alt

উপ-সম্পাদকীয়

পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন, বিজেপি এবং বাংলাদেশের মৌলবাদ

প্রবীর বড়ুয়া চৌধুরী

: বৃহস্পতিবার, ০৬ মে ২০২১
image

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর দুই বাংলার অনেককে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে দেখলাম। যেন মৌলবাদের ভয়ঙ্কর ঝড় থেকে বাঁচা গেল এবারের মতো। আপাত দৃষ্টিতে বিষয়টি স্বস্তির। মৌলবাধী শক্তির পরাজয় ভারতের এই রাজ্যে হলেও বাংলাদেশেও এর আঁচ লাগার কারণ রয়েছে অনেক। এদেশের প্রগতিশীলরা সমর্থন দিচ্ছেন এই ভেবে যে সীমান্তবর্তী রাজ্যেটিতে ধর্মীয় বিভাজন আপাতত ঠেকানো গেল। আর এই দেশের মৌলবাদী শক্তিগুলো এই ভেবে খুশি যে হিন্দু মৌলবাদকে রোখা গেল। বিজেপির এই পরাজয়ে বাংলাদেশের বিপরীত মতাদর্শের দুই শিবির যেন বহুদিন পরে ভিন্ন অবস্থান থেকে একই অভিমত ব্যক্ত করল।

এই নির্বাচনকে ঘিরে বাংলাদেশেও কম উত্তেজনা ছড়ায়নি। নির্বাচনের এই সময়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে হেফাজতের তান্ডব বিশ্বকে জানান দেয় এদেশেও মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলো এখনও শক্তিশালী। বাংলাদেশ ও ভারত ভৌগলিকভাবে একই অঞ্চলে হওয়ায় অনেক কিছুর মতো রাজনীতির চর্চাতেও বেশ মিল রয়েছে। যদিও ভারতের গণতান্ত্রিক চর্চা আমাদের চাইতে অনেক বেশি শক্তিশালী, কিন্তু দু’দেশে মৌলবাদী শক্তিগুলো ডালপালা মেলার ক্ষেত্রে এই পন্থা অবলম্বন করেছে। গুজরাটের দাঙ্গা যেমন আমরা দেখেছি, এদেশে একাত্তর থেকে শুরু করে মৌলবাদীদের কালো থাবা আজও দেখা যায়। এই মৌলবাদী শক্তিগলোকে দু’দেশেই মূলধারার রাজনেতিক দলগুলো ভোট ব্যাংকের কথা চিন্তা করে আশ্রয় প্রশয় দিয়ে আসছে। যার ফল কখনও ভালো হয়নি। এ কথার সত্যতা পাওয়া যাবে দু’দেশের গত কয়েক দশকের রাজনীতি বিশ্লেষণ করলে।

ওপার বাংলায় মমতা ব্যানার্জী আজ যে দলের বিপক্ষের বিজয়কে ‘বাংলা বেঁচে গেছে’ বলে অভিহিত করছেন, সেই বিজেপি আজ বাংলায় কীভাবে এত শক্তিশালী হলো সে প্রশ্ন থেকে যায়? উত্তর একটাই পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির এই উত্থানের জন্য তৃণমূল দায়ী। মমতা ব্যানার্জি বাম দুর্গে আঘাত হানতে বিজেপির হাত ধরেছিল। শুধু তাই নয় বিজেপি মন্ত্রিসভায় রেলমন্ত্রী ছিলেন এই মমতা। দল দুটির অতীতের সুসম্পর্কের সুযোগ নিয়ে বিজেপি নিজেকে রাজ্যে শক্তিশালী করে তুলে। আর আস্তে আস্তে তৃণমূলের শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠে। সুতরাং আজকের বিজেপির সফলতার দায়ভার অনেকটা মমতা ও তার দলের ওপর বর্তায়।

কিন্তু, বিজেপির এই হারে যারা ভাবছেন এখানেই শেষ দলটি, তাদের এ কথা মনে করিয়ে দেয়া প্রয়োজন আজ যেভাবে ধর্মভিত্তিক দলটি নিজের আসন পাকা পোক্ত করছে, ঠিক এমনভাবে একদিন তৃণমূল নিজেদের সুংগঠিত করেছিল। বিজেপি পশ্চিমবাংলায় আগে কখনোই এত ভালো ফলাফল করেনি। আগের বিধানসভা নির্বাচনে মাত্র তিনটি আসন পায় বিজেপি। ২০২১-এর নির্বাচনে এসে সে সংখ্যা দাঁড়ায় ৭৭। আর ভোটের সংখ্যায় ৩৮.১৩ শতাংশ, যেখানে তৃণমূল পেয়েছে ৪৭.৯৪ শতাংশ। তাই নির্বাচনে বিজেপি যা পেয়েছে তা পুরোটাই লাভ, হারানোর কিছু নেই বরং পরবর্তী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি এগিয়ে রাখল দলটি।

এবার আসি নিজ দেশের দিকে, ভারতে এই নির্বাচন চলাকালীন সময়ে বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় সফরে আসেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি মূলত আসেন বঙ্গুবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে। তার এই সফরকে ঘিরে হেফাজতে ইসলাম হাটহাজারী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ঢাকায় তান্ডব চালায়। সংগঠনটি নরেন্দ্র মোদিকে সাম্প্রদায়িক উল্লেখ করে তার সফর রুখে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু সরকারের ভাষ্য ছিল নরেন্দ্র মোদি বন্ধু রাষ্ট্রের সরকার হিসেবে আমন্ত্রণ পেয়েছেন, কোন দলের প্রতিনিধি হিসেবে নয়। কিন্তু হেফাজত তাতে দমেনি। এই ধরনের তান্ডব সংগঠনটির জন্য নতুন কিছু নয়। এর আগে ২০১৩ সালে ৫ মে সহ কয়েকবার তারা একই ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছিল। মূলত তাদের সঙ্গে তখন সখ্য ছিল বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় পার্টির। আওয়ামী লীগের অভিযোগ, সে সময় বিএনপি-জামায়াত জোট হেফাজতকে ইন্ধন দিয়েছিল। ২০১৩ সালের পর দৃশ্যপট পরিবর্তন হতে থাকে। সরকার বিএনপি-জামায়াতের বলয় থেকে হেফাজতকে সরিয়ে আনতে নানা উদ্যোগ নেয়। সে সময় নানা মহল থেকে সরকারের এসব উদ্যোগের সমালোচনা করা হলেও, আওয়ামী লীগের নেতারা বলেন সমাজের মূলধারার সঙ্গে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ত করতেই এই চেষ্টা। সে সময় হেফাজতের নেতৃত্বে থাকা কিছু নেতার মুখে সরকারের গুনগানও শোনা যায়। কিন্তু, সে সুসম্পর্কে ফাটল ধরেছে। বিশেষ করে হেফাজতের নেতৃত্বে পরিবর্তন আসার পর এই দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। তবে, সাম্প্রতিক সময়ে নানা ঘটনার পর প্রশাসন হেফাজতের বিরুদ্ধে হার্ড লাইনে যায়। আর এরপর থেকে দলটির নেতারা আবার সরকারের আনুকূল্য পাওয়ার চেষ্টা করছে।

এখন প্রশ্ন হলো, কেন হেফাজত এত গুরুত্ব পায়? আসলেই কি সংগঠনটি রাজনেতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ? সব প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে ভোটব্যাংক। বিএনপি-জামায়াতের নজর এই ভোট ব্যাংকের দিকে, আর আওয়ামী লীগের চিন্তা হেফাজতের সব ভোট দলটি না পেলেও, যাতে বিএনপির দিকে না যায়। আর টানাটানিতে সবচেয়ে বেশি লাভবান হেফাজত। তবে এখনও আশার কথা, ভারতে বিজেপি রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন হতে পারেলও বাংলাদেশে জামায়াত বা হেফাজত এখনও পুরোপুরি ক্ষমতার স্বাদ পায়নি। তবে, এভাবে সমঝোতার টানাটানি চলতে থাকলে একদিন হয়তো জাতিকে এই দুর্ভাগ্য বরণ করতে হবে।

পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে থেকে আরও একটি অশনি সংকেত হলো বাম বা কংগ্রেসের ভরাডুবি। যদিও বলা হচ্ছে বিজেপি বিরোধী ভোট সব তৃণমূলের বাক্সে পড়েছে, তারপরও বলতে হয় অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির জন্য এটি ভালো কোন উদাহরণ নয়। বাংলাদেশ বা ভারত দু’দেশের আজ ভাবার সময় এসেছে মৌলবাদী শক্তিগুলোকে কীভাবে রোখা যায়। কারণ হেফাজত ও বিজেপি ইতোমধ্যে দেখিয়ে দিয়েছে সামান্য সুযোগ পেলে তারা কি করতে পারে। মৌলবাদী শক্তিগুলো পুরোপুরি সিংহাসনের দখল পায়নি বলে যারা স্বস্তিতে শ্বাস নিচ্ছেন, তাদের বলে দেয়া প্রয়োজন এসব শক্তি আপনার-আমার ঘাড়ের ওপর ছোবল তুলে বসে আছে, শেষ আঘাতটি করার জন্য।

[লেখক : সাংবাদিক, একটি বেসরকারি

টেলিভিশনে কর্মরত]

ছবি

স্মরণ : কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস

দাবদাহে সুস্থ থাকবেন কীভাবে

কত দিন পরে এলে, একটু শোনো

রম্যগদ্য : আনন্দ, দ্বিগুণ আনন্দ...

ছবি

ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় নাম

বৈসাবি : ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বর্ষবরণ উৎসব

‘ইন্ডিয়া আউট’ ক্যাম্পেইন

উদার-উদ্দাম বৈশাখ চাই

ঈদ নিয়ে আসুক শান্তি ও সমৃদ্ধি, বিস্তৃত হোক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ

প্রসঙ্গ: বিদেশি ঋণ

ছাত্ররাজনীতি কি খারাপ?

জাকাত : বিশ্বের প্রথম সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা

বাংলাদেশ স্কাউটস দিবস : শুরুর কথা

ছবি

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত

প্রবাসীর ঈদ-ভাবনা

বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস

ধানের ফলন বাড়াতে ক্লাইমেট স্মার্ট গুটি ইউরিয়া প্রযুক্তি

কমিশন কিংবা ভিজিটে জমি রেজিস্ট্রির আইনি বিধান ও প্রাসঙ্গিকতা

ছবি

ঈদের অর্থনীতি

পশ্চিমবঙ্গে ভোটের রাজনীতিতে ‘পোস্ট পার্টিশন সিনড্রম’

শিক্ষকের বঞ্চনা, শিক্ষকের বেদনা

নিরাপদ সড়ক কেন চাই

রম্যগদ্য : ‘প্রহরীর সাতশ কোটি টাকা...’

ছবি

অবন্তিকাদের আত্মহনন

শিক্ষাবিষয়ক ভাবনা

অপ্রয়োজনে সিজারিয়ান নয়

পণ্য রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনতে হবে

আত্মহত্যা রোধে নৈতিক শিক্ষা

আউশ ধান : পরিবেশ ও কৃষকবান্ধব ফসল

ছবি

বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের আতুড়ঘর

চেক ডিজঅনার মামলার অধিক্ষেত্র ও প্রাসঙ্গিকতা

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন ও বাংলাদেশের কৃষি

ছবি

‘হৃৎ কলমের’ পাখি এবং আমাদের জেগে ওঠা

ছবি

ভূগর্ভস্থ পানি সুরক্ষায় বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ

tab

উপ-সম্পাদকীয়

পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন, বিজেপি এবং বাংলাদেশের মৌলবাদ

প্রবীর বড়ুয়া চৌধুরী

image

বৃহস্পতিবার, ০৬ মে ২০২১

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর দুই বাংলার অনেককে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে দেখলাম। যেন মৌলবাদের ভয়ঙ্কর ঝড় থেকে বাঁচা গেল এবারের মতো। আপাত দৃষ্টিতে বিষয়টি স্বস্তির। মৌলবাধী শক্তির পরাজয় ভারতের এই রাজ্যে হলেও বাংলাদেশেও এর আঁচ লাগার কারণ রয়েছে অনেক। এদেশের প্রগতিশীলরা সমর্থন দিচ্ছেন এই ভেবে যে সীমান্তবর্তী রাজ্যেটিতে ধর্মীয় বিভাজন আপাতত ঠেকানো গেল। আর এই দেশের মৌলবাদী শক্তিগুলো এই ভেবে খুশি যে হিন্দু মৌলবাদকে রোখা গেল। বিজেপির এই পরাজয়ে বাংলাদেশের বিপরীত মতাদর্শের দুই শিবির যেন বহুদিন পরে ভিন্ন অবস্থান থেকে একই অভিমত ব্যক্ত করল।

এই নির্বাচনকে ঘিরে বাংলাদেশেও কম উত্তেজনা ছড়ায়নি। নির্বাচনের এই সময়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে হেফাজতের তান্ডব বিশ্বকে জানান দেয় এদেশেও মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলো এখনও শক্তিশালী। বাংলাদেশ ও ভারত ভৌগলিকভাবে একই অঞ্চলে হওয়ায় অনেক কিছুর মতো রাজনীতির চর্চাতেও বেশ মিল রয়েছে। যদিও ভারতের গণতান্ত্রিক চর্চা আমাদের চাইতে অনেক বেশি শক্তিশালী, কিন্তু দু’দেশে মৌলবাদী শক্তিগুলো ডালপালা মেলার ক্ষেত্রে এই পন্থা অবলম্বন করেছে। গুজরাটের দাঙ্গা যেমন আমরা দেখেছি, এদেশে একাত্তর থেকে শুরু করে মৌলবাদীদের কালো থাবা আজও দেখা যায়। এই মৌলবাদী শক্তিগলোকে দু’দেশেই মূলধারার রাজনেতিক দলগুলো ভোট ব্যাংকের কথা চিন্তা করে আশ্রয় প্রশয় দিয়ে আসছে। যার ফল কখনও ভালো হয়নি। এ কথার সত্যতা পাওয়া যাবে দু’দেশের গত কয়েক দশকের রাজনীতি বিশ্লেষণ করলে।

ওপার বাংলায় মমতা ব্যানার্জী আজ যে দলের বিপক্ষের বিজয়কে ‘বাংলা বেঁচে গেছে’ বলে অভিহিত করছেন, সেই বিজেপি আজ বাংলায় কীভাবে এত শক্তিশালী হলো সে প্রশ্ন থেকে যায়? উত্তর একটাই পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির এই উত্থানের জন্য তৃণমূল দায়ী। মমতা ব্যানার্জি বাম দুর্গে আঘাত হানতে বিজেপির হাত ধরেছিল। শুধু তাই নয় বিজেপি মন্ত্রিসভায় রেলমন্ত্রী ছিলেন এই মমতা। দল দুটির অতীতের সুসম্পর্কের সুযোগ নিয়ে বিজেপি নিজেকে রাজ্যে শক্তিশালী করে তুলে। আর আস্তে আস্তে তৃণমূলের শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠে। সুতরাং আজকের বিজেপির সফলতার দায়ভার অনেকটা মমতা ও তার দলের ওপর বর্তায়।

কিন্তু, বিজেপির এই হারে যারা ভাবছেন এখানেই শেষ দলটি, তাদের এ কথা মনে করিয়ে দেয়া প্রয়োজন আজ যেভাবে ধর্মভিত্তিক দলটি নিজের আসন পাকা পোক্ত করছে, ঠিক এমনভাবে একদিন তৃণমূল নিজেদের সুংগঠিত করেছিল। বিজেপি পশ্চিমবাংলায় আগে কখনোই এত ভালো ফলাফল করেনি। আগের বিধানসভা নির্বাচনে মাত্র তিনটি আসন পায় বিজেপি। ২০২১-এর নির্বাচনে এসে সে সংখ্যা দাঁড়ায় ৭৭। আর ভোটের সংখ্যায় ৩৮.১৩ শতাংশ, যেখানে তৃণমূল পেয়েছে ৪৭.৯৪ শতাংশ। তাই নির্বাচনে বিজেপি যা পেয়েছে তা পুরোটাই লাভ, হারানোর কিছু নেই বরং পরবর্তী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি এগিয়ে রাখল দলটি।

এবার আসি নিজ দেশের দিকে, ভারতে এই নির্বাচন চলাকালীন সময়ে বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় সফরে আসেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি মূলত আসেন বঙ্গুবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে। তার এই সফরকে ঘিরে হেফাজতে ইসলাম হাটহাজারী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ঢাকায় তান্ডব চালায়। সংগঠনটি নরেন্দ্র মোদিকে সাম্প্রদায়িক উল্লেখ করে তার সফর রুখে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু সরকারের ভাষ্য ছিল নরেন্দ্র মোদি বন্ধু রাষ্ট্রের সরকার হিসেবে আমন্ত্রণ পেয়েছেন, কোন দলের প্রতিনিধি হিসেবে নয়। কিন্তু হেফাজত তাতে দমেনি। এই ধরনের তান্ডব সংগঠনটির জন্য নতুন কিছু নয়। এর আগে ২০১৩ সালে ৫ মে সহ কয়েকবার তারা একই ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছিল। মূলত তাদের সঙ্গে তখন সখ্য ছিল বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় পার্টির। আওয়ামী লীগের অভিযোগ, সে সময় বিএনপি-জামায়াত জোট হেফাজতকে ইন্ধন দিয়েছিল। ২০১৩ সালের পর দৃশ্যপট পরিবর্তন হতে থাকে। সরকার বিএনপি-জামায়াতের বলয় থেকে হেফাজতকে সরিয়ে আনতে নানা উদ্যোগ নেয়। সে সময় নানা মহল থেকে সরকারের এসব উদ্যোগের সমালোচনা করা হলেও, আওয়ামী লীগের নেতারা বলেন সমাজের মূলধারার সঙ্গে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ত করতেই এই চেষ্টা। সে সময় হেফাজতের নেতৃত্বে থাকা কিছু নেতার মুখে সরকারের গুনগানও শোনা যায়। কিন্তু, সে সুসম্পর্কে ফাটল ধরেছে। বিশেষ করে হেফাজতের নেতৃত্বে পরিবর্তন আসার পর এই দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। তবে, সাম্প্রতিক সময়ে নানা ঘটনার পর প্রশাসন হেফাজতের বিরুদ্ধে হার্ড লাইনে যায়। আর এরপর থেকে দলটির নেতারা আবার সরকারের আনুকূল্য পাওয়ার চেষ্টা করছে।

এখন প্রশ্ন হলো, কেন হেফাজত এত গুরুত্ব পায়? আসলেই কি সংগঠনটি রাজনেতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ? সব প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে ভোটব্যাংক। বিএনপি-জামায়াতের নজর এই ভোট ব্যাংকের দিকে, আর আওয়ামী লীগের চিন্তা হেফাজতের সব ভোট দলটি না পেলেও, যাতে বিএনপির দিকে না যায়। আর টানাটানিতে সবচেয়ে বেশি লাভবান হেফাজত। তবে এখনও আশার কথা, ভারতে বিজেপি রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন হতে পারেলও বাংলাদেশে জামায়াত বা হেফাজত এখনও পুরোপুরি ক্ষমতার স্বাদ পায়নি। তবে, এভাবে সমঝোতার টানাটানি চলতে থাকলে একদিন হয়তো জাতিকে এই দুর্ভাগ্য বরণ করতে হবে।

পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে থেকে আরও একটি অশনি সংকেত হলো বাম বা কংগ্রেসের ভরাডুবি। যদিও বলা হচ্ছে বিজেপি বিরোধী ভোট সব তৃণমূলের বাক্সে পড়েছে, তারপরও বলতে হয় অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির জন্য এটি ভালো কোন উদাহরণ নয়। বাংলাদেশ বা ভারত দু’দেশের আজ ভাবার সময় এসেছে মৌলবাদী শক্তিগুলোকে কীভাবে রোখা যায়। কারণ হেফাজত ও বিজেপি ইতোমধ্যে দেখিয়ে দিয়েছে সামান্য সুযোগ পেলে তারা কি করতে পারে। মৌলবাদী শক্তিগুলো পুরোপুরি সিংহাসনের দখল পায়নি বলে যারা স্বস্তিতে শ্বাস নিচ্ছেন, তাদের বলে দেয়া প্রয়োজন এসব শক্তি আপনার-আমার ঘাড়ের ওপর ছোবল তুলে বসে আছে, শেষ আঘাতটি করার জন্য।

[লেখক : সাংবাদিক, একটি বেসরকারি

টেলিভিশনে কর্মরত]

back to top