সিরাজগঞ্জ : শ্রম বিক্রির হাটে মানুষ -সংবাদ
প্রাচীন ও মধ্যযুগে দাস প্রথার প্রচলন ছিল সে সময় মানুষ বেচা কেনা হতো। কিস্তু আধুনিক এই যুগে দাস প্রথা না থকলেও হাটে মানুষ বিক্রী হচ্ছে। সিরাজগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকায় শ্রম বিক্রীর হাটে এই মানুষ গুলি দিন হাজিরা হিসাবে বিক্রী হয়ে থাকে । ধান কাটার এই সময় কামলার (কৃষিশ্রমিক) চাহিদা বেশী থাকায় । সিরাজগঞ্জ জেলার শিয়ালকোল, কান্দাপাড়া, কাজিপুরের নাটুয়ারপাড়া, আলমপুর, পানাগাড়ি, রতনকান্দি ও সোনামুখী এলাকায় এই শ্রমজীবী মানুষের হাট এখন জমজমাট। এই সব এলাকার নিদৃষ্ট স্থানে হাট ও বাজারে ধারে বসে এমন এক ব্যতিক্রমী মানুষের হাট। কাক ডাকা ভোর হতে এ সব এলাকায় ভিড় জমে মানুষের, যারা নিজেদের শ্রম বিক্রি করতে আসেন দিনের মজুরিতে। কামলাদের (শ্রমিকদের) চোখে একটাই প্রত্যাশা-আজ যেন কোনো কাজ মেলে, যাতে পরিবারের সদস্যদের মুখে ভাত তুলে দেওয়া যায়। হাট গুলিতে শ্রম বিক্রি হয় দিনে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকায়। তবে অনেক সময় বিক্রী হতে না পারলে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে যান । বিভিন্ন হাটে দেখা যায়, কারো হাতে বাঁশের তৈরি বাইং, কারো হাতে ব্যাগ। ব্যাগে হালকা কাপড়-চোপর আর কাঁচি। কেউ বসে আছে, কেউ দাঁড়িয়ে। হাটের ভেতরে ঢুকতেই কতিপয় শ্রমিক বলেন ‘মামা কামলা লাগবো? কত কইরা দিবেন?
নাটুয়া পাড়া হাটে রংপুর জেলা থেকে আসা শ্রমিক আবু হোসেন (৫০) বলেন, পরিবারের অবস্থা ভালো না থাকায় লেখাপড়া করতে পারিনি। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সংসার চালাতে বছরের ধান কাটার সময় এখানে আসি। দিন হিসাবে কখনো ৫০০, কখনো ৭০০ টাকায় জমির মালিকেরা আমাদের কিনে নিয়ে যায় । কিন্তু এত দুর থেকে এসে অনেক সময় কোনো কাজ পাই না তখন মনে খুব কষ্ট লাগে। তবে মৌসুমের সময় আসলে কাজ পাওয়া যায় । তাছাড়া আমরা প্রতি বছরই এখানে আসি ফলে জমির মালিকদের সাথে একটা সম্পর্ক তৈরী হয়েছে।আমরা যখন আসি তাদের বাড়িতেই কাজ করি । সদর উপজেলার শিয়ালকোল গ্রামের শ্রমিক আবদুর রশিদ (৪৫) সহ সাতজনের একটি দল হাটে আসেন। এ সময় সে জানায়, সংসারে বিধবা মা, ৩টি বোন সহ স্ত্রী ও ছেলে মেয়ে রয়েছে। তাদের ভরণপোষনের জন্য তাকে কর্মের পথ বেচে নিতে হয়েছে। ১৭ বছরের কিশোর জেলহক জানায়, আমার বাড়িতে বিধবা মা রয়েছে। তাকে ভরণপোষনের জন্য এই কর্মের পথ বেচে নিতে হয়েছে। ছোট বলে কেউ আমাকে কিনতে চায় না। অল্প দামে বিক্রি হতে হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সকাল থেকেই হাটে মালিকেরা এসে শ্রমিক বেছে নেন। অভিজ্ঞতা দেখে দর হাঁকেন। কারও দাম ওঠে ৪০০, কারও ৬০০ টাকা। দাম নির্ধারণ হয় তাদের দক্ষতা অনুযায়ী ।
নাটুয়া পাড়া হাটে কামলা নিতে আসা আব্দুস ছামাদ জানান, চাহিদামত নিদৃষ্ট সময়ের জন্য তাদের দর দাম মিটিয়ে নেই কামলাদের। স্থানীয়দের একবেলা এবং দুরে শ্রমিকদের তিন বেলা খেতে দিতে হয়। প্রতিটা বাড়িতে প্রতি মৌসুমে ২/৩ মাস কাজ হয় । কাজ শেষে শ্রমিকেরা নিজি নিজ এলাকায় চলে যান । তবে মুজুরীর ক্ষেত্রে কোন এলাকায় নগদ আবার কোন এলাকায় ধান দেয়া হয় ।
কাজিপুর উপজেলার নাটুয়ারপাড়া হাট বাজার ইজারাদার আব্দুল লতিফ সরকার জানান, বহু বছর ধরে এই হাটে মানুষ বেচাকেনার হাট বসে। এখান থেকে প্রতিদিন মালিকেরা এসে কামলা কিনে নিয়ে যায়।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
সিরাজগঞ্জ : শ্রম বিক্রির হাটে মানুষ -সংবাদ
শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫
প্রাচীন ও মধ্যযুগে দাস প্রথার প্রচলন ছিল সে সময় মানুষ বেচা কেনা হতো। কিস্তু আধুনিক এই যুগে দাস প্রথা না থকলেও হাটে মানুষ বিক্রী হচ্ছে। সিরাজগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকায় শ্রম বিক্রীর হাটে এই মানুষ গুলি দিন হাজিরা হিসাবে বিক্রী হয়ে থাকে । ধান কাটার এই সময় কামলার (কৃষিশ্রমিক) চাহিদা বেশী থাকায় । সিরাজগঞ্জ জেলার শিয়ালকোল, কান্দাপাড়া, কাজিপুরের নাটুয়ারপাড়া, আলমপুর, পানাগাড়ি, রতনকান্দি ও সোনামুখী এলাকায় এই শ্রমজীবী মানুষের হাট এখন জমজমাট। এই সব এলাকার নিদৃষ্ট স্থানে হাট ও বাজারে ধারে বসে এমন এক ব্যতিক্রমী মানুষের হাট। কাক ডাকা ভোর হতে এ সব এলাকায় ভিড় জমে মানুষের, যারা নিজেদের শ্রম বিক্রি করতে আসেন দিনের মজুরিতে। কামলাদের (শ্রমিকদের) চোখে একটাই প্রত্যাশা-আজ যেন কোনো কাজ মেলে, যাতে পরিবারের সদস্যদের মুখে ভাত তুলে দেওয়া যায়। হাট গুলিতে শ্রম বিক্রি হয় দিনে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকায়। তবে অনেক সময় বিক্রী হতে না পারলে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে যান । বিভিন্ন হাটে দেখা যায়, কারো হাতে বাঁশের তৈরি বাইং, কারো হাতে ব্যাগ। ব্যাগে হালকা কাপড়-চোপর আর কাঁচি। কেউ বসে আছে, কেউ দাঁড়িয়ে। হাটের ভেতরে ঢুকতেই কতিপয় শ্রমিক বলেন ‘মামা কামলা লাগবো? কত কইরা দিবেন?
নাটুয়া পাড়া হাটে রংপুর জেলা থেকে আসা শ্রমিক আবু হোসেন (৫০) বলেন, পরিবারের অবস্থা ভালো না থাকায় লেখাপড়া করতে পারিনি। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সংসার চালাতে বছরের ধান কাটার সময় এখানে আসি। দিন হিসাবে কখনো ৫০০, কখনো ৭০০ টাকায় জমির মালিকেরা আমাদের কিনে নিয়ে যায় । কিন্তু এত দুর থেকে এসে অনেক সময় কোনো কাজ পাই না তখন মনে খুব কষ্ট লাগে। তবে মৌসুমের সময় আসলে কাজ পাওয়া যায় । তাছাড়া আমরা প্রতি বছরই এখানে আসি ফলে জমির মালিকদের সাথে একটা সম্পর্ক তৈরী হয়েছে।আমরা যখন আসি তাদের বাড়িতেই কাজ করি । সদর উপজেলার শিয়ালকোল গ্রামের শ্রমিক আবদুর রশিদ (৪৫) সহ সাতজনের একটি দল হাটে আসেন। এ সময় সে জানায়, সংসারে বিধবা মা, ৩টি বোন সহ স্ত্রী ও ছেলে মেয়ে রয়েছে। তাদের ভরণপোষনের জন্য তাকে কর্মের পথ বেচে নিতে হয়েছে। ১৭ বছরের কিশোর জেলহক জানায়, আমার বাড়িতে বিধবা মা রয়েছে। তাকে ভরণপোষনের জন্য এই কর্মের পথ বেচে নিতে হয়েছে। ছোট বলে কেউ আমাকে কিনতে চায় না। অল্প দামে বিক্রি হতে হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সকাল থেকেই হাটে মালিকেরা এসে শ্রমিক বেছে নেন। অভিজ্ঞতা দেখে দর হাঁকেন। কারও দাম ওঠে ৪০০, কারও ৬০০ টাকা। দাম নির্ধারণ হয় তাদের দক্ষতা অনুযায়ী ।
নাটুয়া পাড়া হাটে কামলা নিতে আসা আব্দুস ছামাদ জানান, চাহিদামত নিদৃষ্ট সময়ের জন্য তাদের দর দাম মিটিয়ে নেই কামলাদের। স্থানীয়দের একবেলা এবং দুরে শ্রমিকদের তিন বেলা খেতে দিতে হয়। প্রতিটা বাড়িতে প্রতি মৌসুমে ২/৩ মাস কাজ হয় । কাজ শেষে শ্রমিকেরা নিজি নিজ এলাকায় চলে যান । তবে মুজুরীর ক্ষেত্রে কোন এলাকায় নগদ আবার কোন এলাকায় ধান দেয়া হয় ।
কাজিপুর উপজেলার নাটুয়ারপাড়া হাট বাজার ইজারাদার আব্দুল লতিফ সরকার জানান, বহু বছর ধরে এই হাটে মানুষ বেচাকেনার হাট বসে। এখান থেকে প্রতিদিন মালিকেরা এসে কামলা কিনে নিয়ে যায়।