চট্টগ্রামে এবার ডাল নিয়ে শুরু হয়েছে কারসাজি। ফলে গত সপ্তাহের তুলনায় সব ধরনের ডালের দাম কেজিতে বেড়ে গেছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। চাহিদার তুলনায় ডাল সংকটের কারণে দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা।
তবে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশের ভোগ্যপণের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে পর্যাপ্ত ডালের মজুদ রয়েছে। কোনো ঘাটতি নেই। পাইকারি ব্যবসায়ীরা শুধু শুধু সংকটের কথা বলে ডালের দাম বাড়িয়ে অতিরিক্ত মুনাফা লুটছে।
চট্টগ্রাম মহানগরীর বহদ্দারহাট যমুনা স্টোরের ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকালে ডাল কিনতে গিয়ে খাতুনগঞ্জের পাইকারি আড়তগুলোতে হাজার হাজার ডালের বস্তার মজুদ দেখেছি। গুদামভর্তি ডাল রেখে ব্যবসায়ীরা সংকটের কথা বলছেন। আর বাড়িয়ে নিচ্ছেন ডালের দাম।
তিনি বলেন, খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে আজ সকালে মোটা মসুর ডাল প্রতিকেজি বিক্রয় করা হচ্ছে ৯৫-৯৮ টাকায়। অথচ এক সপ্তাহ আগে মোটা মসুর ডালের দাম কেজিতে ১০-১২ টাকা কম ছিল। এছাড়া চিকন মসুরের ডালের দামও ১৫-১৭ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে ১২৫-১২৭ টাকায়। খেসারি ডাল কেজিতে ৮-১০ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে ৬৮-৭০ টাকায় এবং মটর ডাল কেজিতে বিক্রি করা হচ্ছে ৫৮ টাকায়।
সে হিসেবে নগরীর সবকটি খুচরা বাজারের মোটা মসুর ডাল কেজিপ্রতি বিক্রয় করা হচ্ছে ১১০ টাকায়। যা এক সপ্তাহ আগে ১০০ টাকায় বিক্রয় করা হয়েছিল। এছাড়া চিকন মসুর ডাল বিক্রি করা হচ্ছে ১৪০ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি করা হয়েছে ১৩০ টাকায়। খেসারি ডাল বিক্রি করা হচ্ছে ৭৮-৭৯ টাকায় এবং মটর ডাল কেজিপ্রতি বিক্রি করা হচ্ছে ৬৮ টাকায়। পরিবহন খরচ বাদ দিয়ে এই দামে বিক্রয় করলে খুচরায় প্রতিকেজি ডালে লাভ থাকে ৫-৬ টাকা।
খাতুনগঞ্জের ডাল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান শাহজালাল এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী শেখ ফরিদ উদ্দিন বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে ডালের বুকিং দর বেড়ে গেছে। এছাড়া ডলার সংকটের কারণে অনেক ডাল ব্যবসায়ী এলসি (ঋণপত্র) খুলতে পারেননি। ফলে আমদানি কম হওয়ায় বাজারে ডালের ঘাটতি রয়েছে। সে হিসেবে ডালের দাম একটু বেড়েছে। তারপরও আন্তর্জাতিক বাজার হিসেবে দেশে এখনো ডালের বাজার সহনশীল রয়েছে।
ডালের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, আমদানি কম হওয়ায় বাজারে ডালের ঘাটতি রয়েছে। পরিবহন ভাড়া দ্বিগুণ হয়েছে। আর চাহিদা বাড়লে, বাজার জিনিসের দাম বাড়ে, এটিই বাজারের ধর্ম। এখানে কৃত্রিম সংকট তৈরি বা কারসাজির কিছু নেই।
তিনি বলেন, বাজারে যখন পণ্য বেশি আসে তখন ব্যবসায়ীরা কার আগে কে পণ্য বিক্রি করবেন সেই প্রতিযোগিতায় নেমে যান। কারণ ভোগ্যপণ্যের বাজার কখনো স্থিতিশীল থাকে না। সাম্প্রতিক সময়ে ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণেও ব্যবসায়ীদের আমদানিতে অতিরিক্ত অর্থ গুণতে হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এমনও হয় এলসি হয়েছে এক দরে কিন্তু পণ্য খালাস পর্যায়ে যখন কোনো কারণে ডলারের দাম বেড়ে যায়। ব্যবসায়ীদের তখন বাড়তি ডলারের মূল্য পরিশোধ করে পণ্য খালাস করতে হয়। আমদানি ব্যয় বাড়লে সেটি পাইকারি ও খুচরা উভয় বাজারে প্রভাব পড়বে।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের তথ্যমতে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে তিন ধরনের ডাল আমদানি হয়েছে ৭ লাখ ৬০ হাজার টন। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে মসুর ডাল আমদানি হয়েছে ৩ লাখ ৫১ হাজার টন। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮৬ হাজার টন বেশি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপপরিচালক মোহাম্মদ আতিক উল্লাহ বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে বর্তমানে ডালের মোট চাহিদা ২৫ লাখ মেট্রিক টন হলেও দেশে বছরে উৎপাদন হয় মাত্র নয় লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ মুগ, ৩০ শতাংশ খেসারি, ১৫ শতাংশ মসুর ও ৫০ শতাংশ ফেলন ডাল উৎপাদিত হয় বাংলাদেশের বৃহত্তর ফরিদপুর ও বরিশাল অঞ্চলে।
ফলে প্রতিবছর ১৫ থেকে ১৬ লাখ মেট্রিক টন ডাল আমদানি করতে হয়। এর মধ্যে তানজানিয়া, মোজাম্বিক, মিয়ানমার থেকে দেশে মুগ ডাল আমদানি করা হয়। নেপাল, চীন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, তুরস্কসহ বেশ কয়েকটি দেশ থেকে আমদানি করা হয় মসুর ডাল।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু বলেন, চাল, ডালসহ নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়ছেন মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তরা। বর্তমানে বাজারে এমন কোনো পণ্য নেই যে দাম বাড়েনি। একটার পর একটা দাম বেড়েই যাচ্ছে।
তিনি বলেন, এখন দেখা যাচ্ছে বাজারে ডালের দামও বেড়ে যাচ্ছে। ছয় মাস আগে কম দামে আমদানি করা ডাল বুকিং দর বাড়ার অজুহাত তুলে দাম বাড়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। বাজারে ডালের সংকট নেই। কিন্তু ব্যবসায়ীরা সংকটের কথা বলে পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। বাজার মনিটরিং না থাকার সুযোগে ব্যবসায়ীরা ইচ্ছে মতো দাম বাড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
মঙ্গলবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩
চট্টগ্রামে এবার ডাল নিয়ে শুরু হয়েছে কারসাজি। ফলে গত সপ্তাহের তুলনায় সব ধরনের ডালের দাম কেজিতে বেড়ে গেছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। চাহিদার তুলনায় ডাল সংকটের কারণে দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা।
তবে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশের ভোগ্যপণের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে পর্যাপ্ত ডালের মজুদ রয়েছে। কোনো ঘাটতি নেই। পাইকারি ব্যবসায়ীরা শুধু শুধু সংকটের কথা বলে ডালের দাম বাড়িয়ে অতিরিক্ত মুনাফা লুটছে।
চট্টগ্রাম মহানগরীর বহদ্দারহাট যমুনা স্টোরের ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকালে ডাল কিনতে গিয়ে খাতুনগঞ্জের পাইকারি আড়তগুলোতে হাজার হাজার ডালের বস্তার মজুদ দেখেছি। গুদামভর্তি ডাল রেখে ব্যবসায়ীরা সংকটের কথা বলছেন। আর বাড়িয়ে নিচ্ছেন ডালের দাম।
তিনি বলেন, খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে আজ সকালে মোটা মসুর ডাল প্রতিকেজি বিক্রয় করা হচ্ছে ৯৫-৯৮ টাকায়। অথচ এক সপ্তাহ আগে মোটা মসুর ডালের দাম কেজিতে ১০-১২ টাকা কম ছিল। এছাড়া চিকন মসুরের ডালের দামও ১৫-১৭ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে ১২৫-১২৭ টাকায়। খেসারি ডাল কেজিতে ৮-১০ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে ৬৮-৭০ টাকায় এবং মটর ডাল কেজিতে বিক্রি করা হচ্ছে ৫৮ টাকায়।
সে হিসেবে নগরীর সবকটি খুচরা বাজারের মোটা মসুর ডাল কেজিপ্রতি বিক্রয় করা হচ্ছে ১১০ টাকায়। যা এক সপ্তাহ আগে ১০০ টাকায় বিক্রয় করা হয়েছিল। এছাড়া চিকন মসুর ডাল বিক্রি করা হচ্ছে ১৪০ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি করা হয়েছে ১৩০ টাকায়। খেসারি ডাল বিক্রি করা হচ্ছে ৭৮-৭৯ টাকায় এবং মটর ডাল কেজিপ্রতি বিক্রি করা হচ্ছে ৬৮ টাকায়। পরিবহন খরচ বাদ দিয়ে এই দামে বিক্রয় করলে খুচরায় প্রতিকেজি ডালে লাভ থাকে ৫-৬ টাকা।
খাতুনগঞ্জের ডাল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান শাহজালাল এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী শেখ ফরিদ উদ্দিন বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে ডালের বুকিং দর বেড়ে গেছে। এছাড়া ডলার সংকটের কারণে অনেক ডাল ব্যবসায়ী এলসি (ঋণপত্র) খুলতে পারেননি। ফলে আমদানি কম হওয়ায় বাজারে ডালের ঘাটতি রয়েছে। সে হিসেবে ডালের দাম একটু বেড়েছে। তারপরও আন্তর্জাতিক বাজার হিসেবে দেশে এখনো ডালের বাজার সহনশীল রয়েছে।
ডালের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, আমদানি কম হওয়ায় বাজারে ডালের ঘাটতি রয়েছে। পরিবহন ভাড়া দ্বিগুণ হয়েছে। আর চাহিদা বাড়লে, বাজার জিনিসের দাম বাড়ে, এটিই বাজারের ধর্ম। এখানে কৃত্রিম সংকট তৈরি বা কারসাজির কিছু নেই।
তিনি বলেন, বাজারে যখন পণ্য বেশি আসে তখন ব্যবসায়ীরা কার আগে কে পণ্য বিক্রি করবেন সেই প্রতিযোগিতায় নেমে যান। কারণ ভোগ্যপণ্যের বাজার কখনো স্থিতিশীল থাকে না। সাম্প্রতিক সময়ে ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণেও ব্যবসায়ীদের আমদানিতে অতিরিক্ত অর্থ গুণতে হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এমনও হয় এলসি হয়েছে এক দরে কিন্তু পণ্য খালাস পর্যায়ে যখন কোনো কারণে ডলারের দাম বেড়ে যায়। ব্যবসায়ীদের তখন বাড়তি ডলারের মূল্য পরিশোধ করে পণ্য খালাস করতে হয়। আমদানি ব্যয় বাড়লে সেটি পাইকারি ও খুচরা উভয় বাজারে প্রভাব পড়বে।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের তথ্যমতে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে তিন ধরনের ডাল আমদানি হয়েছে ৭ লাখ ৬০ হাজার টন। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে মসুর ডাল আমদানি হয়েছে ৩ লাখ ৫১ হাজার টন। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮৬ হাজার টন বেশি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপপরিচালক মোহাম্মদ আতিক উল্লাহ বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে বর্তমানে ডালের মোট চাহিদা ২৫ লাখ মেট্রিক টন হলেও দেশে বছরে উৎপাদন হয় মাত্র নয় লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ মুগ, ৩০ শতাংশ খেসারি, ১৫ শতাংশ মসুর ও ৫০ শতাংশ ফেলন ডাল উৎপাদিত হয় বাংলাদেশের বৃহত্তর ফরিদপুর ও বরিশাল অঞ্চলে।
ফলে প্রতিবছর ১৫ থেকে ১৬ লাখ মেট্রিক টন ডাল আমদানি করতে হয়। এর মধ্যে তানজানিয়া, মোজাম্বিক, মিয়ানমার থেকে দেশে মুগ ডাল আমদানি করা হয়। নেপাল, চীন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, তুরস্কসহ বেশ কয়েকটি দেশ থেকে আমদানি করা হয় মসুর ডাল।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু বলেন, চাল, ডালসহ নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়ছেন মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তরা। বর্তমানে বাজারে এমন কোনো পণ্য নেই যে দাম বাড়েনি। একটার পর একটা দাম বেড়েই যাচ্ছে।
তিনি বলেন, এখন দেখা যাচ্ছে বাজারে ডালের দামও বেড়ে যাচ্ছে। ছয় মাস আগে কম দামে আমদানি করা ডাল বুকিং দর বাড়ার অজুহাত তুলে দাম বাড়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। বাজারে ডালের সংকট নেই। কিন্তু ব্যবসায়ীরা সংকটের কথা বলে পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। বাজার মনিটরিং না থাকার সুযোগে ব্যবসায়ীরা ইচ্ছে মতো দাম বাড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।