alt

সাময়িকী

সাময়িকী কবিতা

: বৃহস্পতিবার, ০৮ মে ২০২৫

কী গান শোনাবো এই বৈশাখে
নাসির আহমেদ
এই বৈশাখে বিশ্বকবিকে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাবো কী দিয়ে!

চির নূতনের ডাক দেয়া সেই গান কই আজ!

ধুঁকে ধুঁকে মরে রবীন্দ্রনাথ অনুদার সংকীর্ণ হওয়ায়;

নিঃশ্বাস কবি কোথায় নেবেন? চারদিকে ঘৃণা দূষিত বাতাস!

পঁচিশের খেয়া বেয়ে চলে আজও পদ্মা-গড়াই

রবি-স্মৃতিময় ছিন্নপত্র, ছোটগল্পের প্রিয় মুখগুলো খুঁজি।

কোথায় যে সেই উদাস বাউল,সহজ মানুষ মহা সাধকের!

চারদিকে শুধু কালো কুটিলতা,কবির প্রকৃতি বিপন্ন আজ।

পাশ্চাত্যের শিক্ষা-দীক্ষা, সাহিত্য আর শিল্পরীতিতে একদা ছিলেন

মুগ্ধ যাদের উদার চিত্ত মানব সেবায়,

বিদায়বেলায় কেটেছিল মোহ তাদেরই স্বরূপ

দেখে হতাশায় ফেরালেন মুখ পশ্চিম থেকে।

ভেঙে গেল গণতন্ত্র এবং সভ্যতা নিয়ে যত বিশ্বাস! যন্ত্রশক্তি

সমৃদ্ধির যত উপাচার সবই নিষ্ফল, যদি ভেঙে পড়ে মানবিক

বোধ, সা¤্রাজ্যের মূর্খতা ঢেকে দেয় যাবতীয় ইতিবাচকতা।

কবির হৃদয়ে বিপুল বেদনা।

সেই বেদনাই প্রতিধ্বনিত কবি ঠাকুরের বাংলায়।

চিত্রাঙ্গদা বোবা হয়েগেছে!

তখন হে কবি! চিরনূতনের গান কি হৃদয়ে আসে? বিন¤্র স্বরে তবু

বলে যাই: থাকি না যতই হতাশার ত্রাসে

শত সংকটে পঁচিশে বোশেখে তোমাকে স্মরণ

করতে বাঙালি খুব ভালোবাসে।

পাতা জাগার দিনে
হাসান কল্লোল
পাতা জাগার দিন এসেছে

আর তুমি ঘুমিয়ে আছো!

এমন তপ্ত সবুজে পাখির ঠোঁটে

আকাশের কার্নিশে পুতুল খেলার চাঁদরে চলছে ঊচ্ছ্বাস

আদরে আবেগে তোমায় চুমু খেতে

গেলে সেইখানে ব্লকেড সেইখানে নারাজি হৃদয়।

শরীরের বলিরেখায় কবে কার

অন্ধকার কড়া নেড়ে ছিল

সেই বিলাপে

এখনো গুটিয়ে আছো ভীতু খরগোশ!

সময়ের কলাপসিবল গেট ধরে

ঝাকাচ্ছি এত

সারা দেহে প্রবল জলতৃষ্ণা তবু হ্রদ নিজেকে

গুটিয়ে রেখেছ বিধবার শীতল পাটির মতো!

পাতা ঝরে গেলে আবার তপ্ত হবে

জলপাই গাছের তৃষ্ণা

সে কথা হলফ করে বলা কি যাবে?

হরিপদ কেরানির সঙ্গে আমার প্রতিদিন দেখা হয়
(রবীন্দ্রনাথের প্রতি)
মনজুরুর রহমান
বহু বছর আগে-

রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে কিনুগোয়ালা গলির

হরিপদ কেরানির দেখা হয়েছিলো!

সময়ের ¯্রােতে-

হরিপদ বাবু কোথায় ভেসে গেছেন

সেই গল্প কিন্তু কবি আর লিখে যাননি।

আমরা ভুলেই গেছি তাকে!

বিস্তৃতির এ শহরে আমার সঙ্গে প্রতিদিন

অসংখ্য হরিপদর দেখা হয়:

রাজপথ-ফুটপাত, ভ্যান-বাস, ট্রেন ও মেট্রোতে

কখনোবা রিকশায় সহযাত্রীরূপে!

জীবন ঘষে আগুন জ¦ালায় ওরা!

ওদের ভাঙ্গা চোয়াল শীর্ণ শরীর আর-

খিটখিটে মেজাজ

দেখলেই বুঝে যাই- ওরা

‘রাজস্ব দফতরের করুণ কেরানি!

মাছি-মারা তাড়া-খাওয়া’

দারিদ্র্য রেখার নিচে ওরা-

যাপন করে জীবন!

সততা-মুখোশ আঁটা ক্লান্ত দেহ টেনে-

ঘরে ফেরে কর্মশেষে।

কখনো কখনো ওরা অভিযুক্ত হয়-

শ্রমের ছলে এদিক-ওদিক

হাত কচলানোর অভিযোগে!

ওপরওয়ালাদের ধমক ওদের নিয়তিলিখন

নিত্যদিনের বক্শিশ।

অথচ ওদেরো আছে:

দারাপুত্রপরিবার!

বুকের ভিতরে প্রেম-প্রীতি ভালোবাসাসহ

রক্ত মাংসের মানব শরীর!

চাহিদা নামের লোভ যখন-তখন

অক্টোপাসের মতন জাপ্টে ধরে-

পরাভূত করে!

সন্তান সাফল্যে যেন জ্যোতি জ¦লে মুখে।

সমান্তরাল রেলের মতো বহমান

অভাব-দারিদ্র্য সঙ্গী করে-

অবসাদ ম্লান চোখে একদিন

থেমে যায় তাহাদের জীবনের রথ!

অতঃপর দিনশেষে আমরা সবাই-

ভূমিপুত্র কেরানি বাবুরা

ভাটার টানের মতো মৃদু তরঙ্গ তুলে-

ফিরে আসি:

ধলেশ^রী নদীতীরে-

কোনো এক পাড়া গাঁয়,

কোনো এক-

দিনান্ত বেলায়!

মেলেছি ডানা
তাহমিনা কোরাইশী
ডানা থাকলেই ওড়া যায়

পিছন ফেরার প্রয়োজন হয় না আর

হিসেবের পর্চাটা বন্ধই থাকা ভালো

বেহিসেবী মন উড়ায় আঁচল

হয় ইচ্ছে পূরণ

আদি অনন্তকাল থেকে তুমি মেঘদূত

আর আমি মৎস্যকন্যা

সমতলে গৃহস্থ জীবন।

ইচ্ছের ঘরটি আকাশ সমান

অযথাই কড়া গুনে সময় অপচয়

রঙিন ঘুড়িতে ইচ্ছেরা ওড়ে আর আমি

মেঘের খামে দিয়ে যাই ভালোবাসার চিঠি।

যে পাতার হরিদ্রাভ রঙ নেই
পারভেজ আহসান
মূলের গভীরে সত্তার গহিন অন্ধাকারে

বাড়ির ভেতর জ্বলে এক সূর্যখ-

আঙিনায় জন্মানো বৃক্ষে ফুটে ‘বাবরের প্রার্থনা’

মাটিতে আশ্রয় খুঁজে শূন্যতার ফুল

পতারা গায় অসংগতি ভাঙার গান

মৃত আঙুল ছড়ায় বিষাদ

সবুজের ঘ্রাণ মেখে জলাভূমির সন্তানের বেড়ে-ওঠা

কীভাবে হেমন্তপাতা হয়ে মিশে যাবে মৃত্তিকা ও জলে!

ইতিহাসের পৃষ্ঠায় তাঁর শব্দগুলো মুক্তোদানা।

ধুলোর মেকাপ
দ্বীপ সরকার
তোমরা অবন্তিকার নাম মনে রেখেছো, নিশ্চয়?

সে নাকি বড় হয়েছে এখন

অথচ এই তো ক’দিনের কথা

ধুলোর মেকাপে মুখ করেছিল সাদা

বাবা নাকি ফর্সার কিছু কিনে দেয়নি কোন দিন

সাজগোজ করতো উঠোনের ধুলো মেখে

টিকলিতে ফুঁড়ে দিত ভাঁটফুল

বাম হাতে বাঁধতো পাশের বাড়ির পলাশের হাত

সেই অবন্তিকা এখন ডবকা বসস্ত

দুলে মুচড়ে আছড়ে পড়ছে ডালে ডালে

উত্তাপে চোয়ালে ধরে আছে মেরুন সূর্য

ধুলোমুখে পড়েছে চিকচিকে চাঁদ

অথচ,এই অবন্তিকা আর অবন্তিকা নেই

ঠোঁটের কোণে এখন পৃথিবীজোড়া মেকাপ

হলুদ- হালকা অফ-হোয়াইট,সব রঙের মেকাপবক্স

মৃত প্রেম নাভী
আমিরুল হাছান
তোমাকে খুঁজে দেখেছি আমার হাড়গুলির মাত্রায়

যেখানে তোমার অস্থির শক্তি পাইনি

তোমার মনের ভিতরে মনের বিরাজ দেখিনি

কোনো কালে কোনো মহাপুরুষের বাহুতে তুমি;

জীবনমাত্রায় সর্বোচ্চ নিবেদিত ছিলাম

যেখানে পাথরগুলি নমনীয় ছিলো।

¯্রােতের বুকে খ-ায়িত পাথর ঝরনায় মিশ্রিত ছিল,

প্রজনন হয়েছিল সাদা কালো পাথরের।

তোমার প্রেক্ষাগৃহে প্রেমটা বন্ধুত্ব হয়নি হয়েছে বন্ধ্যাত্ব

জন্মের সাজঘরে ফিতা কেটেছিলাম মৃত প্রেম নাভীর

যেখানে সাদা রক্তক্ষরণ হয়েছে কিন্তু শব্দের প্রশ্ন ছিলোনা

বেঁচে থাকো তুমি তোমার আয়ুকাল পর্যন্ত

প্রার্থনায় রাখলাম আমার উর্বর মনে।

নিঃসঙ্গ ছায়া
সাজ্জাদুর রহমান
ছায়াটি ঘরের ভেতর নড়েচড়ে নিঃসঙ্গ

উপচে পড়ে ব্যথার পরিধি

অনেকগুলো বছর সে চেয়েছে

রোদের সাথে মিশতে

অনেকগুলো বছর লালন করেছে

ঘুড়ি লাটাইয়ের বিকেলমুখর কলগান

অচেনা নিমন্ত্রণে অগণতিবার

পেরিয়ে গেছে কুয়াশাবৃত্ত জীবন

আরো অগণতিবার হাহাকার ছেড়ে

ধরেছে ফাল্গুনের সোনালি চামচ

শূন্য পেয়ালায় খুঁজে পায়নি শীতল তরল

যন্ত্রণার দুঃখজল

ফুলে উঠেছে ফোঁড়ন কেটে

নিয়ে গেছে অচেনা একলা বালির দেশে

মাঝে মাঝে রিক্ত বুকের দগ্ধ কামরায়

বারুদ যোগায় বিষহরি আর্তনাদ

নিস্তরঙ্গ কুয়াশায় সর মাখানো প্রেম

বুলেটবিদ্ধ গোপন ঘুমে স্বপ্নই দেখে।

ভুলে যাওয়া স্বাধীনতা

নজরুল সাজু

ভাতের খোঁজে, বাসার ভাড়ায়

ঘুরপাক খায় দিন, হারিয়ে যায় রায়।

মৌলিক চাহিদার চাকা ঘুরে,

মানুষ বাঁচে, শুধু বাঁচে

কিন্তু কি সত্যিই বাঁচে সে?

ভোরে উঠে দৌড়, রাতে ক্লান্তি

চোখে নেই স্বপ্ন, মুখে নেই গান,

শুধু হিসেব...

চাল-ডাল, বাজারের দাম,

আর কিছু ফুরিয়ে যাওয়া অভিমান।

স্বাধীনতা?

সে তো বইয়ের পাতায়,

কিংবা জাতীয় দিবসে মাইকে বাজা গান,

পতাকা উড়ে

কিন্তু হৃদয়ে কি জাগে তার টান?

যে রক্তে রাঙা ছিল এই মাটি,

যে চিতায় জ্বলে উঠেছিল অভিশপ্ত রাতি,

সে ইতিহাস আজ চাপা পড়ে গেছে

চাকরির পরীক্ষায়,

পাসপোর্টের লাইনে,

ডাক্তারের সিরিয়ালে।

স্বাধীনতা মানে কেবল শব্দ নয়,

স্বাধীনতা মানে শ্বাস নেওয়া

ভবিষ্যতের আশ্বাস,

আত্মমর্যাদার স্পর্শ,

জীবনের এক নিঃশব্দ গান।

কখনো রাতের নির্জনে

হাওয়ায় ভেসে আসে এক টুকরো সত্য,

মন বলে

“তুই তো মুক্ত!

তোর তো ছিলো একটা স্বপ্ন...

তুই ভুলে গেলি কবে?”

ছবি

আমজাদ হোসেনের ‘ভিন্ন ভাষার কবিতা’

সাময়িকী কবিতা

ছবি

বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতি: একটি পর্যবেক্ষণ

ছবি

দুই ঋতপার কিসসা এবং এক ন্যাকা চৈতন্য

ছবি

অন্যজীবন অন্যআগুন ছোঁয়া

ছবি

লোরকার দেশে

ছবি

কবিজীবন, দর্শন ও কাব্যসন্ধান

ছবি

অসামান্য গদ্যশৈলীর রূপকার

ছবি

পিয়াস মজিদের ‘রূপকথার রাস্তাঘাট’

ছবি

নজরুলের নিবেদিত কবিতা : অর্ঘ্যরে শিল্পরূপ

ছবি

বাঘাডাঙা গাঁও

ছবি

বুদ্ধদেব বসুর ‘তপস্বী ও তরঙ্গিণী’ বিষয়ভাবনা

সাময়িকী কবিতা

ছবি

লোরকার দেশে

ছবি

পথকবিতা: লোকবাংলার সাধারণ কবিতা

ছবি

বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতি একটি পর্যবেক্ষণ

ছবি

ক্ষমতার ভাষার বিপরীতে মাতৃভাষার সাধনা

ছবি

ফিলিস্তিনের বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে অণুগল্প

ছবি

বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতি: একটি পর্যবেক্ষণ

ছবি

শিল্পী সুনীল কুমারের ‘পথের গল্প’-এর স্বরূপ

ছবি

রাত গভীর

ছবি

লোরকার দেশে

ছবি

‘এ নয় আঁখিজল’

জ্যৈষ্ঠের পদাবলি

ছবি

ওসামা অ্যালোমারের একঝুড়ি খুদে গল্প

সাময়িকী কবিতা

ছবি

‘ব্রহ্মপুত্র দাঁড়াও’ কাব্যগ্রন্থে নীলদ্রোহের রেখাপাত

ছবি

নার্গিস-নজরুলের স্মৃতিধন্য দৌলতপুরে একদিন

ছবি

যেভাবে ভেঙেছিল এক মৌনতা

ছবি

বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতি : একটি পর্যবেক্ষণ

ছবি

লোরকার দেশে

ছবি

নজরুল সাহিত্যে নন্দনতত্ত্বের প্রেক্ষিত

ছবি

স্বাধীনতার কবি নজরুল

ছবি

নজরুলের শ্যামাসঙ্গীত প্রতিভা

সাময়িকী কবিতা

ছবি

দাউদ হায়দার: স্বকীয় ও নির্বাসিত

tab

সাময়িকী

সাময়িকী কবিতা

বৃহস্পতিবার, ০৮ মে ২০২৫

কী গান শোনাবো এই বৈশাখে
নাসির আহমেদ
এই বৈশাখে বিশ্বকবিকে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাবো কী দিয়ে!

চির নূতনের ডাক দেয়া সেই গান কই আজ!

ধুঁকে ধুঁকে মরে রবীন্দ্রনাথ অনুদার সংকীর্ণ হওয়ায়;

নিঃশ্বাস কবি কোথায় নেবেন? চারদিকে ঘৃণা দূষিত বাতাস!

পঁচিশের খেয়া বেয়ে চলে আজও পদ্মা-গড়াই

রবি-স্মৃতিময় ছিন্নপত্র, ছোটগল্পের প্রিয় মুখগুলো খুঁজি।

কোথায় যে সেই উদাস বাউল,সহজ মানুষ মহা সাধকের!

চারদিকে শুধু কালো কুটিলতা,কবির প্রকৃতি বিপন্ন আজ।

পাশ্চাত্যের শিক্ষা-দীক্ষা, সাহিত্য আর শিল্পরীতিতে একদা ছিলেন

মুগ্ধ যাদের উদার চিত্ত মানব সেবায়,

বিদায়বেলায় কেটেছিল মোহ তাদেরই স্বরূপ

দেখে হতাশায় ফেরালেন মুখ পশ্চিম থেকে।

ভেঙে গেল গণতন্ত্র এবং সভ্যতা নিয়ে যত বিশ্বাস! যন্ত্রশক্তি

সমৃদ্ধির যত উপাচার সবই নিষ্ফল, যদি ভেঙে পড়ে মানবিক

বোধ, সা¤্রাজ্যের মূর্খতা ঢেকে দেয় যাবতীয় ইতিবাচকতা।

কবির হৃদয়ে বিপুল বেদনা।

সেই বেদনাই প্রতিধ্বনিত কবি ঠাকুরের বাংলায়।

চিত্রাঙ্গদা বোবা হয়েগেছে!

তখন হে কবি! চিরনূতনের গান কি হৃদয়ে আসে? বিন¤্র স্বরে তবু

বলে যাই: থাকি না যতই হতাশার ত্রাসে

শত সংকটে পঁচিশে বোশেখে তোমাকে স্মরণ

করতে বাঙালি খুব ভালোবাসে।

পাতা জাগার দিনে
হাসান কল্লোল
পাতা জাগার দিন এসেছে

আর তুমি ঘুমিয়ে আছো!

এমন তপ্ত সবুজে পাখির ঠোঁটে

আকাশের কার্নিশে পুতুল খেলার চাঁদরে চলছে ঊচ্ছ্বাস

আদরে আবেগে তোমায় চুমু খেতে

গেলে সেইখানে ব্লকেড সেইখানে নারাজি হৃদয়।

শরীরের বলিরেখায় কবে কার

অন্ধকার কড়া নেড়ে ছিল

সেই বিলাপে

এখনো গুটিয়ে আছো ভীতু খরগোশ!

সময়ের কলাপসিবল গেট ধরে

ঝাকাচ্ছি এত

সারা দেহে প্রবল জলতৃষ্ণা তবু হ্রদ নিজেকে

গুটিয়ে রেখেছ বিধবার শীতল পাটির মতো!

পাতা ঝরে গেলে আবার তপ্ত হবে

জলপাই গাছের তৃষ্ণা

সে কথা হলফ করে বলা কি যাবে?

হরিপদ কেরানির সঙ্গে আমার প্রতিদিন দেখা হয়
(রবীন্দ্রনাথের প্রতি)
মনজুরুর রহমান
বহু বছর আগে-

রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে কিনুগোয়ালা গলির

হরিপদ কেরানির দেখা হয়েছিলো!

সময়ের ¯্রােতে-

হরিপদ বাবু কোথায় ভেসে গেছেন

সেই গল্প কিন্তু কবি আর লিখে যাননি।

আমরা ভুলেই গেছি তাকে!

বিস্তৃতির এ শহরে আমার সঙ্গে প্রতিদিন

অসংখ্য হরিপদর দেখা হয়:

রাজপথ-ফুটপাত, ভ্যান-বাস, ট্রেন ও মেট্রোতে

কখনোবা রিকশায় সহযাত্রীরূপে!

জীবন ঘষে আগুন জ¦ালায় ওরা!

ওদের ভাঙ্গা চোয়াল শীর্ণ শরীর আর-

খিটখিটে মেজাজ

দেখলেই বুঝে যাই- ওরা

‘রাজস্ব দফতরের করুণ কেরানি!

মাছি-মারা তাড়া-খাওয়া’

দারিদ্র্য রেখার নিচে ওরা-

যাপন করে জীবন!

সততা-মুখোশ আঁটা ক্লান্ত দেহ টেনে-

ঘরে ফেরে কর্মশেষে।

কখনো কখনো ওরা অভিযুক্ত হয়-

শ্রমের ছলে এদিক-ওদিক

হাত কচলানোর অভিযোগে!

ওপরওয়ালাদের ধমক ওদের নিয়তিলিখন

নিত্যদিনের বক্শিশ।

অথচ ওদেরো আছে:

দারাপুত্রপরিবার!

বুকের ভিতরে প্রেম-প্রীতি ভালোবাসাসহ

রক্ত মাংসের মানব শরীর!

চাহিদা নামের লোভ যখন-তখন

অক্টোপাসের মতন জাপ্টে ধরে-

পরাভূত করে!

সন্তান সাফল্যে যেন জ্যোতি জ¦লে মুখে।

সমান্তরাল রেলের মতো বহমান

অভাব-দারিদ্র্য সঙ্গী করে-

অবসাদ ম্লান চোখে একদিন

থেমে যায় তাহাদের জীবনের রথ!

অতঃপর দিনশেষে আমরা সবাই-

ভূমিপুত্র কেরানি বাবুরা

ভাটার টানের মতো মৃদু তরঙ্গ তুলে-

ফিরে আসি:

ধলেশ^রী নদীতীরে-

কোনো এক পাড়া গাঁয়,

কোনো এক-

দিনান্ত বেলায়!

মেলেছি ডানা
তাহমিনা কোরাইশী
ডানা থাকলেই ওড়া যায়

পিছন ফেরার প্রয়োজন হয় না আর

হিসেবের পর্চাটা বন্ধই থাকা ভালো

বেহিসেবী মন উড়ায় আঁচল

হয় ইচ্ছে পূরণ

আদি অনন্তকাল থেকে তুমি মেঘদূত

আর আমি মৎস্যকন্যা

সমতলে গৃহস্থ জীবন।

ইচ্ছের ঘরটি আকাশ সমান

অযথাই কড়া গুনে সময় অপচয়

রঙিন ঘুড়িতে ইচ্ছেরা ওড়ে আর আমি

মেঘের খামে দিয়ে যাই ভালোবাসার চিঠি।

যে পাতার হরিদ্রাভ রঙ নেই
পারভেজ আহসান
মূলের গভীরে সত্তার গহিন অন্ধাকারে

বাড়ির ভেতর জ্বলে এক সূর্যখ-

আঙিনায় জন্মানো বৃক্ষে ফুটে ‘বাবরের প্রার্থনা’

মাটিতে আশ্রয় খুঁজে শূন্যতার ফুল

পতারা গায় অসংগতি ভাঙার গান

মৃত আঙুল ছড়ায় বিষাদ

সবুজের ঘ্রাণ মেখে জলাভূমির সন্তানের বেড়ে-ওঠা

কীভাবে হেমন্তপাতা হয়ে মিশে যাবে মৃত্তিকা ও জলে!

ইতিহাসের পৃষ্ঠায় তাঁর শব্দগুলো মুক্তোদানা।

ধুলোর মেকাপ
দ্বীপ সরকার
তোমরা অবন্তিকার নাম মনে রেখেছো, নিশ্চয়?

সে নাকি বড় হয়েছে এখন

অথচ এই তো ক’দিনের কথা

ধুলোর মেকাপে মুখ করেছিল সাদা

বাবা নাকি ফর্সার কিছু কিনে দেয়নি কোন দিন

সাজগোজ করতো উঠোনের ধুলো মেখে

টিকলিতে ফুঁড়ে দিত ভাঁটফুল

বাম হাতে বাঁধতো পাশের বাড়ির পলাশের হাত

সেই অবন্তিকা এখন ডবকা বসস্ত

দুলে মুচড়ে আছড়ে পড়ছে ডালে ডালে

উত্তাপে চোয়ালে ধরে আছে মেরুন সূর্য

ধুলোমুখে পড়েছে চিকচিকে চাঁদ

অথচ,এই অবন্তিকা আর অবন্তিকা নেই

ঠোঁটের কোণে এখন পৃথিবীজোড়া মেকাপ

হলুদ- হালকা অফ-হোয়াইট,সব রঙের মেকাপবক্স

মৃত প্রেম নাভী
আমিরুল হাছান
তোমাকে খুঁজে দেখেছি আমার হাড়গুলির মাত্রায়

যেখানে তোমার অস্থির শক্তি পাইনি

তোমার মনের ভিতরে মনের বিরাজ দেখিনি

কোনো কালে কোনো মহাপুরুষের বাহুতে তুমি;

জীবনমাত্রায় সর্বোচ্চ নিবেদিত ছিলাম

যেখানে পাথরগুলি নমনীয় ছিলো।

¯্রােতের বুকে খ-ায়িত পাথর ঝরনায় মিশ্রিত ছিল,

প্রজনন হয়েছিল সাদা কালো পাথরের।

তোমার প্রেক্ষাগৃহে প্রেমটা বন্ধুত্ব হয়নি হয়েছে বন্ধ্যাত্ব

জন্মের সাজঘরে ফিতা কেটেছিলাম মৃত প্রেম নাভীর

যেখানে সাদা রক্তক্ষরণ হয়েছে কিন্তু শব্দের প্রশ্ন ছিলোনা

বেঁচে থাকো তুমি তোমার আয়ুকাল পর্যন্ত

প্রার্থনায় রাখলাম আমার উর্বর মনে।

নিঃসঙ্গ ছায়া
সাজ্জাদুর রহমান
ছায়াটি ঘরের ভেতর নড়েচড়ে নিঃসঙ্গ

উপচে পড়ে ব্যথার পরিধি

অনেকগুলো বছর সে চেয়েছে

রোদের সাথে মিশতে

অনেকগুলো বছর লালন করেছে

ঘুড়ি লাটাইয়ের বিকেলমুখর কলগান

অচেনা নিমন্ত্রণে অগণতিবার

পেরিয়ে গেছে কুয়াশাবৃত্ত জীবন

আরো অগণতিবার হাহাকার ছেড়ে

ধরেছে ফাল্গুনের সোনালি চামচ

শূন্য পেয়ালায় খুঁজে পায়নি শীতল তরল

যন্ত্রণার দুঃখজল

ফুলে উঠেছে ফোঁড়ন কেটে

নিয়ে গেছে অচেনা একলা বালির দেশে

মাঝে মাঝে রিক্ত বুকের দগ্ধ কামরায়

বারুদ যোগায় বিষহরি আর্তনাদ

নিস্তরঙ্গ কুয়াশায় সর মাখানো প্রেম

বুলেটবিদ্ধ গোপন ঘুমে স্বপ্নই দেখে।

ভুলে যাওয়া স্বাধীনতা

নজরুল সাজু

ভাতের খোঁজে, বাসার ভাড়ায়

ঘুরপাক খায় দিন, হারিয়ে যায় রায়।

মৌলিক চাহিদার চাকা ঘুরে,

মানুষ বাঁচে, শুধু বাঁচে

কিন্তু কি সত্যিই বাঁচে সে?

ভোরে উঠে দৌড়, রাতে ক্লান্তি

চোখে নেই স্বপ্ন, মুখে নেই গান,

শুধু হিসেব...

চাল-ডাল, বাজারের দাম,

আর কিছু ফুরিয়ে যাওয়া অভিমান।

স্বাধীনতা?

সে তো বইয়ের পাতায়,

কিংবা জাতীয় দিবসে মাইকে বাজা গান,

পতাকা উড়ে

কিন্তু হৃদয়ে কি জাগে তার টান?

যে রক্তে রাঙা ছিল এই মাটি,

যে চিতায় জ্বলে উঠেছিল অভিশপ্ত রাতি,

সে ইতিহাস আজ চাপা পড়ে গেছে

চাকরির পরীক্ষায়,

পাসপোর্টের লাইনে,

ডাক্তারের সিরিয়ালে।

স্বাধীনতা মানে কেবল শব্দ নয়,

স্বাধীনতা মানে শ্বাস নেওয়া

ভবিষ্যতের আশ্বাস,

আত্মমর্যাদার স্পর্শ,

জীবনের এক নিঃশব্দ গান।

কখনো রাতের নির্জনে

হাওয়ায় ভেসে আসে এক টুকরো সত্য,

মন বলে

“তুই তো মুক্ত!

তোর তো ছিলো একটা স্বপ্ন...

তুই ভুলে গেলি কবে?”

back to top