ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার উপর দিয়ে যাওয়া মাইজকান্দি - ভাটিয়াপাড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের ২০ কিলোমিটারের মধ্যে চারটি বৃহৎ হাট বসায় প্রচণ্ড ঝুঁকিতে জনজীবন সেই সাথে সৃষ্ট যানজটের কারণে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হয় পথচারী ও গণপরিবহনে যাতায়াত করা যাত্রীদের। একই দিনে একাধিক হাট থাকায় জরুরি প্রয়োজন সড়ক ব্যবহারকারী অনেকেই পড়েন বিপাকে। সড়ক জুড়ে হাট বসায় সৃষ্টি হয় যানজটের, ফলে আটকে পড়া গণ পরিবহনের যাত্রীদের চরম ভোগান্তিসহ বিঘ্নিত হয় স্বাভাবিক কাজকর্মে। সাধারণত হাটের দিন যানজটে আটকে থাকা সময় পুষিয়ে নিতে বাকি পথে বেপরোয়া গতীতে বাস গুলো চলাচল করে থাকে। ব্যবসায়ীদের স্বদিচ্ছা ও প্রশাসনের নজরদারি বাড়ালেই অনায়াসে এই চরম ভোগান্তি থেকে রেহায় পেতে পারে পথচারী ও মহাসড়ক ব্যবহার করা গণপরিবহনের যাত্রীরা। জানা যায়, সপ্তাহে ৪ দিন সোম, মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শুক্রবার হাট গুলো সকাল থেকেই বসায় কর্মদিবসে বিপাকে পড়েন চাকুরীজীবী ও জরুরি প্রয়োজনে বের হওয়া লোকজন। বিশেষ করে সাতৈর ইউনিয়নের কাদিরদী, সাতৈর বাজার এবং শেখর ইউনিয়নের বড়গাঁয় সাপ্তাহিক হাট বসে সোম ও বৃহস্পতিবার। এবং সহস্রাইল বাজারে হাট বসে মঙ্গল ও শুক্রবার। কাদিরদী থেকে সাতৈর বাজারের দূরত্ব সাত কিলোমিটার। আবার সাতৈর বাজার থেকে শেখর ইউনিয়নের বড়গাঁ নামক স্থানের দূরত্ব ১৪ কিলোমিটার। আর বড়গাঁ থেকে সহস্রাইলের দূরত্ব ৩ কিমি. মোটামুটি ২০ কিলোমিটারে এই আঞ্চলিক মহাসড়কটির তিনটি স্থানে স্বল্প দূরত্বে একই দিন (সোমবার ও বৃহস্পতিবার) সাপ্তাহিক হাট বসায় যানজট লেগে থাকায় বেশি বিপাকে পড়েতে হয় আলফাডাঙ্গা, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী ও পদ্মাসেতু হয়ে ঢাকাগামী যাত্রীদের। তিনটি হাট অতিক্রম করতে কম করে হলেও দুই থেকে তিন ঘন্টা সময় লেগে যায় ফলে বাসযাত্রীরা কাঙ্ক্ষিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে না পাড়ায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় । এদিকে শেখর ইউনিয়নের বড়গাঁ থেকে তিন কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত একই ইউনিয়নের সহস্রাইল বাজারে সাপ্তাহিক হাট বসে শুক্রবার ও মঙ্গলবার। সহস্রাইল বাজারের সাপ্তাহিক হাটের দুইদিনও যানজটে থমকে যায় হাজারো মানুষের স্বাভাবিক কাজকর্ম।

হাটের দিন সাতৈর, বড়গাঁ, সহস্রাইল বাজারে গিয়ে দেখা যায়, আঞ্চলিক মহাসড়কের দুই পাশে সারিসারি কয়েকশত পাট বোঝাই অটোভ্যান ও নসিমনে দাঁড়িয়ে আছে। মহাসড়কেই চলছে বেচাকেনা, সহস্রাইল বাজারে মহাসড়কটির উপরেই কাঁচাবাজারের অস্থায়ী দোকান বসেছে। দোকানিরা বিভিন্ন প্রকার সবজি, মসলা, দেশি ফলের পসরা মিলিয়ে বসেছেন। কাদিরদীতেও একই চিত্র। এতে সড়কে যেমন ক্রেতাদের ভিড়ে পথচারীদের চলাচল কষ্টকর; তেমনি যানবাহনের দীর্ঘ লাইনে অসহনীয় যানজটে হাঁসফাঁস অবস্থা যাত্রীদের। সড়কের ওপর হাট বসায় ভিড়ের কারণে যানবাহন ক্রসিং করতে পারে না। যার ফলে তৈরি হয় যানজট।

বোয়ালমারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মো. মোসলেম উদ্দিন বলেন- প্রতিদিনই অসুস্থ রোগী নিয়ে ফরিদপুর ও ঢাকায় যেতে হয়। মহাসড়কের ওপরের ৪টি স্থানে হাট বসায় মাঝে মাঝে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়।

কাদিরদী এলাকার বাসিন্দা ইলিয়াস হোসেন বলেন-সরকারি বেশ কিছু স্থাপনার সামনে বেশ ফাঁকা জায়গা রয়েছে প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা চেষ্টা করলে হাটগুলোর জয়গা স্থানান্তরিত করে এ সমস্যা সমাধান করা সম্ভব।

আঞ্চলিক মহাসড়কের ওপর হাটের কারণে সৃষ্ট যানজটের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বড়গাঁ বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান মঞ্জু বলেন, আমি দুই-এক দিনের মধ্যে এ ব্যাপারে বাজার বণিক সমিতির একটা মিটিং ডাকবো। সেখানে যে সিদ্ধান্ত হয় জানাব।

এ ব্যাপারে সহস্রাইল বাজার বণিক সমিতির সভাপতি চুন্নু বিশ্বাস বলেন, কাঁচাবাজারের জন্য নির্ধারিত স্থান থাকলেও হাটের দিন বাইরে থেকে আসা দোকানদাররা নির্দেশনা না মেনে সড়কের ওপর তাদের পণ্য নিয়ে বসেন। কোনো ভাবেই তাদের কথা শোনাতে পারছি না।

সাতৈর বাজার বণিক সমিতির সভাপতি সাবেক চেয়ারম্যান খন্দকার নাজিরুল ইসলাম নাজির বলেন-সমস্যা সমাধানে ইতোমধ্যেই বাজারের শুরুতে একটি মার্কেট তৈরির কাজ চলছে অচিরেই এ সমস্যার সমাধান করা যাবে বলে মনে করছি। সাতৈর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাফিউল আলম মিন্টু বলেন - দীর্ঘদিন যাবৎ চেষ্টা করছি প্রশাসন বা সড়ক ও জনপথ বিভাগ যানজট নিরসনে উদ্যোগ নিলে আমাদের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।

ফরিদপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী খালিদ সাইফুল্লাহ সরদারের মুঠোফোনে কল দেওয়া হলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর হাসান চৌধুরী বলেন, এ বিষয়টি আমি অবগত আছি। আমি ইতোমধ্যে স্থানীয় চেয়ারম্যানদের সঙ্গে কথা বলেছি। যাতে সড়কে যানজট না হয়। একাজে গ্রাম পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়োজিত করার ব্যাপারে চেয়ারম্যানদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এরপরেও যদি কাজ না হয় তাহলে রোডস অ্যান্ড হাইওয়ের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।