alt

উপ-সম্পাদকীয়

মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর দ্রব্যমূল্যের প্রভাব

সাঈদ চৌধুরী

: মঙ্গলবার, ১৯ অক্টোবর ২০২১

পোশাক শিল্পে কাজ করা কোনো মানুষ সর্বনিম্ন যে দশ হাজার টাকা বেতন পান তার দিন কিভাবে চলে এই বাজার ব্যবস্থায়? একজন মসজিদের ইমাম তিনি বেতনই পান মাসে আট হাজার টাকা! তিনি কিভাবে সংসার চালিয়ে আবার সন্তানদেরও শিক্ষিত করে তুলতে পারেন?

প্রতিদিনের শ্রমিকের হাট বসে গাজীপুরের শ্রীপুরের মাওনা চৌরাস্তার ফ্লাইওভারের নিচে। গত দুদিন আগে বিকেলে একজন মানুষের সঙ্গে কথা হলো। তিনি শ্রম বিক্রি করতে আসছেন কিন্তু কেউ তাকে নেয়নি দুদিন ধরে! অথচ তার বাড়িতে সন্তান, স্ত্রীসহ পরিবারে মোট জনসংখ্যা নয়জন। শুধু আলুভর্তা আর ডাল কিনতেও যে টাকা লাগে সে টাকা তার কাছে নেই। প্রত্যাশা বুকে নিয়ে মানুষটি বসে আছেন কাজের আশায়।

গত কয়েকদিন আগের ঘটনা। তুরাগে নৌকাডুবিতে মারা যায় এক দম্পতির দুই মেয়ে!

রুপেনা বেগম ও হুসাইন দম্পতির ঢাকায় কাজে আসা ও নৌকাডুবিতে তাদের দুই সন্তানের মৃত্যু! মা রুপেনা বেগম এক সন্তানকে নিয়ে পার হতে পারলেও আর বাকি দুই সন্তান পানিতে ডুবে তুরাগ নদেই মারা যায়! জীবিকার জন্য ছুটে চলা মানুষগুলোর সংগ্রাম যে কত গাঢ় তা আমরা সামান্যতম অনুভব যারা করতে পারি না তাদের কাছেই বেশিরভাগ টাকা।

চাল, ডাল, তেল, মসলা, সবজি, মাংস, ওষুধ সব কিছুর দাম যখন আকাশছোঁয়া তখন মানুষের আর্তনাদ আর সাহায্যের জন্য হাত বাড়ানো যেন সবচেয়ে সহজ প্রাপ্তি! অসহায়ত্ব এবং অপারগতার একটা সুনামি বয়ে যাচ্ছে মধ্যবিত্তের ঘরে! চাকরিতে একটি টাকা বাড়ানোর পন্থা যখন ইনক্রিমেন্ট নামক ফ্যাসাদ আর দুরভিসন্ধির মতো জালে আটকা থাকে তখন ব্যবসায়ীদের হাতে অলিখিত সব দলিল থাকে।

কোনো দ্রব্যের দাম বাড়ানো বা কমানোর জন্য এখনও তাদের কোনো জবাবদিহিতা নেই! ‘আন্তর্জাতিক বাজার দর’ কথার ফ্যারে পড়ে অসহায়ত্বে জায়গাটি থেকে যায় দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের চশমার ওপর দিয়ে নিষ্ঠুর তাকানোর বহিপ্রকাশের মতো!

চাকরিতে কাজ করবেন-করে যান, ভালো কাজ করবেন বাহবা পাবেন, আরো ভালো করবেন- শুনবেন এবার তোমার প্রমোশন হবেই! পাঁচ, দশ, পনেরো, বিশ শতাংশ বেতনের বাড়তি অংশ গুণে দেখা যায় টাকা বেড়েছে এক হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা! বাড়িতে আসার পরই শুনতে হয় এবার ঘর ভাড়াই বাড়ছে ছয় হাজার টাকা!

দ্রব্যমূল্য কমাতে হবে। উপায় খুঁজতে হবে। আমরা এখনও কৃষিতে এগোচ্ছি। কোন সময় কোন দ্রব্যের অভাব পড়ে তা আমরা জানি! পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়ানোর কথা বলা হচ্ছিল অনেক দিন থেকে, পেঁয়াজের বদলে আরেকটি ফসলও কৃষি বিভাগ সফলতা দেখিয়েছিল কিন্তু তা আর সামনে আনা সম্ভব হলো না। এগুলো আমাদের ব্যর্থতার বিষয়!

ঘরভাড়া, দ্রব্যমূল্য যদি না বলেই বাড়ানো যায় তবে বেতন না বাড়লে মানুষ চলবে কি করে? মাথাপিছু ঋত আর আয় হিসেব করলে প্রতিজনে এখনও অনেক টাকা আমাদের জানার বাইরে আমরা ঋণী হয়ে আছি। এ টাকাগুলোও কিন্তু পরিশোধ করতে হবে আমাদেরই।

দ্রব্যমূল্যের কারণে মানসিক স্বাস্থ্যে ব্যাপক প্রভাব পড়ছে মধ্যবিত্ত ও নি¤œবিত্ত মানুষের। ভাবনা যখন বাড়ির কর্তার একার ভাবতে হয় তখন তার চিন্তার জায়গাটি তাকে ভালো থাকতে দেয় না। আয় ও ব্যয়ের হিসাবে তারতম্যেও ক্ষেত্রে গিয়ে দেখা যায় আত্মহননও করে ফেলেন কেউ কেউ!

দ্রব্যমূল্য নিয়ে সরকারের ভাবনার জায়গা বাড়াতে হবে, প্রতি এলাকায় উৎপাদিত পণ্য ওই এলাকার চাহিদা মেটাতে যাতে কাজ করতে পারে তা ব্যবস্থাপনায় আনতে হবে। সরকারি গুদাম ব্যবহার করে প্রতি উপজেলায় বিপদকালীন খাদ্য সংরক্ষণে আরও মনোযোগী হতে হবে। দেশের প্রতিটি মানুষকে খাদ্য, শিক্ষা ও চিকিৎসা বীমার আওতায় আনতে হবে। এগুলো না করা গেলে ক্ষুধাতো বাড়বেই এক সময় পুরো দেশই অর্থনৈতিক দৈন্যতায় পড়ে যেতে পারে। ক্ষুধা ও সুস্থতা দুটি একে অপরের কাছকাছি । দ্রব্যমূল্য সঠিক ভাবে কমিয়ে আনার জন্য যা যা করা দরকার তা সরকার করবে এটাই প্রত্যাশা।

[ লেখক : সদস্য, উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি, শ্রীপুর, গাজীপুর ]

টেকসই কৃষিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্ভাবনা

ছবি

জয়নুলের সাঁওতাল দম্পতি এবং সুমনের সৌন্দর্যপ্রিয়তা

এরপরও কি গাছ লাগাবেন না, বন রক্ষা করবেন না?

বিশ্ব ধরিত্রী দিবস

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিলের শেষ কোথায়

খুব জানতে ইচ্ছে করে

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের সংকট?

কৃষিগুচ্ছ : ভর্তির আবেদনের নূ্যূনতম যোগ্যতা ও ফলাফল প্রস্তুতিতে বৈষম্য

ছবি

গণপরিবহনে নৈরাজ্যের শেষ কোথায়

ছাত্র রাজনীতি : পক্ষে-বিপক্ষে

ছবি

বি আর আম্বেদকর : নিম্নবর্গের মানুষের প্রতিনিধি

চেকের মামলায় আসামির মুক্তির পথ কী

রাম-নবমী : হিন্দুত্বের নয়া গবেষণাগার

‘একটি গ্রাম একটি পণ্য’ উদ্যোগ কি সফল হবে

কিশোর গ্যাং : সমস্যার মূলে যেতে হবে

গীতি চলচ্চিত্র ‘কাজল রেখা’ : সুস্থধারার চলচ্চিত্র বিকাশ ঘটুক

ছবি

ঋতুভিত্তিক চিরায়ত বাঙালি সংস্কৃতি

ছবি

স্মরণ : কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস

দাবদাহে সুস্থ থাকবেন কীভাবে

কত দিন পরে এলে, একটু শোনো

রম্যগদ্য : আনন্দ, দ্বিগুণ আনন্দ...

ছবি

ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় নাম

বৈসাবি : ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বর্ষবরণ উৎসব

‘ইন্ডিয়া আউট’ ক্যাম্পেইন

উদার-উদ্দাম বৈশাখ চাই

ঈদ নিয়ে আসুক শান্তি ও সমৃদ্ধি, বিস্তৃত হোক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ

প্রসঙ্গ: বিদেশি ঋণ

ছাত্ররাজনীতি কি খারাপ?

জাকাত : বিশ্বের প্রথম সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা

বাংলাদেশ স্কাউটস দিবস : শুরুর কথা

ছবি

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত

প্রবাসীর ঈদ-ভাবনা

বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস

ধানের ফলন বাড়াতে ক্লাইমেট স্মার্ট গুটি ইউরিয়া প্রযুক্তি

কমিশন কিংবা ভিজিটে জমি রেজিস্ট্রির আইনি বিধান ও প্রাসঙ্গিকতা

tab

উপ-সম্পাদকীয়

মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর দ্রব্যমূল্যের প্রভাব

সাঈদ চৌধুরী

মঙ্গলবার, ১৯ অক্টোবর ২০২১

পোশাক শিল্পে কাজ করা কোনো মানুষ সর্বনিম্ন যে দশ হাজার টাকা বেতন পান তার দিন কিভাবে চলে এই বাজার ব্যবস্থায়? একজন মসজিদের ইমাম তিনি বেতনই পান মাসে আট হাজার টাকা! তিনি কিভাবে সংসার চালিয়ে আবার সন্তানদেরও শিক্ষিত করে তুলতে পারেন?

প্রতিদিনের শ্রমিকের হাট বসে গাজীপুরের শ্রীপুরের মাওনা চৌরাস্তার ফ্লাইওভারের নিচে। গত দুদিন আগে বিকেলে একজন মানুষের সঙ্গে কথা হলো। তিনি শ্রম বিক্রি করতে আসছেন কিন্তু কেউ তাকে নেয়নি দুদিন ধরে! অথচ তার বাড়িতে সন্তান, স্ত্রীসহ পরিবারে মোট জনসংখ্যা নয়জন। শুধু আলুভর্তা আর ডাল কিনতেও যে টাকা লাগে সে টাকা তার কাছে নেই। প্রত্যাশা বুকে নিয়ে মানুষটি বসে আছেন কাজের আশায়।

গত কয়েকদিন আগের ঘটনা। তুরাগে নৌকাডুবিতে মারা যায় এক দম্পতির দুই মেয়ে!

রুপেনা বেগম ও হুসাইন দম্পতির ঢাকায় কাজে আসা ও নৌকাডুবিতে তাদের দুই সন্তানের মৃত্যু! মা রুপেনা বেগম এক সন্তানকে নিয়ে পার হতে পারলেও আর বাকি দুই সন্তান পানিতে ডুবে তুরাগ নদেই মারা যায়! জীবিকার জন্য ছুটে চলা মানুষগুলোর সংগ্রাম যে কত গাঢ় তা আমরা সামান্যতম অনুভব যারা করতে পারি না তাদের কাছেই বেশিরভাগ টাকা।

চাল, ডাল, তেল, মসলা, সবজি, মাংস, ওষুধ সব কিছুর দাম যখন আকাশছোঁয়া তখন মানুষের আর্তনাদ আর সাহায্যের জন্য হাত বাড়ানো যেন সবচেয়ে সহজ প্রাপ্তি! অসহায়ত্ব এবং অপারগতার একটা সুনামি বয়ে যাচ্ছে মধ্যবিত্তের ঘরে! চাকরিতে একটি টাকা বাড়ানোর পন্থা যখন ইনক্রিমেন্ট নামক ফ্যাসাদ আর দুরভিসন্ধির মতো জালে আটকা থাকে তখন ব্যবসায়ীদের হাতে অলিখিত সব দলিল থাকে।

কোনো দ্রব্যের দাম বাড়ানো বা কমানোর জন্য এখনও তাদের কোনো জবাবদিহিতা নেই! ‘আন্তর্জাতিক বাজার দর’ কথার ফ্যারে পড়ে অসহায়ত্বে জায়গাটি থেকে যায় দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের চশমার ওপর দিয়ে নিষ্ঠুর তাকানোর বহিপ্রকাশের মতো!

চাকরিতে কাজ করবেন-করে যান, ভালো কাজ করবেন বাহবা পাবেন, আরো ভালো করবেন- শুনবেন এবার তোমার প্রমোশন হবেই! পাঁচ, দশ, পনেরো, বিশ শতাংশ বেতনের বাড়তি অংশ গুণে দেখা যায় টাকা বেড়েছে এক হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা! বাড়িতে আসার পরই শুনতে হয় এবার ঘর ভাড়াই বাড়ছে ছয় হাজার টাকা!

দ্রব্যমূল্য কমাতে হবে। উপায় খুঁজতে হবে। আমরা এখনও কৃষিতে এগোচ্ছি। কোন সময় কোন দ্রব্যের অভাব পড়ে তা আমরা জানি! পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়ানোর কথা বলা হচ্ছিল অনেক দিন থেকে, পেঁয়াজের বদলে আরেকটি ফসলও কৃষি বিভাগ সফলতা দেখিয়েছিল কিন্তু তা আর সামনে আনা সম্ভব হলো না। এগুলো আমাদের ব্যর্থতার বিষয়!

ঘরভাড়া, দ্রব্যমূল্য যদি না বলেই বাড়ানো যায় তবে বেতন না বাড়লে মানুষ চলবে কি করে? মাথাপিছু ঋত আর আয় হিসেব করলে প্রতিজনে এখনও অনেক টাকা আমাদের জানার বাইরে আমরা ঋণী হয়ে আছি। এ টাকাগুলোও কিন্তু পরিশোধ করতে হবে আমাদেরই।

দ্রব্যমূল্যের কারণে মানসিক স্বাস্থ্যে ব্যাপক প্রভাব পড়ছে মধ্যবিত্ত ও নি¤œবিত্ত মানুষের। ভাবনা যখন বাড়ির কর্তার একার ভাবতে হয় তখন তার চিন্তার জায়গাটি তাকে ভালো থাকতে দেয় না। আয় ও ব্যয়ের হিসাবে তারতম্যেও ক্ষেত্রে গিয়ে দেখা যায় আত্মহননও করে ফেলেন কেউ কেউ!

দ্রব্যমূল্য নিয়ে সরকারের ভাবনার জায়গা বাড়াতে হবে, প্রতি এলাকায় উৎপাদিত পণ্য ওই এলাকার চাহিদা মেটাতে যাতে কাজ করতে পারে তা ব্যবস্থাপনায় আনতে হবে। সরকারি গুদাম ব্যবহার করে প্রতি উপজেলায় বিপদকালীন খাদ্য সংরক্ষণে আরও মনোযোগী হতে হবে। দেশের প্রতিটি মানুষকে খাদ্য, শিক্ষা ও চিকিৎসা বীমার আওতায় আনতে হবে। এগুলো না করা গেলে ক্ষুধাতো বাড়বেই এক সময় পুরো দেশই অর্থনৈতিক দৈন্যতায় পড়ে যেতে পারে। ক্ষুধা ও সুস্থতা দুটি একে অপরের কাছকাছি । দ্রব্যমূল্য সঠিক ভাবে কমিয়ে আনার জন্য যা যা করা দরকার তা সরকার করবে এটাই প্রত্যাশা।

[ লেখক : সদস্য, উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি, শ্রীপুর, গাজীপুর ]

back to top