নজরুল ইসলাম লিখন
জাতীয় দৈনিক পত্রিকা সূত্রে জানা যায়, মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থানের পরও ঝিনাইদহের মহেশপুর ও চুয়াডাঙ্গার জীবননগর সীমান্ত পথে ভারত থেকে মাদক আসছে। পাচার হয়ে আসার পর দেশের অভ্যন্তরে যাওয়ার সময় পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির হাতে ধরা পড়ছে। এদিকে পাচার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে নারীদের। গত ৫ এপ্রিল জীবননগর থেকে ফেনসিডিল নিয়ে ঝিনাইদহের দিকে আসার পথে কোটচাঁদপুর উপজেলার কাগমারি মোড়ে তিন নারী ও এক কিশোরকে ২৫৩ বোতল ফেনসিডিলসহ আটক করে পুলিশ। ৮ এপ্রিল কোটচাঁদপুর উপজেলার সোয়াদী গ্রামে পুলিশ ১৭৭ বোতল ফেনসিডিলসহ দুই নারীকে গ্রেফতার করে। তারা মুড়ির ব্যাগ, ভ্যানেটি ব্যাগ ও শরীরের নানা স্থানে লুকিয়ে বহন করছিল এগুলো। এভাবে নারীদেরও মাদক পাচার কাজে ব্যবহার করে গডফাদাররা।
বিশ্বের প্রতিটি দেশেই কম বেশি মাদক সমস্যা বিদ্যমান। কিন্তু আমাদের বাংলাদেশে এর ব্যাপকতা অনেক বেশি। মাদক ও মাদকাসক্তি এখন বাংলাদেশের জাতীয় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। যে যুব সমাজের ওপর দেশের শিক্ষা-দীক্ষা, উন্নতি-অগ্রগতি ও ভবিষ্যৎ নির্ভরশীল, তারাই যদি মাদকাসক্ত হয়ে পথভ্রষ্ট হয়ে যায়, তাহলে তাদের দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। এ ভয়ঙ্কর অভিশাপ থেকে আমাদের যুবসমাজকে রক্ষা করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
একটি প্রবাদ আছে, ‘like father, like son, বাপকা বেটা সিপাইকা ঘোড়া কুচ নেহি থোরা থোরা অর্থাৎ যেমন বাপ তেমনি ছেলে’। বাপ ভালো হলে নাকি ছেলে ভালো হয়, যদিও এমন কথার কোন ভিত্তি নেই। কারণ ডাক্তারের ছেলে ডাক্তার হয় না। তবে আজকের আলোচ্য বিষয় মানব বাপ নয়, দানবরূপী মাদক ইয়াবা সংক্ষেপে বাবাকে নিয়ে। এই বাবা জন্মদাতা পিতা নয়। এটা মরণ নেশা ইয়াবা বা সংক্ষেপে বাবা পিল। এই মরণ নেশা ইয়াবা বা বাবার নীল ছোবলে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে শত শত পরিবার, গোটা সমাজ এমনকি পুরো দেশ। কবি জীবনানন্দের রূপসী বাংলার রূপের ঐতিহ্য আজ হারিয়ে যেতে বসেছে শুধু নেশার কারণে। ঘরে-ঘরে বাবা খোর তৈরি হচ্ছে।
ইয়াবা ট্যাবলেটকে কেউ বলে জিপি, কেউ বলে পিল, কেউ বলে মাল, কেউ বলে মুরব্বি, কেউ বলে হর্সপাওয়ার, কেউ বলে বাবা, কেউ কেউ আবার আদর করে ডাকেন মারহাবা কিংবা গুটি নামে। তবে যে নামেই ডাকা হোক না কেন ভয়ঙ্কর এ মাদক ইয়াবাকে মাদক ব্যবসায়ীরা ও সেবনকারীরা বাবা সাংকেতিক নামেই বেশি ডাকেন। আসক্তদের অনেকের কাছে নিজের বাবার চেয়েও বেশি প্রিয় এই মাদক ‘ইয়াবা (বাবা)’। অভিজাত নেশাগ্রস্তদের কাছে এটি আইস পিল নামেও পরিচিত। ইয়াবা মাদক রাজ্যে একটি হট আইটেম।
কি নেই আমাদের বাংলাদেশে? লোকে বলে- রূপসী বাংলার রূপের নেইকো শেষ। অল্প কিছুসংখ্যক দুষ্ট লোকের কারণে বাংলাদেশের রূপ আজ বিলীন হয়ে যাচ্ছে। মন ভুলানো, দেহ শীতল করা নদীর আজ বেহাল অবস্থা। শকুনীদের চোখ পড়েছে আমাদের বাংলাদেশের ওপর। ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে হাউজিং ব্যবসা। বাংলাদেশের সুধীজনেরা বলেন, এদেশে হাউজিং ব্যবসা আরম্ভ হওয়ার পর থেকেই মূলত মাদকের ভয়াবহতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
মাকড়সার জালের মতো ছড়িয়ে আছে মাদক প্রবেশের অবৈধ পথ। মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ওয়েবসাইটের দিকে তাকালে আমরা যে চিত্রটি দেখতে পাই, তাতে বিষ্ময় প্রকাশ করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। জল, স্থল, রেল ও আকাশ পথে আমাদের দেশে অবৈধভাবে প্রবেশ করছে মাদকদ্রব্য।
আগে তো গাঁজায় পেত মজা। এরপর ক্রমান্বয়ে চোলাই মদ, বিদেশি মদ, হেরোইনেও নেশা হয় না। তারপরই আসে ইয়াবা পিল। এগুলো আকারে এত ছোট যে, যে কেউ খুব সহজেই এটা বহন করতে পারে। এই ইয়াবার মরণ ছোবলে কত বাবার ছেলেমেয়ে যে নষ্ট হয়ে গেছে, তার কোন সঠিক হিসাব কারও কাছে নেই।
যে কোন ধরনের মাদকই হোক না কেন তা কোন ক্রমেই গ্রহণযোগ্য নহে। মাদক একটি অভিশাপ। মানুষের জীবনকে তিলে তিলে ধ্বংস করে দিতে পারে এই মাদক। আজকের এ মাদক শুধু যে বখে যাওয়া তরুণদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ তা নয়, বরং তা ছড়িয়ে পড়েছে শিশু ও কিশোরদের হাতেও। বিশেষ করে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মাঝেও মাদক গ্রহণের প্রবণতা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবার শুধু পুরুষই নয়, আজকাল মহিলাদের মাঝেও মাদক গ্রহণের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাদকের আগমন ও বিস্তারের পথ দিন দিন ছড়িয়ে পড়ছে শহর বন্দর থেকে শুরু করে গ্রামের প্রত্যন্ত অলিগলি পর্যন্ত। পত্রিকা মারফত জানা যায়, প্রতিদিন শুধু রাজধানী ঢাকা শহরেই ইয়াবা বাবদ হাত বদল হয় ৭ কোটি টাকা।
ইয়াবা সেবনের টাকা জোগার করতে না পেরে অনেকেই চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের মতো জঘণ্যতম কাজও করছে অনায়েসে। আবার ইয়াবা ব্যবসায়ীরা নিজেদের মধ্যে টাকার ভাগ-বাটোয়ারা নিয়েও প্রতিনিয়তই সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে। মোট কথা, নেশার কারণেই আজ সমাজে বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। আমরা একটা খারাপ সময় অতিক্রম করছি। নেশাগ্রস্ত যুবক সমাজ আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়ে গোটা দেশটাকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছে। যাদের হাতে এক সময় দেশের নেতৃত্ব থাকবে। নেশাগ্রস্ত ওইসব যুবক সমাজের হাত ধরে যে রাজনীতি গড়ে ওঠবে তা অবশ্যই প্রবঞ্চনার রাজনীতিরই জন্ম দেবে। তাদের কাছ থেকে ভালো কিছু আশা করা হবে ভুল।
পত্রিকা সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন সময়ে মাদক সেবক ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে লোক দেখানো অভিযান চালানো হয়। মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মাসোয়ারার টাকা নিয়ে বনিবনা না হলে নাকি মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়। তাছাড়া অভিযানের সময় আটককৃতদের টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়া হয়। আবার অভিযানের সময় আটককৃত মালামাল থানায় জমা দেয়ার সময় বা মিডিয়ার সামনে প্রচারের সময় অর্ধেকও হয়ে যায়। বাকি মাল পুলিশ সদেস্যরা আবার মাদক ব্যবসায়ীদের নিকট বিক্রি করে দেয়। প্রতিদিনই এভাবে মাদকের অসংখ্য চালান ধরা পড়ছে। তারপরও বন্ধ করা যাচ্ছে না মাদকের বিস্তার। হাত বাড়ালেই মিলছে মদ, গাঁজা, ইয়াবা, ফেনসিডিল, হেরোইনসহ নানা নেশা জাতীয় দ্রব্য। নেশার নীল ছোবলে আজ ধ্বংসের পথে যুবসমাজ। মাদকাসক্তির কারণে পরিবার ও সমাজে অস্থিরতা বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে অপরাধ প্রবণতা।
কোথায় নেই মাদক? আজকাল মাদকের এতই বিস্তার লাভ করেছে যে ঘরে-বাইরে, হোটেলে-রেস্তোরাঁয়, পার্কে, বিভিন্ন দোকানে, পুলিশের গাড়িতে নাকি ইদানীং মাদক পাওয়া যাচ্ছে এবং তা ফলাও করে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হতেও দেখা যায়। পত্রিকায় আরও একটি খবর দেখে চমকে গেলাম। জেলা কারাগারগুলো মাদকসেবীদের অভয়াণ্যে পরিণত হয়েছে। সেখানে নাকি হাত বাড়ালেই যে কোন ধরনের মাদক পাওয়া যাচ্ছে। কোথায় সংশোধন হবে মানুষ।
কক্সবাজার সীমান্ত হয়ে বানের পানির মতো ভেসে আসছে মরণ নেশা ইয়াবা। বাংলাদেশকে টার্গেট করে সীমান্তে গড়ে ওঠা কারখানায় উৎপাদিত ইয়াবা ঠেলে দেয়া হচ্ছে এপারে। সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনী বিজিবির সতর্ক টহল এবং কড়া নজদারিতেও বন্ধ হচ্ছে না মরণ নেশা ইয়াবার চালান। কক্সবাজারের টেকনাফ ও বান্দরবনের নাইক্ষ্যংছড়ি হয়ে আসা ইয়াবা সমুদ্র ও সড়কপথে চট্টগ্রাম হয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে।
সুস্পষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে কিছু মাদকের চালান ধরা পরলেও বেশিরভাগই থেকে যাচ্ছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। এর ফলে কি হচ্ছে? ২০১২ সালে আমরা দেখলাম প্রখ্যাত কমেডিয়ান অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামানের ছোট ছেলে বড় ছেলেকে মাদকের টাকার জন্য খুন করেছে। তারপর ২০১৩ সালের আগস্ট মাসে ধানমন্ডির ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনালের ও লেভেলের ছাত্রী ঐশীর কথা আমরা সংবাদপত্রে এবং টেলিভিশনে দেখে শিউরে ওঠেছিলাম। মাদকের ছোবল কি বীভৎস চিত্র তৈরি করতে পারে তা এ ঘটনাগুলো আমাদের বারবার মনে করিয়ে দেয়।
সমাজে ও শিক্ষাঙ্গনে মাদকের ছোবল রুখতে হবে। মাদকের সর্বগ্রাসী আগ্রাসনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে দেশের যুবসমাজ। বস্তির দরিদ্র ছেলে থেকে শুরু করে শহরের অভিজাত এলাকার ধনীর দুলাল এখন মাদকে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। এমনকি স্কুলের কিশোর-কিশোরী থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পর্যন্ত মাদকের ভয়াল থাবায় আক্রান্ত হচ্ছে। এসব মাদকদ্রব্য গ্রহনের ফলে নানা ধরনের শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি বিকৃতি ঘটে। ফলে দেশে দিন দিন সামাজিক অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে। নারী ও শিশু নির্যাতন, চুরি, ডাকাতির মতো মারাত্মক অপরাধগুলোর সঙ্গে মাদকসেবীরাই যুক্ত। আর তাই জাতি হাঁটছে অন্ধকারের দিকে, মৃত্যুর দিকে হাঁটছে নৈতিক মূল্যবোধ এবং জন্ম নিচ্ছে ঐশীর মতো বাবা-মায়ের হত্যাকারী সন্তানেরা। তাই সমাজ ও জাতির স্বার্থে মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা উচিত। মাদক গ্রহণকারীদের সংশোধন কেন্দ্রের মাধ্যমে সামাজিক পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থার (মানস) জরিপ মতে, বর্তমানে বাংলাদেশে মাদকসেবীর সংখ্যা ৭০ লাখ। তার মধ্যে ৮০ শতাংশই যুবক। তাদের মধ্যে ৪৩ শতাংশ বেকার। মাদকসেবীদের মধ্যে ৫০ শতাংশ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ, অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। আর অধিকাংশই এখন ইয়াবায় আসক্ত। সীমান্তবর্তী ২৯টি জেলার মধ্যে ১৩২টি উপজেলা দিয়ে সরাসরি মাদক বহন করা হচ্ছে বলে সংবাদ মাধ্যমগুলোতে খবর বেরিয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের তথ্য মতে, দেশে প্রতিদিন ৩০ লাখ মানুষ ইয়াবা সেবন করেন। এদের মধ্যে শিক্ষার্থীরাও রয়েছে।
মাদকের বিস্তার দিন দিন শুধুই বৃদ্ধি পাচ্ছে? মাদকের এ ভয়াবহ বিস্তারের কারণ হলোÑ দেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দলের কিছু অসৎ নেতা এ ব্যবসার সঙ্গে পরোক্ষ অথবা প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। রাজনৈতিক নেতা, পুলিশ, সরকারের আমলারা যদি এ অপব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে থাকেন, তাহলে সারাজীবন চেষ্টা করলেও বাংলাদেশ থেকে মাদক নির্মূল করা সম্ভব হবে না।
পত্রিকান্তে প্রকাশ, ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার-চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে উপজেলা চেয়ারম্যান, এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে সংসদ সদেস্যদের সঙ্গেও রয়েছে মাদক ব্যবসায়ীদের ভালো সম্পর্ক। সরিষার মধ্যে ভূত রেখে ভূত তাড়ানো কি সম্ভব? পুলিশের কিছু কর্তাব্যক্তিরাও মাদকের সঙ্গে জরিয়ে রয়েছে। রক্ষকই যদি ভক্ষকের ভূমিকার থাকে তাহলে আর কিছু বলার থাকে না। একেই বলে সর্বাঙ্গে ব্যথা, ওষুধ দেব কোথায়? জনপ্রতিনিধিরা জনসেবা বাদ দিয়ে যখন জনঅস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ান, তখন দেশে বিশৃঙ্খলা অনিবার্য। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে প্রতিদিন নানা ধরনের বিপুল পরিমাণ মাদক ভারত, মায়নমার থেকে দেশে প্রবেশ করছে। মাদক পাচারকারীরা এসব মাদক পরিবহন ও বিপণনের জন্যে একদিকে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করছে, অন্যদিকে মাদক বিক্রির টার্গেট ক্রেতা হিসেবেও উঠতি বয়সের যুবক, স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বেছে নেয়া হচ্ছে।
মাদক সেবনের ফলে তাৎক্ষণিকভাবে হৃদস্পন্দন, রক্তচাপ ও শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। মস্তিষ্কের কিছু কোষের অপমৃত্যু ঘটে। এভাবেই হৃদপি-, ফুসফুস ও কিডনি বিকলের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে নেশায় আসক্তদের। এ মরণ নেশা প্রতিরোদে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। কোন জিনিস সহজলভ্য হলে তার বিস্তার ঘটে খুব দ্রুত। মাদকের ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে। সম্প্রতি পত্রিকায় প্রকাশিত একটি সূত্র থেকে জানা যায়, নতুন বছরের প্রথমেই ব্যাপক পরিমাণ ইয়াবা উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সদেস্যরা। অবশ্যই এটা কৃতিত্বেও দাবি রাখে।
দ্রুতগতিতে আমাদের দেশে বাড়ছে মাদকের অনুপ্রবেশ ও মাদকসেবীর সংখ্যা। উদ্বেগজনকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে মাদকাসক্ত শিশু-কিশোরের সংখ্যা। শিশু-কিশোররা মাদকাসক্ত হয়ে পড়লে তাদের স্বাভাবিক শৈশব ও কৈশোর বলে আর কিছু থাকবে না। অথচ এরাই দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ। বন্ধ হয়ে যাবে তাদের লেখাপড়া, স্কুলে যাওয়া ও খেলাধুলা। তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার অগ্রগতি ব্যাহত হবে। অন্ধকারে তলিয়ে যাবে দেশের ভবিষ্যৎ। হিংস্র ও প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে গড়ে ওঠবে তারা। শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রামে মাদক যেভাবে ছড়িয়ে পড়ছে, তাতে সমাজের সচেতন মানুষ রীতিমতো আতঙ্কিত। এহেন পরিস্থিতি এখনই রোধ করা অত্যন্ত জরুরি। মাদকের বিস্তার রোধকল্পে বাল্যকাল থেকেই সবার মধ্যে নৈতিক শিক্ষা, আদর্শ ও ধর্মীয় মূল্যবোধ জাগ্রত করতে হবে। মানব সন্তানের জন্যে প্রথম ও প্রধান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হচ্ছে তার পরিবার। তাই প্রত্যেকটি পরিবারকে সচেতন করেই মাদকমুক্ত জাতি গঠন করা যেতে পারে। মাদকের বিস্তার রোধকল্পে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির প্রয়োজন।
নীরব ঘাতকের মতো মাদকাসক্তি প্রসার লাভ করছে। আমাদের কর্মশক্তির বড় একটি অংশ আগামী দিনের নাগরিকদের গ্রাস করছে প্রতিনিয়ত। এ পরিস্থিতি শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একার পক্ষে রোধ করা সম্ভব নয়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা সর্বাগ্রে প্রয়োজন। প্রয়োজন ব্যাপক জনসচেতনা। মাদককে না বলুন ঘরে ঘরে এ বার্তা পৌঁছে দিতে হবে। প্রশাসন এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের তরফ থেকে ব্যাপক মাদকবিরোধী জনসচেতনতামূলক তৎপরতা বজায় থাকার পরও মাদকের পাচার ববেং বেচাকেনা ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাদকসেবীর সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে খুন, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, নারী নির্যাতনসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ ও অপকর্ম। সমাজে বিশৃঙ্খলা তৈরি হচ্ছে।
প্রশাসনের মাদকবিরোধী সভা-সেমিনার, বিজিবি ও পুলিশের অভিযানসহ মসজিদভিত্তিক জনসচেতনতা কার্যক্রম গ্রহণের পরও প্রতিদিন বাড়ছে মাদকাসক্তের সংখ্যা। মাদকের নীল ছোবলে একেকটি পরিবার ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে যুবসমাজের সম্ভাবনাময় শক্তি। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদেস্যরা প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থানে মাদকবিরোধী অভিযান চালিয়ে, ইয়াবা, ফেনসিডিলসহ নানা ধরনের মাদক উদ্ধার করেছে।
বাংলাদেশে ইয়াবা আসে মূলত মায়ানমার থেকে। সূত্র থেকে জানা যায়, এ ইয়াবা চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত রয়েছে বাংলাদেশে বসবাসকারী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মায়ানমারের সীমান্তবর্তী এলাকায় অর্ধশতাধিক ইয়াবা তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে। এগুলোর প্রধান লক্ষ্যই হচ্ছে বাংলাদেশে ইয়াবা পাচার করা। আর একে ঘিরে টেকনাফ, কক্সবাজার ও বান্দরবন সীমান্তবর্তী এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে অনেক চোরাচালান চক্রের। চোরাচালান চক্রের মাধ্যমেই ইয়াবা ছড়িয়ে পড়ছে গোটা দেশে।
প্রতিদিন লাখ লাখ কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী ইয়াবার নর্বনাশা নেশায় বুঁদ হয়ে নিজের জীবন বিপন্ন করছে, পরিবার ও সমাজের জন্য ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ইয়াবা, ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকের নেশার টাকা জোগার করতে গিয়ে নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে কিশোর ও তরুণরা। এভাবেই মাদকের নীল ছোবলে সমাজে অপরাধের মাত্রাও বেড়ে চলছে, যা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।
যুবসমাজের বিশাল অংশ যখন মাদকের করাল গ্রাসে নিমজ্জিত হয়ে পড়ছে, তখন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের একশ্রেণীর নেতারা মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এমনকি পুলিশের একশ্রেণীর কর্মকর্তাও মাদক ব্যবসায়ী চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে বলে সংবাদ মাধ্যমগুলোতে খবর প্রকাশিত হচ্ছে। সন্ত্রসী-চাঁদাবাজরা কালোটাকার উৎস হিসেবে যেমন মাদকের ব্যবসাকে বেছে নিচ্ছে, তেমনি বেআইনিভাবে অর্জিত অর্থের একটি অংশ মাদকের পেছনে ব্যয়ও হচ্ছে।
মাদকের সহজলভ্যতা যে কোন উপায়েই হোক রোধ করতে হবে। মাদকের সহজলভ্যতা রোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া অপরাধী যেই হোক তার শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। বিভিন্ন সময়ে মাদক চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত চুনোপুঁটিরা গ্রেফতার হলেও রাঘববোয়াল প্রায়শই থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। মাদক ব্যবসার সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক না কেন তাদের যেন বিন্দুমাত্র ছাড় না দেয়া হয়- এটাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি সাধারণ জনগণের প্রত্যাশা। পাশাপাশি মাদকের বিস্তার রোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান যেন অব্যাহত থাকে।
মাদক ও ইয়াবা চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত চক্রের অনেক সদেস্যকে ইতিপূর্বে বিভিন্ন সময়ে আটকও করা হয়েছে। কিন্তু ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মুনাফাবাজি ও নিয়ন্ত্রণের কারণেই বন্ধ করা যাচ্ছে না ইয়াবা ব্যবসা- এমনটাই ধারনা করছেন সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকরা। নেপথ্যের গডফাদাররা সব সময়ই ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। সীমান্তের মাদক চোরাচালান রুটগুলোতে বিজিবি, কোস্টগার্ড ও পুলিশের কড়া নজরদারির পাশাপাশি ইয়াবা চোরাচালানের মূলহোতাদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা না করতে পারলে দেশ ও সমাজকে মাদকের ভয়ানক ছোবল থেকে রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। মাদক ব্যবসা ও এর বিস্তার রোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জিরো টলারেন্স গ্রহণ করতে হবে। তবে শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। পাশাপাশি ব্যাপক জনসচেতনতা ও মাদকবিরোধী সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে দেশের যুবসমাজকে রক্ষার উদ্যোগ নিতে হবে। অন্যথায় পুরো সমাজ ব্যবস্থাই বিশৃঙ্খল ও অনিরাপদ হয়ে উঠতে পারে।
[লেখক : কলাম লেখক ও সাংবাদিক]
likhonalife@gmail.com
দৈনিক সংবাদ : ১৩ এপ্রিল ২০১৯, শনিবার, ৭ এর পাতায় প্রকাশিত
নজরুল ইসলাম লিখন
শনিবার, ১৩ এপ্রিল ২০১৯
জাতীয় দৈনিক পত্রিকা সূত্রে জানা যায়, মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থানের পরও ঝিনাইদহের মহেশপুর ও চুয়াডাঙ্গার জীবননগর সীমান্ত পথে ভারত থেকে মাদক আসছে। পাচার হয়ে আসার পর দেশের অভ্যন্তরে যাওয়ার সময় পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির হাতে ধরা পড়ছে। এদিকে পাচার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে নারীদের। গত ৫ এপ্রিল জীবননগর থেকে ফেনসিডিল নিয়ে ঝিনাইদহের দিকে আসার পথে কোটচাঁদপুর উপজেলার কাগমারি মোড়ে তিন নারী ও এক কিশোরকে ২৫৩ বোতল ফেনসিডিলসহ আটক করে পুলিশ। ৮ এপ্রিল কোটচাঁদপুর উপজেলার সোয়াদী গ্রামে পুলিশ ১৭৭ বোতল ফেনসিডিলসহ দুই নারীকে গ্রেফতার করে। তারা মুড়ির ব্যাগ, ভ্যানেটি ব্যাগ ও শরীরের নানা স্থানে লুকিয়ে বহন করছিল এগুলো। এভাবে নারীদেরও মাদক পাচার কাজে ব্যবহার করে গডফাদাররা।
বিশ্বের প্রতিটি দেশেই কম বেশি মাদক সমস্যা বিদ্যমান। কিন্তু আমাদের বাংলাদেশে এর ব্যাপকতা অনেক বেশি। মাদক ও মাদকাসক্তি এখন বাংলাদেশের জাতীয় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। যে যুব সমাজের ওপর দেশের শিক্ষা-দীক্ষা, উন্নতি-অগ্রগতি ও ভবিষ্যৎ নির্ভরশীল, তারাই যদি মাদকাসক্ত হয়ে পথভ্রষ্ট হয়ে যায়, তাহলে তাদের দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। এ ভয়ঙ্কর অভিশাপ থেকে আমাদের যুবসমাজকে রক্ষা করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
একটি প্রবাদ আছে, ‘like father, like son, বাপকা বেটা সিপাইকা ঘোড়া কুচ নেহি থোরা থোরা অর্থাৎ যেমন বাপ তেমনি ছেলে’। বাপ ভালো হলে নাকি ছেলে ভালো হয়, যদিও এমন কথার কোন ভিত্তি নেই। কারণ ডাক্তারের ছেলে ডাক্তার হয় না। তবে আজকের আলোচ্য বিষয় মানব বাপ নয়, দানবরূপী মাদক ইয়াবা সংক্ষেপে বাবাকে নিয়ে। এই বাবা জন্মদাতা পিতা নয়। এটা মরণ নেশা ইয়াবা বা সংক্ষেপে বাবা পিল। এই মরণ নেশা ইয়াবা বা বাবার নীল ছোবলে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে শত শত পরিবার, গোটা সমাজ এমনকি পুরো দেশ। কবি জীবনানন্দের রূপসী বাংলার রূপের ঐতিহ্য আজ হারিয়ে যেতে বসেছে শুধু নেশার কারণে। ঘরে-ঘরে বাবা খোর তৈরি হচ্ছে।
ইয়াবা ট্যাবলেটকে কেউ বলে জিপি, কেউ বলে পিল, কেউ বলে মাল, কেউ বলে মুরব্বি, কেউ বলে হর্সপাওয়ার, কেউ বলে বাবা, কেউ কেউ আবার আদর করে ডাকেন মারহাবা কিংবা গুটি নামে। তবে যে নামেই ডাকা হোক না কেন ভয়ঙ্কর এ মাদক ইয়াবাকে মাদক ব্যবসায়ীরা ও সেবনকারীরা বাবা সাংকেতিক নামেই বেশি ডাকেন। আসক্তদের অনেকের কাছে নিজের বাবার চেয়েও বেশি প্রিয় এই মাদক ‘ইয়াবা (বাবা)’। অভিজাত নেশাগ্রস্তদের কাছে এটি আইস পিল নামেও পরিচিত। ইয়াবা মাদক রাজ্যে একটি হট আইটেম।
কি নেই আমাদের বাংলাদেশে? লোকে বলে- রূপসী বাংলার রূপের নেইকো শেষ। অল্প কিছুসংখ্যক দুষ্ট লোকের কারণে বাংলাদেশের রূপ আজ বিলীন হয়ে যাচ্ছে। মন ভুলানো, দেহ শীতল করা নদীর আজ বেহাল অবস্থা। শকুনীদের চোখ পড়েছে আমাদের বাংলাদেশের ওপর। ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে হাউজিং ব্যবসা। বাংলাদেশের সুধীজনেরা বলেন, এদেশে হাউজিং ব্যবসা আরম্ভ হওয়ার পর থেকেই মূলত মাদকের ভয়াবহতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
মাকড়সার জালের মতো ছড়িয়ে আছে মাদক প্রবেশের অবৈধ পথ। মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ওয়েবসাইটের দিকে তাকালে আমরা যে চিত্রটি দেখতে পাই, তাতে বিষ্ময় প্রকাশ করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। জল, স্থল, রেল ও আকাশ পথে আমাদের দেশে অবৈধভাবে প্রবেশ করছে মাদকদ্রব্য।
আগে তো গাঁজায় পেত মজা। এরপর ক্রমান্বয়ে চোলাই মদ, বিদেশি মদ, হেরোইনেও নেশা হয় না। তারপরই আসে ইয়াবা পিল। এগুলো আকারে এত ছোট যে, যে কেউ খুব সহজেই এটা বহন করতে পারে। এই ইয়াবার মরণ ছোবলে কত বাবার ছেলেমেয়ে যে নষ্ট হয়ে গেছে, তার কোন সঠিক হিসাব কারও কাছে নেই।
যে কোন ধরনের মাদকই হোক না কেন তা কোন ক্রমেই গ্রহণযোগ্য নহে। মাদক একটি অভিশাপ। মানুষের জীবনকে তিলে তিলে ধ্বংস করে দিতে পারে এই মাদক। আজকের এ মাদক শুধু যে বখে যাওয়া তরুণদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ তা নয়, বরং তা ছড়িয়ে পড়েছে শিশু ও কিশোরদের হাতেও। বিশেষ করে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মাঝেও মাদক গ্রহণের প্রবণতা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবার শুধু পুরুষই নয়, আজকাল মহিলাদের মাঝেও মাদক গ্রহণের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাদকের আগমন ও বিস্তারের পথ দিন দিন ছড়িয়ে পড়ছে শহর বন্দর থেকে শুরু করে গ্রামের প্রত্যন্ত অলিগলি পর্যন্ত। পত্রিকা মারফত জানা যায়, প্রতিদিন শুধু রাজধানী ঢাকা শহরেই ইয়াবা বাবদ হাত বদল হয় ৭ কোটি টাকা।
ইয়াবা সেবনের টাকা জোগার করতে না পেরে অনেকেই চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের মতো জঘণ্যতম কাজও করছে অনায়েসে। আবার ইয়াবা ব্যবসায়ীরা নিজেদের মধ্যে টাকার ভাগ-বাটোয়ারা নিয়েও প্রতিনিয়তই সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে। মোট কথা, নেশার কারণেই আজ সমাজে বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। আমরা একটা খারাপ সময় অতিক্রম করছি। নেশাগ্রস্ত যুবক সমাজ আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়ে গোটা দেশটাকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছে। যাদের হাতে এক সময় দেশের নেতৃত্ব থাকবে। নেশাগ্রস্ত ওইসব যুবক সমাজের হাত ধরে যে রাজনীতি গড়ে ওঠবে তা অবশ্যই প্রবঞ্চনার রাজনীতিরই জন্ম দেবে। তাদের কাছ থেকে ভালো কিছু আশা করা হবে ভুল।
পত্রিকা সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন সময়ে মাদক সেবক ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে লোক দেখানো অভিযান চালানো হয়। মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মাসোয়ারার টাকা নিয়ে বনিবনা না হলে নাকি মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়। তাছাড়া অভিযানের সময় আটককৃতদের টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়া হয়। আবার অভিযানের সময় আটককৃত মালামাল থানায় জমা দেয়ার সময় বা মিডিয়ার সামনে প্রচারের সময় অর্ধেকও হয়ে যায়। বাকি মাল পুলিশ সদেস্যরা আবার মাদক ব্যবসায়ীদের নিকট বিক্রি করে দেয়। প্রতিদিনই এভাবে মাদকের অসংখ্য চালান ধরা পড়ছে। তারপরও বন্ধ করা যাচ্ছে না মাদকের বিস্তার। হাত বাড়ালেই মিলছে মদ, গাঁজা, ইয়াবা, ফেনসিডিল, হেরোইনসহ নানা নেশা জাতীয় দ্রব্য। নেশার নীল ছোবলে আজ ধ্বংসের পথে যুবসমাজ। মাদকাসক্তির কারণে পরিবার ও সমাজে অস্থিরতা বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে অপরাধ প্রবণতা।
কোথায় নেই মাদক? আজকাল মাদকের এতই বিস্তার লাভ করেছে যে ঘরে-বাইরে, হোটেলে-রেস্তোরাঁয়, পার্কে, বিভিন্ন দোকানে, পুলিশের গাড়িতে নাকি ইদানীং মাদক পাওয়া যাচ্ছে এবং তা ফলাও করে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হতেও দেখা যায়। পত্রিকায় আরও একটি খবর দেখে চমকে গেলাম। জেলা কারাগারগুলো মাদকসেবীদের অভয়াণ্যে পরিণত হয়েছে। সেখানে নাকি হাত বাড়ালেই যে কোন ধরনের মাদক পাওয়া যাচ্ছে। কোথায় সংশোধন হবে মানুষ।
কক্সবাজার সীমান্ত হয়ে বানের পানির মতো ভেসে আসছে মরণ নেশা ইয়াবা। বাংলাদেশকে টার্গেট করে সীমান্তে গড়ে ওঠা কারখানায় উৎপাদিত ইয়াবা ঠেলে দেয়া হচ্ছে এপারে। সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনী বিজিবির সতর্ক টহল এবং কড়া নজদারিতেও বন্ধ হচ্ছে না মরণ নেশা ইয়াবার চালান। কক্সবাজারের টেকনাফ ও বান্দরবনের নাইক্ষ্যংছড়ি হয়ে আসা ইয়াবা সমুদ্র ও সড়কপথে চট্টগ্রাম হয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে।
সুস্পষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে কিছু মাদকের চালান ধরা পরলেও বেশিরভাগই থেকে যাচ্ছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। এর ফলে কি হচ্ছে? ২০১২ সালে আমরা দেখলাম প্রখ্যাত কমেডিয়ান অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামানের ছোট ছেলে বড় ছেলেকে মাদকের টাকার জন্য খুন করেছে। তারপর ২০১৩ সালের আগস্ট মাসে ধানমন্ডির ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনালের ও লেভেলের ছাত্রী ঐশীর কথা আমরা সংবাদপত্রে এবং টেলিভিশনে দেখে শিউরে ওঠেছিলাম। মাদকের ছোবল কি বীভৎস চিত্র তৈরি করতে পারে তা এ ঘটনাগুলো আমাদের বারবার মনে করিয়ে দেয়।
সমাজে ও শিক্ষাঙ্গনে মাদকের ছোবল রুখতে হবে। মাদকের সর্বগ্রাসী আগ্রাসনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে দেশের যুবসমাজ। বস্তির দরিদ্র ছেলে থেকে শুরু করে শহরের অভিজাত এলাকার ধনীর দুলাল এখন মাদকে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। এমনকি স্কুলের কিশোর-কিশোরী থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পর্যন্ত মাদকের ভয়াল থাবায় আক্রান্ত হচ্ছে। এসব মাদকদ্রব্য গ্রহনের ফলে নানা ধরনের শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি বিকৃতি ঘটে। ফলে দেশে দিন দিন সামাজিক অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে। নারী ও শিশু নির্যাতন, চুরি, ডাকাতির মতো মারাত্মক অপরাধগুলোর সঙ্গে মাদকসেবীরাই যুক্ত। আর তাই জাতি হাঁটছে অন্ধকারের দিকে, মৃত্যুর দিকে হাঁটছে নৈতিক মূল্যবোধ এবং জন্ম নিচ্ছে ঐশীর মতো বাবা-মায়ের হত্যাকারী সন্তানেরা। তাই সমাজ ও জাতির স্বার্থে মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা উচিত। মাদক গ্রহণকারীদের সংশোধন কেন্দ্রের মাধ্যমে সামাজিক পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থার (মানস) জরিপ মতে, বর্তমানে বাংলাদেশে মাদকসেবীর সংখ্যা ৭০ লাখ। তার মধ্যে ৮০ শতাংশই যুবক। তাদের মধ্যে ৪৩ শতাংশ বেকার। মাদকসেবীদের মধ্যে ৫০ শতাংশ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ, অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। আর অধিকাংশই এখন ইয়াবায় আসক্ত। সীমান্তবর্তী ২৯টি জেলার মধ্যে ১৩২টি উপজেলা দিয়ে সরাসরি মাদক বহন করা হচ্ছে বলে সংবাদ মাধ্যমগুলোতে খবর বেরিয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের তথ্য মতে, দেশে প্রতিদিন ৩০ লাখ মানুষ ইয়াবা সেবন করেন। এদের মধ্যে শিক্ষার্থীরাও রয়েছে।
মাদকের বিস্তার দিন দিন শুধুই বৃদ্ধি পাচ্ছে? মাদকের এ ভয়াবহ বিস্তারের কারণ হলোÑ দেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দলের কিছু অসৎ নেতা এ ব্যবসার সঙ্গে পরোক্ষ অথবা প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। রাজনৈতিক নেতা, পুলিশ, সরকারের আমলারা যদি এ অপব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে থাকেন, তাহলে সারাজীবন চেষ্টা করলেও বাংলাদেশ থেকে মাদক নির্মূল করা সম্ভব হবে না।
পত্রিকান্তে প্রকাশ, ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার-চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে উপজেলা চেয়ারম্যান, এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে সংসদ সদেস্যদের সঙ্গেও রয়েছে মাদক ব্যবসায়ীদের ভালো সম্পর্ক। সরিষার মধ্যে ভূত রেখে ভূত তাড়ানো কি সম্ভব? পুলিশের কিছু কর্তাব্যক্তিরাও মাদকের সঙ্গে জরিয়ে রয়েছে। রক্ষকই যদি ভক্ষকের ভূমিকার থাকে তাহলে আর কিছু বলার থাকে না। একেই বলে সর্বাঙ্গে ব্যথা, ওষুধ দেব কোথায়? জনপ্রতিনিধিরা জনসেবা বাদ দিয়ে যখন জনঅস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ান, তখন দেশে বিশৃঙ্খলা অনিবার্য। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে প্রতিদিন নানা ধরনের বিপুল পরিমাণ মাদক ভারত, মায়নমার থেকে দেশে প্রবেশ করছে। মাদক পাচারকারীরা এসব মাদক পরিবহন ও বিপণনের জন্যে একদিকে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করছে, অন্যদিকে মাদক বিক্রির টার্গেট ক্রেতা হিসেবেও উঠতি বয়সের যুবক, স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বেছে নেয়া হচ্ছে।
মাদক সেবনের ফলে তাৎক্ষণিকভাবে হৃদস্পন্দন, রক্তচাপ ও শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। মস্তিষ্কের কিছু কোষের অপমৃত্যু ঘটে। এভাবেই হৃদপি-, ফুসফুস ও কিডনি বিকলের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে নেশায় আসক্তদের। এ মরণ নেশা প্রতিরোদে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। কোন জিনিস সহজলভ্য হলে তার বিস্তার ঘটে খুব দ্রুত। মাদকের ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে। সম্প্রতি পত্রিকায় প্রকাশিত একটি সূত্র থেকে জানা যায়, নতুন বছরের প্রথমেই ব্যাপক পরিমাণ ইয়াবা উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সদেস্যরা। অবশ্যই এটা কৃতিত্বেও দাবি রাখে।
দ্রুতগতিতে আমাদের দেশে বাড়ছে মাদকের অনুপ্রবেশ ও মাদকসেবীর সংখ্যা। উদ্বেগজনকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে মাদকাসক্ত শিশু-কিশোরের সংখ্যা। শিশু-কিশোররা মাদকাসক্ত হয়ে পড়লে তাদের স্বাভাবিক শৈশব ও কৈশোর বলে আর কিছু থাকবে না। অথচ এরাই দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ। বন্ধ হয়ে যাবে তাদের লেখাপড়া, স্কুলে যাওয়া ও খেলাধুলা। তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার অগ্রগতি ব্যাহত হবে। অন্ধকারে তলিয়ে যাবে দেশের ভবিষ্যৎ। হিংস্র ও প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে গড়ে ওঠবে তারা। শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রামে মাদক যেভাবে ছড়িয়ে পড়ছে, তাতে সমাজের সচেতন মানুষ রীতিমতো আতঙ্কিত। এহেন পরিস্থিতি এখনই রোধ করা অত্যন্ত জরুরি। মাদকের বিস্তার রোধকল্পে বাল্যকাল থেকেই সবার মধ্যে নৈতিক শিক্ষা, আদর্শ ও ধর্মীয় মূল্যবোধ জাগ্রত করতে হবে। মানব সন্তানের জন্যে প্রথম ও প্রধান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হচ্ছে তার পরিবার। তাই প্রত্যেকটি পরিবারকে সচেতন করেই মাদকমুক্ত জাতি গঠন করা যেতে পারে। মাদকের বিস্তার রোধকল্পে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির প্রয়োজন।
নীরব ঘাতকের মতো মাদকাসক্তি প্রসার লাভ করছে। আমাদের কর্মশক্তির বড় একটি অংশ আগামী দিনের নাগরিকদের গ্রাস করছে প্রতিনিয়ত। এ পরিস্থিতি শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একার পক্ষে রোধ করা সম্ভব নয়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা সর্বাগ্রে প্রয়োজন। প্রয়োজন ব্যাপক জনসচেতনা। মাদককে না বলুন ঘরে ঘরে এ বার্তা পৌঁছে দিতে হবে। প্রশাসন এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের তরফ থেকে ব্যাপক মাদকবিরোধী জনসচেতনতামূলক তৎপরতা বজায় থাকার পরও মাদকের পাচার ববেং বেচাকেনা ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাদকসেবীর সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে খুন, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, নারী নির্যাতনসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ ও অপকর্ম। সমাজে বিশৃঙ্খলা তৈরি হচ্ছে।
প্রশাসনের মাদকবিরোধী সভা-সেমিনার, বিজিবি ও পুলিশের অভিযানসহ মসজিদভিত্তিক জনসচেতনতা কার্যক্রম গ্রহণের পরও প্রতিদিন বাড়ছে মাদকাসক্তের সংখ্যা। মাদকের নীল ছোবলে একেকটি পরিবার ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে যুবসমাজের সম্ভাবনাময় শক্তি। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদেস্যরা প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থানে মাদকবিরোধী অভিযান চালিয়ে, ইয়াবা, ফেনসিডিলসহ নানা ধরনের মাদক উদ্ধার করেছে।
বাংলাদেশে ইয়াবা আসে মূলত মায়ানমার থেকে। সূত্র থেকে জানা যায়, এ ইয়াবা চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত রয়েছে বাংলাদেশে বসবাসকারী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মায়ানমারের সীমান্তবর্তী এলাকায় অর্ধশতাধিক ইয়াবা তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে। এগুলোর প্রধান লক্ষ্যই হচ্ছে বাংলাদেশে ইয়াবা পাচার করা। আর একে ঘিরে টেকনাফ, কক্সবাজার ও বান্দরবন সীমান্তবর্তী এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে অনেক চোরাচালান চক্রের। চোরাচালান চক্রের মাধ্যমেই ইয়াবা ছড়িয়ে পড়ছে গোটা দেশে।
প্রতিদিন লাখ লাখ কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী ইয়াবার নর্বনাশা নেশায় বুঁদ হয়ে নিজের জীবন বিপন্ন করছে, পরিবার ও সমাজের জন্য ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ইয়াবা, ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকের নেশার টাকা জোগার করতে গিয়ে নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে কিশোর ও তরুণরা। এভাবেই মাদকের নীল ছোবলে সমাজে অপরাধের মাত্রাও বেড়ে চলছে, যা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।
যুবসমাজের বিশাল অংশ যখন মাদকের করাল গ্রাসে নিমজ্জিত হয়ে পড়ছে, তখন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের একশ্রেণীর নেতারা মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এমনকি পুলিশের একশ্রেণীর কর্মকর্তাও মাদক ব্যবসায়ী চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে বলে সংবাদ মাধ্যমগুলোতে খবর প্রকাশিত হচ্ছে। সন্ত্রসী-চাঁদাবাজরা কালোটাকার উৎস হিসেবে যেমন মাদকের ব্যবসাকে বেছে নিচ্ছে, তেমনি বেআইনিভাবে অর্জিত অর্থের একটি অংশ মাদকের পেছনে ব্যয়ও হচ্ছে।
মাদকের সহজলভ্যতা যে কোন উপায়েই হোক রোধ করতে হবে। মাদকের সহজলভ্যতা রোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া অপরাধী যেই হোক তার শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। বিভিন্ন সময়ে মাদক চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত চুনোপুঁটিরা গ্রেফতার হলেও রাঘববোয়াল প্রায়শই থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। মাদক ব্যবসার সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক না কেন তাদের যেন বিন্দুমাত্র ছাড় না দেয়া হয়- এটাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি সাধারণ জনগণের প্রত্যাশা। পাশাপাশি মাদকের বিস্তার রোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান যেন অব্যাহত থাকে।
মাদক ও ইয়াবা চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত চক্রের অনেক সদেস্যকে ইতিপূর্বে বিভিন্ন সময়ে আটকও করা হয়েছে। কিন্তু ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মুনাফাবাজি ও নিয়ন্ত্রণের কারণেই বন্ধ করা যাচ্ছে না ইয়াবা ব্যবসা- এমনটাই ধারনা করছেন সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকরা। নেপথ্যের গডফাদাররা সব সময়ই ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। সীমান্তের মাদক চোরাচালান রুটগুলোতে বিজিবি, কোস্টগার্ড ও পুলিশের কড়া নজরদারির পাশাপাশি ইয়াবা চোরাচালানের মূলহোতাদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা না করতে পারলে দেশ ও সমাজকে মাদকের ভয়ানক ছোবল থেকে রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। মাদক ব্যবসা ও এর বিস্তার রোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জিরো টলারেন্স গ্রহণ করতে হবে। তবে শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। পাশাপাশি ব্যাপক জনসচেতনতা ও মাদকবিরোধী সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে দেশের যুবসমাজকে রক্ষার উদ্যোগ নিতে হবে। অন্যথায় পুরো সমাজ ব্যবস্থাই বিশৃঙ্খল ও অনিরাপদ হয়ে উঠতে পারে।
[লেখক : কলাম লেখক ও সাংবাদিক]
likhonalife@gmail.com
দৈনিক সংবাদ : ১৩ এপ্রিল ২০১৯, শনিবার, ৭ এর পাতায় প্রকাশিত