প্রত্নস্বর
শফিক ইমতিয়াজ
দাঁড়ানোটা মুখ্য।
কতক পাথুরে চিহ্ন এসে অনুক্ষণ ভেজাবে তোমাকে
বলবে, বিনত হও এসব চূড়ান্ত ধারণার দিকে
তুমি ভুলে যাবে কি, তোমার দেহে ভিড়বাহী শহরের শ্বাস
বিস্তৃত পাতাল জুড়ে মুমূর্ষু মাটির গান?
চলমান দাঁড়ানোর মধ্যে কী রকম দাসগন্ধ
বড়জোর সিনাটান বেতনভুক প্রহরী-কায়দা
খটুজেই কী লাভ এই প্রসারমান বালিতে বল্গাহীন ঝোরার উল্লাস!
দেখেছি পাহাড়, শালপ্রাংশু বৃক্ষ; দাঁড়ানোর অমিত ভঙ্গিমা!
ভরাবর্ষায় নদী ও ঢালু বেয়ে নামা ঝর্না
সবার নিজস্ব ঢং দাঁড়াবার!
দাঁড়াবার জন্য চাই দেহ ও মনের সুস্থ বর্ণমালা
চাই ঊর্ধ্বমুখে তাকানোর তারার আকাশ
পাশব বেত্রাঘাতের বিপরীতে
প্রতিটি গৃহের পাশে কল্লোলিত জোনাকিসদন
সর্বোপরি প্রত্নস্বর; আবহমান কালের গর্ভ থেকে যে তোমাকে
হাতে তুলে দেবে অবাক জিয়নকাঠি!
দাঁড়াবে? দাঁড়াও।
ঘোরের ভিতর
ইকবাল হোসেন বুলবুল
ঘোরে ঘোরে ঘোরের তুফান
তুফান তুফান।
ফানা ফানা রাখো
দেহহীন দেহ
বেহুঁশের মাঝে;
ঘোরে ঘোরে ঘোরের ভিতর।
কথা দেয়া কথা
কথা নেয়া কথা
মায়ায় মায়ায়,
সরবে নীরবে
ইশারার মাঝে;
ঘোরে ঘোরে ঘোরের ভিতর।
চোখহীন চোখে
তুমিহীন তুমি
বসি কাছে, ধরি হাতে, নাচি
তুফানে তুফানে;
ঘোরে ঘোরে ঘোরের ভিতর।
সব সুরে এক সুর দেহের ভিতর
তুমিময় তুমিময় ঘোরের ভিতর
ঘোরে ঘোরে ঘোরের ভিতর।
ঘোরে ঘোরে ঘোরের ভিতর
তুফান তুফান
ঘোরে ঘোরে ঘোরের তুফান।
যামিনী রায়
শিবলী মোকতাদির
বরফের বাক্স ভেঙে বের করে আনো বাতাসে বাঁশির সুর
তাতে সাধনা লাগাও- সাধ্যের অতীত
পথিকশূন্য পথ হবে ক্লান্তিটানা
অখ- সন্ধ্যা আর জোনাকির গন্ধে মাখামাখি
তাকে মান্য করে সকল অভিকর্ষ ছিঁড়ে
ছুটে আসো দুই কানে রক্তজবা গুঁজে
বিগত হাসিগুলো মিশিয়ে দাও আগত অশ্রুহাওয়ায়
আমি ঘাসের গভীরতা ভেদ করে
বেগুনি বাষ্পের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকব
যুদ্ধবিধ্বস্ত পরিত্যক্ত বিমানের পাশে
অবুঝ যতিচিহ্নের মতো হুটহাট বসে না পড়ে
আলোচ্য পৃষ্ঠায় এসে থামো
আমাকে ভাবো খানিকটা সৎভাইয়ের সাকার দিয়ে
ফুলের বিস্ফোরণে পাপড়ির পতন হবে, তবুও বলি-
পটে-আঁকা আঙুরগুচ্ছ যতই লোভনীয় হোক
পাখপাখালি যতই ঠুকরে যাক
পিতৃঋণের মতো এটুকু বিশ্বাস রাখতে হবে
সে আঙুরফলে রস পাবে না কখনও!
লবণ
ইমরোজ সোহেল
আনকোরা দুঃখের মতো ভিজে গেলো পা।
বড় যত্নে মুছে দিই লবনের গা ও গতর। রোদ আসে। ধবধবে চাঁদের মতো পায়ের কার্নিসে ভেসে ওঠে স্নিগ্ধ ছতর।
অশ্রু কানামাছি খেলে।
এই আছে চোখের অন্তরে,
আবার সাতসজ্জা খুলে ফেলে পুড়ে যায় এলেবেলে বেদনার তেলে।
নিরীহ পুঁটির মতো নিরিবিলি পোড়ে।
শব্দ হয়, সেই শব্দ আগুন শোনে না। আগুনের শিখা যেনো মৃতপ্রায় বরফ পি-। হৃদয়ের শরের মতোই জ্বাল দিই।
উপচে ওঠে জলজ্যন্ত ঘি।
বহুমূল্যবান।
লোকে বলে, ছিঃ ছিঃ! এ কেমন জীবন
তোমার!
আমি বলি, আমি তো ফুরিয়েই গেছি
কে নেবে আর জীবনের ভার?
খুলে গেলে জীবনের তার,
কে আর বাজায় বেহালা।
আমি বলি এর নামই অবহেলা।
এরই নাম তেলহীনসলতের অপরূপা খেলা।
অন্ধকার কাঁদে।
আলোর কি মৃত্যু হয় সেই অপরাধে?
জীবন বিরতি নিলে বহুগুণে বেড়ে যায় ঋণ।
ছিঁড়ে গেলে তার কে আর বাজায় বলো পারিজাত বীণ।
আনকোরা দুঃখের মতো ভিজে গেলো পা।
কে জানে না লবণের বহুবিধ গুণ।
কতকিছু অনাদরে পচে,
লবণের সাহচর্য পেয়ে চমড়া পচে না।
তাই এই দেহ নিয়ে লবণের কাছেই আমার সব সমর্পণ?
আমি জানি অশ্রুর বিবিধ বচন।
আমরাও নক্ষত্রচূর্ণ
তরুন ইউসুফ
নিয়ত দূরে সরে যাচ্ছি আমরা
সময়ের সাথে।
আমাদের একত্রে থাকা
যা দেখি পেছনে তাকিয়ে
আসলে অতীত,
দূরের ঘটনা
মহাবিশ্বের মতো-
ঘনীভূত ছিল একদা
তারপর কাছে থাকার উত্তাপে
প্রবল বিস্ফোরণ,
সেই থেকে
গ্যালাক্সি থেকে গ্যালাক্সি
দূরে সরে যাচ্ছে
তারা থেকে তারা,
আমরাও নক্ষত্রচূর্ণ আহা
দূরে যেতে যেতে
কেমন আত্মহারা!
অবকাশ
দ্বিত্ব শুভ্রা
আসন্ন সেই দিন, পরে নাও শীতের পোশাক
টাল টাল চাহিদার পাথর ছুটে আসবে তোমার দিকে।
ব্যাডমিন্টনের চৌকো কোটের ভেতর
এ ঘর, ও ঘর দৌড়
প্রাণান্ত চেষ্টা
মাটিতে বসে না পড়ার!
আসন্ন সেই দিন
একই আয়নায় অনেক ক’টা মুখ
অনেকগুলি মুখের সামনে এক তুমি।
দাবার বোর্ডে অনেক তুমি সার সার দাঁড়ানো
আসন্ন সেই দিন, অনেক ভূমিকা,
খেলা চালিয়ে যাওয়া
সাদা কালো কৌশল।
এলোপাতাড়ি চলে যাবে চোখহীন ট্রাক্টর।
গায়ের ওপর
রাগ-ক্ষোভ-ভালবাসা-করুণার
কাটা, আধা কাটা গাছ।
আসন্ন সেই দিন, যখন বিলাপের মাঝেই বিশ্রাম
বিশ্বাস করো, এই মুহূর্ত পর্যন্ত
তুমি অবকাশেই আছো!
কেউ জানবে না
তারিক মেহের
কেউ জানবে না তোমার সাথে আমার
দেখা হয়েছিলো সহসা।
কেউ জানবে না একই যন্ত্রযানে
আমরা দুজন পাশাপাশি বসে
চোখে চোখে কথা বলতে বলতে
চলে এসেছিলাম ঝিলের পাড়ে।
শাপলা জানবে না, জানবে না
নুয়ে থাকা অশ্বত্থ গাছ-
তোমার জন্য আমি একটি দীর্ঘ দুপুর
একাকী বসেছিলাম।
কেউ জানবে না কথা দিয়েও
শেষতক আসোনি তুমি কেননা
তোমারও একটি সংসার আছে
তোমারও একটি জতুগৃহ আছে প্রিয়তমা।
আবীর
অনন্য কামরুল
পড়ন্ত রাতের ভারে তুলে দিছি তারাধোয়া শিশি
নদীভাঙা শাড়ি পরে জেগে আছে বিবশ সময়
কেন ফুল নিভে যাও? আদি পাপে কেঁপে মরে ঋষি!
ঝর ঝর খসে কূল... বৃত্তপাশে অদ্ভুত বিলয়...
কেলাসিত জলে পচে দিন ফুঁড়ে জেগে থাকে যারা
তাদের চোখের পাতা নড়ে ওঠে ছায়াচাপা গানে
তারা তো বোঝে না মোটে স্বরচিত জোছনার সাড়া
ছিঁড়ে পাতা উড়ে যায় ঘূর্ণিপাকে করাল আহ্বানে...
উটকো স্মৃতির খাঁজে বিঁধে আছে পলকা হৃদয়
ঢিলেঢালা মেঘগুলি ঝুলে আছে নত মুখে খালি
ঘুম ঘুম খাঁড়ি ভেঙে পাড়ে চাপে মৌন আশা-ভয়
চর্যার অভাব হয়ে বাড়ে হু হু ঊনতার তালি...
ক্ষয়ে ক্ষয়ে যায় চাঁদ মেঘ এসে নেচে করে ভিড়
ঝিমধরা আকাশেতে কবে বলো হাসিবে আবীর?
হারিয়ে যাব
মোহাম্মদ আবদুল মাননান
অতঃপর সব থেমে যাবে
যাবতীয় কোলাহল নিঃশেষ হবে
স্বাতীলেখা যেভাবে হঠাৎ চলে গেছে-
গেছে আরো অনেকে কালে ও অকালে
আমিও হারিয়ে যাব
কংকাল হয়ে ভেসে বেড়াব দূর আকাশে
ছোঁব না খাদ্য বস্ত্র ভালোবাসা
নির্ঘুম স্বপ্ন দেখে মাড়াব না শস্যক্ষেত, চৌচির মাঠ
ধু ধু প্রান্তর আর চেনা উঠোন
দারুণ অভিমানে আমিও হারিয়ে যাব একদিন।
বুধবার, ০৬ অক্টোবর ২০২১
প্রত্নস্বর
শফিক ইমতিয়াজ
দাঁড়ানোটা মুখ্য।
কতক পাথুরে চিহ্ন এসে অনুক্ষণ ভেজাবে তোমাকে
বলবে, বিনত হও এসব চূড়ান্ত ধারণার দিকে
তুমি ভুলে যাবে কি, তোমার দেহে ভিড়বাহী শহরের শ্বাস
বিস্তৃত পাতাল জুড়ে মুমূর্ষু মাটির গান?
চলমান দাঁড়ানোর মধ্যে কী রকম দাসগন্ধ
বড়জোর সিনাটান বেতনভুক প্রহরী-কায়দা
খটুজেই কী লাভ এই প্রসারমান বালিতে বল্গাহীন ঝোরার উল্লাস!
দেখেছি পাহাড়, শালপ্রাংশু বৃক্ষ; দাঁড়ানোর অমিত ভঙ্গিমা!
ভরাবর্ষায় নদী ও ঢালু বেয়ে নামা ঝর্না
সবার নিজস্ব ঢং দাঁড়াবার!
দাঁড়াবার জন্য চাই দেহ ও মনের সুস্থ বর্ণমালা
চাই ঊর্ধ্বমুখে তাকানোর তারার আকাশ
পাশব বেত্রাঘাতের বিপরীতে
প্রতিটি গৃহের পাশে কল্লোলিত জোনাকিসদন
সর্বোপরি প্রত্নস্বর; আবহমান কালের গর্ভ থেকে যে তোমাকে
হাতে তুলে দেবে অবাক জিয়নকাঠি!
দাঁড়াবে? দাঁড়াও।
ঘোরের ভিতর
ইকবাল হোসেন বুলবুল
ঘোরে ঘোরে ঘোরের তুফান
তুফান তুফান।
ফানা ফানা রাখো
দেহহীন দেহ
বেহুঁশের মাঝে;
ঘোরে ঘোরে ঘোরের ভিতর।
কথা দেয়া কথা
কথা নেয়া কথা
মায়ায় মায়ায়,
সরবে নীরবে
ইশারার মাঝে;
ঘোরে ঘোরে ঘোরের ভিতর।
চোখহীন চোখে
তুমিহীন তুমি
বসি কাছে, ধরি হাতে, নাচি
তুফানে তুফানে;
ঘোরে ঘোরে ঘোরের ভিতর।
সব সুরে এক সুর দেহের ভিতর
তুমিময় তুমিময় ঘোরের ভিতর
ঘোরে ঘোরে ঘোরের ভিতর।
ঘোরে ঘোরে ঘোরের ভিতর
তুফান তুফান
ঘোরে ঘোরে ঘোরের তুফান।
যামিনী রায়
শিবলী মোকতাদির
বরফের বাক্স ভেঙে বের করে আনো বাতাসে বাঁশির সুর
তাতে সাধনা লাগাও- সাধ্যের অতীত
পথিকশূন্য পথ হবে ক্লান্তিটানা
অখ- সন্ধ্যা আর জোনাকির গন্ধে মাখামাখি
তাকে মান্য করে সকল অভিকর্ষ ছিঁড়ে
ছুটে আসো দুই কানে রক্তজবা গুঁজে
বিগত হাসিগুলো মিশিয়ে দাও আগত অশ্রুহাওয়ায়
আমি ঘাসের গভীরতা ভেদ করে
বেগুনি বাষ্পের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকব
যুদ্ধবিধ্বস্ত পরিত্যক্ত বিমানের পাশে
অবুঝ যতিচিহ্নের মতো হুটহাট বসে না পড়ে
আলোচ্য পৃষ্ঠায় এসে থামো
আমাকে ভাবো খানিকটা সৎভাইয়ের সাকার দিয়ে
ফুলের বিস্ফোরণে পাপড়ির পতন হবে, তবুও বলি-
পটে-আঁকা আঙুরগুচ্ছ যতই লোভনীয় হোক
পাখপাখালি যতই ঠুকরে যাক
পিতৃঋণের মতো এটুকু বিশ্বাস রাখতে হবে
সে আঙুরফলে রস পাবে না কখনও!
লবণ
ইমরোজ সোহেল
আনকোরা দুঃখের মতো ভিজে গেলো পা।
বড় যত্নে মুছে দিই লবনের গা ও গতর। রোদ আসে। ধবধবে চাঁদের মতো পায়ের কার্নিসে ভেসে ওঠে স্নিগ্ধ ছতর।
অশ্রু কানামাছি খেলে।
এই আছে চোখের অন্তরে,
আবার সাতসজ্জা খুলে ফেলে পুড়ে যায় এলেবেলে বেদনার তেলে।
নিরীহ পুঁটির মতো নিরিবিলি পোড়ে।
শব্দ হয়, সেই শব্দ আগুন শোনে না। আগুনের শিখা যেনো মৃতপ্রায় বরফ পি-। হৃদয়ের শরের মতোই জ্বাল দিই।
উপচে ওঠে জলজ্যন্ত ঘি।
বহুমূল্যবান।
লোকে বলে, ছিঃ ছিঃ! এ কেমন জীবন
তোমার!
আমি বলি, আমি তো ফুরিয়েই গেছি
কে নেবে আর জীবনের ভার?
খুলে গেলে জীবনের তার,
কে আর বাজায় বেহালা।
আমি বলি এর নামই অবহেলা।
এরই নাম তেলহীনসলতের অপরূপা খেলা।
অন্ধকার কাঁদে।
আলোর কি মৃত্যু হয় সেই অপরাধে?
জীবন বিরতি নিলে বহুগুণে বেড়ে যায় ঋণ।
ছিঁড়ে গেলে তার কে আর বাজায় বলো পারিজাত বীণ।
আনকোরা দুঃখের মতো ভিজে গেলো পা।
কে জানে না লবণের বহুবিধ গুণ।
কতকিছু অনাদরে পচে,
লবণের সাহচর্য পেয়ে চমড়া পচে না।
তাই এই দেহ নিয়ে লবণের কাছেই আমার সব সমর্পণ?
আমি জানি অশ্রুর বিবিধ বচন।
আমরাও নক্ষত্রচূর্ণ
তরুন ইউসুফ
নিয়ত দূরে সরে যাচ্ছি আমরা
সময়ের সাথে।
আমাদের একত্রে থাকা
যা দেখি পেছনে তাকিয়ে
আসলে অতীত,
দূরের ঘটনা
মহাবিশ্বের মতো-
ঘনীভূত ছিল একদা
তারপর কাছে থাকার উত্তাপে
প্রবল বিস্ফোরণ,
সেই থেকে
গ্যালাক্সি থেকে গ্যালাক্সি
দূরে সরে যাচ্ছে
তারা থেকে তারা,
আমরাও নক্ষত্রচূর্ণ আহা
দূরে যেতে যেতে
কেমন আত্মহারা!
অবকাশ
দ্বিত্ব শুভ্রা
আসন্ন সেই দিন, পরে নাও শীতের পোশাক
টাল টাল চাহিদার পাথর ছুটে আসবে তোমার দিকে।
ব্যাডমিন্টনের চৌকো কোটের ভেতর
এ ঘর, ও ঘর দৌড়
প্রাণান্ত চেষ্টা
মাটিতে বসে না পড়ার!
আসন্ন সেই দিন
একই আয়নায় অনেক ক’টা মুখ
অনেকগুলি মুখের সামনে এক তুমি।
দাবার বোর্ডে অনেক তুমি সার সার দাঁড়ানো
আসন্ন সেই দিন, অনেক ভূমিকা,
খেলা চালিয়ে যাওয়া
সাদা কালো কৌশল।
এলোপাতাড়ি চলে যাবে চোখহীন ট্রাক্টর।
গায়ের ওপর
রাগ-ক্ষোভ-ভালবাসা-করুণার
কাটা, আধা কাটা গাছ।
আসন্ন সেই দিন, যখন বিলাপের মাঝেই বিশ্রাম
বিশ্বাস করো, এই মুহূর্ত পর্যন্ত
তুমি অবকাশেই আছো!
কেউ জানবে না
তারিক মেহের
কেউ জানবে না তোমার সাথে আমার
দেখা হয়েছিলো সহসা।
কেউ জানবে না একই যন্ত্রযানে
আমরা দুজন পাশাপাশি বসে
চোখে চোখে কথা বলতে বলতে
চলে এসেছিলাম ঝিলের পাড়ে।
শাপলা জানবে না, জানবে না
নুয়ে থাকা অশ্বত্থ গাছ-
তোমার জন্য আমি একটি দীর্ঘ দুপুর
একাকী বসেছিলাম।
কেউ জানবে না কথা দিয়েও
শেষতক আসোনি তুমি কেননা
তোমারও একটি সংসার আছে
তোমারও একটি জতুগৃহ আছে প্রিয়তমা।
আবীর
অনন্য কামরুল
পড়ন্ত রাতের ভারে তুলে দিছি তারাধোয়া শিশি
নদীভাঙা শাড়ি পরে জেগে আছে বিবশ সময়
কেন ফুল নিভে যাও? আদি পাপে কেঁপে মরে ঋষি!
ঝর ঝর খসে কূল... বৃত্তপাশে অদ্ভুত বিলয়...
কেলাসিত জলে পচে দিন ফুঁড়ে জেগে থাকে যারা
তাদের চোখের পাতা নড়ে ওঠে ছায়াচাপা গানে
তারা তো বোঝে না মোটে স্বরচিত জোছনার সাড়া
ছিঁড়ে পাতা উড়ে যায় ঘূর্ণিপাকে করাল আহ্বানে...
উটকো স্মৃতির খাঁজে বিঁধে আছে পলকা হৃদয়
ঢিলেঢালা মেঘগুলি ঝুলে আছে নত মুখে খালি
ঘুম ঘুম খাঁড়ি ভেঙে পাড়ে চাপে মৌন আশা-ভয়
চর্যার অভাব হয়ে বাড়ে হু হু ঊনতার তালি...
ক্ষয়ে ক্ষয়ে যায় চাঁদ মেঘ এসে নেচে করে ভিড়
ঝিমধরা আকাশেতে কবে বলো হাসিবে আবীর?
হারিয়ে যাব
মোহাম্মদ আবদুল মাননান
অতঃপর সব থেমে যাবে
যাবতীয় কোলাহল নিঃশেষ হবে
স্বাতীলেখা যেভাবে হঠাৎ চলে গেছে-
গেছে আরো অনেকে কালে ও অকালে
আমিও হারিয়ে যাব
কংকাল হয়ে ভেসে বেড়াব দূর আকাশে
ছোঁব না খাদ্য বস্ত্র ভালোবাসা
নির্ঘুম স্বপ্ন দেখে মাড়াব না শস্যক্ষেত, চৌচির মাঠ
ধু ধু প্রান্তর আর চেনা উঠোন
দারুণ অভিমানে আমিও হারিয়ে যাব একদিন।