alt

মুক্ত আলোচনা

চুকনগর গণহত্যা দিবস : গণহত্যার সাক্ষ্য বহন করে চলেছে চুকনগরের মাটি

মো. মুজিবুর রহমান

: সোমবার, ২০ মে ২০১৯

২৬ মার্চ ১৯৭১ সালে বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন স্বাধীনতা ঘোষণা করেন, তখনও ঢাকাসহ কয়েকটি জেলাতে গণহত্যা চলছিল। অন্যদিকে শুরু হয় বাঙালির প্রতিরোধ। এভাবেই মুক্তিযুদ্ধের সূত্রপাত। বর্তমানে গণহত্যা আন্তর্জাতিক অপরাধ হিসেবে স্বীকৃত। এ মানবতাবিরোধী অপরাধের কোনো ক্ষমা নেই। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে এত ব্যাপক ও নৃশংসতম গণহত্যা আর ঘটেনি। যা ঘটেছিল একাত্তরে আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশে। এ গণহত্যা বর্বর পাকিস্তানি বাহিনীর দ্বারা পরিচালিত ছিল। গণহত্যা ছিল অত্যন্ত পরিকল্পিত ও নীল নকশা অনুযায়ী। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন নৃশংসতম গণহত্যা কোনো একটি দেশের জন্য নয়, এটা ছিল বিশ্ব মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। বাংলাদেশে গণহত্যা শুরু হয় ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চে এবং এ গণহত্যা দেশের সর্বত্র চলেছে মুক্তিযুদ্ধের পুরো নয়টি মাস। পাকিস্তানি বাহিনী কর্তৃক পরিচালিত প্রতিটি গণহত্যার লক্ষ্য ছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে দমন করা, জাতি হিসেবে বাঙালিকে ধ্বংস করা। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন নয় মাস পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর, আলশামস ও শান্তি (পিস) কমিটির লোকেরা গণহত্যা চালায়। বাংলার মাটিতে এ অপরাধের বিচারকার্য চলছে এবং ইতোমধ্যে বিচারের বেশ কয়েকটি রায়ও কার্যকর হয়েছে।

আজ ২০ মে ২০১৯, সোমবার। চুকনগর গণহত্যা দিবস। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন এই দিনে খুলনা জেলার পশ্চিম সীমান্তে অবস্থিত চুকনগরে ঘটে যায় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটি নৃশংসতম গণহত্যা। মুক্তিযুদ্ধের বেদনাদায়ক গণহত্যার স্মৃতিবিজড়িত স্থান হয়ে রয়েছে চুকনগর। চুকনগর খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার অন্তর্গত। এই উপজেলার আটলিয়া ইউনিয়নে চুকনগর অবস্থিত।

খুলনা জেলার ডুমুরিয়া থানার অন্তর্গত চুকনগর একটি ছোট্ট ব্যবসাকেন্দ্রিক এলাকা তথা বাজার। বস্তুত ভদ্রা, কাজীবাছা, খড়িয়া, ঘ্যাংরাইল প্রভূতি নদী ও শাকা নদী পথে এবং কাঁচা রাস্তায় দাকোপ, বটিয়াঘাটা, রামপাল, তেরখাদা ও ফকিরহাঠ থেকে খুলনা - ডুমুরিয়া হয়ে চুকনগর ছিল সে সময়কার বিবেচনায় ভারতমুখী সর্বাধিক নিরাপদ পথ। অসংখ্য নদী দ্বারা বিচ্ছিন্ন ও সংকীর্ণ কাঁচা মাটির ওই পথে পাকিস্তানি বাহিনীর চলাচল সম্ভব ছিল না। ফলে লোকজন ওই পথ বেছে নেয়। পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে নদীপথে সহজেই শরণার্থীরা চুকনগওে পৌঁছে যেত। অন্যদিকে এলাকাটি সীমান্তের কাছাকাছি হওয়ায় ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যস্ততা লেগেই থাকত। এছাড়া এলাকাটি ছিল কর্মমুখর। চুকনগর খুলনা শহর থেকে ৩২ কি.মি. পশ্চিমে ভদ্রা নদীর তীরে অবস্থিত। ১৯৭১ সালের এ দিনটিতে চুকনগরে স্থানীয় রাজাকার ও শান্তি কমিটির সহায়তায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আক্রমণ চালায়। তারা নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে হাজার হাজার নারী-পুরুষ-শিশু হত্যা করে। বাড়িতে অগ্নিসংযোগ এবং লুটতরাজ চালানো হয়।

বাঙালি জাতিসত্তাকে ধ্বংস করার জন্য গণহত্যা শুরু হয় ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চে আর এ গণহত্যা দেশের সর্বত্র চলেছে মুক্তিযুদ্ধের পুরো নয়টি মাস। বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন স্বাধীনতা ঘোষণা করেন, তখনো ঢাকাসহ কয়েকটি জেলাতে গণহত্যা চলছিল। পাকিস্তানি বাহিনী সারা দেশে গণহত্যা শুরু করলে তার প্রভাব এসে পড়ে খুলনাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায়। দেশের গণহত্যার জঘন্য নজির স্থাপিত হয় একাত্তরের মে মাসের ২০ তারিখে চুকনগরে। কেউ কিছু অনুধাবন করার আগেই গর্জে ওঠে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অস্ত্র। গুলি আর গুলি। বৃষ্টির মতো। পাখির মতো মরতে থাকে মানুষ। দুই থেকে তিন ঘণ্টা স্থায়ী হয় পাকিস্তানি বাহিনীর তান্ডবলীলা। পাশে ভদ্রা নদী। লাশে ভরপুর। শহীদদের তাজা রক্তে লাল হয়ে যায় এ নদীর পানি।

ভারতে পাড়ি দেয়ার জন্য খুলনা, যশোর, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, বরিশাল, গোপালগঞ্জ থেকে হাজার হাজার বাঙালি নৌপথে ও হেঁটে আসতে থাকে চুকনগরে। এ আসা নিত্যদিনের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। ইতোমধ্যে অনেক বাঙালি সীমান্তের ওপার ভারতে চলে গেছেন। ২০ মে ১৯৭১। চুকনগরে বিভিন্ন জেলা থেকে আগত বাঙালিরা অপেক্ষা করতে থাকে। প্রতিদিনের মতো আগের দিন চুকনগরে আগত বাঙলিরা আশ্রয় গ্রহণ করে ওই এলাকার স্কুল ঘরে, বাজারে, পাশে পাতোখোলা বিলের ধারসহ বিভিন্ন স্থানে। এই পলায়ন শুধু জীবন বাঁচানোর জন্যই নয়। অনেকের লক্ষ্য ভারতে গিয়ে স্বদেশ ভূমিকে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনী থেকে মুক্ত করার জন্য মুক্তিযুদ্ধে অংশ্রগহণের জন্য প্রশিক্ষণ গ্রহণ। ২০ মে সকাল বেলায় ভারতের উদ্দেশে রওনা হওয়ার প্রস্ততি চলছে। এর মধ্যে সকাল ১০টার দিকে সাতক্ষীরা থেকে পাকিস্তানি বাহিনীর দুই/তিনটি গাড়ি এসে থামে পোতোখোলা বিলের পাশে। স্থানীয় রাজাকার, আলবদর ও অবাঙালির (বিহারি) সহায়তায় পাকিস্তানি বাহিনী শুরু করে হত্যাযজ্ঞ। পাকিস্তানি বাহিনী সৈন্যের সংখ্যা খুব বেশি ছিল না। সম্ভাবত এক প্লাটুন। ট্রাক থেকে নেমে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকে। কয়েক মিনিটের মধ্যে একটি কর্মমুখর ও ব্যস্ত এলাকা পরিণত হয় মৃত্যুপুরীতে। শুধু মৃত মানুষের স্তূপ। ওই দিন যাদের হত্যা করা হয়েছে, তাদের বেশির ভাগ পুরুষ হলেও অনেক নারী ও শিশুকে হত্যা করেছিল বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী । অনেক শিশু মায়ের কোলে দুধ খাচ্ছিল, সে অবস্থায়ই চলে ঘাতকের বুলেট। এতে মায়ের বুকে বিদ্ধ হয়ে শহীদ হয়েছেন মা, কিন্তু অবুঝ শিশু তখনও মায়ের স্তন মুখের মধ্যে রেখে ক্ষুধা নিবারণের আপ্রাণ চেষ্টা করেছে। এমনই কত ঘটনা যে সেদিন ঘটেছিল, তার সঠিক ধারণা পাওয়া আজ কঠিন। আবার মৃত শিশু মৃত মায়ের কোলে, বাবার কোলে। স্ত্রী তার স্বামীর কোলে- এ রকম চিত্র সেদিনের হত্যাযজ্ঞে, দেখতে পাওয়া যায়। হত্যাযজ্ঞ থেকে বাঁচার আশায় অনেকে নদীতে লাফিয়ে পড়েন। তাদের অনেকেই ডুবে মারা যান। লাশের গন্ধে ভারি হয়ে যায় চুকনগর ও তার আশপাশের বাতাস। এ রকম অনেক তথ্য পাওয়া যায় সেদিনের প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণীতে। এ রকম বিবরণী জানার জন্য আমরা তিনজন গিয়েছিলাম চুকনগর এলাকায়, তারিখটা ছিল ৪ আগস্ট ২০১৭। আমার সঙ্গে ছিল আমার এক সহকর্মী ও আমার প্রাক্তন এক ছাত্র। সেই ছাত্রের গাড়িটি নিজে চালিয়ে নিয়ে যায় খুলনার চুকনগরের গণহত্যার জায়গায়। ১৯৭১ সালের ২০ মের গণহত্যা থেকে বেঁচে যাওয়া প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা থেকে বর্বরোচিত গণহত্যার নানা অজানা ঘটনা উঠে এসেছে। যতদূর জানা যায় সেদিন প্রথম শহীদ হয়েছিল চিকন আলী মোড়ল। তাকে ব্রাশ ফায়ারে ঝাঁজরা করে দেয় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। তারই অল্প দূরত্বে দাঁড়িয়েছিল তার ছেলে এরশাদ আলী মোড়ল। সেই এরশাদ আলী মোড়ল আজ অনেককিছুরই সাক্ষী।

প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে জানা যায় যে ১৯৭১ সালের ২০ মে সকাল ১০টা নাগাদ থেকে শুরু করে বিকেল ৩টা চুকনগরে হত্যাকান্ড ঘটে। মাঠে, ক্ষেতে, খালে, বিলে পড়ে থাকে লাশ আর লাশ। অনেকের জবানে জানা যায়, চুকনগরের ফসলি জমিগুলোয় আজও পাওয়া যায় সেদিনের শহীদদের হাড়গোড়, তাদের শরীরে থাকা বিভিন্ন অলঙ্কার। শহীদদের স্বর্ণালঙ্কার এখনও চুকনগরের মাটিতে মিশে যায়নি। চুকনগরে সেদিন কত লোক জমায়েত হয়েছিলেন তার নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান দিতে পারেনি কেউ। ধারণা করে অনেকে অনেক সংখ্যা বলেছেন আমাদের কাছে। এও জানতে পারি যে এ গণহত্যার পাশাপাশি বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী যুবতী নারীদের ধর্ষণ করেছিল। অনেক বাঙালিকে নিকটবর্তী পাকিস্তানি বাহিনীর ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন করে হত্যা করেছিল। আবার যারা আহত হয়েছিল তাদের বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। কত কথা শুনতে পেরেছিলাম ভদ্রা নদীর আশপাশের লোকজনের মুখ থেকে।

কথার ছলে স্থানীয়দের কাছ থেকে আরও জানা যায়, ভদ্রা নদীতে লাশ ফেলার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল স্থানীয় প্রায় ২৫ জনকে। প্রতি লাশের জন্য ৫০ পয়সা প্রদান করা হবে- এ ধরনের ঘোষণা দেয়া হয়। লাশের গায়ে যেসব সোনা-গয়না ও নগদ অর্থ যা পেয়েছে তার কারণে গুনে গুনে লাশ ফেলানোর গুরুত্ব হারিয়ে ফেলে লাশ ফেলায় নিয়োজিত ব্যক্তিরা। এ ব্যক্তিবর্গের মধ্যে এখনও জীবিত রয়েছে কেউ কেউ। তাদের মতে যতগুলো লাশ প্রথমদিকে গুনে রাখা হয়েছিল তার চেয়ে বেশি লাশ ভদ্রা নদীতে ফেলা হয়। বর্বর হানাদার বাহিনী চুকনগর থেকে চলে যাওয়ার পর সেখানে ছিল চিল-শকুনের দল। সেদিন এক লাশের ওপর মায়ের দুধ পান করছিল ৬ মাসের এক শিশুকে উদ্ধার করে কালীগড় এলাকার এক অধিবাসীর কাছে লালন পালন করার জন্য দেয়া হয়েছিল। সেই শিশুটির নাম রাখা হয়েছিল সুন্দরী দাসী। কেমন আছেন সেই সুন্দরী দাসী? তার সদুত্তর পাওয়া যায়নি। তবে জানা গেছে অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় তার স্বামী মারা গেছেন। চুকনগরে গণহত্যায় কত বাঙালি শহীদ হয়েছিল তার প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব রয়েছে। সঠিক সংখ্যা নিরূপণ করা না গেলেও চুকনগরে ১০ থেকে ১২ হাজার মানুষ গণহত্যার শিকার হয়েছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা থেকে ধারণা করা যায়।

সেদিনের শহীদদের উদ্দেশ্যে একটি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করা হয়েছে যা চুকনগর শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ নামে পরিচিত। গত বছর চুকনগরে গিয়ে আমরা খুব কাছ অনুভব করলাম পাকিস্তানি বাহিনী একাত্তরে যে নৃশংসতার পরিচয় দিয়েছে, বাঙালিদের যেভাবে হত্যা, পীড়ন ও দেশান্তরি করেছে- এসব বিবরণের স্বার্থে চুকনগরে গড়ে তোলা দরকার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক কমপ্লেক্স বা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক জাদুঘর। স্বীকৃতি দেয়া উচিত সেদিনের শহীদদের সন্তানদের। মনে রাখা উচিত সেদিনের গণহত্যার সাক্ষ্য বহন করে চলেছে চুকনগরের মাটি। সে সঙ্গে আমরা কী সেই রক্তনদীর উপখ্যানকে ভুলে যাব? জবাবটা অবশ্যই হবে- না। দৃঢ়তার সঙ্গে উচ্চারণ করি বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে গণহত্যার বিষয়ে সচেতন করে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণ করতে হবে। সেই সঙ্গে এ গণহত্যা বিষয়ে তাদেরকে বিস্তারিত জানাতে হবে। মনে রাখা উচিত সেদিনের গণহত্যার শিকার মানুষদের প্রতি আমাদের রয়েছে দায়বদ্ধতা। এই দায়মোচনের সার্বিক বিচার বিশ্লেষণ এখন জরুরি। ১১ মার্চ ২০১৭ জাতীয় সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে ২৫ মার্চ জাতীয় গণহত্যা দিবস ঘোষিত হয়। এটা এক ঐতিহাসিক ক্ষণ হিসেবে গণ্য হওয়ার দাবি রাখে। এবারও তৃতীয় বারের মতো সারাদেশে ২৫ মার্চ জাতীয় গণহত্যা দিবস পালিত হয়। ইচ্ছাকৃতভাবে নির্বিচারে মানুষ হত্যাই গণহত্যা নামে পরিচিত। জাতীয় গণহত্যা দিবসে বেশি বেশি করে জানান দিতে চাই আমরা পাকিস্তানি বাহিনী দ্বারা পরিচালিত গণহত্যা ভুলি নি। ভুলবো না। পাশাপাশি চুকনগর গণহত্যা দিবসকে শুধু স্মরণসভার মধ্যে সীমিত না রেখে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বর্বরতম গণহত্যার বিষয়ে সচেতন করে তোলা খুবই দরকার। এজন্য জবাবদিহিতার কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে আমাদের সবকে। সেইসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণ করতে হবে- তা হতে হবে সারা দেশের। আর জানান দিতে হবে স্বাধীনতা নামে শব্দটি অর্জনে বাঙালি জাতির বিপুল আত্মত্যাগ ও দুঃখভোগ মিশে আছে।

[লেখক : সংগঠক, মুজিব আদর্শ কেন্দ্র, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক এবং গাজীপুরের ডিজিটাল জাদুঘর আর্কাইভস ৭১-এর প্রতিষ্ঠাতা]

muktibang@gmail.com

দৈনিক সংবাদ : ২০ মে ২০১৯, সোমবার, ৭ এর পাতায় প্রকাশিত

মুজিবনগরে স্বাধীনতার সূর্যোদয়

বঙ্গাব্দ প্রচলনের ইতিকথা

পহেলা বৈশাখ বাঙালির প্রাণের উৎসব

কেউতো অপেক্ষায় নেই

ফরগেট মি নট

ছবি

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ সমার্থক

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বীমা শিল্পের গুরুত্ব

একুশে ফেব্রুয়ারি আত্মপরিচয়ের দিন

দিদি, আপা, “বু” খালা

হিজল-করচ-আড়াংবন

ছবি

শেখ হাসিনা, এক উৎসারিত আলোকধারা

মনমাঝি

সেই ইটনা

ছবি

আংকর ওয়াট : উন্নত সভ্যতার স্মৃতিচিহ্ন যেখানে

নিয়ত ও নিয়তি

হারিয়ে যাওয়া ট্রেন

টম সয়ার না রবিনহুড

ছবি

‘ঝড়-বৃষ্টি আঁধার রাতে, আমরা আছি তোমার সাথে’

বাংলাদেশ-জাপান সহযোগিতা স্মারক: স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অনন্য মাইলফলক

রাষ্ট্রের কূটনৈতিক মিশনের পরিবর্তন আশু প্রয়োজন

কুয়েতের জীবনযাত্রার সাতকাহন: পর্ব-১-বিয়ে

বিবেকের লড়াই

ছবি

ছবি যেন শুধু ছবি নয়

বাত ব্যথার কারণ ও আধুনিক চিকিৎসা

ছবি

স্বাধীন স্বদেশে মুক্ত বঙ্গবন্ধু

ছবি

মহান নেতার স্বভূমিতে ফিরে আসা

ছবি

মেট্রোরেল : প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী চিন্তার ফসল

ছবি

আমার মা

ডিজিটাল বাংলাদেশ: প্রগতিশীল প্রযুক্তি, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নতি

ছবি

৩ নভেম্বর: ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ডের ধারাবাহিকতা

দেশের ইতিহাসে কলঙ্কজনক দ্বিতীয় অধ্যায়

এইচ এস সি ও সমমান পরীক্ষার্থীদের অনুশীলন

ছবি

ত্রিশ বছর পূর্তিতে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়

শিল্প কারখানার পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনায় এনভায়রনমেন্টাল ইন্জিনিয়ারিং

অসুর: এক পরাজিত বিপ্লবী

অসুর জাতির ইতিহাস

tab

মুক্ত আলোচনা

চুকনগর গণহত্যা দিবস : গণহত্যার সাক্ষ্য বহন করে চলেছে চুকনগরের মাটি

মো. মুজিবুর রহমান

সোমবার, ২০ মে ২০১৯

২৬ মার্চ ১৯৭১ সালে বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন স্বাধীনতা ঘোষণা করেন, তখনও ঢাকাসহ কয়েকটি জেলাতে গণহত্যা চলছিল। অন্যদিকে শুরু হয় বাঙালির প্রতিরোধ। এভাবেই মুক্তিযুদ্ধের সূত্রপাত। বর্তমানে গণহত্যা আন্তর্জাতিক অপরাধ হিসেবে স্বীকৃত। এ মানবতাবিরোধী অপরাধের কোনো ক্ষমা নেই। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে এত ব্যাপক ও নৃশংসতম গণহত্যা আর ঘটেনি। যা ঘটেছিল একাত্তরে আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশে। এ গণহত্যা বর্বর পাকিস্তানি বাহিনীর দ্বারা পরিচালিত ছিল। গণহত্যা ছিল অত্যন্ত পরিকল্পিত ও নীল নকশা অনুযায়ী। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন নৃশংসতম গণহত্যা কোনো একটি দেশের জন্য নয়, এটা ছিল বিশ্ব মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। বাংলাদেশে গণহত্যা শুরু হয় ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চে এবং এ গণহত্যা দেশের সর্বত্র চলেছে মুক্তিযুদ্ধের পুরো নয়টি মাস। পাকিস্তানি বাহিনী কর্তৃক পরিচালিত প্রতিটি গণহত্যার লক্ষ্য ছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে দমন করা, জাতি হিসেবে বাঙালিকে ধ্বংস করা। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন নয় মাস পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর, আলশামস ও শান্তি (পিস) কমিটির লোকেরা গণহত্যা চালায়। বাংলার মাটিতে এ অপরাধের বিচারকার্য চলছে এবং ইতোমধ্যে বিচারের বেশ কয়েকটি রায়ও কার্যকর হয়েছে।

আজ ২০ মে ২০১৯, সোমবার। চুকনগর গণহত্যা দিবস। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন এই দিনে খুলনা জেলার পশ্চিম সীমান্তে অবস্থিত চুকনগরে ঘটে যায় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটি নৃশংসতম গণহত্যা। মুক্তিযুদ্ধের বেদনাদায়ক গণহত্যার স্মৃতিবিজড়িত স্থান হয়ে রয়েছে চুকনগর। চুকনগর খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার অন্তর্গত। এই উপজেলার আটলিয়া ইউনিয়নে চুকনগর অবস্থিত।

খুলনা জেলার ডুমুরিয়া থানার অন্তর্গত চুকনগর একটি ছোট্ট ব্যবসাকেন্দ্রিক এলাকা তথা বাজার। বস্তুত ভদ্রা, কাজীবাছা, খড়িয়া, ঘ্যাংরাইল প্রভূতি নদী ও শাকা নদী পথে এবং কাঁচা রাস্তায় দাকোপ, বটিয়াঘাটা, রামপাল, তেরখাদা ও ফকিরহাঠ থেকে খুলনা - ডুমুরিয়া হয়ে চুকনগর ছিল সে সময়কার বিবেচনায় ভারতমুখী সর্বাধিক নিরাপদ পথ। অসংখ্য নদী দ্বারা বিচ্ছিন্ন ও সংকীর্ণ কাঁচা মাটির ওই পথে পাকিস্তানি বাহিনীর চলাচল সম্ভব ছিল না। ফলে লোকজন ওই পথ বেছে নেয়। পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে নদীপথে সহজেই শরণার্থীরা চুকনগওে পৌঁছে যেত। অন্যদিকে এলাকাটি সীমান্তের কাছাকাছি হওয়ায় ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যস্ততা লেগেই থাকত। এছাড়া এলাকাটি ছিল কর্মমুখর। চুকনগর খুলনা শহর থেকে ৩২ কি.মি. পশ্চিমে ভদ্রা নদীর তীরে অবস্থিত। ১৯৭১ সালের এ দিনটিতে চুকনগরে স্থানীয় রাজাকার ও শান্তি কমিটির সহায়তায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আক্রমণ চালায়। তারা নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে হাজার হাজার নারী-পুরুষ-শিশু হত্যা করে। বাড়িতে অগ্নিসংযোগ এবং লুটতরাজ চালানো হয়।

বাঙালি জাতিসত্তাকে ধ্বংস করার জন্য গণহত্যা শুরু হয় ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চে আর এ গণহত্যা দেশের সর্বত্র চলেছে মুক্তিযুদ্ধের পুরো নয়টি মাস। বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন স্বাধীনতা ঘোষণা করেন, তখনো ঢাকাসহ কয়েকটি জেলাতে গণহত্যা চলছিল। পাকিস্তানি বাহিনী সারা দেশে গণহত্যা শুরু করলে তার প্রভাব এসে পড়ে খুলনাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায়। দেশের গণহত্যার জঘন্য নজির স্থাপিত হয় একাত্তরের মে মাসের ২০ তারিখে চুকনগরে। কেউ কিছু অনুধাবন করার আগেই গর্জে ওঠে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অস্ত্র। গুলি আর গুলি। বৃষ্টির মতো। পাখির মতো মরতে থাকে মানুষ। দুই থেকে তিন ঘণ্টা স্থায়ী হয় পাকিস্তানি বাহিনীর তান্ডবলীলা। পাশে ভদ্রা নদী। লাশে ভরপুর। শহীদদের তাজা রক্তে লাল হয়ে যায় এ নদীর পানি।

ভারতে পাড়ি দেয়ার জন্য খুলনা, যশোর, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, বরিশাল, গোপালগঞ্জ থেকে হাজার হাজার বাঙালি নৌপথে ও হেঁটে আসতে থাকে চুকনগরে। এ আসা নিত্যদিনের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। ইতোমধ্যে অনেক বাঙালি সীমান্তের ওপার ভারতে চলে গেছেন। ২০ মে ১৯৭১। চুকনগরে বিভিন্ন জেলা থেকে আগত বাঙালিরা অপেক্ষা করতে থাকে। প্রতিদিনের মতো আগের দিন চুকনগরে আগত বাঙলিরা আশ্রয় গ্রহণ করে ওই এলাকার স্কুল ঘরে, বাজারে, পাশে পাতোখোলা বিলের ধারসহ বিভিন্ন স্থানে। এই পলায়ন শুধু জীবন বাঁচানোর জন্যই নয়। অনেকের লক্ষ্য ভারতে গিয়ে স্বদেশ ভূমিকে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনী থেকে মুক্ত করার জন্য মুক্তিযুদ্ধে অংশ্রগহণের জন্য প্রশিক্ষণ গ্রহণ। ২০ মে সকাল বেলায় ভারতের উদ্দেশে রওনা হওয়ার প্রস্ততি চলছে। এর মধ্যে সকাল ১০টার দিকে সাতক্ষীরা থেকে পাকিস্তানি বাহিনীর দুই/তিনটি গাড়ি এসে থামে পোতোখোলা বিলের পাশে। স্থানীয় রাজাকার, আলবদর ও অবাঙালির (বিহারি) সহায়তায় পাকিস্তানি বাহিনী শুরু করে হত্যাযজ্ঞ। পাকিস্তানি বাহিনী সৈন্যের সংখ্যা খুব বেশি ছিল না। সম্ভাবত এক প্লাটুন। ট্রাক থেকে নেমে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকে। কয়েক মিনিটের মধ্যে একটি কর্মমুখর ও ব্যস্ত এলাকা পরিণত হয় মৃত্যুপুরীতে। শুধু মৃত মানুষের স্তূপ। ওই দিন যাদের হত্যা করা হয়েছে, তাদের বেশির ভাগ পুরুষ হলেও অনেক নারী ও শিশুকে হত্যা করেছিল বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী । অনেক শিশু মায়ের কোলে দুধ খাচ্ছিল, সে অবস্থায়ই চলে ঘাতকের বুলেট। এতে মায়ের বুকে বিদ্ধ হয়ে শহীদ হয়েছেন মা, কিন্তু অবুঝ শিশু তখনও মায়ের স্তন মুখের মধ্যে রেখে ক্ষুধা নিবারণের আপ্রাণ চেষ্টা করেছে। এমনই কত ঘটনা যে সেদিন ঘটেছিল, তার সঠিক ধারণা পাওয়া আজ কঠিন। আবার মৃত শিশু মৃত মায়ের কোলে, বাবার কোলে। স্ত্রী তার স্বামীর কোলে- এ রকম চিত্র সেদিনের হত্যাযজ্ঞে, দেখতে পাওয়া যায়। হত্যাযজ্ঞ থেকে বাঁচার আশায় অনেকে নদীতে লাফিয়ে পড়েন। তাদের অনেকেই ডুবে মারা যান। লাশের গন্ধে ভারি হয়ে যায় চুকনগর ও তার আশপাশের বাতাস। এ রকম অনেক তথ্য পাওয়া যায় সেদিনের প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণীতে। এ রকম বিবরণী জানার জন্য আমরা তিনজন গিয়েছিলাম চুকনগর এলাকায়, তারিখটা ছিল ৪ আগস্ট ২০১৭। আমার সঙ্গে ছিল আমার এক সহকর্মী ও আমার প্রাক্তন এক ছাত্র। সেই ছাত্রের গাড়িটি নিজে চালিয়ে নিয়ে যায় খুলনার চুকনগরের গণহত্যার জায়গায়। ১৯৭১ সালের ২০ মের গণহত্যা থেকে বেঁচে যাওয়া প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা থেকে বর্বরোচিত গণহত্যার নানা অজানা ঘটনা উঠে এসেছে। যতদূর জানা যায় সেদিন প্রথম শহীদ হয়েছিল চিকন আলী মোড়ল। তাকে ব্রাশ ফায়ারে ঝাঁজরা করে দেয় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। তারই অল্প দূরত্বে দাঁড়িয়েছিল তার ছেলে এরশাদ আলী মোড়ল। সেই এরশাদ আলী মোড়ল আজ অনেককিছুরই সাক্ষী।

প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে জানা যায় যে ১৯৭১ সালের ২০ মে সকাল ১০টা নাগাদ থেকে শুরু করে বিকেল ৩টা চুকনগরে হত্যাকান্ড ঘটে। মাঠে, ক্ষেতে, খালে, বিলে পড়ে থাকে লাশ আর লাশ। অনেকের জবানে জানা যায়, চুকনগরের ফসলি জমিগুলোয় আজও পাওয়া যায় সেদিনের শহীদদের হাড়গোড়, তাদের শরীরে থাকা বিভিন্ন অলঙ্কার। শহীদদের স্বর্ণালঙ্কার এখনও চুকনগরের মাটিতে মিশে যায়নি। চুকনগরে সেদিন কত লোক জমায়েত হয়েছিলেন তার নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান দিতে পারেনি কেউ। ধারণা করে অনেকে অনেক সংখ্যা বলেছেন আমাদের কাছে। এও জানতে পারি যে এ গণহত্যার পাশাপাশি বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী যুবতী নারীদের ধর্ষণ করেছিল। অনেক বাঙালিকে নিকটবর্তী পাকিস্তানি বাহিনীর ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন করে হত্যা করেছিল। আবার যারা আহত হয়েছিল তাদের বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। কত কথা শুনতে পেরেছিলাম ভদ্রা নদীর আশপাশের লোকজনের মুখ থেকে।

কথার ছলে স্থানীয়দের কাছ থেকে আরও জানা যায়, ভদ্রা নদীতে লাশ ফেলার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল স্থানীয় প্রায় ২৫ জনকে। প্রতি লাশের জন্য ৫০ পয়সা প্রদান করা হবে- এ ধরনের ঘোষণা দেয়া হয়। লাশের গায়ে যেসব সোনা-গয়না ও নগদ অর্থ যা পেয়েছে তার কারণে গুনে গুনে লাশ ফেলানোর গুরুত্ব হারিয়ে ফেলে লাশ ফেলায় নিয়োজিত ব্যক্তিরা। এ ব্যক্তিবর্গের মধ্যে এখনও জীবিত রয়েছে কেউ কেউ। তাদের মতে যতগুলো লাশ প্রথমদিকে গুনে রাখা হয়েছিল তার চেয়ে বেশি লাশ ভদ্রা নদীতে ফেলা হয়। বর্বর হানাদার বাহিনী চুকনগর থেকে চলে যাওয়ার পর সেখানে ছিল চিল-শকুনের দল। সেদিন এক লাশের ওপর মায়ের দুধ পান করছিল ৬ মাসের এক শিশুকে উদ্ধার করে কালীগড় এলাকার এক অধিবাসীর কাছে লালন পালন করার জন্য দেয়া হয়েছিল। সেই শিশুটির নাম রাখা হয়েছিল সুন্দরী দাসী। কেমন আছেন সেই সুন্দরী দাসী? তার সদুত্তর পাওয়া যায়নি। তবে জানা গেছে অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় তার স্বামী মারা গেছেন। চুকনগরে গণহত্যায় কত বাঙালি শহীদ হয়েছিল তার প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব রয়েছে। সঠিক সংখ্যা নিরূপণ করা না গেলেও চুকনগরে ১০ থেকে ১২ হাজার মানুষ গণহত্যার শিকার হয়েছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা থেকে ধারণা করা যায়।

সেদিনের শহীদদের উদ্দেশ্যে একটি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করা হয়েছে যা চুকনগর শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ নামে পরিচিত। গত বছর চুকনগরে গিয়ে আমরা খুব কাছ অনুভব করলাম পাকিস্তানি বাহিনী একাত্তরে যে নৃশংসতার পরিচয় দিয়েছে, বাঙালিদের যেভাবে হত্যা, পীড়ন ও দেশান্তরি করেছে- এসব বিবরণের স্বার্থে চুকনগরে গড়ে তোলা দরকার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক কমপ্লেক্স বা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক জাদুঘর। স্বীকৃতি দেয়া উচিত সেদিনের শহীদদের সন্তানদের। মনে রাখা উচিত সেদিনের গণহত্যার সাক্ষ্য বহন করে চলেছে চুকনগরের মাটি। সে সঙ্গে আমরা কী সেই রক্তনদীর উপখ্যানকে ভুলে যাব? জবাবটা অবশ্যই হবে- না। দৃঢ়তার সঙ্গে উচ্চারণ করি বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে গণহত্যার বিষয়ে সচেতন করে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণ করতে হবে। সেই সঙ্গে এ গণহত্যা বিষয়ে তাদেরকে বিস্তারিত জানাতে হবে। মনে রাখা উচিত সেদিনের গণহত্যার শিকার মানুষদের প্রতি আমাদের রয়েছে দায়বদ্ধতা। এই দায়মোচনের সার্বিক বিচার বিশ্লেষণ এখন জরুরি। ১১ মার্চ ২০১৭ জাতীয় সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে ২৫ মার্চ জাতীয় গণহত্যা দিবস ঘোষিত হয়। এটা এক ঐতিহাসিক ক্ষণ হিসেবে গণ্য হওয়ার দাবি রাখে। এবারও তৃতীয় বারের মতো সারাদেশে ২৫ মার্চ জাতীয় গণহত্যা দিবস পালিত হয়। ইচ্ছাকৃতভাবে নির্বিচারে মানুষ হত্যাই গণহত্যা নামে পরিচিত। জাতীয় গণহত্যা দিবসে বেশি বেশি করে জানান দিতে চাই আমরা পাকিস্তানি বাহিনী দ্বারা পরিচালিত গণহত্যা ভুলি নি। ভুলবো না। পাশাপাশি চুকনগর গণহত্যা দিবসকে শুধু স্মরণসভার মধ্যে সীমিত না রেখে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বর্বরতম গণহত্যার বিষয়ে সচেতন করে তোলা খুবই দরকার। এজন্য জবাবদিহিতার কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে আমাদের সবকে। সেইসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণ করতে হবে- তা হতে হবে সারা দেশের। আর জানান দিতে হবে স্বাধীনতা নামে শব্দটি অর্জনে বাঙালি জাতির বিপুল আত্মত্যাগ ও দুঃখভোগ মিশে আছে।

[লেখক : সংগঠক, মুজিব আদর্শ কেন্দ্র, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক এবং গাজীপুরের ডিজিটাল জাদুঘর আর্কাইভস ৭১-এর প্রতিষ্ঠাতা]

muktibang@gmail.com

দৈনিক সংবাদ : ২০ মে ২০১৯, সোমবার, ৭ এর পাতায় প্রকাশিত

back to top