ্যাট দ্য হার্ট অব এডুকেশন রিকভারি)। কোভিডোত্তরকালে আলোচ্য প্রতিপাদ্যের মাধ্যমে শিক্ষা পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় শিক্ষকদের অবদানের বিষয়টি বিশেষভাবে আলোকপাত করা হয়েছে। ইউনেস্কেুা করোনা অতিমারীর এ মহাসংকটে শিক্ষকদের প্রত্যয়াবদ্ধ পরিশ্রম ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শিক্ষক দিবসের জন্য এই প্রতিপাদ্যটি নির্ধারণ করেছে।

বিশ্ব শিক্ষক দিবস উদযাপনের জন্য এবার ইউনেস্কেুা ও এর সহ-সংগঠন, আইএলও, ইউনিসেফ, এডুকেশন ইন্টারন্যাশনাল (ইআই), বিশ্বব্যাংক, হামদান ফাউন্ডেশন, টিটিএফ, গ্লোবাল এডুকেশন কোয়ালিশন এবং ইন-কান্ট্রি লোকাল এডুকেশন গ্রুপ এর সদস্যরা সামাজিক মিডিয়ার মাধ্যমে বৈশ্বিক, আঞ্চলিক ও জাতীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এদিক থেকে এবারের বিশ্ব শিক্ষক দিবসটি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।

শিক্ষকরা কোন কালেই কখনও বেশি কিছু প্রত্যাশা করেন না। শিক্ষাদান পেশাটি তাদের আদর্শের এক মহৎ ব্রত। যার ফলে কোভিড-১৯ অতিমারির কারণে সৃষ্ট শিক্ষার ব্যাঘাত এবং স্কুুল বন্ধ হওয়া সত্ত্বেও শিক্ষার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে শিক্ষকরাই নিবেদিত চিত্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। শিক্ষার্থীদের অভিভাবক, নিজেদের পরিবার এবং স্থানীয় সাধারণ সম্প্রদায়ের স্বাভাবিক গতিশীলতা বজায় রাখার ক্ষেত্রেও তাদের অবদান অনস্বীকার্য। বর্তমান সংকটের সময়, দেখা গেছে যে, শিক্ষকরা শিক্ষাগত প্রতিক্রিয়াগুলোর কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন। তারা অনলাইনে শিক্ষাদান এবং শেখার ব্যবস্থা করেছেন। তারা গ্রামীণ এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসকারী শিক্ষার্থীদের জন্য টেকহোম প্রজেক্ট বা হোম স্কুুল প্রস্তুত করেছেন, অথচ সেখানে অনলাইন শিক্ষা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় সংযোগ এবং প্রযুক্তির অভাব রয়েছে। তারা তাদের চর্চা অভিযোজিত করেছেন এবং শিক্ষার ফরম্যাট, মাধ্যম এবং বিষয়বস্তুতে বৈচিত্র্য এনেছেন, যাতে তাদের সামাজিক-মানসিক সুস্থতাসহ শিক্ষার্থীদের চাহিদা পূরণ করা যায়। এছাড়াও তারা শিক্ষার্থী, সহকর্মী শিক্ষক এবং স্কুুল সম্পর্কিতদের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ রক্ষা আরও জোরদার করেছেন। তারা প্রায়শই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং বার্তা পাঠানোর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পড়িয়েছেন, পরীক্ষা নিয়েছেন এবং শিক্ষার প্রয়োজনীয় উপাদান বিনিময় করে শিক্ষা সংকট দূর করার আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন।

ফলস্বরূপ, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, সাধারণ সম্প্রদায় এবং সব শ্রেণী-পেশার মানুষের মাঝে শিক্ষকদের অবদানের বিষয়টি ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। শিক্ষার পুনরুদ্ধারে এবং সমাজের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কুৃতিক জীবনে সহায়ক ভূমিকা রাখতে তাদের অবদান সর্বমহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, শিক্ষকদের কাজের প্রতি এ উচ্চ সম্মান, শিক্ষা সম্প্রসারণের নীতিমালা এবং শিক্ষা পুনরুদ্ধারের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়নি। (রিপোর্ট : ইউনেস্কেুা, ২০২১)।

করোনাকালীন সংকটে শিক্ষকতা পেশার জন্য শিক্ষকদেরকে অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে, অনলাইন শিক্ষায় পেশাগত উন্নয়নে সুযোগের অভাব, দূরশিক্ষা, ডাবল-শিফট ক্লাস এবং ব্লেন্ডেড লার্নিং-এর সঙ্গে যুক্ত কাজের চাপ বৃদ্ধি। এছাড়া, চুক্তিভিত্তিক শিক্ষকদের নিয়োগ করে স্থায়ীদের বরখাস্ত করা, বেসরকারি স্কুুল এবং কমিউনিটি স্কুলে মাসের পর মাস শিক্ষকদের বিনা বেতনে চাকরি করা বা কখনও কখনও চাকরি থেকে বিদায় করে দেয়া ছিল আরও দুঃখজনক। পেশাগত নিরাপত্তার ক্ষেত্রে যখন শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীদের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনেশন স্কিমগুলোতে ফ্রন্টলাইনকর্মী হিসেবে যতটুকু অগ্রাধিকার দেয়া দরকার, তা যথার্থভাবে দেয়া হয়নি। ফলে আজকাল শিক্ষকদের মর্যাদা এবং পেশাগত সামাজিক অবস্থান ও পর্যাপ্ত সহায়তা সামগ্রিক অর্থায়নে প্রতিফলিত হয় নি। এমনকি, গুরুত্বপূর্ণ কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও নীতি প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের জন্য শিক্ষকদের খুব কমই আমন্ত্রণ জানানো হয়। অথচ শিক্ষার্থীদের শেখার এবং সুস্থতার ওপর শিক্ষকদের সরাসরি প্রভাব রয়েছে। শিক্ষার্থীদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা এবং শিক্ষাজীবনের বাইরেও এককভাবে এ সব শিক্ষকদের গুণমান অনেক গুরুত্বপূর্ণ, যা শিক্ষার্থীদের কৃতিত্বকে প্রভাবিত করে। তথাপি শিক্ষকরা সমাজে হন অবমূল্যায়িত এবং অর্থনৈতিকভাবে হন বেশ অবহেলিত। আর এ কারণেই, আমাদের দেশে শিক্ষকতা পেশা মেধাবীদের কাছে আকর্ষণীয় পেশা হিসেবে বিবেচিত হয় না।

এ পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক। কারণ, শিক্ষকদের অভাব এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বিশ্বকে প্রভাবিত করছে। ইউনেস্কো ইনস্টিটিউট ফর স্ট্যাটিস্টিকস (ইউআইএস)-এর রিপোর্ট অনুসারে, ২০৩০ সালের মধ্যে সার্বজনীন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য (এসডিজি-৪.১) বিশ্বব্যাপী ৬৯ মিলিয়ন আরও শিক্ষক প্রয়োজন। প্রাথমিকের জন্য ২৪ মিলিয়ন এবং মাধ্যমিক শিক্ষার জন্য ৪৪ মিলিয়ন। সাব-সাহারান আফ্রিকাতে শিক্ষক সংকট সবচেয়ে তীব্র, যেখানে শিক্ষক সংকট রয়েছে ৭০% প্রাথমিক স্তরে এবং ৯০% মাধ্যমিক স্তরে (ইউআইএস-২০১৬)। এখনি এ সংকট দূর করতে না পারলে আগামী ৩০ বছরে এ অঞ্চলটি এক মহাশিক্ষা সংকটে পড়বে। জনসংখ্যাতাত্ত্বিক তথ্যের ওপর ভিত্তি করে, ইউআইএসের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, সাব-সাহারান আফ্রিকার ২০৩০ সালের মধ্যে ১৭ মিলিয়ন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষক নিয়োগের প্রয়োজন, দক্ষিণ এশিয়ার ১৫ মিলিয়ন এবং উন্নত দেশগুলিতে ১১ মিলিয়ন নিয়োগ করা প্রয়োজন। বাংলাদেশে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মাধ্যমিক শাখা সূত্র জানায়, সারাদেশে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৩৫১টি। এসব প্রতিষ্ঠানে সহকারী শিক্ষকের মোট সৃষ্ট পদ রয়েছে ১০ হাজার ৯০৪টি। এর প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষকের পদই শূন্য রয়েছে। প্রাথমিকের অবস্থা আরও শোচনীয়।

চাকরিজীবী শিক্ষকদের প্রতিভা স্থাপনের জন্য আরেকটি বাধা হলো মাশরুমিং জবাবদিহিতার ব্যবস্থা যা শিক্ষকদের এজেন্সি, স্বায়ত্তশাসন এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতাকে সীমাবদ্ধ করে এবং শেষ পর্যন্ত পেশাকে কম আকর্ষণীয় এবং বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে অসাড় করে তোলে। ফলে অনেক শিক্ষক পেশা ত্যাগ করতে বাধ্য হন। শিক্ষার উন্নতি এবং শিক্ষার ফলাফলের পর্যবেক্ষণ বৃদ্ধির জন্য গত কয়েক দশক ধরে গৃহীত কিছু পদক্ষেপের ফলে প্রকৃতপক্ষে শিক্ষকরা তাদের পেশাগত স্বায়ত্তশাসন এবং নেতৃত্ব ব্যবহার করতে পারেন, এমন স্থানগুলো হ্রাস করে শিক্ষার শিল্পকে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। শিক্ষক ইনপুট ছাড়াই মান নিশ্চিতকরণ পদ্ধতি ডিজাইন করা হয়েছে। যেমন- বড় আকারের পরীক্ষা, কর্মক্ষমতা-ভিত্তিক শিক্ষক মূল্যায়ন ব্যবস্থা, স্কুল পরিদর্শন, নির্ধারিত পাঠ্যক্রম এবং কঠোর শিক্ষার এমন কিছু পদক্ষেপ, যা অন্যদের তুলনায় শিক্ষকদের কাজের চাপ বাড়িয়েছে এবং শিক্ষাশিল্পকে সীমাবদ্ধ করেছে।

কোভিডোত্তরকালে শিক্ষার পুনরুদ্ধারের জন্য, ভবিষ্যতের ধাক্কাগুলোর বিরুদ্ধে স্থিতিস্থাপক নির্ধারণ করে আরও অভিযোজিত শিক্ষাব্যবস্থা পুনর্নির্মাণের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের ভূমিকাই মোক্ষম। এ জন্যই গ্লোবাল এডুকেশন মিটিং-এর মিনিস্টারিয়াল সেগমেন্টের পরামর্শ মোতাবেক, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সব শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীদের ফ্রন্টলাইনকর্মী হিসেবে সহায়তা প্রদান, সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাদের প্রতিনিধি সংগঠনের সঙ্গে পরামর্শ করা এবং তাদের নিরাপত্তা, সুস্থতা ও কর্মক্ষেত্রের সব সুবিধা নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক। এ কারণেই ইউনেস্কো, ইউনিসেফ এবং বিশ্ব ব্যাংক ‘মিশন : ২০২১ সালে শিক্ষা পুনরুদ্ধার’ নামে একটি যৌথ মিশন চালু করেছে, যার মূল লক্ষ্য হলো, শিক্ষকদের সহায়তার ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করা, সমস্ত শিক্ষার্থীদের স্কুলে ফেরানো এবং তাদেরকে শিক্ষার প্রতি আকৃষ্ট করা।

শিক্ষার পুনরুদ্ধারে শিক্ষকদের পেশাগত উন্নয়ন খুবই জরুরি। এ জন্য নীতি-নির্ধারকদের উচিত হলো, শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা এবং তাদের মানোন্নয়নে সর্বদা সমর্থন করা, প্রশিক্ষিত এবং অভিজ্ঞ শিক্ষকদের শিক্ষাগত সিদ্ধান্তের ওপর বিশ্বাস রাখা এবং শিক্ষাকে সহায়তা করার জন্য শিক্ষাগত প্রযুক্তি ব্যবহার করার দক্ষতা বৃদ্ধি করা, হাইব্রিড শিক্ষার সব সরঞ্জাম নিশ্চিত করা এবং শিক্ষা বৈচিত্র্যের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন চাহিদা, ইচ্ছা এবং আকাক্সক্ষার প্রতি মনযোগ দেয়া। এছাড়া বাধাগ্রস্ত শিক্ষার ক্ষতি কাটাতে শিক্ষকদের যে বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব দিতে হয় তাহলো- সম্পূরক শিক্ষা কার্যক্রম হাতে নেয়া, সঠিক স্তরে শিক্ষা দেয়ার জন্য শিখনফল নিশ্চিত করা, শিক্ষার প্রাসঙ্গিকীকরণ এবং মহামারী চলাকালীন শিক্ষার ক্ষতি এবং লাভগুলো বিবেচনায় নেয়া। আর এর জন্য প্রয়োজন হয় নির্দিষ্ট শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান। যেমন, শ্রেণীকক্ষ পর্যায়ে শিক্ষার মূল্যায়ন এবং পাঠ্যক্রমকে শিক্ষার্থীদের চাহিদার সঙ্গে মানানসই শিক্ষার সমন্বয় করা। এগুলো এমন পদক্ষেপ যা শিক্ষকদেরকে সচেতনতার সঙ্গে অনুশীলন করতে হয়, যেন ভবিষ্যতের সংকটগুলোর জন্য আরও ভালোভাবে প্রস্তুত হওয়া যায় এবং প্রযুক্তিগত বিকাশের সুবিধাগুলো গ্রহণ করে শিক্ষা পুনরুদ্ধার নিশ্চিত করা যায়।

যখন শিক্ষা প্রশাসন এবং অংশগ্রহণের কথা আসে, তখন শিক্ষাব্যবস্থার সামনে সবচেয়ে বড় যে চ্যালেঞ্জটি দেখা যায়, সেটি হলো- শিক্ষাকেন্দ্রিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে শিক্ষক এবং তাদের সংগঠনের অংশগ্রহণের জন্য চ্যানেল তৈরি করা ও শ্রেণীকক্ষে তাদের অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান বিতরণ করা। শিক্ষা প্রশাসন এবং ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন স্তরে, সামাজিক সংলাপের মাধ্যমে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের অংশগ্রহণ, নেটওয়ার্ক এবং অনুশীলনের সম্প্রদায়গুলোতে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করা শিক্ষকদের জন্য আরেকটি চ্যালেঞ্জিং দায়িত্ব।

কাজের অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষকদের স্বাস্থ্যকর, নিরাপদ এবং সক্রিয় পরিবেশে এমনভাবে কাজ করতে হবে যা লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্যহীনতাসহ কুসংস্কারমুক্ত, উপযুক্ত কর্মঘণ্টা অনুযায়ী পারিশ্রমিক এবং ক্যারিয়ার বিকাশের সুযোগ-সুবিধা দ্বারা সুসজ্জিত। এটি কেবল পেশার মর্যাদাকেই উন্নীত করবে না, বরং এটি নিয়োগ, ধারণ, প্রেরণা এবং শেষ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের শিক্ষার ক্ষেত্রেও ব্যাপক উন্নতি করবে।

পরিশেষে বলা যায়, কোভিড-১৯ সংকটের দীর্ঘকাল পর বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে শিক্ষকদের পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় পুরোপুরি অবদান রাখার জন্য যে সহায়তা দেয়া দরকার তার ওপর আলোকপাত করতে হবে। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটের কারণে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের অবস্থা মূল্যায়নের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের চেতনা অনুসরণ করে এ বছর বিশ্ব শিক্ষক দিবসের পর্যবেক্ষণ শিক্ষা পুনরুদ্ধারে শিক্ষকদের ভূমিকাকেই ইতিবাচক হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। সুতরাং ২০৩০ সালের এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের প্রত্যাশিত ভূমিকা পালন করার জন্য তাদেরকে পূর্ণ সমর্থন দিতে হবে এবং শিক্ষা পুনরুদ্ধারের জন্য তাদেরকে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করতে হবে।

[ লেখক : প্রিন্সিপাল, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, ঢাকা ]

back to top