জাহিদ অয়ন
গত ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১, রোববার একটি জনস্বার্থ মামলার প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত জরুরি চিকিৎসাসেবা দিতে কোন হাসপাতাল অসম্মতি জ্ঞাপন করতে পারবে না মর্মে আদেশ জারি করেছেন। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি এসএম মনিরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইডঅ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) এবং একাডেমি অফ ল’ অ্যান্ড পলিসির (আলাপ) যৌথ রিট আবেদনের ভিত্তিতে আদেশটি জারি করেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সচিব ও মহাপরিচালক এবং বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) সভাপতিকে মামলার প্রতিপক্ষ করা হয়।
ব্লাস্ট ও আলাপের পক্ষে রাশনা ইমাম, শারমিন আক্তার ও খন্দকার নীলিমা ইয়াসমিন যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করেন। জরুরি ভিত্তিতে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা প্রয়োজন এমন কোন ব্যক্তি হাসপাতালে এলে যত দ্রুত সম্ভব তার জরুরি স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হাসপাতাল অথবা ক্লিনিকগুলোর দায়িত্ব। যদি কোন হাসপাতালে রোগীর জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা উপলভ্য না থাকে, সেক্ষেত্রে প্রাথমিক চিকিৎসা নিশ্চিত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা-সম্পন্ন নিকটস্থ অন্য হাসপাতালে প্রেরণের ব্যবস্থা করাও তাদের দায়িত্ব। সেক্ষেত্রে, অবহেলা বা অসম্মতি জ্ঞাপনকে কেন অবৈধ বা অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না জানতে চেয়ে রুলনিশি জারি করেছেন বিজ্ঞ আদালত।
এছাড়াও আদালত স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং বিএমডিসিকে দেশজুড়ে রোগীদের জরুরি স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে না পারার ব্যর্থতার কারণ দর্শানোর জন্য ৪ সপ্তাহ সময় দিয়েছেন। নির্দেশ দিয়েছেন আগামী ৩ মাসের মধ্যে বাংলাদেশের সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের তালিকা করে সেখানে নির্দেশনা অনুযায়ী জরুরি স্বাস্থ্যসেবা প্রদান নিশ্চিত হচ্ছে কি না-তার বিস্তারিত তালিকা যেন আদালতের সামনে উপস্থাপন করা হয়।
গণমাধ্যমকে অ্যাডভোকেট রাশনা ইমাম বলেন, এ আদেশের ফলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মুমূর্ষু রোগীকে জরুরি চিকিৎসাসেবা দিতে বাধ্য থাকবে। জরুরি চিকিৎসার গাফিলতি বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতে প্রায়শ লক্ষ করা যায়। অনেক ক্ষেত্রে হাসপাতালের প্রশাসনিক জটিলতায় মুমূর্ষু রোগীর চিকিৎসা আরম্ভ করতে বিলম্ব সৃষ্টি হয়। অনেক সময় লক্ষ করা যায় দুর্ঘটনা বা আত্মহননের চেষ্টায় মুমূর্ষু রোগীর চিকিৎসা শুরু করতে হাসপাতালগুলো দ্বিধা করে; থানা-পুলিশ বা মামলার জটিলতা এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করে। এর ফলে মুমূর্ষু রোগীর শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি ঘটে। অনেক ক্ষেত্রে রোগী মৃত্যুবরণ করেন।
উচ্চ আদালতের এই নির্দেশনা তাই স্বাস্থ্য খাতে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ। আদালতের নির্দেশনা প্রশাসনের কার্যক্রমে প্রতিফলিত হচ্ছে কিনা সেটিও নিশ্চিত করতে আদালত ৩ মাস পর রিপোর্ট চেয়েছেন। রিপোর্ট সন্তোষজনক না হলে আরও কঠোর অবস্থান নিয়ে হলে বিজ্ঞ আদালত জরুরি স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে জবাবদিহিতা অব্যাহত রাখবেন সেটিই এখন প্রত্যাশা।
[লেখক: শিক্ষার্থী, আইন ও বিচারবিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়]
সৌজন্যে : আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)
জাহিদ অয়ন
শুক্রবার, ০১ অক্টোবর ২০২১
গত ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১, রোববার একটি জনস্বার্থ মামলার প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত জরুরি চিকিৎসাসেবা দিতে কোন হাসপাতাল অসম্মতি জ্ঞাপন করতে পারবে না মর্মে আদেশ জারি করেছেন। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি এসএম মনিরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইডঅ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) এবং একাডেমি অফ ল’ অ্যান্ড পলিসির (আলাপ) যৌথ রিট আবেদনের ভিত্তিতে আদেশটি জারি করেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সচিব ও মহাপরিচালক এবং বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) সভাপতিকে মামলার প্রতিপক্ষ করা হয়।
ব্লাস্ট ও আলাপের পক্ষে রাশনা ইমাম, শারমিন আক্তার ও খন্দকার নীলিমা ইয়াসমিন যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করেন। জরুরি ভিত্তিতে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা প্রয়োজন এমন কোন ব্যক্তি হাসপাতালে এলে যত দ্রুত সম্ভব তার জরুরি স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হাসপাতাল অথবা ক্লিনিকগুলোর দায়িত্ব। যদি কোন হাসপাতালে রোগীর জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা উপলভ্য না থাকে, সেক্ষেত্রে প্রাথমিক চিকিৎসা নিশ্চিত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা-সম্পন্ন নিকটস্থ অন্য হাসপাতালে প্রেরণের ব্যবস্থা করাও তাদের দায়িত্ব। সেক্ষেত্রে, অবহেলা বা অসম্মতি জ্ঞাপনকে কেন অবৈধ বা অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না জানতে চেয়ে রুলনিশি জারি করেছেন বিজ্ঞ আদালত।
এছাড়াও আদালত স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং বিএমডিসিকে দেশজুড়ে রোগীদের জরুরি স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে না পারার ব্যর্থতার কারণ দর্শানোর জন্য ৪ সপ্তাহ সময় দিয়েছেন। নির্দেশ দিয়েছেন আগামী ৩ মাসের মধ্যে বাংলাদেশের সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের তালিকা করে সেখানে নির্দেশনা অনুযায়ী জরুরি স্বাস্থ্যসেবা প্রদান নিশ্চিত হচ্ছে কি না-তার বিস্তারিত তালিকা যেন আদালতের সামনে উপস্থাপন করা হয়।
গণমাধ্যমকে অ্যাডভোকেট রাশনা ইমাম বলেন, এ আদেশের ফলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মুমূর্ষু রোগীকে জরুরি চিকিৎসাসেবা দিতে বাধ্য থাকবে। জরুরি চিকিৎসার গাফিলতি বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতে প্রায়শ লক্ষ করা যায়। অনেক ক্ষেত্রে হাসপাতালের প্রশাসনিক জটিলতায় মুমূর্ষু রোগীর চিকিৎসা আরম্ভ করতে বিলম্ব সৃষ্টি হয়। অনেক সময় লক্ষ করা যায় দুর্ঘটনা বা আত্মহননের চেষ্টায় মুমূর্ষু রোগীর চিকিৎসা শুরু করতে হাসপাতালগুলো দ্বিধা করে; থানা-পুলিশ বা মামলার জটিলতা এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করে। এর ফলে মুমূর্ষু রোগীর শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি ঘটে। অনেক ক্ষেত্রে রোগী মৃত্যুবরণ করেন।
উচ্চ আদালতের এই নির্দেশনা তাই স্বাস্থ্য খাতে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ। আদালতের নির্দেশনা প্রশাসনের কার্যক্রমে প্রতিফলিত হচ্ছে কিনা সেটিও নিশ্চিত করতে আদালত ৩ মাস পর রিপোর্ট চেয়েছেন। রিপোর্ট সন্তোষজনক না হলে আরও কঠোর অবস্থান নিয়ে হলে বিজ্ঞ আদালত জরুরি স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে জবাবদিহিতা অব্যাহত রাখবেন সেটিই এখন প্রত্যাশা।
[লেখক: শিক্ষার্থী, আইন ও বিচারবিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়]
সৌজন্যে : আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)