ময়মনসিংহ নগরীর মাসকান্দা বাস টার্মিনাল এলাকায় গত শুক্রবার জুলাই যোদ্ধাকে হেনস্তার ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ও পরিবহন শ্রমিকদের দ্বন্দ্বে ঢাকা ময়মনসিংহ রোডে সব ধরণের বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে সাধারণ যাত্রীদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে।

রোববার, (১২ অক্টোবর ২০২৫) সকাল থেকে কোন ধরনের পূর্বঘোষনা ছাড়াই ময়মনসিংহ থেকে ও ময়মনসিহ হয়ে ঢাকাগামী জামালপুর, নেত্রকোনা, শেরপুর ও কিশোরগঞ্জ জেলার সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে শ্রমিকরা। ঢাকা শ্রমিক ফেডারেশনের নির্দেশেনা অনুযায়ী ময়মনসিংহ পরিবহন শ্রমিক সংগঠন এ ধর্মঘট কর্মসূচি পালন করছে বলে জানিয়েছেন শ্রমিকরা।

নগরীর মাসকান্দা বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, সেখান থেকে ইউনাইটেড সার্ভিস ও সৌখিন পরিবহনের অন্তত ৩০০ গাড়ি ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাচ্ছে না। এতে সপ্তাহের প্রথম দিন অফিসগামী যাত্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীরা বাস টার্মিনালে এসে চরম বিপাকে পড়েছেন। জুলাই যোদ্ধা হেনস্তার ঘটনার সাথে জড়িত এক শ্রমিককে পুলিশ আটক করাসহ ইউনাইটেড পরিবহনের ১৬টি বাস বন্ধ থাকার আশ্বাসে মাসকান্দা বাসট্যান্ডে জুলাইযোদ্ধা ও এনসিপি নেতাকর্মীরা অবস্থান কর্মসূচি এবং ঢাকা বাইপাস এলাকা থেকে পরিবহন শ্রমিকদের অবরোধ তুলে নেয়া হয়। কিন্তু রোববার সকাল থেকে ঢাকা শ্রমিক ফেডরেশনের নেতৃবৃন্দের নির্দেশে আটক করা শ্রমিককে মুক্তিদানসহ শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা দাবিতে অনশন ধর্মঘটের ডাক দেয় বাস টার্মিনাল পরিবহন শ্রমিকরা। সকল সমস্যার সমাধান ঘটিয়ে রাজনীতি মুক্ত পরিবহন ব্যবস্থারও দাবি জানান তারা। ফলে আবারও ঢাকা ময়মনসিংহ রোডে চলা ময়মনসিংহসহ নেত্রকোনা, শেরপুর, জামালপুর ছাড়াও কিশোরগঞ্জের সব ধরনের দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

এ অবস্থায় গন্তব্যে যেতে না পারায় বিপাকে পড়া যাত্রীরা বলেন, আলোচানার মাধ্যমে দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তি থেকে মুক্তি দেয়া হোক।

ঢাকাগামী যাত্রীরা আরও বলেন, রোববার, থেকে ঢাকা যাওয়ার চেষ্টা করছি কিন্তু আন্দোলনের কারণে যেতে পারছি না। হুটহাট করে এমন বাস বন্ধের সিদ্ধান্ত কোন ভাবেই কাম্য নয়। আমরা চাই অন্তত বাসস্ট্যান্ড রাজনীতি মুক্ত থাকুক।

পরিবহন শ্রমিকরা বলেন, বাস বন্ধ থাকলে আমাদের না খেয়ে থাকতে হয়। কিন্তু এবার বাস বন্ধের যৌক্তিক কারণ রয়েছে। সেদিনের ঘটনায় আমাদের এক শ্রমিক জেলে রয়েছে। তারপরে ১৬টি বাস বন্ধের পাশাপাশি বাস জব্দ করতে হবে এমন দাবি মানার মত নয়। কারণ এসব বাসের সাথে শ্রমিকের রিজিক জড়িত।

হেনেস্থার শিকার জুলাইযোদ্ধা আবু রায়হান বলেন, প্রশাসন এবং শ্রমিক নেতারা আমাদের দাবি মেনে নেওয়ায় যাত্রী দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছি। আমরা চাইনা মাসকান্দা বাসস্ট্যান্ডে ফ্যাসিস্টের কোন স্মৃতি চিহ্ন থাকুক। তবে দাবি মেনে নেওয়ার পর শুনেছি মাসকান্দা বাসস্ট্যান্ড থেকে ইউনাইটেড এবং সৌখিন পরিবহনের কোন বাস ছেড়ে যাচ্ছে না। যাত্রী দুর্ভোগ হলে আবারও আমরা আন্দোলনে নামবো।

ময়মনসিংহ জেলা মটর মালিক সমিতির সভাপতি ও জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আলমগীর মাহমুদ আলম বলেন, এনসিপির কয়েকজনকে সামনে রেখে একটি পক্ষ বিষয়টি বড় করছে। তারা অনৈতিক সুবিধা নিতে প্রায়ই এমন ঝামেলা সৃষ্টি করে। রোববার, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আমিনুল হক শামীম পরিচালিত ১৬ বাস বন্ধের পাশাপাশি একটি মনিটরিং টিম গঠন করার সিদ্ধান্ত হওয়ায় বাস চলাচল শুরুর সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু ঢাকার নেতৃবৃন্দ তা মানতে নারাজ, যার কারণে ইউনাইটেড এবং সৌখিন পরিবহন চলাচল বন্ধ থাকে। সকাল থেকে বিভাগের চার জেলাসহ ঢাকাগামী কিশোরগঞ্জের বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। তাদের দাবি নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ আটক শ্রমিকের দ্রুত মুক্তি দিতে হবে।