শেরপুর (বগুড়া) : ভারী বর্ষণে তলিয়ে যাওয়া পাট গাছ -সংবাদ
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় টানা দুদিনের বৃষ্টিতে কৃষি আবাদে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ভুট্টা, ধান, আলুসহ শীতকালীন রবি শস্যের ক্ষেত জলমগ্ন হয়ে পড়ায় চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন কৃষকরা। টানা বৃষ্টিতে এমন অপ্রত্যাশিত ক্ষতি হওয়ায় প্রান্তিক কৃষকের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।
গতকাল শনিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টানা বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে উপজেলার কুসুম্বি, খানপুর, গাড়িদহ ও মির্জাপুর ইউনিয়নের নিচু এলাকার কৃষিজমি। নিবিড় চাষাবাদের জন্য পরিচিত এই অঞ্চলগুলোতে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা দুর্বল হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় সব মিলিয়ে প্রায় ৩১ হাজার হেক্টর জমিতে কৃষি আবাদ হয়। চলতি মৌসুমে শেরপুর উপজেলা মোট ২২ হাজার ৪৬০ হেক্টর জমিতে আমনের চাষ হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২৫০ হেক্টর জমির ধান নুয়ে পড়েছে। ফসলের ক্ষতির হিসাব নিরূপণের কাজ চলছে।
সুঘাট এলাকার ভুট্টা চাষি সোলাইমান, বাদশা, জানিয়েছেন, জমিতে ভুট্টা গাছ পরিপুষ্ট হওয়ার পথে ছিল,কিন্তু আকস্মিক বৃষ্টিতে গাছগুলো গোড়া নরম হয়ে মাটিতে নুয়ে পড়েছে। এতে ফলন আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাবে এবং অনেক ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। বাঘড়া এলাকার আব্দুল হালিম খোকন ও ফরিদুল ইসলাম জানান, ধান চাষে এমনিতেই লোকশান, তারপর ধান পুক্ত হয়েছে এর মধ্যে পড়ে গেলো। ফলন অনেক কমে যাবে। এতে আমাদের ব্যাপক ক্ষতি। আগাম শীতকালীন সবজির ক্ষেতও পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
কুসুম্বি ইউনিয়নের কৃষক ওমর ফারুক ও শফিকুল ইসলাম আক্ষেপ করে বলেন, টানা বৃষ্টির পর আগাম আলুর খেতগুলো বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে। তাতে আর কিছু বাকি রইল না। আমার সবজি আর আলুর ক্ষেত এখন পুকুর। রোপণ করা আলুবীজ নষ্ট হবে। এছাড়াও মরিচ গাছগুলোর ক্ষতি হয়েছে। সরকারি সাহায্য ছাড়া ঘুরে দাঁড়ানো অসম্ভব। উপজেলার শাহবন্দেগী ইউনিয়নের ভুট্টাচাষী শহিদুল ইসলাম শাওন বলেন, ১৫ দিন আগে ১৬ বিঘা জমিতে ভুট্টা লাগিয়েছি। কৃষান, বীজ সার মিলিয়ে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। এবার ভালো ফলনের আশা ছিল। কিন্তু ২ দিনের বৃষ্টিতে সব ক্ষেত তলিয়ে গেছে। আসলে ভুট্টা চাষের ৩ ভাগের ২ ভাগ খরচ শুরুতেই হয়। এ ক্ষতি কিভাবে কেটে উঠব আল্লাহই ভালো জানেন। আলতাদিঘী এলাকার মাদরাসা শিক্ষক হাতেম আলী বলেন, সাধারণত এই সময় আবহাওয়া স্থিতিশীল থাকে। কিন্তু এবারের আকস্মিক বৃষ্টিতে আমার ৫ বিঘা আলুর ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেল।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, নিম্নচাপের কারণে সৃষ্ট এই টানা বৃষ্টিতে উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলি জমি আক্রান্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে মাঠ পর্যায়ে ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান, বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপের প্রভাবে যে বৃষ্টিপাত হয়েছে, তাতে নিচু জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
বিশেষত ধান, ভুট্টা, আলু ও সবজি ক্ষেতের ক্ষতি হয়েছে। আমরা কৃষকদের দ্রুত জমি থেকে পানি নিষ্কাশনের পরামর্শ দিচ্ছি এবং ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে দ্রুত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করব। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের সরকারি সহায়তার আওতায় আনার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
শেরপুর (বগুড়া) : ভারী বর্ষণে তলিয়ে যাওয়া পাট গাছ -সংবাদ
রোববার, ০২ নভেম্বর ২০২৫
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় টানা দুদিনের বৃষ্টিতে কৃষি আবাদে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ভুট্টা, ধান, আলুসহ শীতকালীন রবি শস্যের ক্ষেত জলমগ্ন হয়ে পড়ায় চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন কৃষকরা। টানা বৃষ্টিতে এমন অপ্রত্যাশিত ক্ষতি হওয়ায় প্রান্তিক কৃষকের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।
গতকাল শনিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টানা বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে উপজেলার কুসুম্বি, খানপুর, গাড়িদহ ও মির্জাপুর ইউনিয়নের নিচু এলাকার কৃষিজমি। নিবিড় চাষাবাদের জন্য পরিচিত এই অঞ্চলগুলোতে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা দুর্বল হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় সব মিলিয়ে প্রায় ৩১ হাজার হেক্টর জমিতে কৃষি আবাদ হয়। চলতি মৌসুমে শেরপুর উপজেলা মোট ২২ হাজার ৪৬০ হেক্টর জমিতে আমনের চাষ হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২৫০ হেক্টর জমির ধান নুয়ে পড়েছে। ফসলের ক্ষতির হিসাব নিরূপণের কাজ চলছে।
সুঘাট এলাকার ভুট্টা চাষি সোলাইমান, বাদশা, জানিয়েছেন, জমিতে ভুট্টা গাছ পরিপুষ্ট হওয়ার পথে ছিল,কিন্তু আকস্মিক বৃষ্টিতে গাছগুলো গোড়া নরম হয়ে মাটিতে নুয়ে পড়েছে। এতে ফলন আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাবে এবং অনেক ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। বাঘড়া এলাকার আব্দুল হালিম খোকন ও ফরিদুল ইসলাম জানান, ধান চাষে এমনিতেই লোকশান, তারপর ধান পুক্ত হয়েছে এর মধ্যে পড়ে গেলো। ফলন অনেক কমে যাবে। এতে আমাদের ব্যাপক ক্ষতি। আগাম শীতকালীন সবজির ক্ষেতও পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
কুসুম্বি ইউনিয়নের কৃষক ওমর ফারুক ও শফিকুল ইসলাম আক্ষেপ করে বলেন, টানা বৃষ্টির পর আগাম আলুর খেতগুলো বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে। তাতে আর কিছু বাকি রইল না। আমার সবজি আর আলুর ক্ষেত এখন পুকুর। রোপণ করা আলুবীজ নষ্ট হবে। এছাড়াও মরিচ গাছগুলোর ক্ষতি হয়েছে। সরকারি সাহায্য ছাড়া ঘুরে দাঁড়ানো অসম্ভব। উপজেলার শাহবন্দেগী ইউনিয়নের ভুট্টাচাষী শহিদুল ইসলাম শাওন বলেন, ১৫ দিন আগে ১৬ বিঘা জমিতে ভুট্টা লাগিয়েছি। কৃষান, বীজ সার মিলিয়ে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। এবার ভালো ফলনের আশা ছিল। কিন্তু ২ দিনের বৃষ্টিতে সব ক্ষেত তলিয়ে গেছে। আসলে ভুট্টা চাষের ৩ ভাগের ২ ভাগ খরচ শুরুতেই হয়। এ ক্ষতি কিভাবে কেটে উঠব আল্লাহই ভালো জানেন। আলতাদিঘী এলাকার মাদরাসা শিক্ষক হাতেম আলী বলেন, সাধারণত এই সময় আবহাওয়া স্থিতিশীল থাকে। কিন্তু এবারের আকস্মিক বৃষ্টিতে আমার ৫ বিঘা আলুর ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেল।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, নিম্নচাপের কারণে সৃষ্ট এই টানা বৃষ্টিতে উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলি জমি আক্রান্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে মাঠ পর্যায়ে ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান, বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপের প্রভাবে যে বৃষ্টিপাত হয়েছে, তাতে নিচু জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
বিশেষত ধান, ভুট্টা, আলু ও সবজি ক্ষেতের ক্ষতি হয়েছে। আমরা কৃষকদের দ্রুত জমি থেকে পানি নিষ্কাশনের পরামর্শ দিচ্ছি এবং ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে দ্রুত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করব। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের সরকারি সহায়তার আওতায় আনার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।