মোতিয়ার মাহমুদ
‘রাজধানীতে আমরা এক টুকরো মফস্বল নিয়ে আসি।
ফেলে আসা মফস্বলে গেলে
এক টুকরো রাজধানী নিয়ে যাই।
রাজধানী আর মফস্বলে
আসা-যাওয়া করি,
কিন্তু কোথাও ঠিকঠাক ফিটিং হই না।
আমরা মফস্বল ও রাজধানীর মিসফিট বিউটি’
[আমরা যারা, পৃষ্ঠা: ১০]
এত বেশি বাস্তব উপলব্ধি সাধারণত কবির কবিতায় তেমন চোখে পড়ে না। কারণ কবি, মূলত নিজের বক্তব্যটাকে অলঙ্কৃত ও কিছুটা আড়াল করে প্রকাশ করেন। কবিতার শিল্পমান ধরে রাখতে গেলে এমন ক্যারিসমা কবিকে দেখাতে হয়। এক শিল্প নিপুণ কৌশলে অনেক বেশি হৃদয়গ্রাহী ও কবিতা হয়ে ওঠে। আচ্ছা, তাই বলে কি উদ্ধৃত কবিতার বাস্তব উপলব্ধি কবিতা নয়? এ ধরনের ভাবনার কোনো সুযোগ নেই, কারণ এমন অমোঘ উচ্চারণ মানুষের অনুভূতিকে এতটাই স্পর্শ করে যে, তা কবিতা হওয়ার সকল শর্ত পূরণ করেই শিল্পমান-উত্তীর্ণ হয়। এমন কবিতা অনেক বেশি গণমানুষের কবিতা হয়ে ওঠে।
কবি পিয়াস মজিদের কাব্যগ্রন্থ ‘রূপকথার রাস্তাঘাট’ গ্রন্থের তৃতীয় কবিতায় এভাবে চোখ আটকে গেলেও ১১২ পৃষ্ঠার কাব্যগ্রন্থের আরো অনেক অনেক কবিতাই মনোযোগ আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে। যেমন পিয়াসের আরও একটি কবিতা-
‘দুনিয়ার এই এত অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন থেকে
তুমি বের হয়ে আসো।
সংগঠিত উল্লাস আর বিষাদের কারখানা থেকে
একটু নিরিবিলি কোথাও এসে দাঁড়াও।
এত হৈ হৈ-য়ে স্মৃতি মরে যায় তো!
নিজে মরলে মরো
স্মৃতিকে নিঃসঙ্গ হয়ে বাঁচার সুযোগ দাও’
[পরিসর, পৃষ্ঠা ২৭]
এ কবিতায়ও কবির উচ্চারণ অমোঘ। স্মৃতিনিষ্ঠ কবি, পার্থিব সরগোল আর অকথ্য উল্লাস উচ্ছ্বাস থেকে কিছুটা স্মৃতিযাপনের দিকে ইঙ্গিত করেন। এত হৈহল্লা করে যে মধুর কিংবা বিষাদের স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখা যায় না, সে কথার মর্মার্থ বোঝান। এবং শেষতক ব্যর্থ হয়ে বলেন, তুমি নিজে মরলে মরো, স্মৃতিকে নিঃসঙ্গ হয়ে বাঁচার সুযোগ দাও। এখানে কবির পোয়েটিক ইমেজারির এক চরম উৎকর্ষ চোখে পড়ে।
এছাড়া আলোচ্য গ্রন্থের আরো অসংখ্য কবিতা আছে, যা এভাবে পাঠকের সামনে তুলে ধরার অনিবার্য যৌক্তিকতা আছে। পিয়াসের কবিতার ভাষা ব্যতিক্রম ও সাবলীল। তার কবিতার মেটাফরগুলো প্রকৃত উজানাযাত্রী। পিয়াস গড়পরতা কবিতা যেমন লেখেন না, তেমনি তার নতুন নতুন উপমা ও চিত্রকল্পের ধারালো উপস্থাপন পাঠককে প্রতিটি গ্রন্থেই আশান্বিত করে ও নতুন বইটির জন্য অপেক্ষা করতে শেখায়। এ বইতে পিয়াসের আরও কিছু কবিতা যেমন- বনবাগানের পালা, নেভাল বিকাল, লোরকা, ধারাবিবরণ, সেরেনিটি, পিয়া মন ভোর, ডুব সাঁতার, ক্রিমসন প্রভৃতি ধরে ধরে আলোচনা করা যায়। এবং এর বাইরের কবিতাগুলোও প্রকৃত কবিতার আস্বাদ দেয়।
২০২৫ সালের বইমেলায় বইটি প্রকাশ করেছে বেঙ্গল বুকস। প্রচ্ছদ ও অলঙ্করণ করেছেন আজহার ফরহাদ।
মোতিয়ার মাহমুদ
বৃহস্পতিবার, ০৫ জুন ২০২৫
‘রাজধানীতে আমরা এক টুকরো মফস্বল নিয়ে আসি।
ফেলে আসা মফস্বলে গেলে
এক টুকরো রাজধানী নিয়ে যাই।
রাজধানী আর মফস্বলে
আসা-যাওয়া করি,
কিন্তু কোথাও ঠিকঠাক ফিটিং হই না।
আমরা মফস্বল ও রাজধানীর মিসফিট বিউটি’
[আমরা যারা, পৃষ্ঠা: ১০]
এত বেশি বাস্তব উপলব্ধি সাধারণত কবির কবিতায় তেমন চোখে পড়ে না। কারণ কবি, মূলত নিজের বক্তব্যটাকে অলঙ্কৃত ও কিছুটা আড়াল করে প্রকাশ করেন। কবিতার শিল্পমান ধরে রাখতে গেলে এমন ক্যারিসমা কবিকে দেখাতে হয়। এক শিল্প নিপুণ কৌশলে অনেক বেশি হৃদয়গ্রাহী ও কবিতা হয়ে ওঠে। আচ্ছা, তাই বলে কি উদ্ধৃত কবিতার বাস্তব উপলব্ধি কবিতা নয়? এ ধরনের ভাবনার কোনো সুযোগ নেই, কারণ এমন অমোঘ উচ্চারণ মানুষের অনুভূতিকে এতটাই স্পর্শ করে যে, তা কবিতা হওয়ার সকল শর্ত পূরণ করেই শিল্পমান-উত্তীর্ণ হয়। এমন কবিতা অনেক বেশি গণমানুষের কবিতা হয়ে ওঠে।
কবি পিয়াস মজিদের কাব্যগ্রন্থ ‘রূপকথার রাস্তাঘাট’ গ্রন্থের তৃতীয় কবিতায় এভাবে চোখ আটকে গেলেও ১১২ পৃষ্ঠার কাব্যগ্রন্থের আরো অনেক অনেক কবিতাই মনোযোগ আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে। যেমন পিয়াসের আরও একটি কবিতা-
‘দুনিয়ার এই এত অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন থেকে
তুমি বের হয়ে আসো।
সংগঠিত উল্লাস আর বিষাদের কারখানা থেকে
একটু নিরিবিলি কোথাও এসে দাঁড়াও।
এত হৈ হৈ-য়ে স্মৃতি মরে যায় তো!
নিজে মরলে মরো
স্মৃতিকে নিঃসঙ্গ হয়ে বাঁচার সুযোগ দাও’
[পরিসর, পৃষ্ঠা ২৭]
এ কবিতায়ও কবির উচ্চারণ অমোঘ। স্মৃতিনিষ্ঠ কবি, পার্থিব সরগোল আর অকথ্য উল্লাস উচ্ছ্বাস থেকে কিছুটা স্মৃতিযাপনের দিকে ইঙ্গিত করেন। এত হৈহল্লা করে যে মধুর কিংবা বিষাদের স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখা যায় না, সে কথার মর্মার্থ বোঝান। এবং শেষতক ব্যর্থ হয়ে বলেন, তুমি নিজে মরলে মরো, স্মৃতিকে নিঃসঙ্গ হয়ে বাঁচার সুযোগ দাও। এখানে কবির পোয়েটিক ইমেজারির এক চরম উৎকর্ষ চোখে পড়ে।
এছাড়া আলোচ্য গ্রন্থের আরো অসংখ্য কবিতা আছে, যা এভাবে পাঠকের সামনে তুলে ধরার অনিবার্য যৌক্তিকতা আছে। পিয়াসের কবিতার ভাষা ব্যতিক্রম ও সাবলীল। তার কবিতার মেটাফরগুলো প্রকৃত উজানাযাত্রী। পিয়াস গড়পরতা কবিতা যেমন লেখেন না, তেমনি তার নতুন নতুন উপমা ও চিত্রকল্পের ধারালো উপস্থাপন পাঠককে প্রতিটি গ্রন্থেই আশান্বিত করে ও নতুন বইটির জন্য অপেক্ষা করতে শেখায়। এ বইতে পিয়াসের আরও কিছু কবিতা যেমন- বনবাগানের পালা, নেভাল বিকাল, লোরকা, ধারাবিবরণ, সেরেনিটি, পিয়া মন ভোর, ডুব সাঁতার, ক্রিমসন প্রভৃতি ধরে ধরে আলোচনা করা যায়। এবং এর বাইরের কবিতাগুলোও প্রকৃত কবিতার আস্বাদ দেয়।
২০২৫ সালের বইমেলায় বইটি প্রকাশ করেছে বেঙ্গল বুকস। প্রচ্ছদ ও অলঙ্করণ করেছেন আজহার ফরহাদ।