alt

ব্রহ্মপুত্রের স্রোতে ভেসে আসা কাঠে বদলে যাচ্ছে নদীতীরের মানুষজনের জীবিকা

প্রতিনিধি, গাইবান্ধা : বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

গাইবান্ধা : নদী তীরে কাঠের কান্ড ও ডালপালার স্তূপ -সংবাদ

বন্যার স্রোতে উজান থেকে ভেসে আসে নানা রকম কাঠ, গাছের ডাল, কান্ড, এমনকি বিশাল আকারের গাছও। ভারতের পাহাড়ি এলাকা ও সীমান্তঘেঁষা অরণ্য অঞ্চল থেকে এসব কাঠ ভেসে আসে ব্রহ্মপুত্র নদীরে স্রোতে। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে উজানে বৃষ্টিপাত ও পানি বৃদ্ধিতে নদীজুড়ে বিভিন্ন গাছের কাঠের কান্ড ও ডালপালা ভেসে আসে। আর সেই কাঠ সংগ্রহে এখন ব্যস্ত নদী তীরের মানুষজন। কেউ নৌকা নিয়ে, কেউবা সাঁতরে নেমে কাঠ তুলছে তীর ঘেঁষে।

গাইবান্ধা সদর, সুন্দগঞ্জ, সাঘাটা, ফুলছড়ি, কুড়িগ্রামের চিলমারী, উলিপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ ও জামালপুর জেলার নদীতীরবর্তী এলাকায় এখন এক ধরনের উৎসবমুখর পরিবেশ দেখা যায়। নদীর স্রোতে ভেসে আসা কাঠ ধরতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্যস্ত সময় কাটায় স্থানীয়রা। তাদের কাছে এটি যেন প্রকৃতির উপহার। নদীর স্রোতের গতিপথ ও ভাটির দিকে ভেসে আসা কাঠের হিসাব রাখে অনেকেই। কখন কোথায় কাঠ ভেসে আসবে, তা আন্দাজ করে তারা আগেভাগেই নৌকা নিয়ে প্রস্তুত থাকে।

সাঘাটা উপজেলার হাসিলকান্দি চরের দেখা গেছে, নৌকা নিয়ে তিনজন যুবক নদীর মাঝখানে দাঁড়িয়ে কাঠ ধরার প্রতিযোগিতায় মেতে আছে। কেউ জাল ফেলছে, কেউ বাঁশের কঞ্চি দিয়ে ভাসমান কাঠ থামাচ্ছে। নদীর ধারে দাঁড়িয়ে থাকা আরও কয়েকজন অপেক্ষায়—কোনো বড় গাছ ভেসে এলে সবাই মিলে তা টেনে তীরে তুলবে।

স্থানীয় বাসিন্দা হাবিজার রহমান বলেন, প্রতি বর্ষায় নদীর স্রোতে অনেক কাঠ ভেসে আসে। আগে আমরা এগুলো তেমন গুরুত্ব দিতাম না। এবার এতো বড় বড় কাঠ গাছ আসছে যা দেখে লোভ সামলাতে পারিনি। এখন এসব কাঠ বিক্রি করে অনেকে ভালো আয় করছে। তিনি জানান, একটি বড় কাঠের গুঁড়ি ৫০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি করা যায়।

ফুলছড়ি উপজেলার দক্ষিণ খাটিয়ামারী চরের রহিমা বেগম বলেন, আমাদের এখানে জীবিকা সীমিত। নদী ভাঙনে ঘরবাড়ি হারিয়েছি। এখন নদীর কাঠই আমাদের রুজি—রোজগারের বড় ভরসা। আমার ছেলে নৌকা নিয়ে কাঠ ধরে, আমি সেগুলো শুকিয়ে বাজারে বিক্রি করি।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভারতের আসাম রাজ্যের পাহাড়ি অরণ্য ও ব্রহ্মপুত্রের উজান অংশে বর্ষায় প্রচুর গাছ ভেসে যায়। এসব কাঠের একটি অংশ বাংলাদেশের ভাটির দিকে এসে পড়ে। নদীর স্রোতের সঙ্গে ভেসে আসা কাঠে কখনো বড় গাছের কাণ্ড ও থাকে, যা কাটলে জ্বালানি কাঠ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আবার কেউ কেউ এসব কাঠ দিয়ে আসবাব তৈরি করে বিক্রিও করে থাকেন।

সাঘাটা হলদিয়া ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য ওমর আলী সরকার জানান, আগে উজান থেকে কাঠ ভেসে আসতো। তবে এবছর যেভাবে এসেছে তা ধারনা বাইরে। তিনি মনে করেন অব্যশই ভারতে প্রচুর বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ধ্বসে গাছপালা ভেঙ্গে পেড়েছে।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গণ উন্নয়ন কেন্দ্রের নির্বাহী প্রধান এম. আবদুস্ সালাম জানান, নদী তীরের মানুষ যেভাবে প্রাকৃতিকভাবে কাঠ সংগ্রহ করছে, সেটি স্থানীয় অর্থনীতিতে কিছুটা ভূমিকা রাখছে। তবে বড় কাঠ সংগ্রহে ঝুঁকি আছে, কারণ স্রোত প্রবল থাকায় দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থাকে। তিনি আরোও জানান, ভেসে আসা কাঠ বিকল্প জীবিকার পথ সৃষ্টি করেছে।

ফুলছড়ির বালাসীঘাটের আব্দুল হামিদ মিয়া জানান, বন্যার মৌসুমে নদী ভরপুর থাকায় কাঠ সংগ্রহের সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কাও থাকে। প্রবল স্রোতের কারণে অনেক সময় কাঠের গুঁড়ি উল্টে গিয়ে নৌকা ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা কেউ কেউ পানিতে পড়ে যায়।

কয়েক বছর আগে সাঘাটা উপজেলার কালুরপাড়া চরে কাঠ তুলতে গিয়ে এক যুবকের প্রাণহানি ঘটে। তাই এখন অনেকেই দলবদ্ধভাবে কাজ করে।

কুন্দেরপাড়া চরের ইউনুস আলী জানান, নৌকা না থাকায় কাঠ সংগ্রহে সমস্যা হয়েছে। অনেকে ঝুকি নিয়ে দেখা দেখি করে কাঠ সংগ্রহ করেছে।

নদীর কাঠ সংগ্রহ এখন স্থানীয় অর্থনীতির একটি অঘোষিত অংশে পরিণত হয়েছে। কেউ নিজ ব্যবহারের জন্য কাঠ সংগ্রহ করেন, কেউ তা বিক্রি করেন, আবার কেউ কাঠ শুকিয়ে জ্বালানি হিসেবে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। ফলে নদীর তীরে এ মৌসুমে একধরনের কর্মচাঞ্চল্য দেখা যায়। ফুলছড়ি উজালড্ঙা গ্রামের সালেহা বেগম বলেন, যে কাঠ সংগ্রহ করেছি তাতে আগামী একবছর আর খড়ির চিন্তা নেই।

গাইবান্ধার পরিবেশবিদ র‌্যাফেল জানান, নদী স্রোতে ভেসে আসা কাঠ সংগ্রহ সরাসরি পরিবেশের ক্ষতি না করলেও, অসচেতনভাবে নদীতে বাঁধা দেওয়া বা নৌকার চলাচলে বাধা সৃষ্টি করলে তা নদীর স্বাভাবিক প্রবাহে প্রভাব ফেলতে পারে। তাই এই প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণে কিছুটা নিয়ম-কানুন প্রয়োজন।

গত সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত প্রায় চর ও নদী তীরের অন্ততপক্ষে ৪০ হাজার পরিবার কাঠ সংগ্রহ করেছে বলে জানা যায়। চরবাসীর কাছে এই কাঠ যেন আশীর্বাদ। বন্যা শেষে যখন মাঠ—ঘাট ভেসে যায়, ফসল নষ্ট হয়, তখন এই কাঠই তাদের হাতে আসে নতুন জীবিকার হাতছানি নিয়ে। নদীর স্রোতে ভেসে আসা কাঠ এখন শুধু একটি প্রাকৃতিক ঘটনা নয়, বরং চরবাসীর টিকে থাকার লড়াইয়ের নীরব সাক্ষী হয়ে উঠেছে।

ছবি

পটুয়াখালীতে যুবদল-ছাত্রদলের সঙ্গে গণঅধিকারের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে আহত ২০

ছবি

কচুয়ায় অর্ধেকের বেশি আলু অবিক্রীত, লোকসানে ব্যবসায়ী ও কৃষকরা

ছবি

কোস্ট গার্ডের পৃথক অভিযানে সাড়ে ৩ হাজার কেজি জাটকা জব্দ

ছবি

পাকিস্তানে যুদ্ধ করতে গিয়ে নিহত গোপালগঞ্জের রতন, পরিবারে নেই শোকের ছায়া

ছবি

সাভারে দুই হত্যার বিচার দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ

ছবি

রংপুরে ‘ভুল চিকিৎসায়’ রোগীর মৃত্যু নিয়ে তুলকালাম

ছবি

অনুমোদনহীন ওষুধ কারখানা: ঝুঁকি বাড়ছে ভোক্তাদের, দরকার প্রশাসনের তোড়জোর

ছবি

ফরিদপুরে বিএনপির দুই গ্রুপে সংঘর্ষ, ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ: আহত ২৩

ছবি

চট্টগ্রামে নির্বাচনী প্রচারণায় প্রার্থী খুন, বিএনপি নেতাসহ গ্রেপ্তার ২

ছবি

শনিবার থেকে লাগাতার অবস্থানের ডাক প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের

ইসলামপুরে দশআনী নদী থেকে অজ্ঞাত পুরুষের মরদেহ উদ্ধার

ছবি

দশমিনায় আমন ধান রক্ষায় কৃষি দপ্তরের নানা কৌশল

ছবি

মধুপুরে সেনাবাহিনীর চক্ষু চিকিৎসাসেবা ক্যাম্প অনুষ্ঠিত

ছবি

তালতলীতে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ

ছবি

সুন্দরবনে রাস উৎসবের আড়ালে হরিণ শিকার, ৪২ জন আটক

ছবি

সৈয়দপুরে মাদকদ্রব্যসহ গ্রেপ্তার১

ছবি

বাগদাফার্মে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচার দাবি আদিবাসী পরিষদের

ছবি

খোকসায় হামলা পাল্টা হামলা, বাড়িঘর ভাংচুর

ছবি

রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পের আগুন নিয়ন্ত্রণে

ছবি

কুমিল্লা-৭ আসনে প্রার্থী ঘোষণা না হওয়ায় হতাশায় বিএনপি নেতাকর্মীরা

ছবি

গজারিয়ায় চুরি-ডাকাতি প্রতিরোধে উপজেলা ব্যাপী গ্রামে গ্রামে পাহারা

ছবি

মাদারগঞ্জে জোনাইল বাজার মোসলেমাবাদ সড়কে ব্রীজ নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন

ছবি

ট্রাক চাপায় নিহত ২

ছবি

আক্কেলপুরে রাস পূর্ণিমা অনুষ্ঠিত

ছবি

মোরেলগঞ্জে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসে র‌্যালী ও আলোচনা

ছবি

সিলেটে শাহ আরেফিন টিলায় পাথর লুটের মহোৎসব

ছবি

কচুয়ায় মাছের ঘের থেকে যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার

ছবি

ঝিনাইগাতীতে বিনামূল্যে শাক-সবজির বীজ বিতরণ

ছবি

জয়দেবপুর রেলক্রসিং দখলমুক্ত সমন্বিত অভিযানে স্বস্তির নিঃশ্বাস

ছবি

সোনারগাঁয়ে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ বাড়িঘর ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ

ছবি

আড়াইহাজারে ইয়াবাসহ ২ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার

ছবি

দেশের প্রথম কেবল-স্টেইড সেতু হচ্ছে মতলব-গজারিয়ায়

ছবি

পলাশে ডেভিল হান্ট অভিযানে গ্রেপ্তার ৪

ছবি

চারঘাট সীমান্ত থেকে ভারতীয় ফেন্সিডিল জব্দ

ছবি

মোবাইল ছেড়ে হাতে খুন্তি-কোদাল, মহিষমারা কলেজে ব্যতিক্রমী শিক্ষা

ছবি

চকরিয়া রেলস্টেশনে যাত্রাবিরতির দাবিতে উপদেষ্টার কাছে চিঠি

tab

ব্রহ্মপুত্রের স্রোতে ভেসে আসা কাঠে বদলে যাচ্ছে নদীতীরের মানুষজনের জীবিকা

প্রতিনিধি, গাইবান্ধা

গাইবান্ধা : নদী তীরে কাঠের কান্ড ও ডালপালার স্তূপ -সংবাদ

বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

বন্যার স্রোতে উজান থেকে ভেসে আসে নানা রকম কাঠ, গাছের ডাল, কান্ড, এমনকি বিশাল আকারের গাছও। ভারতের পাহাড়ি এলাকা ও সীমান্তঘেঁষা অরণ্য অঞ্চল থেকে এসব কাঠ ভেসে আসে ব্রহ্মপুত্র নদীরে স্রোতে। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে উজানে বৃষ্টিপাত ও পানি বৃদ্ধিতে নদীজুড়ে বিভিন্ন গাছের কাঠের কান্ড ও ডালপালা ভেসে আসে। আর সেই কাঠ সংগ্রহে এখন ব্যস্ত নদী তীরের মানুষজন। কেউ নৌকা নিয়ে, কেউবা সাঁতরে নেমে কাঠ তুলছে তীর ঘেঁষে।

গাইবান্ধা সদর, সুন্দগঞ্জ, সাঘাটা, ফুলছড়ি, কুড়িগ্রামের চিলমারী, উলিপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ ও জামালপুর জেলার নদীতীরবর্তী এলাকায় এখন এক ধরনের উৎসবমুখর পরিবেশ দেখা যায়। নদীর স্রোতে ভেসে আসা কাঠ ধরতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্যস্ত সময় কাটায় স্থানীয়রা। তাদের কাছে এটি যেন প্রকৃতির উপহার। নদীর স্রোতের গতিপথ ও ভাটির দিকে ভেসে আসা কাঠের হিসাব রাখে অনেকেই। কখন কোথায় কাঠ ভেসে আসবে, তা আন্দাজ করে তারা আগেভাগেই নৌকা নিয়ে প্রস্তুত থাকে।

সাঘাটা উপজেলার হাসিলকান্দি চরের দেখা গেছে, নৌকা নিয়ে তিনজন যুবক নদীর মাঝখানে দাঁড়িয়ে কাঠ ধরার প্রতিযোগিতায় মেতে আছে। কেউ জাল ফেলছে, কেউ বাঁশের কঞ্চি দিয়ে ভাসমান কাঠ থামাচ্ছে। নদীর ধারে দাঁড়িয়ে থাকা আরও কয়েকজন অপেক্ষায়—কোনো বড় গাছ ভেসে এলে সবাই মিলে তা টেনে তীরে তুলবে।

স্থানীয় বাসিন্দা হাবিজার রহমান বলেন, প্রতি বর্ষায় নদীর স্রোতে অনেক কাঠ ভেসে আসে। আগে আমরা এগুলো তেমন গুরুত্ব দিতাম না। এবার এতো বড় বড় কাঠ গাছ আসছে যা দেখে লোভ সামলাতে পারিনি। এখন এসব কাঠ বিক্রি করে অনেকে ভালো আয় করছে। তিনি জানান, একটি বড় কাঠের গুঁড়ি ৫০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি করা যায়।

ফুলছড়ি উপজেলার দক্ষিণ খাটিয়ামারী চরের রহিমা বেগম বলেন, আমাদের এখানে জীবিকা সীমিত। নদী ভাঙনে ঘরবাড়ি হারিয়েছি। এখন নদীর কাঠই আমাদের রুজি—রোজগারের বড় ভরসা। আমার ছেলে নৌকা নিয়ে কাঠ ধরে, আমি সেগুলো শুকিয়ে বাজারে বিক্রি করি।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভারতের আসাম রাজ্যের পাহাড়ি অরণ্য ও ব্রহ্মপুত্রের উজান অংশে বর্ষায় প্রচুর গাছ ভেসে যায়। এসব কাঠের একটি অংশ বাংলাদেশের ভাটির দিকে এসে পড়ে। নদীর স্রোতের সঙ্গে ভেসে আসা কাঠে কখনো বড় গাছের কাণ্ড ও থাকে, যা কাটলে জ্বালানি কাঠ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আবার কেউ কেউ এসব কাঠ দিয়ে আসবাব তৈরি করে বিক্রিও করে থাকেন।

সাঘাটা হলদিয়া ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য ওমর আলী সরকার জানান, আগে উজান থেকে কাঠ ভেসে আসতো। তবে এবছর যেভাবে এসেছে তা ধারনা বাইরে। তিনি মনে করেন অব্যশই ভারতে প্রচুর বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ধ্বসে গাছপালা ভেঙ্গে পেড়েছে।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গণ উন্নয়ন কেন্দ্রের নির্বাহী প্রধান এম. আবদুস্ সালাম জানান, নদী তীরের মানুষ যেভাবে প্রাকৃতিকভাবে কাঠ সংগ্রহ করছে, সেটি স্থানীয় অর্থনীতিতে কিছুটা ভূমিকা রাখছে। তবে বড় কাঠ সংগ্রহে ঝুঁকি আছে, কারণ স্রোত প্রবল থাকায় দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থাকে। তিনি আরোও জানান, ভেসে আসা কাঠ বিকল্প জীবিকার পথ সৃষ্টি করেছে।

ফুলছড়ির বালাসীঘাটের আব্দুল হামিদ মিয়া জানান, বন্যার মৌসুমে নদী ভরপুর থাকায় কাঠ সংগ্রহের সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কাও থাকে। প্রবল স্রোতের কারণে অনেক সময় কাঠের গুঁড়ি উল্টে গিয়ে নৌকা ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা কেউ কেউ পানিতে পড়ে যায়।

কয়েক বছর আগে সাঘাটা উপজেলার কালুরপাড়া চরে কাঠ তুলতে গিয়ে এক যুবকের প্রাণহানি ঘটে। তাই এখন অনেকেই দলবদ্ধভাবে কাজ করে।

কুন্দেরপাড়া চরের ইউনুস আলী জানান, নৌকা না থাকায় কাঠ সংগ্রহে সমস্যা হয়েছে। অনেকে ঝুকি নিয়ে দেখা দেখি করে কাঠ সংগ্রহ করেছে।

নদীর কাঠ সংগ্রহ এখন স্থানীয় অর্থনীতির একটি অঘোষিত অংশে পরিণত হয়েছে। কেউ নিজ ব্যবহারের জন্য কাঠ সংগ্রহ করেন, কেউ তা বিক্রি করেন, আবার কেউ কাঠ শুকিয়ে জ্বালানি হিসেবে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। ফলে নদীর তীরে এ মৌসুমে একধরনের কর্মচাঞ্চল্য দেখা যায়। ফুলছড়ি উজালড্ঙা গ্রামের সালেহা বেগম বলেন, যে কাঠ সংগ্রহ করেছি তাতে আগামী একবছর আর খড়ির চিন্তা নেই।

গাইবান্ধার পরিবেশবিদ র‌্যাফেল জানান, নদী স্রোতে ভেসে আসা কাঠ সংগ্রহ সরাসরি পরিবেশের ক্ষতি না করলেও, অসচেতনভাবে নদীতে বাঁধা দেওয়া বা নৌকার চলাচলে বাধা সৃষ্টি করলে তা নদীর স্বাভাবিক প্রবাহে প্রভাব ফেলতে পারে। তাই এই প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণে কিছুটা নিয়ম-কানুন প্রয়োজন।

গত সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত প্রায় চর ও নদী তীরের অন্ততপক্ষে ৪০ হাজার পরিবার কাঠ সংগ্রহ করেছে বলে জানা যায়। চরবাসীর কাছে এই কাঠ যেন আশীর্বাদ। বন্যা শেষে যখন মাঠ—ঘাট ভেসে যায়, ফসল নষ্ট হয়, তখন এই কাঠই তাদের হাতে আসে নতুন জীবিকার হাতছানি নিয়ে। নদীর স্রোতে ভেসে আসা কাঠ এখন শুধু একটি প্রাকৃতিক ঘটনা নয়, বরং চরবাসীর টিকে থাকার লড়াইয়ের নীরব সাক্ষী হয়ে উঠেছে।

back to top