ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে পাঙ্গাশ মাছে সয়লাব। ২২ দিন নিষেধাজ্ঞার পর কাক্সিক্ষত ইলিশ মাছ না পাওয়ায় হতাশ জেলেরা। তবে আশার আলো দেখাচ্ছে পাঙ্গাশ মাছ। আশা ছিল নদীতে মাছ শিকার করে সংসার খরচের পাশাপাশি ধার-দেনা পরিশোধ করবেন। কিন্তু সেই আশা আর পূরণ হয়নি জেলার বেশির ভাগ জেলের। তবে গত কয়েক দিন ধরে নদীতে প্রচুর পরিমাণে বড় বড় পাঙ্গাশ মাছ ধরা পড়ছে জেলের জালে। এতে কিছুটা হলেও ধার দেনা পরিশোধ করতে পারবেন বলে জানান জেলারা।
ইলিশের জায়গায় বড় বড় পাঙ্গাশ ধরা পড়লেও ভালো দাম পেয়ে খুশি জেলে ও মৎস্যজীবীরা। প্রতিবছর এই সময় নদীতে পাঙ্গাশের দেখা মিললেও এ বছর এর পরিমাণ অনেক বেশি বলে জানান জেলেরা।
বুধবার, (১২ নভেম্বর ২০২৫) ভোলা সদর উপজেলার ইলিশা, পাকারমাথা, তুলাতুলি ও ভোলারখাল মাছঘাট ঘুরে দেখা গেছে, প্রত্যেক ঘাটে প্রচুর পাঙ্গাশ মাছ বিক্রি হচ্ছে।
এক একটি মাছের ওজন তিন থেকে সর্বোচ্চ ১২ কেজি। প্রতিটি মাছ বিক্রি হচ্ছে দুই থেকে ছয় হাজার টাকায়। ইলিশের দেখা না পেলেও পাঙ্গাশ মাছ পেয়ে খুশি জেলেরা। গত দুই-তিন দিন ধরে প্রত্যেক মাছঘাটে দৈনিক ২০০ থেকে ৩০০ পিস পাঙ্গাশ মাছ বিক্রি হয়। এই মাছ ঢাকা, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে ভালো দামে বিক্রি করছেন বেপারিরা।
ভোলার শিবপুর মাছঘাটের জেলে জামাল জানান, মা ইলিশ রক্ষা অভিযানের পর থেকে নদীতে তেমন ইলিশের দেখা নেই। গত দুই-তিন দিন ধরে নদীতে প্রচুর পাঙ্গাশ ধরা পড়ছে। তিনি মঙ্গলবার সকালে নদীতে ইলিশ শিকারে গিয়ে বড় আকারের দুইটি পাঙ্গাশ মাছ পেয়েছেন। মাছ দুটি ঘাটে এনে ডাকে চার হাজার ৬৫০ টাকায় বিক্রি করেছেন। মাছ দুইটির ওজন হবে প্রায় আট কেজি।
একই এলাকার জেলে মো. খালেক মাঝি জানান, তিনি দুইটি পাঙ্গাশ পেয়েছেন। একটি তিন হাজার ৯০০ টাকায় এবং অপরটি এক হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি করেছেন।
মেঘনা নদীর জেলে সোহেল মাঝি জানান, অভিযানের পর থেকেই প্রায় সব জেলেই ধারদেনা ও সংসারের খরচ নিয়ে হতাশায় ছিলেন। কয়েক দিন ধরে নদীতে প্রচুর পাঙ্গাশ ধরা পড়ায় জেলেদের হতাশা অনেকটা কেটেছে। তিনি সকালের দিকে মেঘনা নদীতে মাছ শিকারে গিয়ে বড় আকারের তিনটি পাঙ্গাশ পেয়েছেন, যা আড়তে এনে ডাকে ১০ হাজার ৪৫০ টাকায় বিক্রি করেছেন।
জসিম মাঝি জানান, বর্তমানে নদীতে যে পরিমাণ পাঙ্গাশ পাওয়া যাচ্ছে, তা গত চার-পাঁচ বছরে পাওয়া যায়নি। এভাবে আরো কিছুদিন পাঙ্গাশ ধরা পড়লে জেলেরা অনেকটা ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবেন।
ভোলার তুলাতুলি মাছঘাটের আড়তদার মো. জসিম উদ্দিন বেপারী জানান, প্রতি বছরই ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে কমবেশি পাঙ্গাশ পাওয়া যায়। তবে এ বছর পরিমাণটা অনেক বেশি।
গত সোমবার তুলাতুলি ঘাটে বড় আকারের তিন শতাধিক পাঙ্গাশ বিক্রি হয়েছে। একেকটি পাঙ্গাশের ওজন নিচে চার কেজি এবং সর্বোচ্চ ১২ কেজি। মঙ্গলবারও প্রায় সমপরিমাণ পাঙ্গাশ বিক্রি হয়েছে ঘাটটিতে। এসব পাঙ্গাশ মাছ ঢাকা, বরিশাল ও খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন মোকামে পাঠানো হয়। প্রতি কেজি পাঙ্গাশ ঘাটে বিক্রি হয় ৪০০ থেকে সাড়ে ৫০০ টাকায়। মোকামে বিক্রি হয় ৬০০ থেকে সাড়ে ৬০০ টাকায়।
শিবপুর ভোলারখাল মাছঘাটের আড়তদাররা জানান, স্বাভাবিকভাবে শীত মৌসুমে ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে বড় আকারের পাঙ্গাশ মাছ ধরা পড়ে। তবে এ বছর এ পরিমাণ অনেক বেশি। গত দুই দিন ধরে আট থেকে ১০ কেজি ওজনের বড় বড় পাঙ্গাশ মাছ ধার পড়ছে। গতকাল মঙ্গলবার ও বুধবার এ ঘাটের ১৫টি আড়তে পাঁচ শতাধিক পাঙ্গাশ বিক্রি হয়েছে। ঢাকা ও খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন মোকামে এর ভালো চাহিদাও রয়েছে। তাই জেলেরা ভালো দামে বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন।
ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন বলেন, সাধারণত ২২ দিনের মা ইলিশ রক্ষা অভিযানের পর নদীতে ইলিশ মাছ বেশি একটা দেখা যায় না। কারণ ইলিশ ডিম ছেড়ে পুনরায় সাগরে চলে যায়। তবে বর্তমানে ইলিশের জায়গায় ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে বড় আকারের পাঙ্গাশ মাছ পাওয়া যাচ্ছে। বিষয়টি জেলেদের জন্য আশাব্যঞ্জক। পাঙ্গাশ মাছ আহরণ করে তারা ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে উঠতে পারবে। এ ছাড়া নদীতে পাঙ্গাশের পোনা রক্ষায় মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫
ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে পাঙ্গাশ মাছে সয়লাব। ২২ দিন নিষেধাজ্ঞার পর কাক্সিক্ষত ইলিশ মাছ না পাওয়ায় হতাশ জেলেরা। তবে আশার আলো দেখাচ্ছে পাঙ্গাশ মাছ। আশা ছিল নদীতে মাছ শিকার করে সংসার খরচের পাশাপাশি ধার-দেনা পরিশোধ করবেন। কিন্তু সেই আশা আর পূরণ হয়নি জেলার বেশির ভাগ জেলের। তবে গত কয়েক দিন ধরে নদীতে প্রচুর পরিমাণে বড় বড় পাঙ্গাশ মাছ ধরা পড়ছে জেলের জালে। এতে কিছুটা হলেও ধার দেনা পরিশোধ করতে পারবেন বলে জানান জেলারা।
ইলিশের জায়গায় বড় বড় পাঙ্গাশ ধরা পড়লেও ভালো দাম পেয়ে খুশি জেলে ও মৎস্যজীবীরা। প্রতিবছর এই সময় নদীতে পাঙ্গাশের দেখা মিললেও এ বছর এর পরিমাণ অনেক বেশি বলে জানান জেলেরা।
বুধবার, (১২ নভেম্বর ২০২৫) ভোলা সদর উপজেলার ইলিশা, পাকারমাথা, তুলাতুলি ও ভোলারখাল মাছঘাট ঘুরে দেখা গেছে, প্রত্যেক ঘাটে প্রচুর পাঙ্গাশ মাছ বিক্রি হচ্ছে।
এক একটি মাছের ওজন তিন থেকে সর্বোচ্চ ১২ কেজি। প্রতিটি মাছ বিক্রি হচ্ছে দুই থেকে ছয় হাজার টাকায়। ইলিশের দেখা না পেলেও পাঙ্গাশ মাছ পেয়ে খুশি জেলেরা। গত দুই-তিন দিন ধরে প্রত্যেক মাছঘাটে দৈনিক ২০০ থেকে ৩০০ পিস পাঙ্গাশ মাছ বিক্রি হয়। এই মাছ ঢাকা, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে ভালো দামে বিক্রি করছেন বেপারিরা।
ভোলার শিবপুর মাছঘাটের জেলে জামাল জানান, মা ইলিশ রক্ষা অভিযানের পর থেকে নদীতে তেমন ইলিশের দেখা নেই। গত দুই-তিন দিন ধরে নদীতে প্রচুর পাঙ্গাশ ধরা পড়ছে। তিনি মঙ্গলবার সকালে নদীতে ইলিশ শিকারে গিয়ে বড় আকারের দুইটি পাঙ্গাশ মাছ পেয়েছেন। মাছ দুটি ঘাটে এনে ডাকে চার হাজার ৬৫০ টাকায় বিক্রি করেছেন। মাছ দুইটির ওজন হবে প্রায় আট কেজি।
একই এলাকার জেলে মো. খালেক মাঝি জানান, তিনি দুইটি পাঙ্গাশ পেয়েছেন। একটি তিন হাজার ৯০০ টাকায় এবং অপরটি এক হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি করেছেন।
মেঘনা নদীর জেলে সোহেল মাঝি জানান, অভিযানের পর থেকেই প্রায় সব জেলেই ধারদেনা ও সংসারের খরচ নিয়ে হতাশায় ছিলেন। কয়েক দিন ধরে নদীতে প্রচুর পাঙ্গাশ ধরা পড়ায় জেলেদের হতাশা অনেকটা কেটেছে। তিনি সকালের দিকে মেঘনা নদীতে মাছ শিকারে গিয়ে বড় আকারের তিনটি পাঙ্গাশ পেয়েছেন, যা আড়তে এনে ডাকে ১০ হাজার ৪৫০ টাকায় বিক্রি করেছেন।
জসিম মাঝি জানান, বর্তমানে নদীতে যে পরিমাণ পাঙ্গাশ পাওয়া যাচ্ছে, তা গত চার-পাঁচ বছরে পাওয়া যায়নি। এভাবে আরো কিছুদিন পাঙ্গাশ ধরা পড়লে জেলেরা অনেকটা ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবেন।
ভোলার তুলাতুলি মাছঘাটের আড়তদার মো. জসিম উদ্দিন বেপারী জানান, প্রতি বছরই ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে কমবেশি পাঙ্গাশ পাওয়া যায়। তবে এ বছর পরিমাণটা অনেক বেশি।
গত সোমবার তুলাতুলি ঘাটে বড় আকারের তিন শতাধিক পাঙ্গাশ বিক্রি হয়েছে। একেকটি পাঙ্গাশের ওজন নিচে চার কেজি এবং সর্বোচ্চ ১২ কেজি। মঙ্গলবারও প্রায় সমপরিমাণ পাঙ্গাশ বিক্রি হয়েছে ঘাটটিতে। এসব পাঙ্গাশ মাছ ঢাকা, বরিশাল ও খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন মোকামে পাঠানো হয়। প্রতি কেজি পাঙ্গাশ ঘাটে বিক্রি হয় ৪০০ থেকে সাড়ে ৫০০ টাকায়। মোকামে বিক্রি হয় ৬০০ থেকে সাড়ে ৬০০ টাকায়।
শিবপুর ভোলারখাল মাছঘাটের আড়তদাররা জানান, স্বাভাবিকভাবে শীত মৌসুমে ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে বড় আকারের পাঙ্গাশ মাছ ধরা পড়ে। তবে এ বছর এ পরিমাণ অনেক বেশি। গত দুই দিন ধরে আট থেকে ১০ কেজি ওজনের বড় বড় পাঙ্গাশ মাছ ধার পড়ছে। গতকাল মঙ্গলবার ও বুধবার এ ঘাটের ১৫টি আড়তে পাঁচ শতাধিক পাঙ্গাশ বিক্রি হয়েছে। ঢাকা ও খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন মোকামে এর ভালো চাহিদাও রয়েছে। তাই জেলেরা ভালো দামে বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন।
ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন বলেন, সাধারণত ২২ দিনের মা ইলিশ রক্ষা অভিযানের পর নদীতে ইলিশ মাছ বেশি একটা দেখা যায় না। কারণ ইলিশ ডিম ছেড়ে পুনরায় সাগরে চলে যায়। তবে বর্তমানে ইলিশের জায়গায় ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে বড় আকারের পাঙ্গাশ মাছ পাওয়া যাচ্ছে। বিষয়টি জেলেদের জন্য আশাব্যঞ্জক। পাঙ্গাশ মাছ আহরণ করে তারা ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে উঠতে পারবে। এ ছাড়া নদীতে পাঙ্গাশের পোনা রক্ষায় মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।