alt

উপ-সম্পাদকীয়

রোজিনার মুক্তি : যেতে হবে আরও অনেক পথ

রণেশ মৈত্র

: সোমবার, ৩১ মে ২০২১

গত ২৩ মে অপরাহ্ণে কারাগার থেকে শর্তাধীন জামিনে মুক্তি পেলেন গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কারাগার থেকে। এখন তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাসহ দায়ী সব ব্যক্তির কঠোর শাস্তি প্রদানের লক্ষ্যে তাদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে মামলা দায়ের ও গ্রেপ্তার করা হোক। এই মৌলিক দাবিগুলোর সঙ্গে আর একটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি হলো ঔপনিবেশিক যুগের কাল আইন অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট ও সাংবাদিকতার স্বাধীনতা হরণকারী ডিজিট্যাল নিরাপত্তা আইন বাতিল। সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতার স্বাধীনতা এগুলো ছাড়া নিশ্চিত হতে পারে না।

রোজিনা ইসলাম সত্য উদ্ঘাটন করতে গিয়ে কারারুদ্ধ হলেন মহান মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তীর এই বছরে। বস্তুত: শুধু রোজিনা নন, আক্রান্ত হয়েছে গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক অধিকার, যা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যই ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য। পাকিস্তান আমলে এই লক্ষ্য অর্জনে বছরের পর বছর ধরে ক্লান্তিহীনভাবে লড়াই করেছেন কিংবদন্তি জননেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, কমরেড মণি সিংহ, স্বনামধন্য সাংবাদিক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, জহুর হোসেন চৌধরী, কেজি মুস্তফা, নির্মল সেন, কামাল লোহানী প্রমুখই নন শুধ, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও আটক সাংবাদিকদের মুক্তির দাবি ঢাকার সাংবাদিকদের আয়োজিত মিছিলে খোদ মওলানা আকরাম খানকেও বার্ধক্য উপেক্ষা করে অংশ নিতে দেখেছি। ওই মিছিলের একটি ব্যানারে আমার নামও লেখা ছিল আটককৃত সাংবাদিকদের মধ্যে অন্যতম হিসেবে যদিও বরাবরই আমার কর্মক্ষেত্র ছির ছোট জেলা শহর পাবনা। একটানা আড়াই বছর আটক থাকার পর ওই মিছিলের দিনই সকালে ঢাকা জেলা থেকে মুক্তি পেয়ে ঢাকা প্রেস ক্লাবে গেলে ঠাট্টা করে কেজি মুস্তফা বলেছিলেন, এই রণেশ বাবু, মুক্তি পেলেন কখন? বললাম, ঘণ্টা খানেক আগে। বেরিয়ে ‘সংবাদ’ অফিসে যেতেই তোয়াব ভাই বলেনে, আটক সাংবাদিকদের মুক্তি দাবিতে অল্পক্ষণ পরেই মিছিল বেরুবে। চাইলে মিছিলে যেতে পারেন। অমনি পোটলা-পুটলি সংবাদ অফিসে রেখে দে ছুট। গিয়ে দেখি প্রেস ক্লাবে সবাই প্রস্তুতি নিচ্ছেন মিছিল বের করার। হেসে কেজি ভাই বললেন, ‘এসেই যখন গেছেন-তখন সবার সঙ্গে নিজের মুক্তির দাবিতেও মিছিলে অংশ নিন। এই বলে একটা ব্যানার দেখালেন, যাতে আমার নাম লাল কালি দিয়ে বড় বড় অক্ষরে লেখা ছিল। বললাম, ওটা তা হলে রেখে দিন। অন্যেরা রাজি হলেন না। তাই ওটা সহই মিছিল বেরুলো। আমিও ছিলাম সঙ্গে। ঢাকার সব পত্রিকার প্রায় সব সাংবাদিকের সঙ্গে মিছিলে পা মেলানোর সুযোগ ওই একবারই জুটেছিল ষাটর অগ্নিঝরা দশকে। আজও তা স্মৃতিতে অম্লান।

যা হোক, পাকিস্তান আমলজুড়েই এমন মিছিল-ধর্মঘট করেছেন সাংবাদিকেরা-রাজনৈতিক দলগুলিও। আর তার পরিণতিতেই মুক্তিযুদ্ধ পেলাম, পেলাম স্বাধীনতা সার্বভৌম গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। পেলাম বাহাত্তরের সংবিধান যাতে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার, সর্বজননীত মতোপ্রকাশের অধিকার, সাংবাদিকতার অধিকার, সংবাদপত্রের স্বাধীনতার অধিকারের পরিপূর্ণ স্বীকৃতি।

বাহাত্তরের ওই সংবিধান অনেক কাটাছেঁড়া করার পরেও মৌলিক অধিকার সংক্রান্ত ধারাগুলো অক্ষতই আছে। কিন্তু যা দেখা যায়। সেগুলো অমান্য করাই যেন এ আমলের কর্তৃপক্ষের রীতি ও নীতি। তবে কি আবারও দীর্ঘমেয়াদি আন্দোলনে নামতে হবে স্বাধীন দেশের সাংবাদিকদের?

আন্দোলন কোন সৌখিন ব্যাপার না। তাই দায়ে না ঠেকলে অধিকার হরণ করা হলে আন্দোলনে নামা ছাড়া গত্যন্তর থাকে না।

সাংবাদিক ও সাংবাদিকতা প্রসঙ্গে বলছি। বলছি দুর্নীতি প্রসঙ্গে। রোজিনা তার পত্রিকায় দায়িত্ব সহকারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সীমাহীন দুর্নীতি নিয়ে লিখে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরাগ ভাজন হয়েছিলেন। সেই কর্মকর্তারা রোজিনাকে উচিত শিক্ষা দিতেই সুযোগ পেয়ে সচিবালয়ে পাঁচ ঘণ্টা আটকে রাখলেন, গলা টিপে ধরলেন কিল ঘুঁষি মারলেন এবং অবশেষে তার বিরুদ্ধে মোকর্দমা দিলেন। যে যে আইনে এই মামলা দায়ের হলো-তা জনস্বার্থের বিরোধী, সংবাদপত্রের স্বাধীনতারও বিরোধী। সুতরাং দেশে সুষ্ঠু সাংবাদিকতার স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে, দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়ার কাজে নিয়োজিত সাংবাদিকদের, তাদের পেশাগত নৈতিকতা সম্পন্ন দেশপ্রেমিক কাজে বাধা এলে, তা সে যে কোন মহল থেকেই বা যে কোন শক্তিশারী মহল থেকেই আসুক না কেন-তা প্রতিরোধে আন্দোলনে নামতেই হবে।

রোজিনার মুক্তি দাবিতে দেশে-বিদেশে যে বিশাল আন্দোলন গড়ে উঠলো-তা না হলে তার মুক্তি হতো কিনা-নিশ্চিত করে বলা যায় না। এখন জামিনে মুক্তি হলেও-সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো এখনও অমীমাংসিত। যেমন?

এক. রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে আনীত মোকর্দমা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে;

দুই. যে ঔপনিবেশিক এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, সাংবাদিকদের স্বাধীনতা হরণকারী আইনগুলো-যেমন “অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট”, “ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট অবিলম্বে বাতিল করে সংবাদপত্র-সাংবাদিকদের নিশ্চিত করতে হবে;

তিন. সচিবালয়ের যে সব কর্মকর্তা-কর্মচারী রোজিনা ইসলামকে শারীরিক ও মানসিকভাবে হেনস্তা করেছেন অবৈধভাবে রোজিনাকে সচিবালয়ের একটি কক্ষে আটকে রেখে-তাদের সবাইকে চাকরিচ্যুত করে তাদের বিরুদ্ধে রোজিনাকে হত্যা প্রচেষ্টা ও অপরাপর অভিযোগে মামলা দায়ের করে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

এ দাবিগুলো সহজে আদায় হবে বলে মনে হয় না। আর তা না হলে সংবাদপত্র বা গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতার স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক অধিকার সুনিশ্চিত করা যাবে না।

তাই কর্তৃপক্ষকে সংসদের বাজেট অধিবেশনেই আইনগুলো বাতিল, তার আগেই রোজিনার বিরুদ্ধে বিচারাধীন মামলা প্রত্যাহার ও নির্যাতনকারীকে চাকরিচ্যুত ও তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের আল্টিমেটাম দিয়ে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দাবিসমূহ অর্জিত না হলে দীর্ঘমেয়াদি আন্দোলনে নামার বিকল্প নেই।

[লেখক : সভাপতিমন্ডলীর সদস্য, ঐক্য ন্যাপ]

ছবি

স্মরণ : কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস

দাবদাহে সুস্থ থাকবেন কীভাবে

কত দিন পরে এলে, একটু শোনো

রম্যগদ্য : আনন্দ, দ্বিগুণ আনন্দ...

ছবি

ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় নাম

বৈসাবি : ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বর্ষবরণ উৎসব

‘ইন্ডিয়া আউট’ ক্যাম্পেইন

উদার-উদ্দাম বৈশাখ চাই

ঈদ নিয়ে আসুক শান্তি ও সমৃদ্ধি, বিস্তৃত হোক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ

প্রসঙ্গ: বিদেশি ঋণ

ছাত্ররাজনীতি কি খারাপ?

জাকাত : বিশ্বের প্রথম সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা

বাংলাদেশ স্কাউটস দিবস : শুরুর কথা

ছবি

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত

প্রবাসীর ঈদ-ভাবনা

বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস

ধানের ফলন বাড়াতে ক্লাইমেট স্মার্ট গুটি ইউরিয়া প্রযুক্তি

কমিশন কিংবা ভিজিটে জমি রেজিস্ট্রির আইনি বিধান ও প্রাসঙ্গিকতা

ছবি

ঈদের অর্থনীতি

পশ্চিমবঙ্গে ভোটের রাজনীতিতে ‘পোস্ট পার্টিশন সিনড্রম’

শিক্ষকের বঞ্চনা, শিক্ষকের বেদনা

নিরাপদ সড়ক কেন চাই

রম্যগদ্য : ‘প্রহরীর সাতশ কোটি টাকা...’

ছবি

অবন্তিকাদের আত্মহনন

শিক্ষাবিষয়ক ভাবনা

অপ্রয়োজনে সিজারিয়ান নয়

পণ্য রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনতে হবে

আত্মহত্যা রোধে নৈতিক শিক্ষা

আউশ ধান : পরিবেশ ও কৃষকবান্ধব ফসল

ছবি

বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের আতুড়ঘর

চেক ডিজঅনার মামলার অধিক্ষেত্র ও প্রাসঙ্গিকতা

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন ও বাংলাদেশের কৃষি

ছবি

‘হৃৎ কলমের’ পাখি এবং আমাদের জেগে ওঠা

ছবি

ভূগর্ভস্থ পানি সুরক্ষায় বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ

tab

উপ-সম্পাদকীয়

রোজিনার মুক্তি : যেতে হবে আরও অনেক পথ

রণেশ মৈত্র

সোমবার, ৩১ মে ২০২১

গত ২৩ মে অপরাহ্ণে কারাগার থেকে শর্তাধীন জামিনে মুক্তি পেলেন গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কারাগার থেকে। এখন তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাসহ দায়ী সব ব্যক্তির কঠোর শাস্তি প্রদানের লক্ষ্যে তাদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে মামলা দায়ের ও গ্রেপ্তার করা হোক। এই মৌলিক দাবিগুলোর সঙ্গে আর একটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি হলো ঔপনিবেশিক যুগের কাল আইন অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট ও সাংবাদিকতার স্বাধীনতা হরণকারী ডিজিট্যাল নিরাপত্তা আইন বাতিল। সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতার স্বাধীনতা এগুলো ছাড়া নিশ্চিত হতে পারে না।

রোজিনা ইসলাম সত্য উদ্ঘাটন করতে গিয়ে কারারুদ্ধ হলেন মহান মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তীর এই বছরে। বস্তুত: শুধু রোজিনা নন, আক্রান্ত হয়েছে গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক অধিকার, যা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যই ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য। পাকিস্তান আমলে এই লক্ষ্য অর্জনে বছরের পর বছর ধরে ক্লান্তিহীনভাবে লড়াই করেছেন কিংবদন্তি জননেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, কমরেড মণি সিংহ, স্বনামধন্য সাংবাদিক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, জহুর হোসেন চৌধরী, কেজি মুস্তফা, নির্মল সেন, কামাল লোহানী প্রমুখই নন শুধ, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও আটক সাংবাদিকদের মুক্তির দাবি ঢাকার সাংবাদিকদের আয়োজিত মিছিলে খোদ মওলানা আকরাম খানকেও বার্ধক্য উপেক্ষা করে অংশ নিতে দেখেছি। ওই মিছিলের একটি ব্যানারে আমার নামও লেখা ছিল আটককৃত সাংবাদিকদের মধ্যে অন্যতম হিসেবে যদিও বরাবরই আমার কর্মক্ষেত্র ছির ছোট জেলা শহর পাবনা। একটানা আড়াই বছর আটক থাকার পর ওই মিছিলের দিনই সকালে ঢাকা জেলা থেকে মুক্তি পেয়ে ঢাকা প্রেস ক্লাবে গেলে ঠাট্টা করে কেজি মুস্তফা বলেছিলেন, এই রণেশ বাবু, মুক্তি পেলেন কখন? বললাম, ঘণ্টা খানেক আগে। বেরিয়ে ‘সংবাদ’ অফিসে যেতেই তোয়াব ভাই বলেনে, আটক সাংবাদিকদের মুক্তি দাবিতে অল্পক্ষণ পরেই মিছিল বেরুবে। চাইলে মিছিলে যেতে পারেন। অমনি পোটলা-পুটলি সংবাদ অফিসে রেখে দে ছুট। গিয়ে দেখি প্রেস ক্লাবে সবাই প্রস্তুতি নিচ্ছেন মিছিল বের করার। হেসে কেজি ভাই বললেন, ‘এসেই যখন গেছেন-তখন সবার সঙ্গে নিজের মুক্তির দাবিতেও মিছিলে অংশ নিন। এই বলে একটা ব্যানার দেখালেন, যাতে আমার নাম লাল কালি দিয়ে বড় বড় অক্ষরে লেখা ছিল। বললাম, ওটা তা হলে রেখে দিন। অন্যেরা রাজি হলেন না। তাই ওটা সহই মিছিল বেরুলো। আমিও ছিলাম সঙ্গে। ঢাকার সব পত্রিকার প্রায় সব সাংবাদিকের সঙ্গে মিছিলে পা মেলানোর সুযোগ ওই একবারই জুটেছিল ষাটর অগ্নিঝরা দশকে। আজও তা স্মৃতিতে অম্লান।

যা হোক, পাকিস্তান আমলজুড়েই এমন মিছিল-ধর্মঘট করেছেন সাংবাদিকেরা-রাজনৈতিক দলগুলিও। আর তার পরিণতিতেই মুক্তিযুদ্ধ পেলাম, পেলাম স্বাধীনতা সার্বভৌম গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। পেলাম বাহাত্তরের সংবিধান যাতে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার, সর্বজননীত মতোপ্রকাশের অধিকার, সাংবাদিকতার অধিকার, সংবাদপত্রের স্বাধীনতার অধিকারের পরিপূর্ণ স্বীকৃতি।

বাহাত্তরের ওই সংবিধান অনেক কাটাছেঁড়া করার পরেও মৌলিক অধিকার সংক্রান্ত ধারাগুলো অক্ষতই আছে। কিন্তু যা দেখা যায়। সেগুলো অমান্য করাই যেন এ আমলের কর্তৃপক্ষের রীতি ও নীতি। তবে কি আবারও দীর্ঘমেয়াদি আন্দোলনে নামতে হবে স্বাধীন দেশের সাংবাদিকদের?

আন্দোলন কোন সৌখিন ব্যাপার না। তাই দায়ে না ঠেকলে অধিকার হরণ করা হলে আন্দোলনে নামা ছাড়া গত্যন্তর থাকে না।

সাংবাদিক ও সাংবাদিকতা প্রসঙ্গে বলছি। বলছি দুর্নীতি প্রসঙ্গে। রোজিনা তার পত্রিকায় দায়িত্ব সহকারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সীমাহীন দুর্নীতি নিয়ে লিখে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরাগ ভাজন হয়েছিলেন। সেই কর্মকর্তারা রোজিনাকে উচিত শিক্ষা দিতেই সুযোগ পেয়ে সচিবালয়ে পাঁচ ঘণ্টা আটকে রাখলেন, গলা টিপে ধরলেন কিল ঘুঁষি মারলেন এবং অবশেষে তার বিরুদ্ধে মোকর্দমা দিলেন। যে যে আইনে এই মামলা দায়ের হলো-তা জনস্বার্থের বিরোধী, সংবাদপত্রের স্বাধীনতারও বিরোধী। সুতরাং দেশে সুষ্ঠু সাংবাদিকতার স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে, দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়ার কাজে নিয়োজিত সাংবাদিকদের, তাদের পেশাগত নৈতিকতা সম্পন্ন দেশপ্রেমিক কাজে বাধা এলে, তা সে যে কোন মহল থেকেই বা যে কোন শক্তিশারী মহল থেকেই আসুক না কেন-তা প্রতিরোধে আন্দোলনে নামতেই হবে।

রোজিনার মুক্তি দাবিতে দেশে-বিদেশে যে বিশাল আন্দোলন গড়ে উঠলো-তা না হলে তার মুক্তি হতো কিনা-নিশ্চিত করে বলা যায় না। এখন জামিনে মুক্তি হলেও-সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো এখনও অমীমাংসিত। যেমন?

এক. রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে আনীত মোকর্দমা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে;

দুই. যে ঔপনিবেশিক এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, সাংবাদিকদের স্বাধীনতা হরণকারী আইনগুলো-যেমন “অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট”, “ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট অবিলম্বে বাতিল করে সংবাদপত্র-সাংবাদিকদের নিশ্চিত করতে হবে;

তিন. সচিবালয়ের যে সব কর্মকর্তা-কর্মচারী রোজিনা ইসলামকে শারীরিক ও মানসিকভাবে হেনস্তা করেছেন অবৈধভাবে রোজিনাকে সচিবালয়ের একটি কক্ষে আটকে রেখে-তাদের সবাইকে চাকরিচ্যুত করে তাদের বিরুদ্ধে রোজিনাকে হত্যা প্রচেষ্টা ও অপরাপর অভিযোগে মামলা দায়ের করে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

এ দাবিগুলো সহজে আদায় হবে বলে মনে হয় না। আর তা না হলে সংবাদপত্র বা গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতার স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক অধিকার সুনিশ্চিত করা যাবে না।

তাই কর্তৃপক্ষকে সংসদের বাজেট অধিবেশনেই আইনগুলো বাতিল, তার আগেই রোজিনার বিরুদ্ধে বিচারাধীন মামলা প্রত্যাহার ও নির্যাতনকারীকে চাকরিচ্যুত ও তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের আল্টিমেটাম দিয়ে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দাবিসমূহ অর্জিত না হলে দীর্ঘমেয়াদি আন্দোলনে নামার বিকল্প নেই।

[লেখক : সভাপতিমন্ডলীর সদস্য, ঐক্য ন্যাপ]

back to top