alt

উপ-সম্পাদকীয়

মঙ্গার স্থায়ী নির্বাসন

এম জি নিয়োগী

: রোববার, ২৪ অক্টোবর ২০২১

১৯৯৩ সনের অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহের কথা। ২ অক্টোবর আরডিআরএস কুড়িগ্রামে কৃষি বিশেষজ্ঞ হিসেবে যোগদান করেই জানতে পারলাম, সেই এলাকায় আশ্বিন-কার্তিক মাসে (সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত) মঙ্গার ভয়াবহতার কথা। গরিব মানুষের অনাহারে-অর্ধাহারে থাকার কথা। জানতে পেলাম, আশ্বিন-কার্তিক মাসে রংপুর অঞ্চলে হাজার হাজার কৃষি শ্রমিক পরিবার কৃষি কাজ না পেয়ে উপোষ থাকে। মানবেতর জীবনযাপন করে।

নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলাম- কেন এই মঙ্গা! কেনইবা রংপুর অঞ্চলে! কেন অন্য অঞ্চলে নয়! কেন আশ্বিন-কার্তিকে! কেন অন্য মাসে নয়! তখন থেকেই এ নিয়ে গবেষণায় জড়িয়ে পড়লাম। গ্রামে গ্রামে ঘুরতে শুরু করলাম। তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে নেমে পড়লাম। শুরু হয়ে গেল গবেষণা। শুধু আশ্বিন-কার্তিক মাসে নয়, সারা বছর কীভাবে চলে গরিব পরিবারগুলা! কোন মাস তাদের ভালো যায়- কোন মাস খারাপ যায়! কেন ভালো, কেনই বা খারাপ!

১৯৯৮ সনের গবেষণায় জানলাম- রংপুর অঞ্চলের মোট জনসংখ্যার ৬৭ ভাগই কৃষি শ্রমিক। এদের নিজেদের জায়গা জমি নেই। অন্যের জমিতে কাজ করে যে পারিশ্রমিক পায়, তা দিয়েই পরিবারের ক্ষুধা নিবৃত করে। এই ৬৭ ভাগ কৃষি শ্রমিকরা নভেম্বর-ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে বোরো ধান, আলু, ভুট্টা, সরিষা, গম, শীতকালীন সবজি, তামাকসহ বিভিন্ন ফসলের জমিতে কাজ পায়। ফেব্রুয়ারি, মার্চ, এপ্রিল, মে মাসগুলোতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ফসল কাটা, মাড়াইসহ বিভিন্ন কাজে এই কৃষি শ্রমিকরা নিয়োজিত থাকে।

এরপর জুন-জুলাই-আগস্ট মাস আমন মৌসুম। এ অঞ্চলে আমন মৌসুমে কৃষক দীর্ঘমেয়াদি আমন ধান চাষাবাদ করে। এগুলো পাকতে ১৫০ থেকে ১৭০ দিন সময় লাগে। এখানে লক্ষণীয় বিষয় হলো- কৃষক বছরের অন্যান্য মৌসুমে বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষাবাদ করে থাকে। এই সমস্ত ফসলের বীজ বপন, রোপণ, পরিচর্যা, ফসল সংগ্রহ, মাড়াই ভিন্ন ভিন্ন সময়ে হয় বিধায় কৃষি শ্রমিকরা সবসময় কম-বেশি কাজ পায়।

কিন্তু জুন, জুলাই, আগস্টে আমন মৌসুমে শতভাগ কৃষকই আমন ধান চাষাবাদ করে। তখন জমিতে আমন ধান ছাড়া আর কোন ফসল থাকে না। আমন ধানের চাষাবাদে বীজতলা তৈরি হয় জুন-জুলাই মাসে। জমি তৈরি হয় জুলাই মাসে। চারা লাগানো হয় জুলাই-আগস্টে। পরিচর্যা, সার, নিড়ানি, কীটনাশক ইত্যাদি কাজ আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকে শেষ হয়ে যায়।

এরপর ধানের জমিতে ধান পাকার আগে আর কোন কাজ থাকে না। সাধারণত: আমন ধান পাকে নভেম্বরের শেষ থেকে ডিসেম্বর মাসে। অর্থাৎ সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত অর্থাৎ পাকা ধান কাটার পূর্বে ধানের জমিতে কৃষি শ্রমিকের আর কোন কাজ থাকে না।

যেহেতু ধান ছাড়া এই সময়ে আর কোন ফসল থাকে না এবং যেহেতু ধানের জমিতে এই সময়ে কোন কাজ থাকে না, সে কারণে কৃষি শ্রমিকদের এই সময়ে কৃষি কাজ করার কোন সুযোগ থাকে না। আর কাজ না থাকার কারণে কৃষি শ্রমিকরা এই সময়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে উপোস থাকে। মানবেতর জীবনযাপন করে। স্থানীয় ভাষায় এটিই মঙ্গা। অর্ধাহারে, অনাহারে থাকার ভয়াবহ জীবন সংগ্রাম।

বুঝতে পারলাম, আমন মৌসুমে প্রচলিত দীর্ঘমেয়াদি আমন ধান চাষাবাদের সঙ্গে মঙ্গার কারণ নিহিত। তাই আমন ধানের এমন প্রযুক্তি যদি বের করা যায়, যেখানে অগ্রহায়ণ মাসের পরিবর্তে আশ্বিন-কার্তিকে কৃষকরা আমন ধান কাটতে পারে, তাহলে মঙ্গার সময়ে কৃষক ধান পাবে। কৃষি শ্রমিক কাজ পাবে। মঙ্গা দূর হবে।

এ লক্ষ্যে আবারও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের প্রয়োজন হয়ে পড়ল। আশ্বিন-কার্তিকে এখানে কোন কৃষক আমন ধান কাটে কিনা! বা এ সময় কোন কৃষকের ধান পাকে কিনা! মনে আছে, সে সময় কৃষকসহ সব সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ঘুরেছি। প্রশ্ন করেছি, আশ্বিন-কার্তিকে পাকা ধান কাটার কোন তথ্য আছে কিনা! প্রশ্ন শুনে একদিন একজন কৃষি কর্মকর্তা জানতে চাইলেন আমি কৃষিবিদ কিনা! উত্তরে হ্যাঁ সূচক বলাতে তিনি বললেন- কৃষিবিদ হয়েও আমার এমন বোকার মতো প্রশ্ন করাতে তিনি বিস্মিত! জানালেন, আশ্বিন-কার্তিক মাসে কোনদিন আমন ধান কাটা তো দূরের কথা, আমন ধান অগ্রহায়ণের আগে পাকেই না! তিনি আরও বললেন, বিষয়টি তো জাতীয় সঙ্গীতেই বলা আছে- ‘ও মা অঘ্রানে তোর ভরা ক্ষেতে আমি কি দেখেছি- মধুর হাসি’ - আর আপনি বোকার মতো প্রশ্ন করছেন, আশ্বিন-কার্তিকে পাকা ধান কাটার কোন তথ্য আমাদের কাছে আছে কিনা! আমি একটু অপ্রস্তুত হয়ে সে অফিস থেকে চলে আসলাম।

প্রায় এক মাস এ ধরনের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে প্রতীয়মান হলো- একজন কৃষকও এই এলাকায় অগ্রহায়ণ মাসের আগে পাকা ধান কাটতে পারে না বা কাটার উপযোগী হয় না।

আমি গবেষণার বিষয়বস্তু ঠিক করে ফেললাম। গবেষণার বিষয়বস্তু হলো- অগ্রহায়নের পাশাপাশি আশ্বিন-কার্তিক মাসেও কৃষক যেন ভালো ফলনসহ পাকা আমন ধান কাটতে পারে। সেই সঙ্গে আয়-ব্যায়ের বিষয়টিও গবেষণার বিষয়বস্তু হলো। এ লক্ষ্যে স্বল্পমেয়াদি জাতের আমন মৌসুমের ধানের জাত খুঁজতে বের হয়ে গেলাম। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভাবিত ব্রি-ধান৩৩ জাতটি সেই সময়ে সবচেয়ে স্বল্পমেয়াদি আমন ধানের জাত ছিল। আমি সেটির বীজ সংগ্রহ করলাম।

সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে স্থানীয় স্বল্পমেয়াদি ধানের জাত পরিজা, সাইটা, কটকতারাসহ আরো কিছু ধানের জাত সংগ্রহ করে আমার গবেষণার কাজ শুরু করলাম। দেখলাম, স্থানীয় ধানের কয়েকটি জাত কম সময়ে পেকে গেল। কিন্তু ফলন কম। বুঝতে পারলাম, এত কম ফলনে কৃষকের মন ভরবে না। তবে ব্রি ধান৩৩ এবং স্থানীয় স্বল্পমেয়াদি ধানের জাত পারিজাকে নিয়ে আবার গবেষণা শুরু করলাম। এবার সঙ্গে যুক্ত হলো আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ইরি) উদ্ভাবিত ড্রাম সিডার দিয়ে সরাসরি বপন পদ্ধতিতে গবেষণা। পাশাপাশি রোপণ পদ্ধতি তো ছিলই।

২০০৩ সনে এসে দেখতে পেলাম ড্রাম সিডার দিয়ে সরাসরি বপণ পদ্ধতিতে ব্রি ধান৩৩ জাতের ধান চাষাবাদ করলে ১১৮ থেকে ১২০ দিনে পরিবর্তে মাত্র ১০০ থেকে ১০৫ দিনেই ধান কাটা যায়। ফলনও ভালো। কিন্তু বেশ কিছু সীমাবদ্ধতার কারনে ধান চাষাবাদে সরাসরি বপন প্রযুক্তিটি কৃষক গ্রহণ করেনি।

২০০৪ সনে ৪ অক্টোবর রংপুর অঞ্চলে আরডিআরএস গবেষণা মাঠে ইরি, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, সাংবাদিক এবং স্থানীয় কৃষকদের মঙ্গা নিরসনে ব্রি ধান৩৩ জাতের উপযোগিতা দেখানো হলো। রংপুর অঞ্চলের কৃষক সেদিন ৪ অক্টোবর অর্থাৎ ১৯ আশ্বিন প্রথম আমন ধান কাটা প্রত্যক্ষ করল। হেক্টর প্রতি ফলন পেল ৪.২ টন, যা অন্যান্য প্রচলিত ধানের তুলনায় কোনো অংশেই কম নয়।

তবে সেদিনের অনুষ্ঠানের সুধীবৃন্দের মধ্য থেকে ২-১ জন বিরূপ মন্তব্য করলেন। তারা বললেন, স্বল্পমেয়াদি ধানের ফলন অপেক্ষাকৃত কম। সুতরাং এই প্রযুক্তিতে জাতীয়ভাবে ধানের উৎপাদন কমে যাবে। এই বিষয়টিও আমার দীর্ঘ গবেষণায় ছিল। এটা ঠিক যে স্বল্পমেয়াদি ধানের জাত তুলনামূলকভাবে ফলন একটু কম দেয়। তবে আমার দীর্ঘ গবেষণায় দেখা গেছে, স্বল্পমেয়াদি ধানের বেলায় ৩০-৪০ দিনের চারার পরিবর্তে ২০-২৫ দিনের চারা রোপণ করা হয় এবং জমির উর্বরতা অনুযায়ী ৮-১০ ইঞ্চির পরিবর্তে ৬-৭ ইঞ্চি দূরত্বে চারা রোপন করা হয় এবং সর্বশেষ উপরি সার প্রয়োগ চারা রোপণের ৪০-৫০ দিনের পরিবর্তে ২৫-৩০ দিনের মধ্যে প্রয়োগ করা, তাহলে দীর্ঘমেয়াদি ধানের প্রায় সমপরিমাণ ফলন পাওয়া সম্ভব।

আমন ধানের পরে পরবর্তী ফসল অর্থাৎ আলু, শীতকালীন সবজি, ভুট্টা, সরিষা, গম ইত্যাদি ফসল চাষাবাদ করার সঠিক সময় নভেম্বর মাস। কিন্তু প্রচলিত আমন ধান নভেম্বরে জমিতে থাকে বিধায় কৃষক সঠিক সময়ে অর্থাৎ নভেম্বরে এই ফসলগুলোর চাষাবাদ করতে পারে না। এতে ওই সমস্ত ফসলের ফলন কম হয়। বিভিন্ন ধরনের পোকা-মাকড়ের উপদ্রব বেড়ে যায়। উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। কৃষক ফসলের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়।

এই কৃষক যদি আমন মৌসুমে স্বল্পমেয়াদি ধানের জাত বেছে নেয়, তাহলে কৃষক একদিকে যেমন মঙ্গার সময়ে ধান পাবে, অন্যদিকে পরবর্তী ফসল সঠিক সময়ে চাষাবাদ করতে পারবে। এতে পরবর্তী ফসলের ফলন বেশি হবে। উৎপাদন খরচ কম হবে। কৃষক বাজারমূল্য বেশি পাবে।

আমন ধানের ফলন এবং পরবতী রবি ফসলের ফলন এই দুই ফসলের মোট ফলনের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, কৃষক যদি স্বল্পমেয়াদি আমন ধানের চাষাবাদ করে সঠিক সময়ে রবি ফসল চাষাবাদ করতে পারে, তাহলে শুধু সঠিক সময়ে রবি ফসল চাষাবাদে কারণেই দুই ফসলের মোট ফলন ৩০ থেকে ৩৫ ভাগ বেড়ে যায়। সুতরাং স্বল্পমেয়াদি আমন ধানের চাষাবাদে জাতীয় উৎপাদন কমে যাবে- এ কথাটি ঠিক নয়, বরং কৃষকের মোট উৎপাদন বেড়ে যাবে। উত্তরাঞ্চলের মোট খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।

উত্তরাঞ্চলে এখন প্রায় ৪০-৪৫ ভাগ জমিতে কৃষক আশ্বিন-কার্তিক মাসে আমন ধান কাটছে এবং সঠিক সময়ে অর্থাৎ নভেম্বরে পরবর্তী ফসল চাষাবাদ করতে পারছে। মঙ্গা আজ স্থায়ীভাবে দূর হয়েছে

সেদিনের সেই উদ্ভাবিত পরিক্ষীত স্বল্পমেয়াদি আমন ধানের প্রযুক্তি ২০০৫ সন থেকেই আরডিআরএসের মাধ্যমে কৃষকের মাঠে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। কৃষক আজ নিজ উদ্যোগে স্বল্পমেয়াদি আমন ধান চাষ করছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো ভালো উৎপাদনক্ষম স্বল্পমেয়াদি আমন ধানের জাত উদ্ভাবনে গুরুত্ব দিচ্ছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ব্রি ধান৭৫ নামে স্বল্পমেয়াদি আমন ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে। বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) বিনাধান-১৭ নামে স্বল্পমেয়াদি আমন ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে। এগুলো ভালো ফলন দিতে সক্ষম। অচিরেই এই সমস্ত জাতগুলো উত্তরাঞ্চলের কৃষক এবং বাংলাদেশের অপরাপর অঞ্চলের কৃষক গ্রহণ করবে।

মনে পড়ে, ১৯৯৮ সনে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের সময়ে সেই কৃষি কর্মকর্তার কথা- যাকে আশ্বিন-কার্তিকে পাকা ধান কাটার কোন তথ্য আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন এবং আমি কৃষিবিদ কিনা জানতে চেয়েছিলেন। সেই প্রতিষ্ঠানে আজ ২০২১ সনে গেলে বর্তমান কর্মকর্তা জানালেন, প্রায় ৪০ ভাগ জমিতে কৃষক আশ্বিন-কার্তিকে আমন ধান কাটছে এবং ভালো ফলন পাচ্ছে।

যেখানে ১৯৯৮ সন থেকে ২০০৩ সন পর্যন্ত তথ্য-উপাত্তে একজন কৃষকের মাঠেও আশ্বিন-কার্তিক মাসে পাকা ধান দেখা যায়নি, আজ ২০২১ সনে উত্তরাঞ্চলে এখন প্রায় ৪০-৪৫ ভাগ জমিতে কৃষক আশ্বিন-কার্তিক মাসে আমন ধান কাটছে এবং সঠিক সময়ে অর্থাৎ নভেম্বরে পরবর্তী ফসল চাষাবাদ করতে পারছে। মঙ্গা আজ স্থায়ীভাবে দূর হয়েছে। রংপুর অঞ্চলের কৃষি শ্রমিকরা আশ্বিন-কার্তিক মাসে ধান কাটছে, ফসল মাড়াই করছে, পেট ভরে ভাত খাচ্ছে।

[লেখক : স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী, ডেপুটি প্রজেক্ট লিডার, ইউনির্ভাসিটি অব ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া]

ছবি

স্মরণ : কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস

দাবদাহে সুস্থ থাকবেন কীভাবে

কত দিন পরে এলে, একটু শোনো

রম্যগদ্য : আনন্দ, দ্বিগুণ আনন্দ...

ছবি

ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় নাম

বৈসাবি : ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বর্ষবরণ উৎসব

‘ইন্ডিয়া আউট’ ক্যাম্পেইন

উদার-উদ্দাম বৈশাখ চাই

ঈদ নিয়ে আসুক শান্তি ও সমৃদ্ধি, বিস্তৃত হোক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ

প্রসঙ্গ: বিদেশি ঋণ

ছাত্ররাজনীতি কি খারাপ?

জাকাত : বিশ্বের প্রথম সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা

বাংলাদেশ স্কাউটস দিবস : শুরুর কথা

ছবি

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত

প্রবাসীর ঈদ-ভাবনা

বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস

ধানের ফলন বাড়াতে ক্লাইমেট স্মার্ট গুটি ইউরিয়া প্রযুক্তি

কমিশন কিংবা ভিজিটে জমি রেজিস্ট্রির আইনি বিধান ও প্রাসঙ্গিকতা

ছবি

ঈদের অর্থনীতি

পশ্চিমবঙ্গে ভোটের রাজনীতিতে ‘পোস্ট পার্টিশন সিনড্রম’

শিক্ষকের বঞ্চনা, শিক্ষকের বেদনা

নিরাপদ সড়ক কেন চাই

রম্যগদ্য : ‘প্রহরীর সাতশ কোটি টাকা...’

ছবি

অবন্তিকাদের আত্মহনন

শিক্ষাবিষয়ক ভাবনা

অপ্রয়োজনে সিজারিয়ান নয়

পণ্য রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনতে হবে

আত্মহত্যা রোধে নৈতিক শিক্ষা

আউশ ধান : পরিবেশ ও কৃষকবান্ধব ফসল

ছবি

বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের আতুড়ঘর

চেক ডিজঅনার মামলার অধিক্ষেত্র ও প্রাসঙ্গিকতা

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন ও বাংলাদেশের কৃষি

ছবি

‘হৃৎ কলমের’ পাখি এবং আমাদের জেগে ওঠা

ছবি

ভূগর্ভস্থ পানি সুরক্ষায় বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ

tab

উপ-সম্পাদকীয়

মঙ্গার স্থায়ী নির্বাসন

এম জি নিয়োগী

রোববার, ২৪ অক্টোবর ২০২১

১৯৯৩ সনের অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহের কথা। ২ অক্টোবর আরডিআরএস কুড়িগ্রামে কৃষি বিশেষজ্ঞ হিসেবে যোগদান করেই জানতে পারলাম, সেই এলাকায় আশ্বিন-কার্তিক মাসে (সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত) মঙ্গার ভয়াবহতার কথা। গরিব মানুষের অনাহারে-অর্ধাহারে থাকার কথা। জানতে পেলাম, আশ্বিন-কার্তিক মাসে রংপুর অঞ্চলে হাজার হাজার কৃষি শ্রমিক পরিবার কৃষি কাজ না পেয়ে উপোষ থাকে। মানবেতর জীবনযাপন করে।

নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলাম- কেন এই মঙ্গা! কেনইবা রংপুর অঞ্চলে! কেন অন্য অঞ্চলে নয়! কেন আশ্বিন-কার্তিকে! কেন অন্য মাসে নয়! তখন থেকেই এ নিয়ে গবেষণায় জড়িয়ে পড়লাম। গ্রামে গ্রামে ঘুরতে শুরু করলাম। তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে নেমে পড়লাম। শুরু হয়ে গেল গবেষণা। শুধু আশ্বিন-কার্তিক মাসে নয়, সারা বছর কীভাবে চলে গরিব পরিবারগুলা! কোন মাস তাদের ভালো যায়- কোন মাস খারাপ যায়! কেন ভালো, কেনই বা খারাপ!

১৯৯৮ সনের গবেষণায় জানলাম- রংপুর অঞ্চলের মোট জনসংখ্যার ৬৭ ভাগই কৃষি শ্রমিক। এদের নিজেদের জায়গা জমি নেই। অন্যের জমিতে কাজ করে যে পারিশ্রমিক পায়, তা দিয়েই পরিবারের ক্ষুধা নিবৃত করে। এই ৬৭ ভাগ কৃষি শ্রমিকরা নভেম্বর-ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে বোরো ধান, আলু, ভুট্টা, সরিষা, গম, শীতকালীন সবজি, তামাকসহ বিভিন্ন ফসলের জমিতে কাজ পায়। ফেব্রুয়ারি, মার্চ, এপ্রিল, মে মাসগুলোতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ফসল কাটা, মাড়াইসহ বিভিন্ন কাজে এই কৃষি শ্রমিকরা নিয়োজিত থাকে।

এরপর জুন-জুলাই-আগস্ট মাস আমন মৌসুম। এ অঞ্চলে আমন মৌসুমে কৃষক দীর্ঘমেয়াদি আমন ধান চাষাবাদ করে। এগুলো পাকতে ১৫০ থেকে ১৭০ দিন সময় লাগে। এখানে লক্ষণীয় বিষয় হলো- কৃষক বছরের অন্যান্য মৌসুমে বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষাবাদ করে থাকে। এই সমস্ত ফসলের বীজ বপন, রোপণ, পরিচর্যা, ফসল সংগ্রহ, মাড়াই ভিন্ন ভিন্ন সময়ে হয় বিধায় কৃষি শ্রমিকরা সবসময় কম-বেশি কাজ পায়।

কিন্তু জুন, জুলাই, আগস্টে আমন মৌসুমে শতভাগ কৃষকই আমন ধান চাষাবাদ করে। তখন জমিতে আমন ধান ছাড়া আর কোন ফসল থাকে না। আমন ধানের চাষাবাদে বীজতলা তৈরি হয় জুন-জুলাই মাসে। জমি তৈরি হয় জুলাই মাসে। চারা লাগানো হয় জুলাই-আগস্টে। পরিচর্যা, সার, নিড়ানি, কীটনাশক ইত্যাদি কাজ আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকে শেষ হয়ে যায়।

এরপর ধানের জমিতে ধান পাকার আগে আর কোন কাজ থাকে না। সাধারণত: আমন ধান পাকে নভেম্বরের শেষ থেকে ডিসেম্বর মাসে। অর্থাৎ সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত অর্থাৎ পাকা ধান কাটার পূর্বে ধানের জমিতে কৃষি শ্রমিকের আর কোন কাজ থাকে না।

যেহেতু ধান ছাড়া এই সময়ে আর কোন ফসল থাকে না এবং যেহেতু ধানের জমিতে এই সময়ে কোন কাজ থাকে না, সে কারণে কৃষি শ্রমিকদের এই সময়ে কৃষি কাজ করার কোন সুযোগ থাকে না। আর কাজ না থাকার কারণে কৃষি শ্রমিকরা এই সময়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে উপোস থাকে। মানবেতর জীবনযাপন করে। স্থানীয় ভাষায় এটিই মঙ্গা। অর্ধাহারে, অনাহারে থাকার ভয়াবহ জীবন সংগ্রাম।

বুঝতে পারলাম, আমন মৌসুমে প্রচলিত দীর্ঘমেয়াদি আমন ধান চাষাবাদের সঙ্গে মঙ্গার কারণ নিহিত। তাই আমন ধানের এমন প্রযুক্তি যদি বের করা যায়, যেখানে অগ্রহায়ণ মাসের পরিবর্তে আশ্বিন-কার্তিকে কৃষকরা আমন ধান কাটতে পারে, তাহলে মঙ্গার সময়ে কৃষক ধান পাবে। কৃষি শ্রমিক কাজ পাবে। মঙ্গা দূর হবে।

এ লক্ষ্যে আবারও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের প্রয়োজন হয়ে পড়ল। আশ্বিন-কার্তিকে এখানে কোন কৃষক আমন ধান কাটে কিনা! বা এ সময় কোন কৃষকের ধান পাকে কিনা! মনে আছে, সে সময় কৃষকসহ সব সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ঘুরেছি। প্রশ্ন করেছি, আশ্বিন-কার্তিকে পাকা ধান কাটার কোন তথ্য আছে কিনা! প্রশ্ন শুনে একদিন একজন কৃষি কর্মকর্তা জানতে চাইলেন আমি কৃষিবিদ কিনা! উত্তরে হ্যাঁ সূচক বলাতে তিনি বললেন- কৃষিবিদ হয়েও আমার এমন বোকার মতো প্রশ্ন করাতে তিনি বিস্মিত! জানালেন, আশ্বিন-কার্তিক মাসে কোনদিন আমন ধান কাটা তো দূরের কথা, আমন ধান অগ্রহায়ণের আগে পাকেই না! তিনি আরও বললেন, বিষয়টি তো জাতীয় সঙ্গীতেই বলা আছে- ‘ও মা অঘ্রানে তোর ভরা ক্ষেতে আমি কি দেখেছি- মধুর হাসি’ - আর আপনি বোকার মতো প্রশ্ন করছেন, আশ্বিন-কার্তিকে পাকা ধান কাটার কোন তথ্য আমাদের কাছে আছে কিনা! আমি একটু অপ্রস্তুত হয়ে সে অফিস থেকে চলে আসলাম।

প্রায় এক মাস এ ধরনের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে প্রতীয়মান হলো- একজন কৃষকও এই এলাকায় অগ্রহায়ণ মাসের আগে পাকা ধান কাটতে পারে না বা কাটার উপযোগী হয় না।

আমি গবেষণার বিষয়বস্তু ঠিক করে ফেললাম। গবেষণার বিষয়বস্তু হলো- অগ্রহায়নের পাশাপাশি আশ্বিন-কার্তিক মাসেও কৃষক যেন ভালো ফলনসহ পাকা আমন ধান কাটতে পারে। সেই সঙ্গে আয়-ব্যায়ের বিষয়টিও গবেষণার বিষয়বস্তু হলো। এ লক্ষ্যে স্বল্পমেয়াদি জাতের আমন মৌসুমের ধানের জাত খুঁজতে বের হয়ে গেলাম। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভাবিত ব্রি-ধান৩৩ জাতটি সেই সময়ে সবচেয়ে স্বল্পমেয়াদি আমন ধানের জাত ছিল। আমি সেটির বীজ সংগ্রহ করলাম।

সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে স্থানীয় স্বল্পমেয়াদি ধানের জাত পরিজা, সাইটা, কটকতারাসহ আরো কিছু ধানের জাত সংগ্রহ করে আমার গবেষণার কাজ শুরু করলাম। দেখলাম, স্থানীয় ধানের কয়েকটি জাত কম সময়ে পেকে গেল। কিন্তু ফলন কম। বুঝতে পারলাম, এত কম ফলনে কৃষকের মন ভরবে না। তবে ব্রি ধান৩৩ এবং স্থানীয় স্বল্পমেয়াদি ধানের জাত পারিজাকে নিয়ে আবার গবেষণা শুরু করলাম। এবার সঙ্গে যুক্ত হলো আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ইরি) উদ্ভাবিত ড্রাম সিডার দিয়ে সরাসরি বপন পদ্ধতিতে গবেষণা। পাশাপাশি রোপণ পদ্ধতি তো ছিলই।

২০০৩ সনে এসে দেখতে পেলাম ড্রাম সিডার দিয়ে সরাসরি বপণ পদ্ধতিতে ব্রি ধান৩৩ জাতের ধান চাষাবাদ করলে ১১৮ থেকে ১২০ দিনে পরিবর্তে মাত্র ১০০ থেকে ১০৫ দিনেই ধান কাটা যায়। ফলনও ভালো। কিন্তু বেশ কিছু সীমাবদ্ধতার কারনে ধান চাষাবাদে সরাসরি বপন প্রযুক্তিটি কৃষক গ্রহণ করেনি।

২০০৪ সনে ৪ অক্টোবর রংপুর অঞ্চলে আরডিআরএস গবেষণা মাঠে ইরি, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, সাংবাদিক এবং স্থানীয় কৃষকদের মঙ্গা নিরসনে ব্রি ধান৩৩ জাতের উপযোগিতা দেখানো হলো। রংপুর অঞ্চলের কৃষক সেদিন ৪ অক্টোবর অর্থাৎ ১৯ আশ্বিন প্রথম আমন ধান কাটা প্রত্যক্ষ করল। হেক্টর প্রতি ফলন পেল ৪.২ টন, যা অন্যান্য প্রচলিত ধানের তুলনায় কোনো অংশেই কম নয়।

তবে সেদিনের অনুষ্ঠানের সুধীবৃন্দের মধ্য থেকে ২-১ জন বিরূপ মন্তব্য করলেন। তারা বললেন, স্বল্পমেয়াদি ধানের ফলন অপেক্ষাকৃত কম। সুতরাং এই প্রযুক্তিতে জাতীয়ভাবে ধানের উৎপাদন কমে যাবে। এই বিষয়টিও আমার দীর্ঘ গবেষণায় ছিল। এটা ঠিক যে স্বল্পমেয়াদি ধানের জাত তুলনামূলকভাবে ফলন একটু কম দেয়। তবে আমার দীর্ঘ গবেষণায় দেখা গেছে, স্বল্পমেয়াদি ধানের বেলায় ৩০-৪০ দিনের চারার পরিবর্তে ২০-২৫ দিনের চারা রোপণ করা হয় এবং জমির উর্বরতা অনুযায়ী ৮-১০ ইঞ্চির পরিবর্তে ৬-৭ ইঞ্চি দূরত্বে চারা রোপন করা হয় এবং সর্বশেষ উপরি সার প্রয়োগ চারা রোপণের ৪০-৫০ দিনের পরিবর্তে ২৫-৩০ দিনের মধ্যে প্রয়োগ করা, তাহলে দীর্ঘমেয়াদি ধানের প্রায় সমপরিমাণ ফলন পাওয়া সম্ভব।

আমন ধানের পরে পরবর্তী ফসল অর্থাৎ আলু, শীতকালীন সবজি, ভুট্টা, সরিষা, গম ইত্যাদি ফসল চাষাবাদ করার সঠিক সময় নভেম্বর মাস। কিন্তু প্রচলিত আমন ধান নভেম্বরে জমিতে থাকে বিধায় কৃষক সঠিক সময়ে অর্থাৎ নভেম্বরে এই ফসলগুলোর চাষাবাদ করতে পারে না। এতে ওই সমস্ত ফসলের ফলন কম হয়। বিভিন্ন ধরনের পোকা-মাকড়ের উপদ্রব বেড়ে যায়। উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। কৃষক ফসলের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়।

এই কৃষক যদি আমন মৌসুমে স্বল্পমেয়াদি ধানের জাত বেছে নেয়, তাহলে কৃষক একদিকে যেমন মঙ্গার সময়ে ধান পাবে, অন্যদিকে পরবর্তী ফসল সঠিক সময়ে চাষাবাদ করতে পারবে। এতে পরবর্তী ফসলের ফলন বেশি হবে। উৎপাদন খরচ কম হবে। কৃষক বাজারমূল্য বেশি পাবে।

আমন ধানের ফলন এবং পরবতী রবি ফসলের ফলন এই দুই ফসলের মোট ফলনের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, কৃষক যদি স্বল্পমেয়াদি আমন ধানের চাষাবাদ করে সঠিক সময়ে রবি ফসল চাষাবাদ করতে পারে, তাহলে শুধু সঠিক সময়ে রবি ফসল চাষাবাদে কারণেই দুই ফসলের মোট ফলন ৩০ থেকে ৩৫ ভাগ বেড়ে যায়। সুতরাং স্বল্পমেয়াদি আমন ধানের চাষাবাদে জাতীয় উৎপাদন কমে যাবে- এ কথাটি ঠিক নয়, বরং কৃষকের মোট উৎপাদন বেড়ে যাবে। উত্তরাঞ্চলের মোট খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।

উত্তরাঞ্চলে এখন প্রায় ৪০-৪৫ ভাগ জমিতে কৃষক আশ্বিন-কার্তিক মাসে আমন ধান কাটছে এবং সঠিক সময়ে অর্থাৎ নভেম্বরে পরবর্তী ফসল চাষাবাদ করতে পারছে। মঙ্গা আজ স্থায়ীভাবে দূর হয়েছে

সেদিনের সেই উদ্ভাবিত পরিক্ষীত স্বল্পমেয়াদি আমন ধানের প্রযুক্তি ২০০৫ সন থেকেই আরডিআরএসের মাধ্যমে কৃষকের মাঠে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। কৃষক আজ নিজ উদ্যোগে স্বল্পমেয়াদি আমন ধান চাষ করছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো ভালো উৎপাদনক্ষম স্বল্পমেয়াদি আমন ধানের জাত উদ্ভাবনে গুরুত্ব দিচ্ছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ব্রি ধান৭৫ নামে স্বল্পমেয়াদি আমন ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে। বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) বিনাধান-১৭ নামে স্বল্পমেয়াদি আমন ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে। এগুলো ভালো ফলন দিতে সক্ষম। অচিরেই এই সমস্ত জাতগুলো উত্তরাঞ্চলের কৃষক এবং বাংলাদেশের অপরাপর অঞ্চলের কৃষক গ্রহণ করবে।

মনে পড়ে, ১৯৯৮ সনে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের সময়ে সেই কৃষি কর্মকর্তার কথা- যাকে আশ্বিন-কার্তিকে পাকা ধান কাটার কোন তথ্য আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন এবং আমি কৃষিবিদ কিনা জানতে চেয়েছিলেন। সেই প্রতিষ্ঠানে আজ ২০২১ সনে গেলে বর্তমান কর্মকর্তা জানালেন, প্রায় ৪০ ভাগ জমিতে কৃষক আশ্বিন-কার্তিকে আমন ধান কাটছে এবং ভালো ফলন পাচ্ছে।

যেখানে ১৯৯৮ সন থেকে ২০০৩ সন পর্যন্ত তথ্য-উপাত্তে একজন কৃষকের মাঠেও আশ্বিন-কার্তিক মাসে পাকা ধান দেখা যায়নি, আজ ২০২১ সনে উত্তরাঞ্চলে এখন প্রায় ৪০-৪৫ ভাগ জমিতে কৃষক আশ্বিন-কার্তিক মাসে আমন ধান কাটছে এবং সঠিক সময়ে অর্থাৎ নভেম্বরে পরবর্তী ফসল চাষাবাদ করতে পারছে। মঙ্গা আজ স্থায়ীভাবে দূর হয়েছে। রংপুর অঞ্চলের কৃষি শ্রমিকরা আশ্বিন-কার্তিক মাসে ধান কাটছে, ফসল মাড়াই করছে, পেট ভরে ভাত খাচ্ছে।

[লেখক : স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী, ডেপুটি প্রজেক্ট লিডার, ইউনির্ভাসিটি অব ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া]

back to top