করোনার কারণে ৮ মাসের বেশি সময় ধরে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। এই বন্ধের মধ্যে অনলাইনে বেশির ভাগ বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা চললেও সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শুধু অনলাইনের ক্লাস চলছে।
তবে অনলাইনের মাধ্যমে কতটা মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। কারণ, অনলাইন পরীক্ষায় নকলসহ নানারকম অনৈতিক পন্থা অবলম্বনের সুযোগ থেকে যায়। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা সহজেই পরবর্তী সেমিস্টার কিংবা বর্ষে উঠে যেতে পারেন, অন্যদিকে যথাযথ মূল্যায়ন থেকে বঞ্চিত হতে পারেন মেধাবী শিক্ষার্থীরা।
অনলাইন লেখাপড়ার কারণে শিক্ষাক্ষেত্রে এক ধরনের ধনী-গরিব, শহর-গ্রামাঞ্চল, সরকারি-বেসরকারি বৈষম্যও সৃষ্টি হচ্ছে। গ্রামাঞ্চলে ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিকমতো পাওয়া যায় না। তা ছাড়া অনেক শিক্ষক ও অধিকাংশ শিক্ষার্থীর ল্যাপটপ নেই। ল্যাপটপের বিকল্প হিসেবে অনেক স্মার্টফোনে ক্লাস করা গেলেও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিক্ষার্থীর স্মার্টফোনও নেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইআর) বিভাগের তিন সহযোগী অধ্যাপকের এক গবেষণার তথ্যমতে, শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৬২ শতাংশ মোবাইল ডাটা, ৩৬ শতাংশ ওয়াইফাই বা ব্রডব্যান্ড ও ২ শতাংশ পোর্টেবল মডেমের মাধ্যমে ইন্টারনেট-সুবিধা গ্রহণ করছে। জরিপ বলছে, মোবাইল ডাটা ব্যবহার করে ক্লাস করার হার সবচেয়ে বেশি।
স্মার্টফোনে জুম অ্যাপ ১ ঘণ্টা ব্যবহারে প্রায় ২৮০-৩০০ মেগাবাইট ডাটা খরচ হয়। এর চেয়ে কিছুটা বেশি খরচ হয় গুগল মিটে। ল্যাপটপে ব্যবহারের ক্ষেত্রে এ ডাটা খরচ বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। প্রতিদিন দুই থেকে চারটি ক্লাস করলেই এক গিগাবাইট ডাটা খরচ হয়ে যায়। এতে মাস শেষে ইন্টারনেট বিল ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা গুনতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
টেলিটক বিনামূল্যে ডাটা দিলেও তার সুফল বেশিরভাগ শিক্ষার্থী পাচ্ছে না। কারণ, টেলিটকের নেটওয়ার্ক কভারেজ, গতি ও নেটওয়ার্ক সমস্যা নিয়ে গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের অভিযোগের শেষ নেই। তা ছাড়া বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর টেলিটক সিম নেই। ফলে নতুন সিম ক্রয় করতে হচ্ছে।
বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে। যেহেতু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘অটো পাশের‘ সুযোগ নেই, সুতরাং এ অবস্থায় বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট এড়াতে সামাজিক দূরত্ব মেনে হলেও ক্লাস-পরীক্ষার ব্যবস্থা করা উচিত। সংশ্লিষ্ট সবার প্রচেষ্টার ফলে সব বাধাবিপত্তি দূর হবে- এটাই প্রত্যাশা। যত তাড়াতাড়ি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পুরোদমে ক্লাস-পরীক্ষা শুরু করা যাবে, শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য তত কমবে। স্বাধীনতার অর্ধশত বছর পরও শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য কোনভাবেই কাম্য নয়।
তারেক নিজাম
মঙ্গলবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২০
করোনার কারণে ৮ মাসের বেশি সময় ধরে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। এই বন্ধের মধ্যে অনলাইনে বেশির ভাগ বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা চললেও সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শুধু অনলাইনের ক্লাস চলছে।
তবে অনলাইনের মাধ্যমে কতটা মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। কারণ, অনলাইন পরীক্ষায় নকলসহ নানারকম অনৈতিক পন্থা অবলম্বনের সুযোগ থেকে যায়। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা সহজেই পরবর্তী সেমিস্টার কিংবা বর্ষে উঠে যেতে পারেন, অন্যদিকে যথাযথ মূল্যায়ন থেকে বঞ্চিত হতে পারেন মেধাবী শিক্ষার্থীরা।
অনলাইন লেখাপড়ার কারণে শিক্ষাক্ষেত্রে এক ধরনের ধনী-গরিব, শহর-গ্রামাঞ্চল, সরকারি-বেসরকারি বৈষম্যও সৃষ্টি হচ্ছে। গ্রামাঞ্চলে ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিকমতো পাওয়া যায় না। তা ছাড়া অনেক শিক্ষক ও অধিকাংশ শিক্ষার্থীর ল্যাপটপ নেই। ল্যাপটপের বিকল্প হিসেবে অনেক স্মার্টফোনে ক্লাস করা গেলেও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিক্ষার্থীর স্মার্টফোনও নেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইআর) বিভাগের তিন সহযোগী অধ্যাপকের এক গবেষণার তথ্যমতে, শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৬২ শতাংশ মোবাইল ডাটা, ৩৬ শতাংশ ওয়াইফাই বা ব্রডব্যান্ড ও ২ শতাংশ পোর্টেবল মডেমের মাধ্যমে ইন্টারনেট-সুবিধা গ্রহণ করছে। জরিপ বলছে, মোবাইল ডাটা ব্যবহার করে ক্লাস করার হার সবচেয়ে বেশি।
স্মার্টফোনে জুম অ্যাপ ১ ঘণ্টা ব্যবহারে প্রায় ২৮০-৩০০ মেগাবাইট ডাটা খরচ হয়। এর চেয়ে কিছুটা বেশি খরচ হয় গুগল মিটে। ল্যাপটপে ব্যবহারের ক্ষেত্রে এ ডাটা খরচ বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। প্রতিদিন দুই থেকে চারটি ক্লাস করলেই এক গিগাবাইট ডাটা খরচ হয়ে যায়। এতে মাস শেষে ইন্টারনেট বিল ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা গুনতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
টেলিটক বিনামূল্যে ডাটা দিলেও তার সুফল বেশিরভাগ শিক্ষার্থী পাচ্ছে না। কারণ, টেলিটকের নেটওয়ার্ক কভারেজ, গতি ও নেটওয়ার্ক সমস্যা নিয়ে গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের অভিযোগের শেষ নেই। তা ছাড়া বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর টেলিটক সিম নেই। ফলে নতুন সিম ক্রয় করতে হচ্ছে।
বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে। যেহেতু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘অটো পাশের‘ সুযোগ নেই, সুতরাং এ অবস্থায় বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট এড়াতে সামাজিক দূরত্ব মেনে হলেও ক্লাস-পরীক্ষার ব্যবস্থা করা উচিত। সংশ্লিষ্ট সবার প্রচেষ্টার ফলে সব বাধাবিপত্তি দূর হবে- এটাই প্রত্যাশা। যত তাড়াতাড়ি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পুরোদমে ক্লাস-পরীক্ষা শুরু করা যাবে, শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য তত কমবে। স্বাধীনতার অর্ধশত বছর পরও শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য কোনভাবেই কাম্য নয়।
তারেক নিজাম