alt

শ্বেতা শতাব্দী এষের কবিতা

: বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

শ্বেতা শতাব্দী এষ / জন্ম: ২২ অক্টোবর ১৯৯২; মৃত্যু: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

রোদকুয়াশা
হৃদয়ের একরোখা ঘোরে যে অহং লুকানো থাকে

তার থেকে দূরে- গুল্মবনে

একদিন খুব কাছে বসেছিল রোদ;

শীতের জলপাইবনে রাত্রির ক্যাম্পফায়ারে,

গিটারটা বেজেছিল একা একা খুব

মনে পড়ে- ভুলে যাই,

সব গান সঙ্গে করে

কারা যেন চলে যায় জিপসি-কার্নিভালে!

সেইসব চলে যাওয়া শুধু থেকে যায়-

দূরত্ব জেগে রয় অনিদ্রার পাশে।

শাদা সময়
মৃত্যুহীন সময়ের বুকে সম্পর্করা মরে যায়-

রাত্রির স্তব্ধতা ছিঁড়ে ট্রেনের শব্দ আসে

স্বজনেরা চলে যাচ্ছে এইভাবে অন্ধকারে।

পৃথিবীতে এইমাত্র যে শিশুটি ভূমিষ্ঠ হলো

তার মুখ স্মরণ করে আমিও ভুলে যাচ্ছি

বিষাদের জন্ম-ইতিহাস।

পতনের গোপন পয়ার
ঘুরেফিরে যদি সেই প্রেমের কথাই বলি-

তবে বলতে হবে বিগত সন্ধ্যায়

যে সূর্য ডুবেছিল তা আজ পুরনো হয়ে গেছে।

পুরনো ভালোবাসার শরীরে তখন রক্তশূন্য জবা-

কাম্য দূরত্বের ভাষা শিখে গেছে শালিক।

চারপাশে তাই সুখি ছায়াদের চলাচল-

তোমার এইসব ভালোলাগে,

তুমি দৃষ্টি নিবদ্ধ করে রাখো

পতনের গোপন পয়ারে।

অক্টোবরের আকাশ
গুল্মভূমিতে ছড়ানো দূরত্ব

দূরত্বের পাশে বসি;

কথা বলি- বলি না

সেইখানে কোনো নীরবতা নেই-

চোখ-হৃদয়-রক্তের কোলাহল,

কথা বলি না।

দৃষ্টির করাতে কেটে যাচ্ছে দৃশ্য-

অক্টোবরের আকাশ

এইসব এইভাবে চিরদিন...

এই রকম সন্তাপে
সাময়িক বেঁচে থাকার কাছে

হেরে যাচ্ছে অনতিদীর্ঘ জীবন

দূরত্ব-ব্যালকনি জুড়ে হলুদ বিকেল-

রোদ, তুমি কতটুকু আলো?

চোখের ভেতর সবুজ

পাথর হয়ে যায়

কণ্ঠ ভরে থাকে মৃত নদীর জল-

সাময়িক মৃত্যুর কাছে হেরে যাচ্ছে

জীবনের অনিবার্য গতি,

ভালোবাসার সমস্ত চিঠি

উড়ে গেছে ভুল ঠিকানায়-

শব্দ আজ কেবলই বিফল।

শ্বেতাকে নিবেদিত কবিতা

একজনই শ্বেতা শতাব্দী
সুমী সিকানদার
যতটুকু পারি জানালার কাচ টেনে বুক ভরে শ্বাস নেই

এখনও বাতাসে মুখ ডোবানোর অনুমতি আছে।

বাতাসের দাপটে চোখ মুদে আসার আগেই

দেখে নিয়েছি বড় ডানা-মেলা ভাসমান শ্বেত বিহঙ্গ

অদ্ভুতভাবে একজায়গায় ভেসে ভেসে গল্প করে তারা।

তাদের ঠিক পেছনেই খানিকটা মেঘলা মেঘের আবাসন

কালো করে আসার আগেই, ছত্রভঙ্গ হবার আগেই

শেষবারের কথোপকথন শ্বেতাদের কিম্বা শ্বেতার।

এসবই চোখ মেলে দেখতে পাচ্ছি কেননা

দেখার অনুমতি আছে।

হয়তো খনিকবাদেই আর অনুমতি থাকবে না।

শ্বেতা কিছুই দেখছে না, লিখছে না আর

কিছুই বলছে না, আমাদের শ্বেতা

চোখ ভর্তি জল নিয়ে খুঁছছে না আর প্রিয় মুখ কাউকে

তার অনুমতি মিলিয়ে গেছে

থেমে আছে সে সকল লড়াইকে আনুষ্ঠানিক বিদায় দিয়ে।

সময়ের চেয়ে শতাব্দ এগিয়ে থাকা শ্বেতা শতাব্দী

থাকবেই তার প্রথা ভাঙা কবিতায়, সে অনুমতির তোয়াক্কা করে না।

দেহ নয়, দেদারসে কথা বলা, তার কবিতারা সরব।

শহরের সকল সবুজ নুয়ে পড়েছে শ্বেতাকে একবার দেখতে

বৃষ্টিও তার শব্দে মন্দিরায় একাকার

দেহ আর কতটুকু সময়ের, তার সময়ের বাইরে সে নেই।

শ্বেতা শতাব্দী আজন্ম বলিষ্ঠ থাকুক,

সে ‘ক’ বলতে ক্যান্সার না বুঝে কবিতা বোঝে।

১টি ঢেউ কাটা পড়েছে
শারদুল সজল
আমরা এক একটা বিচ্ছিন্ন অনু

আমরা আসলে ছায়াপথে ঘুরতে থাকা

নিউট্রিনো-

যার ওজন নেই, তবু ধাক্কা লাগে

কবিতা লিখতে গিয়ে অচেনা আগুনের বিস্ফোরণে

চুক্তিবদ্ধ আমরা

যেমন গতকাল কবি শ্বেতা মারা গেলেন, তাকে চিনি না

তবুও আলোর চেয়েও দ্রুত বেগে ভাঙছে হৃদয়

হয়তো রাতের আধার ভেবেছে... কবিতা পুরনো হয়েছে

কিন্তু নক্ষত্রের গোপনে জ্বলে থাকা

সময়খাদক একদিন জেনে যায়

প্রতিটি মৃত কবির শরীর মহাকাল

একটা কণিকা কবিতা হয়ে রয়ে যায়

জোছনার নিচে মহাকাল পুড়িয়ে

দাঁড়িয়ে আছে যে অন্ধকার

তাপমাত্রাহীন

তার বিকিরণে

মধ্যসমুদ্রে এই মাত্র ১টি ঢেউ কাটা পড়ে

মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে গেল...

পৃথিবী জানলো

নিউট্রিনো- যার ওজন নেই তবু ধাক্কা লাগে

ছবি

আধুনিক বাংলা কবিতার একশ’ বছর

ছবি

বিশ্বসাহিত্যে এর প্রতিফলন

ছবি

মোজগান ফারামানেশ-এর কবিতা

ছবি

চোখ

ছবি

যোগফল শূন্য

সাময়িকী কবিতা

ছবি

লাল লুঙ্গি

ছবি

বিপন্ন মানুষের মনোবাস্তবতার স্বরূপ

ছবি

দিনু বিল্লাহ: জীবনমরণের সীমানা ছাড়ায়ে

জেলার সিরিজ কবিতা

ছবি

লাল লুঙ্গি

সাময়িকী কবিতা

ছবি

নির্মলেন্দু গুণের রাজনৈতিক বলয় অতিক্রমের ক্ষমতা

ছবি

কেরাসিন বাত্তি ও লালচুলা মেয়েটি

ছবি

তাঁর সমকালীনদের চোখে

ছবি

নিজের মতো করেই সঠিক পথটি বেছে নিতে হবে

ছবি

সুকান্ত ভট্টাচার্য: বহুচর্চিত, বহুপঠিত এক অনন্য কবি

ছবি

চিত্রাঙ্গদা: দ্বৈত সত্তার শিল্পস্মারক

ছবি

খালেদ হামিদীর দৌত্যে ওরহান পামুক

সাময়িকী কবিতা

ছবি

মেঘলা আকাশ বৃষ্টি

ছবি

স্মৃতি ভদ্র

ছবি

হৃদয়রেখা

ছবি

সুরমা বুজি অথবা কাচপোকা

ছবি

শ্রাবণের জোছনায় হেসেছিল নার্গিস

ছবি

যোগাযোগ

ছবি

বাংলাদেশের স্বাপ্নিক কবি নজরুল

ছবি

ইলিয়াসের আশ্চর্য নিরীক্ষা

সাময়িকী কবিতা

ছবি

মাটি ও মানুষের কথক

ছবি

অনাবিল প্রাচুর্যে ঋদ্ধ নজরুল প্রতিভা

ছবি

নজরুল: চির-বিস্ময়

ছবি

জীবনের সাথে সংযোগ ঘটল কই

পোয়েমস দ্যাট কেম টু মি

ছবি

লালন ও রবীন্দ্রনাথ অন্তর্জগতের আলাপন

ছবি

বংশধারা

tab

শ্বেতা শতাব্দী এষের কবিতা

শ্বেতা শতাব্দী এষ / জন্ম: ২২ অক্টোবর ১৯৯২; মৃত্যু: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

রোদকুয়াশা
হৃদয়ের একরোখা ঘোরে যে অহং লুকানো থাকে

তার থেকে দূরে- গুল্মবনে

একদিন খুব কাছে বসেছিল রোদ;

শীতের জলপাইবনে রাত্রির ক্যাম্পফায়ারে,

গিটারটা বেজেছিল একা একা খুব

মনে পড়ে- ভুলে যাই,

সব গান সঙ্গে করে

কারা যেন চলে যায় জিপসি-কার্নিভালে!

সেইসব চলে যাওয়া শুধু থেকে যায়-

দূরত্ব জেগে রয় অনিদ্রার পাশে।

শাদা সময়
মৃত্যুহীন সময়ের বুকে সম্পর্করা মরে যায়-

রাত্রির স্তব্ধতা ছিঁড়ে ট্রেনের শব্দ আসে

স্বজনেরা চলে যাচ্ছে এইভাবে অন্ধকারে।

পৃথিবীতে এইমাত্র যে শিশুটি ভূমিষ্ঠ হলো

তার মুখ স্মরণ করে আমিও ভুলে যাচ্ছি

বিষাদের জন্ম-ইতিহাস।

পতনের গোপন পয়ার
ঘুরেফিরে যদি সেই প্রেমের কথাই বলি-

তবে বলতে হবে বিগত সন্ধ্যায়

যে সূর্য ডুবেছিল তা আজ পুরনো হয়ে গেছে।

পুরনো ভালোবাসার শরীরে তখন রক্তশূন্য জবা-

কাম্য দূরত্বের ভাষা শিখে গেছে শালিক।

চারপাশে তাই সুখি ছায়াদের চলাচল-

তোমার এইসব ভালোলাগে,

তুমি দৃষ্টি নিবদ্ধ করে রাখো

পতনের গোপন পয়ারে।

অক্টোবরের আকাশ
গুল্মভূমিতে ছড়ানো দূরত্ব

দূরত্বের পাশে বসি;

কথা বলি- বলি না

সেইখানে কোনো নীরবতা নেই-

চোখ-হৃদয়-রক্তের কোলাহল,

কথা বলি না।

দৃষ্টির করাতে কেটে যাচ্ছে দৃশ্য-

অক্টোবরের আকাশ

এইসব এইভাবে চিরদিন...

এই রকম সন্তাপে
সাময়িক বেঁচে থাকার কাছে

হেরে যাচ্ছে অনতিদীর্ঘ জীবন

দূরত্ব-ব্যালকনি জুড়ে হলুদ বিকেল-

রোদ, তুমি কতটুকু আলো?

চোখের ভেতর সবুজ

পাথর হয়ে যায়

কণ্ঠ ভরে থাকে মৃত নদীর জল-

সাময়িক মৃত্যুর কাছে হেরে যাচ্ছে

জীবনের অনিবার্য গতি,

ভালোবাসার সমস্ত চিঠি

উড়ে গেছে ভুল ঠিকানায়-

শব্দ আজ কেবলই বিফল।

শ্বেতাকে নিবেদিত কবিতা

একজনই শ্বেতা শতাব্দী
সুমী সিকানদার
যতটুকু পারি জানালার কাচ টেনে বুক ভরে শ্বাস নেই

এখনও বাতাসে মুখ ডোবানোর অনুমতি আছে।

বাতাসের দাপটে চোখ মুদে আসার আগেই

দেখে নিয়েছি বড় ডানা-মেলা ভাসমান শ্বেত বিহঙ্গ

অদ্ভুতভাবে একজায়গায় ভেসে ভেসে গল্প করে তারা।

তাদের ঠিক পেছনেই খানিকটা মেঘলা মেঘের আবাসন

কালো করে আসার আগেই, ছত্রভঙ্গ হবার আগেই

শেষবারের কথোপকথন শ্বেতাদের কিম্বা শ্বেতার।

এসবই চোখ মেলে দেখতে পাচ্ছি কেননা

দেখার অনুমতি আছে।

হয়তো খনিকবাদেই আর অনুমতি থাকবে না।

শ্বেতা কিছুই দেখছে না, লিখছে না আর

কিছুই বলছে না, আমাদের শ্বেতা

চোখ ভর্তি জল নিয়ে খুঁছছে না আর প্রিয় মুখ কাউকে

তার অনুমতি মিলিয়ে গেছে

থেমে আছে সে সকল লড়াইকে আনুষ্ঠানিক বিদায় দিয়ে।

সময়ের চেয়ে শতাব্দ এগিয়ে থাকা শ্বেতা শতাব্দী

থাকবেই তার প্রথা ভাঙা কবিতায়, সে অনুমতির তোয়াক্কা করে না।

দেহ নয়, দেদারসে কথা বলা, তার কবিতারা সরব।

শহরের সকল সবুজ নুয়ে পড়েছে শ্বেতাকে একবার দেখতে

বৃষ্টিও তার শব্দে মন্দিরায় একাকার

দেহ আর কতটুকু সময়ের, তার সময়ের বাইরে সে নেই।

শ্বেতা শতাব্দী আজন্ম বলিষ্ঠ থাকুক,

সে ‘ক’ বলতে ক্যান্সার না বুঝে কবিতা বোঝে।

১টি ঢেউ কাটা পড়েছে
শারদুল সজল
আমরা এক একটা বিচ্ছিন্ন অনু

আমরা আসলে ছায়াপথে ঘুরতে থাকা

নিউট্রিনো-

যার ওজন নেই, তবু ধাক্কা লাগে

কবিতা লিখতে গিয়ে অচেনা আগুনের বিস্ফোরণে

চুক্তিবদ্ধ আমরা

যেমন গতকাল কবি শ্বেতা মারা গেলেন, তাকে চিনি না

তবুও আলোর চেয়েও দ্রুত বেগে ভাঙছে হৃদয়

হয়তো রাতের আধার ভেবেছে... কবিতা পুরনো হয়েছে

কিন্তু নক্ষত্রের গোপনে জ্বলে থাকা

সময়খাদক একদিন জেনে যায়

প্রতিটি মৃত কবির শরীর মহাকাল

একটা কণিকা কবিতা হয়ে রয়ে যায়

জোছনার নিচে মহাকাল পুড়িয়ে

দাঁড়িয়ে আছে যে অন্ধকার

তাপমাত্রাহীন

তার বিকিরণে

মধ্যসমুদ্রে এই মাত্র ১টি ঢেউ কাটা পড়ে

মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে গেল...

পৃথিবী জানলো

নিউট্রিনো- যার ওজন নেই তবু ধাক্কা লাগে

back to top