alt

উপ-সম্পাদকীয়

গণতন্ত্রের বিকাশ ও ঔপনিবেশিক ধরনের আমলা নির্ভরতা

শেখর ভট্টাচার্য

: শুক্রবার, ১৬ জুলাই ২০২১

দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ যখন বিপুল জনসমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় ফিরে এলো, তখন সংসদ ও সংসদীয় কার্যক্রম কিছুটা প্রাণ ফিরে পেল, সক্রিয় হয়ে উঠলো সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটিগুলো। সংসদের ভেতরে কি ঘটছে এ নিয়ে সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে অনেক কৌতূহল লক্ষ্য করা গেল। আমার মনে আছে মানুষ সংসদ অধিবেশনের নানা জন-গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তর্ক-বিতর্ক, আগ্রহ ও গুরুত্বের সঙ্গে উপভোগ করা শুরু করল। তুখোড় পার্লামেন্টেরিয়ান সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, তোফায়েল আহমেদ, মওদুদ আহমেদের মতো উচ্চমানের পার্লামেন্টেরিয়ানদের মধ্যে বিতর্ক এবং সঙ্গে কিছু রসালাপ রাজনৈতিক সচেতন মানুষের মনে আশার আলো জ্বেলে দিয়েছিল। গণতন্ত্রের পথের কুসুমাস্তীর্ণ যাত্রা বুঝি শুরু হলো, এ’ কথা ভেবে অনেকেই আশ্বস্থ হয়েছিলেন। ছিয়ানব্বই সালের সংসদীয় অধিবেশনগুলোর শুরুর দিকের কথা মনে হলে অবাক লাগে। এখন যেমন ক্রিকেট পাগল বাঙালি বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা দেখতে পথে ঘাটে, অফিস আদালত, চায়ের দোকান যে কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের খেলা উপভোগ করে ঠিক একইরকমভাবে ছিয়ানব্বই সালের সংসদীয় অধিবেশনও মানুষ যে কোন জায়গায় বসে, দাঁড়িয়ে উপভোগ করার জন্য উদগ্রীব থাকত। তবে খেলা দেখার মতো সৌখিন মানসিকতা নিয়ে নয়, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে অনুধাবন করার জন্য। ৯৬ সালের সংসদের গোড়ার দিকে সংসদীয় কার্যক্রমে সামান্য গতি পাওয়াতে মানুষের ভেতর এক অভাবনীয় সাড়া এবং সীমাহীন আশাও পরিলক্ষিত হলো। রাজনৈতিক সচেতন মানুষ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা ভাবলেন, বাংলাদেশ বুঝি বাংলাদেশের পথে হাঁটা শুরু করল। সংসদীয় গণতন্ত্রের রীতি অনুযায়ী সংসদকে সব ধরনের আলোচনা, বিতর্কের মূলকেন্দ্র করে সংসদীয় গণতন্ত্রের শুভযাত্রা দেখে, আশায় বুক বাঁধা শুরু করল বাংলাদেশের গণতন্ত্রমনা নাগরিকরা।

ছিয়ানব্বই সালের সংসদীয় কার্যক্রমের মধুচন্দ্রিমা বছর দুয়েক চলছিল। এরপর বিভিন্ন ইস্যুতে বিরোধী দল ভিন্ন মত পোশন করায় সংসদীয় রীতি অনুযায়ী ওয়াক আউট করা শুরু হলো। প্রথমত কম সময়ের জন্য এরপর দীর্ঘ ওয়াকআউট এবং সর্বশেষে সংসদ বর্জন। সংসদকে কেন্দ্র করে মানুষের মনে যে আশা, আকাক্সক্ষার ডালপালা বিস্তৃত হতে শুরু করেছিল, তা ক্রমেই যেন বিবর্ণ হতে শুরু করল। শীতের কুয়াশা যেন, বসন্তে সদ্য গজানো সবুজ পাতাকে বর্ণহীন করা শুরু করল। একপর্যায়ে মানুষ কিছুটা আশাহত হতে শুরু করল। ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের সংসদ অধিবেশনের কার্যক্রম পুর্বের ধারা অনুসরণ করায়, সংসদীয় গণতন্ত্র কিছুটা স্থবির হয়ে পড়ল। স্বাভাবিকভাবে সংসদীয় কার্যক্রম চলতে না পারায়, সংসদের ভেতর সুরাহা হওয়ার মতো রাজনৈতিক ইস্যুগুলো ধীরে ধীরে রাজ পথে আসা শুরু করল। সংসদীয় রাজনীতির যে নবজন্ম ঘটেছিল ১৯৯৬ সালের সংসদে, ধীরে ধীরে তা’ রুটিন কার্যক্রমে রূপান্তরিত হতে শুরু করল। সংসদীয় কার্যক্রমের বিষয়ে নাগরিকদের মনে জন্ম নেয়া কৌতূহলও ধীরে ধীরে উবে যাওয়ার উপক্রম হলো। এরপর ২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারিতে শুরু হওয়া নবম জাতীয় সংসদ এবং ২০১৯ সালের ৩ জানুয়ারিতে শুরু হওয়া একাদশ জাতীয় সংসদ একইভাবে কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া রুটিন কার্যক্রমেই মনোযোগী হলো; আশা জাগানিয়া সংসদীয় রীতির বিকাশ পরিপূর্ণ ডানা মেলতে ব্যর্থ হলো। সংসদীয় রাজনীতি, সংসদীয় গণতন্ত্রের আজকের এই জীর্ণশীর্ণ অবস্থার জন্য কারা দায়ী, বিকশিত না হওয়ার অন্তর্নিহিত কারণগুলো কি ছিল সে বিশ্লেষণ বা বিতর্কে না গিয়ে এর ফলে কি ঘটল, সেই আলোচনার কিছুটা সূত্রপাত করি আজ।

ফলাফল নিয়ে আলোচনা করতে হলে প্রেক্ষাপটের সামান্য বিশ্লেষণ প্রয়োজন। পঁচাত্তর সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর, বাংলাদেশের রাজনীতি স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন ও প্রতিশ্রুতির পথ থেকে ধীরে ধীরে সরে যেতে থাকে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি দুর্বৃত্তরা, তারা পরিকল্পিতভাবে কারা-আইন লঙ্ঘন করে কারাগারের সেলে প্রবেশ করে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করে। এই চার নেতা হত্যার মাধ্যমে প্রক্রিয়াগত গণতান্ত্রিক রাজনীতিকে নিষ্ঠুরভাবে আক্রমণ করা হয়। পাকিস্তানের ২৩ বছর আন্দোলনের পথ বেয়ে বাংলাদেশের মানুষ, গণমুখী রাজনীতির যে স্বপ্ন বুনেছিল, সে স্বপ্নকে ধূলিস্যাত করার সব আয়োজন সম্পন্ন করা হয়। রাজনীতির মাঠ থেকে অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদদের দূরে সরিয়ে দেয়া হয় ক্রমান্বয়ে। তাদের শূন্যস্থানে রাজনীতিতে অনভিজ্ঞ কিন্তু বাণিজ্যে অভিজ্ঞ শিল্পপতিদের র নিয়ে এসে পূর্ণ করা হয়। শুধু শিল্পপতি নয়, রাজনীতিতে আগমন ঘটে সামরিক, বেসামরিক অবসরপ্রাপ্ত আমলা, ব্যবসায়ী এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের সরাসরি বিরোধিতাকারী, আত্মগোপনকারী বাংলাদেশবিরোধী নেতাদেরকেও।

তৃণমূল থেকে রাজনীতির পাঠ নিয়ে ধীরে ধীরে, জনগণের অন্তরের বাণী অনুভব করে, রাজনৈতিক নেতা হওয়ার সর্বজনীনভাবে গৃহীত গণতান্ত্রিক পথকে রুদ্ধ করে দেয়া হয়। রাজনীতির মাঠ থেকে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের পরিকল্পিত উপায়ে বিযুক্তকরণের প্রক্রিয়ার সূচনা ঘটে, যে প্রক্রিয়া সময়ের আবর্তে আজ অনেক শক্তিশালী রূপ ধারণ করেছে। যে প্রক্রিয়া এখন অনেকটা আমাদের আমলাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির অংশ। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সংসদ নির্বাচনে জয় লাভ করলেও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় তাদের অংশগ্রহণ দিনদিন সীমিত হয়ে পড়ছে। অবসরপ্রাপ্ত আমলারা এখন সবচেয়ে প্রভাবশালী উপদেষ্টা। রাষ্ট্রপরিচালনায় কর্মরত আমলাদের গুরুত্ব ও প্রভাব দিনে দিনে বেড়ে চলেছে।

সম্প্রতি বাজেট অধিবেশনে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর, প্রাক্তন মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বিষয়টিকে আলোচনায় নিয়ে এসেছেন। তিনি সরকারের আমলা নির্ভরতা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেন। বাজেট অধিবেশন চলাকালে গত ২৮ জুন এ’ বিষয়টি যখন আলোচনা হয়, তখন সংসদ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। আওয়ামী লীগের প্রবীন নেতা ও সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ অনেকের মনে জমে থাকা ক্ষোভের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসেন।

গণতন্ত্রের মূল বাণী অনুসরণ করে যে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স আছে, সেখানেও জনপ্রতিনিধিদের আমলাদের ওপরে স্থান দেয়া আছে অর্থাৎ ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স অনুযায়ী সাংসদেরা সচিবদের ওপরে স্থান পান। আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা তোফায়েল আহমেদ এ বিষয়টি আমলাদের মনে রাখতে অনুরোধ করেছেন। রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগেরই উচিত জনপ্রতিনিধিদের সম্মান, দায়িত্ব বাড়িয়ে তোলার জন্য কাজ করা। দিনের শেষে তাদেরই নির্বাচকমন্ডলীর কাছে জবাবদিহি করতে হয়। সরকারের আমলা নির্ভরতা আওয়ামী লীগের ভেতরেই এখন আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আওয়ামী লীগের যে সব গণমুখী নেতা এখনও অবশিষ্ট আছেন তাদের মূল দুশ্চিন্তা, দলটি কি এই প্রক্রিয়ায় মাধ্যেমে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

হঠাৎ আলোর ঝলকানির মতো বিষয়টি নিয়ে যে সংসদে আলোচনা শুরু হয়েছে, এটি অত্যন্ত আশার বিষয়। তবে পরিতাপের বিষয়, গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে যতোটুকু প্রতিক্রিয়া আশা করা গিয়েছিল, সে রকম প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। গণতন্ত্রের বিকাশ, জবাদিহির সংস্কৃতি, রাজনৈতিক নেতাদের দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার স্বার্থে, এ বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে।

আমলা নির্ভরতার উদাহরণ হিসেবে যে বিষয়গুলো সংসদে উঠে এসেছে তার অন্যতম হলো, ‘মুজিব বর্ষের’ অনুষ্ঠান এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানমালায় আমলাদের প্রাধান্য। রাজীতিবিদদের থেকে বঙ্গবন্ধুকে কি আমলারা ভালো চেনেন? বিষয়টি যদি ব্যবস্থাপনার সক্ষমতার জন্য করা হয় তাহলে রাজনীতিবিদদের প্রাধান্য দিয়ে আমলাদের কি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া যেত না। সরকারি দলের অনেক জ্যেষ্ঠ নেতা এ’ বিষয়টি নিয়ে আড়ালে আবডালে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। বিষয়টি নিশ্চয়ই দল হিসাবে আওয়ামী লীগের জন্য সুখকর নয়?

সরকারি ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা যে বিষয়টি নিয়ে সব চেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন তা হলো, করোনা সংক্রমণ ও ত্রাণ কার্যক্রম সমন্বয়ে প্রতিটি জেলায় নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের পাশ কাটিয়ে একজন করে সচিবকে দায়িত্ব দেয়া। জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হয় সংসদ সদস্যদের কিন্তু সংক্রমণ ও ত্রাণ বিতরণের মূল দায়িত্ব সচিবদের। বিষয়টি গণতন্ত্রের মূল বাণীর সঙ্গে এতোই সাংঘর্ষিক যে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বিবেচনায় এ ধরনের সিদ্ধান্তকে আত্মঘাতীও বলা যায়। এ বিষয়ে অভিজ্ঞ পার্লামেন্টেরিয়ান তোফায়েল আহমেদের ভাষ্য আমাদের সুস্পষ্ট ধারণা দেবে। তিনি সংসদে তার বক্তব্যে বলেন “, ...এখন আমাদের জেলায় জেলায় দেয়া হয়েছে প্রশাসনিক কর্মকর্তা। মানুষ মনে করে, আমরা যা দিই, এটা প্রশাসনিক কর্মকর্তারাই দেন। অথচ প্রশাসনিক যারা কর্মকর্তা, তারা কিন্তু মাঠে যানইনি। ... এটা কিন্তু ঠিক নয়। রাজনৈতিক সরকার এবং রাজনীতিবিদদের যে কর্তৃত্ব, কাজ, সেটা কিন্তু ম্লান হয়ে যায়। “আমার মনে হয় তোফায়েল আহমেদের এ বক্তব্যের বিশ্লেষণ করার প্রয়োজন নেই। গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে হলে, তার দেয়া উপদেশ কিংবা পরামর্শ আমাদের মেনে চলা উচিত।

এবার আমাদের ফিরতে হবে। আমাদের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সংস্কৃতির দিকে তাকাতে হবে। আওয়ামী লীগের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী দল যাদের শেকড় জনগণের মনের গহীনে প্রোথিত, তাদের সাময়িক ক্ষমতায় থাকার কথা চিন্তা না করে, দীর্ঘস্থায়ীভাবে জনগণের প্রিয় দল হিসেবে রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকার বিষয়টি ভাবতে হবে। সামরিক সরকারের সূচিত রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি আওয়ামী লীগের জন্য মোটেই প্রাসঙ্গিক নয়। বঙ্গবন্ধু আমৃত্যু জনগণের শক্তি, জনগণের প্রতিনিধিদের শক্তির ওপর ভর করে রাজনীতি করে গেছেন। বঙ্গবন্ধুর সুচিত পথেই পা বাড়াতে হবে। ঔপনিবেশিক শাসন আমলের মতো আমলা নির্ভরতা নয়, কারণ আমলা নির্ভরতা জনগণ থেকে রাজনৈতিক দলকে দূরে সরিয়ে দেয়। আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে টেকসই করতে হলে, মানবিক রাষ্ট্র গড়ে তুলতে হলে গণতন্ত্রের সার্বিক বিকাশের কথা ভাবতে হবে। আমলাতন্ত্রের ওপর নির্ভরশীলতা কখনও সুষম ও মানবিক উন্নয়নের পথকে মসৃণ করে না। গণশক্তির ওপর ভিত্তি করে আমরা চাই ন্যায়ভিত্তিক সুষম উন্নয়নমুখী বাংলাদেশ গড়ে তুলতে।

[লেখক : উন্নয়ন গবেষক]

চিকিৎসা জগতের বাতিঘর জন হপকিনস বিশ^বিদ্যালয়

জলবায়ু পরিবর্তনের দৃশ্যমান প্রভাব

দুর্নীতির বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবস্থান ও আজকের বাংলাদেশ

আবিষ্কারমূলক শিখন পদ্ধতি

টেকসই কৃষিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্ভাবনা

ছবি

জয়নুলের সাঁওতাল দম্পতি এবং সুমনের সৌন্দর্যপ্রিয়তা

এরপরও কি গাছ লাগাবেন না, বন রক্ষা করবেন না?

বিশ্ব ধরিত্রী দিবস

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিলের শেষ কোথায়

খুব জানতে ইচ্ছে করে

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের সংকট?

কৃষিগুচ্ছ : ভর্তির আবেদনের নূ্যূনতম যোগ্যতা ও ফলাফল প্রস্তুতিতে বৈষম্য

ছবি

গণপরিবহনে নৈরাজ্যের শেষ কোথায়

ছাত্র রাজনীতি : পক্ষে-বিপক্ষে

ছবি

বি আর আম্বেদকর : নিম্নবর্গের মানুষের প্রতিনিধি

চেকের মামলায় আসামির মুক্তির পথ কী

রাম-নবমী : হিন্দুত্বের নয়া গবেষণাগার

‘একটি গ্রাম একটি পণ্য’ উদ্যোগ কি সফল হবে

কিশোর গ্যাং : সমস্যার মূলে যেতে হবে

গীতি চলচ্চিত্র ‘কাজল রেখা’ : সুস্থধারার চলচ্চিত্র বিকাশ ঘটুক

ছবি

ঋতুভিত্তিক চিরায়ত বাঙালি সংস্কৃতি

ছবি

স্মরণ : কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস

দাবদাহে সুস্থ থাকবেন কীভাবে

কত দিন পরে এলে, একটু শোনো

রম্যগদ্য : আনন্দ, দ্বিগুণ আনন্দ...

ছবি

ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় নাম

বৈসাবি : ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বর্ষবরণ উৎসব

‘ইন্ডিয়া আউট’ ক্যাম্পেইন

উদার-উদ্দাম বৈশাখ চাই

ঈদ নিয়ে আসুক শান্তি ও সমৃদ্ধি, বিস্তৃত হোক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ

প্রসঙ্গ: বিদেশি ঋণ

ছাত্ররাজনীতি কি খারাপ?

জাকাত : বিশ্বের প্রথম সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা

বাংলাদেশ স্কাউটস দিবস : শুরুর কথা

ছবি

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত

tab

উপ-সম্পাদকীয়

গণতন্ত্রের বিকাশ ও ঔপনিবেশিক ধরনের আমলা নির্ভরতা

শেখর ভট্টাচার্য

শুক্রবার, ১৬ জুলাই ২০২১

দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ যখন বিপুল জনসমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় ফিরে এলো, তখন সংসদ ও সংসদীয় কার্যক্রম কিছুটা প্রাণ ফিরে পেল, সক্রিয় হয়ে উঠলো সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটিগুলো। সংসদের ভেতরে কি ঘটছে এ নিয়ে সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে অনেক কৌতূহল লক্ষ্য করা গেল। আমার মনে আছে মানুষ সংসদ অধিবেশনের নানা জন-গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তর্ক-বিতর্ক, আগ্রহ ও গুরুত্বের সঙ্গে উপভোগ করা শুরু করল। তুখোড় পার্লামেন্টেরিয়ান সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, তোফায়েল আহমেদ, মওদুদ আহমেদের মতো উচ্চমানের পার্লামেন্টেরিয়ানদের মধ্যে বিতর্ক এবং সঙ্গে কিছু রসালাপ রাজনৈতিক সচেতন মানুষের মনে আশার আলো জ্বেলে দিয়েছিল। গণতন্ত্রের পথের কুসুমাস্তীর্ণ যাত্রা বুঝি শুরু হলো, এ’ কথা ভেবে অনেকেই আশ্বস্থ হয়েছিলেন। ছিয়ানব্বই সালের সংসদীয় অধিবেশনগুলোর শুরুর দিকের কথা মনে হলে অবাক লাগে। এখন যেমন ক্রিকেট পাগল বাঙালি বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা দেখতে পথে ঘাটে, অফিস আদালত, চায়ের দোকান যে কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের খেলা উপভোগ করে ঠিক একইরকমভাবে ছিয়ানব্বই সালের সংসদীয় অধিবেশনও মানুষ যে কোন জায়গায় বসে, দাঁড়িয়ে উপভোগ করার জন্য উদগ্রীব থাকত। তবে খেলা দেখার মতো সৌখিন মানসিকতা নিয়ে নয়, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে অনুধাবন করার জন্য। ৯৬ সালের সংসদের গোড়ার দিকে সংসদীয় কার্যক্রমে সামান্য গতি পাওয়াতে মানুষের ভেতর এক অভাবনীয় সাড়া এবং সীমাহীন আশাও পরিলক্ষিত হলো। রাজনৈতিক সচেতন মানুষ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা ভাবলেন, বাংলাদেশ বুঝি বাংলাদেশের পথে হাঁটা শুরু করল। সংসদীয় গণতন্ত্রের রীতি অনুযায়ী সংসদকে সব ধরনের আলোচনা, বিতর্কের মূলকেন্দ্র করে সংসদীয় গণতন্ত্রের শুভযাত্রা দেখে, আশায় বুক বাঁধা শুরু করল বাংলাদেশের গণতন্ত্রমনা নাগরিকরা।

ছিয়ানব্বই সালের সংসদীয় কার্যক্রমের মধুচন্দ্রিমা বছর দুয়েক চলছিল। এরপর বিভিন্ন ইস্যুতে বিরোধী দল ভিন্ন মত পোশন করায় সংসদীয় রীতি অনুযায়ী ওয়াক আউট করা শুরু হলো। প্রথমত কম সময়ের জন্য এরপর দীর্ঘ ওয়াকআউট এবং সর্বশেষে সংসদ বর্জন। সংসদকে কেন্দ্র করে মানুষের মনে যে আশা, আকাক্সক্ষার ডালপালা বিস্তৃত হতে শুরু করেছিল, তা ক্রমেই যেন বিবর্ণ হতে শুরু করল। শীতের কুয়াশা যেন, বসন্তে সদ্য গজানো সবুজ পাতাকে বর্ণহীন করা শুরু করল। একপর্যায়ে মানুষ কিছুটা আশাহত হতে শুরু করল। ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের সংসদ অধিবেশনের কার্যক্রম পুর্বের ধারা অনুসরণ করায়, সংসদীয় গণতন্ত্র কিছুটা স্থবির হয়ে পড়ল। স্বাভাবিকভাবে সংসদীয় কার্যক্রম চলতে না পারায়, সংসদের ভেতর সুরাহা হওয়ার মতো রাজনৈতিক ইস্যুগুলো ধীরে ধীরে রাজ পথে আসা শুরু করল। সংসদীয় রাজনীতির যে নবজন্ম ঘটেছিল ১৯৯৬ সালের সংসদে, ধীরে ধীরে তা’ রুটিন কার্যক্রমে রূপান্তরিত হতে শুরু করল। সংসদীয় কার্যক্রমের বিষয়ে নাগরিকদের মনে জন্ম নেয়া কৌতূহলও ধীরে ধীরে উবে যাওয়ার উপক্রম হলো। এরপর ২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারিতে শুরু হওয়া নবম জাতীয় সংসদ এবং ২০১৯ সালের ৩ জানুয়ারিতে শুরু হওয়া একাদশ জাতীয় সংসদ একইভাবে কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া রুটিন কার্যক্রমেই মনোযোগী হলো; আশা জাগানিয়া সংসদীয় রীতির বিকাশ পরিপূর্ণ ডানা মেলতে ব্যর্থ হলো। সংসদীয় রাজনীতি, সংসদীয় গণতন্ত্রের আজকের এই জীর্ণশীর্ণ অবস্থার জন্য কারা দায়ী, বিকশিত না হওয়ার অন্তর্নিহিত কারণগুলো কি ছিল সে বিশ্লেষণ বা বিতর্কে না গিয়ে এর ফলে কি ঘটল, সেই আলোচনার কিছুটা সূত্রপাত করি আজ।

ফলাফল নিয়ে আলোচনা করতে হলে প্রেক্ষাপটের সামান্য বিশ্লেষণ প্রয়োজন। পঁচাত্তর সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর, বাংলাদেশের রাজনীতি স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন ও প্রতিশ্রুতির পথ থেকে ধীরে ধীরে সরে যেতে থাকে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি দুর্বৃত্তরা, তারা পরিকল্পিতভাবে কারা-আইন লঙ্ঘন করে কারাগারের সেলে প্রবেশ করে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করে। এই চার নেতা হত্যার মাধ্যমে প্রক্রিয়াগত গণতান্ত্রিক রাজনীতিকে নিষ্ঠুরভাবে আক্রমণ করা হয়। পাকিস্তানের ২৩ বছর আন্দোলনের পথ বেয়ে বাংলাদেশের মানুষ, গণমুখী রাজনীতির যে স্বপ্ন বুনেছিল, সে স্বপ্নকে ধূলিস্যাত করার সব আয়োজন সম্পন্ন করা হয়। রাজনীতির মাঠ থেকে অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদদের দূরে সরিয়ে দেয়া হয় ক্রমান্বয়ে। তাদের শূন্যস্থানে রাজনীতিতে অনভিজ্ঞ কিন্তু বাণিজ্যে অভিজ্ঞ শিল্পপতিদের র নিয়ে এসে পূর্ণ করা হয়। শুধু শিল্পপতি নয়, রাজনীতিতে আগমন ঘটে সামরিক, বেসামরিক অবসরপ্রাপ্ত আমলা, ব্যবসায়ী এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের সরাসরি বিরোধিতাকারী, আত্মগোপনকারী বাংলাদেশবিরোধী নেতাদেরকেও।

তৃণমূল থেকে রাজনীতির পাঠ নিয়ে ধীরে ধীরে, জনগণের অন্তরের বাণী অনুভব করে, রাজনৈতিক নেতা হওয়ার সর্বজনীনভাবে গৃহীত গণতান্ত্রিক পথকে রুদ্ধ করে দেয়া হয়। রাজনীতির মাঠ থেকে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের পরিকল্পিত উপায়ে বিযুক্তকরণের প্রক্রিয়ার সূচনা ঘটে, যে প্রক্রিয়া সময়ের আবর্তে আজ অনেক শক্তিশালী রূপ ধারণ করেছে। যে প্রক্রিয়া এখন অনেকটা আমাদের আমলাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির অংশ। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সংসদ নির্বাচনে জয় লাভ করলেও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় তাদের অংশগ্রহণ দিনদিন সীমিত হয়ে পড়ছে। অবসরপ্রাপ্ত আমলারা এখন সবচেয়ে প্রভাবশালী উপদেষ্টা। রাষ্ট্রপরিচালনায় কর্মরত আমলাদের গুরুত্ব ও প্রভাব দিনে দিনে বেড়ে চলেছে।

সম্প্রতি বাজেট অধিবেশনে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর, প্রাক্তন মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বিষয়টিকে আলোচনায় নিয়ে এসেছেন। তিনি সরকারের আমলা নির্ভরতা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেন। বাজেট অধিবেশন চলাকালে গত ২৮ জুন এ’ বিষয়টি যখন আলোচনা হয়, তখন সংসদ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। আওয়ামী লীগের প্রবীন নেতা ও সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ অনেকের মনে জমে থাকা ক্ষোভের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসেন।

গণতন্ত্রের মূল বাণী অনুসরণ করে যে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স আছে, সেখানেও জনপ্রতিনিধিদের আমলাদের ওপরে স্থান দেয়া আছে অর্থাৎ ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স অনুযায়ী সাংসদেরা সচিবদের ওপরে স্থান পান। আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা তোফায়েল আহমেদ এ বিষয়টি আমলাদের মনে রাখতে অনুরোধ করেছেন। রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগেরই উচিত জনপ্রতিনিধিদের সম্মান, দায়িত্ব বাড়িয়ে তোলার জন্য কাজ করা। দিনের শেষে তাদেরই নির্বাচকমন্ডলীর কাছে জবাবদিহি করতে হয়। সরকারের আমলা নির্ভরতা আওয়ামী লীগের ভেতরেই এখন আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আওয়ামী লীগের যে সব গণমুখী নেতা এখনও অবশিষ্ট আছেন তাদের মূল দুশ্চিন্তা, দলটি কি এই প্রক্রিয়ায় মাধ্যেমে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

হঠাৎ আলোর ঝলকানির মতো বিষয়টি নিয়ে যে সংসদে আলোচনা শুরু হয়েছে, এটি অত্যন্ত আশার বিষয়। তবে পরিতাপের বিষয়, গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে যতোটুকু প্রতিক্রিয়া আশা করা গিয়েছিল, সে রকম প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। গণতন্ত্রের বিকাশ, জবাদিহির সংস্কৃতি, রাজনৈতিক নেতাদের দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার স্বার্থে, এ বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে।

আমলা নির্ভরতার উদাহরণ হিসেবে যে বিষয়গুলো সংসদে উঠে এসেছে তার অন্যতম হলো, ‘মুজিব বর্ষের’ অনুষ্ঠান এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানমালায় আমলাদের প্রাধান্য। রাজীতিবিদদের থেকে বঙ্গবন্ধুকে কি আমলারা ভালো চেনেন? বিষয়টি যদি ব্যবস্থাপনার সক্ষমতার জন্য করা হয় তাহলে রাজনীতিবিদদের প্রাধান্য দিয়ে আমলাদের কি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া যেত না। সরকারি দলের অনেক জ্যেষ্ঠ নেতা এ’ বিষয়টি নিয়ে আড়ালে আবডালে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। বিষয়টি নিশ্চয়ই দল হিসাবে আওয়ামী লীগের জন্য সুখকর নয়?

সরকারি ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা যে বিষয়টি নিয়ে সব চেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন তা হলো, করোনা সংক্রমণ ও ত্রাণ কার্যক্রম সমন্বয়ে প্রতিটি জেলায় নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের পাশ কাটিয়ে একজন করে সচিবকে দায়িত্ব দেয়া। জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হয় সংসদ সদস্যদের কিন্তু সংক্রমণ ও ত্রাণ বিতরণের মূল দায়িত্ব সচিবদের। বিষয়টি গণতন্ত্রের মূল বাণীর সঙ্গে এতোই সাংঘর্ষিক যে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বিবেচনায় এ ধরনের সিদ্ধান্তকে আত্মঘাতীও বলা যায়। এ বিষয়ে অভিজ্ঞ পার্লামেন্টেরিয়ান তোফায়েল আহমেদের ভাষ্য আমাদের সুস্পষ্ট ধারণা দেবে। তিনি সংসদে তার বক্তব্যে বলেন “, ...এখন আমাদের জেলায় জেলায় দেয়া হয়েছে প্রশাসনিক কর্মকর্তা। মানুষ মনে করে, আমরা যা দিই, এটা প্রশাসনিক কর্মকর্তারাই দেন। অথচ প্রশাসনিক যারা কর্মকর্তা, তারা কিন্তু মাঠে যানইনি। ... এটা কিন্তু ঠিক নয়। রাজনৈতিক সরকার এবং রাজনীতিবিদদের যে কর্তৃত্ব, কাজ, সেটা কিন্তু ম্লান হয়ে যায়। “আমার মনে হয় তোফায়েল আহমেদের এ বক্তব্যের বিশ্লেষণ করার প্রয়োজন নেই। গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে হলে, তার দেয়া উপদেশ কিংবা পরামর্শ আমাদের মেনে চলা উচিত।

এবার আমাদের ফিরতে হবে। আমাদের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সংস্কৃতির দিকে তাকাতে হবে। আওয়ামী লীগের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী দল যাদের শেকড় জনগণের মনের গহীনে প্রোথিত, তাদের সাময়িক ক্ষমতায় থাকার কথা চিন্তা না করে, দীর্ঘস্থায়ীভাবে জনগণের প্রিয় দল হিসেবে রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকার বিষয়টি ভাবতে হবে। সামরিক সরকারের সূচিত রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি আওয়ামী লীগের জন্য মোটেই প্রাসঙ্গিক নয়। বঙ্গবন্ধু আমৃত্যু জনগণের শক্তি, জনগণের প্রতিনিধিদের শক্তির ওপর ভর করে রাজনীতি করে গেছেন। বঙ্গবন্ধুর সুচিত পথেই পা বাড়াতে হবে। ঔপনিবেশিক শাসন আমলের মতো আমলা নির্ভরতা নয়, কারণ আমলা নির্ভরতা জনগণ থেকে রাজনৈতিক দলকে দূরে সরিয়ে দেয়। আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে টেকসই করতে হলে, মানবিক রাষ্ট্র গড়ে তুলতে হলে গণতন্ত্রের সার্বিক বিকাশের কথা ভাবতে হবে। আমলাতন্ত্রের ওপর নির্ভরশীলতা কখনও সুষম ও মানবিক উন্নয়নের পথকে মসৃণ করে না। গণশক্তির ওপর ভিত্তি করে আমরা চাই ন্যায়ভিত্তিক সুষম উন্নয়নমুখী বাংলাদেশ গড়ে তুলতে।

[লেখক : উন্নয়ন গবেষক]

back to top