alt

পাচার হচ্ছে বিরল প্রজাতির লেমুরসহ বণ্যপ্রাণী, সঙ্গে যাচ্ছে কচ্ছপের হাড়ও

বাকী বিল্লাহ : শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫

আফ্রিকার দ্বীপ রাষ্ট্র মাদাগাস্কারের একটি বিশেষ প্রাণী রিংটেইলড লেমুর, বাংলাদেশে তাদের ঠিকানা হয় গাজীপুর সাফারি পার্কে। সেখান থেকেই সম্প্রতি চুরি হয় তিনটি রিংটেইলড লেমুর। শুধু কি তাই, নিরাপত্তা দুর্বলতায় চুরি হয়ে যাচ্ছে বিরল প্রজাতির নীলগাই, কচ্ছপ, পাখিও।

ক্রেতা সংগ্রহের জন্য বন্যপ্রাণীর ভিডিও

করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার

বিরল লেমুর পাচারকারী ৬ সদস্যের

স্বীকারোক্তি: সিআইডি

গাজীপুর সাফারি পার্কের দুইটি লেমুর

সাড়ে ১৩ লাখ টাকায় বিক্রি

বন্যপ্রাণী পাচারের ট্রানজিট হিসেবে

চক্রটি বিমানবন্দর ও স্থলবন্দর ব্যবহার

করছে: তদন্ত কর্মকর্তা

জানা গেছে, সংঘবদ্ধ পাচারকারী চক্র দেশ থেকে বিপন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী বিদেশে পাচার করছে। এই চক্র রাজধানীর অদূরে গাজীপুর সাফারি পার্কের নিরাপত্তা বেষ্টনী কেটে বিরল প্রজাতির ৩টি রিংটেইল লেমুর চুরি করে নিয়ে যায়। গত ২৩ মার্চ রাত থেকে ২৪ মার্চ ভোরে যে কোনো সময় বন্যপ্রাণী তিনটি চুরি হয়।

এরই মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একটি লেমুর উদ্ধার করেছে। অন্য ২টি লেমুর সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচার করা হয়েছে বলে সিআইডির অনুসন্ধান তদন্তে বেরিয়ে আসছে। বন্যপ্রাণী পাচার চক্রে জড়িত গাজীপুর সাফারি পার্কের একজন কর্মচারীও রয়েছে।

সিআইডির বিশেষ টিম এ চক্রের মোট ৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। তারা বন্যপ্রাণী বিক্রি ও পাচারের সঙ্গে জড়িত বলে স্বীকারোক্তিও দিয়েছে। তবে চক্রের গডফাদার এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। তাকে গ্রেপ্তার করতে সিআইডির অনুসন্ধান টিম কাজ করছে।

সিআইডির প্রধান কার্যালয়ের বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান ও মামলা তদন্ত কর্মকর্তা সুনীল কুমার দাস জানায়, গত ৪ নভেম্বর গাজীপুর সাফারি পার্ক থেকে বিরল প্রজাতির বন্যপ্রাণী চুরির ঘটনায় আন্তর্জাতিক প্রাণী পাচার চক্রের এক সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। সিআইডির গাজীপুর জেলা ও মেট্রো বিভাগের টিম ময়মনসিংহের গফরগাঁও কলাইপাড়া এলাকা থেকে গফরগাঁও থানা পুলিশের সহায়তায় তাকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃত মজনু মিয়ার বাড়ি সেখানেই। পরে সে মাজিস্ট্রেটের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। সিআইডি সন্দেহভাজন অভিযুক্ত মজনুসহ চক্রের মোট ৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে।

ঘটনার পর শ্রীপুর থানায় একটি মামলা করা হয়। তদন্তে জানা যায়, ২০১৮ সালে অফ্রিকার দ্বীপ রাষ্ট্র মাদাগাস্কার থেকে ২টি রিংটেইল লেমুরসহ মোট ৮৬ জোড়া প্রাণী আমদানি করে দু’টি প্রতিষ্ঠান। পরবর্তীতে এই প্রাণীগুলোকে গাজীপুর সাফারী পার্কে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রাখা হয়। তখন ২টি রিংটেইল লেমুর আরও ২টি বাচ্চার জন্ম দেয়। এরপর ৪টি লেমুর আবাসন হয় পার্কে। পরে একটি লেমুর মারা গেলে ৩টি লেমুর পার্কে থাকে।

সিআইডির অনুসন্ধানে জানা যায়, গাজীপুর সাফারী পার্কে আউটসোর্সিংয়ে কাজ করতো নিপেল মাহমুদ নামে এক কর্মচারী। সে পার্কের ভেতরে বিভিন্ন সময়ে দুর্লভ, বিপন্ন এবং বিরল প্রজাতির বন্যপ্রাণীর ছবি ও ভিডিও ধারণ করতো। সেই ছবি এবং ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের প্রাইভেট গ্রুপ ও পেইজগুলোতে পোস্ট করে দেশি-বিদেশি ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতো। পরে ক্রেতার পছন্দনীয় প্রাণীটি দরদাম করে মূল্য নির্ধারিত হলে চুরি করে বিক্রি করতো।

এভাবে রিংটেইল লেমুরের ছবিগুলো প্রতিবেশী পাখি ব্যবসায়ী জুয়েল মিয়াকে দেখায় এবং বাজারদর জানতে চায়। তখন জুয়েল মিয়া আরেক পাখি ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন হৃদয়কে দেখায়। ইসমাইল ও দেলোয়ার হোসেন তাওসীফ পাখি আমদানীকারক মো. সাব্বির হোসেন তপনের সঙ্গে যোগাযোগ করে।

এরপর গত ২৩ মার্চ রাত থেকে ভোরে চুরি যাওয়া বিপন্ন ও বিরল প্রজাতির ৩টি লেমুর তারা এক ব্যবসায়ীর কাছে ৫ লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করে। হৃদয় মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ১০ হাজার টাকা জুয়েলের কাছ থেকে নেয়। তখন দেলোয়ার ও সাব্বির জানতে পারে আরও ২টি প্রাণী আছে। তারা দুইজন ভারতীয় ক্রেতার সঙ্গে প্রতিটি প্রাণী সাড়ে ১৩ লাখ টাকায় বিক্রির জন্য মধ্যস্থতা করে দেয়।

পরে ভারতীয় ক্রেতাসহ ময়মনসিংহের ভালুকা এলাকা থেকে ২টি লেমুর কার্টনে ভরে ক্রেতাদের গাড়িতে তুলে দেয়। তখন নিপেন ৭০ হাজার টাকা কমিশন হিসেবে দেয় জুয়েল ও তার চাচা মজনু মিয়াকে। মজনু মিয়া চোরাই ২টি লেমুর প্যাকেট ও হস্তান্তরে সহায়তা করে।

সিআইডির প্রাথমিক তদন্তে উঠে আসে সংঘবদ্ধ চক্রটি এভাবে দেশের দুর্লভ, বিপন্ন ও বিরল বন্যপ্রাণী চুরি করে দেশের বাইরে পাচার করে। এই চক্র বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করে দেশের বিরল প্রজাতির বন্যপ্রাণী বিদেশে পাচার করছে বলে সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তা জানিয়েছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক সুনীল কুমার দাস জানায়, আন্তর্জাতিক বন্যপ্রাণী পাচারকারী চক্র শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে পাচারের রুট হিসেবে ব্যবহার করছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে আরও তথ্য চেয়ে বিমানবন্দরে শুল্ক কর্মকর্তার (ডেপুটি কমিশনার) কাছে চিঠি দিয়েছে সিআইডি।

তদন্ত কর্মকর্তার মতে, বন্য প্রাণী ও পাখি পাচারের সঙ্গে একটি বড় চক্র জড়িত। এই মামলার তদন্ত শুরু করলে দেখা যায়, অন্তত ৪-৫শ’ বন্যপ্রাণী ও পাখি ব্যবসায়ী জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। তাদের মধ্যে অনেকেই এখন গা ঢাকা দিয়েছে বলেও জানান তিনি।

মামলার তদন্ত তদারকি কর্মকর্তা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএসপি) মোহাম্মদ সাহেদ মিয়া জানায়, লেমুর চুরির মামলাটির তদন্ত প্রায় শেষ। সব আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে। ছয়জনই স্বীকারোক্তি দিয়েছে। চুরি হওয়া বন্যপ্রাণী লেমুর সারা বিশ্বে ১২০-১৩০টি আছে। শিগগিরই এ মামলার চার্জশিট দেয়া হবে বলেও জানান সাহেদ মিয়া।

## যেভাবে পাচার হয় বিরল প্রজাতির বন্যপ্রাণী

বিরল প্রজাতির এসব প্রাণী দেশ থেকে চুরি হওয়ার পর ভারতের শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি হয়ে যাচ্ছে চীন, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ায়। জীবিত প্রাণীর পাশাপাশি কচ্ছপের হাড়ও পাচার হচ্ছে। গত তিন বছরে শুধু পাচারের সময়ই সীমান্ত থেকে উদ্ধার হয়েছে ২৯৭ কেজি কচ্ছপের হাড়।

প্রাণী পাচারের রুট হিসেবে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হচ্ছে মেহেরপুর, হিলি, শিবগঞ্জ ও বুড়িমারী সীমান্ত।

বন্যপ্রাণী চুরি ও পাচার রোধে কাজ করে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট। তাদের হিসেবে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৪ হাজার ৪৪টি বন্যপ্রাণী উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে গত জানুয়ারিতে ৪৫৮টি, ফেব্রুয়ারিতে ১ হাজার ৪৪টি, মার্চে ১২১টি, এপ্রিলে ১৪৩টি, মে মাসে ২৭৭টি, জুনে ১৬৭টি, জুলাইয়ে ৯৭৮টি, আগস্টে ৮৫৬টি এবং সেপ্টেম্বরে ২ হাজার ১১১টি বন্যপ্রাণী উদ্ধার করা হয়েছে।

উদ্ধার হওয়া প্রাণীগুলোর মধ্যে রয়েছে- বিভিন্ন প্রজাতির কচ্ছপ, গন্ধগোকুল, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, বিভিন্ন প্রজাতির সাপ, বানর, তক্ষক, লেমুর, হাতি, ভালুক, হনুমানসহ নানা ধরনের বন্যপ্রাণী। এসব বন্যপ্রাণী দেশ থেকে চুরি হওয়ার পর সেটির প্রথম গন্তব্য হয় প্রতিবেশী কোনো দেশে। পরে সেখান থেকে চড়া দামে চীন, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনামসহ বেশকিছু দেশে পাচার করা হয়। এছাড়া জীবিত প্রাণীর পাশাপাশি কচ্ছপের হাড়, হাঙরের চর্বি ও গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ আন্তর্জাতিক চোরাকারবারীদের মাধ্যমে বিদেশে পাচার হয়ে থাকে।

সর্বশেষ গাজীপুর সাফারি পার্ক থেকে চুরি যাওয়া তিনটি রিংটেইলড লেমুরের বিষয়ে অনুসন্ধান করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

ঔষধি কাঁচামাল হিসেবে আন্তর্জাতিক বাজারে সাপের বিষের চাহিদা রয়েছে। সেই চাহিদার যোগান দিতে আন্তর্জাতিক পাচার চক্রের সদস্যরা দেশের নানা অঞ্চল থেকে সাপের বিষ সংগ্রহ করছে।

তবে কখনো কখনো বিভিন্ন দেশ থেকেও এ বিষ আসে বাংলাদেশে।

সিন্ডিকেটটি বাংলাদেশ থেকে এ বিষগুলো কিনে ভারতে নিয়ে যায়। এরপর ভারত ঘুরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে চলে যায় বহু মূল্যবান এ সাপের বিষ। নানাবিধ কৌশলে তা চীনে নিয়ে যায় জলদস্যুরা। একপর্যায়ে এই বিষ পৌঁছে যায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশেও।

সাপের বিষ উদ্ধারের সময় গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিদের কাছ থেকে এসব তথ্য পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বাংলাদেশে গত আট বছরে কয়েকশ’ কোটি টাকার সাপের বিষ উদ্ধার করেছে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি।

ছবি

প্রেমিকাকে ভিডিও কলে রেখে এমসি কলেজ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

ছবি

চট্টগ্রাম মহানগরীতে পাওনা টাকা চাইতে গিয়ে যুবক খুন

ছবি

তাহিরপুর সীমান্তে বিএসএফের হাতে তিন বাংলাদেশি আটক

ছবি

কাতালগঞ্জে ব্যক্তি মালিকানা জায়গায় সাইনবোর্ড সাঁটিয়ে প্রতিপক্ষের হয়রানি

ছবি

হারিয়ে যাচ্ছে শ্রীমঙ্গলের বিলাস নদী

ছবি

নুরাল পাগলার দরবারে হামলার দুই মাস পর আদালতে নতুন মামলা

ছবি

মামলা করায় নারী শিল্পীকে মারধর, মুখে কালি ও চুল কেটে নির্যাতন

ছবি

মালয়েশিয়া কেড়ে নিলো ১৮ বছর, ফিরে দেখেন স্ত্রী অন্য সংসারে, বাবা-মা পরপারে

ছবি

শনিবার ভয়াল সিডর দিবস, এখনও সিডরের ক্ষত উপকূলে

ছবি

শুক্রবার ও বিভিন্ন জায়গায় পোড়ানো হয় যানবাহন

ছবি

রাজশাহীতে বিচারকের ছেলেকে হত্যার ঘটনায় মামলা

ছবি

সিরাজগঞ্জে জমে উঠেছে মানুষ বিক্রির হাট

ছবি

বিপন্ন প্রজাতির ছাতিম ফুলের তীব্র ঘ্রাণে বিমোহিত পথচারী

ছবি

মধুপুর গড়ের লাল মাটিতে কমলা চাষ

ছবি

ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় শিক্ষা কর্মকর্তার ডিমোশন

ছবি

লাখাই উপজেলায় আমন ধান ঘরে তোলার অপেক্ষায়

ছবি

বরগুনা-বরিশাল আঞ্চলিক মহাসড়ক যাত্রীদের ভোগান্তির শেষ নেই

ছবি

ঝুলে যাচ্ছে চট্টগ্রাম চেম্বার নির্বাচন, এবার বাদীকে আদালত অবমাননার নোটিশ

বাগেরহাটে সামাজিক জবাবদিহিতার টুলস বিষয়ক প্রশিক্ষণ

বাগেরহাটের মোল্লাহাটে এগ্রো ফার্মে চুরি

ছবি

গোয়ালন্দে যৌন উত্তেজক ঔষধ খেয়ে যুবকের মৃত

ছবি

গজারিয়ায় জনবল ঔষধ ও উপকরণ সংকটে পরিবার পরিকল্পনা সেবা ব্যাহত

ছবি

৩৮ বছরেও নেই অগ্রগতি, উদ্যোক্তা সংকটে ধুঁকছে লালমনিরহাটের বিসিক শিল্পনগরী

ছবি

কক্সবাজারের হোটেল কক্ষে পর্যটকের মৃতদেহ উদ্ধার

ছবি

টঙ্গীবাড়ীতে কাঠের পুল ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ

ছবি

ডিমলায় ভূমি দস্যদের অবৈধ দখলে নিশ্চিহ্ন হতে বসেছে নদীগুলো

ছবি

কলারোয়ায় নিরাপদ খাদ্য বিষয়ে সচেতনতামূলক কর্মসূচি

ছবি

অল্পের জন্য রক্ষা শতশত মানুষের প্রাণ

ঘুষ নিয়েও নথির দিতে অস্বীকার : সেবাগ্রহীতাকে মারধর

চট্টগ্রামে প্রতারণার মামলায় ব্যাংক কর্মকর্তা গ্রেপ্তার

উলিপুরে হাতিয়া গণ-হত্যা দিবস পালিত

চান্দিনায় দেশীয় অস্ত্রসহ ৪ ডাকাত গ্রেপ্তার

নাজিরপুরে গাজাঁসেবির ৬ মাসের কারাদণ্ড

ছবি

নড়াইলে স্বেচ্ছাসেবকদলের নেতা মাসুদ হত্যা মামলার প্রধান আসামি গ্রেপ্তার

কলমাকান্দায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে ছাগল ও উপকরণ বিতরণ

ছবি

বোয়ালখালীতে আমন ধানের নমুনা শস্য কর্তন ও মাঠ পরিদর্শন

tab

পাচার হচ্ছে বিরল প্রজাতির লেমুরসহ বণ্যপ্রাণী, সঙ্গে যাচ্ছে কচ্ছপের হাড়ও

বাকী বিল্লাহ

শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫

আফ্রিকার দ্বীপ রাষ্ট্র মাদাগাস্কারের একটি বিশেষ প্রাণী রিংটেইলড লেমুর, বাংলাদেশে তাদের ঠিকানা হয় গাজীপুর সাফারি পার্কে। সেখান থেকেই সম্প্রতি চুরি হয় তিনটি রিংটেইলড লেমুর। শুধু কি তাই, নিরাপত্তা দুর্বলতায় চুরি হয়ে যাচ্ছে বিরল প্রজাতির নীলগাই, কচ্ছপ, পাখিও।

ক্রেতা সংগ্রহের জন্য বন্যপ্রাণীর ভিডিও

করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার

বিরল লেমুর পাচারকারী ৬ সদস্যের

স্বীকারোক্তি: সিআইডি

গাজীপুর সাফারি পার্কের দুইটি লেমুর

সাড়ে ১৩ লাখ টাকায় বিক্রি

বন্যপ্রাণী পাচারের ট্রানজিট হিসেবে

চক্রটি বিমানবন্দর ও স্থলবন্দর ব্যবহার

করছে: তদন্ত কর্মকর্তা

জানা গেছে, সংঘবদ্ধ পাচারকারী চক্র দেশ থেকে বিপন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী বিদেশে পাচার করছে। এই চক্র রাজধানীর অদূরে গাজীপুর সাফারি পার্কের নিরাপত্তা বেষ্টনী কেটে বিরল প্রজাতির ৩টি রিংটেইল লেমুর চুরি করে নিয়ে যায়। গত ২৩ মার্চ রাত থেকে ২৪ মার্চ ভোরে যে কোনো সময় বন্যপ্রাণী তিনটি চুরি হয়।

এরই মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একটি লেমুর উদ্ধার করেছে। অন্য ২টি লেমুর সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচার করা হয়েছে বলে সিআইডির অনুসন্ধান তদন্তে বেরিয়ে আসছে। বন্যপ্রাণী পাচার চক্রে জড়িত গাজীপুর সাফারি পার্কের একজন কর্মচারীও রয়েছে।

সিআইডির বিশেষ টিম এ চক্রের মোট ৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। তারা বন্যপ্রাণী বিক্রি ও পাচারের সঙ্গে জড়িত বলে স্বীকারোক্তিও দিয়েছে। তবে চক্রের গডফাদার এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। তাকে গ্রেপ্তার করতে সিআইডির অনুসন্ধান টিম কাজ করছে।

সিআইডির প্রধান কার্যালয়ের বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান ও মামলা তদন্ত কর্মকর্তা সুনীল কুমার দাস জানায়, গত ৪ নভেম্বর গাজীপুর সাফারি পার্ক থেকে বিরল প্রজাতির বন্যপ্রাণী চুরির ঘটনায় আন্তর্জাতিক প্রাণী পাচার চক্রের এক সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। সিআইডির গাজীপুর জেলা ও মেট্রো বিভাগের টিম ময়মনসিংহের গফরগাঁও কলাইপাড়া এলাকা থেকে গফরগাঁও থানা পুলিশের সহায়তায় তাকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃত মজনু মিয়ার বাড়ি সেখানেই। পরে সে মাজিস্ট্রেটের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। সিআইডি সন্দেহভাজন অভিযুক্ত মজনুসহ চক্রের মোট ৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে।

ঘটনার পর শ্রীপুর থানায় একটি মামলা করা হয়। তদন্তে জানা যায়, ২০১৮ সালে অফ্রিকার দ্বীপ রাষ্ট্র মাদাগাস্কার থেকে ২টি রিংটেইল লেমুরসহ মোট ৮৬ জোড়া প্রাণী আমদানি করে দু’টি প্রতিষ্ঠান। পরবর্তীতে এই প্রাণীগুলোকে গাজীপুর সাফারী পার্কে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রাখা হয়। তখন ২টি রিংটেইল লেমুর আরও ২টি বাচ্চার জন্ম দেয়। এরপর ৪টি লেমুর আবাসন হয় পার্কে। পরে একটি লেমুর মারা গেলে ৩টি লেমুর পার্কে থাকে।

সিআইডির অনুসন্ধানে জানা যায়, গাজীপুর সাফারী পার্কে আউটসোর্সিংয়ে কাজ করতো নিপেল মাহমুদ নামে এক কর্মচারী। সে পার্কের ভেতরে বিভিন্ন সময়ে দুর্লভ, বিপন্ন এবং বিরল প্রজাতির বন্যপ্রাণীর ছবি ও ভিডিও ধারণ করতো। সেই ছবি এবং ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের প্রাইভেট গ্রুপ ও পেইজগুলোতে পোস্ট করে দেশি-বিদেশি ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতো। পরে ক্রেতার পছন্দনীয় প্রাণীটি দরদাম করে মূল্য নির্ধারিত হলে চুরি করে বিক্রি করতো।

এভাবে রিংটেইল লেমুরের ছবিগুলো প্রতিবেশী পাখি ব্যবসায়ী জুয়েল মিয়াকে দেখায় এবং বাজারদর জানতে চায়। তখন জুয়েল মিয়া আরেক পাখি ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন হৃদয়কে দেখায়। ইসমাইল ও দেলোয়ার হোসেন তাওসীফ পাখি আমদানীকারক মো. সাব্বির হোসেন তপনের সঙ্গে যোগাযোগ করে।

এরপর গত ২৩ মার্চ রাত থেকে ভোরে চুরি যাওয়া বিপন্ন ও বিরল প্রজাতির ৩টি লেমুর তারা এক ব্যবসায়ীর কাছে ৫ লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করে। হৃদয় মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ১০ হাজার টাকা জুয়েলের কাছ থেকে নেয়। তখন দেলোয়ার ও সাব্বির জানতে পারে আরও ২টি প্রাণী আছে। তারা দুইজন ভারতীয় ক্রেতার সঙ্গে প্রতিটি প্রাণী সাড়ে ১৩ লাখ টাকায় বিক্রির জন্য মধ্যস্থতা করে দেয়।

পরে ভারতীয় ক্রেতাসহ ময়মনসিংহের ভালুকা এলাকা থেকে ২টি লেমুর কার্টনে ভরে ক্রেতাদের গাড়িতে তুলে দেয়। তখন নিপেন ৭০ হাজার টাকা কমিশন হিসেবে দেয় জুয়েল ও তার চাচা মজনু মিয়াকে। মজনু মিয়া চোরাই ২টি লেমুর প্যাকেট ও হস্তান্তরে সহায়তা করে।

সিআইডির প্রাথমিক তদন্তে উঠে আসে সংঘবদ্ধ চক্রটি এভাবে দেশের দুর্লভ, বিপন্ন ও বিরল বন্যপ্রাণী চুরি করে দেশের বাইরে পাচার করে। এই চক্র বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করে দেশের বিরল প্রজাতির বন্যপ্রাণী বিদেশে পাচার করছে বলে সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তা জানিয়েছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক সুনীল কুমার দাস জানায়, আন্তর্জাতিক বন্যপ্রাণী পাচারকারী চক্র শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে পাচারের রুট হিসেবে ব্যবহার করছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে আরও তথ্য চেয়ে বিমানবন্দরে শুল্ক কর্মকর্তার (ডেপুটি কমিশনার) কাছে চিঠি দিয়েছে সিআইডি।

তদন্ত কর্মকর্তার মতে, বন্য প্রাণী ও পাখি পাচারের সঙ্গে একটি বড় চক্র জড়িত। এই মামলার তদন্ত শুরু করলে দেখা যায়, অন্তত ৪-৫শ’ বন্যপ্রাণী ও পাখি ব্যবসায়ী জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। তাদের মধ্যে অনেকেই এখন গা ঢাকা দিয়েছে বলেও জানান তিনি।

মামলার তদন্ত তদারকি কর্মকর্তা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএসপি) মোহাম্মদ সাহেদ মিয়া জানায়, লেমুর চুরির মামলাটির তদন্ত প্রায় শেষ। সব আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে। ছয়জনই স্বীকারোক্তি দিয়েছে। চুরি হওয়া বন্যপ্রাণী লেমুর সারা বিশ্বে ১২০-১৩০টি আছে। শিগগিরই এ মামলার চার্জশিট দেয়া হবে বলেও জানান সাহেদ মিয়া।

## যেভাবে পাচার হয় বিরল প্রজাতির বন্যপ্রাণী

বিরল প্রজাতির এসব প্রাণী দেশ থেকে চুরি হওয়ার পর ভারতের শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি হয়ে যাচ্ছে চীন, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ায়। জীবিত প্রাণীর পাশাপাশি কচ্ছপের হাড়ও পাচার হচ্ছে। গত তিন বছরে শুধু পাচারের সময়ই সীমান্ত থেকে উদ্ধার হয়েছে ২৯৭ কেজি কচ্ছপের হাড়।

প্রাণী পাচারের রুট হিসেবে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হচ্ছে মেহেরপুর, হিলি, শিবগঞ্জ ও বুড়িমারী সীমান্ত।

বন্যপ্রাণী চুরি ও পাচার রোধে কাজ করে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট। তাদের হিসেবে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৪ হাজার ৪৪টি বন্যপ্রাণী উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে গত জানুয়ারিতে ৪৫৮টি, ফেব্রুয়ারিতে ১ হাজার ৪৪টি, মার্চে ১২১টি, এপ্রিলে ১৪৩টি, মে মাসে ২৭৭টি, জুনে ১৬৭টি, জুলাইয়ে ৯৭৮টি, আগস্টে ৮৫৬টি এবং সেপ্টেম্বরে ২ হাজার ১১১টি বন্যপ্রাণী উদ্ধার করা হয়েছে।

উদ্ধার হওয়া প্রাণীগুলোর মধ্যে রয়েছে- বিভিন্ন প্রজাতির কচ্ছপ, গন্ধগোকুল, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, বিভিন্ন প্রজাতির সাপ, বানর, তক্ষক, লেমুর, হাতি, ভালুক, হনুমানসহ নানা ধরনের বন্যপ্রাণী। এসব বন্যপ্রাণী দেশ থেকে চুরি হওয়ার পর সেটির প্রথম গন্তব্য হয় প্রতিবেশী কোনো দেশে। পরে সেখান থেকে চড়া দামে চীন, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনামসহ বেশকিছু দেশে পাচার করা হয়। এছাড়া জীবিত প্রাণীর পাশাপাশি কচ্ছপের হাড়, হাঙরের চর্বি ও গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ আন্তর্জাতিক চোরাকারবারীদের মাধ্যমে বিদেশে পাচার হয়ে থাকে।

সর্বশেষ গাজীপুর সাফারি পার্ক থেকে চুরি যাওয়া তিনটি রিংটেইলড লেমুরের বিষয়ে অনুসন্ধান করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

ঔষধি কাঁচামাল হিসেবে আন্তর্জাতিক বাজারে সাপের বিষের চাহিদা রয়েছে। সেই চাহিদার যোগান দিতে আন্তর্জাতিক পাচার চক্রের সদস্যরা দেশের নানা অঞ্চল থেকে সাপের বিষ সংগ্রহ করছে।

তবে কখনো কখনো বিভিন্ন দেশ থেকেও এ বিষ আসে বাংলাদেশে।

সিন্ডিকেটটি বাংলাদেশ থেকে এ বিষগুলো কিনে ভারতে নিয়ে যায়। এরপর ভারত ঘুরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে চলে যায় বহু মূল্যবান এ সাপের বিষ। নানাবিধ কৌশলে তা চীনে নিয়ে যায় জলদস্যুরা। একপর্যায়ে এই বিষ পৌঁছে যায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশেও।

সাপের বিষ উদ্ধারের সময় গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিদের কাছ থেকে এসব তথ্য পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বাংলাদেশে গত আট বছরে কয়েকশ’ কোটি টাকার সাপের বিষ উদ্ধার করেছে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি।

back to top