লাল মাটি আর গড় অঞ্চল মানেই মধুপুর। এ অঞ্চলের মাটি ভূ-প্রকৃতি বৈচিত্র্য অন্যান্য এলাকা থেকে বিভিন্ন। সমতল অঞ্চল আর শালবন মানেই উর্বর মৃত্তিকা। কৃষি অঞ্চল হিসেবে রয়েছে লাল মাটির খ্যাতি। নানা ফল ফসল চাষাবাদের জন্য এ এলাকাটি বিশেষ উপযোগী। আনারস, কলা, পেঁপে, আদা, হলুদ, কচুসহ নানা কৃষি ফসল উৎপাদন হয়ে থাকে। দেশি ফলের পর এখন বিদেশি ফসলও চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে চায়না কমলা লেবু চাষও শুরু হয়েছে। গড়ে উঠেছে একখন্ড কমলা লেবুর রাজ্য।ইবৃর মৃত্তিকার বুকে দাঁড়িয়ে আছে সবুজ পাতার কমলার গাছ। গাছে গাছে হলুদ সবুজ রঙের কমলা ঝুলছে। যেন চোখ জুড়ানো এক দৃশ্য। আর এ বাগানটি গড়ে তোলেছে কৃষক কিতাব আলী। সফলতা পাচ্ছে কিতাব আলী নামের এই চাষী।
মধুপুর শহর থেকে ৮ কিমি. দুরে বেরিবাইদ ইউনিয়নে জাঙ্গালিয়া গ্রামে গড়ে তোলা কমলা বাগানে গিয়ে কিতাব আলীর সাথে কথা বলে জানা যায় কমলা চাষের মজার গল্প। ২০২১ সালের কথা। তথ্য প্রবাহের এ যুগে তিনি ইউটিউব দেখে তার সাধ জাগে কমলা চাষের। চারা সংগ্রহের ছুটে যায় চুয়াডাঙ্গা জেলায়। সেখানে গিয়ে কমলার বাগান দেখে স্বপ্ন আরো ঘনীভূত হয়। বাগান ঘুরে ঘুরে দেখে টাটকা সতেজ কমলা নিজে হাতে খেয়ে দেখে কিনে আনে ৬শ’ চারা কিনে চারাপ্রতি ১৯০ টাকা দামে। বাগান পর্যন্ত পৌঁছাতে চারা প্রতি দাম পড়ে ২২০ টাকা। নিজের ৬ বিঘাতে জমিতে অতিযত্নে লাগিয়ে দেয়। বেড়ে উঠে গাছ। এক বছর দেখা দেয় কমলা। মন ভরে যেতে থাকে তার। পরের বছর পুরোদমে গাছে মুকুল দেখা দিলে বাড়িয়ে দেয় যতœ। সার বিষ জৈব সার নিড়ানি সেচ দিয়ে সাজিয়ে তোলে বাগান। ফল দেখা দেয় আশা আলো। দ্বিতীয় বছরে প্রথম বার কমলা বিক্রি আসে প্রায় ৬ লক্ষ টাকা। খরচ বাদে ভালো দেখা দেয়। এভাবে গত তিন বছরে কিতাব আলী কমলা বিক্রি করে লক্ষ লক্ষ টাকা আয়ের পথ খোঁজে পান।
এখন তার কমলা বাগান দেখতে বিভিন্ন জায়গার মানুষ আসে। ছবি তোলে। কিনে নয় কমলা। ইতিমধ্যে কমলা বাগান কে কেন্দ্র করে কিতাব আলী যেমন পরিচিত লাভ করছে তেমনি চাষী হিসেবে সম্মানও পাচ্ছে।
বাগানে দেখাশোনা করা কিতাব আলীর শ্বশুর তুলা মিয়া (৬০)বলেন, কমলার জমিতে দেখাশোনা কমলা বিক্রি করতে তার খুব ভালো লাগে। প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গার লোকজন আসে বাগান দেখতে। তিনি দিনে রাতে বাগানের তোলা ঘরে থেকে পাহারা দেন। সকাল বিকাল বাগানে ঘুরে বেড়ালে তার মন ভালো হয়ে যায় বলে জানান।
স্থানীয় সাহেরা বেগম (৫০) জানায়,তার মেয়ে ঢাকায় চাকরি করে। সেখান থেকে তাকে ফোন করছে এ বাগানে কমলা নিতে। সে জন্য তিন কেজি একশ দামে কিনে নিলেন। তারমতে, মধুপুরের কমলার স্বাদ ভালো বিধায় তার মেয়ে তাকে নিয়ে যেতে বলছে।
চাষী কিতাব আলী জানালেন,তার কমলার বাগানে তিনি মিশ্র চাষ করেছে। সাথী ফসল হিসেবে কিছু লটকন, নারিকেল, কিছু আপেল আঙ্গুলের গাছ রোপন করেছে। কমলার চারা তৈরি করছে বিক্রির জন্য। বাগান থেকে কমলার চারাও বিক্রি করে থাকে।
এ চাষে প্রতিবছর তার বিক্রি আসে ছয় লক্ষ টাকার মতো। বাগানের বিক্রির টাকা যেমন আসে তেমনি সৌন্দর্যও তাকে মুগ্ধ করে।যখন তার ভালো থাকে না তখন বাগানে ঘুরে বেড়ালে তার মন ভালো হয়ে। তার মতে, একটি ভালো ফসলের বাগান বাগান, যে কোন মানুষের মনকে ভালো করে দিতে পারে। সকাল বিকাল কমলার বাগানের মুগ্ধতা তাকে নেশার মতো কাছে টেনে আনে। তার মতে,কমলা চাষে কিনছু সমস্যা দেখা দেয়। পাতা ডগা মরা। তারপরও সঠিক নিয়মে পরিচর্যা করার কারণে সে ফলন ও দাম ভালো পাচ্ছে বলে তিনি জানালেন।
কলেজ শিক্ষক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, কমলার বাগান আছে শোনে বেড়াতে আসছে। বাগানটি দেখে তার খুব ভালো লাগছে। কমলা চাষের ফলে লাল মাটির সুনাম আরো ছড়িযে পড়বে চার দিকে এমনটাই করছেন তিনি। তবে বাজারের কমরার মতো এত মিষ্টি নয়,হালকা টক। তাই দামেও কম বিক্রি করছে বাগান থেকে। প্রতি কেজি একশ টাকা দামে বিক্রি করছে বলে জানান বাগান মালিক কিতাব আলী।
মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রকিব আল রানা বলেন, মধুপপুরের মাটি আবহাওয়া ভালো থাকার কারণে ফলন ভালো হচ্ছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকার কারণে ক্রেতারও কোন অভাব নেই। গাছে গাছে প্রচুর পরিমানে কমলা ধরেছে। তারমতে, কিতাব আলীর মতো আরো অনেকেইে মধুপুরের লাল মাটিতে আরো অনেকেই কমলা চাষে এগিযে আসবে। তারাও ভালো ফলন পাবে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫
লাল মাটি আর গড় অঞ্চল মানেই মধুপুর। এ অঞ্চলের মাটি ভূ-প্রকৃতি বৈচিত্র্য অন্যান্য এলাকা থেকে বিভিন্ন। সমতল অঞ্চল আর শালবন মানেই উর্বর মৃত্তিকা। কৃষি অঞ্চল হিসেবে রয়েছে লাল মাটির খ্যাতি। নানা ফল ফসল চাষাবাদের জন্য এ এলাকাটি বিশেষ উপযোগী। আনারস, কলা, পেঁপে, আদা, হলুদ, কচুসহ নানা কৃষি ফসল উৎপাদন হয়ে থাকে। দেশি ফলের পর এখন বিদেশি ফসলও চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে চায়না কমলা লেবু চাষও শুরু হয়েছে। গড়ে উঠেছে একখন্ড কমলা লেবুর রাজ্য।ইবৃর মৃত্তিকার বুকে দাঁড়িয়ে আছে সবুজ পাতার কমলার গাছ। গাছে গাছে হলুদ সবুজ রঙের কমলা ঝুলছে। যেন চোখ জুড়ানো এক দৃশ্য। আর এ বাগানটি গড়ে তোলেছে কৃষক কিতাব আলী। সফলতা পাচ্ছে কিতাব আলী নামের এই চাষী।
মধুপুর শহর থেকে ৮ কিমি. দুরে বেরিবাইদ ইউনিয়নে জাঙ্গালিয়া গ্রামে গড়ে তোলা কমলা বাগানে গিয়ে কিতাব আলীর সাথে কথা বলে জানা যায় কমলা চাষের মজার গল্প। ২০২১ সালের কথা। তথ্য প্রবাহের এ যুগে তিনি ইউটিউব দেখে তার সাধ জাগে কমলা চাষের। চারা সংগ্রহের ছুটে যায় চুয়াডাঙ্গা জেলায়। সেখানে গিয়ে কমলার বাগান দেখে স্বপ্ন আরো ঘনীভূত হয়। বাগান ঘুরে ঘুরে দেখে টাটকা সতেজ কমলা নিজে হাতে খেয়ে দেখে কিনে আনে ৬শ’ চারা কিনে চারাপ্রতি ১৯০ টাকা দামে। বাগান পর্যন্ত পৌঁছাতে চারা প্রতি দাম পড়ে ২২০ টাকা। নিজের ৬ বিঘাতে জমিতে অতিযত্নে লাগিয়ে দেয়। বেড়ে উঠে গাছ। এক বছর দেখা দেয় কমলা। মন ভরে যেতে থাকে তার। পরের বছর পুরোদমে গাছে মুকুল দেখা দিলে বাড়িয়ে দেয় যতœ। সার বিষ জৈব সার নিড়ানি সেচ দিয়ে সাজিয়ে তোলে বাগান। ফল দেখা দেয় আশা আলো। দ্বিতীয় বছরে প্রথম বার কমলা বিক্রি আসে প্রায় ৬ লক্ষ টাকা। খরচ বাদে ভালো দেখা দেয়। এভাবে গত তিন বছরে কিতাব আলী কমলা বিক্রি করে লক্ষ লক্ষ টাকা আয়ের পথ খোঁজে পান।
এখন তার কমলা বাগান দেখতে বিভিন্ন জায়গার মানুষ আসে। ছবি তোলে। কিনে নয় কমলা। ইতিমধ্যে কমলা বাগান কে কেন্দ্র করে কিতাব আলী যেমন পরিচিত লাভ করছে তেমনি চাষী হিসেবে সম্মানও পাচ্ছে।
বাগানে দেখাশোনা করা কিতাব আলীর শ্বশুর তুলা মিয়া (৬০)বলেন, কমলার জমিতে দেখাশোনা কমলা বিক্রি করতে তার খুব ভালো লাগে। প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গার লোকজন আসে বাগান দেখতে। তিনি দিনে রাতে বাগানের তোলা ঘরে থেকে পাহারা দেন। সকাল বিকাল বাগানে ঘুরে বেড়ালে তার মন ভালো হয়ে যায় বলে জানান।
স্থানীয় সাহেরা বেগম (৫০) জানায়,তার মেয়ে ঢাকায় চাকরি করে। সেখান থেকে তাকে ফোন করছে এ বাগানে কমলা নিতে। সে জন্য তিন কেজি একশ দামে কিনে নিলেন। তারমতে, মধুপুরের কমলার স্বাদ ভালো বিধায় তার মেয়ে তাকে নিয়ে যেতে বলছে।
চাষী কিতাব আলী জানালেন,তার কমলার বাগানে তিনি মিশ্র চাষ করেছে। সাথী ফসল হিসেবে কিছু লটকন, নারিকেল, কিছু আপেল আঙ্গুলের গাছ রোপন করেছে। কমলার চারা তৈরি করছে বিক্রির জন্য। বাগান থেকে কমলার চারাও বিক্রি করে থাকে।
এ চাষে প্রতিবছর তার বিক্রি আসে ছয় লক্ষ টাকার মতো। বাগানের বিক্রির টাকা যেমন আসে তেমনি সৌন্দর্যও তাকে মুগ্ধ করে।যখন তার ভালো থাকে না তখন বাগানে ঘুরে বেড়ালে তার মন ভালো হয়ে। তার মতে, একটি ভালো ফসলের বাগান বাগান, যে কোন মানুষের মনকে ভালো করে দিতে পারে। সকাল বিকাল কমলার বাগানের মুগ্ধতা তাকে নেশার মতো কাছে টেনে আনে। তার মতে,কমলা চাষে কিনছু সমস্যা দেখা দেয়। পাতা ডগা মরা। তারপরও সঠিক নিয়মে পরিচর্যা করার কারণে সে ফলন ও দাম ভালো পাচ্ছে বলে তিনি জানালেন।
কলেজ শিক্ষক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, কমলার বাগান আছে শোনে বেড়াতে আসছে। বাগানটি দেখে তার খুব ভালো লাগছে। কমলা চাষের ফলে লাল মাটির সুনাম আরো ছড়িযে পড়বে চার দিকে এমনটাই করছেন তিনি। তবে বাজারের কমরার মতো এত মিষ্টি নয়,হালকা টক। তাই দামেও কম বিক্রি করছে বাগান থেকে। প্রতি কেজি একশ টাকা দামে বিক্রি করছে বলে জানান বাগান মালিক কিতাব আলী।
মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রকিব আল রানা বলেন, মধুপপুরের মাটি আবহাওয়া ভালো থাকার কারণে ফলন ভালো হচ্ছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকার কারণে ক্রেতারও কোন অভাব নেই। গাছে গাছে প্রচুর পরিমানে কমলা ধরেছে। তারমতে, কিতাব আলীর মতো আরো অনেকেইে মধুপুরের লাল মাটিতে আরো অনেকেই কমলা চাষে এগিযে আসবে। তারাও ভালো ফলন পাবে।