পীরগাছা : তিস্তা নদীতে প্রস্তাবিত সেতু এলাকা পরিদর্শন করছেন প্রকল্প পরিচালক -সংবাদ
রংপুরের পীরগাছা উপজেলা ও কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলাকে বিভক্ত করে রেখেছে প্রমত্তা তিস্তা নদী। দুই তীরের হাজারো মানুষের জীবনের গল্পে প্রতিদিনই জায়গা করে নেয় নদী পারাপারের কষ্ট, নৌকার ঝুঁকি আর অনিশ্চয়তা। দুই পাড়ের মানুষের যাতায়াতে একমাত্র ভরসা এখনো খেয়ানৌকা। আর দুই উপজেলার লাখো মানুষের বহু বছরের অপেক্ষার নাম একটি সেতু।
তিস্তার পূর্ব পাড়ে কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর, চিলমারি, রৌমারি, রাজীবপুর ও রাজার হাট উপজেলার আংশিক মানুষ শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার নগরি রংপুর যেতে ঘুরে আসেন কুড়িগ্রাম হয়ে ৫৬ কিলোমিটার পথ। অথচ পানিয়ালের ঘাট থেকে তিস্তা পাড়ি দিয়ে মাত্র ৩০ কিলোমিটারেই পৌঁছানো যায় রংপুর নগরীতে। দীর্ঘদিনের যোগাযোগ সংকটের অবসানে এবার জেগে উঠেছে নতুন সম্ভাবনা। বিগত সময়ে পীরগাছার উপজেলা প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম ১২৫০ মিটার সেতু নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন এলজিইডি ভবনে। তারই ধারাবাহিকতায় ছাওলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজির হোসেনের প্রচেষ্টায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার গত ২৬ নভেম্বর পানিয়ালের ঘাট পরিদর্শন করেন। সর্বশেষ প্রকল্প পরিচালক শেখ আবু জাকির সিকান্দারের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের বিশেষজ্ঞ একটি টিম প্রস্তাবিত সেতু এলাকা সমীক্ষা করেন। ওই সময় উলিপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান হায়দার আলীসহ প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন। এই নির্মাণ করা হলে কুড়িগ্রাম জেলার প্রায় ১৩ লাখ মানুষ সুফল ভোগ করবেন।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের পাওটানা পানিয়ালের ঘাট এলাকায় সম্ভাব্য সেতু এলাকা পরিদর্শন করেছেন সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তারা। তারা গ্রামীণ সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ প্রকল্প-২ এর আওতায় তিস্তার উপর ১৪০০ মিটার দীর্ঘ ৫ম তিস্তা সেতু নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই করেন। পরিদর্শনের নেতৃত্ব দেন প্রকল্প পরিচালক শেখ আবু জাকির সিকান্দার। সরেজমিনে জানা যায়, পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের পানিয়ালের ঘাট দিয়ে প্রতিদিন হাজারো মানুষ খেয়ানৌকায় পার হন। নদী পারাপারের সময় গর্ভবতী নারী থেকে শুরু করে শিশু, রোগী সবাইকে ভরসা করতে হয় নৌকার উপর। কিন্তু বর্ষায় সেই যাত্রা হয়ে দাঁড়ায় ভয়ংকর ঝুঁকিপূর্ণ। বর্ষা মৌসুমে মাঝে মধ্যেই নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটে। এতে অসংখ্য প্রাণহানির ঘটনাও রয়েছে।
পীরগাছার পাওটানা এলাকার বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম বলেন, এখানে একটি সেতুর বিশেষ প্রয়োজন। সেতু হলে দুই উপজেলার মানুষের যাতায়াত সমস্যার সমাধান হবে।
ছাওলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাজির হোসেন বলেন, এই সেতু আমাদের দুই উপজেলার জন্য শুধু প্রয়োজন নয়, এটা একটি অধিকার। মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়নে এটা এক নম্বর দাবি।
পীরগাছা উপজেলার প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান জেমি বলেন, এই সেতু নির্মাণ হলে পীরগাছা উলিপুরের মধ্যে সহজ যোগাযোগ গড়ে উঠবে। এমনকি রংপুর-কুড়িগ্রাম বিকল্প রুট তৈরি হবে। এর ফলে যোগাযোগ ও বাণিজ্যে বিপ্লব ঘটবে।
আইডব্লিউএম এর প্রতিনিধি আলিমুজ্জামান বলেন, নদীর গতিপথ এবং ভবিষ্যৎ জলচিত্র বিশ্লেষণ করে আমরা সুপারিশ করব। শুধু নির্মাণ নয়, দীর্ঘস্থায়ী ব্যবহার উপযোগী সেতুই চাই।
ডিজাইন ইউনিটের নির্বাহী প্রকৌশলী ভাস্কর ক্রান্তি চৌধুরী বলেন, তিস্তা একটি ঋতুভিত্তিক পরিবর্তনশীল নদী। বর্ষায় প্রচণ্ড গ্রোত, আবার শুষ্ক মৌসুমে নদীর গভীরতা কমে যায়। তাই সেতুর অবস্থান ও গঠন নির্ধারণে জলপ্রবাহ, চর জেগে ওঠা এবং তীরের স্থায়িত্ব গুরুত্ব পাচ্ছে।
প্রকল্প পরিচালক শেখ আবু জাকির সিকান্দার জানান, উপদেষ্টার সরাসরি তত্ত্বাবধানে এই সেতু প্রকল্পের ডিপিপি প্রস্তুতির কাজ চলছে। আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে ডিপিপি ও নকশা চূড়ান্ত হবে। আমরা বেস্ট লোকেশন নির্ধারণ এবং নদীর স্রোত ও স্থিতিশীলতা বিবেচনায় সরেজমিন তথ্য সংগ্রহ করেছি।
পীরগাছা : তিস্তা নদীতে প্রস্তাবিত সেতু এলাকা পরিদর্শন করছেন প্রকল্প পরিচালক -সংবাদ
শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫
রংপুরের পীরগাছা উপজেলা ও কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলাকে বিভক্ত করে রেখেছে প্রমত্তা তিস্তা নদী। দুই তীরের হাজারো মানুষের জীবনের গল্পে প্রতিদিনই জায়গা করে নেয় নদী পারাপারের কষ্ট, নৌকার ঝুঁকি আর অনিশ্চয়তা। দুই পাড়ের মানুষের যাতায়াতে একমাত্র ভরসা এখনো খেয়ানৌকা। আর দুই উপজেলার লাখো মানুষের বহু বছরের অপেক্ষার নাম একটি সেতু।
তিস্তার পূর্ব পাড়ে কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর, চিলমারি, রৌমারি, রাজীবপুর ও রাজার হাট উপজেলার আংশিক মানুষ শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার নগরি রংপুর যেতে ঘুরে আসেন কুড়িগ্রাম হয়ে ৫৬ কিলোমিটার পথ। অথচ পানিয়ালের ঘাট থেকে তিস্তা পাড়ি দিয়ে মাত্র ৩০ কিলোমিটারেই পৌঁছানো যায় রংপুর নগরীতে। দীর্ঘদিনের যোগাযোগ সংকটের অবসানে এবার জেগে উঠেছে নতুন সম্ভাবনা। বিগত সময়ে পীরগাছার উপজেলা প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম ১২৫০ মিটার সেতু নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন এলজিইডি ভবনে। তারই ধারাবাহিকতায় ছাওলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজির হোসেনের প্রচেষ্টায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার গত ২৬ নভেম্বর পানিয়ালের ঘাট পরিদর্শন করেন। সর্বশেষ প্রকল্প পরিচালক শেখ আবু জাকির সিকান্দারের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের বিশেষজ্ঞ একটি টিম প্রস্তাবিত সেতু এলাকা সমীক্ষা করেন। ওই সময় উলিপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান হায়দার আলীসহ প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন। এই নির্মাণ করা হলে কুড়িগ্রাম জেলার প্রায় ১৩ লাখ মানুষ সুফল ভোগ করবেন।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের পাওটানা পানিয়ালের ঘাট এলাকায় সম্ভাব্য সেতু এলাকা পরিদর্শন করেছেন সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তারা। তারা গ্রামীণ সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ প্রকল্প-২ এর আওতায় তিস্তার উপর ১৪০০ মিটার দীর্ঘ ৫ম তিস্তা সেতু নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই করেন। পরিদর্শনের নেতৃত্ব দেন প্রকল্প পরিচালক শেখ আবু জাকির সিকান্দার। সরেজমিনে জানা যায়, পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের পানিয়ালের ঘাট দিয়ে প্রতিদিন হাজারো মানুষ খেয়ানৌকায় পার হন। নদী পারাপারের সময় গর্ভবতী নারী থেকে শুরু করে শিশু, রোগী সবাইকে ভরসা করতে হয় নৌকার উপর। কিন্তু বর্ষায় সেই যাত্রা হয়ে দাঁড়ায় ভয়ংকর ঝুঁকিপূর্ণ। বর্ষা মৌসুমে মাঝে মধ্যেই নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটে। এতে অসংখ্য প্রাণহানির ঘটনাও রয়েছে।
পীরগাছার পাওটানা এলাকার বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম বলেন, এখানে একটি সেতুর বিশেষ প্রয়োজন। সেতু হলে দুই উপজেলার মানুষের যাতায়াত সমস্যার সমাধান হবে।
ছাওলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাজির হোসেন বলেন, এই সেতু আমাদের দুই উপজেলার জন্য শুধু প্রয়োজন নয়, এটা একটি অধিকার। মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়নে এটা এক নম্বর দাবি।
পীরগাছা উপজেলার প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান জেমি বলেন, এই সেতু নির্মাণ হলে পীরগাছা উলিপুরের মধ্যে সহজ যোগাযোগ গড়ে উঠবে। এমনকি রংপুর-কুড়িগ্রাম বিকল্প রুট তৈরি হবে। এর ফলে যোগাযোগ ও বাণিজ্যে বিপ্লব ঘটবে।
আইডব্লিউএম এর প্রতিনিধি আলিমুজ্জামান বলেন, নদীর গতিপথ এবং ভবিষ্যৎ জলচিত্র বিশ্লেষণ করে আমরা সুপারিশ করব। শুধু নির্মাণ নয়, দীর্ঘস্থায়ী ব্যবহার উপযোগী সেতুই চাই।
ডিজাইন ইউনিটের নির্বাহী প্রকৌশলী ভাস্কর ক্রান্তি চৌধুরী বলেন, তিস্তা একটি ঋতুভিত্তিক পরিবর্তনশীল নদী। বর্ষায় প্রচণ্ড গ্রোত, আবার শুষ্ক মৌসুমে নদীর গভীরতা কমে যায়। তাই সেতুর অবস্থান ও গঠন নির্ধারণে জলপ্রবাহ, চর জেগে ওঠা এবং তীরের স্থায়িত্ব গুরুত্ব পাচ্ছে।
প্রকল্প পরিচালক শেখ আবু জাকির সিকান্দার জানান, উপদেষ্টার সরাসরি তত্ত্বাবধানে এই সেতু প্রকল্পের ডিপিপি প্রস্তুতির কাজ চলছে। আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে ডিপিপি ও নকশা চূড়ান্ত হবে। আমরা বেস্ট লোকেশন নির্ধারণ এবং নদীর স্রোত ও স্থিতিশীলতা বিবেচনায় সরেজমিন তথ্য সংগ্রহ করেছি।