alt

মুক্ত আলোচনা

স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে আর কতকাল মিথ্যাচার

মোহাম্মদ শাহজাহান

: মঙ্গলবার, ০২ এপ্রিল ২০১৯

দেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি কোনভাবেই মিথ্যাচার থেকে বের হয়ে আসতে পারছে না। এবারের স্বাধীনতা দিবসেও দলটি চরম মিথ্যাচার করেছে। আসলে বিএনপি রাজনীতির পুরোটাই মিথ্যাচারে ভরপুর। মিথ্যা দিয়েই এ দলের জন্ম, মিথ্যাচারেই এর বিকাশ এবং মিথ্যা কথা বলতে বলতে বিএনপি নেতারা দলটিকে ধ্বংসের শেষ প্রান্তে নিয়ে এসেছেন। গত চার দশকে আমি বহুবার আমার কলামে লিখেছি ‘প্রকৃত অর্থে বিএনপি কোন রাজনৈতিক দল নয়। রাষ্ট্রীয় উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে বিভিন্ন দলের রাজনৈতিকভাবে অসৎ, গণবিচ্ছিন্ন, সুবিধাবাদী লোকদের নিয়ে প্রথম সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান ১৯৭৮ সালে বিএনপি গঠন করেন।’ কথায় আছে ‘কিছু লোককে কিছু সময়ের জন্য বোকা বানানো যায়; কিন্তু বেশি লোককে দীর্ঘ সময়ের জন্য বোকা বানিয়ে রাখা যায় না।’ এটা ঠিক, বিএনপি বর্তমানে কঠিন সময় অতিক্রম করছে। প্রতিষ্ঠার পর গত চার দশকে এত করুণ অবস্থায় নিপতিত হয়নি দলটি। সদ্যসমাপ্ত সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের পার্লামেন্টে মাত্র ৬টি আসনে এই দল জয়ী হয়েছে। যদিও বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো বলছে, নির্বাচনে বিশাল কারচুপি হয়েছে। দলের প্রধান আকর্ষণ দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে ১৩ মাসের বেশি সময় ধরে জেলে রয়েছেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান খালেদাপুত্র তারেক রহমান সাড়ে ১০ বছর ধরে লন্ডনে স্বেচ্ছা নির্বাসনে রয়েছেন। গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন এবং অন্য দুটি দুর্নীতি মামলায় তারেক রহমানের যথাক্রমে ১০ বছর ও ৭ বছর সাজা হয়েছে। তাছাড়া দলের ছোট বড় প্রায় সব নেতার বিরুদ্ধে ২-৪ টা করে মামলা রয়েছে। গত কয়েক বছর ধরেই দলের তেমন কোনো কার্যক্রম নেই। মাঝে মধ্যে মহাসচিব মির্জা ফখরুল এবং সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর কথাবার্তা শুনলে মনে হয়, বিএনপি নামের এক সময়ের পরম পরাক্রমশালী দলটি এখানও একেবারে শেষ হয়ে যায়নি।

কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান চরম দুর্বল অবস্থায় পতিত হলে গণমুখী ও বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিয়েই সেখান থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করতে হয়। বিএনপির হোমরা-চোমরারা যেন এ কঠিন বাস্তবতাটি একেবারেই বুঝতে পারছেন না। বিএনপি নেতৃত্বকে বুঝতে হবে ‘অন্ধ হলেই প্রলয় বন্ধ হয় না।’ এবারের স্বাধীনতা দিবসেও বিএনপি পুরনো ইতিহাস বিরুদ্ধ নীতি থেকে বের হয়ে আসতে পারেনি। বিএনপি স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে একটি ক্রোড়পত্র বের করেছে। দৈনিক নয়া দিগন্ত পত্রিকায় প্রকাশিত ওই ক্রোড়পত্রে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দাবি করেছেন তার বাবা জিয়াউর রহমান ১৯৭১-এর ২৬ মার্চ তারিখে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে নিজেকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে উল্লেখ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। তার এ ঘোষণার মাধ্যমে সেই দিন বিশ্বের মানচিত্রে জন্মলাভ করেছিল বাংলাদেশ নামের একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম ক্রোড়পত্রে তার বাণীতে জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, জিয়ার ঘোষণায় সেই সময় ভীতসন্ত্রস্ত এবং দিশেহারা জাতি খুঁজে পেয়েছিল পথের দিশা। তবে তারেক রহমানের সঙ্গে মির্জা ফখরুলের বক্তব্যের পার্থক্য রয়েছে। তারেক রহমানের মতো ‘২৬ মার্চ জিয়া স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন’ এ কথা স্পষ্ট করে বলেননি মির্জা ফখরুল। মহাসচিব প্রথমে বলেন, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষিত হয়েছে। কয়েক লাইন পরে তিনি বলেন, তৎকালীন পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের উপ-অধিনায়ক হিসেবে কর্মরত জিয়াউর রহমান চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে মহান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তারেক রহমানের মতো মির্জা ফখরুল একথাও বলেননি যে, জিয়াউর রহমান নিজেকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে উল্লেখ করে সেদিন স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। শুধু দুই নেতার বাণীতে নয়, এবারের স্বাধীনতা দিবসের আলোচনা সভা এবং দলের অঙ্গ সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রকাশিত পোস্টারেও ইতিহাসের বিকৃতি ঘটানো হয়েছে। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের পক্ষ থেকে প্রচারিত এক পোস্টারেও জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত বিএনপির আলোচনা সভায় শীর্ষ নেতারা বলেছেন, জিয়াউর রহমান ১৯৭১-এর ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।

যে যাই বলুন, প্রকৃত সত্য হচ্ছে, আজ থেকে ৪৮ বছর আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। আমি একজন সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী এবং মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা দেয়া, শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, ২২ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধুর মুক্তি, সত্তরের নির্বাচন, একাত্তরের অসহযোগ আন্দোলন এবং ৯ মাসের স্বাধীনতা যুদ্ধ অত্যন্ত কাছ থেকে দেখেছি। একাত্তরে পূর্ব বাংলার লোকসংখ্যা ছিল সাড়ে সাত কোটি। একাত্তর দেখা কয়েক কোটি মানুষ এবং হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা এখনও বেঁচে আছেন। আমার স্মৃতিতে একাত্তরের কথা এখনও জ্বলজ্বল করছে। ছাত্রলীগের একজন কর্মী হিসেবে ‘তোমার দেশ আমার দেশ- বাংলাদেশ বাংলাদেশ’, ‘তোমার আমার ঠিকানা- পদ্মা মেঘনা যমুনা’, ‘পিন্ডি না ঢাকাÑ ঢাকা ঢাকা’, ‘ভুট্টোর মুখে লাথি মারো- বাংলাদেশ স্বাধীন করো’ এবং জয় বাংলা স্লোগান যে আমি কত হাজারবার দিয়েছি, তা বলে শেষ করা যাবে না।

‘বঙ্গবন্ধু ২৫ মার্চ রাতে স্বাধীনতা ঘোষণা না করে পাকিস্তানিদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন, আর তৎকালীন এক অখ্যাত, অচেনা অপরিচিত মেজর ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন’ এই মিথ্যাচারের জবাব দিতে আমার রীতিমতো ঘৃণা লাগে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ছিল জনযুদ্ধ। আর বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষকে একাত্তরে ঐক্যবদ্ধ করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ২৩ বছরের মুক্তিসংগ্রামের ফসল স্বাধীন বাংলাদেশ। এ পৃথিবীতে সংগ্রামের মাধ্যমে যেসব দেশ স্বাধীন হয়েছে, সেইসব প্রত্যেক দেশেরই একজন করে মূল নেতা রয়েছেন। আমেরিকার জর্জ ওয়াশিংটন, রাশিয়ার লেনিন, ভারতের মহাত্মা গান্ধী, ভিয়েতনামের হো চি মিন, ইন্দোনেশিয়ার সুকর্নো, ঘানার নক্রুমা, কিউবার ফিদেল ক্যাস্ত্রো এবং বাংলাদেশের শেখ মুজিবুর রহমান স্ব-স্ব দেশের মুক্তি সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এসব নেতারা তাদের দেশকে স্বাধীন করেছেন।

ব্রিটিশদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে গান্ধী ও জিন্নাহ যেভাবে ভারত ও পাকিস্তান সৃষ্টি করেছেন, অতো সহজে শেখ মুজিব বাংলাদেশ স্বাধীন করতে পারেননি। পাকিস্তান সৃষ্টির পর সরকারি দল মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে কোন কথা বলা যেত না। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে যুক্তফ্রন্টের জয়ী হবার পরও পশ্চিমা সামরিক জান্তা ক্ষমতায় থাকতে দেয়নি। ১৯৫৮ সালে সামরিক আইনে ক্ষমতায় এসে আইয়ুব খান ১০ বছর রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে রাখেন। ১৯৬৬ সালে শেখ মুজিব আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের দাবি ৬ দফা দাবি জাতির সামনে পেশ করলে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান অস্ত্রের ভাষায় কথা বলেন। সে সময় মুজিব ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাসহ হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে সামরিক সরকার। এরপর ফাঁসিতে হত্যার জন্য মুজিবকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার এক নম্বর আসামি করা হয়। নতিস্বীকার করেননি বিদ্রোহী বাংলার সূর্যসন্তান মুজিব। তুমুল গণআন্দোলনে ষড়যন্ত্রকারী আইয়ুব-মোনায়েম গদিচ্যুত হন এবং মুক্তি পান মুজিব।

সত্তরে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ এবং প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে পূর্ব বাংলার জনগণের শতকরা ৯০ ভাগ ভোট পায় মুজিবের দল আওয়ামী লীগ।

সত্তরের নির্বাচনে বিজয়ী দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করায় আন্দোলনের ডাক দেন শেখ মুজিব। একাত্তরের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু মুজিব বাংলার স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ১৫ মার্চ ৩৫ আদেশ জারি করে শেখ মুজিব পূর্ব বাংলার শাসনভার গ্রহণ করেন। মুজিবের ৭ মার্চের ভাষণ সরাসরি রিলে করতে না দেয়ায় বেতারকর্মীরা সম্প্রচার বন্ধ এবং বেতার ভবন তালা দিয়ে বের হয়ে আসেন। পাকিস্তান জান্তার বিরুদ্ধে মুজিব আহূত অহিংস ও অসহযোগ আন্দোলন মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলনের চেয়ে বেশি সফল বলে উল্লেখ করেছিলেন পাকিস্তান ন্যাপ নেতা ওয়ালী খান। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ১৫ মার্চ ঢাকায় এসে জনগণের নির্বাচিত নেতা মুজিবের সঙ্গেই কয়েক দফা বৈঠক করেছিলেন। জিয়াউর রহমানের মতো কোন মেজরের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট বৈঠক করেননি। অসহযোগ আন্দোলনের ২৫ দিন শেখ মুজিব ৩২ নম্বরের বাসভবন থেকে বাংলাদেশ পরিচালনা করেন। মূলত ২৫ দিনেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে যায়। এরপর ৯ মাসের জনযুদ্ধে দখলদার পাকিস্তান সামরিক বাহিনীকে পরাজিত করে স্বাধীন বাংলাদেশকে মুক্ত করা হয়। ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে শেখ মুজিব গ্রেফতার হওয়ার পূর্বে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ২৬ মার্চ সন্ধ্যায় ভাষণে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান স্বাধীনতা ঘোষণার দায়ে শেখ মুজিবকে অভিযুক্ত করে চরম শাস্তি দেয়ার কথা ঘোষণা করেন।

সত্তরের নির্বাচনে জনগণের ভোটে বিজয়ী দলের নেতা শেখ মুজিবকে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ‘ভাবী প্রধানমন্ত্রী’ বলে অভিহিত করেছিলেন। ইয়াহিয়া চক্র ক্ষমতা হস্তান্তর না করে ২৫ মার্চ রাতে পূর্ব বাংলার নিরীহ মানুষের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দিলে বাংলার মানুষ পাল্টা হামলা চালায়। তবে স্বাধীনতা ঘোষণার এখতিয়ার একমাত্র বিজয়ী দলের নেতা হিসেবে শেখ মুজিবেরই ছিল, অন্য কারও নয়। স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালনাকারী সরকারের রাষ্ট্রপতি ছিলেন নির্বাচনে বিজয়ী দলের নেতা শেখ মুজিব। মুজিবের অবর্তমানে মুজিবের সহকর্মী আওয়ামী লীগের অন্য নেতারাই অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রী হয়ে যুদ্ধকালীন সরকার পরিচালনা করেন। কোন যদু-মধুর নামে নয়, মুজিবের নামেই রাজধানীর নামকরণ করা হয় ‘মুজিবনগর’। বন্দি মুজিবের নামেই একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে এবং মুক্তিযোদ্ধারা হাসতে হাসতে জীবন দিয়েছেন।

একাত্তরে পাকিস্তান সরকার বন্দি মুজিবকেই প্রহসনের বিচারের মাধ্যমে ফাঁসি দিতে চেয়েছিল। এমনকি লায়ালপুর কারাগারে মুজিবের সেলের পাশে কবর পর্যন্ত খনন করা হয়েছিল। ২৫ মার্চ দেয়া শেখ মুজিবের স্বাধীনতার ঘোষণা দেশ-বিদেশের পত্র-পত্রিকা বেতার-টিভিতে প্রচারিত হয়। বাংলাদেশের প্রায় সব ওয়ারলেস স্টেশনে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা পৌঁছে গিয়েছিল। দাউদকান্দি উপজেলার শহীদনগরে একটি ওয়ারলেস স্টেশন (ভবন) ছিল। আওয়ামী লীগ কর্মী পরবর্তীকালে মুক্তিযোদ্ধা শওকত আলী বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা শহীদনগর ওয়ারলেস স্টেশনে পৌঁছে যাওয়ার কথা আমাকে ২৬ মার্চ রাতেই জানিয়েছিলেন।

আসলে ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণকেই বাংলার মানুষ স্বাধীনতার ঘোষণা হিসেবে ধরে নেয়। তাছাড়া অসহযোগের ২৫ দিনে বঙ্গবন্ধু প্রতিদিনই বলেছেন, চূড়ান্ত মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম চলবে। ৩ মার্চ পল্টন ময়দান, ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানসহ অসহযোগের ২৫ দিনে শেখ মুজিব বহুবার বলেছেন, আমি না থাকলেও অন্য নেতারা পর্যায়ক্রমে আন্দোলন সংগ্রাম পরিচালনা করবেন। ২৫ মার্চ রাতে জনগণ বঙ্গবন্ধুর ঘোষণার অপেক্ষা করেননি। পাকিস্তানি বাহিনী যেখানেই আক্রমণ করেছে, সেখানেই বাঙালি পাল্টা আক্রমণ করেছে। কারণ, ৭ মার্চ তো বঙ্গবন্ধু বলেই দিয়েছেনÑ ‘আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি তোমরা রাস্তাঘাট যা যা আছে সবকিছু বন্ধ করে দিও।’ মওলানা ভাসানীর মতো একজন বড় মাপের নেতা পর্যন্ত ২৫ মার্চের ২/৩ দিন আগে বলেছেন, ‘মুজিব স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই।’ জাতীয় নেতা ভাসানী মুজিবের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে বাংলা ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য ইয়াহিয়ার প্রতি আহ্বান জানান। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু কারামুক্ত হয়ে ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ স্বদেশে ফিরে এসে ১২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।

বাংলার মানুষসহ পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ জানে, শেখ মুজিবের কালজয়ী নেতৃত্বেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। গত ৪৮ বছরে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম ও মুজিবকে নিয়ে শত শত বই, লাখ লাখ প্রবন্ধ-নিবন্ধ, গান-কবিতা ও ছড়া লেখা হয়েছে। শেখ মুজিব ও বাংলাদেশ একে অপরের পরিপূরক। ওপার বাংলার কবি অন্নদা শংকর রায় যথার্থই বলেছেন, ‘যতকাল রবে পদ্মা মেঘনা গৌরি যমুনা বহমান, ততকাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান।’ জিয়া, এরশাদ, খালেদাÑ তিন কুচক্রী তাদের আড়াই দশকের শাসনামলে মুজিবের নাম মুছে ফেলার জন্য বহু চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র করেছেন। মুজিবের নাম উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়েছে আর ওই তিন কুচক্রী ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হতে চলেছে।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর হত্যাকারীরা মহান মুজিবের নাম মুছে জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক বানানোর অপচেষ্টা চালিয়ে আসছে। এটা ঠিক, জিয়া ১৯৭১ সালে মুজিবনগর সরকার নিযুক্ত অন্যতম সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। সরকারপ্রধান হিসেবে বঙ্গবন্ধু মেজর জিয়াকে মেজর জেনারেল পদোন্নতি দিয়ে সেনাবাহিনীর উপপ্রধান নিযুক্ত করেছিলেন। সেই অকৃতজ্ঞ জিয়া বঙ্গবন্ধু হত্যা-ষড়যন্ত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। বঙ্গবন্ধু হত্যা ষড়যন্ত্র নিয়ে চার দশক ধরে গবেষণা করছেন বিদেশি সাংবাদিক লিফশুলজ। তিনি মুজিব হত্যা নিয়ে অহ টহভরহরংযবফ জবাড়ষঁঃরড়হ নামে একটি বিশাল আকারের বই লিখেছেন। লিফশুলজ বলেছেন, ‘জিয়া মদদ না দিলে কোনভাবেই মুজিব হত্যা সম্ভব ছিল না।’ ফাঁসিতে কর্নেল তাহের হত্যা মামলার পুনর্বিচারকালে উচ্চ আদালত জিয়াকে স্বাধীনতাবিরোধী বলে উল্লেখ করেছেন। ইতিহাস একদিন বলবে, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে জিয়া ছিলেন একজন অনুপ্রবেশকারী। জেনারেল জিয়া নামে মুক্তিযোদ্ধা হলেও মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য, আদর্শ ও চেতনায় বিশ্বাস করতেন না। আর এ জন্যই জিয়া মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর বীরত্বগাথা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুছে ফেলে স্বাধীনতাবিরোধী গোলাম আযম, নিজামী, মুজাহিদ, মওলানা মান্নানদের মন্ত্রী বানান।

জিয়াপুত্র এবং বিএনপি নেতারা বলছেন, জিয়া ২৬ মার্চ চট্টগ্রাম বেতার থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন। অথচ ২৬ মার্চ জিয়া ওই বেতার কেন্দ্রেই যাননি। তাছাড়া স্বাধীনতা ঘোষণা করার এখতিয়ার থাকতে হয়। যে কেউ ইচ্ছে করলেই স্বাধীনতা ঘোষণা করতে পারে না। বছরের পর বছর সংগ্রাম করে স্বাধীনতা অর্জন করতে হয়। ২৩ বছরের সংগ্রামের ফসল বাংলাদেশের স্বাধীনতা। সত্তরের নির্বাচনে বিজয়ী দলের নেতা হিসেবে একমাত্র শেখ মুজিবেরই স্বাধীনতা ঘোষণার এখতিয়ার ছিল। কোন মেজর সাহেবের স্বাধীনতা ঘোষণা করলো, আর লাখো মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়লো, এটা পাগলের প্রলাপ মাত্র।

একটি রাজনৈতিক দল জনগণের কথা না বলে, গণমুখী কর্মসূচি না দিলে দীর্ঘদিন টিকে থাকতে পারে না। শুনতে তিক্ত হলেও অবিলম্বে জিয়া পরিবারকে বিএনপির নেতৃত্ব থেকে চিরতরে অপসারণ করে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসীদের নেতৃত্বে আনতে হবে। বাস্তবসম্মত গণমুখী কর্মসূচি নিয়ে বিএনপিকে এগুতে হবে। আর তা না হলে বিএনপি মুসলিম লীগের পরিণতি বরণ করলে আশ্চর্য হবার কিছু থাকবে না।

শেষে জিয়াউর রহমানের একটি বক্তব্য দিয়ে আজকের লেখার ইতি টানতে চাই। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) চৌধুরী খালেকুজ্জামান তার সামরিক জীবনের স্মৃতি (১৯৬৪-১৯৮১) নামের গ্রন্থে (পৃ. ৫২) লিখেছেন : ‘একদিন কথা প্রসঙ্গে আমি মেজর জিয়াকে বলেছিলাম, শেখ মুজিব ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে কথা বলবেন, এতে কি হবে? তখন মেজর জিয়া বলেন, তিনি রাজনৈতিক নেতা তিনিই ভালো বুঝেন। জিয়া আমাকে বললেন, ‘খালেকুজ্জামান, এদেশে nothing can be happen without Shiekh Mujibur Rahman’। অর্থাৎ ‘এদেশে শেখ মুজিবকে বাদ দিয়ে কিছু হবে না।’ আর সেনাবাহিনীর কাজ হলো শেখ মুজিবকে সাপোর্ট দিয়ে যাওয়া। ১৯৭১ সালে ইউনিট লাইনে জিয়া এ কথা বলেছিলেন।”

৩১ মার্চ ২০১৯

[লেখক : সাপ্তাহিক বাংলাবার্তা সম্পাদক]

bandhu.ch77@yahoo.com

দৈনিক সংবাদ : ২ এপ্রিল ২০১৯, মঙ্গলবার, ৭ এর পাতায় প্রকাশিত

মুজিবনগরে স্বাধীনতার সূর্যোদয়

বঙ্গাব্দ প্রচলনের ইতিকথা

পহেলা বৈশাখ বাঙালির প্রাণের উৎসব

কেউতো অপেক্ষায় নেই

ফরগেট মি নট

ছবি

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ সমার্থক

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বীমা শিল্পের গুরুত্ব

একুশে ফেব্রুয়ারি আত্মপরিচয়ের দিন

দিদি, আপা, “বু” খালা

হিজল-করচ-আড়াংবন

ছবি

শেখ হাসিনা, এক উৎসারিত আলোকধারা

মনমাঝি

সেই ইটনা

ছবি

আংকর ওয়াট : উন্নত সভ্যতার স্মৃতিচিহ্ন যেখানে

নিয়ত ও নিয়তি

হারিয়ে যাওয়া ট্রেন

টম সয়ার না রবিনহুড

ছবি

‘ঝড়-বৃষ্টি আঁধার রাতে, আমরা আছি তোমার সাথে’

বাংলাদেশ-জাপান সহযোগিতা স্মারক: স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অনন্য মাইলফলক

রাষ্ট্রের কূটনৈতিক মিশনের পরিবর্তন আশু প্রয়োজন

কুয়েতের জীবনযাত্রার সাতকাহন: পর্ব-১-বিয়ে

বিবেকের লড়াই

ছবি

ছবি যেন শুধু ছবি নয়

বাত ব্যথার কারণ ও আধুনিক চিকিৎসা

ছবি

স্বাধীন স্বদেশে মুক্ত বঙ্গবন্ধু

ছবি

মহান নেতার স্বভূমিতে ফিরে আসা

ছবি

মেট্রোরেল : প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী চিন্তার ফসল

ছবি

আমার মা

ডিজিটাল বাংলাদেশ: প্রগতিশীল প্রযুক্তি, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নতি

ছবি

৩ নভেম্বর: ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ডের ধারাবাহিকতা

দেশের ইতিহাসে কলঙ্কজনক দ্বিতীয় অধ্যায়

এইচ এস সি ও সমমান পরীক্ষার্থীদের অনুশীলন

ছবি

ত্রিশ বছর পূর্তিতে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়

শিল্প কারখানার পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনায় এনভায়রনমেন্টাল ইন্জিনিয়ারিং

অসুর: এক পরাজিত বিপ্লবী

অসুর জাতির ইতিহাস

tab

মুক্ত আলোচনা

স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে আর কতকাল মিথ্যাচার

মোহাম্মদ শাহজাহান

মঙ্গলবার, ০২ এপ্রিল ২০১৯

দেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি কোনভাবেই মিথ্যাচার থেকে বের হয়ে আসতে পারছে না। এবারের স্বাধীনতা দিবসেও দলটি চরম মিথ্যাচার করেছে। আসলে বিএনপি রাজনীতির পুরোটাই মিথ্যাচারে ভরপুর। মিথ্যা দিয়েই এ দলের জন্ম, মিথ্যাচারেই এর বিকাশ এবং মিথ্যা কথা বলতে বলতে বিএনপি নেতারা দলটিকে ধ্বংসের শেষ প্রান্তে নিয়ে এসেছেন। গত চার দশকে আমি বহুবার আমার কলামে লিখেছি ‘প্রকৃত অর্থে বিএনপি কোন রাজনৈতিক দল নয়। রাষ্ট্রীয় উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে বিভিন্ন দলের রাজনৈতিকভাবে অসৎ, গণবিচ্ছিন্ন, সুবিধাবাদী লোকদের নিয়ে প্রথম সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান ১৯৭৮ সালে বিএনপি গঠন করেন।’ কথায় আছে ‘কিছু লোককে কিছু সময়ের জন্য বোকা বানানো যায়; কিন্তু বেশি লোককে দীর্ঘ সময়ের জন্য বোকা বানিয়ে রাখা যায় না।’ এটা ঠিক, বিএনপি বর্তমানে কঠিন সময় অতিক্রম করছে। প্রতিষ্ঠার পর গত চার দশকে এত করুণ অবস্থায় নিপতিত হয়নি দলটি। সদ্যসমাপ্ত সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের পার্লামেন্টে মাত্র ৬টি আসনে এই দল জয়ী হয়েছে। যদিও বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো বলছে, নির্বাচনে বিশাল কারচুপি হয়েছে। দলের প্রধান আকর্ষণ দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে ১৩ মাসের বেশি সময় ধরে জেলে রয়েছেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান খালেদাপুত্র তারেক রহমান সাড়ে ১০ বছর ধরে লন্ডনে স্বেচ্ছা নির্বাসনে রয়েছেন। গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন এবং অন্য দুটি দুর্নীতি মামলায় তারেক রহমানের যথাক্রমে ১০ বছর ও ৭ বছর সাজা হয়েছে। তাছাড়া দলের ছোট বড় প্রায় সব নেতার বিরুদ্ধে ২-৪ টা করে মামলা রয়েছে। গত কয়েক বছর ধরেই দলের তেমন কোনো কার্যক্রম নেই। মাঝে মধ্যে মহাসচিব মির্জা ফখরুল এবং সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর কথাবার্তা শুনলে মনে হয়, বিএনপি নামের এক সময়ের পরম পরাক্রমশালী দলটি এখানও একেবারে শেষ হয়ে যায়নি।

কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান চরম দুর্বল অবস্থায় পতিত হলে গণমুখী ও বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিয়েই সেখান থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করতে হয়। বিএনপির হোমরা-চোমরারা যেন এ কঠিন বাস্তবতাটি একেবারেই বুঝতে পারছেন না। বিএনপি নেতৃত্বকে বুঝতে হবে ‘অন্ধ হলেই প্রলয় বন্ধ হয় না।’ এবারের স্বাধীনতা দিবসেও বিএনপি পুরনো ইতিহাস বিরুদ্ধ নীতি থেকে বের হয়ে আসতে পারেনি। বিএনপি স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে একটি ক্রোড়পত্র বের করেছে। দৈনিক নয়া দিগন্ত পত্রিকায় প্রকাশিত ওই ক্রোড়পত্রে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দাবি করেছেন তার বাবা জিয়াউর রহমান ১৯৭১-এর ২৬ মার্চ তারিখে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে নিজেকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে উল্লেখ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। তার এ ঘোষণার মাধ্যমে সেই দিন বিশ্বের মানচিত্রে জন্মলাভ করেছিল বাংলাদেশ নামের একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম ক্রোড়পত্রে তার বাণীতে জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, জিয়ার ঘোষণায় সেই সময় ভীতসন্ত্রস্ত এবং দিশেহারা জাতি খুঁজে পেয়েছিল পথের দিশা। তবে তারেক রহমানের সঙ্গে মির্জা ফখরুলের বক্তব্যের পার্থক্য রয়েছে। তারেক রহমানের মতো ‘২৬ মার্চ জিয়া স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন’ এ কথা স্পষ্ট করে বলেননি মির্জা ফখরুল। মহাসচিব প্রথমে বলেন, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষিত হয়েছে। কয়েক লাইন পরে তিনি বলেন, তৎকালীন পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের উপ-অধিনায়ক হিসেবে কর্মরত জিয়াউর রহমান চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে মহান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তারেক রহমানের মতো মির্জা ফখরুল একথাও বলেননি যে, জিয়াউর রহমান নিজেকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে উল্লেখ করে সেদিন স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। শুধু দুই নেতার বাণীতে নয়, এবারের স্বাধীনতা দিবসের আলোচনা সভা এবং দলের অঙ্গ সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রকাশিত পোস্টারেও ইতিহাসের বিকৃতি ঘটানো হয়েছে। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের পক্ষ থেকে প্রচারিত এক পোস্টারেও জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত বিএনপির আলোচনা সভায় শীর্ষ নেতারা বলেছেন, জিয়াউর রহমান ১৯৭১-এর ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।

যে যাই বলুন, প্রকৃত সত্য হচ্ছে, আজ থেকে ৪৮ বছর আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। আমি একজন সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী এবং মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা দেয়া, শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, ২২ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধুর মুক্তি, সত্তরের নির্বাচন, একাত্তরের অসহযোগ আন্দোলন এবং ৯ মাসের স্বাধীনতা যুদ্ধ অত্যন্ত কাছ থেকে দেখেছি। একাত্তরে পূর্ব বাংলার লোকসংখ্যা ছিল সাড়ে সাত কোটি। একাত্তর দেখা কয়েক কোটি মানুষ এবং হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা এখনও বেঁচে আছেন। আমার স্মৃতিতে একাত্তরের কথা এখনও জ্বলজ্বল করছে। ছাত্রলীগের একজন কর্মী হিসেবে ‘তোমার দেশ আমার দেশ- বাংলাদেশ বাংলাদেশ’, ‘তোমার আমার ঠিকানা- পদ্মা মেঘনা যমুনা’, ‘পিন্ডি না ঢাকাÑ ঢাকা ঢাকা’, ‘ভুট্টোর মুখে লাথি মারো- বাংলাদেশ স্বাধীন করো’ এবং জয় বাংলা স্লোগান যে আমি কত হাজারবার দিয়েছি, তা বলে শেষ করা যাবে না।

‘বঙ্গবন্ধু ২৫ মার্চ রাতে স্বাধীনতা ঘোষণা না করে পাকিস্তানিদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন, আর তৎকালীন এক অখ্যাত, অচেনা অপরিচিত মেজর ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন’ এই মিথ্যাচারের জবাব দিতে আমার রীতিমতো ঘৃণা লাগে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ছিল জনযুদ্ধ। আর বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষকে একাত্তরে ঐক্যবদ্ধ করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ২৩ বছরের মুক্তিসংগ্রামের ফসল স্বাধীন বাংলাদেশ। এ পৃথিবীতে সংগ্রামের মাধ্যমে যেসব দেশ স্বাধীন হয়েছে, সেইসব প্রত্যেক দেশেরই একজন করে মূল নেতা রয়েছেন। আমেরিকার জর্জ ওয়াশিংটন, রাশিয়ার লেনিন, ভারতের মহাত্মা গান্ধী, ভিয়েতনামের হো চি মিন, ইন্দোনেশিয়ার সুকর্নো, ঘানার নক্রুমা, কিউবার ফিদেল ক্যাস্ত্রো এবং বাংলাদেশের শেখ মুজিবুর রহমান স্ব-স্ব দেশের মুক্তি সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এসব নেতারা তাদের দেশকে স্বাধীন করেছেন।

ব্রিটিশদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে গান্ধী ও জিন্নাহ যেভাবে ভারত ও পাকিস্তান সৃষ্টি করেছেন, অতো সহজে শেখ মুজিব বাংলাদেশ স্বাধীন করতে পারেননি। পাকিস্তান সৃষ্টির পর সরকারি দল মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে কোন কথা বলা যেত না। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে যুক্তফ্রন্টের জয়ী হবার পরও পশ্চিমা সামরিক জান্তা ক্ষমতায় থাকতে দেয়নি। ১৯৫৮ সালে সামরিক আইনে ক্ষমতায় এসে আইয়ুব খান ১০ বছর রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে রাখেন। ১৯৬৬ সালে শেখ মুজিব আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের দাবি ৬ দফা দাবি জাতির সামনে পেশ করলে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান অস্ত্রের ভাষায় কথা বলেন। সে সময় মুজিব ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাসহ হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে সামরিক সরকার। এরপর ফাঁসিতে হত্যার জন্য মুজিবকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার এক নম্বর আসামি করা হয়। নতিস্বীকার করেননি বিদ্রোহী বাংলার সূর্যসন্তান মুজিব। তুমুল গণআন্দোলনে ষড়যন্ত্রকারী আইয়ুব-মোনায়েম গদিচ্যুত হন এবং মুক্তি পান মুজিব।

সত্তরে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ এবং প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে পূর্ব বাংলার জনগণের শতকরা ৯০ ভাগ ভোট পায় মুজিবের দল আওয়ামী লীগ।

সত্তরের নির্বাচনে বিজয়ী দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করায় আন্দোলনের ডাক দেন শেখ মুজিব। একাত্তরের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু মুজিব বাংলার স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ১৫ মার্চ ৩৫ আদেশ জারি করে শেখ মুজিব পূর্ব বাংলার শাসনভার গ্রহণ করেন। মুজিবের ৭ মার্চের ভাষণ সরাসরি রিলে করতে না দেয়ায় বেতারকর্মীরা সম্প্রচার বন্ধ এবং বেতার ভবন তালা দিয়ে বের হয়ে আসেন। পাকিস্তান জান্তার বিরুদ্ধে মুজিব আহূত অহিংস ও অসহযোগ আন্দোলন মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলনের চেয়ে বেশি সফল বলে উল্লেখ করেছিলেন পাকিস্তান ন্যাপ নেতা ওয়ালী খান। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ১৫ মার্চ ঢাকায় এসে জনগণের নির্বাচিত নেতা মুজিবের সঙ্গেই কয়েক দফা বৈঠক করেছিলেন। জিয়াউর রহমানের মতো কোন মেজরের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট বৈঠক করেননি। অসহযোগ আন্দোলনের ২৫ দিন শেখ মুজিব ৩২ নম্বরের বাসভবন থেকে বাংলাদেশ পরিচালনা করেন। মূলত ২৫ দিনেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে যায়। এরপর ৯ মাসের জনযুদ্ধে দখলদার পাকিস্তান সামরিক বাহিনীকে পরাজিত করে স্বাধীন বাংলাদেশকে মুক্ত করা হয়। ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে শেখ মুজিব গ্রেফতার হওয়ার পূর্বে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ২৬ মার্চ সন্ধ্যায় ভাষণে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান স্বাধীনতা ঘোষণার দায়ে শেখ মুজিবকে অভিযুক্ত করে চরম শাস্তি দেয়ার কথা ঘোষণা করেন।

সত্তরের নির্বাচনে জনগণের ভোটে বিজয়ী দলের নেতা শেখ মুজিবকে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ‘ভাবী প্রধানমন্ত্রী’ বলে অভিহিত করেছিলেন। ইয়াহিয়া চক্র ক্ষমতা হস্তান্তর না করে ২৫ মার্চ রাতে পূর্ব বাংলার নিরীহ মানুষের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দিলে বাংলার মানুষ পাল্টা হামলা চালায়। তবে স্বাধীনতা ঘোষণার এখতিয়ার একমাত্র বিজয়ী দলের নেতা হিসেবে শেখ মুজিবেরই ছিল, অন্য কারও নয়। স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালনাকারী সরকারের রাষ্ট্রপতি ছিলেন নির্বাচনে বিজয়ী দলের নেতা শেখ মুজিব। মুজিবের অবর্তমানে মুজিবের সহকর্মী আওয়ামী লীগের অন্য নেতারাই অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রী হয়ে যুদ্ধকালীন সরকার পরিচালনা করেন। কোন যদু-মধুর নামে নয়, মুজিবের নামেই রাজধানীর নামকরণ করা হয় ‘মুজিবনগর’। বন্দি মুজিবের নামেই একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে এবং মুক্তিযোদ্ধারা হাসতে হাসতে জীবন দিয়েছেন।

একাত্তরে পাকিস্তান সরকার বন্দি মুজিবকেই প্রহসনের বিচারের মাধ্যমে ফাঁসি দিতে চেয়েছিল। এমনকি লায়ালপুর কারাগারে মুজিবের সেলের পাশে কবর পর্যন্ত খনন করা হয়েছিল। ২৫ মার্চ দেয়া শেখ মুজিবের স্বাধীনতার ঘোষণা দেশ-বিদেশের পত্র-পত্রিকা বেতার-টিভিতে প্রচারিত হয়। বাংলাদেশের প্রায় সব ওয়ারলেস স্টেশনে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা পৌঁছে গিয়েছিল। দাউদকান্দি উপজেলার শহীদনগরে একটি ওয়ারলেস স্টেশন (ভবন) ছিল। আওয়ামী লীগ কর্মী পরবর্তীকালে মুক্তিযোদ্ধা শওকত আলী বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা শহীদনগর ওয়ারলেস স্টেশনে পৌঁছে যাওয়ার কথা আমাকে ২৬ মার্চ রাতেই জানিয়েছিলেন।

আসলে ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণকেই বাংলার মানুষ স্বাধীনতার ঘোষণা হিসেবে ধরে নেয়। তাছাড়া অসহযোগের ২৫ দিনে বঙ্গবন্ধু প্রতিদিনই বলেছেন, চূড়ান্ত মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম চলবে। ৩ মার্চ পল্টন ময়দান, ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানসহ অসহযোগের ২৫ দিনে শেখ মুজিব বহুবার বলেছেন, আমি না থাকলেও অন্য নেতারা পর্যায়ক্রমে আন্দোলন সংগ্রাম পরিচালনা করবেন। ২৫ মার্চ রাতে জনগণ বঙ্গবন্ধুর ঘোষণার অপেক্ষা করেননি। পাকিস্তানি বাহিনী যেখানেই আক্রমণ করেছে, সেখানেই বাঙালি পাল্টা আক্রমণ করেছে। কারণ, ৭ মার্চ তো বঙ্গবন্ধু বলেই দিয়েছেনÑ ‘আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি তোমরা রাস্তাঘাট যা যা আছে সবকিছু বন্ধ করে দিও।’ মওলানা ভাসানীর মতো একজন বড় মাপের নেতা পর্যন্ত ২৫ মার্চের ২/৩ দিন আগে বলেছেন, ‘মুজিব স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই।’ জাতীয় নেতা ভাসানী মুজিবের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে বাংলা ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য ইয়াহিয়ার প্রতি আহ্বান জানান। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু কারামুক্ত হয়ে ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ স্বদেশে ফিরে এসে ১২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।

বাংলার মানুষসহ পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ জানে, শেখ মুজিবের কালজয়ী নেতৃত্বেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। গত ৪৮ বছরে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম ও মুজিবকে নিয়ে শত শত বই, লাখ লাখ প্রবন্ধ-নিবন্ধ, গান-কবিতা ও ছড়া লেখা হয়েছে। শেখ মুজিব ও বাংলাদেশ একে অপরের পরিপূরক। ওপার বাংলার কবি অন্নদা শংকর রায় যথার্থই বলেছেন, ‘যতকাল রবে পদ্মা মেঘনা গৌরি যমুনা বহমান, ততকাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান।’ জিয়া, এরশাদ, খালেদাÑ তিন কুচক্রী তাদের আড়াই দশকের শাসনামলে মুজিবের নাম মুছে ফেলার জন্য বহু চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র করেছেন। মুজিবের নাম উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়েছে আর ওই তিন কুচক্রী ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হতে চলেছে।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর হত্যাকারীরা মহান মুজিবের নাম মুছে জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক বানানোর অপচেষ্টা চালিয়ে আসছে। এটা ঠিক, জিয়া ১৯৭১ সালে মুজিবনগর সরকার নিযুক্ত অন্যতম সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। সরকারপ্রধান হিসেবে বঙ্গবন্ধু মেজর জিয়াকে মেজর জেনারেল পদোন্নতি দিয়ে সেনাবাহিনীর উপপ্রধান নিযুক্ত করেছিলেন। সেই অকৃতজ্ঞ জিয়া বঙ্গবন্ধু হত্যা-ষড়যন্ত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। বঙ্গবন্ধু হত্যা ষড়যন্ত্র নিয়ে চার দশক ধরে গবেষণা করছেন বিদেশি সাংবাদিক লিফশুলজ। তিনি মুজিব হত্যা নিয়ে অহ টহভরহরংযবফ জবাড়ষঁঃরড়হ নামে একটি বিশাল আকারের বই লিখেছেন। লিফশুলজ বলেছেন, ‘জিয়া মদদ না দিলে কোনভাবেই মুজিব হত্যা সম্ভব ছিল না।’ ফাঁসিতে কর্নেল তাহের হত্যা মামলার পুনর্বিচারকালে উচ্চ আদালত জিয়াকে স্বাধীনতাবিরোধী বলে উল্লেখ করেছেন। ইতিহাস একদিন বলবে, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে জিয়া ছিলেন একজন অনুপ্রবেশকারী। জেনারেল জিয়া নামে মুক্তিযোদ্ধা হলেও মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য, আদর্শ ও চেতনায় বিশ্বাস করতেন না। আর এ জন্যই জিয়া মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর বীরত্বগাথা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুছে ফেলে স্বাধীনতাবিরোধী গোলাম আযম, নিজামী, মুজাহিদ, মওলানা মান্নানদের মন্ত্রী বানান।

জিয়াপুত্র এবং বিএনপি নেতারা বলছেন, জিয়া ২৬ মার্চ চট্টগ্রাম বেতার থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন। অথচ ২৬ মার্চ জিয়া ওই বেতার কেন্দ্রেই যাননি। তাছাড়া স্বাধীনতা ঘোষণা করার এখতিয়ার থাকতে হয়। যে কেউ ইচ্ছে করলেই স্বাধীনতা ঘোষণা করতে পারে না। বছরের পর বছর সংগ্রাম করে স্বাধীনতা অর্জন করতে হয়। ২৩ বছরের সংগ্রামের ফসল বাংলাদেশের স্বাধীনতা। সত্তরের নির্বাচনে বিজয়ী দলের নেতা হিসেবে একমাত্র শেখ মুজিবেরই স্বাধীনতা ঘোষণার এখতিয়ার ছিল। কোন মেজর সাহেবের স্বাধীনতা ঘোষণা করলো, আর লাখো মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়লো, এটা পাগলের প্রলাপ মাত্র।

একটি রাজনৈতিক দল জনগণের কথা না বলে, গণমুখী কর্মসূচি না দিলে দীর্ঘদিন টিকে থাকতে পারে না। শুনতে তিক্ত হলেও অবিলম্বে জিয়া পরিবারকে বিএনপির নেতৃত্ব থেকে চিরতরে অপসারণ করে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসীদের নেতৃত্বে আনতে হবে। বাস্তবসম্মত গণমুখী কর্মসূচি নিয়ে বিএনপিকে এগুতে হবে। আর তা না হলে বিএনপি মুসলিম লীগের পরিণতি বরণ করলে আশ্চর্য হবার কিছু থাকবে না।

শেষে জিয়াউর রহমানের একটি বক্তব্য দিয়ে আজকের লেখার ইতি টানতে চাই। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) চৌধুরী খালেকুজ্জামান তার সামরিক জীবনের স্মৃতি (১৯৬৪-১৯৮১) নামের গ্রন্থে (পৃ. ৫২) লিখেছেন : ‘একদিন কথা প্রসঙ্গে আমি মেজর জিয়াকে বলেছিলাম, শেখ মুজিব ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে কথা বলবেন, এতে কি হবে? তখন মেজর জিয়া বলেন, তিনি রাজনৈতিক নেতা তিনিই ভালো বুঝেন। জিয়া আমাকে বললেন, ‘খালেকুজ্জামান, এদেশে nothing can be happen without Shiekh Mujibur Rahman’। অর্থাৎ ‘এদেশে শেখ মুজিবকে বাদ দিয়ে কিছু হবে না।’ আর সেনাবাহিনীর কাজ হলো শেখ মুজিবকে সাপোর্ট দিয়ে যাওয়া। ১৯৭১ সালে ইউনিট লাইনে জিয়া এ কথা বলেছিলেন।”

৩১ মার্চ ২০১৯

[লেখক : সাপ্তাহিক বাংলাবার্তা সম্পাদক]

bandhu.ch77@yahoo.com

দৈনিক সংবাদ : ২ এপ্রিল ২০১৯, মঙ্গলবার, ৭ এর পাতায় প্রকাশিত

back to top