নারী ও শিশুকন্যার প্রতি সহিংসতা : ধরন ভিত্তিক মে মাসের পরিসংখ্যান
মে ২০২৫ মাসে নারীর প্রতি সহিংসতার ধরন ভিত্তিক পরিসংখ্যান
মে ২০২৫ মাসে বাংলাদেশে নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি সহিংসতার ৩১০টি ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। হত্যা কাণ্ডের সংখ্যা ৯৮টি, ধর্ষণের ঘটনা ৫৩টি এবং আত্মহত্যার সংখ্যা ৩৮টি। শারীরিক নির্যাতনের সংখ্যা ৩৭টি, যৌন হয়রানি ২৩টি, ধর্ষণের চেষ্টা ২৩টি এবং দলবদ্ধ ধর্ষণ ১৫টি। অপহরণ ঘটেছে ১০টি ক্ষেত্রে। ধর্ষণের পর হত্যা, অপহরণের পর ধর্ষণ এবং হত্যা প্রচেষ্টার মতো ঘটনা রয়েছে ৩টি করে। মানসিক নির্যাতনের ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে ২টি এবং আত্মহত্যার চেষ্টা ঘটেছে ১টি।
জেলা ভিত্তিক ঘটনাঃ
২০২৫ সালের মে মাসে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি সহিংসতার মোট ৩১০টি ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। ঢাকা বিভাগে সহিংসতার হার সর্বাধিক ছিল, যেখানে শুধুমাত্র ঢাকা জেলায় সর্বোচ্চ ৪৪টি ঘটনা ঘটেছে, যা মোট ঘটনার ১৪.২ শতাংশ। চট্টগ্রাম জেলায় ২০টি, বগুড়া ও গাজীপুরে ১২টি করে এবং ময়মনসিংহে ১১টি ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। কক্সবাজার ও ঠাকুরগাঁও জেলায় ১০টি করে, কুষ্টিয়া, মুন্সিগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জে ৯টি করে এবং নেত্রকোনায় ৮টি ঘটনা পাওয়া গেছে। বরিশাল, ফরিদপুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী ও সিরাজগঞ্জে ৭টি করে এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও দিনাজপুরে ৬টি করে ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে।
সাতক্ষীরা, সুনামগঞ্জ ও টাঙ্গাইলে ৫টি করে ঘটনা ঘটেছে। বরগুনা, কিশোরগঞ্জ, মাদারীপুর ও পটুয়াখালীতে ৪টি করে এবং বাগেরহাট, হবিগঞ্জ, জয়পুরহাট, কুড়িগ্রাম, মানিকগঞ্জ, নরসিংদী, নাটোর ও রাজবাড়ীতে ৩টি করে ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। অন্যান্য জেলা গুলোতে ১ থেকে ২টি করে সহিংসতার ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে।
পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায় যে ঢাকা ও চট্টগ্রাম জেলা মিলে মোট ঘটনার প্রায় ২০.৬% ঘটনা ঘটেছে। আরও লক্ষণীয় যে, ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া, গাজীপুর, ময়মনসিংহ, কক্সবাজার ও ঠাকুরগাঁও - এই সাতটি জেলায় মোট ঘটনার ৪২.৩% ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। অন্যদিকে দেশের ৩০টি জেলায় প্রতিটিতে ৫টির কম ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে।
অপরাধের ধরন অনুযায়ী সর্বোচ্চ সংখ্যক সংঘটিত জেলাঃ
২০২৫ সালের মে মাসে বাংলাদেশে ধর্ষণ, দলবদ্ধধর্ষণ ও অপহরণের পর ধর্ষণ এই তিন ধরনের অপরাধকে একত্রিত করে মোট ৭১টি ঘটনা ঘটেছে। সবচেয়ে বেশি ঘটনা ঘটেছে ঢাকা জেলায় ৮টি, যা মোট ঘটনার ১১.৩%। ময়মনসিংহ ৫টি এবং সিরাজগঞ্জ ৪টি ঘটনা নিয়ে পরবর্তী স্থানে রয়েছে । বরিশাল, মুন্সিগঞ্জ ও ঠাকুরগাঁও জেলায় ৩টি করে, অন্যদিকে বাগেরহাট, চট্টগ্রাম, গাজীপুরসহ ১০টি জেলায় ২টি করে ঘটনা পাওয়া গেছে। দেশের ৩৯টি জেলায় কমপক্ষে ১টি যৌন সহিংসতার ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে, যেখানে ২৫টি জেলায় কোনো ঘটনা রেকর্ড হয়নি। শুধুমাত্র শীর্ষ ৫ জেলাতেই (ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিরাজগঞ্জ, বরিশাল, মুন্সিগঞ্জ ও ঠাকুরগাঁও) মোটঘটনার ৪০.৮% সংঘটিতহয়েছে।
২০২৫ সালের মে মাসে বাংলাদেশে নারী হত্যা ও ধর্ষণের পর হত্যার সম্মিলিত ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোট ১০২টি ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। ঢাকা জেলা ১৫টি ঘটনা নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে, যা মোট ঘটনার ১৪.৭%। চট্টগ্রাম ও গাজীপুর জেলায় ৬টি করে এবং নারায়ণগঞ্জে ৫টি ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। শীর্ষ ৫ জেলায় (ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, বগুড়া) মোটঘটনার ৩৫.৩% সংঘটিতহয়েছে।
২০২৫ সালের মে মাসে বাংলাদেশে নারী ও কন্যাশিশুদের আত্মহত্যার মোট ৩৮টি ঘটনা ঘটেছে। ঢাকা জেলায় সর্বোচ্চ ১০টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে, যা মোট ঘটনার ২৬.৩%। এছাড়া বরিশাল, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফরিদপুর, নাটোর ও সুনামগঞ্জ জেলায় ২টি করে আত্মহত্যার ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে।
২০২৫ সালের মে মাসে বাংলাদেশেনারী ও কন্যাশিশুর বিরুদ্ধে শারীরিক সহিংসতার মোট ৩৭টি ঘটনার মধ্যে বগুড়া, চট্টগ্রাম ও দিনাজপুর জেলায় সর্বোচ্চ ৪টি করে ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে, যা প্রতিটি জেলার জন্য মোট ঘটনার ১১.১% প্রতিনিধিত্ব করে। ঢাকা ও লক্ষ্মীপুর জেলায় ৩টি করে শারীরিক সহিংসতার ঘটনা দেখা গেছে। শীর্ষ তিন জেলায় (বগুড়া, চট্টগ্রাম, দিনাজপুর) মোটঘটনার ৩৩.৩% ঘটেছে। অন্যদিকে, দেশের ৬৪টি জেলারমধ্যে ৪৫টি জেলায় কোনো শারীরিক সহিংসতার ঘটনা রেকর্ড করা হয়নি।
২০২৫ সালের মে মাসে বাংলাদেশে নারী ও কন্যাশিশুর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির মোট ২৩টি ঘটনা ঘটেছে। ঢাকা জেলায় সর্বাধিক ৩টি ঘটনা নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে, যা মোট ঘটনার ১৩%। ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কক্সবাজার, কুষ্টিয়া ও লক্ষ্মীপুর জেলায় ২টি করে যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটেছে। শীর্ষ ৫ জেলায় (ঢাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কক্সবাজার, কুষ্টিয়া, লক্ষ্মীপুর) মোট ঘটনার ৪৩.৫% সংঘটিত হয়েছে। দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ৪৭টি জেলায় কোনো যৌন সহিংসতার ঘটনা রেকর্ড করা হয়নি।
বয়স অনুযায়ী ভিকটিমের বিশ্লেষণঃ
২০২৫ সালের মে মাসে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার ঘটনায় মোট ৩৫৩জন ভিকটিমের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এরমধ্যে ২১৬ জন ভিকটিমের বয়স পাওয়া গিয়েছে, যা মোট ভিকটিমের প্রায় ৬১.১৯ শতাংশ। বাকি ১৩৭ জনের বয়স উল্লেখ করা হয়নি, যা প্রায় ৩৮.৮১ শতাংশ।
বয়স ভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সব চেয়ে বেশি ভিকটিম ১৪ বছর বয়সী, মোট ১৬ জন, যা বয়স উল্লেখ করা ভিকটিমদের মধ্যে প্রায় ৭.৪১ শতাংশ। এছাড়া ২৫ বছর বয়সী ভিকটিম রয়েছে ১২ জন (৫.৫৬%), ১৭, ২০ এবং ৩৫ বছর বয়সে রয়েছে ৯ জন করে (প্রত্যেকটি৪.১৭%), এবং ২৮ বছর বয়সে ৮ জন (৩.৭০%) নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
৭, ১৬, ১৯ ও ৪০ বছর বয়সে ৭ জন করে (৩.২৪%) এবং ৮, ১০, ১৩, ২২, ৪৫ ও ৫৫ বছর বয়সে ৬ জন করে (২.৭৮%) নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
বয়স অনুযায়ী অপরাধীর বিশ্লেষণঃ
২০২৫ সালের মে মাসে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার ঘটনায় মোট ৩৫৩ জন অভিযুক্তের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৭৮ জনের বয়স নির্ধারণ যোগ্য ছিল, যা মোট অভিযুক্তের প্রায় ৫০.৪২ শতাংশ। বাকি ১৭৫ জনের বয়স তথ্য পাওয়া যায়নি, যা মোট অভিযুক্তের ৪৯.58 শতাংশ।
বয়স ভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৪০ বছর বয়সী অপরাধীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, মোট ১৩ জন, যা বয়স নির্ধারণ যোগ্য অপরাধীদের ৭.৩০%। এরপর সমান সংখ্যক অপরাধী রয়েছে ২২, ২৫, ৩০, ৩৫ ও ৫৫ বছর বয়সে, প্রত্যেকে ১১ জন করে (প্রত্যেকে৬.১৮%)। ৪৫ বছর বয়সে ১০ জন অপরাধী (৫.৬২%) রয়েছে এবং ২৮ বছর বয়সে রয়েছে ৯ জন (৫.০৬%)।
বয়স অনুযায়ী অপরাধের প্রবণতা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ৩০ থেকে ৪৫ বছর বয়স পর্যন্ত ব্যক্তিরাই সবচেয়ে বেশি সহিংসতার সঙ্গে জড়িত। এই বয়স সীমার মধ্যে অন্তত ৭০ জনের বেশি অপরাধী শনাক্ত করা হয়েছে, যা বয়স উল্লেখ যোগ্য মোট অপরাধীর ৩৯.৩৩ শতাংশ।
এছাড়া তরুণ বয়সের (১৮থেকে২৫) মধ্যে মোট ৩৫ জনের বেশি অপরাধী রয়েছে, যা স্পষ্ট করে যে তরুণ ও মধ্যবয়সী জনগোষ্ঠীর মধ্যে অপরাধে জড়ানোর হার তুলনা মূলক ভাবে বেশি।
তবে ১৭৮ জনের মধ্যে প্রায় ২২ জনের বয়স ১৪ থেকে ২৩ এর মধ্যে, যেটি কিশোর অপরাধের বিষয়ে ও দৃষ্টি আকর্ষণ করে।