ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার নয়নকান্দি কাওয়ালীপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মোবারক হোসেন। পিতা আবুল কাশেম একজন সাধারণ কৃষক। মা মাজেদা খাতুন মারা গিয়েছেন। মোবারক হোসেন এইচএসসি পাশ করে ঢাকায় পাড়ি জমান। ঢাকা বনানী এলাকায় থাকেন। ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। বনানী থানা ছাত্রদলের সক্রিয় একজন কর্মী। দেশ স্বৈরাচার মুক্ত হয়েছে। তবে এখনও হাসপাতালে মৃত্যুশয্যায় জীবন যুদ্ধে লড়ছেন জুলাই যোদ্ধা মোবারক। চিকিৎসা ব্যয় মিটাতে পারছেন না তার কৃষক পিতা। পুলিশের গুলি পেটে ঢুুকে ছিড়ে গেছে মোবারকের নাড়ী। অপারেশনে পেট থেকে গুলি বের করলেও যন্ত্রনা বয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। একুশে জুলাই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দিতে বাহির হয় মোবারক। তখন সময় ২ ঘটিকা।
কুড়িল চৌরাস্তা থেকে আন্দোলন শুরু হয়। মিছিল নিয়ে যমুনার সামনে গেলে পুলিশের এলোপাতাড়ি গুলি শুরু হয়। আশেপাশে অনেকে আহত এবং নিহত হয়ে যায়। মোবারকের চোখের সামনে একজনের পেটে গুলি লাগে। সে মাটিতে পড়ে যায়। তাকে আনতে যান মোবরক। তখনই পুলিশের ছোড়া একটি গুলি এসে পেটে লাগে।সাথে সাথে পিঠে হাত দিয়া দেখেন মেরুদন্ডতে গুলি আটকে যায়।প্রথমে তিনি বুঝতে পারেননি গুলি কোন দিক দিয়ে ঢুকেছে। এরই মাঝে এক মিনিটের মতো দৌড় দেন মোবারক। তখন বুঝতে পারেন পেট দিয়ে গুলি ঢুকেছে।এসময় চিৎকার শুরু করে বলতে থাকেন পেটে গুলি লাগছে। তখন পাশের বন্ধুবান্ধবরা ধরাধরি করে রিক্সায় তুলে। রিক্সা দিয়ে নিয়ে যেতে যেতে শরীরের অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে যায়। অবস্থা গুরত্বর দেখে সিএনজি করে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়া যাওয়া হয়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর ভর্তি নিচ্ছিল না। সরকার থেকে নির্দেশ যারা আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়েছে তাদের চিকিৎসা যেন না করা হয়।সেনাবাহিনীরা দায়িত্বে ছিলেন।তখন আমার বন্ধুবান্ধবরা সেনাবাহিনীকে হাতে পায়ে ধরে অপারেশন করানো হয়। পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়ায় তারা অপারেশন করে।তখন সাত ব্যাগ রক্ত লেগেছিল। অবস্থা খুবই জটিল ছিল তাই পরীক্ষা- করতে পারে নাই। ডাক্তার অনেক রিস্কের মাধ্যমে অপারেশন করেছে। একুশে জুলাই দুটি অপারেশন হয় একসাথে।
একদিন আইসিওতে রাখা হয় পরে বেডে পাঠানো হয়। বেডে পাঠানোর সাথে সাথে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছিলেন মোবারক। ১৪ দিন অজ্ঞান অবস্থায় ছিলেন।এরপর দীর্ঘদিন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা অবস্থায ছিলেন। সাড়ে তিন মাস পর আরও দুটি অপারেশন করা হয়। তখন জানা যায়,মোবারকের দুটি নাড়ী ছিদ্র হয় এবং লিভার ছিদ্র হয়। মেরুদন্ড আঘাতপ্রাপ্ত হয়। হাসপাতাল থেকে ফেরার পর বেশ কয়েকদিন ভাল ছিলেন তিনি। কিন্তু আবার জটিলতা দেখা দেয়। পরে সোহরাওয়ার্ধী মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তখন আরো একটি অপারেশন লাগে।ডাক্তার জানায়,যতদিন বেঁচে থাকবে ততদিন পর্যন্ত ওষুধ খেতে হবে।এখনো মাঝে মধ্যে পাকস্থলী দিয়ে রক্ত যায়। এভাবে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে লড়ছেন এই জুলাই যোদ্ধা। চিকিৎসা ব্যায় মিটাতে পারছেন না তার কৃষক পিতা।চিকিৎসায় লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যায় হচ্ছে। সরকারীভাবে এক লক্ষ টাকা পেয়েছেন এবং জুলাই ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে এক লক্ষ টাকা পেয়েছেন।এছাড়া কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতার মাধ্যমে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে ৪০ হাজার টাকা পেয়েছেন। তবে এসব টাকায় চিকিৎসা ব্যায় মিটছে না। কৃষক পিতার একমাত্র অবলম্বন তিনটি গরু বিক্রি করে চিকিৎসা করছেন।
এছাড়াও বিভিন্নজনের থেকে টাকা ধার নিয়েছেন।সব মিলে দুর্বিসহ জীবন কাটাচ্ছেন মোবারক হোসেন।প্রতিনিয়ত মৃত্যু এসে তাড়া করছে।এখনও কানে বেজে উঠছে জুলাইয়ের সেই দুঃস্বহ স্মৃতি,সেই গুলির আওয়াজ। এভাবে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন কিন্তু স্থানীয়ভাবে তেমন কেউ খোঁজ নিচ্ছেন না। এ ব্যাপারে জুলাই যোদ্ধা মোবারক হোসেন বলেন, আন্দোলন করে স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছি কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে আমি মৃত্যুশয্যায় আছি,আর্থিক অনেক সংকটে আছি,মানুষিকভাবে বির্পযস্ত।উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত শারমিন জানান,জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে যে বরাদ্দ আছে তা দেওয়া হয়েছে এছাড়া আমি সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর নিয়ে বিভিন্ন সময় সহায়তা করে আসছি।
রোববার, ২০ জুলাই ২০২৫
ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার নয়নকান্দি কাওয়ালীপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মোবারক হোসেন। পিতা আবুল কাশেম একজন সাধারণ কৃষক। মা মাজেদা খাতুন মারা গিয়েছেন। মোবারক হোসেন এইচএসসি পাশ করে ঢাকায় পাড়ি জমান। ঢাকা বনানী এলাকায় থাকেন। ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। বনানী থানা ছাত্রদলের সক্রিয় একজন কর্মী। দেশ স্বৈরাচার মুক্ত হয়েছে। তবে এখনও হাসপাতালে মৃত্যুশয্যায় জীবন যুদ্ধে লড়ছেন জুলাই যোদ্ধা মোবারক। চিকিৎসা ব্যয় মিটাতে পারছেন না তার কৃষক পিতা। পুলিশের গুলি পেটে ঢুুকে ছিড়ে গেছে মোবারকের নাড়ী। অপারেশনে পেট থেকে গুলি বের করলেও যন্ত্রনা বয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। একুশে জুলাই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দিতে বাহির হয় মোবারক। তখন সময় ২ ঘটিকা।
কুড়িল চৌরাস্তা থেকে আন্দোলন শুরু হয়। মিছিল নিয়ে যমুনার সামনে গেলে পুলিশের এলোপাতাড়ি গুলি শুরু হয়। আশেপাশে অনেকে আহত এবং নিহত হয়ে যায়। মোবারকের চোখের সামনে একজনের পেটে গুলি লাগে। সে মাটিতে পড়ে যায়। তাকে আনতে যান মোবরক। তখনই পুলিশের ছোড়া একটি গুলি এসে পেটে লাগে।সাথে সাথে পিঠে হাত দিয়া দেখেন মেরুদন্ডতে গুলি আটকে যায়।প্রথমে তিনি বুঝতে পারেননি গুলি কোন দিক দিয়ে ঢুকেছে। এরই মাঝে এক মিনিটের মতো দৌড় দেন মোবারক। তখন বুঝতে পারেন পেট দিয়ে গুলি ঢুকেছে।এসময় চিৎকার শুরু করে বলতে থাকেন পেটে গুলি লাগছে। তখন পাশের বন্ধুবান্ধবরা ধরাধরি করে রিক্সায় তুলে। রিক্সা দিয়ে নিয়ে যেতে যেতে শরীরের অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে যায়। অবস্থা গুরত্বর দেখে সিএনজি করে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়া যাওয়া হয়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর ভর্তি নিচ্ছিল না। সরকার থেকে নির্দেশ যারা আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়েছে তাদের চিকিৎসা যেন না করা হয়।সেনাবাহিনীরা দায়িত্বে ছিলেন।তখন আমার বন্ধুবান্ধবরা সেনাবাহিনীকে হাতে পায়ে ধরে অপারেশন করানো হয়। পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়ায় তারা অপারেশন করে।তখন সাত ব্যাগ রক্ত লেগেছিল। অবস্থা খুবই জটিল ছিল তাই পরীক্ষা- করতে পারে নাই। ডাক্তার অনেক রিস্কের মাধ্যমে অপারেশন করেছে। একুশে জুলাই দুটি অপারেশন হয় একসাথে।
একদিন আইসিওতে রাখা হয় পরে বেডে পাঠানো হয়। বেডে পাঠানোর সাথে সাথে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছিলেন মোবারক। ১৪ দিন অজ্ঞান অবস্থায় ছিলেন।এরপর দীর্ঘদিন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা অবস্থায ছিলেন। সাড়ে তিন মাস পর আরও দুটি অপারেশন করা হয়। তখন জানা যায়,মোবারকের দুটি নাড়ী ছিদ্র হয় এবং লিভার ছিদ্র হয়। মেরুদন্ড আঘাতপ্রাপ্ত হয়। হাসপাতাল থেকে ফেরার পর বেশ কয়েকদিন ভাল ছিলেন তিনি। কিন্তু আবার জটিলতা দেখা দেয়। পরে সোহরাওয়ার্ধী মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তখন আরো একটি অপারেশন লাগে।ডাক্তার জানায়,যতদিন বেঁচে থাকবে ততদিন পর্যন্ত ওষুধ খেতে হবে।এখনো মাঝে মধ্যে পাকস্থলী দিয়ে রক্ত যায়। এভাবে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে লড়ছেন এই জুলাই যোদ্ধা। চিকিৎসা ব্যায় মিটাতে পারছেন না তার কৃষক পিতা।চিকিৎসায় লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যায় হচ্ছে। সরকারীভাবে এক লক্ষ টাকা পেয়েছেন এবং জুলাই ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে এক লক্ষ টাকা পেয়েছেন।এছাড়া কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতার মাধ্যমে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে ৪০ হাজার টাকা পেয়েছেন। তবে এসব টাকায় চিকিৎসা ব্যায় মিটছে না। কৃষক পিতার একমাত্র অবলম্বন তিনটি গরু বিক্রি করে চিকিৎসা করছেন।
এছাড়াও বিভিন্নজনের থেকে টাকা ধার নিয়েছেন।সব মিলে দুর্বিসহ জীবন কাটাচ্ছেন মোবারক হোসেন।প্রতিনিয়ত মৃত্যু এসে তাড়া করছে।এখনও কানে বেজে উঠছে জুলাইয়ের সেই দুঃস্বহ স্মৃতি,সেই গুলির আওয়াজ। এভাবে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন কিন্তু স্থানীয়ভাবে তেমন কেউ খোঁজ নিচ্ছেন না। এ ব্যাপারে জুলাই যোদ্ধা মোবারক হোসেন বলেন, আন্দোলন করে স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছি কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে আমি মৃত্যুশয্যায় আছি,আর্থিক অনেক সংকটে আছি,মানুষিকভাবে বির্পযস্ত।উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত শারমিন জানান,জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে যে বরাদ্দ আছে তা দেওয়া হয়েছে এছাড়া আমি সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর নিয়ে বিভিন্ন সময় সহায়তা করে আসছি।