জামালপুরের মাদারগঞ্জে উপজেলা পরিষদ ঘেরাও, ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত সরকারি অফিসের কার্যক্রম বন্ধ, তথ্য সংগ্রহে সাংবাদিকদের দায়িত্ব কাজে বাঁধা প্রদান করে কতিপয় অজ্ঞাত ব্যক্তিরা।

মাদারগঞ্জে ২৮টি সমবায় সমিতির ৩০ হাজার গ্রাহকের প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা জমাকৃত আমানত উদ্ধারের দাবিতে উপজেলা পরিষদ ঘেরাও করে, সব সরকারি অফিস এর কার্যক্রম বন্ধ করে গতকাল সোমবার দুপুর থেকে ৩ দিনের বিক্ষোভ সমাবেশ ও কর্মসূচি পালন করছে বিক্ষুব্ধ গ্রাহকরা।

মাদারগঞ্জে উপজেলায় সব সমবায় সমিতির প্রায় ৫ হাজার আন্দোলনকারী সদস্য উপজেলা পরিষদ ঘেরাও করে সরকারি সব দপ্তরের কার্যক্রম ৩ দিন বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন। সব সরকারি কর্মকর্তা- কর্মচারীদের স্ব-স্ব দপ্তর ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করা হয়।

ফলে সেবা পেতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে সব প্রকার সেবাগ্রহীতাদের। এ ছাড়া আন্দোলনকারীরা সাংবাদিকদের তথ্য সংগ্রহে বাঁধা প্রদান করেন।

জানা যায়, গতকাল সোমবার সকাল ১০টায় উপজেলার প্রাণকেন্দ্র বালিজুড়ী বাজার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।

মাদারগঞ্জে সব সমবায় সমিতির জমাকৃত আমানত উদ্ধারের লক্ষ্যে এক বিকেল বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরে বালিজুড়ী বাজার থেকে প্রায় ৫ হাজার সদস্য মহিলা-পুরুষ হাতে একটি করে লাঠি দিয়ে বিক্ষোভ মিছিল সরাসরি মাদারগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চত্বরে সমবেত হয়ে উপজেলা পরিষদ ঘেরাও করে জমাকৃত অর্থ ফেরতের দাবিতে নানান স্লোগান দিতে থাকে। এভাবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত মাদারগঞ্জ উপজেলা পরিষদ ঘেরাও করে অদ্যবধি বিক্ষোভ সমাবেশ চালিয়ে যাচ্ছে আন্দোলনকারীরা।

মাদারগঞ্জে বিভিন্ন সমবায় সমিতিতে আমানতকৃত অর্থ উদ্ধারের জন্য সহায়ক কমিটি ব্যানারে আয়োজিত কর্মসূচি সোমবার দুপুর থেকে আগামী ২ দিন এ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছে। মাদারগঞ্জ উপজেলায় দীর্ঘদিন ধরে সমবায় কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের জোগসাজশে প্রায় শতাধিক প্রতারক ব্যক্তি বিভিন্ন নামে সমবায় সমিতির রেজিস্টেশন নিয়ে উচ্চ মুনাফার লোভ দেখিয়ে ব্যাংকিং কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল।

বিগত ২০২৩ সালে ২৮টি সমবায় সমিতি ৩০ হাজার আমানতকারীর প্রায় ৩ কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। এরপর থেকেই গ্রাহকরা স্থানীয় প্রশাসনসহ জামালপুর জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের মাধ্যমে আমানতের টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চালায়। কিন্তু প্রশাসনের উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তারা বারবার আমানতের টাকা আদায়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে গ্রাহকদের আন্দোলন থেকে বিরত রেখে পরবর্তীতে রহস্যজনক কারণে পিছিয়ে যায়। এ অবস্থায় ঈদের পর থেকে প্রতারিত আমানতকারীরা মরিয়া হয়ে আন্দোলনে নেমেছে।

এরই ধারাবাহিকতায় মাদারগঞ্জ উপজেলা পরিষদ ঘেরাও ও বিক্ষোভ সমাবেশের ভিডিও চিত্র ধারণ করতে গেলে দৈনিক মানব জমিন পত্রিকার মাদারগঞ্জ প্রতিনিধি আল্পনা জান্নাত এর মুঠোফোন কেড়ে নেন ও দৈনিক সংবাদ-এর মাদারগঞ্জ প্রতিনিধি আনিছুর রহমান আইছুবকে লাঞ্চিত করার চেষ্টা চালায় বেশ কয়েক অজ্ঞাত আন্দোলনকারী। পরে তারা ঘটনা স্থল ত্যাগ করেন।

সাংবাদিকরা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, বিগত দিন গুলোতে আমরা সব সমবায় সমিতির জমাকৃত আমানত উদ্ধারে সংবাদ সবসময়ই পত্রিকায় প্রকাশ করেছি। আজও তারই ধারাবাহিকতায় কাজ করতে এসে এঘটনার সম্মুখীন হতে হলো।

মাদারগঞ্জে এপর্যন্ত ২৮টি সমবায় সমিতির ৩০ হাজার সদস্যর প্রায় ৩ হাজার কোটি জমাকৃত আমানতের টাকা উদ্ধার কামিটির আহ্বায়ক সাবেক সফল চেয়ারম্যান শিবলুল বারী রাজু সংবাদ কে জানান, টাকা আদায়ের বিষয়ে প্রশাসনের লোকজন কোন সিদ্ধান্ত না দিলে গতকাল সোমবার থেকে আগামী ৩ দিনের উপজেলা পরিষদে অবস্থান কর্মসূচি চলবে।

আসন্ন ২৬ জুন থেকে এইচএসসি পরীক্ষার কারণে আন্দোলনের কর্মসূচি সীমিত করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, জামালপুর জেলা প্রশাসনের একজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা নির্দিষ্ট সময়ে মধ্যে টাকা আদায় করে দেয়া প্রতিশ্রুতি দিয়ে দেড় মাস আগে আমানতকারীদের আন্দোলন থেকে বিরত রেখেছিলেন। কিন্তু তিনি তার কথা কেউ রাখেননি।

এ বিষয়ে মাদারগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নূরুল আমিন সংবাদ কে জানান, আন্দোলনকারীরা তাকে জোর করে অফিস থেকে বের করে দিয়েছে। পরে তিনি একটি স্কুল পরিদর্শনে গিয়েছেন। অফিসের অন্য কর্মচারীদেরও বের করে দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।