alt

উপ-সম্পাদকীয়

ফল ও সবজি রপ্তানি এবং কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউজ

জগৎ চাঁদ মালাকার

: শনিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১

কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউসের কার্যক্রম শুরুর পর থেকে কয়েকটি নতুন আইটেমসহ প্রায় শতাধিক কৃষিপণ্য সফলতার সঙ্গে সর্বনিম্ন Non Compliance-এর মাধ্যমে ইউরোপের ১০টি দেশে রপ্তানি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এ রপ্তানির পরিমাণ ও পণ্যের সুনাম ওইসব দেশে উত্তর উত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। সবার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলে এবং কৃষি মন্ত্রণালয়, কৃষক ও রপ্তানিকারসহ সংশ্লিষ্টদের পূর্ণ সহযোগিতা পেলে বাংলাদেশে গার্মেন্ট শিল্পের পরে রপ্তানির ক্ষেত্রে তাজা শাকসবজি ও ফলমূলের অবস্থান হবে বলে আশা করা যায়। বর্তমান সরকারের কৃষিবান্ধব নীতির কারণে দানাদার খাদ্যশস্যের পাশাপাশি শাকসবজি ও ফলমূল উৎপাদনে দেশে ব্যাপক সাফল্য অর্জিত হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ বিশে^র মধ্যে ধান ও শাকসবজির উৎপাদনে তৃতীয়, আম উৎপাদনে সপ্তম, আলু ও পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম এবং মোট খাদ্যশস্য উৎপাদনে দশম স্থান অধিকার করে কৃষি উন্নয়নের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। কিন্তু উৎপাদিত কৃষিজ পণ্য রপ্তানির এক বিশাল সম্ভাবনা থাকলেও সেই সুযোগ আমরা পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারছি না। বাংলাদেশ বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার সদস্য রাষ্ট্র এবং International Plant Protection Convention (IPPC) এ স্বাক্ষরকারী দেশ। তাই বিশাল জনগোষ্ঠীর খাদ্যা নিরাপত্তার জন্য দেশের কৃষিকে রক্ষার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে WTO-SPS Agreement এবং International Plant Protection Convention (IPPC)-এর বিধি বিধান অনুসরণ করা সকল দেশের জন্য বাধ্যতামূলক।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশসমূহে কৃষিপণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে Non Compliance-এর মাত্রা কমানোর লক্ষ্যে Eropean Union (EU) চাহিদার ভিত্তিতে ২০১৪ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, ঢাকার অদূরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ঢাকা থেকে ২৭ কি.মি. দক্ষিণে ঢাকা নারায়ণগঞ্জ সড়কের পূর্বদিকে শ্যামপুরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নিজস্ব জায়গার ওপর “বাংলাদেশে ফাইটোস্যানিটারি সামর্থ্য শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের” আওতায় কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউস নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে তিনতলা বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউস স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়। একই বছরের মে মাস থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে আম রপ্তানির মাধ্যমে বাংলাদেশের একমাত্র আন্তর্জাতিকমানের কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউসের কার্যক্রম শুরু হয়। একইসঙ্গে অন্যন্য ফলমূল ও শাকসব্জি রপ্তানির মাধ্যমে কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউস থেকে পুরোদমে রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হয় এবং কোন রকম Non Compliance ছাড়াই ২০১৭ সালে সফলতার সঙ্গে রপ্তানিকার্য সম্পাদন করে।

উল্লেখযোগ্য-অর্জনসমূহ : উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্র, কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউস, শ্যামপুর, ঢাকা এর মাধ্যমে ২০১৭ সালে ইউরোপের ১০টি দেশে মানসম্মত উদ্ভিদ ও উদ্ভিদ জাত পণ্য সুষ্ঠুভাবে সটিং, গ্রেডিং করে রপ্তানি করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউস প্রতিষ্ঠার আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নে যেখানে প্রতি বছর প্রায় ১২০-১৭০টি Non Compliance Notification হতো সেখানে কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউস প্রতিষ্ঠার পর প্রতি বছর গড়ে ১০টির বেশি Non Compliance Notification হচ্ছে না। বিগত ২০১৭-১৮ সাল থেকে উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্র, কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউস, শ্যামপুর, ঢাকা, মাধ্যমে ১০০% কম্পিউটারাইজড পিসি প্রদান করা কাজ নিশ্চিত করা হয়েছে। রপ্তানির বিভিন্ন বিষয়ে কৃষক/কৃষাণি, কর্মকর্তা/কর্মচারীদের জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউসে একটি এক্রিডিয়েটেড ল্যাব স্থাপনের কার্য়ক্রম চলমান রয়েছে। কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউস হতে নিজস্ব তালা ও সিলগালা ব্যবহারের মাধ্যমে প্যাকিং হাউস হতে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত রপ্তানিকৃত পণ্য নিরাপদে পরিবহন করা নিশ্চিত কার হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশসমূহে তাজা ফলমূল ও শাকসবজির রপ্তানির পরিমাণ ও পণ্যের গুণগত মান উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সীমাবদ্ধতা : বাংলাদেশের কৃষিজাত পণ্যের বিদেশে ব্যাপক চাহিদা ও সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও রপ্তানির ক্ষেত্রে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জন কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যাহত হচ্ছে। যার মধ্যে কাচা শাকসবজি, ফলমূল ইত্যাদির উৎপাদন পর্যায়ে মানসম্মত উৎপাদন কলাকৌশল গ্রহণ না করা, পরিবহন সমস্যা, নিম্নমানের মোড়ক ও প্যাকেটজাতকরণ এবং মানসম্মত পণ্য সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যবস্থা না থাকা। ভেপার হিট ট্রিটম্যান্টের ব্যবস্থা না থাকায় জাপানসহ কয়েকটি দেশে আম রপ্তানি করা যায় না।

কি করলে ঝুঁকি কমবে : পরিবর্তনশীল বৈরী জলবায়ুর সঙ্গে প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে Plant Pathogen-এর ধরন ও গতি প্রকৃতি। পরিবর্তিত এই পরিস্থিতি মোকবিলা করে “ফুড সেফটি ও ফুড সিকিউরিটি”র বিবেচনায় প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ববাণিজ্যে বাংলাদেশের উদ্ভিদ ও উদ্ভিদজাত পণ্য রপ্তানি সম্প্রসারণের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক বিধি বিধান ও চাহিদা পূরণ স্বাপেক্ষে ক্ষতিকারক সঙ্গনিরোধ রোগ ও পোকা-মাকড় মুক্ত নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত মানসম্মত পণ্য রপ্তানি নিশ্চিত করা উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধের অন্যতম চ্যালেঞ্জ। পার্শ্ববর্তী দেশসমূহের সঙ্গে সমন্বয় করে বিমান ভাড়া নির্ধারণ প্রয়োজন । কর্মকর্তা কর্মচারীদের দেশে ও বিদেশে রপ্তানি বৃদ্ধি-সংক্রান্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। রপ্তানিকারক ও অফিশিয়াল জনবলদের দক্ষ করতে হবে।

উপসংহার : আগামী দিনের বিশ্ব পরিস্থিতি কি হবে আর আমাদের জন্যই বা কি অপেক্ষা করছে-তা পুরোপুরি অনিশ্চিত। এরই মধ্যে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হয়ে আগামীতে খাদ্য সংকট হতে পারে মর্মে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এরই মধ্যে সতর্ক করেছেন। কৃষি মন্ত্রালয়ের দায়িত্বে মাননীয় কৃষিমন্ত্রী মহোদয় করোনাকালীন সময় এ খাদ্য সমস্যা মোকাবিলার জন্য নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছেন। আগামী দিনের কৃষিতেও করোনার মতো অজানা রোগজীবাণু সংক্রমণের ভয়াল থাবায় খাদ্য সমস্যা প্রকটতর পর্যায়ে পৌঁছতে পারে। কৃষিপণ্য আমদানি-রপ্তানির জন্য নতুন নতুন বাজার অনুসন্ধান করা জরুরি।

কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউসের স্থাপনের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নে ইন্টারসেপশনের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যহারে কমে যায় তাছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নে রপ্তানি বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে করোনাকালীন সময়ে কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউস থেকে যে পরিমাণ সবজি ও ফল রপ্তানি হয়েছে তা রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো এর রেকর্ডকে অতিক্রম করেছে। পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিত হওয়ার কারণে শিপমেন্টের অর্ডার যেমন বৃদ্ধি পায় সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়। রপ্তানি-সংক্রাস্ত আন্তর্জাতিক বিভিন্ন নির্দেশনা, সিদ্ধান্তসমূহ, বিভিন্ন চুক্তি, পলিসি-সংক্রান্ত সব বিষয় যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে অবহিতকরণের ব্যবস্থা করে চলমান বিশ্বে পার্শ্ববর্তী দেশসমূহের সঙ্গে রপ্তানি প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার মতো পরিস্থিতি নিশ্চিতকরণ প্রয়োজন। কার্গো বিমান/ চার্টাড বিমানের ব্যবস্থাসহ বিমানের স্পেস সহজলভ্যকরণ করা প্রয়োজন। পার্শ্ববর্তী দেশসমূহের সঙ্গে সমন্বয় করে বিমান ভাড়া নির্ধারণ প্রয়োজন। রপ্তানিকারক ও অফিশিয়াল জনবলকে দক্ষ করতে হবে। এক্সপোর্ট কার্গোতে সিভেল অ্যাভিয়েশনের যে স্ক্যানিং মেশিন আছে সে এস ও পি (Stanndard Operating System) তে কোয়ারেন্টাইন পার্সোনেলের কোন এন্ট্রি নেই। যদি এরাইভাল বা ডিপারচার এ স্ক্যানিং এ কোয়ারেন্টাইন প্রতিনিধি থাকে তা হলে তিনি পিসি (Phytosanitary Certificate) ছাড়া বা অন্য কোনভাবে পণ্য নিলে তা আটকাতে পারবেন এবং সরকারের রাজস্ব আদায় নিশ্চিত হবে। বিশ^বাজারে আমাদের কৃষিপণ্য রপ্তানি করতে হলে উৎপাদনকালীন সময়ে Good Agricultural Practices (GAP) নিশ্চিত করা জরুরি, সেইসঙ্গে ঝুঁকিমুক্ত স্বার্থে রপ্তানির পূর্বে এক্রিডিয়েটেড ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরীক্ষা পূর্বক প্রত্যায়ন/সনদ নেয়া প্রয়োজন। সে সঙ্গে একাধিক প্যাকিং হাউসে এক্রিডিয়েটেড ল্যাবরেটরিতে স্থাপন করা প্রয়োজন। জাপানসহ কয়েকটি দেশে আম রপ্তানি করতে হলে, ভেপার হিট ট্রিটম্যান্ট (VHT) ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। তাছাড়া উন্নতমানের প্যাকেটজাতকরণ এবং মান সম্মতপণ্য সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যবস্থা থাকা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

[লেখক : উপপরিচালক (এল.আর) সংযুক্ত-উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ উইং, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর]

চিকিৎসা জগতের বাতিঘর জন হপকিনস বিশ^বিদ্যালয়

জলবায়ু পরিবর্তনের দৃশ্যমান প্রভাব

দুর্নীতির বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবস্থান ও আজকের বাংলাদেশ

আবিষ্কারমূলক শিখন পদ্ধতি

টেকসই কৃষিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্ভাবনা

ছবি

জয়নুলের সাঁওতাল দম্পতি এবং সুমনের সৌন্দর্যপ্রিয়তা

এরপরও কি গাছ লাগাবেন না, বন রক্ষা করবেন না?

বিশ্ব ধরিত্রী দিবস

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিলের শেষ কোথায়

খুব জানতে ইচ্ছে করে

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের সংকট?

কৃষিগুচ্ছ : ভর্তির আবেদনের নূ্যূনতম যোগ্যতা ও ফলাফল প্রস্তুতিতে বৈষম্য

ছবি

গণপরিবহনে নৈরাজ্যের শেষ কোথায়

ছাত্র রাজনীতি : পক্ষে-বিপক্ষে

ছবি

বি আর আম্বেদকর : নিম্নবর্গের মানুষের প্রতিনিধি

চেকের মামলায় আসামির মুক্তির পথ কী

রাম-নবমী : হিন্দুত্বের নয়া গবেষণাগার

‘একটি গ্রাম একটি পণ্য’ উদ্যোগ কি সফল হবে

কিশোর গ্যাং : সমস্যার মূলে যেতে হবে

গীতি চলচ্চিত্র ‘কাজল রেখা’ : সুস্থধারার চলচ্চিত্র বিকাশ ঘটুক

ছবি

ঋতুভিত্তিক চিরায়ত বাঙালি সংস্কৃতি

ছবি

স্মরণ : কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস

দাবদাহে সুস্থ থাকবেন কীভাবে

কত দিন পরে এলে, একটু শোনো

রম্যগদ্য : আনন্দ, দ্বিগুণ আনন্দ...

ছবি

ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় নাম

বৈসাবি : ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বর্ষবরণ উৎসব

‘ইন্ডিয়া আউট’ ক্যাম্পেইন

উদার-উদ্দাম বৈশাখ চাই

ঈদ নিয়ে আসুক শান্তি ও সমৃদ্ধি, বিস্তৃত হোক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ

প্রসঙ্গ: বিদেশি ঋণ

ছাত্ররাজনীতি কি খারাপ?

জাকাত : বিশ্বের প্রথম সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা

বাংলাদেশ স্কাউটস দিবস : শুরুর কথা

ছবি

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত

tab

উপ-সম্পাদকীয়

ফল ও সবজি রপ্তানি এবং কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউজ

জগৎ চাঁদ মালাকার

শনিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১

কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউসের কার্যক্রম শুরুর পর থেকে কয়েকটি নতুন আইটেমসহ প্রায় শতাধিক কৃষিপণ্য সফলতার সঙ্গে সর্বনিম্ন Non Compliance-এর মাধ্যমে ইউরোপের ১০টি দেশে রপ্তানি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এ রপ্তানির পরিমাণ ও পণ্যের সুনাম ওইসব দেশে উত্তর উত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। সবার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলে এবং কৃষি মন্ত্রণালয়, কৃষক ও রপ্তানিকারসহ সংশ্লিষ্টদের পূর্ণ সহযোগিতা পেলে বাংলাদেশে গার্মেন্ট শিল্পের পরে রপ্তানির ক্ষেত্রে তাজা শাকসবজি ও ফলমূলের অবস্থান হবে বলে আশা করা যায়। বর্তমান সরকারের কৃষিবান্ধব নীতির কারণে দানাদার খাদ্যশস্যের পাশাপাশি শাকসবজি ও ফলমূল উৎপাদনে দেশে ব্যাপক সাফল্য অর্জিত হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ বিশে^র মধ্যে ধান ও শাকসবজির উৎপাদনে তৃতীয়, আম উৎপাদনে সপ্তম, আলু ও পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম এবং মোট খাদ্যশস্য উৎপাদনে দশম স্থান অধিকার করে কৃষি উন্নয়নের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। কিন্তু উৎপাদিত কৃষিজ পণ্য রপ্তানির এক বিশাল সম্ভাবনা থাকলেও সেই সুযোগ আমরা পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারছি না। বাংলাদেশ বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার সদস্য রাষ্ট্র এবং International Plant Protection Convention (IPPC) এ স্বাক্ষরকারী দেশ। তাই বিশাল জনগোষ্ঠীর খাদ্যা নিরাপত্তার জন্য দেশের কৃষিকে রক্ষার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে WTO-SPS Agreement এবং International Plant Protection Convention (IPPC)-এর বিধি বিধান অনুসরণ করা সকল দেশের জন্য বাধ্যতামূলক।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশসমূহে কৃষিপণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে Non Compliance-এর মাত্রা কমানোর লক্ষ্যে Eropean Union (EU) চাহিদার ভিত্তিতে ২০১৪ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, ঢাকার অদূরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ঢাকা থেকে ২৭ কি.মি. দক্ষিণে ঢাকা নারায়ণগঞ্জ সড়কের পূর্বদিকে শ্যামপুরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নিজস্ব জায়গার ওপর “বাংলাদেশে ফাইটোস্যানিটারি সামর্থ্য শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের” আওতায় কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউস নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে তিনতলা বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউস স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়। একই বছরের মে মাস থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে আম রপ্তানির মাধ্যমে বাংলাদেশের একমাত্র আন্তর্জাতিকমানের কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউসের কার্যক্রম শুরু হয়। একইসঙ্গে অন্যন্য ফলমূল ও শাকসব্জি রপ্তানির মাধ্যমে কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউস থেকে পুরোদমে রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হয় এবং কোন রকম Non Compliance ছাড়াই ২০১৭ সালে সফলতার সঙ্গে রপ্তানিকার্য সম্পাদন করে।

উল্লেখযোগ্য-অর্জনসমূহ : উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্র, কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউস, শ্যামপুর, ঢাকা এর মাধ্যমে ২০১৭ সালে ইউরোপের ১০টি দেশে মানসম্মত উদ্ভিদ ও উদ্ভিদ জাত পণ্য সুষ্ঠুভাবে সটিং, গ্রেডিং করে রপ্তানি করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউস প্রতিষ্ঠার আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নে যেখানে প্রতি বছর প্রায় ১২০-১৭০টি Non Compliance Notification হতো সেখানে কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউস প্রতিষ্ঠার পর প্রতি বছর গড়ে ১০টির বেশি Non Compliance Notification হচ্ছে না। বিগত ২০১৭-১৮ সাল থেকে উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্র, কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউস, শ্যামপুর, ঢাকা, মাধ্যমে ১০০% কম্পিউটারাইজড পিসি প্রদান করা কাজ নিশ্চিত করা হয়েছে। রপ্তানির বিভিন্ন বিষয়ে কৃষক/কৃষাণি, কর্মকর্তা/কর্মচারীদের জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউসে একটি এক্রিডিয়েটেড ল্যাব স্থাপনের কার্য়ক্রম চলমান রয়েছে। কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউস হতে নিজস্ব তালা ও সিলগালা ব্যবহারের মাধ্যমে প্যাকিং হাউস হতে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত রপ্তানিকৃত পণ্য নিরাপদে পরিবহন করা নিশ্চিত কার হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশসমূহে তাজা ফলমূল ও শাকসবজির রপ্তানির পরিমাণ ও পণ্যের গুণগত মান উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সীমাবদ্ধতা : বাংলাদেশের কৃষিজাত পণ্যের বিদেশে ব্যাপক চাহিদা ও সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও রপ্তানির ক্ষেত্রে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জন কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যাহত হচ্ছে। যার মধ্যে কাচা শাকসবজি, ফলমূল ইত্যাদির উৎপাদন পর্যায়ে মানসম্মত উৎপাদন কলাকৌশল গ্রহণ না করা, পরিবহন সমস্যা, নিম্নমানের মোড়ক ও প্যাকেটজাতকরণ এবং মানসম্মত পণ্য সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যবস্থা না থাকা। ভেপার হিট ট্রিটম্যান্টের ব্যবস্থা না থাকায় জাপানসহ কয়েকটি দেশে আম রপ্তানি করা যায় না।

কি করলে ঝুঁকি কমবে : পরিবর্তনশীল বৈরী জলবায়ুর সঙ্গে প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে Plant Pathogen-এর ধরন ও গতি প্রকৃতি। পরিবর্তিত এই পরিস্থিতি মোকবিলা করে “ফুড সেফটি ও ফুড সিকিউরিটি”র বিবেচনায় প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ববাণিজ্যে বাংলাদেশের উদ্ভিদ ও উদ্ভিদজাত পণ্য রপ্তানি সম্প্রসারণের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক বিধি বিধান ও চাহিদা পূরণ স্বাপেক্ষে ক্ষতিকারক সঙ্গনিরোধ রোগ ও পোকা-মাকড় মুক্ত নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত মানসম্মত পণ্য রপ্তানি নিশ্চিত করা উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধের অন্যতম চ্যালেঞ্জ। পার্শ্ববর্তী দেশসমূহের সঙ্গে সমন্বয় করে বিমান ভাড়া নির্ধারণ প্রয়োজন । কর্মকর্তা কর্মচারীদের দেশে ও বিদেশে রপ্তানি বৃদ্ধি-সংক্রান্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। রপ্তানিকারক ও অফিশিয়াল জনবলদের দক্ষ করতে হবে।

উপসংহার : আগামী দিনের বিশ্ব পরিস্থিতি কি হবে আর আমাদের জন্যই বা কি অপেক্ষা করছে-তা পুরোপুরি অনিশ্চিত। এরই মধ্যে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হয়ে আগামীতে খাদ্য সংকট হতে পারে মর্মে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এরই মধ্যে সতর্ক করেছেন। কৃষি মন্ত্রালয়ের দায়িত্বে মাননীয় কৃষিমন্ত্রী মহোদয় করোনাকালীন সময় এ খাদ্য সমস্যা মোকাবিলার জন্য নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছেন। আগামী দিনের কৃষিতেও করোনার মতো অজানা রোগজীবাণু সংক্রমণের ভয়াল থাবায় খাদ্য সমস্যা প্রকটতর পর্যায়ে পৌঁছতে পারে। কৃষিপণ্য আমদানি-রপ্তানির জন্য নতুন নতুন বাজার অনুসন্ধান করা জরুরি।

কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউসের স্থাপনের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নে ইন্টারসেপশনের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যহারে কমে যায় তাছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নে রপ্তানি বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে করোনাকালীন সময়ে কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউস থেকে যে পরিমাণ সবজি ও ফল রপ্তানি হয়েছে তা রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো এর রেকর্ডকে অতিক্রম করেছে। পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিত হওয়ার কারণে শিপমেন্টের অর্ডার যেমন বৃদ্ধি পায় সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়। রপ্তানি-সংক্রাস্ত আন্তর্জাতিক বিভিন্ন নির্দেশনা, সিদ্ধান্তসমূহ, বিভিন্ন চুক্তি, পলিসি-সংক্রান্ত সব বিষয় যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে অবহিতকরণের ব্যবস্থা করে চলমান বিশ্বে পার্শ্ববর্তী দেশসমূহের সঙ্গে রপ্তানি প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার মতো পরিস্থিতি নিশ্চিতকরণ প্রয়োজন। কার্গো বিমান/ চার্টাড বিমানের ব্যবস্থাসহ বিমানের স্পেস সহজলভ্যকরণ করা প্রয়োজন। পার্শ্ববর্তী দেশসমূহের সঙ্গে সমন্বয় করে বিমান ভাড়া নির্ধারণ প্রয়োজন। রপ্তানিকারক ও অফিশিয়াল জনবলকে দক্ষ করতে হবে। এক্সপোর্ট কার্গোতে সিভেল অ্যাভিয়েশনের যে স্ক্যানিং মেশিন আছে সে এস ও পি (Stanndard Operating System) তে কোয়ারেন্টাইন পার্সোনেলের কোন এন্ট্রি নেই। যদি এরাইভাল বা ডিপারচার এ স্ক্যানিং এ কোয়ারেন্টাইন প্রতিনিধি থাকে তা হলে তিনি পিসি (Phytosanitary Certificate) ছাড়া বা অন্য কোনভাবে পণ্য নিলে তা আটকাতে পারবেন এবং সরকারের রাজস্ব আদায় নিশ্চিত হবে। বিশ^বাজারে আমাদের কৃষিপণ্য রপ্তানি করতে হলে উৎপাদনকালীন সময়ে Good Agricultural Practices (GAP) নিশ্চিত করা জরুরি, সেইসঙ্গে ঝুঁকিমুক্ত স্বার্থে রপ্তানির পূর্বে এক্রিডিয়েটেড ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরীক্ষা পূর্বক প্রত্যায়ন/সনদ নেয়া প্রয়োজন। সে সঙ্গে একাধিক প্যাকিং হাউসে এক্রিডিয়েটেড ল্যাবরেটরিতে স্থাপন করা প্রয়োজন। জাপানসহ কয়েকটি দেশে আম রপ্তানি করতে হলে, ভেপার হিট ট্রিটম্যান্ট (VHT) ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। তাছাড়া উন্নতমানের প্যাকেটজাতকরণ এবং মান সম্মতপণ্য সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যবস্থা থাকা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

[লেখক : উপপরিচালক (এল.আর) সংযুক্ত-উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ উইং, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর]

back to top