alt

সাতক্ষীরার খোলপেটুয়া নদীর তীরের গাছ কেটে সাবাড়

প্রতিনিধি, সাতক্ষীরা : মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৫

ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

সাতক্ষীরার শ্যামনগরের খোলপেটুয়া নদীর তীরে প্রায় ৩০০ একর জায়গাজুড়ে গড়ে ওঠা চর বনায়ন এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। প্রতিদিন নির্বিচারে কাটা হচ্ছে বনাঞ্চলের হাজারও গাছ। কোথাও গাছ কেটে ফেলে রাখা হচ্ছে, আবার জোয়ারের সময় নৌকায় করে পাচার করা হচ্ছে। পাশাপাশি গর্ত খুঁড়ে মাছ শিকারের ফাঁদ বসানোয় নতুন গাছ জন্মাচ্ছে না। অথচ বহু বছর ধরে প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রাচীর হিসেবে উপকূলীয় এলাকাকে রক্ষা করে আসছে এই বন। স্থানীয়দের অভিযোগ, দুই ইউনিয়নের সঙ্গবদ্ধ কয়েকটি চক্র দিন-রাত করাত আর কুঠার চালিয়ে গাছ কেটে নিচ্ছে। কাঠ বিক্রি করে তারা ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হচ্ছে। আর নদীর চরে মাছ ধরার সুবিধার্থে গর্ত খুঁড়ে রাখা হচ্ছে, যেখানে জোয়ারের সময় রেণু আটকে যায়। পরে সেগুলো ধরে বাজারে বিক্রি করা হয়। ফলে একদিকে গাছ উজাড় হচ্ছে, অন্যদিকে নতুন চারাগাছেরও জন্ম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় লোকজন জানান, খোলপেটুয়া নদীতে প্রায় ৭০০ বিঘা জায়গাজুড়ে প্রথমে গ্রামবাসীর উদ্যোগে বনায়ন শুরু হয়। পরে নদীর জোয়ারে ভেসে আসা নানা প্রজাতির বীজ ও ফল থেকে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠে ঘন সবুজ বন। এ বন দীর্ঘদিন ধরে ঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও নদী ভাঙন থেকে চরপাড়ের মানুষকে রক্ষা করেছে। কিন্তু গাছ কাটা অব্যাহত থাকলে বনায়ন পুরোপুরি বিলীন হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা তাদের। পাতাখালী গ্রামের খোকন সরদার বলেন, আগে চরে প্রচুর গাছ ছিল। এখন প্রায় ফাঁকা হয়ে পড়েছে। রাতে বা দিনে করাত দিয়ে গাছ কেটে রেখে যায়, পরে সেগুলো সরিয়ে নেয়। মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করা হয় গাছটা মরে গিয়েছিল, তাই কাটা হয়েছে। স্থানীয় তরুণ মোস্তফা আল আমিন বলেন, গাছ কাটা আর মাছ শিকারিদের দৌরাত্ম্যে নতুন গাছ জন্মাচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে আর বন টিকবে না। অথচ এ বন আমাদের প্রাকৃতিক রক্ষাকবচ। স্থানীয়দের অভিযোগ, গাবুরা ও পদ্মপুকুর ইউনিয়নের কয়েকটি পরিবার সরাসরি গাছ কেটে বিক্রির সঙ্গে জড়িত। এদের মধ্যে চিহ্নিত মাদকসেবীরাও রয়েছে, যারা মাদক কেনার টাকা সংগ্রহে বন উজাড় করছে। আবার কেউ কেউ কেউড়া ফল সংগ্রহের নামে বড় বড় গাছ কেটে নিচ্ছে। পশ্চিম পাতাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এসএম রুহুল কুদ্দুস বলেন, ২৫ থেকে ৩০ জন স্থানীয় বাসিন্দা প্রকাশ্যে বন কেটে নিচ্ছে। রেণু ধরার সুবিধার্থে শতাধিক গর্ত খোঁড়া হয়েছে। আগে একটি কমিটি বন রক্ষার দায়িত্বে থাকলেও এখন আর তা নেই। সেই সুযোগে চলছে নির্বিচার গাছ কাটা।

পরিবেশবাদী সংগঠন ইয়ুথনেট গ্লোবালের নির্বাহী পরিচালক সোহানুর রহমান বলেন, বনের ভেতরে গর্ত করে মাছের পোনা ধরা আর নির্বিচারে গাছ কাটা পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি। এতে জীববৈচিত্র্য নষ্ট হচ্ছে, নতুন গাছ জন্ম নিচ্ছে না। অথচ এসব চর বন উপকূল রক্ষার প্রাকৃতিক বেষ্টনী হিসেবে কাজ করে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আমজাদুল ইসলাম বলেন, চরে গড়ে ওঠা বনায়নের গাছ কেটে নেওয়ার ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। কিছু দুর্বৃত্ত চুরি করে এসব গাছ পাচার করছে। আমরা জড়িতদের শনাক্তের চেষ্টা করছি। শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. রনী খাতুন বলেন, এ ধরনের বেআইনি গাছ কাটার ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। সামাজিক বন বিভাগকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে প্রশাসনও সরাসরি ব্যবস্থা নেবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চর বন ধ্বংস হলে খোলপেটুয়া নদীর তীরবর্তী এলাকা ভাঙনের মুখে পড়বে। বেড়িবাঁধ হুমকির মুখে পড়বে। বাড়বে জলোচ্ছ্বাস ও দুর্যোগের ঝুঁকি। তাই স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও সামাজিক বন বিভাগের সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া এই চর বনায়ন রক্ষা সম্ভব নয়।

ছবি

গোপালগঞ্জে শিশুকে ধর্ষণচেষ্টা, চড়-থাপ্পড় দিয়েই ‘মীমাংসা’ করলেন মাতবররা

ছবি

মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি: সাড়ে তিন মাস পর বাড়ি ফিরলো যমজ বোন

ছবি

বরিশালে তাপমাত্রার পারদ ক্রমেই নামছে, আসছে শীত

ছবি

রংপুরে আগেভাগেই শীতের তীব্রতা, প্রতিদিনই কমছে তাপমাত্রা

ছবি

গাজীপুরের নিসর্গ রিসোর্টে পেট্রলবোমা সদৃশ বস্তু নিক্ষেপ, উদ্ধার পুলিশের

ছবি

পুলিশের অভিযানে মহিবুল হাসান চৌধুরীর বাসভবনে সাতজন আটক

ছবি

শেরপুরে বক্কর হত্যা মামলার আসামি মনির গ্রেপ্তার

ছবি

‘আমি খুব করে বাঁচতে চেয়েছি,’: রাবি শিক্ষার্থীর মৃতদেহ উদ্ধার, সাথে চিরকুট

জয়পুরহাটে যাত্রীকে লাঞ্ছিতের ঘটনায় বুকিং সহকারী বরখাস্ত

৫ দিনেও জড়িতদের শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ!

ছবি

বরগুনায় পানি সংরক্ষণে ৩৬ কোটি টাকার প্রকল্পে অনিয়ম

ছবি

শেরপুরে গৃহবধূকে ধর্ষণ, গ্রেপ্তার ১

ছবি

তেঁতুলিয়ার তাপমাত্রা ১৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস

ছবি

চকরিয়ায় পুরস্কারের প্রলোভনে বৃত্তি পরীক্ষার নামে বাণিজ্য

ছবি

রায়গঞ্জে ফুলজোড় নদী থেকে এক ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার

ছবি

সাব-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

ছবি

রাজবাড়ীতে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মাঝে সার বিতরণ

ছবি

হাওরের প্রকৃতি, পরিবেশ রক্ষায় মতবিনিময় সভা

ছবি

দামুড়হুদায় বারোমাসি কাঁঠাল বাগানে রানার ভাগ্য বদল

ছবি

পদ্মার শাখা খালে বাঁধ, টঙ্গীবাড়ীতে নৌযান চলাচল বন্ধের আশঙ্কা

ছবি

শেরপুরে তুচ্ছ ঘটনায় সংঘর্ষ, আহত ৬

ছবি

দশমিনায় পান চাষী অমলের সাফল্য

ছবি

পটুয়াখালীর মহিপুরে নিজ বসত ঘরে বৃদ্ধ স্বামী-স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার

ছবি

মেঘনা নদীতে পাঙ্গাশে সয়লাব দেখা মিলেছে না ইলিশের

ছবি

অবৈধ স্থাপনার ক্ষতিপূরণ দিতে উদ্যোগ, জনমনে প্রশ্ন

ছবি

গলাচিপায় জাল সেলাই করে সংসার চলে সহস্রাধিক জেলের

মহেশপুর সীমান্তে ১০ মাসে ২ হাজার ৮৭৩ জন আটক

ছবি

কুষ্টিয়ায় জেলিযুক্ত চিংড়ি মাছ বিক্রির দায়ে ৬ ব্যবসায়ীকে জরিমানা

ছবি

ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে জায়গা মেলেনি চরাইহাটি স্কুলের, অফিস চলে জুতার দোকানে

দুমকিতে ইউপি চেয়ারম্যান আটক

ছবি

সিরাজগঞ্জে প্রবাসীর স্ত্রীকে মামলা তুলে নেওয়ার হুমকির অভিযোগ

ছবি

মোহনগঞ্জে ব্যস্ততা বাড়ছে লেপ তোষক কারিগরদের

ছবি

খোকসায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নাম ফলক তুলে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা

নওগাঁ-১ আসনে বিএনপি প্রার্থী পুনর্বিবেচনার দাবিতে মানববন্ধন

ছবি

গজারিয়ায় বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা

ছবি

যশোরে তিনটি বাড়িতে ককটেল বিস্ফোরণ

tab

সাতক্ষীরার খোলপেটুয়া নদীর তীরের গাছ কেটে সাবাড়

প্রতিনিধি, সাতক্ষীরা

ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৫

সাতক্ষীরার শ্যামনগরের খোলপেটুয়া নদীর তীরে প্রায় ৩০০ একর জায়গাজুড়ে গড়ে ওঠা চর বনায়ন এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। প্রতিদিন নির্বিচারে কাটা হচ্ছে বনাঞ্চলের হাজারও গাছ। কোথাও গাছ কেটে ফেলে রাখা হচ্ছে, আবার জোয়ারের সময় নৌকায় করে পাচার করা হচ্ছে। পাশাপাশি গর্ত খুঁড়ে মাছ শিকারের ফাঁদ বসানোয় নতুন গাছ জন্মাচ্ছে না। অথচ বহু বছর ধরে প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রাচীর হিসেবে উপকূলীয় এলাকাকে রক্ষা করে আসছে এই বন। স্থানীয়দের অভিযোগ, দুই ইউনিয়নের সঙ্গবদ্ধ কয়েকটি চক্র দিন-রাত করাত আর কুঠার চালিয়ে গাছ কেটে নিচ্ছে। কাঠ বিক্রি করে তারা ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হচ্ছে। আর নদীর চরে মাছ ধরার সুবিধার্থে গর্ত খুঁড়ে রাখা হচ্ছে, যেখানে জোয়ারের সময় রেণু আটকে যায়। পরে সেগুলো ধরে বাজারে বিক্রি করা হয়। ফলে একদিকে গাছ উজাড় হচ্ছে, অন্যদিকে নতুন চারাগাছেরও জন্ম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় লোকজন জানান, খোলপেটুয়া নদীতে প্রায় ৭০০ বিঘা জায়গাজুড়ে প্রথমে গ্রামবাসীর উদ্যোগে বনায়ন শুরু হয়। পরে নদীর জোয়ারে ভেসে আসা নানা প্রজাতির বীজ ও ফল থেকে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠে ঘন সবুজ বন। এ বন দীর্ঘদিন ধরে ঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও নদী ভাঙন থেকে চরপাড়ের মানুষকে রক্ষা করেছে। কিন্তু গাছ কাটা অব্যাহত থাকলে বনায়ন পুরোপুরি বিলীন হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা তাদের। পাতাখালী গ্রামের খোকন সরদার বলেন, আগে চরে প্রচুর গাছ ছিল। এখন প্রায় ফাঁকা হয়ে পড়েছে। রাতে বা দিনে করাত দিয়ে গাছ কেটে রেখে যায়, পরে সেগুলো সরিয়ে নেয়। মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করা হয় গাছটা মরে গিয়েছিল, তাই কাটা হয়েছে। স্থানীয় তরুণ মোস্তফা আল আমিন বলেন, গাছ কাটা আর মাছ শিকারিদের দৌরাত্ম্যে নতুন গাছ জন্মাচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে আর বন টিকবে না। অথচ এ বন আমাদের প্রাকৃতিক রক্ষাকবচ। স্থানীয়দের অভিযোগ, গাবুরা ও পদ্মপুকুর ইউনিয়নের কয়েকটি পরিবার সরাসরি গাছ কেটে বিক্রির সঙ্গে জড়িত। এদের মধ্যে চিহ্নিত মাদকসেবীরাও রয়েছে, যারা মাদক কেনার টাকা সংগ্রহে বন উজাড় করছে। আবার কেউ কেউ কেউড়া ফল সংগ্রহের নামে বড় বড় গাছ কেটে নিচ্ছে। পশ্চিম পাতাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এসএম রুহুল কুদ্দুস বলেন, ২৫ থেকে ৩০ জন স্থানীয় বাসিন্দা প্রকাশ্যে বন কেটে নিচ্ছে। রেণু ধরার সুবিধার্থে শতাধিক গর্ত খোঁড়া হয়েছে। আগে একটি কমিটি বন রক্ষার দায়িত্বে থাকলেও এখন আর তা নেই। সেই সুযোগে চলছে নির্বিচার গাছ কাটা।

পরিবেশবাদী সংগঠন ইয়ুথনেট গ্লোবালের নির্বাহী পরিচালক সোহানুর রহমান বলেন, বনের ভেতরে গর্ত করে মাছের পোনা ধরা আর নির্বিচারে গাছ কাটা পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি। এতে জীববৈচিত্র্য নষ্ট হচ্ছে, নতুন গাছ জন্ম নিচ্ছে না। অথচ এসব চর বন উপকূল রক্ষার প্রাকৃতিক বেষ্টনী হিসেবে কাজ করে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আমজাদুল ইসলাম বলেন, চরে গড়ে ওঠা বনায়নের গাছ কেটে নেওয়ার ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। কিছু দুর্বৃত্ত চুরি করে এসব গাছ পাচার করছে। আমরা জড়িতদের শনাক্তের চেষ্টা করছি। শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. রনী খাতুন বলেন, এ ধরনের বেআইনি গাছ কাটার ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। সামাজিক বন বিভাগকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে প্রশাসনও সরাসরি ব্যবস্থা নেবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চর বন ধ্বংস হলে খোলপেটুয়া নদীর তীরবর্তী এলাকা ভাঙনের মুখে পড়বে। বেড়িবাঁধ হুমকির মুখে পড়বে। বাড়বে জলোচ্ছ্বাস ও দুর্যোগের ঝুঁকি। তাই স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও সামাজিক বন বিভাগের সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া এই চর বনায়ন রক্ষা সম্ভব নয়।

back to top