alt

ঈদ সংখ্যা ২০২১

বিবর বাসনা

জারিফ আলম

: সোমবার, ১০ মে ২০২১

শিল্পী : সঞ্জয় দে রিপন

হাসপাতালে কয়েক সপ্তাহ ভর্তি থাকার পর আজ ছাড়া পেলো সামন্ত যুগের শেষ প্রভু মিন্নাত আলি। সে পুরোপুরি সুস্থ হয়নি এখনো। হয়তো মনের জোর তাকে আরো কিছুদিন বাঁচতে সাহায্য করেছে। তার ইচ্ছা আরো কিছুদিন দুনিয়ার রূপরসগন্ধ নিয়ে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠা। এই বিষয়ের প্রতি তার বিশেষ পক্ষপাত আছে।

প্রজা নেই। বিত্তবেসাতি কিচ্ছু নেই। চল্লিশের মতো বয়স। প্রথম যৌবনে বাবা-মা দুজনকে হারিয়ে মিন্নাত আলি স্বাধীন নবাব। তাকে কোনো কাজে না করবার কেউ নেই। ঝামেলা কেবল কিছু তোষামুদে প্রতিপক্ষ নিয়ে। এরাই মূলত বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মিন্নাত আলির স্বাধীনতায়। কারণ, এরা আছে সুযোগের অপেক্ষায়। শিকারির মতো ওঁৎ পেতে আছে তারা। কীভাবে হাতিয়ে নেয়া যায় মিন্নাত আলির জায়গা জমি এসব ভাবনা নিয়ে বিভোর থাকে সবসময়। তাছাড়া জোত-জমির ভাগবাটোয়ারা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। কারণ, এই বংশে আর কোনো অংশীদার অবশিষ্ট নেই।

মিন্নাত আলি বিয়ে করেনি এখনো। বিয়ের সুযোগ তাকে কেউ না দিলেও সুযোগ সে নিজেই সে পারতো। তার সে ক্ষমতা আছে। প্রয়োজনে জনবলও ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু সে কোনো পথেই যায়নি।

রাবেয়াকে ভালোবেসেছিলো মিন্নাত আলি। তাকে এখনো ভালোবাসে। যাকে ভালোবাসা যায় তাকে সারাজীবনই ভালোবেসে যাবে সে এই তত্ত্বেই বিশ^াস করে। ভালোবাসার কোনো অতীত হয় না, তা সবসময়ই বর্তমান। তো সেই রাবেয়ার কারণেই মিন্নাত আলি আর বিয়ে করেনি। সবাই বিষয়টি জানে। আড়ালে আবডালে কানাঘুষা চলে। এ পর্যন্তই। সামনে বলবার সাহস কারোর নেই।

মিন্নাত আলির বড়ো চাচা দবির আলি। ছেলেপেলে না থাকায় মিন্নাত আলির সঙ্গেই থাকেন। দবির আলির বউ বন্ধ্যা থাকায় কোনো ছেলেমেয়ে হয়নি। বউটা শেষমেশ মারা গেলো জটিল ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে। সেই শোকে আর বিয়ে করেননি তিনি। তাছাড়া বিয়ে করবার কোনো আশাও নেই।

দবির আলি মিন্নাত আলিকে একদিন বলেই ফেললেন, একটা বিয়ে থা করে সংসারী হ, মিন্নাত। আর কতোদিন এভাবে দিন কাটাবি!

মিন্নাত আলি অনেকটা সংকোচ নিয়েই জবাব দেয়, না চাচা, আমার আর বিয়েটিয়ে করা হবে না। তাছাড়া কেনো সম্ভব না সেটাও আপনি জানেন।

মিন্নাত আলির চাচা আর কথা বাড়ান না। তিনি একটা দীর্ঘনিশ্বাস আকাশের দিকে ছুঁড়ে দেন, মনটাকে হালকা করবেন বলে।

২.

মিন্নাত আলি রাবেয়াকে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলো। রাবেয়া কোনো কথা না বলে তাকে পাশ কাটিয়ে গিয়েছিলো। সেটাই ছিলো প্রথম প্রস্তাব। তার ধারণ ছিলো এখন না হোক পরে নিশ্চয়ই হ্যাঁ বা না নিশ্চয়ই কোনো উত্তর পাবে। সনাতনী পথের দিকে এগিয়ে গেলো মিন্নাত আলি। সে রাবেয়াকে তিনবার এই প্রস্তাব দেবে। ভালো-মন্দ যাই হোক না কেনো এর জন্য প্রস্তুত মিন্নাত আলি।

রাবেয়া গ্রামেরই মেয়ে। তাকে দেখে যে কেউ মুগ্ধ হবে। কথা কম বলে। হাল ফ্যাশনের কোনো কিছুই তাকে ছুঁতে পারেনি। প্রথমবার দেখলে তাকে দূর প্রাচ্যের কোনো ইরানি মেয়ে মনে হবে।

তিনবার প্রস্তাব দেবার পরও কোনো কথা বেরোয়নি রাবেয়ার মুখ থেকে। এরকম ঘটেনি আর কোনো মেয়ের বেলায়। বরং অনেকে তার সঙ্গে ভাব জমাতে চেয়েছে। মিন্নাত আলি এসব গায়ে পড়ে ভাব দেখে বরফের মতো গলে যায়নি কখনো।

মিন্নাত আলির বন্ধু আহমেদ আমিন সেবার বেড়াতে এলো। উদ্দেশ্য মিন্নাত আলিকে বিয়েতে রাজি করানো। অবশ্য তার চাচা দবির আলি খবর দিয়ে এনেছেন তাকে। মিন্নাত আলিকে সেই বন্ধু সুযোগ পেয়ে বললো, এই যে তোর সঙ্গে কতো মেয়ে খাতির জমাতে আসে কই তোর তো কোনো সাড়াশব্দ দেখি না। তোর কি গোপন কোনো অসুখবিসুখ আছে নাকি!

গরম তেলে ফোঁড়ন দিলে যেমন ছ্যাঁৎ করে ওঠে কথাটা শুনে তেমনি ছ্যাঁৎ করে উঠলো মিন্নাত আলি। সে আর সহ্য না করে বলেই ফেললো, আমি তো আর কান্দাপাড়ার কোনো নটিকে বিয়ে করতে পারি না। পারলে তুই বিয়ে কর। তোর শখ আছে নাকি!

মিন্নাত আলির বন্ধু এই কথা শোনার পর কোনো উচ্চবাচ্য করেনি। সে সত্যি সত্যি একজন মেয়েকে বিয়ে করে উধাও হয়ে যায়। মিন্নাত আলির সঙ্গে আর দেখা হয়নি তার।

রাবেয়ার বাবার কাছে বিয়ে প্রস্তাব দিতে মিন্নাত আলি তার চাচা দবির আলিকে নিয়ে গেলো। সঙ্গে নিলো গৌড় ঘোষ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার থেকে মিষ্টি আর সন্দেশ। বিষয়টি এলাকার মানুষের দৃষ্টি কেড়েছিলো রীতিমতো।

মিন্নাত আলির চাচা রাবেয়ার বাবা নিয়ামত মুনশিকে বললেন, ভাই, আমার ভাতিজার সঙ্গে আপনার মেয়ের বিয়ের সম্বন্ধ এনেছি। আপনার কী মত?

নিয়ামত মুনশি মৃদু হেসে জবাব দিলেন, মেয়ে আমার বড়ো হয়েছে। তাকে বিয়ে দিতে হবে এটাও সত্যি। মেয়ে যদি রাজি থাকে আমার আপত্তি নেই। তবে কয়েকটা শর্ত আছে।

কী কী শর্ত আছে বলেন শুনি।

প্রথম শর্ত হলো এক মাস সময় দিতে হবে। দ্বিতীয় শর্ত এক মাস দিতে হবে। আর তৃতীয় শর্ত এক মাস দিতে হবে।

দবির আলি হাসতে হাসতে বললেন, আপনি খুব রসিকতা করতে পারেন ভাই। এ শর্তে আমরা রাজি।

মিন্নাত আলি এসব কথা শুনতে পায়নি হয়তো। সে পাশের ঘরে রাবেয়ার সঙ্গে আলাপ জমাতে চেষ্টা করছিলো। রাবেয়া এখন পর্যন্ত কোনো কথা বলেনি। অথচ সে অন্যদের সঙ্গে কথা ঠিকই বলে। কিন্তু একমাত্র মিন্নাত আলির বেলায় ভিন্ন। বিষয়টা পীড়া দেয় তাকে।

মিন্নাত আলির বয়স তখন পনেরো কি ষোলো। জগতের অনেক কিছুই সে বোঝে না। আদালতে মিন্নাত আলির বাবা হুরমুজ আলির বিরুদ্ধে জমি সংক্রান্ত মামলায় সাক্ষী দেবার কারণে রাবেয়ার মায়ের জিভ কেটে দিয়েছিলো। বিষয়টি একরাত্রির ঘটনা মাত্র। বিকেলে ভালোভাবেই বাড়ি ফিরেছিলো রাবেয়ার মা। রাত একটু গভীর হতেই হুরমুজ আলির পাণ্ডারা আসে। হুরমুজ আলি অতি নিখুঁতভাবে রাবেয়ার মায়ের জিভ কেটে ফেলে ধারালো অস্ত্র দিয়ে। তারপর তাকে ঘরের ভেতরে ঝুলিয়ে দেয়া হয় ফাঁসির নাম করে। এলাকায় ঘটনাটা ছড়িয়ে যায়। সবাই ভেবে নিয়েছিলো আত্মহত্যা। তারপর হুরমুজ আলি সর্বসাকল্যে এক সপ্তাহ জীবিত ছিলো। সে নিজের কপালে গাদাবন্দুক ঠেকিয়ে আত্মহত্যা করেছিলো। রাবেয়ার মায়ের মৃত্যুর কারণ পরে সবাই জানতে পারলেও হুরমুজ আলির মৃত্যুরহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি। রাবেয়ার বয়স তখন দুই কি তিন।

তো রাবেয়া তার মায়ের মৃত্যুদৃশ্য না দেখলেও তার বাবার কাছ থেকে হাজারবার শুনেছে সেই মৃত্যুর কাহিনি। যা কখনো ভুলবার মতো নয়। মিন্নাত আলির তা মনে থাকবার কথা না। সেই কবে ঘটে যাওয়া ঘটনা। এরপর নদীর পানি সাগরে গড়ালো। কতোবার সূর্য উঠলো সূর্য ডুবলো। এসব কথা জিইয়ে রাখার অবসর কোথায়!

রাবেয়াকে হাতজোড় করে অনুরোধ করে মিন্নাত আলি বলেছিলো, তুমি যদি বিয়েতে রাজি হও সব তোমাকে দেবো; এই বিষয় সম্পত্তি সব। শুধু রাজি হয়েই দেখো।

রাবেয়া কোনো কথা বলেনি।

পরদিন আবার আসবে বলে জানিয়ে যায় মিন্নাত আলি।

৩.

রাবেয়া তার বাবাকে বলে, তুমি কী করে রাজি হলে মিন্নাত আলির সঙ্গে আমার বিয়ে দিতে।

রাবেয়ার বাবা বলেন, আমি এই গ্রাম ছেড়ে চলে যাবো। বাড়িটুকু বেচবো কয়েক দিনের মধ্যেই। তোর বিয়ে মিন্নাত আলির সঙ্গে কোনো মতেই হতে দেয়া যাবে না। এক মাস সময় চেয়ে নিয়েছি দবির আলির কাছ থেকে। এই এক মাসে আমাদের যাবার প্রস্তুতি শেষ হয়ে যাবে।

রাবেয়া বলল, তুমি আসলেই বুদ্ধিমান, বাবা।

রাবেয়ার বাবা বললেন, যাদের ভেতরে খুনির রক্ত, যারা আমার সংসারে অশান্তির আগুন জে¦লে দিয়েছে তারই বংশের ছেলে আমার মেয়ের জামাই হিশেবে আমি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারবো না।

রাবেয়া ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। মা মা বলে ঘরে ভেতরে চলে যায়।

মিন্নাত আলি তার চাচা দবির আলিকে বলল, চাচা, রাবেয়া আমার সঙ্গে তো কথাই বলছে না। এখন পর্যন্ত কোনো কথাই মুখে ফুটে বের হয়নি। এর সমাধান কি নেই?

দবির আলী বললেন, বলবে বলবে বিয়েটা আগে হোক। তোর ধৈর্যের ঘাটতি আছে। ঠিক তোর বাবার মতো। তোর বাবাও অধৈর্য হয়ে রাবেয়র মা’কে মেরে ফেললো।

এসব অনেক শুনেছি চাচা। তবে অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য এসব একটু আধটু করাই যায়। রাজা বাদশারা এসব কম করেনি আগে। এসব নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে ভালো চিন্তা করো, মঙ্গলময় চিন্তা করো। পাড়ার নটিবেটি নিয়ে তুমিও কম ফুর্তি করোনি। শুনেছি তোমার নাকি একটা ছেলেও হয়েছিলো। আচ্ছা, তার কোনো খবর নাওনি আর?

দবির আলি জবাব দেয়, সে-সব দিনগুলোর জন্য আমি অনুতপ্ত। খোদার কাছে ক্ষমা চাই। ভাবছি একটা এতিমখানা করে দিয়ে চোখ বুজবো। তাও যদি কিছু পাপ মার্জনা করা যায়।

মিন্নাত আলি বললো, হ্যাঁ, দেখো কী করা যায়। আচ্ছা, চাচা একজন গরিব মানুষ যদি এমন ঘটাতো; সে-ও যদি কারো পেট বাঁধিয়ে দিতো তাহলে তো সে এসব এতিমখানা করতে পারতো না, তার তো সামর্র্থ্যও নেই। তার বেলায় মার্জনা কেমন করে হতো?

দবির আলি কোনো জবাব দেন না। মাথা নিচু হয়ে যায় আপনা থেকেই।

রাবেয়ার বাবার সঙ্গে মিন্নাত আলি সাক্ষাৎ করতে এলো। তার ধারণা ছিলো সব ঠিক হয়ে গেছে। রাবেয়ার মুখ থেকে সম্মতি আদায় করা যাবে।

মিন্নাত আলি বললো, চাচা, বিয়েতে কী কী লাগবে সব আঞ্জামের টাকা আমি দেবো আপনি আবার এসব নিয়ে কোনো ভাবনাচিন্তা করবেন না। আপনার বয়স হয়েছে। কিছু দায়িত্ব যে আমরাও পালন করতে পারি, তা একবার দেখেন। আপনি কোনো ধরনের সংকোচ করবেন না। আপনি আমাকে ছেলের মতো দেখবেন।

এই বলে মিন্নাত আলি তার ট্যাঁক থেকে কয়েক হাজার টাকার বাণ্ডিল ধরিয়ে দেয়। রাবেয়া কোথা থেকে এসে যেনো চিলের মতো ছোঁ মেরে তার বাবার হাত থেকে নিয়ে নেয়। তারপর সেই টাকা মিন্নাত আলিকে দিয়ে বলে, এই টাকা আপনার কাছেই রাখেন। এই টাকার বিশেষ প্রয়োজন হবে না। বরং আপনারই কাজে লাগুক।

মিন্নাত আলি একটু কপট হেসে বলে, টাকা না নেয়ার তো কোনো কারণ দেখি না। কদিন পর তো তুমি আমার বউ হবে। আমার কি এই পরিবারের কোনো দায়িত্ব থাকতে পারে না?

মিন্নাত আলির কথা কেমন যেন জড়িয়ে আসছে বারবার। কথা বোঝা যায় ঠিকই কিন্তু মনে হচ্ছে মাতলামিও আছে এতে।

রাবেয়া বলল, এই টাকা নিয়ে এখনই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। জানেন তো, আপনাদের দিকে কেউ ঘৃণায় তাকায় না। আর আপনারা ভাবেন, ভয় পেয়ে ওদের এমন অবস্থা। এর চেয়ে মজার কৌতুক আর হয় না।

মিন্নাত আলি রাগ নিয়ে বলল, ভাবলাম তোমাকে এক মাস সময় দিই তুমি ভালোয় ভালোয় বিয়েতে রাজি হয়ে যাবে। তোমার বাবাও একটা ভালো সিদ্ধান্ত ভালোভাবেই নিক এটাই তো চেয়েছিলাম। তা তো দেখছি টাইম দিয়ে আমার ক্ষতির পরিমাণই শুধু বাড়বে। এটা আর বাড়াতে চাই না আমি।

মিন্নাত আলি রাবেয়ার বাবার দিকে ইঙ্গিত করে বলল, চাচা আপনাকে টাইম দিয়ে কোনো লাভ হবে না। কারণ, আপনার কন্যাই তো এ বিয়েতে রাজি না।

রাবেয়ার হাত টেনে ধরে মিন্নাত আলি বলল, চাচা, এই আপনার মেয়েকে নিয়ে চললাম। বিয়ের সময় আপনাকে দাওয়াত দেয়া হবে।

রাবেয়া হেঁচকা টানে হাত ছাড়িয়ে নেয়। মিন্নাত আলির গালে কষে চড় বসিয়ে দেয়।

মিন্নাত আলি কিছুক্ষণ থ মেরে থাকে। দিগি্বদিকশূন্য হয়ে রান্না ঘর থেকে বটি এনে এক কোপে রাবেয়ার কবজি কেটে ফেলে। রক্তধারা বইতে থাকে কর্তিত হাত থেকে। রাবেয়া অজ্ঞান হয়ে যায়।

রক্ত পড়া বন্ধ হচ্ছে না কোনোমতেই। প্রাথমিক ব্যান্ডেজে কোনো ফল হলো না। একটা ভ্যান জোগাড় করে রাবেয়াকে সদর হাসপাতালে নেবার পথেই অনন্ত ঘুমে চলে যায়। হাসপাতালে ডাক্তারি রিপোর্ট বলছে, অধিক রক্তক্ষরণের দরুন এই মৃত্যু।

মিন্নাত আলি বাড়িতে চাচার সঙ্গে শেষ পরামর্শ করছে। রাবেয়ার মৃত্যু সংবাদ ইতোমধ্যে তার কানেও পৌঁছেছে।

তাই সে তার চাচাকে বলল, আমার জেল, ফাঁসি হবে এসব নিয়ে ভাববেন না। তবে আমার ইচ্ছা রাবেয়ার নামে একটা হাসপাতাল হবে এই গ্রামে। আপনি আমার এই কথা রাখবেন আশা করি। শাহজাহান মমতাজের জন্যে তাজমহল বানিয়েছে আর আমি না হয় রাবেয়ার নামে ‘রাবেয়া হাসপাতাল’ বানাবো।

পুলিশ এসে মিন্নাত আলিকে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে রাবেয়ার বাবার কান্নায় ভারি হয়ে যাচ্ছে গ্রামের আকাশ-বাতাস। স্তব্ধ প্রকৃতি।

tab

ঈদ সংখ্যা ২০২১

বিবর বাসনা

জারিফ আলম

শিল্পী : সঞ্জয় দে রিপন

সোমবার, ১০ মে ২০২১

হাসপাতালে কয়েক সপ্তাহ ভর্তি থাকার পর আজ ছাড়া পেলো সামন্ত যুগের শেষ প্রভু মিন্নাত আলি। সে পুরোপুরি সুস্থ হয়নি এখনো। হয়তো মনের জোর তাকে আরো কিছুদিন বাঁচতে সাহায্য করেছে। তার ইচ্ছা আরো কিছুদিন দুনিয়ার রূপরসগন্ধ নিয়ে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠা। এই বিষয়ের প্রতি তার বিশেষ পক্ষপাত আছে।

প্রজা নেই। বিত্তবেসাতি কিচ্ছু নেই। চল্লিশের মতো বয়স। প্রথম যৌবনে বাবা-মা দুজনকে হারিয়ে মিন্নাত আলি স্বাধীন নবাব। তাকে কোনো কাজে না করবার কেউ নেই। ঝামেলা কেবল কিছু তোষামুদে প্রতিপক্ষ নিয়ে। এরাই মূলত বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মিন্নাত আলির স্বাধীনতায়। কারণ, এরা আছে সুযোগের অপেক্ষায়। শিকারির মতো ওঁৎ পেতে আছে তারা। কীভাবে হাতিয়ে নেয়া যায় মিন্নাত আলির জায়গা জমি এসব ভাবনা নিয়ে বিভোর থাকে সবসময়। তাছাড়া জোত-জমির ভাগবাটোয়ারা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। কারণ, এই বংশে আর কোনো অংশীদার অবশিষ্ট নেই।

মিন্নাত আলি বিয়ে করেনি এখনো। বিয়ের সুযোগ তাকে কেউ না দিলেও সুযোগ সে নিজেই সে পারতো। তার সে ক্ষমতা আছে। প্রয়োজনে জনবলও ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু সে কোনো পথেই যায়নি।

রাবেয়াকে ভালোবেসেছিলো মিন্নাত আলি। তাকে এখনো ভালোবাসে। যাকে ভালোবাসা যায় তাকে সারাজীবনই ভালোবেসে যাবে সে এই তত্ত্বেই বিশ^াস করে। ভালোবাসার কোনো অতীত হয় না, তা সবসময়ই বর্তমান। তো সেই রাবেয়ার কারণেই মিন্নাত আলি আর বিয়ে করেনি। সবাই বিষয়টি জানে। আড়ালে আবডালে কানাঘুষা চলে। এ পর্যন্তই। সামনে বলবার সাহস কারোর নেই।

মিন্নাত আলির বড়ো চাচা দবির আলি। ছেলেপেলে না থাকায় মিন্নাত আলির সঙ্গেই থাকেন। দবির আলির বউ বন্ধ্যা থাকায় কোনো ছেলেমেয়ে হয়নি। বউটা শেষমেশ মারা গেলো জটিল ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে। সেই শোকে আর বিয়ে করেননি তিনি। তাছাড়া বিয়ে করবার কোনো আশাও নেই।

দবির আলি মিন্নাত আলিকে একদিন বলেই ফেললেন, একটা বিয়ে থা করে সংসারী হ, মিন্নাত। আর কতোদিন এভাবে দিন কাটাবি!

মিন্নাত আলি অনেকটা সংকোচ নিয়েই জবাব দেয়, না চাচা, আমার আর বিয়েটিয়ে করা হবে না। তাছাড়া কেনো সম্ভব না সেটাও আপনি জানেন।

মিন্নাত আলির চাচা আর কথা বাড়ান না। তিনি একটা দীর্ঘনিশ্বাস আকাশের দিকে ছুঁড়ে দেন, মনটাকে হালকা করবেন বলে।

২.

মিন্নাত আলি রাবেয়াকে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলো। রাবেয়া কোনো কথা না বলে তাকে পাশ কাটিয়ে গিয়েছিলো। সেটাই ছিলো প্রথম প্রস্তাব। তার ধারণ ছিলো এখন না হোক পরে নিশ্চয়ই হ্যাঁ বা না নিশ্চয়ই কোনো উত্তর পাবে। সনাতনী পথের দিকে এগিয়ে গেলো মিন্নাত আলি। সে রাবেয়াকে তিনবার এই প্রস্তাব দেবে। ভালো-মন্দ যাই হোক না কেনো এর জন্য প্রস্তুত মিন্নাত আলি।

রাবেয়া গ্রামেরই মেয়ে। তাকে দেখে যে কেউ মুগ্ধ হবে। কথা কম বলে। হাল ফ্যাশনের কোনো কিছুই তাকে ছুঁতে পারেনি। প্রথমবার দেখলে তাকে দূর প্রাচ্যের কোনো ইরানি মেয়ে মনে হবে।

তিনবার প্রস্তাব দেবার পরও কোনো কথা বেরোয়নি রাবেয়ার মুখ থেকে। এরকম ঘটেনি আর কোনো মেয়ের বেলায়। বরং অনেকে তার সঙ্গে ভাব জমাতে চেয়েছে। মিন্নাত আলি এসব গায়ে পড়ে ভাব দেখে বরফের মতো গলে যায়নি কখনো।

মিন্নাত আলির বন্ধু আহমেদ আমিন সেবার বেড়াতে এলো। উদ্দেশ্য মিন্নাত আলিকে বিয়েতে রাজি করানো। অবশ্য তার চাচা দবির আলি খবর দিয়ে এনেছেন তাকে। মিন্নাত আলিকে সেই বন্ধু সুযোগ পেয়ে বললো, এই যে তোর সঙ্গে কতো মেয়ে খাতির জমাতে আসে কই তোর তো কোনো সাড়াশব্দ দেখি না। তোর কি গোপন কোনো অসুখবিসুখ আছে নাকি!

গরম তেলে ফোঁড়ন দিলে যেমন ছ্যাঁৎ করে ওঠে কথাটা শুনে তেমনি ছ্যাঁৎ করে উঠলো মিন্নাত আলি। সে আর সহ্য না করে বলেই ফেললো, আমি তো আর কান্দাপাড়ার কোনো নটিকে বিয়ে করতে পারি না। পারলে তুই বিয়ে কর। তোর শখ আছে নাকি!

মিন্নাত আলির বন্ধু এই কথা শোনার পর কোনো উচ্চবাচ্য করেনি। সে সত্যি সত্যি একজন মেয়েকে বিয়ে করে উধাও হয়ে যায়। মিন্নাত আলির সঙ্গে আর দেখা হয়নি তার।

রাবেয়ার বাবার কাছে বিয়ে প্রস্তাব দিতে মিন্নাত আলি তার চাচা দবির আলিকে নিয়ে গেলো। সঙ্গে নিলো গৌড় ঘোষ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার থেকে মিষ্টি আর সন্দেশ। বিষয়টি এলাকার মানুষের দৃষ্টি কেড়েছিলো রীতিমতো।

মিন্নাত আলির চাচা রাবেয়ার বাবা নিয়ামত মুনশিকে বললেন, ভাই, আমার ভাতিজার সঙ্গে আপনার মেয়ের বিয়ের সম্বন্ধ এনেছি। আপনার কী মত?

নিয়ামত মুনশি মৃদু হেসে জবাব দিলেন, মেয়ে আমার বড়ো হয়েছে। তাকে বিয়ে দিতে হবে এটাও সত্যি। মেয়ে যদি রাজি থাকে আমার আপত্তি নেই। তবে কয়েকটা শর্ত আছে।

কী কী শর্ত আছে বলেন শুনি।

প্রথম শর্ত হলো এক মাস সময় দিতে হবে। দ্বিতীয় শর্ত এক মাস দিতে হবে। আর তৃতীয় শর্ত এক মাস দিতে হবে।

দবির আলি হাসতে হাসতে বললেন, আপনি খুব রসিকতা করতে পারেন ভাই। এ শর্তে আমরা রাজি।

মিন্নাত আলি এসব কথা শুনতে পায়নি হয়তো। সে পাশের ঘরে রাবেয়ার সঙ্গে আলাপ জমাতে চেষ্টা করছিলো। রাবেয়া এখন পর্যন্ত কোনো কথা বলেনি। অথচ সে অন্যদের সঙ্গে কথা ঠিকই বলে। কিন্তু একমাত্র মিন্নাত আলির বেলায় ভিন্ন। বিষয়টা পীড়া দেয় তাকে।

মিন্নাত আলির বয়স তখন পনেরো কি ষোলো। জগতের অনেক কিছুই সে বোঝে না। আদালতে মিন্নাত আলির বাবা হুরমুজ আলির বিরুদ্ধে জমি সংক্রান্ত মামলায় সাক্ষী দেবার কারণে রাবেয়ার মায়ের জিভ কেটে দিয়েছিলো। বিষয়টি একরাত্রির ঘটনা মাত্র। বিকেলে ভালোভাবেই বাড়ি ফিরেছিলো রাবেয়ার মা। রাত একটু গভীর হতেই হুরমুজ আলির পাণ্ডারা আসে। হুরমুজ আলি অতি নিখুঁতভাবে রাবেয়ার মায়ের জিভ কেটে ফেলে ধারালো অস্ত্র দিয়ে। তারপর তাকে ঘরের ভেতরে ঝুলিয়ে দেয়া হয় ফাঁসির নাম করে। এলাকায় ঘটনাটা ছড়িয়ে যায়। সবাই ভেবে নিয়েছিলো আত্মহত্যা। তারপর হুরমুজ আলি সর্বসাকল্যে এক সপ্তাহ জীবিত ছিলো। সে নিজের কপালে গাদাবন্দুক ঠেকিয়ে আত্মহত্যা করেছিলো। রাবেয়ার মায়ের মৃত্যুর কারণ পরে সবাই জানতে পারলেও হুরমুজ আলির মৃত্যুরহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি। রাবেয়ার বয়স তখন দুই কি তিন।

তো রাবেয়া তার মায়ের মৃত্যুদৃশ্য না দেখলেও তার বাবার কাছ থেকে হাজারবার শুনেছে সেই মৃত্যুর কাহিনি। যা কখনো ভুলবার মতো নয়। মিন্নাত আলির তা মনে থাকবার কথা না। সেই কবে ঘটে যাওয়া ঘটনা। এরপর নদীর পানি সাগরে গড়ালো। কতোবার সূর্য উঠলো সূর্য ডুবলো। এসব কথা জিইয়ে রাখার অবসর কোথায়!

রাবেয়াকে হাতজোড় করে অনুরোধ করে মিন্নাত আলি বলেছিলো, তুমি যদি বিয়েতে রাজি হও সব তোমাকে দেবো; এই বিষয় সম্পত্তি সব। শুধু রাজি হয়েই দেখো।

রাবেয়া কোনো কথা বলেনি।

পরদিন আবার আসবে বলে জানিয়ে যায় মিন্নাত আলি।

৩.

রাবেয়া তার বাবাকে বলে, তুমি কী করে রাজি হলে মিন্নাত আলির সঙ্গে আমার বিয়ে দিতে।

রাবেয়ার বাবা বলেন, আমি এই গ্রাম ছেড়ে চলে যাবো। বাড়িটুকু বেচবো কয়েক দিনের মধ্যেই। তোর বিয়ে মিন্নাত আলির সঙ্গে কোনো মতেই হতে দেয়া যাবে না। এক মাস সময় চেয়ে নিয়েছি দবির আলির কাছ থেকে। এই এক মাসে আমাদের যাবার প্রস্তুতি শেষ হয়ে যাবে।

রাবেয়া বলল, তুমি আসলেই বুদ্ধিমান, বাবা।

রাবেয়ার বাবা বললেন, যাদের ভেতরে খুনির রক্ত, যারা আমার সংসারে অশান্তির আগুন জে¦লে দিয়েছে তারই বংশের ছেলে আমার মেয়ের জামাই হিশেবে আমি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারবো না।

রাবেয়া ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। মা মা বলে ঘরে ভেতরে চলে যায়।

মিন্নাত আলি তার চাচা দবির আলিকে বলল, চাচা, রাবেয়া আমার সঙ্গে তো কথাই বলছে না। এখন পর্যন্ত কোনো কথাই মুখে ফুটে বের হয়নি। এর সমাধান কি নেই?

দবির আলী বললেন, বলবে বলবে বিয়েটা আগে হোক। তোর ধৈর্যের ঘাটতি আছে। ঠিক তোর বাবার মতো। তোর বাবাও অধৈর্য হয়ে রাবেয়র মা’কে মেরে ফেললো।

এসব অনেক শুনেছি চাচা। তবে অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য এসব একটু আধটু করাই যায়। রাজা বাদশারা এসব কম করেনি আগে। এসব নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে ভালো চিন্তা করো, মঙ্গলময় চিন্তা করো। পাড়ার নটিবেটি নিয়ে তুমিও কম ফুর্তি করোনি। শুনেছি তোমার নাকি একটা ছেলেও হয়েছিলো। আচ্ছা, তার কোনো খবর নাওনি আর?

দবির আলি জবাব দেয়, সে-সব দিনগুলোর জন্য আমি অনুতপ্ত। খোদার কাছে ক্ষমা চাই। ভাবছি একটা এতিমখানা করে দিয়ে চোখ বুজবো। তাও যদি কিছু পাপ মার্জনা করা যায়।

মিন্নাত আলি বললো, হ্যাঁ, দেখো কী করা যায়। আচ্ছা, চাচা একজন গরিব মানুষ যদি এমন ঘটাতো; সে-ও যদি কারো পেট বাঁধিয়ে দিতো তাহলে তো সে এসব এতিমখানা করতে পারতো না, তার তো সামর্র্থ্যও নেই। তার বেলায় মার্জনা কেমন করে হতো?

দবির আলি কোনো জবাব দেন না। মাথা নিচু হয়ে যায় আপনা থেকেই।

রাবেয়ার বাবার সঙ্গে মিন্নাত আলি সাক্ষাৎ করতে এলো। তার ধারণা ছিলো সব ঠিক হয়ে গেছে। রাবেয়ার মুখ থেকে সম্মতি আদায় করা যাবে।

মিন্নাত আলি বললো, চাচা, বিয়েতে কী কী লাগবে সব আঞ্জামের টাকা আমি দেবো আপনি আবার এসব নিয়ে কোনো ভাবনাচিন্তা করবেন না। আপনার বয়স হয়েছে। কিছু দায়িত্ব যে আমরাও পালন করতে পারি, তা একবার দেখেন। আপনি কোনো ধরনের সংকোচ করবেন না। আপনি আমাকে ছেলের মতো দেখবেন।

এই বলে মিন্নাত আলি তার ট্যাঁক থেকে কয়েক হাজার টাকার বাণ্ডিল ধরিয়ে দেয়। রাবেয়া কোথা থেকে এসে যেনো চিলের মতো ছোঁ মেরে তার বাবার হাত থেকে নিয়ে নেয়। তারপর সেই টাকা মিন্নাত আলিকে দিয়ে বলে, এই টাকা আপনার কাছেই রাখেন। এই টাকার বিশেষ প্রয়োজন হবে না। বরং আপনারই কাজে লাগুক।

মিন্নাত আলি একটু কপট হেসে বলে, টাকা না নেয়ার তো কোনো কারণ দেখি না। কদিন পর তো তুমি আমার বউ হবে। আমার কি এই পরিবারের কোনো দায়িত্ব থাকতে পারে না?

মিন্নাত আলির কথা কেমন যেন জড়িয়ে আসছে বারবার। কথা বোঝা যায় ঠিকই কিন্তু মনে হচ্ছে মাতলামিও আছে এতে।

রাবেয়া বলল, এই টাকা নিয়ে এখনই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। জানেন তো, আপনাদের দিকে কেউ ঘৃণায় তাকায় না। আর আপনারা ভাবেন, ভয় পেয়ে ওদের এমন অবস্থা। এর চেয়ে মজার কৌতুক আর হয় না।

মিন্নাত আলি রাগ নিয়ে বলল, ভাবলাম তোমাকে এক মাস সময় দিই তুমি ভালোয় ভালোয় বিয়েতে রাজি হয়ে যাবে। তোমার বাবাও একটা ভালো সিদ্ধান্ত ভালোভাবেই নিক এটাই তো চেয়েছিলাম। তা তো দেখছি টাইম দিয়ে আমার ক্ষতির পরিমাণই শুধু বাড়বে। এটা আর বাড়াতে চাই না আমি।

মিন্নাত আলি রাবেয়ার বাবার দিকে ইঙ্গিত করে বলল, চাচা আপনাকে টাইম দিয়ে কোনো লাভ হবে না। কারণ, আপনার কন্যাই তো এ বিয়েতে রাজি না।

রাবেয়ার হাত টেনে ধরে মিন্নাত আলি বলল, চাচা, এই আপনার মেয়েকে নিয়ে চললাম। বিয়ের সময় আপনাকে দাওয়াত দেয়া হবে।

রাবেয়া হেঁচকা টানে হাত ছাড়িয়ে নেয়। মিন্নাত আলির গালে কষে চড় বসিয়ে দেয়।

মিন্নাত আলি কিছুক্ষণ থ মেরে থাকে। দিগি্বদিকশূন্য হয়ে রান্না ঘর থেকে বটি এনে এক কোপে রাবেয়ার কবজি কেটে ফেলে। রক্তধারা বইতে থাকে কর্তিত হাত থেকে। রাবেয়া অজ্ঞান হয়ে যায়।

রক্ত পড়া বন্ধ হচ্ছে না কোনোমতেই। প্রাথমিক ব্যান্ডেজে কোনো ফল হলো না। একটা ভ্যান জোগাড় করে রাবেয়াকে সদর হাসপাতালে নেবার পথেই অনন্ত ঘুমে চলে যায়। হাসপাতালে ডাক্তারি রিপোর্ট বলছে, অধিক রক্তক্ষরণের দরুন এই মৃত্যু।

মিন্নাত আলি বাড়িতে চাচার সঙ্গে শেষ পরামর্শ করছে। রাবেয়ার মৃত্যু সংবাদ ইতোমধ্যে তার কানেও পৌঁছেছে।

তাই সে তার চাচাকে বলল, আমার জেল, ফাঁসি হবে এসব নিয়ে ভাববেন না। তবে আমার ইচ্ছা রাবেয়ার নামে একটা হাসপাতাল হবে এই গ্রামে। আপনি আমার এই কথা রাখবেন আশা করি। শাহজাহান মমতাজের জন্যে তাজমহল বানিয়েছে আর আমি না হয় রাবেয়ার নামে ‘রাবেয়া হাসপাতাল’ বানাবো।

পুলিশ এসে মিন্নাত আলিকে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে রাবেয়ার বাবার কান্নায় ভারি হয়ে যাচ্ছে গ্রামের আকাশ-বাতাস। স্তব্ধ প্রকৃতি।

back to top