alt

সাময়িকী

ইকরাম কবীর নিজেই নিজের গল্পের প্রেরণা

শ্যামল নাথ

: বৃহস্পতিবার, ১৪ অক্টোবর ২০২১

সাহিত্যের সর্বকনিষ্ঠ সন্তানের নাম ‘ছোটগল্প’। যদিও রূপ, রীতি ও ভাষার নির্মিতিতে ছোটগল্পও একটা বিশিষ্ট মহিমা অর্জন করেছে। স্বভাবতই ছোটগল্প সম্পর্কে সাহিত্য-পাঠকের কৌতূহলের অন্ত নেই। এই অন্তহীনতা শুরু হয়েছে মানুষের ইতিহাস শুরুর দিন থেকেই। যা এই উপমহাদেশের ছোটগল্পে এসে আখ্যায়িকা ও কথা- দু’ভাবে রূপান্তরিত হয়েছে।

ইকরাম কবীরের গল্পগ্রন্থ ‘মেয়েটিকে বাঁচানো গেল না’ পড়ে যেন এক মোহাবিষ্টতার মধ্যে দিয়ে সময়টা কেটে গেল। একদিকে গল্পে বিস্তর বর্ণনা তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা মনে করিয়ে দেয় আবার রূপকের আশ্রয় হেনরি জেমসের কথা স্মরণ করায়।

সেক্ষেত্রে আশা-আকাক্সক্ষা-ব্যর্থতা ও যন্ত্রণার বহুকৌণিক সত্যই মূলত লেখকের অবলম্বিত সাহিত্য রূপে স্থান পেয়েছে। এ-ক্ষেত্রে লেখক জীবনকে কীভাবে দেখেন এবং উপভোগ করেন সেটাই প্রধান বিবেচ্য। অভিন্ন উপকরণ নিয়ে একাধিক

লেখক সাহিত্য সৃষ্টি করতে পারেন। কিন্তু বিষয়চেতনা ও শিল্পরূপের ভিন্নতা প্রত্যেক লেখকের সৃষ্টিকেই স্বতন্ত্র করে

তোলে। সেক্ষেত্রে গল্পকার কতটা সতন্ত্র কি সতন্ত্র নয়- সেটা পাঠের মধ্যে দিয়ে অনুরণিত হয়। বোঝা যায়, ইংরেজি সাহিত্যের প্রতি তার অধিক আগ্রহ বিষয় বৈচিত্র্যের ক্ষেত্রে, গল্পের ধরন নির্মাণের ক্ষেত্রে এক বিশেষ সতন্ত্রতা হিসেবে ধরা দিয়েছে।

ইকরাম কবীরের লেখায় মানুষ, অতিপ্রাকৃত ঘটনা, সামাজিক জীবন, নারী-পুরুষের মনস্তাত্ত্বিক দিক উঠে এসেছে। তবে তিনি তার গল্পে নানান ধরনের এক্সিপেরিমেন্ট করেন বিভিন্ন লেখকের লেখা ও চিন্তার জায়গাকে কেন্দ্র করে। মানব সম্পর্ককে খতিয়ে দেখার কাজই করেছে গল্প। মানুষের চারিত্রিক স্খলনই এর প্রধানতম দিক। কিন্তু আধুনিক ছোটগল্প মূলত জোর দিয়েছে জীবন সংকটের ওপর।

কী করে ছোটগল্প ছোটগল্প হয়ে ওঠে- এ যেন একটি মানুষ কী করে মানুষ হয়ে ওঠে এরকম একটি ব্যাপার। সেই প্রশ্নের উত্তর আমাদের ভাষায় রবীন্দ্রনাথ খুঁজে দিয়েছেন। ছোটগল্প লিখতে এমন একটি ঘটনা লাগে যার ভেতর দিয়ে লেখকের কোনো একটি দৃষ্টিকোণ, পর্যবেক্ষণ, অনুভব বা ¯্রফে একটি মনোভাব আকার পায়। কখনো কখনো তা একটা পরিসমাপ্তি লাভ করে, কখনো এর অভিমুখ মুক্তই থেকে যায়। অর্থাৎ অসমাপ্তই রয়ে যায়।

ইকরাম কবীরের গল্পগুলিতে রয়েছে মনস্তাত্ত্বিক এক যাত্রা- যা অন্তরের অনেক গভীর থেকে সঞ্চারিত করার চেষ্টা করেছেন। সফল হয়েছেন কিনা তা মহাকালের দিকে ছেড়ে দেওয়া যেতে পারে। যদিও তিনি রবীন্দ্রনাথ কিংবা চেখভীয় ভাবনার বাইরে গিয়ে নিয়ত চেষ্টা চালান। সেক্ষেত্রে বলা যায় প্রচলিত সংজ্ঞাকে ভেঙেচুরে এক নতুন চিন্তার অতলে তলাতে চান গল্পকার। যেমন-‘মশা’ নামক ছোটগল্পটি একটি ব্যতিক্রমী গল্প। কিংবা ‘মেয়েটিকে বাঁচানো গেল না’ ছোটগল্পটি জীবনের পাওয়া না পাওয়ার কথা স্মরণ করায়। বারবার বলে ওঠে আসলে জীবনের মানে কী?

উত্তর একেকজনের কাছে একেক রকম।

গল্পের নাম ও বিষয় বৈচিত্র্য নির্বাচনে গল্পকার ভিন্নতার মধ্যে দিয়ে যেতে চেয়েছেন। বলা যেতে পারে পেরেছেনও। তখন ‘হাসান পাগলের মুক্তিযুদ্ধ’, খোদার চাউনি, লাল ওড়না এবং অত্যাচার গল্পগুলি ভাবায়। তাই বলা যায় ইকরাম কবীর নিজেই নিজের গল্পের প্রেরণা।

মেয়েটিকে বাঁচানো গেল না : ইকরাম কবীর ॥ প্রকাশক : রচয়িতা, উত্তরা, ঢাকা ॥ প্রচ্ছদ ও অলংকরণ : সিলভিয়া পেলিসেরোর চিত্রকর্ম অবলম্বনে ॥ দাম : ২৫০ টাকা।

ছবি

ওবায়েদ আকাশের বাছাই ৩২ কবিতা

ছবি

‘অঞ্জলি লহ মোর সঙ্গীতে’

ছবি

স্মৃতির অতল তলে

ছবি

দেহাবশেষ

ছবি

যাদুবাস্তবতা ও ইলিয়াসের যোগাযোগ

ছবি

বাংলার স্বাধীনতা আমার কবিতা

ছবি

মিহির মুসাকীর কবিতা

ছবি

শুশ্রƒষার আশ্রয়ঘর

ছবি

সময়োত্তরের কবি

ছবি

নাট্যকার অভিনেতা পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ৭৪

ছবি

মহত্ত্বম অনুভবে রবিউল হুসাইন

‘লাল গহনা’ উপন্যাসে বিষয়ের গভীরতা

ছবি

‘শৃঙ্খল মুক্তির জন্য কবিতা’

ছবি

স্মৃতির অতল তলে

ছবি

মোহিত কামাল

ছবি

আশরাফ আহমদের কবিতা

ছবি

‘আমাদের সাহিত্যের আন্তর্জাতিকীকরণে আমাদেরই আগ্রহ নেই’

ছবি

ছোটগল্পের অনন্যস্বর হাসান আজিজুল হক

‘দীপান্বিত গুরুকুল’

ছবি

নাসির আহমেদের কবিতা

ছবি

শেষ থেকে শুরু

সাময়িকী কবিতা

ছবি

স্মৃতির অতল তলে

ছবি

রবীন্দ্রবোধন

ছবি

বাঙালির ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি হয়ে ওঠার দীর্ঘ সংগ্রাম

ছবি

হাফিজ রশিদ খানের নির্বাচিত কবিতা আদিবাসীপর্ব

ছবি

আনন্দধাম

ছবি

কান্নার কুসুমে চিত্রিত ‘ধূসরযাত্রা’

সাময়িকী কবিতা

ছবি

ফারুক মাহমুদের কবিতা

ছবি

পল্লীকবি জসীম উদ্দীন ও তাঁর অমর সৃষ্টি ‘আসমানী’

ছবি

‘অঞ্জলি লহ মোর সঙ্গীতে’

ছবি

পরিবেশ-সাহিত্যের নিরলস কলমযোদ্ধা

ছবি

আব্দুলরাজাক গুনরাহর সাহিত্যচিন্তা

ছবি

অমিতাভ ঘোষের ‘গান আইল্যান্ড’

ছবি

‘অঞ্জলি লহ মোর সঙ্গীতে’

tab

সাময়িকী

ইকরাম কবীর নিজেই নিজের গল্পের প্রেরণা

শ্যামল নাথ

বৃহস্পতিবার, ১৪ অক্টোবর ২০২১

সাহিত্যের সর্বকনিষ্ঠ সন্তানের নাম ‘ছোটগল্প’। যদিও রূপ, রীতি ও ভাষার নির্মিতিতে ছোটগল্পও একটা বিশিষ্ট মহিমা অর্জন করেছে। স্বভাবতই ছোটগল্প সম্পর্কে সাহিত্য-পাঠকের কৌতূহলের অন্ত নেই। এই অন্তহীনতা শুরু হয়েছে মানুষের ইতিহাস শুরুর দিন থেকেই। যা এই উপমহাদেশের ছোটগল্পে এসে আখ্যায়িকা ও কথা- দু’ভাবে রূপান্তরিত হয়েছে।

ইকরাম কবীরের গল্পগ্রন্থ ‘মেয়েটিকে বাঁচানো গেল না’ পড়ে যেন এক মোহাবিষ্টতার মধ্যে দিয়ে সময়টা কেটে গেল। একদিকে গল্পে বিস্তর বর্ণনা তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা মনে করিয়ে দেয় আবার রূপকের আশ্রয় হেনরি জেমসের কথা স্মরণ করায়।

সেক্ষেত্রে আশা-আকাক্সক্ষা-ব্যর্থতা ও যন্ত্রণার বহুকৌণিক সত্যই মূলত লেখকের অবলম্বিত সাহিত্য রূপে স্থান পেয়েছে। এ-ক্ষেত্রে লেখক জীবনকে কীভাবে দেখেন এবং উপভোগ করেন সেটাই প্রধান বিবেচ্য। অভিন্ন উপকরণ নিয়ে একাধিক

লেখক সাহিত্য সৃষ্টি করতে পারেন। কিন্তু বিষয়চেতনা ও শিল্পরূপের ভিন্নতা প্রত্যেক লেখকের সৃষ্টিকেই স্বতন্ত্র করে

তোলে। সেক্ষেত্রে গল্পকার কতটা সতন্ত্র কি সতন্ত্র নয়- সেটা পাঠের মধ্যে দিয়ে অনুরণিত হয়। বোঝা যায়, ইংরেজি সাহিত্যের প্রতি তার অধিক আগ্রহ বিষয় বৈচিত্র্যের ক্ষেত্রে, গল্পের ধরন নির্মাণের ক্ষেত্রে এক বিশেষ সতন্ত্রতা হিসেবে ধরা দিয়েছে।

ইকরাম কবীরের লেখায় মানুষ, অতিপ্রাকৃত ঘটনা, সামাজিক জীবন, নারী-পুরুষের মনস্তাত্ত্বিক দিক উঠে এসেছে। তবে তিনি তার গল্পে নানান ধরনের এক্সিপেরিমেন্ট করেন বিভিন্ন লেখকের লেখা ও চিন্তার জায়গাকে কেন্দ্র করে। মানব সম্পর্ককে খতিয়ে দেখার কাজই করেছে গল্প। মানুষের চারিত্রিক স্খলনই এর প্রধানতম দিক। কিন্তু আধুনিক ছোটগল্প মূলত জোর দিয়েছে জীবন সংকটের ওপর।

কী করে ছোটগল্প ছোটগল্প হয়ে ওঠে- এ যেন একটি মানুষ কী করে মানুষ হয়ে ওঠে এরকম একটি ব্যাপার। সেই প্রশ্নের উত্তর আমাদের ভাষায় রবীন্দ্রনাথ খুঁজে দিয়েছেন। ছোটগল্প লিখতে এমন একটি ঘটনা লাগে যার ভেতর দিয়ে লেখকের কোনো একটি দৃষ্টিকোণ, পর্যবেক্ষণ, অনুভব বা ¯্রফে একটি মনোভাব আকার পায়। কখনো কখনো তা একটা পরিসমাপ্তি লাভ করে, কখনো এর অভিমুখ মুক্তই থেকে যায়। অর্থাৎ অসমাপ্তই রয়ে যায়।

ইকরাম কবীরের গল্পগুলিতে রয়েছে মনস্তাত্ত্বিক এক যাত্রা- যা অন্তরের অনেক গভীর থেকে সঞ্চারিত করার চেষ্টা করেছেন। সফল হয়েছেন কিনা তা মহাকালের দিকে ছেড়ে দেওয়া যেতে পারে। যদিও তিনি রবীন্দ্রনাথ কিংবা চেখভীয় ভাবনার বাইরে গিয়ে নিয়ত চেষ্টা চালান। সেক্ষেত্রে বলা যায় প্রচলিত সংজ্ঞাকে ভেঙেচুরে এক নতুন চিন্তার অতলে তলাতে চান গল্পকার। যেমন-‘মশা’ নামক ছোটগল্পটি একটি ব্যতিক্রমী গল্প। কিংবা ‘মেয়েটিকে বাঁচানো গেল না’ ছোটগল্পটি জীবনের পাওয়া না পাওয়ার কথা স্মরণ করায়। বারবার বলে ওঠে আসলে জীবনের মানে কী?

উত্তর একেকজনের কাছে একেক রকম।

গল্পের নাম ও বিষয় বৈচিত্র্য নির্বাচনে গল্পকার ভিন্নতার মধ্যে দিয়ে যেতে চেয়েছেন। বলা যেতে পারে পেরেছেনও। তখন ‘হাসান পাগলের মুক্তিযুদ্ধ’, খোদার চাউনি, লাল ওড়না এবং অত্যাচার গল্পগুলি ভাবায়। তাই বলা যায় ইকরাম কবীর নিজেই নিজের গল্পের প্রেরণা।

মেয়েটিকে বাঁচানো গেল না : ইকরাম কবীর ॥ প্রকাশক : রচয়িতা, উত্তরা, ঢাকা ॥ প্রচ্ছদ ও অলংকরণ : সিলভিয়া পেলিসেরোর চিত্রকর্ম অবলম্বনে ॥ দাম : ২৫০ টাকা।

back to top