টানা বৃষ্টিতে সাতক্ষীরার শহর ও গ্রামীণ জনপদে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা। শুধু সাতক্ষীরা পৌরসভাই নয়, সদর ও আশাশুনি উপজেলার বেশিরভাগ এলাকাই বর্তমানে পানিবন্দি। ঘরবাড়ি, রান্নাঘর, গোয়ালঘর এমনকি সুপেয় পানির উৎস টিউবওয়েলও তলিয়ে গেছে। নষ্ট হয়েছে ফসল ও মাছের ঘের।
পৌরসভার ইটাগাছা, কামালনগর, পলাশপোল, মেহেদীবাগ, রসুলপুর, বদ্দিপুর কলোনি, রইচপুর, রাজারবাগান, পার-মাছখোলা, গদাইবিলসহ অন্তত এক ডজন ওয়ার্ডে পানিতে তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট ও বাড়িঘর। ডুবে গেছে টিউবওয়েল। ভেঙে পড়েছে স্যানিটেশন ব্যবস্থা।
সুলতানপুর কাজীপাড়ার বাসিন্দা ইনতাজ আলী বলেন, বাড়ির উঠানে হাঁটুপানি। ঘরে থাকতে পারছি না। আশপাশের মাদ্রাসায় গিয়ে উঠেছি। ড্রেনেজ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ অকার্যকর।
বদ্দিপুর কলোনির গৃহবধূ সাজেদা বেগম বলেন, বৃষ্টি হলেই আমরা পানিবন্দী হয়ে যাই। এবার রান্নাঘরে পানি ঢুকেছে। সাপ-পোকামাকড় ঘরে। বাচ্চাদের নিয়ে অন্য জায়গায় রাত কাটাতে হচ্ছে।
শহরের ইটাগাছা বিলপাড়ার শফিকুল ইসলাম খোকা বলেন, অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা মৎস্য ঘেরগুলো পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে দিয়েছে। এটা প্রতি বছর হচ্ছে অথচ কোনো স্থায়ী সমাধান নেই।
৬ নম্বর ওয়ার্ডের কুখরালী এলাকার বাসিন্দা কাজী রুবেল জানান, এই এলাকায় তিন শতাধিক পরিবার পানিবন্দি। যেসব বিলে পানি পড়ে, সেসবের মুখ বন্ধ করে দিয়েছেন ঘের মালিকরা।
জেলা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক আজাদ হোসেন বেলাল বলেন, প্রতি বছর একই দুর্ভোগের পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। অথচ প্রশাসন ও পৌরসভা শুধু আশ্বাস দিয়ে থেমে থাকে। আধুনিক ড্রেনেজ না হলে জলাবদ্ধতা কাটবে না।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইশতিয়াক আহম্মেদ বলেন, ৯টি ওয়ার্ডে অস্থায়ী পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা হয়েছে। শহরের খাল ও ড্রেন উন্নয়নে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। যেসব ঘের মালিক পানি আটকে রেখেছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শোয়াইব আহমাদ বলেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৫০ কিলোমিটার খাল ও সেচনালা সংস্কার করা হয়েছে। প্রাণসায়ের খালে পানি ফেলতে পারলে শহরের জলাবদ্ধতা অনেকটা কমবে। ঘের মালিকদের নিষ্কাশনের পথ খুলে দিতে বলা হয়েছে।
এদিকে টানা বৃষ্টিতে জেলার আশাশুনি উপজেলার কুল্যা, দরগাহপুর, শ্রীউলা, বুধহাটা, খাজরা, প্রতাপনগর, বড়দল, আনুলিয়া, শোভনালীসহ ১১টি ইউনিয়নে পানি ঢুকেছে ঘরবাড়িতে। ডুবে গেছে রান্নাঘর, টিউবওয়েল, পুকুর, মাছের ঘের ও সবজির ক্ষেত। বৃষ্টিতে দুর্ভোগে লাখো মানুষ, ভেসে গেছে বেশিরভাগ ঘের।
আশাশুনি উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সত্যজিৎ মজুমদার বলেন, বৃষ্টির পানিতে বেশিরভাগ ঘের হুমকির মুখে। অনেক ঘের ভেসে গেছে। ঘের মালিকরা নেট জাল টেনে মাছ বাঁচানোর চেষ্টা করছেন।
বুধহাটা ইউনিয়নের আইনজীবী শহিদুল ইসলাম বলেন, বেতনা নদী খনন অসম্পূর্ণ থাকায় এবং নদীর প্রবাহ বন্ধ থাকায় পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। খালের স্বাভাবিক প্রবাহও বন্ধ করে দিয়েছেন ঘের মালিকরা।
প্রভাষক ইয়াহিয়া ইকবাল মনে করেন, ঘেরের পাশে নেটপাটা অপসারণ, পুরোনো ম্যাপ অনুযায়ী নদী-খাল খনন, বিকল স্লুইস গেট সংস্কার ও দুর্নীতি দমন ছাড়া কোনো স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়। তিনি বলেন, বেশিরভাগ এলাকায় টিউবওয়েল ডুবে গেছে। ফলে সুপেয় পানির তীব্র্র সংকট দেখা দিয়েছে। স্যানিটেশন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। অনেক পরিবার রান্না বন্ধ করে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে অন্যত্র যাচ্ছে।
আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কৃষ্ণা রায় বলেন, বেতনা ও মরিচ্চাপ নদী খনন, খাল সংস্কার ও কালভার্ট নির্মাণের কাজ চলমান। পানি নিষ্কাশনে বাধা থাকলেও দুর্যোগ মোকাবিলায় সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
রোববার, ২০ জুলাই ২০২৫
টানা বৃষ্টিতে সাতক্ষীরার শহর ও গ্রামীণ জনপদে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা। শুধু সাতক্ষীরা পৌরসভাই নয়, সদর ও আশাশুনি উপজেলার বেশিরভাগ এলাকাই বর্তমানে পানিবন্দি। ঘরবাড়ি, রান্নাঘর, গোয়ালঘর এমনকি সুপেয় পানির উৎস টিউবওয়েলও তলিয়ে গেছে। নষ্ট হয়েছে ফসল ও মাছের ঘের।
পৌরসভার ইটাগাছা, কামালনগর, পলাশপোল, মেহেদীবাগ, রসুলপুর, বদ্দিপুর কলোনি, রইচপুর, রাজারবাগান, পার-মাছখোলা, গদাইবিলসহ অন্তত এক ডজন ওয়ার্ডে পানিতে তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট ও বাড়িঘর। ডুবে গেছে টিউবওয়েল। ভেঙে পড়েছে স্যানিটেশন ব্যবস্থা।
সুলতানপুর কাজীপাড়ার বাসিন্দা ইনতাজ আলী বলেন, বাড়ির উঠানে হাঁটুপানি। ঘরে থাকতে পারছি না। আশপাশের মাদ্রাসায় গিয়ে উঠেছি। ড্রেনেজ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ অকার্যকর।
বদ্দিপুর কলোনির গৃহবধূ সাজেদা বেগম বলেন, বৃষ্টি হলেই আমরা পানিবন্দী হয়ে যাই। এবার রান্নাঘরে পানি ঢুকেছে। সাপ-পোকামাকড় ঘরে। বাচ্চাদের নিয়ে অন্য জায়গায় রাত কাটাতে হচ্ছে।
শহরের ইটাগাছা বিলপাড়ার শফিকুল ইসলাম খোকা বলেন, অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা মৎস্য ঘেরগুলো পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে দিয়েছে। এটা প্রতি বছর হচ্ছে অথচ কোনো স্থায়ী সমাধান নেই।
৬ নম্বর ওয়ার্ডের কুখরালী এলাকার বাসিন্দা কাজী রুবেল জানান, এই এলাকায় তিন শতাধিক পরিবার পানিবন্দি। যেসব বিলে পানি পড়ে, সেসবের মুখ বন্ধ করে দিয়েছেন ঘের মালিকরা।
জেলা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক আজাদ হোসেন বেলাল বলেন, প্রতি বছর একই দুর্ভোগের পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। অথচ প্রশাসন ও পৌরসভা শুধু আশ্বাস দিয়ে থেমে থাকে। আধুনিক ড্রেনেজ না হলে জলাবদ্ধতা কাটবে না।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইশতিয়াক আহম্মেদ বলেন, ৯টি ওয়ার্ডে অস্থায়ী পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা হয়েছে। শহরের খাল ও ড্রেন উন্নয়নে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। যেসব ঘের মালিক পানি আটকে রেখেছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শোয়াইব আহমাদ বলেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৫০ কিলোমিটার খাল ও সেচনালা সংস্কার করা হয়েছে। প্রাণসায়ের খালে পানি ফেলতে পারলে শহরের জলাবদ্ধতা অনেকটা কমবে। ঘের মালিকদের নিষ্কাশনের পথ খুলে দিতে বলা হয়েছে।
এদিকে টানা বৃষ্টিতে জেলার আশাশুনি উপজেলার কুল্যা, দরগাহপুর, শ্রীউলা, বুধহাটা, খাজরা, প্রতাপনগর, বড়দল, আনুলিয়া, শোভনালীসহ ১১টি ইউনিয়নে পানি ঢুকেছে ঘরবাড়িতে। ডুবে গেছে রান্নাঘর, টিউবওয়েল, পুকুর, মাছের ঘের ও সবজির ক্ষেত। বৃষ্টিতে দুর্ভোগে লাখো মানুষ, ভেসে গেছে বেশিরভাগ ঘের।
আশাশুনি উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সত্যজিৎ মজুমদার বলেন, বৃষ্টির পানিতে বেশিরভাগ ঘের হুমকির মুখে। অনেক ঘের ভেসে গেছে। ঘের মালিকরা নেট জাল টেনে মাছ বাঁচানোর চেষ্টা করছেন।
বুধহাটা ইউনিয়নের আইনজীবী শহিদুল ইসলাম বলেন, বেতনা নদী খনন অসম্পূর্ণ থাকায় এবং নদীর প্রবাহ বন্ধ থাকায় পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। খালের স্বাভাবিক প্রবাহও বন্ধ করে দিয়েছেন ঘের মালিকরা।
প্রভাষক ইয়াহিয়া ইকবাল মনে করেন, ঘেরের পাশে নেটপাটা অপসারণ, পুরোনো ম্যাপ অনুযায়ী নদী-খাল খনন, বিকল স্লুইস গেট সংস্কার ও দুর্নীতি দমন ছাড়া কোনো স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়। তিনি বলেন, বেশিরভাগ এলাকায় টিউবওয়েল ডুবে গেছে। ফলে সুপেয় পানির তীব্র্র সংকট দেখা দিয়েছে। স্যানিটেশন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। অনেক পরিবার রান্না বন্ধ করে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে অন্যত্র যাচ্ছে।
আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কৃষ্ণা রায় বলেন, বেতনা ও মরিচ্চাপ নদী খনন, খাল সংস্কার ও কালভার্ট নির্মাণের কাজ চলমান। পানি নিষ্কাশনে বাধা থাকলেও দুর্যোগ মোকাবিলায় সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হচ্ছে।