ডিমলা (নীলফামারী) : ভূমি দস্যুদের অবৈধ দখলের কারনে ক্রমান্বয়ে দিনের পর দিন নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে নদী -সংবাদ
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে তিস্তা নদী সহ ছোট ৪ টি নদী। এর মধ্যে নাউতার, বুড়িতিস্তা, কুমলাই ও ধুম নদী উল্লেখযোগ্য। এক সময়ের খরস্রোতা নদীগুলো প্রভাবশালীদের ভূমি দস্যুদের অবৈধ দখলের কারনে ক্রমান্বয়ে দিনের পর দিন নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে। ইতি পূর্বে পূর্বের অবস্থানে ফিরে আনতে নাউতারা ও ধুম নদী পন:খনন করা হয়েছিল কিন্তু সেটা কোন কাজেই আসেনি । পুনঃখননের পরেও নদী দুটির পানি শুকিয়ে জেগে উঠে বালু চরে পরিনত হয়েছে। নদী দুটোর বুকে এখন ধান ও নানা জাতের সবজির চাষাবাদ করা হয়ে হচ্ছে। বর্তমানে নদী দুটোর বুক জুড়ে ধান ও সবজি ক্ষেতের সবুজ সমারহ। হয়তো চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না যে পূর্বের কানায় কানায় জ্বলে ভরা টই টুম্বুর নদী এখন সুকিয়ে বালু চর ও ভুমি খেকোদের চাষাবাদের জমিতে পরিনত করেছে। অপরদিকে নদীতে পানি না থাকার সুযোগে একটি চক্র নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন করে বিক্রির জমজমাট ব্যবসায় মেতে উঠেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বালি ব্যবসায়ী জানান, বিভিন্ন দলের লোকজন প্রভাব খাটিয়ে নদী থেকে বালি উত্তোলন করে ব্যবসা করছে। তারা করতে পারলে আমরা করতে পারব না কেন? আইন সবার জন্য সমান প্রশাসন তাদেরকে বন্ধ করুক, আমিও নদী থেকে আর বালি হলেন উত্তোলন করব না।
ব্যাপক হারে বালি উত্তোলনের কারনে নদীর গতিপথ বদলে যাওয়ার পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্যে উপর চরম বিরুপ প্রভাব পড়ছে। ভেস্তে যেতে বসেছে নদী মাত্রিক জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের ক্ষেত্র। নদী বিশেষজ্ঞরা বলছেন , নদীগুলোকে পুনর্জীবিত করতে হলে পরিকল্পিতভাবে নদী পূন:খনন করতে হবে। শুধু খনন করলেই হবে না। এগুলোকে পর্যাপ্ত ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকি করতে হবে। এবং প্রতি এক দুই বছর অন্তর পুনঃখননের মাধ্যমে গতিপথ সচল রেখে ভবিষ্যতের জন্য বাঁচিয়ে রাখতে যথাযথ কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। নদী দুটো গত ৩ বছর আগে পুনঃখননের কাজ করা হলেও নামে মাত্র লোক দেখানো খননের কাজ করা হয়েছে। অপরিকল্পিত নামে মাত্র খনন ও তদারকির অভাবে আগের মতোই রয়ে গেছে এ সব নাম সর্বস্ব নদীদুটো । সেই সময়ে খননকাজের নামে বরাদ্দ দেখিয়ে মোটা অংকের অর্থ আত্মসাৎ করা হয়। এর ফলে নদী খননের লক্ষ্য উদ্দেশ্য ভেস্তে গিয়ে উপকারের পরিবর্তে আরো বেশী অকার্যকর হয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পাউবোর ডালিয়া কার্যালয় সূত্রে মতে, দেশে ছোট নদ-নদী, খাল ও জলাশয় খনন করে পানি সংরক্ষণের ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে একটি প্রকল্প হাতে নেয় তৎকালীন সরকার। সেই সময়ে ঐ প্রকল্পের অধীনে ১২ কোটি টাকা ব্যায়ে নাউতারা ও ধুম নদীর ৪০ কিলোমিটার পুন:খননের কাজ করে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ।
সরজমিনে দেখা যায়, নাউতারা ও ধুম নদী দুটোই মাইলের পর মাইল বালি ও পলি মাটি জমে ভরাট হয়ে গেছে। দুই তীরের প্রভাবশালী বাসিন্দারা দখল করে চাষাবাদ করছেন, আবার বিভিন্ন দলীয় পরিচয় ধারী প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও নদী থেকে বালি উত্তোলন করে ও মাটি কেটে বিক্রি করে জমজমাট ভাবে নির্দ্বিধায় ব্যাবসা করছেন। ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের ধুম নদীতে বাঁধ দিয়ে কৃত্রিম চর সৃষ্টি করে ধান চাষ করা হয়েছে। সেখানে নদীর পার কেটে ট্রাক্টরে ভরে বিক্রি করছেন প্রভাবশালী বালি ব্যাবসায়ী চক্ররা।
নাউতারা ইউনিয়নের ঝাড়পাড়া মৌজার স্থানীয় বাসিন্দা আঃ মতিন বলেন, নদীতে যাদের জমি ভেঙে গেছে তারাই বাধ দিয়ে চাষাবাদ করছে তা নয় এলাকায় জোরযার নদীর জমি তার এমনটিও হয়েছে। নদীর একপাশে বাধ দিলে অন্যপাশে বালির স্তর জমে চর জেগে ওঠে। অথচ উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী, নদীর স্বাভাবিক গতিধারা বাধাগ্রস্ত করা দণ্ডনীয় অপরাধ।
স্থানীয়রা বলছেন,উৎসমুখে অপরিকল্পিত বাঁধ দিয়ে কুমলাই নদীকে মেরে ফেলেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। একইভাবে বুড়িতিস্তা নদীরও মরণ দশা লক্ষ করা যাচ্ছে। নদীর তীরবর্তী বাসিন্দারা বলছেন , নদীগুলির যেটুকু অস্তিত্ব রয়েছে, তা এখন দখল ও বালি খেকোদের কবলে পড়ে বেহাত হয়ে গেছে । অপরিকল্পিত খনন আর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি না থাকায় নদীগুলো ধানের জমি আর বালি মহালে পরিণত হয়েছে। সূত্র জানায়, দখলদার ব্যক্তিদের মধ্যে ভূমিহীনেরা যেমন রয়েছেন, আবার প্রভাবশালীরাও রয়েছেন। কিন্তু দখলদারদের উচ্ছেদে পাউবোর কোনো পদক্ষেপের বালাই নেই। তারা চাকুরী করার দায়িত্ব থেকে যেটুকু না করলে নয় শুধু সেটুকুই করবে। কোন প্রকার স্থানীয় ঝামলায় জড়াতে নারাজ। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মীর হাসান আল বান্না বলেন, বহুকাল ধরে এ দেশে নদীর পানি সেচ দিয়েই চাষাবাদ হতো। এখন নদীগুলো পনিশূন্য হয়ে পড়ায় বিকল্প সেচব্যবস্থা করতে হয়েছে। এতে শুধু সেচ খরচই বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ। এ ছাড়া নদীতে পানি না থাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দ্রুত নিচে নেমে পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। সে জন্য ছোট নদীগুলোকে বাঁচিয়ে রাখার বিকল্প নেই। নদী রক্ষায় কাজ করা ‘রিভারাইন পিপল’ এর পরিচালক ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক তুহিন ওয়াদুদ বলেন, পাউবোর নদী খননের কার্যক্রম অপরিকল্পিত। সেটা বিজ্ঞানসম্মত হয়না। খননের সময়ে নদীর প্রকৃত প্রস্থ মেপে দেখার প্রয়োজন তাঁরা মনে করেননা। যদি নদী শুধু খনন করা হয় আর নদীর পানিপ্রবাহ বৃদ্ধি করতে ব্যর্থ হন, তাহলে নদী রক্ষা করা কঠিন হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে , নদী দখলকে ফৌজদারি কার্যবিধি অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ডিমলায় নদ-নদী দখলদার ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, পাউবো, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) সমন্বয়ে গঠিত একটি দল এ বিষয়ে কাজ শুরু করেছে। ওই দল ইতোমধ্যে কুমলাই নদীর সীমানা নির্ধারণের মধ্য দিয়ে অবৈধ দখলদার ব্যক্তিদের তালিকা প্রস্তুত করেছে। তালিকায় ২৯০ জন অবৈধ দখলদারের নাম পাওয়া গেছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ইমরানুজ্জামান জানান,সাম্প্রতি ডিমলা উপজেলার নাউতরা ও ধুম নদীর অবৈধ দখল ও দূষণ ও নব্যতার বিষয়ে পরিদর্শনের নিমিত্বে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের উপপরিচালক, (গবেষণা ও পরীক্ষণ) মোঃ আমিনুর রহমান ও সহকারী প্রধান,(জিও টেকনিক্যাল) মোঃ তৌহিদুল আজিজ, এবং সহকারী পরিচালক ,(পরীক্ষণ ও সমন্বয়) তহিদুর রহমান, সমন্বয়ে গঠিত প্রতিনিধি দল পরিদর্শন করেন । তারা মূলত নদ-নদী গুলো অবৈধ দখল উচ্ছেদ পূর্বক জরিপের মাধ্যমে সীমনানির্ধারণ সহ পুনঃখনন করে নদী গুলো সচল করে আগের অবস্থানে ফেরাতে প্রয়োজনীয় কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ কর। তিনি আরো জানান, ইতিমধ্যেই মালিকানাধীন বেশ কিছু জমি নদী গুলোর গর্ভে চলে গেছে। নতুন করে আর যেন নদীতে না যায় সে ব্যাপারে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষকে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য বলেছি।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
ডিমলা (নীলফামারী) : ভূমি দস্যুদের অবৈধ দখলের কারনে ক্রমান্বয়ে দিনের পর দিন নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে নদী -সংবাদ
শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে তিস্তা নদী সহ ছোট ৪ টি নদী। এর মধ্যে নাউতার, বুড়িতিস্তা, কুমলাই ও ধুম নদী উল্লেখযোগ্য। এক সময়ের খরস্রোতা নদীগুলো প্রভাবশালীদের ভূমি দস্যুদের অবৈধ দখলের কারনে ক্রমান্বয়ে দিনের পর দিন নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে। ইতি পূর্বে পূর্বের অবস্থানে ফিরে আনতে নাউতারা ও ধুম নদী পন:খনন করা হয়েছিল কিন্তু সেটা কোন কাজেই আসেনি । পুনঃখননের পরেও নদী দুটির পানি শুকিয়ে জেগে উঠে বালু চরে পরিনত হয়েছে। নদী দুটোর বুকে এখন ধান ও নানা জাতের সবজির চাষাবাদ করা হয়ে হচ্ছে। বর্তমানে নদী দুটোর বুক জুড়ে ধান ও সবজি ক্ষেতের সবুজ সমারহ। হয়তো চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না যে পূর্বের কানায় কানায় জ্বলে ভরা টই টুম্বুর নদী এখন সুকিয়ে বালু চর ও ভুমি খেকোদের চাষাবাদের জমিতে পরিনত করেছে। অপরদিকে নদীতে পানি না থাকার সুযোগে একটি চক্র নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন করে বিক্রির জমজমাট ব্যবসায় মেতে উঠেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বালি ব্যবসায়ী জানান, বিভিন্ন দলের লোকজন প্রভাব খাটিয়ে নদী থেকে বালি উত্তোলন করে ব্যবসা করছে। তারা করতে পারলে আমরা করতে পারব না কেন? আইন সবার জন্য সমান প্রশাসন তাদেরকে বন্ধ করুক, আমিও নদী থেকে আর বালি হলেন উত্তোলন করব না।
ব্যাপক হারে বালি উত্তোলনের কারনে নদীর গতিপথ বদলে যাওয়ার পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্যে উপর চরম বিরুপ প্রভাব পড়ছে। ভেস্তে যেতে বসেছে নদী মাত্রিক জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের ক্ষেত্র। নদী বিশেষজ্ঞরা বলছেন , নদীগুলোকে পুনর্জীবিত করতে হলে পরিকল্পিতভাবে নদী পূন:খনন করতে হবে। শুধু খনন করলেই হবে না। এগুলোকে পর্যাপ্ত ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকি করতে হবে। এবং প্রতি এক দুই বছর অন্তর পুনঃখননের মাধ্যমে গতিপথ সচল রেখে ভবিষ্যতের জন্য বাঁচিয়ে রাখতে যথাযথ কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। নদী দুটো গত ৩ বছর আগে পুনঃখননের কাজ করা হলেও নামে মাত্র লোক দেখানো খননের কাজ করা হয়েছে। অপরিকল্পিত নামে মাত্র খনন ও তদারকির অভাবে আগের মতোই রয়ে গেছে এ সব নাম সর্বস্ব নদীদুটো । সেই সময়ে খননকাজের নামে বরাদ্দ দেখিয়ে মোটা অংকের অর্থ আত্মসাৎ করা হয়। এর ফলে নদী খননের লক্ষ্য উদ্দেশ্য ভেস্তে গিয়ে উপকারের পরিবর্তে আরো বেশী অকার্যকর হয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পাউবোর ডালিয়া কার্যালয় সূত্রে মতে, দেশে ছোট নদ-নদী, খাল ও জলাশয় খনন করে পানি সংরক্ষণের ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে একটি প্রকল্প হাতে নেয় তৎকালীন সরকার। সেই সময়ে ঐ প্রকল্পের অধীনে ১২ কোটি টাকা ব্যায়ে নাউতারা ও ধুম নদীর ৪০ কিলোমিটার পুন:খননের কাজ করে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ।
সরজমিনে দেখা যায়, নাউতারা ও ধুম নদী দুটোই মাইলের পর মাইল বালি ও পলি মাটি জমে ভরাট হয়ে গেছে। দুই তীরের প্রভাবশালী বাসিন্দারা দখল করে চাষাবাদ করছেন, আবার বিভিন্ন দলীয় পরিচয় ধারী প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও নদী থেকে বালি উত্তোলন করে ও মাটি কেটে বিক্রি করে জমজমাট ভাবে নির্দ্বিধায় ব্যাবসা করছেন। ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের ধুম নদীতে বাঁধ দিয়ে কৃত্রিম চর সৃষ্টি করে ধান চাষ করা হয়েছে। সেখানে নদীর পার কেটে ট্রাক্টরে ভরে বিক্রি করছেন প্রভাবশালী বালি ব্যাবসায়ী চক্ররা।
নাউতারা ইউনিয়নের ঝাড়পাড়া মৌজার স্থানীয় বাসিন্দা আঃ মতিন বলেন, নদীতে যাদের জমি ভেঙে গেছে তারাই বাধ দিয়ে চাষাবাদ করছে তা নয় এলাকায় জোরযার নদীর জমি তার এমনটিও হয়েছে। নদীর একপাশে বাধ দিলে অন্যপাশে বালির স্তর জমে চর জেগে ওঠে। অথচ উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী, নদীর স্বাভাবিক গতিধারা বাধাগ্রস্ত করা দণ্ডনীয় অপরাধ।
স্থানীয়রা বলছেন,উৎসমুখে অপরিকল্পিত বাঁধ দিয়ে কুমলাই নদীকে মেরে ফেলেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। একইভাবে বুড়িতিস্তা নদীরও মরণ দশা লক্ষ করা যাচ্ছে। নদীর তীরবর্তী বাসিন্দারা বলছেন , নদীগুলির যেটুকু অস্তিত্ব রয়েছে, তা এখন দখল ও বালি খেকোদের কবলে পড়ে বেহাত হয়ে গেছে । অপরিকল্পিত খনন আর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি না থাকায় নদীগুলো ধানের জমি আর বালি মহালে পরিণত হয়েছে। সূত্র জানায়, দখলদার ব্যক্তিদের মধ্যে ভূমিহীনেরা যেমন রয়েছেন, আবার প্রভাবশালীরাও রয়েছেন। কিন্তু দখলদারদের উচ্ছেদে পাউবোর কোনো পদক্ষেপের বালাই নেই। তারা চাকুরী করার দায়িত্ব থেকে যেটুকু না করলে নয় শুধু সেটুকুই করবে। কোন প্রকার স্থানীয় ঝামলায় জড়াতে নারাজ। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মীর হাসান আল বান্না বলেন, বহুকাল ধরে এ দেশে নদীর পানি সেচ দিয়েই চাষাবাদ হতো। এখন নদীগুলো পনিশূন্য হয়ে পড়ায় বিকল্প সেচব্যবস্থা করতে হয়েছে। এতে শুধু সেচ খরচই বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ। এ ছাড়া নদীতে পানি না থাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দ্রুত নিচে নেমে পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। সে জন্য ছোট নদীগুলোকে বাঁচিয়ে রাখার বিকল্প নেই। নদী রক্ষায় কাজ করা ‘রিভারাইন পিপল’ এর পরিচালক ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক তুহিন ওয়াদুদ বলেন, পাউবোর নদী খননের কার্যক্রম অপরিকল্পিত। সেটা বিজ্ঞানসম্মত হয়না। খননের সময়ে নদীর প্রকৃত প্রস্থ মেপে দেখার প্রয়োজন তাঁরা মনে করেননা। যদি নদী শুধু খনন করা হয় আর নদীর পানিপ্রবাহ বৃদ্ধি করতে ব্যর্থ হন, তাহলে নদী রক্ষা করা কঠিন হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে , নদী দখলকে ফৌজদারি কার্যবিধি অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ডিমলায় নদ-নদী দখলদার ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, পাউবো, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) সমন্বয়ে গঠিত একটি দল এ বিষয়ে কাজ শুরু করেছে। ওই দল ইতোমধ্যে কুমলাই নদীর সীমানা নির্ধারণের মধ্য দিয়ে অবৈধ দখলদার ব্যক্তিদের তালিকা প্রস্তুত করেছে। তালিকায় ২৯০ জন অবৈধ দখলদারের নাম পাওয়া গেছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ইমরানুজ্জামান জানান,সাম্প্রতি ডিমলা উপজেলার নাউতরা ও ধুম নদীর অবৈধ দখল ও দূষণ ও নব্যতার বিষয়ে পরিদর্শনের নিমিত্বে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের উপপরিচালক, (গবেষণা ও পরীক্ষণ) মোঃ আমিনুর রহমান ও সহকারী প্রধান,(জিও টেকনিক্যাল) মোঃ তৌহিদুল আজিজ, এবং সহকারী পরিচালক ,(পরীক্ষণ ও সমন্বয়) তহিদুর রহমান, সমন্বয়ে গঠিত প্রতিনিধি দল পরিদর্শন করেন । তারা মূলত নদ-নদী গুলো অবৈধ দখল উচ্ছেদ পূর্বক জরিপের মাধ্যমে সীমনানির্ধারণ সহ পুনঃখনন করে নদী গুলো সচল করে আগের অবস্থানে ফেরাতে প্রয়োজনীয় কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ কর। তিনি আরো জানান, ইতিমধ্যেই মালিকানাধীন বেশ কিছু জমি নদী গুলোর গর্ভে চলে গেছে। নতুন করে আর যেন নদীতে না যায় সে ব্যাপারে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষকে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য বলেছি।