শিবালয়ের যমুনায় শুরু হয়েছে তীব্র ভাঙন। ভাঙনের মুখে পড়েছে সরকারি মুজিব কেল্লা ও আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ শতাধিক বাড়ি-ঘর। বিগত বছরে যমুনা নদীর তীব্র ভাঙনে চরাঞ্চলসহ নদী তীরবর্তী এলাকার বেশ কয়েকটি গ্রামের শতাধিক পরিবার জমি-জমা, ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। নদীতে পানি কমা এবং বাড়ার সময় এ নদী ভাঙনের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় প্রতিবছরই নদী ভাঙন দেখা দেয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত স্থায়ীভাবে নদী ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় কোনো ব্যাবস্থা গ্রহণ না করার ফলে প্রতিবছরই নদী ভাঙনের শিকার হন এসব অঞ্চলের সাধারণ প্রান্তিক লোকজন। এমতাবস্থায় নদী ভাঙন রোধে নদীর পাড় দিয়ে স্থায়ীভাবে বেড়িবাঁধ নির্মাণ জরুরি হয়ে পড়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
গত কয়েকদিন যাবত চরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকা ঘুরে সংস্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিবালয় উপজেলার কানাইদিয়া ও চর শিবালয় গ্রাম বিগত দিনের নদী ভাঙনে নদীর মাঝে বিলীন হয়ে গেছে। একইসঙ্গে বিলীন হয়েছে আশ্রয়ণের প্রায় দুইশত আধাপাকা ঘর। এছাড়াও আলোকদিয়া, মধ্যনগর, ত্রিশুন্ডি, মালুচি, চর মধ্যনগর, আশ্রয়ণ হাট, চর বৈষ্টমি ও চর শিবালয়, অন্বয়পুর, দাশকান্দি, এলাচিপুর, এবং মান্দ্রখোলা, নয়াকান্দির কয়েকশ’ পরিবার নদী ভাঙনের কবলে পরে তাদের ভিটে-মাটি হারিয়েছেন। এরা বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে নতুন করে বসতি স্থাপন করেছেন। ভুক্তভোগীদের অনেকেই জমিজমা হারিয়ে রাস্তার ধারে বা অন্যের জমিতে বসতি স্থাপন এবং দিনমজুরি করে পরিবার-পরিজন নিয়ে কোনো রকমে সংসার পরিচালনা করছেন। তাদের জীবন-যাপন অতিবাহিত হচ্ছে অতি কষ্টে।
এছাড়াও নদী ভাঙনের কারণে চরম হুমকির মুখে পড়েছে আলোকদিয়ার মুজিব কেল্লা ও আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ শতাধিক স্থাপনা। এছাড়াও আরিচা ঘাট সংলগ্ন দক্ষিণ শিবালয়, অন্বয়পুর, এলাচিপুর ও আনুলিয়ার কয়েকশ’ পরিবার। বিগত বর্ষায় ওই গ্রামের নদীর পাড় এলাকার বেশ কিছু অংশ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে নদী ভাঙন রোধে ভুক্তভোগী গ্রামবাসী এবং ৩ নং শিবালয় মডেল ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে মানিকগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্যর সঙ্গে দেখা করে ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তার কাছে লিখিত আবেদন করেছেন। সংসদ সদস্য এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে ইতোমধ্যেই নদী তীরবর্তী এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলছেন তার নিজস্ব অর্থায়নে।
সরেজমিনে নদী ভাঙন কবলিত আলোকদিয়া, মধ্যনগর ও ত্রিশুন্ডিসহ বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে দেখা গেছে, মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় উপজেলার উল্লেখিত গ্রামের কয়েকশ’ পরিবার নদী ভাঙনে তাদের ভিটেবাড়ি হারিয়ে পার্শ্ববর্তী এলাকায় টংঘর করে আশ্রয় নিয়েছেন। এছাড়া মধ্যনগর এলকার রুস্তম হাওলাদার হাইস্কুল, একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি কমিউনিটি ক্লিনিক নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এদিকে উপজেলার দক্ষিণ শিবালয়, এলাচিপুর, নিহালপুর, ঝড়িয়ারবাগ, অন্বয়পুর এলাকার নদী পাড়ের বাড়ি-ঘর এবং ফসলি জমি বিগত বর্ষা থেকেই তীব্র নদী ভাঙনে হুমকির মুখে রয়েছে। গত বর্ষায় এসব গ্রামের নদীর পাড় এলাকায় বিশাল পাড়ালের (খাড়া ঢাল) সৃষ্টি হয়ে ভয়াবহ অবস্থায় রয়েছে।
ভাঙনকবলিত এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুস্ক মৌসুমে নদীর পার এলাকায় অবৈধ ড্রেজার দিয়ে মাটি কাটা, নদীর মাঝে কাটার বসিয়ে অবৈধভাবে বালু কাটা এবং ভাঙন কবলিত এলাকার অদুরে পশ্চিমে ও উত্তরে নদীর মাঝে চর পরা এবং বর্ষার সময় পানির ¯্রােত নদী পার এলাকা দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় ভাঙনের এ তীব্রতা বেড়ে যায়। ইতোমধ্যে স্থানীয় অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আরিচাঘাট থেকে নদীর পার দিয়ে দক্ষিণ শিবালয়ের রাস্তাটির অর্ধেক অংশ ইতোমধ্যেই নদী গর্ভে চলে গেছে। একইসঙ্গে পাকা কবরসহ অনেক স্থাপনাই নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
যমুনার পাড়ে অবস্থিত দক্ষিণ শিবালয় জামে মসজিদ, আরিচার পিসিপোল কারখানা, কাশাদহ সেচ প্রকল্পের পানির পাম্প হাউজ মারাত্মক হুমকির মুখে রয়েছে। অতিদ্রুততার সঙ্গে ভাঙন রোধ করা না হলে এসব স্থাপনা যে কোনো সময় নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। যার মধ্যে সরকারের কয়েকশ’ কোটি টাকার পোল কারখানাও রয়েছে। নদীর পাড় এলাকা দীর্ঘ দিন যাবত প্রতি বছরই বর্ষায় এবং শুষ্ক মৌসুমে সীমিত আকারে ভাঙনের শিকার হয়। বর্ষায় পানি বাড়ার সময় এবং শুষ্ক মৌসুমে পানি কমার সময় যেভাবে নদী ভাঙন শুরু হয় তা বিগত ৫০ বছরেও দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন নদী ভাঙনের শিকার আমির চান, লোকমান, ইউনুস মাতব্বর, সন্তোষ মোল্লা, দেলোয়ার হোসেন মোল্লা, হারেজ মোল্লা, লোকমান, জানু মোল্লা, মোতালেব ও মঞ্জু মেম্বারসহ শতাধিক গ্রামবাসী। বর্ষার সময় নদী ভাঙনের কারণে এ এলাকার লোকজন এখন চরম আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করছেন। এসব ভাঙন কবলিত নদী পাড় এলাকায় নদী শাসন করে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করলে হয়তো নদী ভাঙন রোধ করা সম্ভব হবে। তা না হলে পূর্ব পুরুষের ভিটাবাড়ি, জায়গা জমি সব নদীতে বিলীন হয়ে যাবে বলে জানালেন ভিটে হারা আমির চান মোল্লা। তিনি আরও বললেন, এমন হলে অবশেষে গৃহহীন হয়ে রাস্তায় আশ্রয় নিয়ে বসবাস করতে হবে। এমতাবস্থায় জাফরগঞ্জ হতে আরিচা ঘাট হয়ে পাটুরিয়া ঘাট পর্যন্ত নদী ভাঙন রোধে জরুরি ভিত্তিতে বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও নদী শাসনের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় অধিবাসীরা। নদী ভাঙন রোধে ভাঙন কবলিত এলাকাবাসী এবং শিবালয় ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে মাননীয় সংসদ সদস্য মানিকগঞ্জ-১ এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর বরাবর আবেদন করা হয়েছে।
দক্ষিণ শিবালয় গ্রামের বাসিন্দা ও তেওতা একাডেমির প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক বলেন, নদীর মাঝে চর পড়ার কারণে পানির ¯্রােত পাড় এলাকা দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় আমাদের এ গ্রামটিতে নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু বাড়ি-ঘর, পাকা কবর ও আবাদি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন রোধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করা না হলে দক্ষিণ শিবালয় গ্রাম ও এর আশপাশের এলাকার গুরুত্বপূর্ণ অনেক স্থাপনাগুলো নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। মানিকগঞ্জ-১ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্যও কাছে আমাদের আকুল আবেদন অতি দ্রুত এই ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। স্থানীয় কৃষক আবুল হোসেন বলেন, আমার ৬৫ বছর বয়স। এই বয়সে ছোট আকারে অনেক ভাঙন দেখেছি। কিন্তু এবারের মতো ভয়ংকর ভাঙন বিগত ৫০ বছরেও দেখিনি। তিনি ভাঙনের বিষয়ে আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন।
নদী ভাঙনরোধে আপনাদের করণীয় বিষয়ক প্রশ্নে শিবালয় উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুর রহীম খান বলেছেন, ভাঙনরোধে আমরা মাননীয় এমপি মহোদয়ের সঙ্গে ভাঙনকবলিত এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলে একযোগে কাজ করছি।
মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বলেছেন, আমরা শিবালয়ের বিভিন্ন স্থানে জিও ব্যাগ দিয়ে সাময়িকভাবে ভাঙনরোধ করেছি। স্থায়ীভাবে ভাঙনরোধে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এ বিষয়ে আমাদের ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
কুড়িগ্রামে নদী ভাঙনে বিলিন ৪৫৮টি পরিবার
জেলা বার্তা পরিবেশক জানান, কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি কমলেও কমছে না মানুষের দুর্ভোগ। ব্রহ্মপূত্র নদ ও দুধকুমার নদী এখনও বিপদসীমার উপরে অবস্থান করছে। ফলে এসব এলাকার মানুষ এখনও পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। হাঁটু বা কোমড় পানিতে তাদেরকে হাঁটাচলা করতে হচ্ছে। জ¦ালানি সংকটের কারণে একবেলা রান্না করে দুবেলা খেয়ে দিন পার করছে তারা। এদিকে দীর্ঘদিন চারণভূমি তলিয়ে যাওয়ায় জমানো খড়ও শেষ হতে চলেছে। ফলে গোখাদ্যের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। সেই সঙ্গে পানি কমে যাওয়ায় তীব্র ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে।
জেলার উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের চরগুজিমারীর জওহরলাল মুচির স্ত্রী স্বপ্নারানী জানান, ‘স্বামী হার্টের অসুখে ভুগছে। দুই ছেলে ঢাকায় থাকে। একজন রিকশা চালায় অন্যজন মুচির কাজ করে। যা টাকা পায় তাদের চলে না। যতটুকু পারে সহযোগিতা করে। আজ একজনের কাছ থেকে আধা কেজি চাল ও কাঠালের বিচি নিয়েছি। সেটা দিয়ে দুপুরটা পার করে রাতের জন্য কিছু রেখেছি। এখন পর্যন্ত কেউ ত্রাণ সহায়তা করেনি।’
উলিপুরের হাতিয়া ও সাহেবের আলগা এবং চিলমারী রানীগঞ্জ ইউনিয়নসহ তিন ইউনিয়নের মানুষ বসবাস করেন হকের চরে। এখানে গত ১৫ দিন ধরে ভাঙনের তা-ব লীলায় ১১০টি বাড়ি নদীগর্ভে চলে গেছে। এরমধ্যে গুচ্ছগ্রামের ৬০ এবং বাইরের ৫০ ঘর। এছাড়া হকের চর সংলগ্ন চর বাগুয়া ও চর গুজিমারীতেও ভাঙন চলছে।
হকের চরের হাজেরা বেগম (৪৭) জানান, ‘একদিনের ভাঙনে ৩৫টি বাড়ি বিলিন হয়ে গেছে। আমরা গুচ্ছগ্রাম থেকে গুজিমারী গেছি কিন্তু সেখানে পানি ওঠায় আবার ভাঙন কবলিত জায়গায় চলে এসেছি। আমাদের কেনো জমিজমা নেই। এখন যে কোথায় উঠি ঠিক করতে পারি নাই।’
সাহেবের আলগা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোজ্জাফর হোসেন বলেন, চলতি বন্যায় তার ইউনিয়নে ১৯৭ পরিবার নদী ভাঙনের শিকার হয়ে নিঃস্ব হয়েছে। এরমধ্যে হকের চরে ৯০ পরিবার, দক্ষিণ নামাজের চরে ৪৭ পরিবার ও দৈ খাওয়ার চরে ৬০ পরিবার। তিনি আরও জানান, এই ইউনিয়নে প্রায় ৬ হাজার ৫০০ পরিবার এরমধ্যে ৫০০ পরিবার স্বচ্ছল। বাদবাকি সবাই কম বেশি গরিব। প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ পানিবন্দী। এখন পর্যন্ত ত্রাণ পেয়েছেন ২টন চাল আর ১০০ প্যাকেট শুকনা খাবার। এরমধ্যে বিভাগীয় কমিশনার এসে বিতরণ করেছেন ২৯০ কেজি চাল আর উপজেলা পরিষদ থেকে ১৫০ প্যাকেট শুকনা খাবার। ফলে অনেকের কাছে ত্রাণ পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।
হকের চরের আমজাদ আলীর তিন সন্তান শাহীন (১৭), আয়শা (১৫) ও সুমন (১২) আর স্ত্রীকে নিয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পথে হাঁটছেন। আপাতত আতিœয়র বাড়িতে আশ্রয় নিবেন। এই হকের চরের মানুষ বন্যায় একদিন শুকনা খাবার ছাড়া আর কোনো ত্রাণ তাদেও ভাগ্যে জোটেনি।
শাহাবুদ্দিন (৭০), হাজেরা বেওয়া (৬৫) কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, ২০১০ সাল থেকে এই চরে থাকি। ২০১৯ সালে সরকার গুচ্ছ গ্রামে ঘর দেয়। এই ঘর সব নদী খায়া নিলো। এলা মাথাগোজার ঠাই নাই। যাচ্ছেন দক্ষিণে চিলমারী উপজেলার রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের এক চরে। তাদের দাবি সরকার যেন দ্রুততম সময়ে নতুন আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেদেন।
হাতিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল হোসেন বলেন, হকের চরটিকে ব্রক্ষপূত্র ভাঙছে ইউ আকারে। গোটা চরটি পর্যায়ক্রমে নদীর পেটে যাচ্ছে। এই চরের অবস্থান হাতিয়া ইউনিয়ন, নয়ারহাট, সাহেবের আলগা ও রাণীগঞ্জের সীমানা এলাকা। এই চরে এই চার ইউনিয়নের লোক বিভিন্ন সময় নদী ভাঙনের শিকার হয়ে আশ্রয় নেয়। ফলে কোনো ইউনিয়ন পরিষদ এদের খুব একটা খোজ খবর রাখে না। ফলে এরা বরাবরই অবহেলিত থাকছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জেলা প্রশাসকের দপ্তরের কন্ট্রোল রুমের বরাতে জানান, জেলার ৯ উপজেলা ৫৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা বন্যা আক্রান্ত হয়েছে। প্লাবিত হয়েছে ৬৬২ দশমিক ৭৫ বর্গ কি. মিটার। বন্যা আক্রান্ত পরিবারের সংখ্যা ৩৭ হাজার ১০০টি। নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়েছে ৪৫৮টি পরিবার। ফসলের ক্ষতি হয়েছে ৭ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমির। বন্যার্তদের সেবায় ৮৩টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। জেলার ৯ উপজেলায় ১৩০০ মে. টন চাল ও ৩৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া দেয়া হয়েছে শুকনা খাবার বরাদ্দ। এখন পর্যন্ত ৫৮৭ মে. টন চাল, ৩২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা এবং ২৪ হাজার ৩৬০ প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। বিতরণ কার্যক্রম চলমান আছে। বন্যাা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় মানুষজন ঘরে ফিরতে শুরু করেছে।
এছাড়া বন্যার্তদের মাঝে ৫ লাখ ১১ হাজার ৬৫০টি পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, ২০ হাজার ১২৬টি জেরিকেন সরবরাহ, নলকূপ মেরামত করা হয়েছে ৫৫টি, নতুন নলকূপ স্থাপন ৬টি এবং ল্যাট্রিন স্থাপন ৬টি করা হয়। এছাড়া হাইজিন কিটস বক্স ৬৫টি বন্যার্তদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।
রোববার, ১৪ জুলাই ২০২৪
শিবালয়ের যমুনায় শুরু হয়েছে তীব্র ভাঙন। ভাঙনের মুখে পড়েছে সরকারি মুজিব কেল্লা ও আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ শতাধিক বাড়ি-ঘর। বিগত বছরে যমুনা নদীর তীব্র ভাঙনে চরাঞ্চলসহ নদী তীরবর্তী এলাকার বেশ কয়েকটি গ্রামের শতাধিক পরিবার জমি-জমা, ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। নদীতে পানি কমা এবং বাড়ার সময় এ নদী ভাঙনের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় প্রতিবছরই নদী ভাঙন দেখা দেয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত স্থায়ীভাবে নদী ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় কোনো ব্যাবস্থা গ্রহণ না করার ফলে প্রতিবছরই নদী ভাঙনের শিকার হন এসব অঞ্চলের সাধারণ প্রান্তিক লোকজন। এমতাবস্থায় নদী ভাঙন রোধে নদীর পাড় দিয়ে স্থায়ীভাবে বেড়িবাঁধ নির্মাণ জরুরি হয়ে পড়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
গত কয়েকদিন যাবত চরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকা ঘুরে সংস্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিবালয় উপজেলার কানাইদিয়া ও চর শিবালয় গ্রাম বিগত দিনের নদী ভাঙনে নদীর মাঝে বিলীন হয়ে গেছে। একইসঙ্গে বিলীন হয়েছে আশ্রয়ণের প্রায় দুইশত আধাপাকা ঘর। এছাড়াও আলোকদিয়া, মধ্যনগর, ত্রিশুন্ডি, মালুচি, চর মধ্যনগর, আশ্রয়ণ হাট, চর বৈষ্টমি ও চর শিবালয়, অন্বয়পুর, দাশকান্দি, এলাচিপুর, এবং মান্দ্রখোলা, নয়াকান্দির কয়েকশ’ পরিবার নদী ভাঙনের কবলে পরে তাদের ভিটে-মাটি হারিয়েছেন। এরা বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে নতুন করে বসতি স্থাপন করেছেন। ভুক্তভোগীদের অনেকেই জমিজমা হারিয়ে রাস্তার ধারে বা অন্যের জমিতে বসতি স্থাপন এবং দিনমজুরি করে পরিবার-পরিজন নিয়ে কোনো রকমে সংসার পরিচালনা করছেন। তাদের জীবন-যাপন অতিবাহিত হচ্ছে অতি কষ্টে।
এছাড়াও নদী ভাঙনের কারণে চরম হুমকির মুখে পড়েছে আলোকদিয়ার মুজিব কেল্লা ও আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ শতাধিক স্থাপনা। এছাড়াও আরিচা ঘাট সংলগ্ন দক্ষিণ শিবালয়, অন্বয়পুর, এলাচিপুর ও আনুলিয়ার কয়েকশ’ পরিবার। বিগত বর্ষায় ওই গ্রামের নদীর পাড় এলাকার বেশ কিছু অংশ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে নদী ভাঙন রোধে ভুক্তভোগী গ্রামবাসী এবং ৩ নং শিবালয় মডেল ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে মানিকগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্যর সঙ্গে দেখা করে ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তার কাছে লিখিত আবেদন করেছেন। সংসদ সদস্য এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে ইতোমধ্যেই নদী তীরবর্তী এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলছেন তার নিজস্ব অর্থায়নে।
সরেজমিনে নদী ভাঙন কবলিত আলোকদিয়া, মধ্যনগর ও ত্রিশুন্ডিসহ বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে দেখা গেছে, মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় উপজেলার উল্লেখিত গ্রামের কয়েকশ’ পরিবার নদী ভাঙনে তাদের ভিটেবাড়ি হারিয়ে পার্শ্ববর্তী এলাকায় টংঘর করে আশ্রয় নিয়েছেন। এছাড়া মধ্যনগর এলকার রুস্তম হাওলাদার হাইস্কুল, একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি কমিউনিটি ক্লিনিক নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এদিকে উপজেলার দক্ষিণ শিবালয়, এলাচিপুর, নিহালপুর, ঝড়িয়ারবাগ, অন্বয়পুর এলাকার নদী পাড়ের বাড়ি-ঘর এবং ফসলি জমি বিগত বর্ষা থেকেই তীব্র নদী ভাঙনে হুমকির মুখে রয়েছে। গত বর্ষায় এসব গ্রামের নদীর পাড় এলাকায় বিশাল পাড়ালের (খাড়া ঢাল) সৃষ্টি হয়ে ভয়াবহ অবস্থায় রয়েছে।
ভাঙনকবলিত এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুস্ক মৌসুমে নদীর পার এলাকায় অবৈধ ড্রেজার দিয়ে মাটি কাটা, নদীর মাঝে কাটার বসিয়ে অবৈধভাবে বালু কাটা এবং ভাঙন কবলিত এলাকার অদুরে পশ্চিমে ও উত্তরে নদীর মাঝে চর পরা এবং বর্ষার সময় পানির ¯্রােত নদী পার এলাকা দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় ভাঙনের এ তীব্রতা বেড়ে যায়। ইতোমধ্যে স্থানীয় অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আরিচাঘাট থেকে নদীর পার দিয়ে দক্ষিণ শিবালয়ের রাস্তাটির অর্ধেক অংশ ইতোমধ্যেই নদী গর্ভে চলে গেছে। একইসঙ্গে পাকা কবরসহ অনেক স্থাপনাই নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
যমুনার পাড়ে অবস্থিত দক্ষিণ শিবালয় জামে মসজিদ, আরিচার পিসিপোল কারখানা, কাশাদহ সেচ প্রকল্পের পানির পাম্প হাউজ মারাত্মক হুমকির মুখে রয়েছে। অতিদ্রুততার সঙ্গে ভাঙন রোধ করা না হলে এসব স্থাপনা যে কোনো সময় নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। যার মধ্যে সরকারের কয়েকশ’ কোটি টাকার পোল কারখানাও রয়েছে। নদীর পাড় এলাকা দীর্ঘ দিন যাবত প্রতি বছরই বর্ষায় এবং শুষ্ক মৌসুমে সীমিত আকারে ভাঙনের শিকার হয়। বর্ষায় পানি বাড়ার সময় এবং শুষ্ক মৌসুমে পানি কমার সময় যেভাবে নদী ভাঙন শুরু হয় তা বিগত ৫০ বছরেও দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন নদী ভাঙনের শিকার আমির চান, লোকমান, ইউনুস মাতব্বর, সন্তোষ মোল্লা, দেলোয়ার হোসেন মোল্লা, হারেজ মোল্লা, লোকমান, জানু মোল্লা, মোতালেব ও মঞ্জু মেম্বারসহ শতাধিক গ্রামবাসী। বর্ষার সময় নদী ভাঙনের কারণে এ এলাকার লোকজন এখন চরম আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করছেন। এসব ভাঙন কবলিত নদী পাড় এলাকায় নদী শাসন করে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করলে হয়তো নদী ভাঙন রোধ করা সম্ভব হবে। তা না হলে পূর্ব পুরুষের ভিটাবাড়ি, জায়গা জমি সব নদীতে বিলীন হয়ে যাবে বলে জানালেন ভিটে হারা আমির চান মোল্লা। তিনি আরও বললেন, এমন হলে অবশেষে গৃহহীন হয়ে রাস্তায় আশ্রয় নিয়ে বসবাস করতে হবে। এমতাবস্থায় জাফরগঞ্জ হতে আরিচা ঘাট হয়ে পাটুরিয়া ঘাট পর্যন্ত নদী ভাঙন রোধে জরুরি ভিত্তিতে বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও নদী শাসনের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় অধিবাসীরা। নদী ভাঙন রোধে ভাঙন কবলিত এলাকাবাসী এবং শিবালয় ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে মাননীয় সংসদ সদস্য মানিকগঞ্জ-১ এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর বরাবর আবেদন করা হয়েছে।
দক্ষিণ শিবালয় গ্রামের বাসিন্দা ও তেওতা একাডেমির প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক বলেন, নদীর মাঝে চর পড়ার কারণে পানির ¯্রােত পাড় এলাকা দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় আমাদের এ গ্রামটিতে নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু বাড়ি-ঘর, পাকা কবর ও আবাদি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন রোধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করা না হলে দক্ষিণ শিবালয় গ্রাম ও এর আশপাশের এলাকার গুরুত্বপূর্ণ অনেক স্থাপনাগুলো নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। মানিকগঞ্জ-১ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্যও কাছে আমাদের আকুল আবেদন অতি দ্রুত এই ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। স্থানীয় কৃষক আবুল হোসেন বলেন, আমার ৬৫ বছর বয়স। এই বয়সে ছোট আকারে অনেক ভাঙন দেখেছি। কিন্তু এবারের মতো ভয়ংকর ভাঙন বিগত ৫০ বছরেও দেখিনি। তিনি ভাঙনের বিষয়ে আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন।
নদী ভাঙনরোধে আপনাদের করণীয় বিষয়ক প্রশ্নে শিবালয় উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুর রহীম খান বলেছেন, ভাঙনরোধে আমরা মাননীয় এমপি মহোদয়ের সঙ্গে ভাঙনকবলিত এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলে একযোগে কাজ করছি।
মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বলেছেন, আমরা শিবালয়ের বিভিন্ন স্থানে জিও ব্যাগ দিয়ে সাময়িকভাবে ভাঙনরোধ করেছি। স্থায়ীভাবে ভাঙনরোধে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এ বিষয়ে আমাদের ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
কুড়িগ্রামে নদী ভাঙনে বিলিন ৪৫৮টি পরিবার
জেলা বার্তা পরিবেশক জানান, কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি কমলেও কমছে না মানুষের দুর্ভোগ। ব্রহ্মপূত্র নদ ও দুধকুমার নদী এখনও বিপদসীমার উপরে অবস্থান করছে। ফলে এসব এলাকার মানুষ এখনও পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। হাঁটু বা কোমড় পানিতে তাদেরকে হাঁটাচলা করতে হচ্ছে। জ¦ালানি সংকটের কারণে একবেলা রান্না করে দুবেলা খেয়ে দিন পার করছে তারা। এদিকে দীর্ঘদিন চারণভূমি তলিয়ে যাওয়ায় জমানো খড়ও শেষ হতে চলেছে। ফলে গোখাদ্যের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। সেই সঙ্গে পানি কমে যাওয়ায় তীব্র ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে।
জেলার উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের চরগুজিমারীর জওহরলাল মুচির স্ত্রী স্বপ্নারানী জানান, ‘স্বামী হার্টের অসুখে ভুগছে। দুই ছেলে ঢাকায় থাকে। একজন রিকশা চালায় অন্যজন মুচির কাজ করে। যা টাকা পায় তাদের চলে না। যতটুকু পারে সহযোগিতা করে। আজ একজনের কাছ থেকে আধা কেজি চাল ও কাঠালের বিচি নিয়েছি। সেটা দিয়ে দুপুরটা পার করে রাতের জন্য কিছু রেখেছি। এখন পর্যন্ত কেউ ত্রাণ সহায়তা করেনি।’
উলিপুরের হাতিয়া ও সাহেবের আলগা এবং চিলমারী রানীগঞ্জ ইউনিয়নসহ তিন ইউনিয়নের মানুষ বসবাস করেন হকের চরে। এখানে গত ১৫ দিন ধরে ভাঙনের তা-ব লীলায় ১১০টি বাড়ি নদীগর্ভে চলে গেছে। এরমধ্যে গুচ্ছগ্রামের ৬০ এবং বাইরের ৫০ ঘর। এছাড়া হকের চর সংলগ্ন চর বাগুয়া ও চর গুজিমারীতেও ভাঙন চলছে।
হকের চরের হাজেরা বেগম (৪৭) জানান, ‘একদিনের ভাঙনে ৩৫টি বাড়ি বিলিন হয়ে গেছে। আমরা গুচ্ছগ্রাম থেকে গুজিমারী গেছি কিন্তু সেখানে পানি ওঠায় আবার ভাঙন কবলিত জায়গায় চলে এসেছি। আমাদের কেনো জমিজমা নেই। এখন যে কোথায় উঠি ঠিক করতে পারি নাই।’
সাহেবের আলগা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোজ্জাফর হোসেন বলেন, চলতি বন্যায় তার ইউনিয়নে ১৯৭ পরিবার নদী ভাঙনের শিকার হয়ে নিঃস্ব হয়েছে। এরমধ্যে হকের চরে ৯০ পরিবার, দক্ষিণ নামাজের চরে ৪৭ পরিবার ও দৈ খাওয়ার চরে ৬০ পরিবার। তিনি আরও জানান, এই ইউনিয়নে প্রায় ৬ হাজার ৫০০ পরিবার এরমধ্যে ৫০০ পরিবার স্বচ্ছল। বাদবাকি সবাই কম বেশি গরিব। প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ পানিবন্দী। এখন পর্যন্ত ত্রাণ পেয়েছেন ২টন চাল আর ১০০ প্যাকেট শুকনা খাবার। এরমধ্যে বিভাগীয় কমিশনার এসে বিতরণ করেছেন ২৯০ কেজি চাল আর উপজেলা পরিষদ থেকে ১৫০ প্যাকেট শুকনা খাবার। ফলে অনেকের কাছে ত্রাণ পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।
হকের চরের আমজাদ আলীর তিন সন্তান শাহীন (১৭), আয়শা (১৫) ও সুমন (১২) আর স্ত্রীকে নিয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পথে হাঁটছেন। আপাতত আতিœয়র বাড়িতে আশ্রয় নিবেন। এই হকের চরের মানুষ বন্যায় একদিন শুকনা খাবার ছাড়া আর কোনো ত্রাণ তাদেও ভাগ্যে জোটেনি।
শাহাবুদ্দিন (৭০), হাজেরা বেওয়া (৬৫) কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, ২০১০ সাল থেকে এই চরে থাকি। ২০১৯ সালে সরকার গুচ্ছ গ্রামে ঘর দেয়। এই ঘর সব নদী খায়া নিলো। এলা মাথাগোজার ঠাই নাই। যাচ্ছেন দক্ষিণে চিলমারী উপজেলার রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের এক চরে। তাদের দাবি সরকার যেন দ্রুততম সময়ে নতুন আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেদেন।
হাতিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল হোসেন বলেন, হকের চরটিকে ব্রক্ষপূত্র ভাঙছে ইউ আকারে। গোটা চরটি পর্যায়ক্রমে নদীর পেটে যাচ্ছে। এই চরের অবস্থান হাতিয়া ইউনিয়ন, নয়ারহাট, সাহেবের আলগা ও রাণীগঞ্জের সীমানা এলাকা। এই চরে এই চার ইউনিয়নের লোক বিভিন্ন সময় নদী ভাঙনের শিকার হয়ে আশ্রয় নেয়। ফলে কোনো ইউনিয়ন পরিষদ এদের খুব একটা খোজ খবর রাখে না। ফলে এরা বরাবরই অবহেলিত থাকছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জেলা প্রশাসকের দপ্তরের কন্ট্রোল রুমের বরাতে জানান, জেলার ৯ উপজেলা ৫৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা বন্যা আক্রান্ত হয়েছে। প্লাবিত হয়েছে ৬৬২ দশমিক ৭৫ বর্গ কি. মিটার। বন্যা আক্রান্ত পরিবারের সংখ্যা ৩৭ হাজার ১০০টি। নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়েছে ৪৫৮টি পরিবার। ফসলের ক্ষতি হয়েছে ৭ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমির। বন্যার্তদের সেবায় ৮৩টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। জেলার ৯ উপজেলায় ১৩০০ মে. টন চাল ও ৩৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া দেয়া হয়েছে শুকনা খাবার বরাদ্দ। এখন পর্যন্ত ৫৮৭ মে. টন চাল, ৩২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা এবং ২৪ হাজার ৩৬০ প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। বিতরণ কার্যক্রম চলমান আছে। বন্যাা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় মানুষজন ঘরে ফিরতে শুরু করেছে।
এছাড়া বন্যার্তদের মাঝে ৫ লাখ ১১ হাজার ৬৫০টি পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, ২০ হাজার ১২৬টি জেরিকেন সরবরাহ, নলকূপ মেরামত করা হয়েছে ৫৫টি, নতুন নলকূপ স্থাপন ৬টি এবং ল্যাট্রিন স্থাপন ৬টি করা হয়। এছাড়া হাইজিন কিটস বক্স ৬৫টি বন্যার্তদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।