আনোয়ারা সৈয়দ হক
কবি-সব্যসাচী সৈয়দ শামসুল হক তাঁর জীবদ্দশায় অন্যান্য সৃজনকাজের সঙ্গে সঙ্গে একভাবে শিশুদের জন্যেও লিখে গেছেন গল্প, কবিতা, উপন্যাস, ছড়া ইত্যাদি। তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস ‘হাডসনের বন্দুক’ সম্প্রতি সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম কর্তৃক ইংরেজিতে অনুবাদ করা হয়েছে এবং বেরোবার সাথে সাথে প্রচুর বিক্রিও হয়েছে- যা প্রায় শেষের পথে।
শিশুদের জন্যে আজীবন সৈয়দ হক মাঝে মাঝেই কলম ধরেছেন। ছড়া লিখেছেন, পদ্য লিখেছেন, কবিতা লিখেছেন। এমনকি মৃত্যুর আগেও আমাকে বলে গেছেন একটি গল্পের খসড়া। শেষে বলেছেন আমার তো লেখার সময় হবে না, তুমি লিখো। তখন আমার এটুকু বুদ্ধি মাথায় খেলেনি যে বলি, তুমি মুখে মুখে বলো, আমি লিখে রাখি। আমিও যেন সুবোধ বালিকার মতো তখন মাথা নেড়ে বলেছিলাম, আচ্ছা!
এখন সে গল্প লিখতে বসে দেখি ভীষণ কঠিন একটা কাজ, যা আমি হয়ত করতে পারবো না।
সৈয়দ হকের ভেতরে একটি শিশুর মতো নির্মল মন যেন লুকানো ছিল। শিশুদের কাছে ডেকে কত গল্প যে তিনি করতেন। পারিবারিক কোনো অনুষ্ঠানে যখন শিশুরা আমাদের বাড়ি আসত, তখন দেখা যেত একটু পরে সকল শিশুই দোতলায় উঠে সৈয়দ হকের বিছানার ওপর দলবেঁধে বসে আছে। তাঁর সঙ্গে গল্প করছে। কত যে হাবিজাবি সব গল্প। সরস কথাবার্তায় সকলকে মাতিয়ে রাখতেই যেন তিনি ভালোবাসতেন।
আমার ছোট বোনের একমাত্র সন্তান সোম তাঁর খুব কাছের ছিল; কারণ সোমরা তখন আমাদের বাড়িতেই থাকত। সোমের সঙ্গে অনেক ধরনের গল্প তিনি করতেন। ভূতের গল্প, পাহাড়ের গল্প, হাতির গল্প, জঙ্গলের গল্প। কত রকমের গল্প। কিন্তু এগুলো মুখে মুখেই সব। আমরা কেউ তখন ভাবিনি যে এই বানিয়ে বলা গল্পগুলোই হতে পারে শিশু সাহিত্যের অমূল্য সব ভা-ার।
নিজের নাতি এজরা সৈয়দ হকের সঙ্গে যখন গল্প করতেন, সেগুলো হতো আরও সরেস। নাতির যে কোনো কথাতেই তিনি ছড়া কেটে উত্তর দিতেন। হেসে বলতেন, নাকের ফুটো মাত্র দু’টো, দুইটি চোখ করে ছোক ছোক, দুইটি পা হাঁটতে যা, একটি পেট খিদেয় হেঁট।
এর কিছুদিন বাদেই তিনি লেখেন ছোটদের জন্যে দুটো বই। একটি হলো নৌকোর গল্প আরেকটি কলমের গল্প। এর আগেই তিনি তার নাতনি লামিয়া সৈয়দ হককে উৎসর্গ করেছিলেন একটি ছড়া ও কবিতার বই। সাতত্য কাফিল সোমকে উৎসর্গ করেছিলেন আরেকটি বই, গল্প এবং পদ্যের মিশ্রণে তৈরি শিশুতোষ একটি রচনা। এর বহু আগে, প্রায় ষাটের দশকে তিনি লিখেছিলেন সীমান্তের সিংহাসন। এরপর লিখেছিলেন আরও অনেক উপন্যাস ও গল্প।
আমার স্মৃতি থেকে আমি সৈয়দ হকের শিশু ও কিশোর সাহিত্যের একটি তালিকা এখানে তৈরি করতে চাই। হয়ত ভবিষ্যতে কোনকাজে লাগতে পারে।
‘মৃত্যু ভয়াল সিন্ধু’ (উপন্যাস) ১৯৬৯, ‘সীমান্তের সিংহাসন’ (উপন্যাস) ১৯৮৬, ‘আনু বড় হয়’ (উপন্যাস) ১৯৮৬, ‘হাডসনের বন্দুক’ ( উপন্যাস) ১৯৮৮, পরে এটি ২০১৭ তে খুব সুন্দর ইংরেজিতে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম অনুবাদ করেন। এরপর আছে, ‘লাল টুকটুকে টিয়ে’ (১৯৮৮), ‘গল্প+পদ্য=গল্পদ্য’ (১৯৯৮), ‘পড়ার ঘরে ছবি’ (২০০০), ‘লাল নীল সবুজ জামা’ (২০০৪), ‘চালতা লেবু’ ২০০৫, ‘কিশোর সমগ্র প্রথম খ-’ (২০০৫), ‘শিশু কিশোর কবিতা সমগ্র (২০০৭)’, ‘আমার স্কুল’ (২০০৪), যে বইটি স্কুলের পাঠ্য। ‘শ্রেষ্ঠ কিশোর কবিতা (২০১১)’, ‘নৌকোর গল্প’ (২০১২), ‘কলমের গল্প’ (২০১২), ‘বঙ্গবন্ধুর বীরগাথা’ (২০১৩), এটি পরে ব্রেইল সংস্করণ হয় ২০১৬ সালে; এরপর বের হয় ‘টরে টরে টক্কায়’ (২০১৪), ‘বাবুদের বর্ণচেনা’ (২০১৪), ‘এক যে ছিল গল্প’ (২০১৬), কিশোরদের জন্যে, ‘মহাশূন্যে পরাণমাস্টার’ (১৯৮৮), ‘মেঘ ও মেশিন’ (১৯৯১), সবশেষে ২০১৫ সালের বইমেলায় প্রকাশিত হয় আলাদাভাবে, ‘আমার পরিচয়’, যে কবিতাটি বহু বছর পূর্বে তাঁর একটি কবিতা সমগ্রে বেরিয়েছিল। এখানে আরও কিছু বইয়ের নাম যোগ হবে , যা এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না।
এখন এত কষ্ট করে স্মৃতি থেকে এতসব শিশুতোষ বইয়ের নাম আমি উদ্ধার করলাম কেন?
এর একটা কারণ আছে।
এর পেছনে লুকিয়ে আছে আমার কিছু ক্ষোভ এবং রাগ। আর সেটা হচ্ছে যে এই বাংলাদেশে এমন সব লেখক শিশু সাহিত্যে পুরস্কার পেয়েছেন যারা সারা জীবন ধরে মাত্র দুখানা বা তিনখানা শিশুতোষ বই রচনা করেছেন। শুধু একবার মাত্র নয়, বারবারই তারা পুরস্কার পেয়েছেন। এ এক আশ্চর্য দেশ, এই বাংলাদেশ। এখানে শিশু একাডেমি বলে একটি প্রতিষ্ঠান আছে, অগ্রণী ব্যাংক শিশু সাহিত্য পুরস্কার আছে, ইউরো শিশু সাহিত্য পুরস্কার আছে, বাংলা একাডেমি কবির চৌধুরী শিশু সাহিত্য পুরস্কার আছে, এসব পুরস্কার এত পুরনো যে এদের গা ঝাড়লে এখন বাতাসে ধুলো ওড়ে, কিন্তু এসব পুরস্কার যারা বিতরণ করেন তাদের মগজে কি সৈয়দ শামসুল হক বলে একজন শিশু-সাহিত্যিক বাংলাদেশে আছেন, তাঁর কথাটা একবারও মনে পড়েনি? এটা অসম্ভব একটি ঘটনা। রীতিমতো ইতিহাসে তুলে রাখার মতো। নাকি এটি ইচ্ছাকৃত একটি ত্রুটি। তাঁকে অস্বীকার করে বাংলাদেশের শিশুসাহিত্যকে সাগরে ভাসিয়ে দেয়া যেন কোনোদিনও বাংলাদেশের মানুষ তাঁর শিশু সাহিত্যের পরিচয় না পায়! আমাদের মতো দেশে স্বীকৃতি না দেওয়া মানেই হলো তাঁর শিশু সাহিত্য কিছুই হয় নি। অথচ তাঁর রচিত শিশু সাহিত্যের প্রতিটি বইই পৃথকভাবে পুরস্কারের দাবি করে। এটি শুধু আমি তাঁর কাছের মানুষ বলে বলছি না, এটি আমি নিজে একজন শিশু সাহিত্যের রচয়িতা হিসাবে বলছি এবং কয়েকবার শিশু সাহিত্যে পুরস্কারপ্রাপ্ত হয়ে সাহসের সঙ্গে বলছি। এটা হচ্ছে ঐতিহাসিক সত্য। শিশুবিষয়ক সর্বোচ্চ একটি প্রতিষ্ঠানের কমিটিতে একজন সদস্য হয়ে বসে নিজের নামে শিশু সাহিত্য পরুস্কার বাগিয়ে নেবার ইতিহাসও একদিন সকলের সামনে প্রকাশ হবে। এবং যারা ইচ্ছকৃতভাবে সৈয়দ শামসুল হককে শিশুসাহিত্যের অঙ্গন থেকে দূরে রাখার চেষ্টা যুগের পর যুগ করে যাচ্ছেন তাদের অধিকাংশ লেখাই কালের অতলে গড়িয়ে যাবে। কিন্তু বেঁচে থাকবে স্কুলের বাচ্চাদের মুখে মুখে, ‘সূর্য ওঠার নতুন দেশ, বাংলাদেশ, বাংলাদেশ।’ বেঁচে থাকবে বাচ্চাদের মুখে মুখে ঘোরা, আমার পরিচয়, ‘আমি জন্মেছি বাংলায়, আমি বাংলায় কথা বলি, বাংলার আলপথ দিয়ে আমি হাজার বছর চলি। চলি পলিমাটি চরণে আমার চলার চিহ্ন ফেলে, তেরোশত নদী শুধায় আমাকে কোথা থেকে তুমি এলে?’
শিশু ও কিশোরদের প্রিয় লেখক সৈয়দ শামসুল হককে পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকীতে জানাই গভীর শ্রদ্ধা।
আনোয়ারা সৈয়দ হক
বুধবার, ০৬ অক্টোবর ২০২১
কবি-সব্যসাচী সৈয়দ শামসুল হক তাঁর জীবদ্দশায় অন্যান্য সৃজনকাজের সঙ্গে সঙ্গে একভাবে শিশুদের জন্যেও লিখে গেছেন গল্প, কবিতা, উপন্যাস, ছড়া ইত্যাদি। তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস ‘হাডসনের বন্দুক’ সম্প্রতি সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম কর্তৃক ইংরেজিতে অনুবাদ করা হয়েছে এবং বেরোবার সাথে সাথে প্রচুর বিক্রিও হয়েছে- যা প্রায় শেষের পথে।
শিশুদের জন্যে আজীবন সৈয়দ হক মাঝে মাঝেই কলম ধরেছেন। ছড়া লিখেছেন, পদ্য লিখেছেন, কবিতা লিখেছেন। এমনকি মৃত্যুর আগেও আমাকে বলে গেছেন একটি গল্পের খসড়া। শেষে বলেছেন আমার তো লেখার সময় হবে না, তুমি লিখো। তখন আমার এটুকু বুদ্ধি মাথায় খেলেনি যে বলি, তুমি মুখে মুখে বলো, আমি লিখে রাখি। আমিও যেন সুবোধ বালিকার মতো তখন মাথা নেড়ে বলেছিলাম, আচ্ছা!
এখন সে গল্প লিখতে বসে দেখি ভীষণ কঠিন একটা কাজ, যা আমি হয়ত করতে পারবো না।
সৈয়দ হকের ভেতরে একটি শিশুর মতো নির্মল মন যেন লুকানো ছিল। শিশুদের কাছে ডেকে কত গল্প যে তিনি করতেন। পারিবারিক কোনো অনুষ্ঠানে যখন শিশুরা আমাদের বাড়ি আসত, তখন দেখা যেত একটু পরে সকল শিশুই দোতলায় উঠে সৈয়দ হকের বিছানার ওপর দলবেঁধে বসে আছে। তাঁর সঙ্গে গল্প করছে। কত যে হাবিজাবি সব গল্প। সরস কথাবার্তায় সকলকে মাতিয়ে রাখতেই যেন তিনি ভালোবাসতেন।
আমার ছোট বোনের একমাত্র সন্তান সোম তাঁর খুব কাছের ছিল; কারণ সোমরা তখন আমাদের বাড়িতেই থাকত। সোমের সঙ্গে অনেক ধরনের গল্প তিনি করতেন। ভূতের গল্প, পাহাড়ের গল্প, হাতির গল্প, জঙ্গলের গল্প। কত রকমের গল্প। কিন্তু এগুলো মুখে মুখেই সব। আমরা কেউ তখন ভাবিনি যে এই বানিয়ে বলা গল্পগুলোই হতে পারে শিশু সাহিত্যের অমূল্য সব ভা-ার।
নিজের নাতি এজরা সৈয়দ হকের সঙ্গে যখন গল্প করতেন, সেগুলো হতো আরও সরেস। নাতির যে কোনো কথাতেই তিনি ছড়া কেটে উত্তর দিতেন। হেসে বলতেন, নাকের ফুটো মাত্র দু’টো, দুইটি চোখ করে ছোক ছোক, দুইটি পা হাঁটতে যা, একটি পেট খিদেয় হেঁট।
এর কিছুদিন বাদেই তিনি লেখেন ছোটদের জন্যে দুটো বই। একটি হলো নৌকোর গল্প আরেকটি কলমের গল্প। এর আগেই তিনি তার নাতনি লামিয়া সৈয়দ হককে উৎসর্গ করেছিলেন একটি ছড়া ও কবিতার বই। সাতত্য কাফিল সোমকে উৎসর্গ করেছিলেন আরেকটি বই, গল্প এবং পদ্যের মিশ্রণে তৈরি শিশুতোষ একটি রচনা। এর বহু আগে, প্রায় ষাটের দশকে তিনি লিখেছিলেন সীমান্তের সিংহাসন। এরপর লিখেছিলেন আরও অনেক উপন্যাস ও গল্প।
আমার স্মৃতি থেকে আমি সৈয়দ হকের শিশু ও কিশোর সাহিত্যের একটি তালিকা এখানে তৈরি করতে চাই। হয়ত ভবিষ্যতে কোনকাজে লাগতে পারে।
‘মৃত্যু ভয়াল সিন্ধু’ (উপন্যাস) ১৯৬৯, ‘সীমান্তের সিংহাসন’ (উপন্যাস) ১৯৮৬, ‘আনু বড় হয়’ (উপন্যাস) ১৯৮৬, ‘হাডসনের বন্দুক’ ( উপন্যাস) ১৯৮৮, পরে এটি ২০১৭ তে খুব সুন্দর ইংরেজিতে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম অনুবাদ করেন। এরপর আছে, ‘লাল টুকটুকে টিয়ে’ (১৯৮৮), ‘গল্প+পদ্য=গল্পদ্য’ (১৯৯৮), ‘পড়ার ঘরে ছবি’ (২০০০), ‘লাল নীল সবুজ জামা’ (২০০৪), ‘চালতা লেবু’ ২০০৫, ‘কিশোর সমগ্র প্রথম খ-’ (২০০৫), ‘শিশু কিশোর কবিতা সমগ্র (২০০৭)’, ‘আমার স্কুল’ (২০০৪), যে বইটি স্কুলের পাঠ্য। ‘শ্রেষ্ঠ কিশোর কবিতা (২০১১)’, ‘নৌকোর গল্প’ (২০১২), ‘কলমের গল্প’ (২০১২), ‘বঙ্গবন্ধুর বীরগাথা’ (২০১৩), এটি পরে ব্রেইল সংস্করণ হয় ২০১৬ সালে; এরপর বের হয় ‘টরে টরে টক্কায়’ (২০১৪), ‘বাবুদের বর্ণচেনা’ (২০১৪), ‘এক যে ছিল গল্প’ (২০১৬), কিশোরদের জন্যে, ‘মহাশূন্যে পরাণমাস্টার’ (১৯৮৮), ‘মেঘ ও মেশিন’ (১৯৯১), সবশেষে ২০১৫ সালের বইমেলায় প্রকাশিত হয় আলাদাভাবে, ‘আমার পরিচয়’, যে কবিতাটি বহু বছর পূর্বে তাঁর একটি কবিতা সমগ্রে বেরিয়েছিল। এখানে আরও কিছু বইয়ের নাম যোগ হবে , যা এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না।
এখন এত কষ্ট করে স্মৃতি থেকে এতসব শিশুতোষ বইয়ের নাম আমি উদ্ধার করলাম কেন?
এর একটা কারণ আছে।
এর পেছনে লুকিয়ে আছে আমার কিছু ক্ষোভ এবং রাগ। আর সেটা হচ্ছে যে এই বাংলাদেশে এমন সব লেখক শিশু সাহিত্যে পুরস্কার পেয়েছেন যারা সারা জীবন ধরে মাত্র দুখানা বা তিনখানা শিশুতোষ বই রচনা করেছেন। শুধু একবার মাত্র নয়, বারবারই তারা পুরস্কার পেয়েছেন। এ এক আশ্চর্য দেশ, এই বাংলাদেশ। এখানে শিশু একাডেমি বলে একটি প্রতিষ্ঠান আছে, অগ্রণী ব্যাংক শিশু সাহিত্য পুরস্কার আছে, ইউরো শিশু সাহিত্য পুরস্কার আছে, বাংলা একাডেমি কবির চৌধুরী শিশু সাহিত্য পুরস্কার আছে, এসব পুরস্কার এত পুরনো যে এদের গা ঝাড়লে এখন বাতাসে ধুলো ওড়ে, কিন্তু এসব পুরস্কার যারা বিতরণ করেন তাদের মগজে কি সৈয়দ শামসুল হক বলে একজন শিশু-সাহিত্যিক বাংলাদেশে আছেন, তাঁর কথাটা একবারও মনে পড়েনি? এটা অসম্ভব একটি ঘটনা। রীতিমতো ইতিহাসে তুলে রাখার মতো। নাকি এটি ইচ্ছাকৃত একটি ত্রুটি। তাঁকে অস্বীকার করে বাংলাদেশের শিশুসাহিত্যকে সাগরে ভাসিয়ে দেয়া যেন কোনোদিনও বাংলাদেশের মানুষ তাঁর শিশু সাহিত্যের পরিচয় না পায়! আমাদের মতো দেশে স্বীকৃতি না দেওয়া মানেই হলো তাঁর শিশু সাহিত্য কিছুই হয় নি। অথচ তাঁর রচিত শিশু সাহিত্যের প্রতিটি বইই পৃথকভাবে পুরস্কারের দাবি করে। এটি শুধু আমি তাঁর কাছের মানুষ বলে বলছি না, এটি আমি নিজে একজন শিশু সাহিত্যের রচয়িতা হিসাবে বলছি এবং কয়েকবার শিশু সাহিত্যে পুরস্কারপ্রাপ্ত হয়ে সাহসের সঙ্গে বলছি। এটা হচ্ছে ঐতিহাসিক সত্য। শিশুবিষয়ক সর্বোচ্চ একটি প্রতিষ্ঠানের কমিটিতে একজন সদস্য হয়ে বসে নিজের নামে শিশু সাহিত্য পরুস্কার বাগিয়ে নেবার ইতিহাসও একদিন সকলের সামনে প্রকাশ হবে। এবং যারা ইচ্ছকৃতভাবে সৈয়দ শামসুল হককে শিশুসাহিত্যের অঙ্গন থেকে দূরে রাখার চেষ্টা যুগের পর যুগ করে যাচ্ছেন তাদের অধিকাংশ লেখাই কালের অতলে গড়িয়ে যাবে। কিন্তু বেঁচে থাকবে স্কুলের বাচ্চাদের মুখে মুখে, ‘সূর্য ওঠার নতুন দেশ, বাংলাদেশ, বাংলাদেশ।’ বেঁচে থাকবে বাচ্চাদের মুখে মুখে ঘোরা, আমার পরিচয়, ‘আমি জন্মেছি বাংলায়, আমি বাংলায় কথা বলি, বাংলার আলপথ দিয়ে আমি হাজার বছর চলি। চলি পলিমাটি চরণে আমার চলার চিহ্ন ফেলে, তেরোশত নদী শুধায় আমাকে কোথা থেকে তুমি এলে?’
শিশু ও কিশোরদের প্রিয় লেখক সৈয়দ শামসুল হককে পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকীতে জানাই গভীর শ্রদ্ধা।