alt

শরীয়তপুরে নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধের কাজ বন্ধ

প্রতিনিধি, শরীয়তপুর : মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৫

শরীয়তপুর : ভাঙনকবলিত এলাকা -সংবাদ

শরীয়তপুরের জাজিরায় পদ্মা নদীর তীর রক্ষা বাঁধের প্রায় দুই কিলোমিটার অংশ নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নির্মাণাধীন ওই প্রকল্পের প্রায় ৩৫ কোটি টাকার বালু ভর্তি জিওব্যাগ তলিয়ে গেছে। ভাঙনে ওই এলাকার ২৪ টি বসতঘর নদী গর্ভে বিলীন। গৃহহীন হয়েছে অন্তত ৪৫০টি পরিবার।

জাজিরার পূর্বনাওডোব ইউনিয়নের জিরোপয়েন্ট এলাকা থেকে জাজিরা ইউনিয়নের পাথালিয়াকান্দি পর্যন্ত ৮ দশমিক ৬৭ কিলোমিটার নদীর তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এর মধ্যে জিরোপয়েন্ট এলাকা থেকে কাথারিয়াকান্দি পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার অংশ ভাঙনের কবলে পড়েছে। ওই স্থানে নদী ভেঙে ১০ মিটার থেকে ১১০ মিটার পর্যন্ত ভেতরে প্রবেশ করেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, ধীরগতিতে ও দেরিতে কাজ শুরু করার কারণে ভাঙনের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, পদ্মা নদী শরীয়তপুরের জাজিরার নাওডোবা এলাকা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মেঘনায় মিশেছে। এখানেই নির্মাণ করা হয়েছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। তার ভাটিতে পূর্ব নাওডোবার জিরোপয়েন্ট থেকে বিলাশপুর ইউনিয়ন পর্যন্ত তীব্র ভাঙন দেখা দেয়। নদীর পাড় রক্ষায় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ২০২৩ সালে ৮৬০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়। এতে পূর্ব নাওডোবা, পালেরচর, বড়কান্দি, জাজিরা ও বিলাশপুর ইউনিয়নে ৮ দশমিক ৬৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ৩১টি প্যাকেজে ভাগ করে বিভিন্ন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হয়। ২০২৩ সালের ১৭ মে মাঠপর্যায়ে কাজ শুরু হয়। এর আওতায় বালু ভর্তি জিওব্যাগ ফেলা ও পাথরের ব্লক বসানোর কাজ করা হয়। বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার পর ভাঙন বেড়ে যায়। পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা সংলগ্ন রক্ষা বাঁধের এক কিলোমিটার অংশ নদীতে বিলীন হয়। গত এক মাস ধরে পূর্ব নাওডোবা থেকে পালেরচরের কাথুরিয়াকান্দি পর্যন্ত ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করে। নির্মাণাধীন বাঁধের প্রায় দুই কিলোমিটার নদীতে বিলীন বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ওই এলাকায় ১০টি প্যাকেজের আওতায় ১০টি প্রতিষ্ঠান কাজ করছিল। তারা মোট ৫ লাখ ২৪ হাজার জিওব্যাগ ফেলেছিল। কিন্তু ভাঙনের কারণে প্রায় সব ব্যাগ নদীতে ভেসে গেছে। এ বাবদ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলো ইতোমধ্যে প্রায় ৩৫ কোটি টাকার বিল উত্তোলন করেছে। পুরো প্রকল্প থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩১০ কোটি টাকা ঠিকাদাররা পেয়েছে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, জিরোপয়েন্ট থেকে পালেরচর বাজারে যাওয়া সড়কের দেড় কিলোমিটার নদীতে তলিয়ে গেছে। নদীর তীরে স্তূপ করে রাখা পাথরের ব্লকও অনেক স্থানে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। অনেকেই নদী তীরে থাকা তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিরাপদ দুরত্বে সরিয়ে নিয়েছেন। ওই এলাকায় বড় বড় নৌকায় করে জিও ব্যাক ক্যাম্পিংয়ের কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। প্রকল্পের যে প্যাকেজগুলোর কাজ নদীতে বিলীন বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারির শেষের দিকে একটি প্যাকেজের (জাজিরার জিরো পয়েন্ট এলাকার) কার্যাদেশ পায় খুলনা শিপইয়ার্ড। কার্যাদেশ পাওয়ার ৬ মাস পর গত জুলাইয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। দেরিতে কাজ শুরু হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে এই এলাকার তীব্র নদী ভাঙন রোধ করা সম্ভব হয়নি বলে অভিযোগ ক্ষতিগ্রস্তদের।

পৈলান মোল্যাকান্দি গ্রামের খলিল তালুকদার বলেন, আধা ঘন্টার ভাঙনে আমার ৫টি ঘর ও এক বিঘা জমি নদীতে চলে গেছে। এখন আমার কিছুই নেই। পথে পথে ঘুরি আর যার বাড়ি পাই সেখানেই রাত কাটায়। নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত শাহিন কাজীর বাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে। তিনি বলেন, যেটুকু জায়গা জমি বাকি আছে তা ভেঙে গেলে বেঁচে থাকার শেষ আশ্রয়টুকু থাকবে না। আমাদের আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর কবরও নদীতে তলিয়ে গেছে। একই গ্রামের আবু বকর আকনের বসতবাড়ি ও চার বিঘা ফসলি জমি পদ্মায় তলিয়ে গেছে। তিনি এখন আত্মীয়ের উঠানে অস্থায়ী ছাপড়ায় বসবাস করছেন। তার অভিযোগ, বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হওয়ার পর স্বস্তি পেয়েছিলাম। কিন্তু ধীরগতির কাজ আমাদের সর্বনাশ করেছে। ভাঙনে আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি। পালের চর ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ড সদস্য মুজিবুর রহমান মাদবর আক্ষেপ করে বলেন, শুষ্ক মৌসুমে কাজ করার কথা থাকলেও তারা কাজ করে বর্ষায় আগুন শুরু হলে। তার কারণে সঠিকভাবে জিও ব্যাক ডাম্পিং হয় না। তাছাড়া মাঝ নদীতে ডুবোচর থাকায় নদীর ডান তীর ঘেঁষে স্রোত প্রবাহিত হয়। তাই ভাঙ্গনের তীব্রতা এবছর অনেক বেশি। ভাঙ্গন শুরুর আগে জিও ব্যাক বাম্পিং করলে আমাদের এলাকা এমন ভাঙনের কবলে পড়তো না। ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রাইভেট লিমিটেড নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সাইট ইঞ্জিনীয়ার আফতালুন ইসলাম বলেন, প্রকল্প এলাকার ১১টি প্যাকেজ নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়েছে। আমাদের অনেক মালামাল ভেসে যাচ্ছে। ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে মালামাল গুলো সরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করছি। তিনি আরো বলেন, ভাঙন থেমে গেলে এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে নতুন করে নকশা করা হলে আবারো কাজ শুরু করা যাবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান জানান, নদীর তীর রক্ষা বাঁধ প্রকল্পের কিছু অংশ ভাঙনের কবলে পড়েছে। আমরা ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা জরিপ করছি। সার্ভের প্রতিবেদন অনুযায়ী ডিজাইন সংশোধন করে পুনরায় কাজ শুরু করা হবে। এতে ব্যয় কিছুটা বৃদ্ধি পেতে পারে।

ছবি

কাঁঠালিয়ায় বন্ধ ব্রিজের কাজ শেষ করার দাবিতে মানববন্ধন

ছবি

মির্জাগঞ্জে বস্তায় আদা চাষ করে তাক লাগালেন কৃষক

ছবি

দুমকিতে পল্লীসেবা সংঘের উদ্যোগে শাক- সবজির বীজ বিতরণ

গাজীপুরের সাবেক পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম খান বরখাস্ত

নভেম্বরে ঘূর্ণিঝড়ের আভাস, বৃষ্টি ৩-৬ দিন, কুয়াশা পড়তে পারে

ঠিকাদার লাপাত্তা, খুলনায় বন্ধ দুই উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ

ছবি

মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে টায়ারে আগুন দিতে গিয়ে ছাত্রদল নেতা দগ্ধ

ছবি

হাই কোর্টের রায়: বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসন বহাল

চিংড়িজোনের বহিরাগতদের চিংড়িপ্লট বাতিল করে স্থানীয় চাষিদের বরাদ্দের সুপারিশ

ছবি

চাটখিলে প্রতিবন্ধী শিশুদের উপবৃত্তি বিষয়ক সেমিনার

নবাবগঞ্জে বৃদ্ধের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

ছবি

ধামসা-মাদলের তালে বরেন্দ্র অঞ্চলে আদিবাসীদের সংস্কৃতির উৎসব

ছবি

দেবগ্রামে গ্রাম বাংলার বিলুপ্ত প্রায় ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলা

ছবি

জেলে নয়, ভিন্ন পেশার মানুষ পেলো বকনা বাছুর

ছবি

শেরপুরে প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প বিলীনের পথে

সন্ধা রাতেই হচ্ছে ডাকাতি

সীতাকুণ্ডে মানসিক ভারসাম্যহীন যুবককে পিটিয়ে হত্যা

শিবচরে বাবা নিহত, ছেলে আটক

সাঘাটায় জমি বেদখলে বাধা দেয়ায় প্রধান শিক্ষককে লাঞ্ছিত ও প্রাণনাশের হুমকি

ছবি

পদ্মার বিস্তীর্ণ চরজুড়ে চলছে অপারেশন ফার্স্ট লাইট

ছবি

নিখোঁজের ১৭ দিন পরও মাদ্রাসা ছাত্রের সন্ধান মেলেনি

ছবি

৫৯ বিজিবির অভিযানে ভারতীয় মোবাইল উদ্ধার

ছবি

পার্বতীপুরে ৩৩ হাজার ভোল্টেজের ১৭ কিলোমিটার বৈদ্যুতিক তার চুরি

ছবি

বাগাতিপাড়ায় মঞ্চস্থ হলো যাত্রাপালা গৌরি মালা, গ্রামজুড়ে উৎসবের আমেজ

ছবি

৫৬ কিলোমিটার মহাসড়কে ১৯টি অবৈধ বাজার

ছবি

‘বিএনপি ক্ষমতায় গেলে বাংলাদেশে থাকবে গণতন্ত্র মানবাধিকার ও ভোটাধিকার’

ছবি

রাজবাড়ীতে রাতের আঁধারে কেটে ফেলা হলো কৃষকের ৫০০ কলাগাছ

ছবি

খড়ের দামে কৃষক খুশি, বিপাকে খামারিরা

ছবি

চুয়াডাঙ্গা জুড়ে চলছে খেজুর রস সংগ্রহের প্রস্তুতি

মোহনগঞ্জে নাশকতা মামলায় সাবেক পৌর কাউন্সিলর গ্রেপ্তার

ছবি

ভালুকায় বাস চাপায় স্বামী-স্ত্রী নিহত

ছবি

গোবিন্দগঞ্জে মাগুড়া-তুলসীপাড়া সড়কের বেহাল দশা, দুর্ভোগে মানুষ

ছবি

মহাদেবপুরে আদালতের আদেশ অমান্য করে স্থাপনা নির্মাণের চেষ্টা

ছবি

কিশোরগঞ্জের মাটে মাঠে আমন ধান পাকতে শুরু করেছে

ছবি

‘চট্টগ্রাম বন্দরকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র চলছে’

ছবি

ঝিকরগাছায় সড়ক দুর্ঘটনায় স্বামী নিহত, স্ত্রী আহত

tab

শরীয়তপুরে নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধের কাজ বন্ধ

প্রতিনিধি, শরীয়তপুর

শরীয়তপুর : ভাঙনকবলিত এলাকা -সংবাদ

মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৫

শরীয়তপুরের জাজিরায় পদ্মা নদীর তীর রক্ষা বাঁধের প্রায় দুই কিলোমিটার অংশ নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নির্মাণাধীন ওই প্রকল্পের প্রায় ৩৫ কোটি টাকার বালু ভর্তি জিওব্যাগ তলিয়ে গেছে। ভাঙনে ওই এলাকার ২৪ টি বসতঘর নদী গর্ভে বিলীন। গৃহহীন হয়েছে অন্তত ৪৫০টি পরিবার।

জাজিরার পূর্বনাওডোব ইউনিয়নের জিরোপয়েন্ট এলাকা থেকে জাজিরা ইউনিয়নের পাথালিয়াকান্দি পর্যন্ত ৮ দশমিক ৬৭ কিলোমিটার নদীর তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এর মধ্যে জিরোপয়েন্ট এলাকা থেকে কাথারিয়াকান্দি পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার অংশ ভাঙনের কবলে পড়েছে। ওই স্থানে নদী ভেঙে ১০ মিটার থেকে ১১০ মিটার পর্যন্ত ভেতরে প্রবেশ করেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, ধীরগতিতে ও দেরিতে কাজ শুরু করার কারণে ভাঙনের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, পদ্মা নদী শরীয়তপুরের জাজিরার নাওডোবা এলাকা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মেঘনায় মিশেছে। এখানেই নির্মাণ করা হয়েছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। তার ভাটিতে পূর্ব নাওডোবার জিরোপয়েন্ট থেকে বিলাশপুর ইউনিয়ন পর্যন্ত তীব্র ভাঙন দেখা দেয়। নদীর পাড় রক্ষায় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ২০২৩ সালে ৮৬০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়। এতে পূর্ব নাওডোবা, পালেরচর, বড়কান্দি, জাজিরা ও বিলাশপুর ইউনিয়নে ৮ দশমিক ৬৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ৩১টি প্যাকেজে ভাগ করে বিভিন্ন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হয়। ২০২৩ সালের ১৭ মে মাঠপর্যায়ে কাজ শুরু হয়। এর আওতায় বালু ভর্তি জিওব্যাগ ফেলা ও পাথরের ব্লক বসানোর কাজ করা হয়। বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার পর ভাঙন বেড়ে যায়। পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা সংলগ্ন রক্ষা বাঁধের এক কিলোমিটার অংশ নদীতে বিলীন হয়। গত এক মাস ধরে পূর্ব নাওডোবা থেকে পালেরচরের কাথুরিয়াকান্দি পর্যন্ত ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করে। নির্মাণাধীন বাঁধের প্রায় দুই কিলোমিটার নদীতে বিলীন বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ওই এলাকায় ১০টি প্যাকেজের আওতায় ১০টি প্রতিষ্ঠান কাজ করছিল। তারা মোট ৫ লাখ ২৪ হাজার জিওব্যাগ ফেলেছিল। কিন্তু ভাঙনের কারণে প্রায় সব ব্যাগ নদীতে ভেসে গেছে। এ বাবদ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলো ইতোমধ্যে প্রায় ৩৫ কোটি টাকার বিল উত্তোলন করেছে। পুরো প্রকল্প থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩১০ কোটি টাকা ঠিকাদাররা পেয়েছে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, জিরোপয়েন্ট থেকে পালেরচর বাজারে যাওয়া সড়কের দেড় কিলোমিটার নদীতে তলিয়ে গেছে। নদীর তীরে স্তূপ করে রাখা পাথরের ব্লকও অনেক স্থানে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। অনেকেই নদী তীরে থাকা তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিরাপদ দুরত্বে সরিয়ে নিয়েছেন। ওই এলাকায় বড় বড় নৌকায় করে জিও ব্যাক ক্যাম্পিংয়ের কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। প্রকল্পের যে প্যাকেজগুলোর কাজ নদীতে বিলীন বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারির শেষের দিকে একটি প্যাকেজের (জাজিরার জিরো পয়েন্ট এলাকার) কার্যাদেশ পায় খুলনা শিপইয়ার্ড। কার্যাদেশ পাওয়ার ৬ মাস পর গত জুলাইয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। দেরিতে কাজ শুরু হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে এই এলাকার তীব্র নদী ভাঙন রোধ করা সম্ভব হয়নি বলে অভিযোগ ক্ষতিগ্রস্তদের।

পৈলান মোল্যাকান্দি গ্রামের খলিল তালুকদার বলেন, আধা ঘন্টার ভাঙনে আমার ৫টি ঘর ও এক বিঘা জমি নদীতে চলে গেছে। এখন আমার কিছুই নেই। পথে পথে ঘুরি আর যার বাড়ি পাই সেখানেই রাত কাটায়। নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত শাহিন কাজীর বাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে। তিনি বলেন, যেটুকু জায়গা জমি বাকি আছে তা ভেঙে গেলে বেঁচে থাকার শেষ আশ্রয়টুকু থাকবে না। আমাদের আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর কবরও নদীতে তলিয়ে গেছে। একই গ্রামের আবু বকর আকনের বসতবাড়ি ও চার বিঘা ফসলি জমি পদ্মায় তলিয়ে গেছে। তিনি এখন আত্মীয়ের উঠানে অস্থায়ী ছাপড়ায় বসবাস করছেন। তার অভিযোগ, বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হওয়ার পর স্বস্তি পেয়েছিলাম। কিন্তু ধীরগতির কাজ আমাদের সর্বনাশ করেছে। ভাঙনে আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি। পালের চর ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ড সদস্য মুজিবুর রহমান মাদবর আক্ষেপ করে বলেন, শুষ্ক মৌসুমে কাজ করার কথা থাকলেও তারা কাজ করে বর্ষায় আগুন শুরু হলে। তার কারণে সঠিকভাবে জিও ব্যাক ডাম্পিং হয় না। তাছাড়া মাঝ নদীতে ডুবোচর থাকায় নদীর ডান তীর ঘেঁষে স্রোত প্রবাহিত হয়। তাই ভাঙ্গনের তীব্রতা এবছর অনেক বেশি। ভাঙ্গন শুরুর আগে জিও ব্যাক বাম্পিং করলে আমাদের এলাকা এমন ভাঙনের কবলে পড়তো না। ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রাইভেট লিমিটেড নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সাইট ইঞ্জিনীয়ার আফতালুন ইসলাম বলেন, প্রকল্প এলাকার ১১টি প্যাকেজ নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়েছে। আমাদের অনেক মালামাল ভেসে যাচ্ছে। ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে মালামাল গুলো সরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করছি। তিনি আরো বলেন, ভাঙন থেমে গেলে এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে নতুন করে নকশা করা হলে আবারো কাজ শুরু করা যাবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান জানান, নদীর তীর রক্ষা বাঁধ প্রকল্পের কিছু অংশ ভাঙনের কবলে পড়েছে। আমরা ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা জরিপ করছি। সার্ভের প্রতিবেদন অনুযায়ী ডিজাইন সংশোধন করে পুনরায় কাজ শুরু করা হবে। এতে ব্যয় কিছুটা বৃদ্ধি পেতে পারে।

back to top