সাক্ষাৎকার মালেকা খান
কুররাতুল আইন তাহমিনা
১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসেই ঢাকায় বেগম সুফিয়া কামালের নেতৃত্বে সমাজসেবী কয়েকজন মহিলা যুদ্ধে নির্যাতিতা মেয়েদের উদ্ধার ও পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেন। উদ্যোগটি ছিল তাৎক্ষণিক স্বতঃস্ফূর্ত এবং বেসরকারি। এরাই ’৭২-এর জানুয়ারিতে গঠন করেন ‘কেন্দ্রীয় মহিলা পুনর্বাসন সংস্থা’ স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাদের হাতে নির্যাতিত মেয়েদের সাহায্য ও সহযোগিতা করার প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক প্রচেষ্টা। মালেকা খান এ উদ্যোগের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে জড়িত ছিলেন প্রথম থেকেই। পরবর্তীকালে ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত সংস্থার পরিচালিকার দায়িত্ব পালন করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন তিনি। ১৯৭১ সালের ২৯ ও ৩০ মার্চ কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে ভূমিকা নেয়ার জন্য যে বাঙালি সেনাকর্মীদের হত্যা করা হয়, তাদের মধ্যে মালেকা খানের ছোট ভাই লেফটেন্যান্ট আতিক ও জ্ঞাতিভাই লেফটেন্যান্ট কর্নেল আনোয়ারও ছিলেন। মালেকা খান তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান গার্ল গাইডস অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পর বেগম বদরুন্নেসা আহমেদের সহযোগিতায় স্বেচ্ছাপ্রণোদিতভাবে মেয়েদের ফার্স্ট এইড ও সিভিল ডিফেন্স ট্রেনিং দেয়া শুরু করেন।
১৯৭১ সালে ক্ষতিগ্রস্ত মেয়েদের পুনর্বাসনের জন্য যে সোনারগাঁ (Crafts village) প্রকল্প করা হয়, সেখানেও মালেকা খানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাদের হাতে নির্যাতিত মেয়েদের কথা বলতে গিয়ে মালেকা খান যুদ্ধকালীন একটি ঘটনার কথা বললেনÑ ’৭১-এর ঠিক মাঝামাঝি সময়ে, আমি তখন গার্ল গাইডের সেক্রেটারি ছিলাম ...। ওই সময় আমরা তো মনে করেন একবার গ্রামে চলে যাচ্ছি, আবার শহরে আসছি, আবার গ্রামে যাচ্ছি। এভাবেই কাজ করেছি। এ সময়ে গার্ল গাইডের ওপর দায়িত্ব এলো (পাকিস্তানের প্রশাসকদের নির্দেশ) যে, যেন ঢাকাতে মেয়েদের একটি সমাবেশের আয়োজন করি। কিন্তু সেক্রেটারি হিসেবে আমি জানালাম, কোথাও কোন কলেজ, স্কুল, পাঠশালা চলছে না, আমরা কী করে গাইডদের সমাবেশ করতে পারি? এ রকম সময় আমাদের কাছে খবর এলো যে, বেশকিছু মেয়ে ঢাকা সেনানিবাসেই বন্দী আছে। আজকে যেটা এমপি হোস্টেল নাখালপাড়ায়, সেখানেও মেয়েরা বন্দী রয়েছে। এ খবর শুনে আমরা যখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি, তখন একটা সুযোগ হলো, সেনা কর্মকর্তাদের মুখ থেকে কিছু শোনার। গার্ল গাইডের প্রধান ছিলেন মিসেস তাহেরা কবীর, তাকে পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার বশির ডেকে পাঠালেন। তাহেরা আপা একা যাবেন না, বললেন সেক্রেটারি হিসেবে। আমাকেও তার সঙ্গে যেতে হবে। আর সঙ্গে নিলেন মিসেস আফিফা হককে। আমি আপাদের সঙ্গে গেলাম নাখালপাড়ায় এমপি হোস্টেলে। আমি ভাবছি অন্য কথা- কীভাবে ঐ বন্দী মেয়েদের সঙ্গে দেখা হবে। কেমন করে তাদের উদ্ধার করা যায়। জানতে চাচ্ছি চারদিকে কী ঘটছে। ওখানে আলাপ-আলোচনা যা হচ্ছে, সেখান থেকেই আমি জানতে পারলাম যে, ৩০০ মেয়ে নাকি ওখানেই বন্দী আছে।
মালেকা খান আরও বলছিলেন: ওই নাখালপাড়ার এমপি হোস্টেলটা একটা ব্রিগেড হেড কোয়ার্টারের মতো ছিল। যে ঘরটাতে ব্রিগেডিয়ার বশির বসেছিলেন, সেখানে আরও অনেক ধরনের লোকজন ছিল। কেউ চুপচাপ বসে আছেন, কেউ তর্ক করছেন। আমরা যখন চলে আসছি তখন দেখেছি একটা ঘরের মেঝে, দেয়ালে ছড়ানো-ছিটানো রক্তের ছোপ ছোপ ছাপ। মনে হয় যেন রক্ত ছিটকে ওই দেয়ালের মধ্যে লেগেছে। মেয়েদের আটক রাখার কথা সেদিন। সেখানে উপস্থিত পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তারা স্বীকার করেননি।
ব্রিগেডিয়ার বশির গার্ল গাইড নেত্রীদের ডেকেছিলেন সমাবেশ করার নির্দেশ দিতে। গার্ল গাইড নেত্রীরা সেদিন বলেছিলেন, আপনারাও জানেন, আমরাও জানি যে দেশের এই অবস্থায় সমাবেশ করা সম্ভব নয়। ব্রিগেডিয়ার বশির যখন বারবার বলছিলেন দেশের অবস্থা। খুব ভালো। তখন মিসেস আফিফা হক (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান গার্ল গাইড অ্যাসোসিয়েশনের ডেপুটি কমিশনার) প্রতিবাদ করে বলেছিলেন, ঢাকা শহরেই কেউ ঘর থেকে বেরুতে পারছে না, অনিশ্চিত, ভাসমান একটা অবস্থা, আত্মীয়-স্বজনরা বেঁচে আছে না মারা গেছে জানা নেই, সেখানে দেশের অবস্থা স্বাভাবিক হয় কীভাবে?
মালেকা খান বলছিলেন: এমন কথাও সেদিন মিসেস আফিফা হক বলেছিলেন, ‘আমাদের গায়ে আপনারা দোররা মারেন, তবু ওই বন্দী মেয়েগুলোকে ছেড়ে দিন। এই যে এ ধরনের কথাবার্তা তাতে বোঝা যায়, ৩০০ না হোক অনেক মেয়েই ওখানে বন্দী ছিল। তারপর গ্রামেগঞ্জে যখন ছিলাম, আমার নিজের জানা এলাকায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি মেয়ে আমাকে বলল যে, জানেন আমার শ্বশুরবাড়িতে আমি জানালা দিয়ে দূরে চুপিচুপি তাকিয়ে দেখেছি যে, একটা এলাকায় মেয়েদের এক জায়গায় করে মেরে ফেলেছে, বন্দী করেও নিয়ে। গেছে। তার মধ্যে কতজনকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে গেছে। এক বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। তা এ ধরনের ঘটনা তো একেবারে কানে শুনে চোখে দেখে ’৭১ পার করেছি। তা এ মেয়েগুলো গেল কোথায়? গার্ল গাইডের যোগাযোগের মাধ্যমে ১৯৭১ সালেই খুলনা, যশোর, কুমিল্লা, নরসিংদী, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ইত্যাদি বিভিন্ন জায়গা থেকে মেয়েদের ওপর নির্যাতনের নানান ঘটনা শুনেছেন মালেকা খান। মালেকা খানের মনে আছে, তারা যখন এমপি হোস্টেলের গেট দিয়ে বের হচ্ছেন সেখানে অনেক ধরনের লোকজন অপেক্ষমাণ। তারা জানালেন- আমরা অনেকের খোঁজ পাচ্ছি না। এক মহিলা তো চিৎকার করে বলছিলেন- আমার ছেলে কই? তারে আইন্যা দেও। সে একটা নিদারুণ কষ্টের দৃশ্য। সেই গেটের মধ্যে যে লোকজন ছিল, আমি পরে তাদের কাছে জানতে পারি, এর ভেতরেই অনেক লোকজন আটক আছে।
‘কেন্দ্রীয় মহিলা পুনর্বাসন সংস্থা’ আনুষ্ঠানিকভাবে সংগঠিত হয় ৭ জানুয়ারি, ১৯৭২। কিন্তু কাজ শুরু হয়েছিল দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই। মালেকা খান গ্রাম থেকে ঢাকায় আসেন ১৮ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে। নিজেরই তখন ছোট ভাই নেই, আরও আত্মীয়স্বজন হারিয়েছেন। চেনাজানা পরস্পরের খোঁজখবর করতে গিয়ে দেখা গেল, অন্যদের অবস্থা তার চেয়েও আরও খারাপ। তখনই মনে প্রশ্ন জাগলোÑ নাখালপাড়া এমপি হোস্টেলে বন্দী যে মেয়েদের কথা শুনেছিলেন, তাদের কী হলো। উথালপাথাল মনের অবস্থা তখন।
তখন একেবারে সেই প্রথমদিনগুলোতে মুক্তিযোদ্ধা ছেলেরা দেশের নানা জায়গা থেকে খবর আনছিল কোথায় কোন বাড়িতে, কোন বাঙ্কারে নির্যাতিত মেয়েরা বন্দী হয়ে আছে। নিজেদের আত্মীয়স্বজনের খোঁজখবর করার মধ্যেই কয়েকজন মহিলা এগিয়ে এলেন এই মেয়েদের উদ্ধার করার কাজে। বেগম সুফিয়া কামাল তো সবার আগে ছিলেনই, তার প্রধান সহযোগী ছিলেন বদরুন্নেসা আহমেদ। আরও ছিলেন সঙ্গে মেহের কবীর, আয়েশা নোমান, লুৎফুন্নেসা হক, সাহেরা আহমেদ, হাসনা হাজারী, ড. হালিমা খাতুন, শিল্পী সুফিয়া শহীদ, ফিরোজা খাতুন, বেগম শামসুন্নাহারসহ অনেকে। সমাজকল্যাণ বিভাগের পরিচালক বজলুর মজিদ, তার অফিসের মহিলা স্টাফদের নির্দেশ দিলেন বেগম সুফিয়া কামালকে সর্বতোভাবে সহযোগিতা করতে। এভাবে স্বাধীনতার পরপরই মেয়েদেরই উদ্যোগে যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্তদের উদ্ধার ও পুনর্বাসনের কাজ বেসরকারিভাবে শুরু হয়।
প্রথম প্রয়োজন একটি বাড়ি, যেখানে উদ্ধারকৃতদের এনে রাখা হবে। তারা ইস্কাটনে ইস্পাহানি কলোনির উল্টোদিকে একটি পরিত্যক্ত সরকারি কোয়ার্টারে প্রথম মেয়েদের নিয়ে তোলেন। তারপর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী নূরুল আমীনের ২০নং ইস্কাটনের বাড়িটি খালি থাকার খবর পাওয়া গেল। বেগম সুফিয়া কামাল, বদরুন্নেসা আহমেদ, মেহের কবীর এবং আরও কয়েকজন। গেলেন ওই বাড়িটি নেয়ার ব্যবস্থা করতে। মালেকা খানও তাদের সঙ্গে ছিলেন।
সেখানে তখন কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা এসে আশ্রয় নিয়েছেন এবং তারা তখন ভাত খেতে বসেছেন। বেগম সুফিয়া কামাল এবং মেহের কবীর তাদের অনেক করে বুঝিয়ে বললেন যেন তারা উদ্ধারকৃত নির্যাতিত মেয়েদের জন্য ওই বাড়িটি ছেড়ে দেন। পরদিন খোঁজ নিয়ে দেখা গেল তারা বাড়িটি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। এটা মালেকা খানের স্মৃতি অনুযায়ী ডিসেম্বর মাসের ঘটনা। উদ্ধার করার কাজে তার প্রথম প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার কথা বলছিলেন মালেকা খানÑ ‘বদরুন্নেসা আহমেদ (বদরুন আপা) আমাকে খবর পাঠালেন। গার্ল গাইড অফিসে আমার কাজ সেরে ওনার বাসায় গেলাম। গিয়ে দেখি দুটি জিপ দাঁড়িয়ে আছে। ক্যান্টনমেন্ট তখন ছিল ভারতীয় সেনাদের অধীনে। তো ওই জিপে করে, আমাকে বললেন যে কিছু কাপড়চোপড় নিয়ে যাও। আমি কিছু কাপড়-চোপড় নিয়ে গেলাম। দুটি জিপের একটিতে আমি বসলাম, আরেকটিতে ওই ছেলেরা, যারা খবর এনেছিল। সেনানিবাসের ভেতরের একটি বাড়ি থেকে মেয়েদের আনা হয়েছিল। সেটাই আমার জীবনের প্রথম অভিজ্ঞতা। তখন ওখান থেকে চারজন মেয়েকে মগবাজার মোড়ের কাছে অবাঙালিদের পরিত্যক্ত বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হয়। অপেক্ষারত বদরুন আপা নিজে ওই মেয়েদের জিপ থেকে নামিয়ে নিয়ে যান। ততক্ষণে রাত হয়ে গেছে বলে আমাকে বাড়ি চলে যেতে বলেন। আজও আমার মনে আছে, ওই মেয়েদের যখন উদ্ধার করতে গেলাম মনে হয়েছে যেন কতদিন ওরা ধুলোর মধ্যে গড়াগড়ি করেছে, চুলগুলো দু’একজনের সামান্য বড় ছিল কিন্তু বেশিরভাগেরই চুল কদমছাট, গায়ে কাপড় আছে কি নেই। সে যে কী বীভৎস অবস্থা। তাড়াতাড়ি কিছু কাপড় ওদের গায়ে পরিয়ে দিলাম, ঠিক পরানো নয়, যেন প্যাঁচানো হলো, তারপর গাড়িতে উঠানো হলো। তারপর বলা হয়েছিল ইস্কাটনে একটি বাড়িতে এনে ওদের নামিয়ে দিতে। তারপর ওদের চিকিৎসার জন্য বদরুন আপা কী করেছিলেন বলতে পারব না। আমার দায়িত্ব ছিল শুধু এনে পৌঁছে দেয়া। তা এরকম ৩-৪ দিন, ৫-৬ জায়গা থেকে উদ্ধারের কাজ করলাম।’ নাখালপাড়া এমপি হোস্টেলেও বিভিন্ন বাঙ্কার থেকে উদ্ধার করে মেয়েদের রাখা হয়েছিল। সেখান থেকেও মালেকা খান তাদের নিয়ে আসেন। মালেকা খানকে বলা হয়েছিল এসব কর্মকান্ড নিয়ে যেন বাড়িতে এবং বাড়ির বাইরে কারও সঙ্গে আলোচনা করা না হয়, তাহলে মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়তে পারে।
আরও পরে সরকার থেকে কেন্দ্রীয় মহিলা পুনর্বাসন সংস্থাকে দুটি বাড়ি বরাদ্দ করা হলো- ৮৮নং ইস্কাটন এবং ২০ নং ইস্কাটন। এখানে নথি করে নির্যাতিত মেয়েদের ইতিহাস লিপিবদ্ধ করে, তাদের ভর্তি করা হতে লাগলো।
মালেকা খানের কাছে জানতে চেয়েছিলাম উদ্ধার করার পরপর মেয়েদের মধ্যে কী অনুভূতি বা প্রতিক্রিয়া তিনি লক্ষ্য করতেনÑ ‘আমি নির্বাক, ওরাও নির্বাক। সবচেয়ে বড় ব্যাপার, তখন কোন কথা ছিল না। আর যখন কথা বলেছি তখন মাথায় কোন বুদ্ধিও খেলতো না। খালি একটা জিনিস মনে হতো। এ ঘটনা তো। আমারও ঘটতে পারত, আমার বোনদের ঘটতে পারত বা আমার। জানাশোনা অন্য কারো জীবনেও ঘটতে পারত। এটা যেমন আমার। তখনো ভয় লাগত, আজও মনে পড়লে তেমনি ভয় লাগে।’
নির্যাতিত মেয়েদের খোঁজখবর দেয়া এবং উদ্ধার কাজে অনেকেই জড়িত ছিলেন। স্থানীয় থানার লোকজন, রাজনৈতিক কর্মী, সরকারি বেসরকারি মানুষজন স্বতঃস্ফূর্তভাবে আমাদের সংস্থাকে জানিয়েছেন যে, এখানে এমন মেয়েরা আছেন, তাদের উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়ার জন্য। খবর জানিয়ে নানাভাবে সাহায্য করেছেন তখন রাজশাহী থেকে সুলতানা জামান, রাজশাহীর স্কুল পরিদর্শক উম্মে আয়শা। চৌধুরী, মৌলভীবাজারের সিরি আপা, চাঁদপুরের প্রতিমাদি, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নুরজাহান। এঁদের খোঁজ পাওয়া গেলে এ বিষয়ে আরো বিশদ জানা যাবে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নূরজাহান উর্দু বলতে পারতেন। যুদ্ধকালের অনেক খবরও তিনি মালেকা খানকে জানাতেন। মালেকা খানের অস্পষ্ট। মনে আছে, শত্রুসেনাদের হাত থেকে গ্রামবাসীদের বাঁচানোর কোন একটি পরিকল্পনা করেছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এই নূরজাহান। আজ সে কোথায় আছে জানা নেই।’ (চলবে)
দৈনিক সংবাদ : ১ এপ্রিল ২০১৯, সোমবার, ৭ এর পাতায় প্রকাশিত
সাক্ষাৎকার মালেকা খান
কুররাতুল আইন তাহমিনা
সোমবার, ০১ এপ্রিল ২০১৯
১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসেই ঢাকায় বেগম সুফিয়া কামালের নেতৃত্বে সমাজসেবী কয়েকজন মহিলা যুদ্ধে নির্যাতিতা মেয়েদের উদ্ধার ও পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেন। উদ্যোগটি ছিল তাৎক্ষণিক স্বতঃস্ফূর্ত এবং বেসরকারি। এরাই ’৭২-এর জানুয়ারিতে গঠন করেন ‘কেন্দ্রীয় মহিলা পুনর্বাসন সংস্থা’ স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাদের হাতে নির্যাতিত মেয়েদের সাহায্য ও সহযোগিতা করার প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক প্রচেষ্টা। মালেকা খান এ উদ্যোগের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে জড়িত ছিলেন প্রথম থেকেই। পরবর্তীকালে ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত সংস্থার পরিচালিকার দায়িত্ব পালন করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন তিনি। ১৯৭১ সালের ২৯ ও ৩০ মার্চ কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে ভূমিকা নেয়ার জন্য যে বাঙালি সেনাকর্মীদের হত্যা করা হয়, তাদের মধ্যে মালেকা খানের ছোট ভাই লেফটেন্যান্ট আতিক ও জ্ঞাতিভাই লেফটেন্যান্ট কর্নেল আনোয়ারও ছিলেন। মালেকা খান তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান গার্ল গাইডস অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পর বেগম বদরুন্নেসা আহমেদের সহযোগিতায় স্বেচ্ছাপ্রণোদিতভাবে মেয়েদের ফার্স্ট এইড ও সিভিল ডিফেন্স ট্রেনিং দেয়া শুরু করেন।
১৯৭১ সালে ক্ষতিগ্রস্ত মেয়েদের পুনর্বাসনের জন্য যে সোনারগাঁ (Crafts village) প্রকল্প করা হয়, সেখানেও মালেকা খানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাদের হাতে নির্যাতিত মেয়েদের কথা বলতে গিয়ে মালেকা খান যুদ্ধকালীন একটি ঘটনার কথা বললেনÑ ’৭১-এর ঠিক মাঝামাঝি সময়ে, আমি তখন গার্ল গাইডের সেক্রেটারি ছিলাম ...। ওই সময় আমরা তো মনে করেন একবার গ্রামে চলে যাচ্ছি, আবার শহরে আসছি, আবার গ্রামে যাচ্ছি। এভাবেই কাজ করেছি। এ সময়ে গার্ল গাইডের ওপর দায়িত্ব এলো (পাকিস্তানের প্রশাসকদের নির্দেশ) যে, যেন ঢাকাতে মেয়েদের একটি সমাবেশের আয়োজন করি। কিন্তু সেক্রেটারি হিসেবে আমি জানালাম, কোথাও কোন কলেজ, স্কুল, পাঠশালা চলছে না, আমরা কী করে গাইডদের সমাবেশ করতে পারি? এ রকম সময় আমাদের কাছে খবর এলো যে, বেশকিছু মেয়ে ঢাকা সেনানিবাসেই বন্দী আছে। আজকে যেটা এমপি হোস্টেল নাখালপাড়ায়, সেখানেও মেয়েরা বন্দী রয়েছে। এ খবর শুনে আমরা যখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি, তখন একটা সুযোগ হলো, সেনা কর্মকর্তাদের মুখ থেকে কিছু শোনার। গার্ল গাইডের প্রধান ছিলেন মিসেস তাহেরা কবীর, তাকে পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার বশির ডেকে পাঠালেন। তাহেরা আপা একা যাবেন না, বললেন সেক্রেটারি হিসেবে। আমাকেও তার সঙ্গে যেতে হবে। আর সঙ্গে নিলেন মিসেস আফিফা হককে। আমি আপাদের সঙ্গে গেলাম নাখালপাড়ায় এমপি হোস্টেলে। আমি ভাবছি অন্য কথা- কীভাবে ঐ বন্দী মেয়েদের সঙ্গে দেখা হবে। কেমন করে তাদের উদ্ধার করা যায়। জানতে চাচ্ছি চারদিকে কী ঘটছে। ওখানে আলাপ-আলোচনা যা হচ্ছে, সেখান থেকেই আমি জানতে পারলাম যে, ৩০০ মেয়ে নাকি ওখানেই বন্দী আছে।
মালেকা খান আরও বলছিলেন: ওই নাখালপাড়ার এমপি হোস্টেলটা একটা ব্রিগেড হেড কোয়ার্টারের মতো ছিল। যে ঘরটাতে ব্রিগেডিয়ার বশির বসেছিলেন, সেখানে আরও অনেক ধরনের লোকজন ছিল। কেউ চুপচাপ বসে আছেন, কেউ তর্ক করছেন। আমরা যখন চলে আসছি তখন দেখেছি একটা ঘরের মেঝে, দেয়ালে ছড়ানো-ছিটানো রক্তের ছোপ ছোপ ছাপ। মনে হয় যেন রক্ত ছিটকে ওই দেয়ালের মধ্যে লেগেছে। মেয়েদের আটক রাখার কথা সেদিন। সেখানে উপস্থিত পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তারা স্বীকার করেননি।
ব্রিগেডিয়ার বশির গার্ল গাইড নেত্রীদের ডেকেছিলেন সমাবেশ করার নির্দেশ দিতে। গার্ল গাইড নেত্রীরা সেদিন বলেছিলেন, আপনারাও জানেন, আমরাও জানি যে দেশের এই অবস্থায় সমাবেশ করা সম্ভব নয়। ব্রিগেডিয়ার বশির যখন বারবার বলছিলেন দেশের অবস্থা। খুব ভালো। তখন মিসেস আফিফা হক (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান গার্ল গাইড অ্যাসোসিয়েশনের ডেপুটি কমিশনার) প্রতিবাদ করে বলেছিলেন, ঢাকা শহরেই কেউ ঘর থেকে বেরুতে পারছে না, অনিশ্চিত, ভাসমান একটা অবস্থা, আত্মীয়-স্বজনরা বেঁচে আছে না মারা গেছে জানা নেই, সেখানে দেশের অবস্থা স্বাভাবিক হয় কীভাবে?
মালেকা খান বলছিলেন: এমন কথাও সেদিন মিসেস আফিফা হক বলেছিলেন, ‘আমাদের গায়ে আপনারা দোররা মারেন, তবু ওই বন্দী মেয়েগুলোকে ছেড়ে দিন। এই যে এ ধরনের কথাবার্তা তাতে বোঝা যায়, ৩০০ না হোক অনেক মেয়েই ওখানে বন্দী ছিল। তারপর গ্রামেগঞ্জে যখন ছিলাম, আমার নিজের জানা এলাকায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি মেয়ে আমাকে বলল যে, জানেন আমার শ্বশুরবাড়িতে আমি জানালা দিয়ে দূরে চুপিচুপি তাকিয়ে দেখেছি যে, একটা এলাকায় মেয়েদের এক জায়গায় করে মেরে ফেলেছে, বন্দী করেও নিয়ে। গেছে। তার মধ্যে কতজনকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে গেছে। এক বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। তা এ ধরনের ঘটনা তো একেবারে কানে শুনে চোখে দেখে ’৭১ পার করেছি। তা এ মেয়েগুলো গেল কোথায়? গার্ল গাইডের যোগাযোগের মাধ্যমে ১৯৭১ সালেই খুলনা, যশোর, কুমিল্লা, নরসিংদী, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ইত্যাদি বিভিন্ন জায়গা থেকে মেয়েদের ওপর নির্যাতনের নানান ঘটনা শুনেছেন মালেকা খান। মালেকা খানের মনে আছে, তারা যখন এমপি হোস্টেলের গেট দিয়ে বের হচ্ছেন সেখানে অনেক ধরনের লোকজন অপেক্ষমাণ। তারা জানালেন- আমরা অনেকের খোঁজ পাচ্ছি না। এক মহিলা তো চিৎকার করে বলছিলেন- আমার ছেলে কই? তারে আইন্যা দেও। সে একটা নিদারুণ কষ্টের দৃশ্য। সেই গেটের মধ্যে যে লোকজন ছিল, আমি পরে তাদের কাছে জানতে পারি, এর ভেতরেই অনেক লোকজন আটক আছে।
‘কেন্দ্রীয় মহিলা পুনর্বাসন সংস্থা’ আনুষ্ঠানিকভাবে সংগঠিত হয় ৭ জানুয়ারি, ১৯৭২। কিন্তু কাজ শুরু হয়েছিল দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই। মালেকা খান গ্রাম থেকে ঢাকায় আসেন ১৮ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে। নিজেরই তখন ছোট ভাই নেই, আরও আত্মীয়স্বজন হারিয়েছেন। চেনাজানা পরস্পরের খোঁজখবর করতে গিয়ে দেখা গেল, অন্যদের অবস্থা তার চেয়েও আরও খারাপ। তখনই মনে প্রশ্ন জাগলোÑ নাখালপাড়া এমপি হোস্টেলে বন্দী যে মেয়েদের কথা শুনেছিলেন, তাদের কী হলো। উথালপাথাল মনের অবস্থা তখন।
তখন একেবারে সেই প্রথমদিনগুলোতে মুক্তিযোদ্ধা ছেলেরা দেশের নানা জায়গা থেকে খবর আনছিল কোথায় কোন বাড়িতে, কোন বাঙ্কারে নির্যাতিত মেয়েরা বন্দী হয়ে আছে। নিজেদের আত্মীয়স্বজনের খোঁজখবর করার মধ্যেই কয়েকজন মহিলা এগিয়ে এলেন এই মেয়েদের উদ্ধার করার কাজে। বেগম সুফিয়া কামাল তো সবার আগে ছিলেনই, তার প্রধান সহযোগী ছিলেন বদরুন্নেসা আহমেদ। আরও ছিলেন সঙ্গে মেহের কবীর, আয়েশা নোমান, লুৎফুন্নেসা হক, সাহেরা আহমেদ, হাসনা হাজারী, ড. হালিমা খাতুন, শিল্পী সুফিয়া শহীদ, ফিরোজা খাতুন, বেগম শামসুন্নাহারসহ অনেকে। সমাজকল্যাণ বিভাগের পরিচালক বজলুর মজিদ, তার অফিসের মহিলা স্টাফদের নির্দেশ দিলেন বেগম সুফিয়া কামালকে সর্বতোভাবে সহযোগিতা করতে। এভাবে স্বাধীনতার পরপরই মেয়েদেরই উদ্যোগে যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্তদের উদ্ধার ও পুনর্বাসনের কাজ বেসরকারিভাবে শুরু হয়।
প্রথম প্রয়োজন একটি বাড়ি, যেখানে উদ্ধারকৃতদের এনে রাখা হবে। তারা ইস্কাটনে ইস্পাহানি কলোনির উল্টোদিকে একটি পরিত্যক্ত সরকারি কোয়ার্টারে প্রথম মেয়েদের নিয়ে তোলেন। তারপর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী নূরুল আমীনের ২০নং ইস্কাটনের বাড়িটি খালি থাকার খবর পাওয়া গেল। বেগম সুফিয়া কামাল, বদরুন্নেসা আহমেদ, মেহের কবীর এবং আরও কয়েকজন। গেলেন ওই বাড়িটি নেয়ার ব্যবস্থা করতে। মালেকা খানও তাদের সঙ্গে ছিলেন।
সেখানে তখন কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা এসে আশ্রয় নিয়েছেন এবং তারা তখন ভাত খেতে বসেছেন। বেগম সুফিয়া কামাল এবং মেহের কবীর তাদের অনেক করে বুঝিয়ে বললেন যেন তারা উদ্ধারকৃত নির্যাতিত মেয়েদের জন্য ওই বাড়িটি ছেড়ে দেন। পরদিন খোঁজ নিয়ে দেখা গেল তারা বাড়িটি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। এটা মালেকা খানের স্মৃতি অনুযায়ী ডিসেম্বর মাসের ঘটনা। উদ্ধার করার কাজে তার প্রথম প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার কথা বলছিলেন মালেকা খানÑ ‘বদরুন্নেসা আহমেদ (বদরুন আপা) আমাকে খবর পাঠালেন। গার্ল গাইড অফিসে আমার কাজ সেরে ওনার বাসায় গেলাম। গিয়ে দেখি দুটি জিপ দাঁড়িয়ে আছে। ক্যান্টনমেন্ট তখন ছিল ভারতীয় সেনাদের অধীনে। তো ওই জিপে করে, আমাকে বললেন যে কিছু কাপড়চোপড় নিয়ে যাও। আমি কিছু কাপড়-চোপড় নিয়ে গেলাম। দুটি জিপের একটিতে আমি বসলাম, আরেকটিতে ওই ছেলেরা, যারা খবর এনেছিল। সেনানিবাসের ভেতরের একটি বাড়ি থেকে মেয়েদের আনা হয়েছিল। সেটাই আমার জীবনের প্রথম অভিজ্ঞতা। তখন ওখান থেকে চারজন মেয়েকে মগবাজার মোড়ের কাছে অবাঙালিদের পরিত্যক্ত বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হয়। অপেক্ষারত বদরুন আপা নিজে ওই মেয়েদের জিপ থেকে নামিয়ে নিয়ে যান। ততক্ষণে রাত হয়ে গেছে বলে আমাকে বাড়ি চলে যেতে বলেন। আজও আমার মনে আছে, ওই মেয়েদের যখন উদ্ধার করতে গেলাম মনে হয়েছে যেন কতদিন ওরা ধুলোর মধ্যে গড়াগড়ি করেছে, চুলগুলো দু’একজনের সামান্য বড় ছিল কিন্তু বেশিরভাগেরই চুল কদমছাট, গায়ে কাপড় আছে কি নেই। সে যে কী বীভৎস অবস্থা। তাড়াতাড়ি কিছু কাপড় ওদের গায়ে পরিয়ে দিলাম, ঠিক পরানো নয়, যেন প্যাঁচানো হলো, তারপর গাড়িতে উঠানো হলো। তারপর বলা হয়েছিল ইস্কাটনে একটি বাড়িতে এনে ওদের নামিয়ে দিতে। তারপর ওদের চিকিৎসার জন্য বদরুন আপা কী করেছিলেন বলতে পারব না। আমার দায়িত্ব ছিল শুধু এনে পৌঁছে দেয়া। তা এরকম ৩-৪ দিন, ৫-৬ জায়গা থেকে উদ্ধারের কাজ করলাম।’ নাখালপাড়া এমপি হোস্টেলেও বিভিন্ন বাঙ্কার থেকে উদ্ধার করে মেয়েদের রাখা হয়েছিল। সেখান থেকেও মালেকা খান তাদের নিয়ে আসেন। মালেকা খানকে বলা হয়েছিল এসব কর্মকান্ড নিয়ে যেন বাড়িতে এবং বাড়ির বাইরে কারও সঙ্গে আলোচনা করা না হয়, তাহলে মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়তে পারে।
আরও পরে সরকার থেকে কেন্দ্রীয় মহিলা পুনর্বাসন সংস্থাকে দুটি বাড়ি বরাদ্দ করা হলো- ৮৮নং ইস্কাটন এবং ২০ নং ইস্কাটন। এখানে নথি করে নির্যাতিত মেয়েদের ইতিহাস লিপিবদ্ধ করে, তাদের ভর্তি করা হতে লাগলো।
মালেকা খানের কাছে জানতে চেয়েছিলাম উদ্ধার করার পরপর মেয়েদের মধ্যে কী অনুভূতি বা প্রতিক্রিয়া তিনি লক্ষ্য করতেনÑ ‘আমি নির্বাক, ওরাও নির্বাক। সবচেয়ে বড় ব্যাপার, তখন কোন কথা ছিল না। আর যখন কথা বলেছি তখন মাথায় কোন বুদ্ধিও খেলতো না। খালি একটা জিনিস মনে হতো। এ ঘটনা তো। আমারও ঘটতে পারত, আমার বোনদের ঘটতে পারত বা আমার। জানাশোনা অন্য কারো জীবনেও ঘটতে পারত। এটা যেমন আমার। তখনো ভয় লাগত, আজও মনে পড়লে তেমনি ভয় লাগে।’
নির্যাতিত মেয়েদের খোঁজখবর দেয়া এবং উদ্ধার কাজে অনেকেই জড়িত ছিলেন। স্থানীয় থানার লোকজন, রাজনৈতিক কর্মী, সরকারি বেসরকারি মানুষজন স্বতঃস্ফূর্তভাবে আমাদের সংস্থাকে জানিয়েছেন যে, এখানে এমন মেয়েরা আছেন, তাদের উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়ার জন্য। খবর জানিয়ে নানাভাবে সাহায্য করেছেন তখন রাজশাহী থেকে সুলতানা জামান, রাজশাহীর স্কুল পরিদর্শক উম্মে আয়শা। চৌধুরী, মৌলভীবাজারের সিরি আপা, চাঁদপুরের প্রতিমাদি, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নুরজাহান। এঁদের খোঁজ পাওয়া গেলে এ বিষয়ে আরো বিশদ জানা যাবে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নূরজাহান উর্দু বলতে পারতেন। যুদ্ধকালের অনেক খবরও তিনি মালেকা খানকে জানাতেন। মালেকা খানের অস্পষ্ট। মনে আছে, শত্রুসেনাদের হাত থেকে গ্রামবাসীদের বাঁচানোর কোন একটি পরিকল্পনা করেছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এই নূরজাহান। আজ সে কোথায় আছে জানা নেই।’ (চলবে)
দৈনিক সংবাদ : ১ এপ্রিল ২০১৯, সোমবার, ৭ এর পাতায় প্রকাশিত