শরীয়তপুর-জাজিরা-নাওডোবা সড়ক সম্প্রসারণ
শরীয়তপুর : ক্ষতিপূরণের আশায় অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ -সংবাদ
শরীয়তপুর-পদ্মা সেতু এ্যাপ্রোচ সড়ক সম্প্রসারণের জন্য জমি অধিগ্রহণ কাজ চলছে। জমি অধিগ্রহণের ২২টি এলএ কেসের মধ্যে ১৬ নম্বর কেসটি নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে নতুন বির্তক। বেশি ক্ষতিপূরণ পেতে ওই জমিতে অবৈধ স্থাপণা নির্মাণ করেছিল একটি চক্র। সে সব অবৈধ স্থাপনা বাতিল করে তা জনস্বার্থ বিরোধী তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করে তৎকালিন জেলা প্রশাসন। কিন্তু বর্তমান জেলা প্রশাসন ওই সব অবৈধ স্থাপণাগুলোর ক্ষতিপূরণ দিতে উদ্যোগ নিয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, ওই চক্রটিকে সহায়তা করছে জেলা প্রশাসনের অধিগ্রহণ শাখার কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ‘জনস্বার্থবিরোধী’ তালিকার সেই স্থাপনাগুলোর মূল্য নির্ধারণের জন্য গণপূর্ত বিভাগ ও বন বিভাগে তালিকা পাঠিয়েছে জেলা প্রশাসন। অবৈধ স্থাপনাগুলোর ক্ষতিপূরণ দেয়া হলে প্রকল্পে অতিরিক্ত ৮ থেকে ১০ কোটি টাকা ব্যয় বাড়তে পারে এমন শঙ্ক শরীয়তপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের। সওজ বলছে, অধিগ্রহণ জটিলতায় সড়কের নির্মাণ কাজ ধীরগতিতে চলছে। ১৬ নম্বর কেসের ওই অংশের কাজ একেবারেই বন্ধ রয়েছে। ওই অংশের স্থাপনার ক্ষতিপূরণের বিষয়টি দীর্ঘদিন ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।
সওজ ও জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার তথ্য বলছে, পদ্মা সেতু হয়ে শরীয়তপুর জেলা শহর থেকে ঢাকায় যাতায়াত সহজ করতে ২০২০ সালে ২৭ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীত করার প্রকল্প অনুমোদন দেয় সরকার। ভূমি অধিগ্রহণ ও সড়ক নির্মাণ মিলিয়ে খরচ ধরা হয় ১ হাজার ৬৮২ কোটি টাকা। ২০২০ সালে জমি অধিগ্রহণ শুরু হয়। সদর, নড়িয়া ও জাজিরা এলাকায় ২২টি ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত মামলার (এলএ কেস) মাধ্যমে প্রায় ২৬০ একর জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়। ওই সময় জমিতে কী কী স্থাপনা আছে তা নিশ্চিত হতে ভিডিওচিত্র ধারণ করে জেলা প্রশাসন।
পাঁচ বছরে ২২টির মধ্যে ১৬টি এলএ কেসের জমি সওজকে হস্তান্তর করা হয়। তিনটি প্যাকেজে সড়ক নির্মাণ এগোচ্ছে। শহর থেকে জাজিরা কলেজ পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে সাড়ে ১১ কিলোমিটারের কাজ শেষ। কিন্তু ১৬ নম্বর এলএ কেসের জমি হস্তান্তর না করায় জাজিরার ঢালীকান্দি ও মতিসাগর এলাকায় ২ কিলোমিটার এলাকার কাজ বন্ধ।
কাজ বন্ধ কেনে এমন তথ্য জানতে গিয়ে জানা যায় পাওয়া যায় নতুন তথ্য। ২০২১ সালে ভূমি মালিকদের ৪ ধারা অনুযায়ী নোটিশ দেওয়া হলে একটি চক্র বেশি ক্ষতিপূরণের আশায় অবৈধভাবে ঘর-বাড়ি নির্মাণ শুরু করে।
জেলা প্রশাসন ও সড়ক বিভাগের প্রতিনিধিরা সেখানে যৌথ তদন্ত করে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের স্থাপনা-ঘরবাড়ি ও গাছপালার তালিকা করেন। ওই তালিকা যাচাই বাছাইয়ের পর ২০২৩ সালে অধিগ্রহণ শাখার কর্মকর্তারা অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণের আশায় নির্মাণ করা স্থাপনা বাদ দিয়ে প্রকৃত তালিকা মূল্য নির্ধারণের জন্য গণপূর্ত বিভাগ ও বন বিভাগে পাঠান। আর বাদ দেওয়া স্থাপনাগুলোকে ‘জনস্বার্থবিরোধী’ হিসেবে চিহ্নিত করেন।
কিন্তু ওই স্থাপনার মালিক, জেলা প্রশাসনের অসাধু কর্মকতা-কর্মচারি ও দালালদের যোগসাজসে নতুন অপচেষ্টা চালায়। জমির মালিকদের দিয়ে ক্ষতিপূরণ চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আপিল করানো হয়। এরপর একটি চক্র অধিগ্রহণ শাখার কর্মকর্তাদের মাধ্যমে সেই স্থাপনাগুলো তালিকাভুক্ত করতে সচেষ্ট হয়। ওই আবেদনগুলি আমলে নিয়ে ৩৮টি স্থাপনার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার উদ্যোগ নেয় অধিগ্রহণ শাখা। ২০ অক্টোবর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মাসুদুল আলম গণপূর্ত বিভাগ ও বন বিভাগকে পুনরায় মূল্য নির্ধারণের তালিকা পাঠিয়েছেন। অভিযোগ হলো, এই নতুন তালিকায় অবৈধ স্থাপনাগুলোকে দেয়া হয়েছে।
প্রকলের শুরুতে ধারণ করা অধিগ্রহণ শাখা ও সওজের ৪ মিনিট ৩৪ সেকেন্ডের একটি ভিডিও আসে প্রতিবেদকের কাছে। ভিডিও যাচাই করতে মাঠে গিয়ে দেখা যায়, যে সব স্থানে ফাঁকা জমি ছিল, বর্তমানে সেখানে আধাপাকা ও টিনের ঘর আছে। ওই সব ঘরে মানুষের বসবাস নেই। বেশির ভাগ ঘর তালাবদ্ধ। অনেক ঘর কাঠের পাটাতনের ওপর বসানো। পুরোনো ঘর এনে বসিয়ে রাখা হয়েছে, যাতে ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ক্ষতিগ্রস্ত এক জমির মালিক বলেন, আমার একটি ঘর পেছনে ছিল তা এনে রাস্তার পাশে উঠিয়েছি। এখনও বিল পাই নাই। আমরা তো সরকারের টাকা একবারই নেবো তাই একটু বেশি পেতে ঘর উঠাইছি।
আমাদেরটায় দালাল নাই অন্যরা দালালের সাথে মিল করেই ঘর উঠাইছে। জাজিরার রফিক শিকদার তার বাড়িতে নতুন ঘর উঠিয়েছে। তিনি বলেন, আমার ঘর আগের প্রশাসন বাদ দিয়ে ছিল। এখন আবার তদন্ত করে গেছে। তালিকায় উঠছে কিনা জানি না, যদি ওঠে তাহলে আলহামদুলিল্লাহ।
ওই এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিক রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের স্থানীয় লোকদের মধ্যে এক শ্রেণির দালালগুলো ঢুকে তারা ঘর দুয়ার উঠানোর জন্য প্রতিযোগীতা করছে। একটা সময় কি হয়েছে ঘরই উঠছে ব্যবসায়ই করছে লাখ লাখ টাকা কিন্তু আমরা ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ বিল পাচ্ছি না, বিলে দেরি হচ্ছে, সড়কের কাজ দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধ। ফায়দা লুটছে প্রশাসনের লোক আর দালাল।
প্রাপ্ত ভিডিওতে ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিক মাতিসাগর গ্রামের কাজী নজরুল ইসলামের নতুন মুরগীর খামার ও দুটি টিনের ঘর ছিল না। বর্তমানে সেখানে ঘরগুলো কিভাবে এলো এমন প্রশ্নে হতভম্ব হয়ে যান নজরুল। নানান টালবাহানা করেন এবং প্রতিবেদককে এসব কথা এড়িয়ে নানান অবৈধ প্রস্তাব দেন। প্রকল্প এলাকার জাজিরার ঢালিকান্দি গ্রামের চান শিকদার। দীর্ঘ বছর ধরে ঢাকায় স্থায়ী বসবাস। গ্রামের বাড়িতে তার পৈত্রিক জমি ছিল কিন্তু ছিল না কোন ঘর।
দালাল চক্রের সাথে যোগসাজসে তার জমিতে পুরোনো কাঠামোর মুরগীর খামার ও বসত ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। তবে চান মিয়ার স্বজন ষার্টোধ্ব লাল মিয়া শিকদার বলেন, চান মিয়ার বাবা মারা গেছে ৩০-৪০ বছর আগে। সেই থেকে ওরা ঢাকায় থাকে। এতো দিন জমি ফাঁকা ছিল।
মাইকিং করার পর ঘর উঠছে। দালালরা উঠাইছে। শুধু চান মিয়া না অনেক ঘর উঠছে।
নজরুল কাজী, রতন এমন অনেকের বাড়িতেই ঘর উঠছে। ওদের জন্যই বিল পাচ্ছি না।
জেলা প্রশাসক তাহসিনা বেগম বলেন, আমরা যখন দেখেছি যে সড়কটিতে অধিগ্রহণ জটিলাতার কারণে নির্মাণ কাজ আটকে আছে। তার প্রেক্ষিতে আমরা যৌথ কমিটিকে নির্দেশনা দিয়েছিলাম যে সব আপত্তি আছে তা খতিয়ে দেখে সমাধান করে একটা সিদ্ধান্ত নিতে। কমিটি যে রিপোর্ট করেছে আমরা গণপূর্তকে পাঠিয়েছি। এর মধ্যে যদি কারো কোন আপত্তি থাকে, তার কোন এভিডেন্স থাকে সে ব্যাপারে আমরা ব্যবস্থা নেবো।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
শরীয়তপুর-জাজিরা-নাওডোবা সড়ক সম্প্রসারণ
শরীয়তপুর : ক্ষতিপূরণের আশায় অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ -সংবাদ
বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫
শরীয়তপুর-পদ্মা সেতু এ্যাপ্রোচ সড়ক সম্প্রসারণের জন্য জমি অধিগ্রহণ কাজ চলছে। জমি অধিগ্রহণের ২২টি এলএ কেসের মধ্যে ১৬ নম্বর কেসটি নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে নতুন বির্তক। বেশি ক্ষতিপূরণ পেতে ওই জমিতে অবৈধ স্থাপণা নির্মাণ করেছিল একটি চক্র। সে সব অবৈধ স্থাপনা বাতিল করে তা জনস্বার্থ বিরোধী তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করে তৎকালিন জেলা প্রশাসন। কিন্তু বর্তমান জেলা প্রশাসন ওই সব অবৈধ স্থাপণাগুলোর ক্ষতিপূরণ দিতে উদ্যোগ নিয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, ওই চক্রটিকে সহায়তা করছে জেলা প্রশাসনের অধিগ্রহণ শাখার কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ‘জনস্বার্থবিরোধী’ তালিকার সেই স্থাপনাগুলোর মূল্য নির্ধারণের জন্য গণপূর্ত বিভাগ ও বন বিভাগে তালিকা পাঠিয়েছে জেলা প্রশাসন। অবৈধ স্থাপনাগুলোর ক্ষতিপূরণ দেয়া হলে প্রকল্পে অতিরিক্ত ৮ থেকে ১০ কোটি টাকা ব্যয় বাড়তে পারে এমন শঙ্ক শরীয়তপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের। সওজ বলছে, অধিগ্রহণ জটিলতায় সড়কের নির্মাণ কাজ ধীরগতিতে চলছে। ১৬ নম্বর কেসের ওই অংশের কাজ একেবারেই বন্ধ রয়েছে। ওই অংশের স্থাপনার ক্ষতিপূরণের বিষয়টি দীর্ঘদিন ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।
সওজ ও জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার তথ্য বলছে, পদ্মা সেতু হয়ে শরীয়তপুর জেলা শহর থেকে ঢাকায় যাতায়াত সহজ করতে ২০২০ সালে ২৭ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীত করার প্রকল্প অনুমোদন দেয় সরকার। ভূমি অধিগ্রহণ ও সড়ক নির্মাণ মিলিয়ে খরচ ধরা হয় ১ হাজার ৬৮২ কোটি টাকা। ২০২০ সালে জমি অধিগ্রহণ শুরু হয়। সদর, নড়িয়া ও জাজিরা এলাকায় ২২টি ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত মামলার (এলএ কেস) মাধ্যমে প্রায় ২৬০ একর জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়। ওই সময় জমিতে কী কী স্থাপনা আছে তা নিশ্চিত হতে ভিডিওচিত্র ধারণ করে জেলা প্রশাসন।
পাঁচ বছরে ২২টির মধ্যে ১৬টি এলএ কেসের জমি সওজকে হস্তান্তর করা হয়। তিনটি প্যাকেজে সড়ক নির্মাণ এগোচ্ছে। শহর থেকে জাজিরা কলেজ পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে সাড়ে ১১ কিলোমিটারের কাজ শেষ। কিন্তু ১৬ নম্বর এলএ কেসের জমি হস্তান্তর না করায় জাজিরার ঢালীকান্দি ও মতিসাগর এলাকায় ২ কিলোমিটার এলাকার কাজ বন্ধ।
কাজ বন্ধ কেনে এমন তথ্য জানতে গিয়ে জানা যায় পাওয়া যায় নতুন তথ্য। ২০২১ সালে ভূমি মালিকদের ৪ ধারা অনুযায়ী নোটিশ দেওয়া হলে একটি চক্র বেশি ক্ষতিপূরণের আশায় অবৈধভাবে ঘর-বাড়ি নির্মাণ শুরু করে।
জেলা প্রশাসন ও সড়ক বিভাগের প্রতিনিধিরা সেখানে যৌথ তদন্ত করে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের স্থাপনা-ঘরবাড়ি ও গাছপালার তালিকা করেন। ওই তালিকা যাচাই বাছাইয়ের পর ২০২৩ সালে অধিগ্রহণ শাখার কর্মকর্তারা অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণের আশায় নির্মাণ করা স্থাপনা বাদ দিয়ে প্রকৃত তালিকা মূল্য নির্ধারণের জন্য গণপূর্ত বিভাগ ও বন বিভাগে পাঠান। আর বাদ দেওয়া স্থাপনাগুলোকে ‘জনস্বার্থবিরোধী’ হিসেবে চিহ্নিত করেন।
কিন্তু ওই স্থাপনার মালিক, জেলা প্রশাসনের অসাধু কর্মকতা-কর্মচারি ও দালালদের যোগসাজসে নতুন অপচেষ্টা চালায়। জমির মালিকদের দিয়ে ক্ষতিপূরণ চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আপিল করানো হয়। এরপর একটি চক্র অধিগ্রহণ শাখার কর্মকর্তাদের মাধ্যমে সেই স্থাপনাগুলো তালিকাভুক্ত করতে সচেষ্ট হয়। ওই আবেদনগুলি আমলে নিয়ে ৩৮টি স্থাপনার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার উদ্যোগ নেয় অধিগ্রহণ শাখা। ২০ অক্টোবর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মাসুদুল আলম গণপূর্ত বিভাগ ও বন বিভাগকে পুনরায় মূল্য নির্ধারণের তালিকা পাঠিয়েছেন। অভিযোগ হলো, এই নতুন তালিকায় অবৈধ স্থাপনাগুলোকে দেয়া হয়েছে।
প্রকলের শুরুতে ধারণ করা অধিগ্রহণ শাখা ও সওজের ৪ মিনিট ৩৪ সেকেন্ডের একটি ভিডিও আসে প্রতিবেদকের কাছে। ভিডিও যাচাই করতে মাঠে গিয়ে দেখা যায়, যে সব স্থানে ফাঁকা জমি ছিল, বর্তমানে সেখানে আধাপাকা ও টিনের ঘর আছে। ওই সব ঘরে মানুষের বসবাস নেই। বেশির ভাগ ঘর তালাবদ্ধ। অনেক ঘর কাঠের পাটাতনের ওপর বসানো। পুরোনো ঘর এনে বসিয়ে রাখা হয়েছে, যাতে ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ক্ষতিগ্রস্ত এক জমির মালিক বলেন, আমার একটি ঘর পেছনে ছিল তা এনে রাস্তার পাশে উঠিয়েছি। এখনও বিল পাই নাই। আমরা তো সরকারের টাকা একবারই নেবো তাই একটু বেশি পেতে ঘর উঠাইছি।
আমাদেরটায় দালাল নাই অন্যরা দালালের সাথে মিল করেই ঘর উঠাইছে। জাজিরার রফিক শিকদার তার বাড়িতে নতুন ঘর উঠিয়েছে। তিনি বলেন, আমার ঘর আগের প্রশাসন বাদ দিয়ে ছিল। এখন আবার তদন্ত করে গেছে। তালিকায় উঠছে কিনা জানি না, যদি ওঠে তাহলে আলহামদুলিল্লাহ।
ওই এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিক রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের স্থানীয় লোকদের মধ্যে এক শ্রেণির দালালগুলো ঢুকে তারা ঘর দুয়ার উঠানোর জন্য প্রতিযোগীতা করছে। একটা সময় কি হয়েছে ঘরই উঠছে ব্যবসায়ই করছে লাখ লাখ টাকা কিন্তু আমরা ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ বিল পাচ্ছি না, বিলে দেরি হচ্ছে, সড়কের কাজ দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধ। ফায়দা লুটছে প্রশাসনের লোক আর দালাল।
প্রাপ্ত ভিডিওতে ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিক মাতিসাগর গ্রামের কাজী নজরুল ইসলামের নতুন মুরগীর খামার ও দুটি টিনের ঘর ছিল না। বর্তমানে সেখানে ঘরগুলো কিভাবে এলো এমন প্রশ্নে হতভম্ব হয়ে যান নজরুল। নানান টালবাহানা করেন এবং প্রতিবেদককে এসব কথা এড়িয়ে নানান অবৈধ প্রস্তাব দেন। প্রকল্প এলাকার জাজিরার ঢালিকান্দি গ্রামের চান শিকদার। দীর্ঘ বছর ধরে ঢাকায় স্থায়ী বসবাস। গ্রামের বাড়িতে তার পৈত্রিক জমি ছিল কিন্তু ছিল না কোন ঘর।
দালাল চক্রের সাথে যোগসাজসে তার জমিতে পুরোনো কাঠামোর মুরগীর খামার ও বসত ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। তবে চান মিয়ার স্বজন ষার্টোধ্ব লাল মিয়া শিকদার বলেন, চান মিয়ার বাবা মারা গেছে ৩০-৪০ বছর আগে। সেই থেকে ওরা ঢাকায় থাকে। এতো দিন জমি ফাঁকা ছিল।
মাইকিং করার পর ঘর উঠছে। দালালরা উঠাইছে। শুধু চান মিয়া না অনেক ঘর উঠছে।
নজরুল কাজী, রতন এমন অনেকের বাড়িতেই ঘর উঠছে। ওদের জন্যই বিল পাচ্ছি না।
জেলা প্রশাসক তাহসিনা বেগম বলেন, আমরা যখন দেখেছি যে সড়কটিতে অধিগ্রহণ জটিলাতার কারণে নির্মাণ কাজ আটকে আছে। তার প্রেক্ষিতে আমরা যৌথ কমিটিকে নির্দেশনা দিয়েছিলাম যে সব আপত্তি আছে তা খতিয়ে দেখে সমাধান করে একটা সিদ্ধান্ত নিতে। কমিটি যে রিপোর্ট করেছে আমরা গণপূর্তকে পাঠিয়েছি। এর মধ্যে যদি কারো কোন আপত্তি থাকে, তার কোন এভিডেন্স থাকে সে ব্যাপারে আমরা ব্যবস্থা নেবো।