alt

জীবনের বৈঠা হাতে লিয়াকত মাঝি পেট চলে না তবুও হাসি আছে মুখে

প্রতিনিধ, চুয়াডাঙ্গা : বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫

চুয়াডাঙ্গা : বৈঠা হাতে মাঝি -সংবাদ

নদীর স্রোত থেমে থাকে না। দিনশেষে সূর্য যেমন ডুবে যায়, আবার নতুন ভোর আসে তেমনি অনবরত সময় বয়ে যায় নিজের মতো করে। এই সময়ের স্রোতের সঙ্গেই লড়ছেন চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার জীরাট ঘাটের এক অক্লান্ত মানুষ লিয়াকত আলী, যাকে স্থানীয়রা ভালোবেসে ডাকে লিয়াকত মাঝি নামে। ৬৭ বছরের এই বৃদ্ধ মাঝি যেন জীবন্ত এক কবিতা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের খেয়ানৌকা কবিতার চরিত্রের মতো। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত মাথাভাঙ্গা নদীর ঢেউয়ের সঙ্গে যুদ্ধ করে মানুষ পারাপার করান তিনি। তাঁর হাতে ধরা দাড় যেন জীবনের বৈঠা, যে বৈঠা দিয়ে তিনি শুধু মানুষ নয়, পার করান নিজের দিনকালকেও।

লিয়াকত মাঝির ঘর নদীর পাশেই, দামুড়হুদার পারকষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নের জীরাট গ্রামে। মাথাভাঙ্গা নদীর তীরে তাঁর ছোট্ট ঝুপড়ি ঘর, যেখানে তিনি থাকেন একা। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া শরীর, মুখে কালের ছাপ, কিন্তু তবুও জীবনের সঙ্গে আপোষ করেননি তিনি। প্রতিদিন সকালে প্রথম সূর্যের আলো পড়ার আগেই তিনি চলে আসেন ঘাটে। হাতে পুরনো বৈঠা, গায়ে মলিন গামছা, চোখে দৃঢ়তা, নদীর ঢেউয়ের সঙ্গে যেন এক বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে তার।

নৌকায় ছই টাঙানো, পাশে জড়ানো পুরনো কাপড়,যেন জীবনক্লান্ত এক সঙ্গী তার সঙ্গে ভেসে চলে। কেউ অসুস্থ হলে, কেউ ওষুধ আনতে গেলে, কেউ বাজারে সবাই ভরসা করেন লিয়াকত মাঝির নৌকায়। দিনভর খাটুনি শেষে তার আয় মাত্র তিন থেকে চার শ’ টাকা। আজকের দ্রব্যমূল্যের আকাশছোয়া দিনে এই টাকায় সংসার টিকিয়ে রাখা যেন যুদ্ধের চেয়েও কঠিন। লিয়াকত মাঝি বলেন, আমার নিজের জমি নাই, ঘরও নাই। এক সময় অন্যের জমিতে থাকতাম, পরে চেয়ারম্যান-মেম্বাররা একটু সাহায্য করে সরকারি খাসজমিতে একটা ঘর পাই। এখন সেই ঘরেই থাকি একা। দুই ছেলে, এক মেয়ে, সবাই আলাদা হয়ে গেছে। এখন নিজের পেটে ভাত জোটাতে খেয়াই আমার ভরসা। কথার শেষে একরাশ দীর্ঘশ্বাস মিশে থাকে তাঁর গলায়। নদীর স্রোতের মতোই বয়ে চলে তাঁর জীবন,কখনও শান্ত, কখনও উত্তাল। জীরাট গ্রামের রুবেল বলেন, লিয়াকত ভাই না থাকলে এই ঘাট একেবারে বন্ধ হয়ে যেত। দশ বছর ধরে তিনি একা মানুষ পারাপার করে যাচ্ছেন। রাত-বিরেতেও যদি কারও দরকার পড়ে, তিনি না বলেন না। দর্শনা দাসপাড়ার শ্রী গিরিবালা বাঘদি যোগ করেন নদীতে যতই ঝড়-বৃষ্টি হোক, লিয়াকত মাঝি ঠিকই নৌকা নিয়ে ঘাটে হাজির হন। এমন মানুষ এখন আর দেখা যায় না।

দিন শেষে নদীর ঢেউ যেমন মিলিয়ে যায় অন্ধকারে, লিয়াকতের জীবনও তেমনি ডুবে যায় ক্লান্তির ঘূর্ণিতে। কিন্তু পরদিন আবার তিনি ভোরের আলোয় জেগে ওঠেন, যেন নদীরই এক অংশ হয়ে গেছেন তিনি। সম্ভবত নদীও জানে যতদিন মাঝি লিয়াকত বেচে আছেন, ততদিন মাথাভাঙ্গা নদী তার গল্প বলবে, বলবে এক মানুষ ও নদীর অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কের কথা। নদী বয়ে চলে নিজের গতিতে, আর লিয়াকত মাঝি বয়ে চলেন জীবনের স্রোতে অক্লান্ত, অবিচল, নীরবে।

ছবি

গোপালগঞ্জে শিশুকে ধর্ষণচেষ্টা, চড়-থাপ্পড় দিয়েই ‘মীমাংসা’ করলেন মাতবররা

ছবি

মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি: সাড়ে তিন মাস পর বাড়ি ফিরলো যমজ বোন

ছবি

বরিশালে তাপমাত্রার পারদ ক্রমেই নামছে, আসছে শীত

ছবি

রংপুরে আগেভাগেই শীতের তীব্রতা, প্রতিদিনই কমছে তাপমাত্রা

ছবি

গাজীপুরের নিসর্গ রিসোর্টে পেট্রলবোমা সদৃশ বস্তু নিক্ষেপ, উদ্ধার পুলিশের

ছবি

পুলিশের অভিযানে মহিবুল হাসান চৌধুরীর বাসভবনে সাতজন আটক

ছবি

শেরপুরে বক্কর হত্যা মামলার আসামি মনির গ্রেপ্তার

ছবি

‘আমি খুব করে বাঁচতে চেয়েছি,’: রাবি শিক্ষার্থীর মৃতদেহ উদ্ধার, সাথে চিরকুট

জয়পুরহাটে যাত্রীকে লাঞ্ছিতের ঘটনায় বুকিং সহকারী বরখাস্ত

৫ দিনেও জড়িতদের শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ!

ছবি

বরগুনায় পানি সংরক্ষণে ৩৬ কোটি টাকার প্রকল্পে অনিয়ম

ছবি

শেরপুরে গৃহবধূকে ধর্ষণ, গ্রেপ্তার ১

ছবি

তেঁতুলিয়ার তাপমাত্রা ১৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস

ছবি

চকরিয়ায় পুরস্কারের প্রলোভনে বৃত্তি পরীক্ষার নামে বাণিজ্য

ছবি

রায়গঞ্জে ফুলজোড় নদী থেকে এক ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার

ছবি

সাব-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

ছবি

রাজবাড়ীতে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মাঝে সার বিতরণ

ছবি

হাওরের প্রকৃতি, পরিবেশ রক্ষায় মতবিনিময় সভা

ছবি

দামুড়হুদায় বারোমাসি কাঁঠাল বাগানে রানার ভাগ্য বদল

ছবি

পদ্মার শাখা খালে বাঁধ, টঙ্গীবাড়ীতে নৌযান চলাচল বন্ধের আশঙ্কা

ছবি

শেরপুরে তুচ্ছ ঘটনায় সংঘর্ষ, আহত ৬

ছবি

দশমিনায় পান চাষী অমলের সাফল্য

ছবি

পটুয়াখালীর মহিপুরে নিজ বসত ঘরে বৃদ্ধ স্বামী-স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার

ছবি

মেঘনা নদীতে পাঙ্গাশে সয়লাব দেখা মিলেছে না ইলিশের

ছবি

অবৈধ স্থাপনার ক্ষতিপূরণ দিতে উদ্যোগ, জনমনে প্রশ্ন

ছবি

গলাচিপায় জাল সেলাই করে সংসার চলে সহস্রাধিক জেলের

মহেশপুর সীমান্তে ১০ মাসে ২ হাজার ৮৭৩ জন আটক

ছবি

কুষ্টিয়ায় জেলিযুক্ত চিংড়ি মাছ বিক্রির দায়ে ৬ ব্যবসায়ীকে জরিমানা

ছবি

ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে জায়গা মেলেনি চরাইহাটি স্কুলের, অফিস চলে জুতার দোকানে

দুমকিতে ইউপি চেয়ারম্যান আটক

ছবি

সিরাজগঞ্জে প্রবাসীর স্ত্রীকে মামলা তুলে নেওয়ার হুমকির অভিযোগ

ছবি

মোহনগঞ্জে ব্যস্ততা বাড়ছে লেপ তোষক কারিগরদের

ছবি

খোকসায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নাম ফলক তুলে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা

নওগাঁ-১ আসনে বিএনপি প্রার্থী পুনর্বিবেচনার দাবিতে মানববন্ধন

ছবি

গজারিয়ায় বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা

ছবি

যশোরে তিনটি বাড়িতে ককটেল বিস্ফোরণ

tab

জীবনের বৈঠা হাতে লিয়াকত মাঝি পেট চলে না তবুও হাসি আছে মুখে

প্রতিনিধ, চুয়াডাঙ্গা

চুয়াডাঙ্গা : বৈঠা হাতে মাঝি -সংবাদ

বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫

নদীর স্রোত থেমে থাকে না। দিনশেষে সূর্য যেমন ডুবে যায়, আবার নতুন ভোর আসে তেমনি অনবরত সময় বয়ে যায় নিজের মতো করে। এই সময়ের স্রোতের সঙ্গেই লড়ছেন চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার জীরাট ঘাটের এক অক্লান্ত মানুষ লিয়াকত আলী, যাকে স্থানীয়রা ভালোবেসে ডাকে লিয়াকত মাঝি নামে। ৬৭ বছরের এই বৃদ্ধ মাঝি যেন জীবন্ত এক কবিতা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের খেয়ানৌকা কবিতার চরিত্রের মতো। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত মাথাভাঙ্গা নদীর ঢেউয়ের সঙ্গে যুদ্ধ করে মানুষ পারাপার করান তিনি। তাঁর হাতে ধরা দাড় যেন জীবনের বৈঠা, যে বৈঠা দিয়ে তিনি শুধু মানুষ নয়, পার করান নিজের দিনকালকেও।

লিয়াকত মাঝির ঘর নদীর পাশেই, দামুড়হুদার পারকষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নের জীরাট গ্রামে। মাথাভাঙ্গা নদীর তীরে তাঁর ছোট্ট ঝুপড়ি ঘর, যেখানে তিনি থাকেন একা। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া শরীর, মুখে কালের ছাপ, কিন্তু তবুও জীবনের সঙ্গে আপোষ করেননি তিনি। প্রতিদিন সকালে প্রথম সূর্যের আলো পড়ার আগেই তিনি চলে আসেন ঘাটে। হাতে পুরনো বৈঠা, গায়ে মলিন গামছা, চোখে দৃঢ়তা, নদীর ঢেউয়ের সঙ্গে যেন এক বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে তার।

নৌকায় ছই টাঙানো, পাশে জড়ানো পুরনো কাপড়,যেন জীবনক্লান্ত এক সঙ্গী তার সঙ্গে ভেসে চলে। কেউ অসুস্থ হলে, কেউ ওষুধ আনতে গেলে, কেউ বাজারে সবাই ভরসা করেন লিয়াকত মাঝির নৌকায়। দিনভর খাটুনি শেষে তার আয় মাত্র তিন থেকে চার শ’ টাকা। আজকের দ্রব্যমূল্যের আকাশছোয়া দিনে এই টাকায় সংসার টিকিয়ে রাখা যেন যুদ্ধের চেয়েও কঠিন। লিয়াকত মাঝি বলেন, আমার নিজের জমি নাই, ঘরও নাই। এক সময় অন্যের জমিতে থাকতাম, পরে চেয়ারম্যান-মেম্বাররা একটু সাহায্য করে সরকারি খাসজমিতে একটা ঘর পাই। এখন সেই ঘরেই থাকি একা। দুই ছেলে, এক মেয়ে, সবাই আলাদা হয়ে গেছে। এখন নিজের পেটে ভাত জোটাতে খেয়াই আমার ভরসা। কথার শেষে একরাশ দীর্ঘশ্বাস মিশে থাকে তাঁর গলায়। নদীর স্রোতের মতোই বয়ে চলে তাঁর জীবন,কখনও শান্ত, কখনও উত্তাল। জীরাট গ্রামের রুবেল বলেন, লিয়াকত ভাই না থাকলে এই ঘাট একেবারে বন্ধ হয়ে যেত। দশ বছর ধরে তিনি একা মানুষ পারাপার করে যাচ্ছেন। রাত-বিরেতেও যদি কারও দরকার পড়ে, তিনি না বলেন না। দর্শনা দাসপাড়ার শ্রী গিরিবালা বাঘদি যোগ করেন নদীতে যতই ঝড়-বৃষ্টি হোক, লিয়াকত মাঝি ঠিকই নৌকা নিয়ে ঘাটে হাজির হন। এমন মানুষ এখন আর দেখা যায় না।

দিন শেষে নদীর ঢেউ যেমন মিলিয়ে যায় অন্ধকারে, লিয়াকতের জীবনও তেমনি ডুবে যায় ক্লান্তির ঘূর্ণিতে। কিন্তু পরদিন আবার তিনি ভোরের আলোয় জেগে ওঠেন, যেন নদীরই এক অংশ হয়ে গেছেন তিনি। সম্ভবত নদীও জানে যতদিন মাঝি লিয়াকত বেচে আছেন, ততদিন মাথাভাঙ্গা নদী তার গল্প বলবে, বলবে এক মানুষ ও নদীর অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কের কথা। নদী বয়ে চলে নিজের গতিতে, আর লিয়াকত মাঝি বয়ে চলেন জীবনের স্রোতে অক্লান্ত, অবিচল, নীরবে।

back to top