রাজশাহী : কৃষি পণ্যবাহী ট্রাকে আগুন দিলো দুর্বৃত্তরা -সংবাদ
হরতাল, অবরোধে আগুনের ভয়ে বেরোতে চাইছে না পণ্যবাহী গাড়িগুলো। এর মধ্যেও যারা বেরোচ্ছে, তারাও পণ্য পরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া চাইছে। বাজার পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় পণ্য কিনতে চাইছে না পাইকারি ব্যবসায়ীরাও। ফলে বিপাকে দ্রুত পচনশীল মাছ, সবজি চাষিরা।
রাজশাহীতে সবজি অর্থকরী ফসল। সবজির উৎপাদনও বেশি। এই জেলার গ্রামগঞ্জের হাটবাজার থেকে সবজি কিনে তা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু গত ২৮ তারিখ থেকে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে সবজি উৎপাদন, বিপণন ও বাজারজাতকরণে সংশ্লিষ্ট সবাই উদ্বিগ্ন।
শুধু সবজি নয়, রুই, কাতল, মৃগেল, সিলভার কার্প, পাঙাশ ও তেলাপিয়াসহ সব প্রজাতির মাছের দামও গত এক মাসে কমে গেছে। পরিবহনের সংকট তো আছেই, বেড়ে গেছে মাছের খাবারের দামও।
স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন রাজশাহী থেকে ঢাকা এবং সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আড়াইশ’ ট্রাক মাছ সরবরাহ করা হয়। কিন্তু বর্তমানে হরতাল ও অবরোধের কারণে ৫০ ট্রাকের বেশি মাছ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানা গেছে সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে।
সড়কে চলাচল ঝুঁকির কারণে ট্রাকভাড়া বৃদ্ধি ও মাছের দাম কমার কারণে প্রতি ট্রাক ৫০ হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে চাষিদের। ফলে রাজশাহীর অধিকাংশ চাষিই মাছ ধরা বন্ধ করে দিয়েছেন।
এরপর থেকে মাছের বাজারে ধস নেমেছে সারাদেশেই। ২০ দিন আগে রাজশাহীর রুই মাছ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে কেজিপ্রতি বিক্রি হয়েছে ৩০০ টাকায়। দুই কেজি ওজনের রুইয়ের কেজি ছিল ৩৪০-৩৫০ টাকা।
অথচ এখন দুই কেজি ওজনের রুই কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ২৭০-২৮০ টাকায়।
কমেছে সিলভার কার্প মাছের দামও। দেড় কেজি ওজনের এ মাছের দাম ছিল ২১০-২২০ টাকা। এখন ১৩০-১৫০ টাকা কেজি। একই সময়ে কাতলা মাছের দামও কমেছে। ৩ কেজি ওজনের প্রতিকেজি কাতলের দাম ছিল ৩২০-৩৩০ টাকা। এখন সেটি বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ২৭০-২৮০ টাকায়। একইভাবে পাঙাশ ও তেলাপিয়াসহ অন্য কার্পজাতীয় মাছের দামও বাজারে অন্য সময়ের তুলনায় কম।
পবা উপজেলার দাদপুর এলাকার জাতীয় পদকপ্রাপ্ত মাছচাষি মশিউর রহমান। তার প্রায় ছয়শ’ বিঘার পুকুর রয়েছে। তিনি বলেন, মাছের বাজার খারাপ। এ কারণে মাছ ধরা বন্ধ করে দিয়েছি। কিন্তু মাছের খাবার দেয়াতো বন্ধ নেই। আমি একটি কোম্পানির রেডি ফিড ব্যবহার করি। ২০ দিন আগেও ওই কোম্পানির ২৫ কেজি বস্তার মাছের খাবারের দাম ছিল ১,১৫২ টাকা। এখন বস্তাপ্রতি দাম ৮৩ টাকা বেড়ে হয়েছে ১,২৩৫ টাকা। তিনি বলেন, প্রতিদিন আমার দুইশ’ বস্তা মাছের খাবার প্রয়োজন হয়। প্রতি বস্তায় দাম ৮৩ টাকা বেশি হওয়ায় এখন প্রতিদিন ১৬ হাজার ৬০০ টাকা খাবারের জন্য বেশি ব্যয় হচ্ছে। ফলে প্রতি মাসে চার লাখ ৯৮ হাজার টাকা শুধু খাবার বাবদ লোকসান গুনতে হচ্ছে। ফলে মাছ ধরা বন্ধ করে দিয়েছি। বাজারে মাছের দাম না বাড়লে আমার মতো অন্য চাষিরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
মোহনপুর উপজেলা সদরের মাছচাষি বাচ্চু মন্ডল বলেন, ২০ দিন আগেও রাজশাহী থেকে ঢাকার আবদুল্লাপুরের ভাড়া ছিল ১৪-১৫ হাজার টাকা। এখন সেটি ১৮-১৯ হাজার টাকা। যাত্রাবাড়ির ভাড়া ছিল ১৬ হাজার টাকা। এখন সেটি ১৯ হাজার টাকা। সিলেটের ভাড়া ছিল ২৮ হাজার টাকা। এখন সেটি ৩৫ হাজার টাকা। এছাড়া অন্যস্থানের ভাড়াও বেড়েছে। মালিকরা ট্রাক সড়কে নামাতে চাচ্ছেন না। ফলে বেশি টাকাতেই ট্রাক ভাড়া করতে বাধ্য হচ্ছেন মাছচাষিরা।
মহানগরীর উপকণ্ঠ খড়খড়ি এলাকার ট্রাক মালিক বেলাল হোসেন ও শাকিল আহমেদ বলেন, সারাদেশেই ট্রাকসহ বিভিন্ন পরিবহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে। ট্রাকচালক ও তাদের সহযোগীরা জীবন নিয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। এছাড়া ট্রাকে অগ্নিসংযোগের আশংকায় রয়েছেন মালিকরা। ফলে তারা সড়কে ট্রাক নামাতে চাচ্ছেন না। আর বিভিন্ন ঝুঁকির কারণে চালক ও তাদের সহযোগীরা পারিশ্রমিক বেশি চাচ্ছেন। এ কারণে আমরা ভাড়া বাড়াতে বাধ্য হয়েছি।
সার্বিক বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে মাছের দাম কম। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে খাবারের দামও বেড়েছে। এ কারণে অনেক চাষি মাছ ধরা বন্ধ রেখেছেন। আশা করছি এ সংকট থাকবে না। অচিরেই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে চাষিরা ভালো দামে মাছ বিক্রি করতে পারবেন।
প্রসঙ্গত, রাজশাহীর ৯টি উপজেলায় ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে পুকুরের সংখ্যা ৫০ হাজার ৭২০টি। এছাড়া ১১টি নদী, ৬৭টি বিল, ১৬০টি খালসহ অসংখ্য জলাভূমিতেও মাছ চাষ হয়। রাজশাহীতে বছরে ৮৭ হাজার ২৭০ টন মাছ উৎপাদন হয়।
এদিকে প্রতি বছর রাজশাহীতে পাঁচ লাখ মেট্রিক টনের বেশি সবজি উৎপাদন হয়। বিপুল পরিমাণে উৎপাদন হলেও সব সবজি খাবার উপযোগী করে রাখা সম্ভব হয় না। ফলে উৎপাদনের ২০ থেকে ২৫ শতাংশ সবজি নষ্ট হয়ে যায় শুধু সংরক্ষণের অভাবে। অন্যদিকে অবোরোধের কারণে লোকসান হচ্ছে প্রান্তিক পর্যায়ের চাষি ও ব্যবসায়ীদের।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় গত বছরের তুলনায় ১ হাজার ৭৫০ হেক্টর বেশি জমিতে সবজি চাষ হয়েছে। এ বছর (২০২৩-২৪) চলতি মৌসুমে ৫ হাজার ৬৪০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন সবজি চাষ হয়েছে। আর ২০২২-২৩ মৌসুমে সবজির চাষ হয়েছিল ৩ হাজার ৮৯০ হেক্টর জমিতে। ২০২২-২৩ মৌসুমে শীতের সবজির মধ্যে শিম চাষ হয়েছিল ২৩০ হেক্টর, পালংশাক ৪৪ হেক্টর, টমেটো ৩১ হেক্টর, ফুলকপি ২৭৫ হেক্টর, মুলা ৩২৮ হেক্টর জমিতে। আর ২০২৩-২৪ মৌসুমে ফুলকপি ৩৮৭ হেক্টর, টমেটো ৬৪ হেক্টর, মুলা ৪৩৫ হেক্টর, শিম ২৪১ হেক্টর, পালংশাক ৬৬ হেক্টর ও ধনেপাতা ৩৪ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে।
পবার কৃষক রজব আলী জানান তিনি সারা বছর বিভিন্ন সবজির চাষ করেন। বর্তমানে তার জমিতে ফুলকপি ও বাঁধাকপি রয়েছে। তিনি আশা করছেন ভালো ফলন পাবেন। রজব আলী বলেন, প্রথমে সব সবজির ভালো দাম পাওয়া যায়। পরে দাম কমে যায়। যেমন ঢেঁড়স, শুরুতে অন্য সবজির মতো ভালো দাম থাকে। মাঝে কমে যায় দাম। কিন্তু ঢেঁড়সের শেষ পর্যায়ে ভালো দাম পাওয়া যায়। কিন্তু এই আবরোধের কারনে অন্য জেলার পাইকাররাও সবজি ক্রয় করতে আসছে না।
গোদাগাড়ীর টমেটো চাষি হাবিবুর রহমান জানান, কিছুদিন পর জমি থেকে টমেটো তুলতে শুরু করবেন চাষিরা। এরপর হাটবাজারে বিক্রি শুরু হবে। প্রথম দিকে টমেটোর ভালো দাম পাওয়া যায়। তবে শেষের দিকে কেউ নিতে চায় না। টমেটোর চাহিদা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কিন্তু এই আবরোধের কারণে এখন বেচাবিক্রি কমে গেছে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, চাষিদের উৎপাদিত অনেক সবজি সরাসরি জমি থেকে ট্রাকযোগে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠিয়ে দেয়া হয়। তারপরও উৎপাদিত সবজির ২০ থেকে ২৫ শতাংশ নষ্ট হয় সংরক্ষণের অভাবে। আমরা চেষ্টা করছি রাজশাহীতে সবজির হিমাগারের জন্য। হিমাগার থাকলে এই সবজিগুলোও নষ্ট হবে না।
রাজশাহী : কৃষি পণ্যবাহী ট্রাকে আগুন দিলো দুর্বৃত্তরা -সংবাদ
মঙ্গলবার, ২১ নভেম্বর ২০২৩
হরতাল, অবরোধে আগুনের ভয়ে বেরোতে চাইছে না পণ্যবাহী গাড়িগুলো। এর মধ্যেও যারা বেরোচ্ছে, তারাও পণ্য পরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া চাইছে। বাজার পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় পণ্য কিনতে চাইছে না পাইকারি ব্যবসায়ীরাও। ফলে বিপাকে দ্রুত পচনশীল মাছ, সবজি চাষিরা।
রাজশাহীতে সবজি অর্থকরী ফসল। সবজির উৎপাদনও বেশি। এই জেলার গ্রামগঞ্জের হাটবাজার থেকে সবজি কিনে তা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু গত ২৮ তারিখ থেকে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে সবজি উৎপাদন, বিপণন ও বাজারজাতকরণে সংশ্লিষ্ট সবাই উদ্বিগ্ন।
শুধু সবজি নয়, রুই, কাতল, মৃগেল, সিলভার কার্প, পাঙাশ ও তেলাপিয়াসহ সব প্রজাতির মাছের দামও গত এক মাসে কমে গেছে। পরিবহনের সংকট তো আছেই, বেড়ে গেছে মাছের খাবারের দামও।
স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন রাজশাহী থেকে ঢাকা এবং সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আড়াইশ’ ট্রাক মাছ সরবরাহ করা হয়। কিন্তু বর্তমানে হরতাল ও অবরোধের কারণে ৫০ ট্রাকের বেশি মাছ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানা গেছে সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে।
সড়কে চলাচল ঝুঁকির কারণে ট্রাকভাড়া বৃদ্ধি ও মাছের দাম কমার কারণে প্রতি ট্রাক ৫০ হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে চাষিদের। ফলে রাজশাহীর অধিকাংশ চাষিই মাছ ধরা বন্ধ করে দিয়েছেন।
এরপর থেকে মাছের বাজারে ধস নেমেছে সারাদেশেই। ২০ দিন আগে রাজশাহীর রুই মাছ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে কেজিপ্রতি বিক্রি হয়েছে ৩০০ টাকায়। দুই কেজি ওজনের রুইয়ের কেজি ছিল ৩৪০-৩৫০ টাকা।
অথচ এখন দুই কেজি ওজনের রুই কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ২৭০-২৮০ টাকায়।
কমেছে সিলভার কার্প মাছের দামও। দেড় কেজি ওজনের এ মাছের দাম ছিল ২১০-২২০ টাকা। এখন ১৩০-১৫০ টাকা কেজি। একই সময়ে কাতলা মাছের দামও কমেছে। ৩ কেজি ওজনের প্রতিকেজি কাতলের দাম ছিল ৩২০-৩৩০ টাকা। এখন সেটি বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ২৭০-২৮০ টাকায়। একইভাবে পাঙাশ ও তেলাপিয়াসহ অন্য কার্পজাতীয় মাছের দামও বাজারে অন্য সময়ের তুলনায় কম।
পবা উপজেলার দাদপুর এলাকার জাতীয় পদকপ্রাপ্ত মাছচাষি মশিউর রহমান। তার প্রায় ছয়শ’ বিঘার পুকুর রয়েছে। তিনি বলেন, মাছের বাজার খারাপ। এ কারণে মাছ ধরা বন্ধ করে দিয়েছি। কিন্তু মাছের খাবার দেয়াতো বন্ধ নেই। আমি একটি কোম্পানির রেডি ফিড ব্যবহার করি। ২০ দিন আগেও ওই কোম্পানির ২৫ কেজি বস্তার মাছের খাবারের দাম ছিল ১,১৫২ টাকা। এখন বস্তাপ্রতি দাম ৮৩ টাকা বেড়ে হয়েছে ১,২৩৫ টাকা। তিনি বলেন, প্রতিদিন আমার দুইশ’ বস্তা মাছের খাবার প্রয়োজন হয়। প্রতি বস্তায় দাম ৮৩ টাকা বেশি হওয়ায় এখন প্রতিদিন ১৬ হাজার ৬০০ টাকা খাবারের জন্য বেশি ব্যয় হচ্ছে। ফলে প্রতি মাসে চার লাখ ৯৮ হাজার টাকা শুধু খাবার বাবদ লোকসান গুনতে হচ্ছে। ফলে মাছ ধরা বন্ধ করে দিয়েছি। বাজারে মাছের দাম না বাড়লে আমার মতো অন্য চাষিরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
মোহনপুর উপজেলা সদরের মাছচাষি বাচ্চু মন্ডল বলেন, ২০ দিন আগেও রাজশাহী থেকে ঢাকার আবদুল্লাপুরের ভাড়া ছিল ১৪-১৫ হাজার টাকা। এখন সেটি ১৮-১৯ হাজার টাকা। যাত্রাবাড়ির ভাড়া ছিল ১৬ হাজার টাকা। এখন সেটি ১৯ হাজার টাকা। সিলেটের ভাড়া ছিল ২৮ হাজার টাকা। এখন সেটি ৩৫ হাজার টাকা। এছাড়া অন্যস্থানের ভাড়াও বেড়েছে। মালিকরা ট্রাক সড়কে নামাতে চাচ্ছেন না। ফলে বেশি টাকাতেই ট্রাক ভাড়া করতে বাধ্য হচ্ছেন মাছচাষিরা।
মহানগরীর উপকণ্ঠ খড়খড়ি এলাকার ট্রাক মালিক বেলাল হোসেন ও শাকিল আহমেদ বলেন, সারাদেশেই ট্রাকসহ বিভিন্ন পরিবহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে। ট্রাকচালক ও তাদের সহযোগীরা জীবন নিয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। এছাড়া ট্রাকে অগ্নিসংযোগের আশংকায় রয়েছেন মালিকরা। ফলে তারা সড়কে ট্রাক নামাতে চাচ্ছেন না। আর বিভিন্ন ঝুঁকির কারণে চালক ও তাদের সহযোগীরা পারিশ্রমিক বেশি চাচ্ছেন। এ কারণে আমরা ভাড়া বাড়াতে বাধ্য হয়েছি।
সার্বিক বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে মাছের দাম কম। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে খাবারের দামও বেড়েছে। এ কারণে অনেক চাষি মাছ ধরা বন্ধ রেখেছেন। আশা করছি এ সংকট থাকবে না। অচিরেই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে চাষিরা ভালো দামে মাছ বিক্রি করতে পারবেন।
প্রসঙ্গত, রাজশাহীর ৯টি উপজেলায় ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে পুকুরের সংখ্যা ৫০ হাজার ৭২০টি। এছাড়া ১১টি নদী, ৬৭টি বিল, ১৬০টি খালসহ অসংখ্য জলাভূমিতেও মাছ চাষ হয়। রাজশাহীতে বছরে ৮৭ হাজার ২৭০ টন মাছ উৎপাদন হয়।
এদিকে প্রতি বছর রাজশাহীতে পাঁচ লাখ মেট্রিক টনের বেশি সবজি উৎপাদন হয়। বিপুল পরিমাণে উৎপাদন হলেও সব সবজি খাবার উপযোগী করে রাখা সম্ভব হয় না। ফলে উৎপাদনের ২০ থেকে ২৫ শতাংশ সবজি নষ্ট হয়ে যায় শুধু সংরক্ষণের অভাবে। অন্যদিকে অবোরোধের কারণে লোকসান হচ্ছে প্রান্তিক পর্যায়ের চাষি ও ব্যবসায়ীদের।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় গত বছরের তুলনায় ১ হাজার ৭৫০ হেক্টর বেশি জমিতে সবজি চাষ হয়েছে। এ বছর (২০২৩-২৪) চলতি মৌসুমে ৫ হাজার ৬৪০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন সবজি চাষ হয়েছে। আর ২০২২-২৩ মৌসুমে সবজির চাষ হয়েছিল ৩ হাজার ৮৯০ হেক্টর জমিতে। ২০২২-২৩ মৌসুমে শীতের সবজির মধ্যে শিম চাষ হয়েছিল ২৩০ হেক্টর, পালংশাক ৪৪ হেক্টর, টমেটো ৩১ হেক্টর, ফুলকপি ২৭৫ হেক্টর, মুলা ৩২৮ হেক্টর জমিতে। আর ২০২৩-২৪ মৌসুমে ফুলকপি ৩৮৭ হেক্টর, টমেটো ৬৪ হেক্টর, মুলা ৪৩৫ হেক্টর, শিম ২৪১ হেক্টর, পালংশাক ৬৬ হেক্টর ও ধনেপাতা ৩৪ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে।
পবার কৃষক রজব আলী জানান তিনি সারা বছর বিভিন্ন সবজির চাষ করেন। বর্তমানে তার জমিতে ফুলকপি ও বাঁধাকপি রয়েছে। তিনি আশা করছেন ভালো ফলন পাবেন। রজব আলী বলেন, প্রথমে সব সবজির ভালো দাম পাওয়া যায়। পরে দাম কমে যায়। যেমন ঢেঁড়স, শুরুতে অন্য সবজির মতো ভালো দাম থাকে। মাঝে কমে যায় দাম। কিন্তু ঢেঁড়সের শেষ পর্যায়ে ভালো দাম পাওয়া যায়। কিন্তু এই আবরোধের কারনে অন্য জেলার পাইকাররাও সবজি ক্রয় করতে আসছে না।
গোদাগাড়ীর টমেটো চাষি হাবিবুর রহমান জানান, কিছুদিন পর জমি থেকে টমেটো তুলতে শুরু করবেন চাষিরা। এরপর হাটবাজারে বিক্রি শুরু হবে। প্রথম দিকে টমেটোর ভালো দাম পাওয়া যায়। তবে শেষের দিকে কেউ নিতে চায় না। টমেটোর চাহিদা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কিন্তু এই আবরোধের কারণে এখন বেচাবিক্রি কমে গেছে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, চাষিদের উৎপাদিত অনেক সবজি সরাসরি জমি থেকে ট্রাকযোগে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠিয়ে দেয়া হয়। তারপরও উৎপাদিত সবজির ২০ থেকে ২৫ শতাংশ নষ্ট হয় সংরক্ষণের অভাবে। আমরা চেষ্টা করছি রাজশাহীতে সবজির হিমাগারের জন্য। হিমাগার থাকলে এই সবজিগুলোও নষ্ট হবে না।