alt

ডিমলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকট, ভোগান্তিতে রোগীরা

প্রতিনিধি, ডিমলা (নীলফামারী) : শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫

নীলফামারীর ডিমলা বাসীর চিকিৎসার জন্য একমাত্র ভরসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স । প্রতিদিন শতাধীক রোগী হাসপাতালে চিকিৎসার নেয়ার জন্য আসে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসক সংকট ও পর্যাপ্ত ঔষধ না থাকায় চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন নিয়মিত । রোগী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ, ডাক্তার ও ঔষধের অভাব, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ এবং প্রশাসনিক অদক্ষ অব্যবস্থাপনা কারণে ডিমলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা নিতে গিয়ে তারা আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন । কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা অপরিচ্ছন্ন ও আবর্জনা যুক্ত পরিবেশের কারনে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন সচেতন মহল।

নীলফামারীর ডিমলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বর্তমানে রোগীদের ভোগান্তি প্রকট আকার ধারন করেছে। অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং জনবলের অভাব ও তদারকির অভাবে হাসপাতালটি সেবা দেওয়ার পরিবর্তে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন রোগীরা। হাসপাতালের অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ, ঔষধ, ডাক্তার ও কর্মচারীর সংকট এবং জরুরি সরঞ্জামের অকার্যকারিতা রোগীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে । এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ২০১০ সালে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও ১৪ বছরেও উপজেলার ৩ লাখ ১৬ হাজার ৮৪৬ জন মানুষ কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে । গত বুধবার সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় এ হাসপাতালটিতে ৫০ জন রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেয়ার সুযোগ থাকলেও ১১৬ জন রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। যা চিকিৎসা ক্যাপাসিটির দ্বিগুণেরও বেশি।

এখানে কাগজে-কলমে ৩২ টি চিকিৎসকের পদ থাকলেও, বর্তমানে কার্যত উপস্থিত আছেন মাত্র একজন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, একজন আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ১ জন মেডিকেল অফিসার সহ ৩ জন । এছাড়া ডা: রিপন কুমার সরকার, ডা: নিরঞ্জন কুমার রায়, ডা: আসমানী সুলতানা, ডা: মো. আশিকুর রহমান ও ডা: মৌসুমী বৈষ্ণব সহ পাঁচজন চিকিৎসক অন্যত্র প্রেষণে থাকলেও বেতন ও সকল সুবিধাদি এই হাসপাতাল থেকেই নিচ্ছেন।

হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীদের চিকিৎসা সেবায় প্রতিদিন সকালে ও রাতে রাউন্ড দিয়ে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার কথা থাকলেও এখানে সেটারও ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে । হাসপাতালের ডাক্তার রোমান নামের একজন আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আর, এম, ও) দায়িত্ব থেকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছেন কিন্তু তার একার পক্ষে সকল রোগীর চিকিৎসা সেবা দেয়া অসম্ভব । সর্বোপরি চিকিৎসক সংকটের কারণে মারাত্মক হুমকিতে পড়েছে এ উপজেলা স্বাস্থ্য সেবা ।

সরকারি জেনারেটরটি দীর্ঘদিন যাবত অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে । বিদ্যুৎ চলে গেলে জরুরি বিভাগে মোমবাতি ও মোবাইলের আলোতে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। হাসপাতালের জুনিয়র মেকানিক ২৪ ঘণ্টা থাকার কথা থাকলেও থাকেন না। অকেজো হয়ে আছে এনালগ এক্স-রে মেশিন, আলট্রাসনোগ্রাম ও ইসিজি সুবিধা। ফলে রোগীরা বাধ্য হয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা করাচ্ছেন ফলে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে প্রতিনিয়ত ।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য বরাদ্দ থাকলেও বাথরুম থেকে পানি সিঁড়ি দিয়ে নিচে গড়িয়ে পড়ে। দুর্গন্ধে আশপাশে থাকা দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। নার্সদের বিরুদ্ধেও বিস্তর অভিযোগ রয়েছে; তারা নাকি হর হামেশা রোগী ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। এছাড়া নার্স ডিউটি রুমের পাশে ব্যবহৃত ইনজেকশনের সুচ, স্যালাইনের বোতল, গজ ও ওষুধের বাক্স ফেলে রাখা হয়। পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা অপরিচ্ছন্ন। লাইট ও পাখা মেরামতের কিছুক্ষণের মধ্যেই বিকল হয়ে যায়। রোগীদের খাবারের মানও নিম্নমানের; যা দেওয়া হয় তা খাওয়ার উপযুক্ত নয়। হাসপাতালের প্রবেশদ্বারসহ আশপাশ ময়লা-আবর্জনায় ভরপুর ।

এই চিকিৎসা কেন্দ্রে সকল প্রকার অনিয়মের কোন সূরাহা হচ্ছেনা। উপজেলা স্বাস্থ্য ও প, প, কর্মকর্তা অফিসে আসেন প্রয়োজনের কাগজপত্র স্বাক্ষর করেই হাফ ছাড়েন।

সচেতন মহলের মতামত , ডিমলা হাসপাতাল শুধু চিকিৎসা কেন্দ্র নয়, এটা এখন রোগীদের জন্য ভোগান্তির গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে । উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি ও হস্তক্ষেপ ছাড়া বর্তমান পরিস্থিতির উন্নতির সম্ভব নয় ।

ডিমলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও প,প কর্মকর্তা ডা: রাশেদুজ্জামান জানান, চিকিৎসক না থাকার বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের। চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি আমি একাধিকবার উর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে জানিয়েছি । যারা পোস্টিং নিয়ে এই হাসপাতালে আসে তারা আবার উপর মহলে যোগাযোগ করে নিজের সুবিধামত স্থানে প্রেষণে চলে যায়। হাসপাতাল মেরামতের বরাদ্দের বিষয় তিনি জানান দীর্ঘদিন যাবত কোন বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। বরাদ্দের অভাবে হাসপাতালের অনেক জায়গার দেয়াল ধসে পড়তে শুরু করেছে। অর্থের অভাবে সংস্কার করা সম্ভব হচ্ছে না। এমনকি প্রকল্প থেকে চলাচলের জন্য একটি গাড়ি বরাদ্দ পাই। প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর আগে শেষ হয়ে গেলে মেরামতের অভাবে অকেজো হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

হাসপাতালে পরিদর্শনে গিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইমরানুজ্জামান, হাসপাতালে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে উপলব্ধি করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাকে ডিমলা হাসপাতালের বরাদ্দের জন্য মোবাইল ফোনে কথা বলেন। এ সময় তিনি ওই কর্মকর্তাকে হাসপাতাল পরিদর্শন করে নিজের চোখে পরিস্থিতি দেখার জন্য অনুরোধ করেন । উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইমরানুজ্জামান জানান, দেশের শিক্ষা বিভাগের মত স্বাস্থ্য বিভাগের চিকিৎসা কেন্দ্র হাসপাতাল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। তাই হাসপাতালকে দুর্নীতি ও ভেজালমুক্ত রাখতে হবে। এজন্য সকল পেশার লোকদের সোচ্চার ও সচেতন হতে হবে।

ছবি

গোপালগঞ্জে শিশুকে ধর্ষণচেষ্টা, চড়-থাপ্পড় দিয়েই ‘মীমাংসা’ করলেন মাতবররা

ছবি

মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি: সাড়ে তিন মাস পর বাড়ি ফিরলো যমজ বোন

ছবি

বরিশালে তাপমাত্রার পারদ ক্রমেই নামছে, আসছে শীত

ছবি

রংপুরে আগেভাগেই শীতের তীব্রতা, প্রতিদিনই কমছে তাপমাত্রা

ছবি

গাজীপুরের নিসর্গ রিসোর্টে পেট্রলবোমা সদৃশ বস্তু নিক্ষেপ, উদ্ধার পুলিশের

ছবি

পুলিশের অভিযানে মহিবুল হাসান চৌধুরীর বাসভবনে সাতজন আটক

ছবি

শেরপুরে বক্কর হত্যা মামলার আসামি মনির গ্রেপ্তার

ছবি

‘আমি খুব করে বাঁচতে চেয়েছি,’: রাবি শিক্ষার্থীর মৃতদেহ উদ্ধার, সাথে চিরকুট

জয়পুরহাটে যাত্রীকে লাঞ্ছিতের ঘটনায় বুকিং সহকারী বরখাস্ত

৫ দিনেও জড়িতদের শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ!

ছবি

বরগুনায় পানি সংরক্ষণে ৩৬ কোটি টাকার প্রকল্পে অনিয়ম

ছবি

শেরপুরে গৃহবধূকে ধর্ষণ, গ্রেপ্তার ১

ছবি

তেঁতুলিয়ার তাপমাত্রা ১৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস

ছবি

চকরিয়ায় পুরস্কারের প্রলোভনে বৃত্তি পরীক্ষার নামে বাণিজ্য

ছবি

রায়গঞ্জে ফুলজোড় নদী থেকে এক ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার

ছবি

সাব-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

ছবি

রাজবাড়ীতে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মাঝে সার বিতরণ

ছবি

হাওরের প্রকৃতি, পরিবেশ রক্ষায় মতবিনিময় সভা

ছবি

দামুড়হুদায় বারোমাসি কাঁঠাল বাগানে রানার ভাগ্য বদল

ছবি

পদ্মার শাখা খালে বাঁধ, টঙ্গীবাড়ীতে নৌযান চলাচল বন্ধের আশঙ্কা

ছবি

শেরপুরে তুচ্ছ ঘটনায় সংঘর্ষ, আহত ৬

ছবি

দশমিনায় পান চাষী অমলের সাফল্য

ছবি

পটুয়াখালীর মহিপুরে নিজ বসত ঘরে বৃদ্ধ স্বামী-স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার

ছবি

মেঘনা নদীতে পাঙ্গাশে সয়লাব দেখা মিলেছে না ইলিশের

ছবি

অবৈধ স্থাপনার ক্ষতিপূরণ দিতে উদ্যোগ, জনমনে প্রশ্ন

ছবি

গলাচিপায় জাল সেলাই করে সংসার চলে সহস্রাধিক জেলের

মহেশপুর সীমান্তে ১০ মাসে ২ হাজার ৮৭৩ জন আটক

ছবি

কুষ্টিয়ায় জেলিযুক্ত চিংড়ি মাছ বিক্রির দায়ে ৬ ব্যবসায়ীকে জরিমানা

ছবি

ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে জায়গা মেলেনি চরাইহাটি স্কুলের, অফিস চলে জুতার দোকানে

দুমকিতে ইউপি চেয়ারম্যান আটক

ছবি

সিরাজগঞ্জে প্রবাসীর স্ত্রীকে মামলা তুলে নেওয়ার হুমকির অভিযোগ

ছবি

মোহনগঞ্জে ব্যস্ততা বাড়ছে লেপ তোষক কারিগরদের

ছবি

খোকসায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নাম ফলক তুলে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা

নওগাঁ-১ আসনে বিএনপি প্রার্থী পুনর্বিবেচনার দাবিতে মানববন্ধন

ছবি

গজারিয়ায় বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা

ছবি

যশোরে তিনটি বাড়িতে ককটেল বিস্ফোরণ

tab

ডিমলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকট, ভোগান্তিতে রোগীরা

প্রতিনিধি, ডিমলা (নীলফামারী)

শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫

নীলফামারীর ডিমলা বাসীর চিকিৎসার জন্য একমাত্র ভরসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স । প্রতিদিন শতাধীক রোগী হাসপাতালে চিকিৎসার নেয়ার জন্য আসে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসক সংকট ও পর্যাপ্ত ঔষধ না থাকায় চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন নিয়মিত । রোগী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ, ডাক্তার ও ঔষধের অভাব, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ এবং প্রশাসনিক অদক্ষ অব্যবস্থাপনা কারণে ডিমলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা নিতে গিয়ে তারা আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন । কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা অপরিচ্ছন্ন ও আবর্জনা যুক্ত পরিবেশের কারনে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন সচেতন মহল।

নীলফামারীর ডিমলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বর্তমানে রোগীদের ভোগান্তি প্রকট আকার ধারন করেছে। অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং জনবলের অভাব ও তদারকির অভাবে হাসপাতালটি সেবা দেওয়ার পরিবর্তে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন রোগীরা। হাসপাতালের অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ, ঔষধ, ডাক্তার ও কর্মচারীর সংকট এবং জরুরি সরঞ্জামের অকার্যকারিতা রোগীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে । এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ২০১০ সালে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও ১৪ বছরেও উপজেলার ৩ লাখ ১৬ হাজার ৮৪৬ জন মানুষ কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে । গত বুধবার সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় এ হাসপাতালটিতে ৫০ জন রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেয়ার সুযোগ থাকলেও ১১৬ জন রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। যা চিকিৎসা ক্যাপাসিটির দ্বিগুণেরও বেশি।

এখানে কাগজে-কলমে ৩২ টি চিকিৎসকের পদ থাকলেও, বর্তমানে কার্যত উপস্থিত আছেন মাত্র একজন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, একজন আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ১ জন মেডিকেল অফিসার সহ ৩ জন । এছাড়া ডা: রিপন কুমার সরকার, ডা: নিরঞ্জন কুমার রায়, ডা: আসমানী সুলতানা, ডা: মো. আশিকুর রহমান ও ডা: মৌসুমী বৈষ্ণব সহ পাঁচজন চিকিৎসক অন্যত্র প্রেষণে থাকলেও বেতন ও সকল সুবিধাদি এই হাসপাতাল থেকেই নিচ্ছেন।

হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীদের চিকিৎসা সেবায় প্রতিদিন সকালে ও রাতে রাউন্ড দিয়ে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার কথা থাকলেও এখানে সেটারও ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে । হাসপাতালের ডাক্তার রোমান নামের একজন আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আর, এম, ও) দায়িত্ব থেকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছেন কিন্তু তার একার পক্ষে সকল রোগীর চিকিৎসা সেবা দেয়া অসম্ভব । সর্বোপরি চিকিৎসক সংকটের কারণে মারাত্মক হুমকিতে পড়েছে এ উপজেলা স্বাস্থ্য সেবা ।

সরকারি জেনারেটরটি দীর্ঘদিন যাবত অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে । বিদ্যুৎ চলে গেলে জরুরি বিভাগে মোমবাতি ও মোবাইলের আলোতে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। হাসপাতালের জুনিয়র মেকানিক ২৪ ঘণ্টা থাকার কথা থাকলেও থাকেন না। অকেজো হয়ে আছে এনালগ এক্স-রে মেশিন, আলট্রাসনোগ্রাম ও ইসিজি সুবিধা। ফলে রোগীরা বাধ্য হয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা করাচ্ছেন ফলে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে প্রতিনিয়ত ।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য বরাদ্দ থাকলেও বাথরুম থেকে পানি সিঁড়ি দিয়ে নিচে গড়িয়ে পড়ে। দুর্গন্ধে আশপাশে থাকা দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। নার্সদের বিরুদ্ধেও বিস্তর অভিযোগ রয়েছে; তারা নাকি হর হামেশা রোগী ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। এছাড়া নার্স ডিউটি রুমের পাশে ব্যবহৃত ইনজেকশনের সুচ, স্যালাইনের বোতল, গজ ও ওষুধের বাক্স ফেলে রাখা হয়। পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা অপরিচ্ছন্ন। লাইট ও পাখা মেরামতের কিছুক্ষণের মধ্যেই বিকল হয়ে যায়। রোগীদের খাবারের মানও নিম্নমানের; যা দেওয়া হয় তা খাওয়ার উপযুক্ত নয়। হাসপাতালের প্রবেশদ্বারসহ আশপাশ ময়লা-আবর্জনায় ভরপুর ।

এই চিকিৎসা কেন্দ্রে সকল প্রকার অনিয়মের কোন সূরাহা হচ্ছেনা। উপজেলা স্বাস্থ্য ও প, প, কর্মকর্তা অফিসে আসেন প্রয়োজনের কাগজপত্র স্বাক্ষর করেই হাফ ছাড়েন।

সচেতন মহলের মতামত , ডিমলা হাসপাতাল শুধু চিকিৎসা কেন্দ্র নয়, এটা এখন রোগীদের জন্য ভোগান্তির গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে । উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি ও হস্তক্ষেপ ছাড়া বর্তমান পরিস্থিতির উন্নতির সম্ভব নয় ।

ডিমলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও প,প কর্মকর্তা ডা: রাশেদুজ্জামান জানান, চিকিৎসক না থাকার বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের। চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি আমি একাধিকবার উর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে জানিয়েছি । যারা পোস্টিং নিয়ে এই হাসপাতালে আসে তারা আবার উপর মহলে যোগাযোগ করে নিজের সুবিধামত স্থানে প্রেষণে চলে যায়। হাসপাতাল মেরামতের বরাদ্দের বিষয় তিনি জানান দীর্ঘদিন যাবত কোন বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। বরাদ্দের অভাবে হাসপাতালের অনেক জায়গার দেয়াল ধসে পড়তে শুরু করেছে। অর্থের অভাবে সংস্কার করা সম্ভব হচ্ছে না। এমনকি প্রকল্প থেকে চলাচলের জন্য একটি গাড়ি বরাদ্দ পাই। প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর আগে শেষ হয়ে গেলে মেরামতের অভাবে অকেজো হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

হাসপাতালে পরিদর্শনে গিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইমরানুজ্জামান, হাসপাতালে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে উপলব্ধি করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাকে ডিমলা হাসপাতালের বরাদ্দের জন্য মোবাইল ফোনে কথা বলেন। এ সময় তিনি ওই কর্মকর্তাকে হাসপাতাল পরিদর্শন করে নিজের চোখে পরিস্থিতি দেখার জন্য অনুরোধ করেন । উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইমরানুজ্জামান জানান, দেশের শিক্ষা বিভাগের মত স্বাস্থ্য বিভাগের চিকিৎসা কেন্দ্র হাসপাতাল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। তাই হাসপাতালকে দুর্নীতি ও ভেজালমুক্ত রাখতে হবে। এজন্য সকল পেশার লোকদের সোচ্চার ও সচেতন হতে হবে।

back to top