শহীদ শাহরিয়ার শুভর মা-বাবা আজও তাদের ছেলের অপেক্ষায় রয়েছে। কবে ফিরবে আমার আদরের সন্তান? আজও ছেলে ফেরার আশায় পথের দিকে নির্বাক তাকিয়ে থাকে শুভর বৃদ্ধ মা-বাবা। প্রকৌশলী শাহরিয়ার শুভ (২৮) চুয়াডাঙ্গা শঙ্করচন্দ্র গ্রামের মণ্ডলপাড়ার আবু সাঈদ ও চম্পা খাতুনের মেজ ছেলে ছিলেন। এখন ছেলের স্মৃতি বুকে জড়িয়ে দিনরাত পার করেন শহীদ শুভর বাবা-মা। শাহরিয়ার শুভ ছিলেন একজন বিনয়ী নম্র প্রকৃতির ছেলে। শুভ তার মা, বাবাকে প্রায় বলতেন বাবা আর দু এক বছর মাত্র, এরপর তোমাকে আর কাজ করা লাগবে না। তখন তুমি আর মা বসে বসে শুধু খাবা। আমি সব তোমাদের সব প্রয়োজন মেটাবো। পরিবার সংসার নিয়ে শাহরিয়ার শুভ’র স্বপ্ন ছিল অনেক, কিন্তু জানা ছিল না যে, সে যে স্বপ্ন বুনেছে বাবা মা ও পরিবারের জন্য তা পূরণ হবার নয়। গত বছর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ যান তিনি। ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই রাজধানীর মিরপুর এলাকায় তার ৭ মাস বয়সি শিশুপুত্র মোস্তাফিজ শাহরিয়ারের জন্য দুধ কিনতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন শাহরিয়ার শুভ। ২৩ জুলাই ঢাকায় ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্য বরণ করেন। জানা গেছে, শাহরিয়ার শুভ চুয়াডাঙ্গা ডিঙ্গেদহ দাখিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাস করেন। এরপর যশোর বিসিএমসি প্রযুক্তি ও প্রকৌশল কলেজ থেকে ডিপ্লোমা করেন। পরে ঢাকায় একটি বেসরকারি লিফট নির্মাতা প্রতিষ্ঠানে প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করেন। জুলাই বিপ্লবে শহীদ শাহরিয়ার শুভরা তিন ভাইয়ের সবাই মেধাবী। বড় ভাই সাদ্দাম হোসেন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। আর ছোট ভাই সিয়াম হোসেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান বিভাগের অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। ছোট ভাইয়ের লেখাপড়ার সমস্ত খরচ মেজ ভাই শুভই বহন করতেন। বছর কয়েক আগে আরেক প্রকৌশলী মাগুরার মেয়ে রাজিয়া খাতুনের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন শাহরিয়ার শুভ। তাদের ঘরে রয়েছে একমাত্র ছেলে মোস্তাফিজ শাহরিয়ার। তার ভবিষ্যৎ নিয়ে পরিবারের সবাই এখন উদ্বিগ্ন। শিশু মোস্তাফিজ শাহরিয়া ও মা রাজিয়া খাতুনের চোখে মুখে এখন অন্ধকার। বাবাহারা সন্তানকে কিভাবে মানুষ করবেন তা নিয়ে অনিশ্চিত জীবন অতিবাহিত করছেন তিনি। স্ত্রী রাজিয়া খাতুন চান, সরকার তাদের জন্য এমন কিছু করে দিক যেন তারা তার পরিবার ও সন্তানকে নিয়ে ভালোভাবে জীবন যাপন করতে পারে।
শহীদ শুভর মা চম্পা খাতুন কেঁদে কেঁদে বলেন, এক বছর হতে চলল, আমার ফোনে ছেলের ফোন আসে না। কোন দিন আর আসবেও না। ছেলের মৃত্যুর আগের দিন মোবাইলে আমার সঙ্গে কথা বলেছিল। খুব শিগগিরই সরকারের পতন হবে এজন্য দোয়া করতে বলেছিল সে। কিন্তু আমার ছেলে নিজেই শহীদ হয়ে যাবে তা কখনো ভাবিনি। অনেক কষ্ট করে ছেলেকে মানুষ করেছি। বিয়ে দিয়েছিলাম যোগ্য পাত্রী দেখে। যখনই সংসারে সুখের দেখা মিলল, তখনই আমার শুভর মৃত্যু যেন সবকিছু এলোমেলো করে দিল।
শহীদ শাহরিয়ার শুভর বাবা আবু সাঈদ বলেন, ছেলে আমাকে বলেছিল, আমি চাকরি পেলে তোমার আর কষ্ট করা লাগবে না। কে জানতো এই ছেলের মরদেহ কাঁধে নিতে হবে। একজন বাবা হিসেবে কতটা কষ্টের তা একজন বাবাই জানেন। ছেলেকে হারিয়ে আমরা যেমন বাকরুদ্ধ, ঠিক আমার আদরের নাতি শুভর একমাত্র সন্তানের জন্য আমাদের আরও কষ্ট হয়। ছোট থাকতেই বাবাকে হারালো।
তিনি আরও বলেন, আমরা ছেলের নামে গ্রামের পার্শ্ববর্তী ডিঙ্গেদহ বাজারে একটি স্মৃতি ফলক নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া তার নামে স্থানীয় একটি রাস্তার নামকরণ করার কথা ছিল। তা এখনও বাস্তবায়ন করা হয়নি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চুয়াডাঙ্গা জেলা কমিটির সাবেক আহ্বায়ক আসলাম হোসেন অর্ক বলেন, বাবার কাঁধে সন্তানের লাশ পৃথিবীর সবচেয়ে ভারি জিনিস। জুলাই গণঅভ্যুত্থান যারা নিহত হয়েছে তারা জাতীয় বীর। তাদের পরিবারের যে ক্ষতি হয়েছে সেটা পূরণ হওয়ার নয়, তবে রাষ্ট্র ও আমরা জনগণ তাদের সাম্মান জানাতে পারি। ইতোমধ্যে রাষ্ট্র অর্থনৈতিক সহায়তা দিয়েছে আগামীতে এককালীন অর্থ ও মাসিক ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫
শহীদ শাহরিয়ার শুভর মা-বাবা আজও তাদের ছেলের অপেক্ষায় রয়েছে। কবে ফিরবে আমার আদরের সন্তান? আজও ছেলে ফেরার আশায় পথের দিকে নির্বাক তাকিয়ে থাকে শুভর বৃদ্ধ মা-বাবা। প্রকৌশলী শাহরিয়ার শুভ (২৮) চুয়াডাঙ্গা শঙ্করচন্দ্র গ্রামের মণ্ডলপাড়ার আবু সাঈদ ও চম্পা খাতুনের মেজ ছেলে ছিলেন। এখন ছেলের স্মৃতি বুকে জড়িয়ে দিনরাত পার করেন শহীদ শুভর বাবা-মা। শাহরিয়ার শুভ ছিলেন একজন বিনয়ী নম্র প্রকৃতির ছেলে। শুভ তার মা, বাবাকে প্রায় বলতেন বাবা আর দু এক বছর মাত্র, এরপর তোমাকে আর কাজ করা লাগবে না। তখন তুমি আর মা বসে বসে শুধু খাবা। আমি সব তোমাদের সব প্রয়োজন মেটাবো। পরিবার সংসার নিয়ে শাহরিয়ার শুভ’র স্বপ্ন ছিল অনেক, কিন্তু জানা ছিল না যে, সে যে স্বপ্ন বুনেছে বাবা মা ও পরিবারের জন্য তা পূরণ হবার নয়। গত বছর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ যান তিনি। ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই রাজধানীর মিরপুর এলাকায় তার ৭ মাস বয়সি শিশুপুত্র মোস্তাফিজ শাহরিয়ারের জন্য দুধ কিনতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন শাহরিয়ার শুভ। ২৩ জুলাই ঢাকায় ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্য বরণ করেন। জানা গেছে, শাহরিয়ার শুভ চুয়াডাঙ্গা ডিঙ্গেদহ দাখিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাস করেন। এরপর যশোর বিসিএমসি প্রযুক্তি ও প্রকৌশল কলেজ থেকে ডিপ্লোমা করেন। পরে ঢাকায় একটি বেসরকারি লিফট নির্মাতা প্রতিষ্ঠানে প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করেন। জুলাই বিপ্লবে শহীদ শাহরিয়ার শুভরা তিন ভাইয়ের সবাই মেধাবী। বড় ভাই সাদ্দাম হোসেন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। আর ছোট ভাই সিয়াম হোসেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান বিভাগের অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। ছোট ভাইয়ের লেখাপড়ার সমস্ত খরচ মেজ ভাই শুভই বহন করতেন। বছর কয়েক আগে আরেক প্রকৌশলী মাগুরার মেয়ে রাজিয়া খাতুনের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন শাহরিয়ার শুভ। তাদের ঘরে রয়েছে একমাত্র ছেলে মোস্তাফিজ শাহরিয়ার। তার ভবিষ্যৎ নিয়ে পরিবারের সবাই এখন উদ্বিগ্ন। শিশু মোস্তাফিজ শাহরিয়া ও মা রাজিয়া খাতুনের চোখে মুখে এখন অন্ধকার। বাবাহারা সন্তানকে কিভাবে মানুষ করবেন তা নিয়ে অনিশ্চিত জীবন অতিবাহিত করছেন তিনি। স্ত্রী রাজিয়া খাতুন চান, সরকার তাদের জন্য এমন কিছু করে দিক যেন তারা তার পরিবার ও সন্তানকে নিয়ে ভালোভাবে জীবন যাপন করতে পারে।
শহীদ শুভর মা চম্পা খাতুন কেঁদে কেঁদে বলেন, এক বছর হতে চলল, আমার ফোনে ছেলের ফোন আসে না। কোন দিন আর আসবেও না। ছেলের মৃত্যুর আগের দিন মোবাইলে আমার সঙ্গে কথা বলেছিল। খুব শিগগিরই সরকারের পতন হবে এজন্য দোয়া করতে বলেছিল সে। কিন্তু আমার ছেলে নিজেই শহীদ হয়ে যাবে তা কখনো ভাবিনি। অনেক কষ্ট করে ছেলেকে মানুষ করেছি। বিয়ে দিয়েছিলাম যোগ্য পাত্রী দেখে। যখনই সংসারে সুখের দেখা মিলল, তখনই আমার শুভর মৃত্যু যেন সবকিছু এলোমেলো করে দিল।
শহীদ শাহরিয়ার শুভর বাবা আবু সাঈদ বলেন, ছেলে আমাকে বলেছিল, আমি চাকরি পেলে তোমার আর কষ্ট করা লাগবে না। কে জানতো এই ছেলের মরদেহ কাঁধে নিতে হবে। একজন বাবা হিসেবে কতটা কষ্টের তা একজন বাবাই জানেন। ছেলেকে হারিয়ে আমরা যেমন বাকরুদ্ধ, ঠিক আমার আদরের নাতি শুভর একমাত্র সন্তানের জন্য আমাদের আরও কষ্ট হয়। ছোট থাকতেই বাবাকে হারালো।
তিনি আরও বলেন, আমরা ছেলের নামে গ্রামের পার্শ্ববর্তী ডিঙ্গেদহ বাজারে একটি স্মৃতি ফলক নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া তার নামে স্থানীয় একটি রাস্তার নামকরণ করার কথা ছিল। তা এখনও বাস্তবায়ন করা হয়নি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চুয়াডাঙ্গা জেলা কমিটির সাবেক আহ্বায়ক আসলাম হোসেন অর্ক বলেন, বাবার কাঁধে সন্তানের লাশ পৃথিবীর সবচেয়ে ভারি জিনিস। জুলাই গণঅভ্যুত্থান যারা নিহত হয়েছে তারা জাতীয় বীর। তাদের পরিবারের যে ক্ষতি হয়েছে সেটা পূরণ হওয়ার নয়, তবে রাষ্ট্র ও আমরা জনগণ তাদের সাম্মান জানাতে পারি। ইতোমধ্যে রাষ্ট্র অর্থনৈতিক সহায়তা দিয়েছে আগামীতে এককালীন অর্থ ও মাসিক ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।