alt

উপ-সম্পাদকীয়

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা

গনি মিয়া বাবুল

: মঙ্গলবার, ০৪ মে ২০২১

গণমাধ্যম গণতন্ত্রের সদা জাগ্রত প্রহরী। কোথাও মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলে, গণতন্ত্রের মর্যাদা লুণ্ঠিত হলে, কিংবা গণতন্ত্রের পবিত্রতা কোন কারণে কলুষিত হলে, গণমাধ্যমের নির্ভিক কণ্ঠ সেখানে সোচ্চার হয়ে ওঠে। গণমাধ্যম তাই জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার সংরক্ষণে সর্বদা সচেষ্ট। গণমাধ্যম জনগণকে সচেতন করতে সদা সচেষ্ট এবং জনগণ ও সরকারের মধ্যে গণমাধ্যম সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে। জনসাধারণের মতামত/চিঠিপত্র প্রভৃতি প্রকাশের মাধ্যমে জাগ্রত জনমতকে প্রতিফলিত করে সংবাদপত্র পালন করে তার পবিত্র নৈতিক দায়িত্ব। তাই বলা হয় ‘It is the Peoples Parliament always sessions’ মন্তব্যটি সর্বোতভাবে স্বার্থক। সংবাদপত্র আক্ষরিক অর্থেই সদা জাগ্রত জাতীয় সংসদ।

গণমাধ্যম একটি সমাজ বা জাতির সামগ্রিক জীবনের প্রাত্যহিক দলিল। তাই গণমাধ্যমকে অবশ্যই স্বাধীন ও নিরপেক্ষ হতে হবে। গণমাধ্যম হতে হবে জনসাধারণের স্বার্থ রক্ষার অতন্দ্র প্রহরী। জনগণের স্বার্থে গণমাধ্যম যেমন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবে, তেমনি ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠার জন্য করবে সংগ্রাম। গণমাধ্যমকে নির্ভীক ও অকপট হতে হবে। আমাদের দেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা আশানুরূপ নয়। ক্ষমতাসীন প্রতিটি সরকারই স্বীয় দলের স্বার্থে গণমাধ্যমের ওপর আধিপত্য বিস্তারের অপচেষ্টায় লিপ্ত থেকে বারবার গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করেছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার দীর্ঘ ৫০ বছরেও গণতন্ত্র ও গণমাধ্যম কোনটাই শক্তিশালী হতে পারেনি। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও মানবাধিকারকে বিপন্ন করে চলেছে। দেশের সবক্ষেত্রেই ব্যবসায়িক মানসিকতা বিদ্যমান। বেশিরভাগ গণমাধ্যম গণমানুষের মুখপত্র না হয়ে সুবিধাবাদী তল্পিবাহক, দুর্বৃত্ত রাজনৈতিক গোষ্ঠীর ক্ষমতারোহন কিংবা ক্ষমতাকে পাকাপোক্তকরণের হাতিয়ারে পরিণত হচ্ছে।

গণমাধ্যম সমাজের দর্পণ, জাতির বিবেক, জনতার কণ্ঠস্বর, রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ ইত্যাদি নানা নামে গণমাধ্যমকে অভিহিত করা হয়। কিন্তু সেই জাতির বিবেকের ওপর চলে নানা জুলুম, অন্যায়-অত্যাচার, গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর করা হয় নির্যাতন, এমনকি তাদের হত্যা করা হচ্ছে। কিন্তু খুনি ও নির্যাতনকারীরা আইনের আওতায় আসছে না, তাদের শাস্তি হচ্ছে না। এই বিষয়ে সাংবাদিক ইউনিয়ন বা সংগঠনগুলোর ঐক্য প্রয়োজন। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও পেশাগত মর্যাদার জন্য রাজনৈতিক বিশ্বাসের ঊর্ধ্বে উঠে সব সাংবাদিক সংগঠনগুলোর ঐক্যবদ্ধ হওয়া জরুরি। আইনের শাসন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সাংবাদিকদের পেশাগত ঐক্যের কোন বিকল্প নেই।

গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা অপরিহার্য। তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে সম্প্রতি জানানো হয়, তথ্য মন্ত্রণালয় সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা ও বর্তমান সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার অনুযায়ী জনগণের তথ্য অধিকার নিশ্চিতকরণ, গণমাধ্যম শিল্পের মানোন্নয়ন, সম্প্রচার ব্যবস্থার আধুনিকায়ন, জাতীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির লালন, বিকাশ ও সংরক্ষণের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।

সম্মেলনে আরও জানানো হয় যে, বর্তমান সরকার গণমাধ্যমের অবাধ স্বাধীনতায় বিশ্বাসী এবং গণমাধ্যমকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার সচেষ্ট রয়েছেন। কিন্তু সাংবাদিকগণ পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে প্রায়ই হামলা ও নানা রকম হুমকির শিকার হতে হয়। গত ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি নিজ বাসায় নৃশংসভাবে খুন হন এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন রুনি ও মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার। নিহতদ্বয় স্বামী-স্ত্রী। ছয় বছর বয়সী একমাত্র শিশু পুত্র মাহির সরোয়ার মেঘের সম্মুখে এই সাংবাদিক দম্পত্তি খুন হয়েছেন। কিন্তু আজও খুনিদের সরকার ধরতে পারেনি, কিংবা চিহ্নিত করতে পারেনি।

২০১১ সালের ২৮ জানুয়ারি পল্টনের নিজ বাসায় খুন হন জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার স্থায়ী পরিষদের সদস্য ও দৈনিক জনতার সহ-সম্পাদক ফরহাদ খাঁ ও তার স্ত্রী রহিমা খাতুন। বিগত খালেদা-নিজামীর আমলে খুন হন সাংবাদিক মানিক সাহা, হুমায়ুন কবির বালুসহ আরও অনেকে। বলা যায় যে, সব সরকারের আমলেই সাংবাদিক নির্যাতন ও খুন হয়েছে প্রায় সমানতালে। তবে দেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

[লেখক : চেয়ারম্যান, জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা, স্থায়ী পরিষদ]

ছবি

বি আর আম্বেদকর : নিম্নবর্গের মানুষের প্রতিনিধি

চেকের মামলায় আসামির মুক্তির পথ কী

রাম-নবমী : হিন্দুত্বের নয়া গবেষণাগার

‘একটি গ্রাম একটি পণ্য’ উদ্যোগ কি সফল হবে

কিশোর গ্যাং : সমস্যার মূলে যেতে হবে

গীতি চলচ্চিত্র ‘কাজল রেখা’ : সুস্থধারার চলচ্চিত্র বিকাশ ঘটুক

ছবি

ঋতুভিত্তিক চিরায়ত বাঙালি সংস্কৃতি

ছবি

স্মরণ : কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস

দাবদাহে সুস্থ থাকবেন কীভাবে

কত দিন পরে এলে, একটু শোনো

রম্যগদ্য : আনন্দ, দ্বিগুণ আনন্দ...

ছবি

ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় নাম

বৈসাবি : ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বর্ষবরণ উৎসব

‘ইন্ডিয়া আউট’ ক্যাম্পেইন

উদার-উদ্দাম বৈশাখ চাই

ঈদ নিয়ে আসুক শান্তি ও সমৃদ্ধি, বিস্তৃত হোক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ

প্রসঙ্গ: বিদেশি ঋণ

ছাত্ররাজনীতি কি খারাপ?

জাকাত : বিশ্বের প্রথম সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা

বাংলাদেশ স্কাউটস দিবস : শুরুর কথা

ছবি

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত

প্রবাসীর ঈদ-ভাবনা

বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস

ধানের ফলন বাড়াতে ক্লাইমেট স্মার্ট গুটি ইউরিয়া প্রযুক্তি

কমিশন কিংবা ভিজিটে জমি রেজিস্ট্রির আইনি বিধান ও প্রাসঙ্গিকতা

ছবি

ঈদের অর্থনীতি

পশ্চিমবঙ্গে ভোটের রাজনীতিতে ‘পোস্ট পার্টিশন সিনড্রম’

শিক্ষকের বঞ্চনা, শিক্ষকের বেদনা

নিরাপদ সড়ক কেন চাই

রম্যগদ্য : ‘প্রহরীর সাতশ কোটি টাকা...’

ছবি

অবন্তিকাদের আত্মহনন

শিক্ষাবিষয়ক ভাবনা

অপ্রয়োজনে সিজারিয়ান নয়

পণ্য রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনতে হবে

আত্মহত্যা রোধে নৈতিক শিক্ষা

tab

উপ-সম্পাদকীয়

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা

গনি মিয়া বাবুল

মঙ্গলবার, ০৪ মে ২০২১

গণমাধ্যম গণতন্ত্রের সদা জাগ্রত প্রহরী। কোথাও মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলে, গণতন্ত্রের মর্যাদা লুণ্ঠিত হলে, কিংবা গণতন্ত্রের পবিত্রতা কোন কারণে কলুষিত হলে, গণমাধ্যমের নির্ভিক কণ্ঠ সেখানে সোচ্চার হয়ে ওঠে। গণমাধ্যম তাই জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার সংরক্ষণে সর্বদা সচেষ্ট। গণমাধ্যম জনগণকে সচেতন করতে সদা সচেষ্ট এবং জনগণ ও সরকারের মধ্যে গণমাধ্যম সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে। জনসাধারণের মতামত/চিঠিপত্র প্রভৃতি প্রকাশের মাধ্যমে জাগ্রত জনমতকে প্রতিফলিত করে সংবাদপত্র পালন করে তার পবিত্র নৈতিক দায়িত্ব। তাই বলা হয় ‘It is the Peoples Parliament always sessions’ মন্তব্যটি সর্বোতভাবে স্বার্থক। সংবাদপত্র আক্ষরিক অর্থেই সদা জাগ্রত জাতীয় সংসদ।

গণমাধ্যম একটি সমাজ বা জাতির সামগ্রিক জীবনের প্রাত্যহিক দলিল। তাই গণমাধ্যমকে অবশ্যই স্বাধীন ও নিরপেক্ষ হতে হবে। গণমাধ্যম হতে হবে জনসাধারণের স্বার্থ রক্ষার অতন্দ্র প্রহরী। জনগণের স্বার্থে গণমাধ্যম যেমন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবে, তেমনি ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠার জন্য করবে সংগ্রাম। গণমাধ্যমকে নির্ভীক ও অকপট হতে হবে। আমাদের দেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা আশানুরূপ নয়। ক্ষমতাসীন প্রতিটি সরকারই স্বীয় দলের স্বার্থে গণমাধ্যমের ওপর আধিপত্য বিস্তারের অপচেষ্টায় লিপ্ত থেকে বারবার গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করেছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার দীর্ঘ ৫০ বছরেও গণতন্ত্র ও গণমাধ্যম কোনটাই শক্তিশালী হতে পারেনি। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও মানবাধিকারকে বিপন্ন করে চলেছে। দেশের সবক্ষেত্রেই ব্যবসায়িক মানসিকতা বিদ্যমান। বেশিরভাগ গণমাধ্যম গণমানুষের মুখপত্র না হয়ে সুবিধাবাদী তল্পিবাহক, দুর্বৃত্ত রাজনৈতিক গোষ্ঠীর ক্ষমতারোহন কিংবা ক্ষমতাকে পাকাপোক্তকরণের হাতিয়ারে পরিণত হচ্ছে।

গণমাধ্যম সমাজের দর্পণ, জাতির বিবেক, জনতার কণ্ঠস্বর, রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ ইত্যাদি নানা নামে গণমাধ্যমকে অভিহিত করা হয়। কিন্তু সেই জাতির বিবেকের ওপর চলে নানা জুলুম, অন্যায়-অত্যাচার, গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর করা হয় নির্যাতন, এমনকি তাদের হত্যা করা হচ্ছে। কিন্তু খুনি ও নির্যাতনকারীরা আইনের আওতায় আসছে না, তাদের শাস্তি হচ্ছে না। এই বিষয়ে সাংবাদিক ইউনিয়ন বা সংগঠনগুলোর ঐক্য প্রয়োজন। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও পেশাগত মর্যাদার জন্য রাজনৈতিক বিশ্বাসের ঊর্ধ্বে উঠে সব সাংবাদিক সংগঠনগুলোর ঐক্যবদ্ধ হওয়া জরুরি। আইনের শাসন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সাংবাদিকদের পেশাগত ঐক্যের কোন বিকল্প নেই।

গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা অপরিহার্য। তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে সম্প্রতি জানানো হয়, তথ্য মন্ত্রণালয় সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা ও বর্তমান সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার অনুযায়ী জনগণের তথ্য অধিকার নিশ্চিতকরণ, গণমাধ্যম শিল্পের মানোন্নয়ন, সম্প্রচার ব্যবস্থার আধুনিকায়ন, জাতীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির লালন, বিকাশ ও সংরক্ষণের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।

সম্মেলনে আরও জানানো হয় যে, বর্তমান সরকার গণমাধ্যমের অবাধ স্বাধীনতায় বিশ্বাসী এবং গণমাধ্যমকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার সচেষ্ট রয়েছেন। কিন্তু সাংবাদিকগণ পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে প্রায়ই হামলা ও নানা রকম হুমকির শিকার হতে হয়। গত ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি নিজ বাসায় নৃশংসভাবে খুন হন এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন রুনি ও মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার। নিহতদ্বয় স্বামী-স্ত্রী। ছয় বছর বয়সী একমাত্র শিশু পুত্র মাহির সরোয়ার মেঘের সম্মুখে এই সাংবাদিক দম্পত্তি খুন হয়েছেন। কিন্তু আজও খুনিদের সরকার ধরতে পারেনি, কিংবা চিহ্নিত করতে পারেনি।

২০১১ সালের ২৮ জানুয়ারি পল্টনের নিজ বাসায় খুন হন জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার স্থায়ী পরিষদের সদস্য ও দৈনিক জনতার সহ-সম্পাদক ফরহাদ খাঁ ও তার স্ত্রী রহিমা খাতুন। বিগত খালেদা-নিজামীর আমলে খুন হন সাংবাদিক মানিক সাহা, হুমায়ুন কবির বালুসহ আরও অনেকে। বলা যায় যে, সব সরকারের আমলেই সাংবাদিক নির্যাতন ও খুন হয়েছে প্রায় সমানতালে। তবে দেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

[লেখক : চেয়ারম্যান, জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা, স্থায়ী পরিষদ]

back to top